নবি মুহাম্মদের ২৩ বছর নিয়ে কিছু বাস্তব কথা (আলী দস্তি রচিত ) সৌজন্য ;-মুক্তমনা )




নবি মুহাম্মদের ২৩ বছর
 :


 ২০১৫ সালে রোদেলা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত, আলী দস্তি রচিত ‘নবি মুহাম্মদ ২৩ বছর’ বইটি ভাষান্তর করেছেন আবুল কাশেম ও সৈকত চৌধুরী।

 বিশ্ব-ইতিহাসে ইসলাম একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ধর্ম। 

ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা নবি মুহাম্মদ ইতিহাসের একজন অনন্য ব্যক্তিত্ব। অন্যান্য ধর্মের প্রচারকদের সাথে নবি মুহাম্মদের অন্যতম

 তফাৎ হচ্ছে তিনি কেবল একাধারে সফল ধর্মপ্রচারকই নন,তিনি ছিলেন একইসাথে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনীতিবিদ এবং দক্ষ প্রশাসক।

 দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে বহু বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে প্রচণ্ড পরিশ্রম,ত্যাগ আর লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি কেবল বিশ্বের বুকে ইসলামের বিস্তারই ঘটাননি, একই সাথে একটি রাষ্ট্রের গোড়পত্তন ঘটিয়েছেন,

 আরব-জাতীয়তাবাদের পতাকাতলে বহু গোত্রে বিভক্ত মরুবাসী বেদুইনদের একত্রিত করেছেন।

জীবদ্দশাতেই তিনি স্থির লক্ষে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন।

 তাঁর মৃত্যুর পর প্রায় সাড়ে তেরশ বছর পার হয়ে গেছে।

 আজ শুধু মরুবাসী আরব-ই নয়, বিশ্বের বহু দেশের,বহু জাতির লক্ষ-কোটি অনারব মুসলমান এই পতাকাতলে সমবেত।

 ফলে এদিক দিয়ে দেখলে নবি মুহাম্মদ অতুলনীয়। তিনি নিঃসন্দেহে সফল।


ইসলামের ইতিহাস, নবি মুহাম্মদের জীবনী নিয়ে প্রতি বছরই বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় প্রচুর সংখ্যক বই প্রকাশিত হয়।


 এই বইগুলির বেশিরভাগই হয় স্তুতিভিত্তিক-অলৌকিকতার ধূম্রজালে আবদ্ধ আবার কোনোটা হয় অযথাই নিন্দা আর সমালোচনাকে ভিত্তি করে।

 কিন্তু ইসলামের ইতিহাস নিয়ে নির্মোহ বিশ্লেষণে খুবই কমসংখ্যক বই প্রকাশিত হয়েছে।

 এটা স্বীকার করতে হবে ইসলাম আজও গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য, নবি মুহাম্মদের জীবনী আজও কোটি মানুষের চর্চার বিষয়।

 অনেকের কাছে এটিই একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান।

অন্য আরও সকল ধর্মের মতোই সুদূর অতীতকাল থেকে ইসলাম নিয়েও লৌকিক ভিত্তি ত্যাগ করে অলৌকিক-গায়েবি সংস্কারে নিমজ্জিত প্রচুর মানুষ।

 ধর্ম নিয়ে যৌক্তিক-বিশ্লেষণী আলোচনা আমাদের এই সমাজে এমনিতে বিরল।

 ভাববাদী-আধ্যাত্মবাদী বহু দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ইসলাম আলোচিত হয়েছে বহুজনের লেখনীতে।

 কিন্তু ইসলামের উত্থান-বিকাশ এবং নবি মুহাম্মদের ‘অসাধ্য সাধন’ নিয়ে বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে ইসলামকে জানার ও বোঝার চেষ্টা দুর্লভ বটে।

 সে-হিসেবে ইরানের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী আলি দস্তি রচিত ‘নবি মুহাম্মদের ২৩ বছর’ গ্রন্থটি ঐতিহাসিক এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

আলি দস্তির মতে,অলৌকিকতা কোনো ঐশী নির্দেশ নয়।

 অলৌকিকতা কেবল দুর্বলচিত্তের জনগণের কাছে ধোঁয়াশার জালে আবদ্ধ সংস্কার নয়।

 কিংবা নয় কোনো ধরনের বিভ্রম। অলৌকিকতা একটি অর্থবহ বিষয়। 

একজন ব্যক্তি তার দক্ষতা,কৌশল,বুদ্ধিমত্তা আর পরিশ্রমের সমন্বয় ঘটিয়ে আপাত ‘অসাধ্য সাধন’ করতে সক্ষম হন,তখন সেই কাজকে অলৌকিক হিসেবে বিবেচনা করা যায়। 

নবি মুহাম্মদও এই অর্থে অসাধ্য সাধন করেছেন।

 প্রায় একা একজন মানুষ অসাধারণ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা আর কৌশল অবলম্বন করে নিজ জাতির বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে প্রচণ্ড লড়াই করে নিজস্ব ধর্মমত প্রতিষ্ঠা করেছেন।

 অসংখ্য মানুষের পূর্বতন ধর্মমতের বিলোপ ঘটিয়েছেন।

 নবি মুহাম্মদের এই ইতিহাস সৃষ্টিকারী বিশাল কর্মযজ্ঞ কোনো অর্থেই ‘অলৌকিকতা’র মহিমা থেকে খাটো নয়। 

আলি দস্তি তাঁর বইয়ে ইসলাম এবং নবি মুহাম্মদের জীবন নিয়ে সকল রহস্যময় ও আলঙ্কারিক মিথ্যে ভাষণের ঢালি সরিয়ে নির্মোহভাবে বস্তুবাদী ইতিহাস রচনা করেছেন। 

যার জন্য এই বইও ইতিহাসে ধ্রুপদী গ্রন্থের মর্যাদা লাভ করেছে।

আজকের এই একুশ শতকে গোটা মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়া,আফ্রিকার মুসলিম-প্রধান দেশগুলিতে একদিকে পরাক্রমশালী রাষ্ট্রগুলোর অযাচিত হস্তক্ষেপ,

অন্যদিকে সেখানকার স্বৈরতান্ত্রিক শাষকগোষ্ঠীর ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অত্যাচার-নিপীড়ণে অতিষ্ঠ জনতা আবার আল কায়েদা, আইএস, বোকো হারাম, তালেবান ইত্যাদি জিহাদি গোষ্ঠীগুলোর নৃশংস কর্মকাণ্ডে বিশ্বের বুকে ‘ইসলাম’ একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য। 

এই অবস্থায় ইসলামকে খাটো বা হেয় করে নয়,নবি মুহাম্মদকে নিন্দা বা অবহেলা করে নয়,

যাবতীয় আধ্যাত্মিক ও গায়েবি দৃষ্টিভঙ্গি সরিয়ে প্রাকৃতিক জগতের নিয়মের লঙ্ঘন না ঘটিয়ে ‘মানব’ মুহাম্মদের বিশাল কীর্তি ও ইসলামের নৃতাত্ত্বিক ইতিহাসের পুনর্পাঠ অতি জরুরি।

 আর এই বিষয়টিই আলি দস্তির শক্তিশালী লেখনী থেকে ফুটে 

উঠেছে দ্বিধাহীনভাবে।



      

মন্তব্যসমূহ