ক্যান্টনমেন্টের সেলে মনজুরকে রাখা হলে একজন ব্রিগেডিয়ার সেই সেলে প্রবেশ করেন [ডাক্তার তার নাম জানাননি] ‘তার উদ্দেশ্য ছিল একটি। মনজুরকে হত্যা করা। তিনি ঢাকা থেকে এসেছিলেন এবং প্রহরারত সেনা কর্মকর্তাকে জানিয়েছিলেন মনজুরকে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। ভেতরে ঢুকে মনজুরকে গুলি করে তিনি বেরিয়ে যান যেন’ পূর্বপরিকল্পনা মতো।



       

    লে. জেনারেল জিয়ার হত্যাকাণ্ড প্রশাসকের বয়ান



প্রকাশিত : ২৮ মে ২০১৬ ( সৌজন্য দৈনিক  জনকণ্ঠ )
  • মুনতাসীর মামুন
(শেষের  দিকের  দুইটি  পর্ব , লেখাটির  সব পর্ব নয় কিন্তু )

পরদিন ভোরে খুব ক্লান্ত এসপি মারুফুল হক এলেন ডিসি জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে। মারুফুল গতকালের কাহিনী সবিস্তারে বর্ণনা করলেন।
ফটিকছড়ির এক গ্রামে মনজুর সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছেন এ খবর পাওয়ার পর ইন্সপেক্টর কুদ্দুস তার বাহিনী নিয়ে রওনা হন। কুদ্দুস জানিয়েছেন, মনজুর যে জিপটি চালাচ্ছিলেন সেটি গ্রামে ঢোকার মুখে পার্ক করা ছিল। পুলিশ যখন গ্রামের ওই কুঁড়েতে ঢোকে তখন তিনি নাশতা করছিলেন। পুলিশ দেখে তিনি পালাবার বা প্রতিরোধের কোন চেষ্টা করেননি। শুধু বললেন, তিনি চান তাকে যেন বেসামরিক কর্তৃপক্ষের অধীনে থানাতে রাখা হয়। ভীত পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে তিনি ওঠেন পুলিশভ্যানে। হাটহাজারী থানায় তাকে নিয়ে লকআপে রাখা হয়।
মনজুরকে থানায় রাখা হয়েছে এই খবর পেয়ে দলে দলে লোক থানায় আসতে থাকেন। এই ব্যাপারটি থানার পুলিশদের বিচলিত করে তোলে। তখনই তারা চেয়েছেন মনজুরকে থানা থেকে সরিয়ে নেয়া হোক। পরবর্তী ঘটনা জানা।
কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেয়ে মনজুরকে হস্তান্তর করা হয়। ক্যাপ্টেন পুলিশের কাগজপত্রে সই করে দেন। লকআপ থেকে মনজুর, তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে বাইরে আনা হয়। মনজুর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিলেন তিনি এখন আর সেনাবাহিনীতে নেই, আছেন পুলিশ হেফাজতে। পুলিশ তাকে থানা প্রাঙ্গণ থেকে আর্মি ভ্যানের কাছে নিয়ে যায়। আর্মি ক্যাপ্টেন কারাতে স্টাইলে মনজুরকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন ও দুজন সৈন্যের সাহায্যে তার দুহাত বেঁধে ফেলেন। মনজুরের স্ত্রী ও সন্তানরা তখন চিৎকার করে কাঁদছিলেন। মনজুর ছিলেন নিরস্ত্র, বন্দিত্বেরও প্রতিবাদ করেননি। তা সত্ত্বেও সেই ক্যাপ্টেন এমন আচরণ করেছিলেন। তাকে সাধারণ কয়েদির মতো পিকআপের পিছে ফেলে দেয়া হয়। সশস্ত্ররা তাকে ঘিরে থাকে। ভ্যানের সামনে মনজুরের স্ত্রী ও সন্তানকে বসিয়ে ক্যাপ্টেন ভ্যান নিয়ে ক্যান্টনমেন্টের দিকে রওনা দেন। পুলিশ বা বেসামরিক কর্তৃপক্ষ ভাবছিলেন, মনজুরকে ক্যান্টনমেন্টে নেয়া হচ্ছে বোধহয় ইন্টারগেশনের জন্য। কিন্তু সেনা কর্তৃপক্ষের মতলব যে অন্য তা তারা অনুধাবন করেননি।
পরের দিন সমস্ত ঘটনা পর্যালোচনার জন্য কমিশনার, ডিসি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ডিআইজি কমিশনারের কার্যালয়ে বসেছেন। এমন সময় ডিআইজির কাছে ফোন। ফোনালাপ সেরে তিনি জানালেন চট্টগ্রাম গ্যারিসনের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার আজিজ জানিয়েছেন মনজুর মৃত। পুলিশ যেন তার মৃতদেহ ক্যান্টনমেন্ট থেকে নিয়ে যায়। ডিআইজি শাহজাহান জানালেন এ বিষয়ে তাকে কমিশনার ও ডিসির সঙ্গে আলাপ করতে হবে।
এ খবর শুনে সবাই বিমূঢ়। শর্টকাটে আর্মি কাজ সেরেছে। এখন আবর্জনা পরিষ্কারের দায়িত্ব বেসামরিক কর্তৃপক্ষের। জিয়াউদ্দিন জানালেন এ কাজে তারা যুক্ত হবেন না। তার ভাষায়- ‘obviously, the army had made short work of Manzoor, and wanted to leave us, the civil administration, dispose of their dirty work.Õডিআইজিকে তারা পরামর্শ দিলেন, ব্রিগেডিয়ার আজিজকে জানাতে যে, আইন অনুযায়ী পুলিশকে মৃতদেহ হস্তান্তর করলে পুলিশ ময়নাতদন্ত করবে এবং এই মৃত্যু চিহ্নিত হবে অস্বাভাবিক মৃত্যুহিসেবে। যদি ব্রিগেডিয়ার চান পুলিশে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হবে তাহলে তাকে আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। ব্রিগেডিয়ার আজিজ ময়নাতদন্তে রাজি নন। তিনি জানালেন, করণীয় তিনি জানাবেন। কয়েক মিনিট পর তিনি জানালেন, সেনাবাহিনী বিষয়টির সুরাহা করবে, পুলিশের দরকার হবে না।
পরদিন ঢাকা থেকে প্রকাশিত খবরের কাগজে সরকারী প্রেস নোটের বরাত দিয়ে জানানো হলো, মনজুরকে যখন ক্যান্টনমেন্টে ফিরিয়ে আনা হয় তখন ক্রুদ্ধ সৈন্যরা তাকে আক্রমণ করে। সংঘর্ষে তিনি নিহত হন। জিয়াউদ্দিন বলছেন, এটি একটি গল্প [The report was downright fiction.] ক্যান্টনমেন্টে নেয়ার পথে মনজুর নিহত হয়নি। ব্রিগেডিয়ার আজিজ যা জানিয়ে ছিলেন তাই ঠিক। ২ জুন, ১৯৮১ সালে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে তাকে হত্যা করা হয়। ব্রিগেডিয়ার আজিজ বলেননি, ক্রুদ্ধ সৈন্যদের হাতে মনজুর নিহত হয়েছেন। কীভাবে তিনি মারা গেছেন তাও বলেননি।
মনজুরের মৃত্যুর ব্যাপারটা কয়েকদিন পর সেনাবাহিনীর সেই ডাক্তার জিয়াউদ্দিনকে জানিয়েছিলেন যিনি কয়েকদিন আগে জিয়ার মরদেহ পরিষ্কার করেছিলেন। মনজুরের মৃতদেহ কবরে নামানোর আগে তার ক্ষত ব্যান্ডেজ করা হয়েছিল। তাকে কোথায় কবর দেয়া হয়েছে ডাক্তার অবশ্য তা বলেননি।
ক্যান্টনমেন্টের সেলে মনজুরকে রাখা হলে একজন ব্রিগেডিয়ার সেই সেলে প্রবেশ করেন [ডাক্তার তার নাম জানাননি] তার উদ্দেশ্য ছিল একটি। মনজুরকে হত্যা করা। তিনি ঢাকা থেকে এসেছিলেন এবং প্রহরারত সেনা কর্মকর্তাকে জানিয়েছিলেন মনজুরকে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। ভেতরে ঢুকে মনজুরকে গুলি করে তিনি বেরিয়ে যান যেনপূর্বপরিকল্পনা মতো। [He went in, fired his pistol at Manzoor, and walked out— all according to some agreed plan.] ডাক্তারকে যখন ক্ষত ব্যান্ডেজ করতে বলা হয় তখন দেখেন একটি বুলেট তার মাথা ভেদ করে বেরিয়ে গেছে, একঝাঁক বুলেট নয়।
মনজুর হত্যার পর চট্টগ্রাম গ্যারিসনের ৫০ জন সেনা অফিসারকে গ্রেফতার করা হয়। মেজর জেনারেল আবদুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত ফিল্ড কোর্ট মার্শালে তাদের বিচার হয়। ৩৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, জিয়ার ব্যক্তিগত সচিব লে. কর্নেল মাহফুজসহ। দুই সপ্তাহে বিচার শেষ। ফাঁসির আদেশ হয়েছিল ১৩ জনের [অধিকাংশ ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা]
ফিল্ড কোর্ট মার্শাল গঠনের পর ডিসিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায় চট্টগ্রাম জেলা সেলে বিচারের ব্যবস্থা করতে। আসামিদের সেখানে রাখা হয়েছিল। অনুরোধটি ছিল অস্বাভাবিক। কারণ, বিচার হওয়ার কথা ক্যান্টনমেন্টে।
যা হোক বিচার হলো। জিয়াউদ্দিন ভেবেছিলেন তাকেও হয়ত সাক্ষী মানা হবে। পরে আবদুর রহমান তাকে জানিয়ে ছিলেন তার সাক্ষ্যের কোন গুরুত্ব নেই দেখে ডাকা হয়নি। বিচারের আগে মেজর জেনারেল মোজাম্মেল ও বিচারপতি এটিএম আফজালের নেতৃত্বে সামরিক ও বেসামরিক দুটি তদন্তকমিটি করা হয়েছিল। কোন কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি। সরকারের ভাষ্যই বিচারে প্রতিফলিত হয়েছিল। জিয়া হত্যার জন্য মনজুরকেই দোষী করা হয়েছিল।
জিয়াউদ্দিন উপসংহারে যা বলেছেন, প্রচলিত সাধারণ মতামতও তাই। মনজুর ও জিয়া ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। ১৯৭৫-এর পর মনজুর জিয়ার প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট কাজ করেছেন। নোয়াখালীর ডিসি থাকার সময়ের একটি ঘটনা তিনি উল্লেখ করেছেন। তিনি তখন চিফ অব জেনারেল স্টাফ। তিনি বক্তৃতায় বলেছিলেন, জিয়া সরকারের পেছনে সবাইকে থাকতে হবে। কেননা জিয়া সার্বভৌমত্বেরপ্রতীক। জিয়ার মতো তিনিও মনে করতেন, সরকার পরিচালনায় সেনাদের ভূমিকা থাকতে হবে।
জিয়া রাজনৈতিক দল করার পর বিশেষ করে স্বাধীনতা বিরোধীদের দলে নেয়ার পর তার সঙ্গে জিয়ার দূরত্বের সৃষ্টি হয়। মনজুরকে সরিয়েও দেয়া হয়। কিন্তু জিয়ার ওপর তার এমন কোন আক্রোশ ছিল না যে কারণে জিয়াকে হত্যার কথা তিনি ভেবেছিলেন। জিয়াউদ্দিন লিখেছেন, জিয়া এলে তিনি তাকে অভ্যর্থনা জানাতে যেতেন বিমানবন্দরে কিন্তু প্লেন মাটি না ছোঁয়া পর্যন্ত গাড়িতে বসে থাকতেন। জিয়ার দলের নেতাদের তিনি পছন্দ করতেন না। জিয়া নেমে এলে তার সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলে যেতেন। জিয়ার রাজনৈতিক সহকর্মীদের তিনি অপছন্দ করতেন কিন্তু জিয়াকে নয়। অন্য সময় দুজনে পুরনো বন্ধুর মতোই আচরণ করতেন।
জিয়াউদ্দিন সমস্ত ঘটনা পর্যালোচনা করে মনে করেন, ষড়যন্ত্রটি হয়েছিল চট্টগ্রামের বাইরে ঢাকায়। জিয়া হত্যার পর বিদ্রোহীদের দায় তার ওপর পরে যা তিনি নিতে ইচ্ছুক ছিলেন না কিন্তু নিয়েছিলেন। ষড়যন্ত্রটা কোথায় তা তিনি জানতে পেরেছিলেন সে জন্য ঢাকা থেকে এক ব্রিগেডিয়ারকে পাঠিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। মনজুরকে তিনি আখ্যা দিয়েছিলেন ‘a coup leader by default.’ জিয়া হত্যার সঙ্গে আসলেই তার কোন যুক্ততা ছিল না।
আট ॥
যেসব সেনা কর্মকর্তা আত্মজীবনী লিখেছেন, তাদের তিনজনের লেখায় জিয়া হত্যার ঘটনাটি এসেছে। এদের একজন হলেন লে. কর্নেল মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জিয়ার খানিকটা সিনিয়র হলেও বন্ধুর মতো ছিলেন। জিয়া তাকে ডেকে মন্ত্রী করেছিলেন। তার বইয়ের নাম রণ থেকে জন। ১৯৯৫ সালে স্টুডেন্ট ওয়েজ বইটি বের করে। তার বইয়ে স্বাভাবিকভাবে জিয়ার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে এবং জিয়ার মৃত্যুর ঘটনা অতিসংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে যদিও তিনি ছিলেন তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সামরিক আইন প্রত্যাহার বিষয়ক ফরমানে সই করার পর কর্নেল রাষ্ট্রপতি জিয়ার কলমটি চেয়ে নেন। কারণ ঘোষণাটি ঐতিহাসিক। তার মতে, সামরিক আইন ঘোষণা করেছিলেন মোশতাক, জিয়া তা প্রত্যাহার করেছিলেন। প্রত্যেক বিএনপি কর্মী যা বলে কর্নেল তাই পুনরাবৃত্তি করেছেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান দেশের সব থেকে ভাগ্যবান এবং একই সঙ্গে গর্বিত রাষ্ট্রপতি, কেননা তিনিই এই সামরিক আইন প্রত্যাহার করে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথকে কণ্টকমুক্ত করেন। এর আগে ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি একদলীয় বাকশালশাসন ব্যবস্থা কায়েম করে রাষ্ট্রীয় ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষ ভাগ্যবান। জিয়ার মতো একজন লোক এই সময় দেশের হাল ধরেছিলেন। ’ [পৃ. ৬০]
আগেই উল্লেখ করেছি, বিএনপির সব নীতিনির্ধারকই এই বক্তব্য রাখেন। কারণ একটিই, জিয়া যে সামরিক শাসক ছিলেন না, পাকিস্তানী ধারা তিনি অনুসরণ করেননি তা প্রমাণের জন্য। কিন্তু এটি বিভ্রান্তিকর, সত্য নয়।
জেনারেল মনজুরকে সেনাপ্রধান না করে এরশাদকে সেনাপ্রধান করা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে তিনি মনে করেন। তিনি লিখেছেন, মনজুরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কারণ তিনি বেঁচে থাকলে প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারী কে তা উদ্ঘাটিত হয়ে যেত। তিনি ইঙ্গিত করেছেন এরশাদ হয়ত জড়িত ছিল। তার মতে, ‘জেনারেল মনজুরকে গ্রেফতার করেছিলেন যে ওসি তার নাম ছিল সম্ভবত কুদ্দুস। এরশাদের আমলে অল্প দিনের মধ্যেই তিনি প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক হন। তার প্রতি এরশাদের বহু পৃষ্ঠপোষকতা, দেশে নানা কথা ও সন্দেহের জন্ম দেয়।’ [পৃ. ৭৬] সাধারণ মতামতও তা, কিন্তু আরও আশ্চর্য যে বেগম জিয়া এক দশক ক্ষমতায় ছিলেন কিন্তু কখনও জিয়া হত্যার তদন্ত করেননি। এরশাদ যে তদন্ত করিয়েছিলেন তাতেই তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন।
এরপর তিনি এরশাদের ক্ষমতা দখল ও শাসনকাল নিয়ে আলোচনা করেছেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী সিএমএইচে এরশাদ ও এআরএস দোহা ক্ষমতা দখলের মূল ষড়যন্ত্র করেন এবং জিয়া যাদের বিশ্বাস করে কাছে টেনেছিলেন তারাই এরশাদের পক্ষ হয়ে কাজ করেন। লিখেছেন তিনি, ‘জেনারেল মজিদ উল হক (সংস্থাপনমন্ত্রী) এরশাদকে বরখাস্ত করার একটি কাগজ প্রায় তৈরি করে ফেললেন। কিন্তু মিলিটারি সেক্রেটারি ও জেনারেল মহব্বত জান চৌধুরী এরশাদকে তা জানিয়ে দেন। এরশাদ যখন উপলব্ধি করল আমি কখনই তার সহায়ক শক্তি হব না তখন আমাকে তিনি চাপ দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ থেকে সরিয়ে দিলেন।’ [পৃ. ৮২] 

       

এরশাদ সম্পর্কে দুর্নীতি ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে তখন সেনাবাহিনীতে কথাবার্তা হচ্ছিল এবং শুভানুধ্যায়ীরা জিয়াকে নিষেধ করেছিলেন তাকে সেনাপ্রধান করতে। জিয়া সেসব না শুনে এরশাদকে ১৯৭৯ সালে সেনাপ্রধান করলেন বা বলা চলে নিজের ধ্বংস ডেকে আনলেন।
জিয়া হত্যায় এরশাদের সায় ছিল এ রকম গুঞ্জন জিয়া হত্যার পর থেকেই শোনা যাচ্ছিল এবং জেনারেল মনজুরের ভাই মামলাও করেছিলেন এরশাদের বিরুদ্ধে। মামলাটি এখনও আছে কিন্তু মনজুরের ভাই মামলাটি আর চালাননি ভয়ে। এসব গুঞ্জন সত্যতা পায় জেনারেল মইনুলের লেখায়। তিনি লিখেছেন, সেনাপ্রধান হওয়ার পর সুকৌশলে ‘তার নিজের পছন্দের লোকদের গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বসম্পন্ন পদগুলোতে বহাল করলেন। মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের পার্বত্য বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বদলি করা হলো। কৌশলে স্পর্শকাতর পদগুলো থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সরিয়ে দেয়া হলো। সেনা ও সামরিক গোয়েন্দা বিভাগগুলোতে তিনি নিজের কাছের লোকদের নিয়োগ করলেন। পরে ক্ষমতা দখলের সময় এসব লোক তাকে সহায়তা করে এবং রাজনীতির দোসর হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন লে. জেনারেল মহব্বত জান চৌধুরী, যিনি পরে মন্ত্রী হন। বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য নিজের পছন্দমতো লোকদের পাঠিয়ে তার প্রতি আনুগত্যের জন্য পুরস্কৃত করতেন।’ [পৃ. ১১৬] পিএসও হিসেবে মইনুলের সঙ্গে বিষয়গুলো পরামর্শ করার কথা থাকলেও এরশাদ তা করতেন না। এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেছেন, জিয়া হত্যার পর রটনা হয় যে, মনজুর মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের ‘ষড়যন্ত্রের’ জন্য চট্টগ্রামে জড়ো করেছিলেন। ১৯৮১ সালে সেনাবাহিনী থেকে প্রকাশিত শ্বেতপত্রেও তা উল্লেখ করা হয়। ‘অথচ প্রকৃত সত্য হলো, আর্মি হেডকোয়ার্টার থেকেই ওই সেনা অফিসারদের বদলি করা হয়েছিল। আইন অনুযায়ী এক্ষেত্রে জিওসির বিশেষ করণীয় ছিল না।’ [ওই]
মইনুলের সঙ্গে জিয়ার সম্পর্কও শীতল হতে শুরু করে দুটি কারণে। এক. কর্নেল তাহের ও অন্যান্য সেনা কর্মকর্তার বিচারে ফাঁসি হয়েছিল। তার মতে, ‘এদের কাগজপত্র দেখে মনে হচ্ছে, তারা সত্যিকারভাবে ন্যায়বিচার পায়নি। তড়িঘড়ি করে তাদের বিচার করা হয়।’ [পৃ. ১১৭] এ বিষয়ে তিনি জিয়াকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত. রাজনীতি থেকে বিরত থেকে নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলেছিলেন। ফলে তাকে বগুড়ায় জিওসি করে এবং জেনারেল মনজুরকে ঢাকা স্টাফ কলেজে বদলি করা হয়। এটি জিয়া নিহত হওয়ার পাঁচ দিন আগের ঘটনা। বগুড়ায় যাওয়ার আগে এরশাদের মাধ্যমে [কারণ তিনি তখন সেনাপ্রধান] জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন। এরশাদ রাজি হলেন না। জোরাজুরি করায় ৩০ মে বিকেলে জিয়ার সঙ্গে মইনুলের সাক্ষাতকারের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু দেখা আর হয়নি। জিয়া নিহত হন।
এরপর মইনুল যা বর্ণনা দিয়েছেন তাতে মনজুরের নয়, এরশাদের সম্পৃক্ততা ছিল বলে মনে হয়। জিয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের ব্যবস্থা হওয়ার পর মইনুল মনজুরকে ফোন করেন। মনজুর ইঙ্গিত করলেন যে, জিয়া বোধহয় মইনুল এবং তাকে একই দলভুক্ত মনে করেন, তাই তাদের দুজনকেই বদলির আদেশ দিয়েছেন।
৩০ মে তিনি তখনও বিছানায় এমন সময় পিএসও জেনারেল নুরুদ্দীন জানালেন, জিয়া নিহত হয়েছেন। তিনি যেন সদর দপ্তরে চলে আসেন। মইনুল দ্রুত সেখানে গিয়ে দেখেন এরশাদ আগেই উপস্থিত। মইনুল ও মান্নান সিদ্দিকী এরশাদকে জিজ্ঞেস করলেন কী হবে? এরশাদ ইঙ্গিত করলেন সামরিক আইন জারির। তারা বললেন, সামরিক আইনের যুক্তি নেই। কারণ উপ-রাষ্ট্রপতি আছেন। এরশাদ তখনও উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারকে রাষ্ট্রপতি খুন হওয়ার ঘটনা জানাননি।
নয়টার দিকে মনজুর মইনুলকে ফোন করে জানালেন, জেনারেল জিয়ার নিহত হওয়ার ব্যাপারে পরে বিস্তারিত জানাবেন। ‘কিন্তু এ মুহূর্তে সবাই যেন শান্ত থাকে। ঢাকায় আর যেন রক্তক্ষয়, সংঘর্ষ ইত্যাদিতে কেউ জড়িয়ে না পড়ে। আমি আর বলতে পারছি না, অসুবিধা আছে। এরপর ফোন লাইন কেটে যায়। অনেক পরে ১৯৯০ সালে আমি জানতে পারি, জেনারেল মনজুর তখন জুনিয়র অফিসারদের দ্বারা পরিবেষ্টিত ও চাপের মধ্যে ছিলেন।’ [পৃ. ১২১]
মইনুল আরও লিখেছেন, এ ব্যাপারে মাসকারেনহাস তার গ্রন্থে যা লিখেছেন তা অসত্য। ‘এরশাদের শাসনামলে এসব ভুল তথ্য আর্মিতে মুক্তিযোদ্ধাবিরোধীরা মাসকারেনহাসকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সরবরাহ করে।’ [পৃ. ১২১]
মইনুল যখন থাইল্যান্ডে রাষ্ট্রদূত তখন জিয়া হত্যার আসামি মেজর খালেদ ও মোজাফফর ব্যাংককে। তারা মইনুলের সঙ্গে দেখা করে ওই দিনের ঘটনা বিবৃত করেন।
জেনারেল মনজুরের অজান্তে মতি, মাহবুব ও মোজাফফরের নেতৃত্বে ২৪ ডিভিশনের জুনিয়র অফিসাররা জিয়াকে জোর করে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেন। ‘উদ্দেশ্য ছিল জিয়াকে চাপ দিয়ে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়, বিশেষ করে সেনাপ্রধান এরশাদসহ অন্যান্য দুর্নীতিপরায়ণ সামরিক অফিসার এবং পাকিস্তানপন্থী শাহ আজিজ ও অন্য দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীদের মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করানো। কারণ এরশাদের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হয়রানি, বিশেষভাবে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের ঢালাওভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে বদলি করাসহ সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের ব্যাপক দুর্নীতি নিয়ে জুনিয়র অফিসারদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ ছিল।’ [পৃ. ১২১-২২]
জিয়ার খোঁজে সার্কিট হাউসে পৌঁছার পর গুলির শব্দ শুনে জিয়া বেরিয়ে আসেন ও একদল জুনিয়র অফিসার তাকে ঘিরে ধরে। এমন সময় মাতাল মতি স্টেনগানের গুলিতে জিয়ার দেহ ঝাঁঝরা করে দেয়। মতির ক্ষোভ ছিল জিয়ার ওপর। ১৯৮১ সালের মে মাসের প্রথম দিকে আমেরিকায় প্রশিক্ষণের জন্য জিয়া পাঁচজনকে মনোনয়ন করেন যার মধ্যে মতি, ইমামুজ্জামান ও সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন। কিন্তু পাঠানো হয় ‘পাকিস্তান প্রত্যাগত’ সাখাওয়াত হোসেনকে [নির্বাচনী কমিশনার] যিনি ‘১৯৮১ সালে এরশাদ কর্তৃক মনোনীত একটি কোর্ট মার্শালের প্রসিকিউটর যেখানে ষড়যন্ত্র ও অভ্যুত্থান পরিকল্পনার দায়ে মুক্তিযোদ্ধা অফিসার লে. কর্নেল নুরুন্নবী বীরবিক্রম, কর্নেল দিদার ও একজন বেসামরিক ব্যাংকার মনির হোসেনের বিচার হয়েছিল।’ এদের বরখাস্ত ও শাস্তি দেয়া হয়।
মইনুল পরিষ্কার ভাষায় লিখেছেনÑ “আমি ভালভাবেই জানতাম রাষ্ট্রপতি জিয়া হত্যা কোন পরিকল্পিত সামরিক অভ্যুত্থান বা বিদ্রোহ ছিল না। এটা ছিল কিছু তরুণ সেনা অফিসারের ক্ষোভের বহির্প্র্রকাশ এবং তা ক্ষমতা দখলের জন্য ছিল না।’ [পৃ. ১২৩] জিয়া হত্যার পর মনজুরকে এতে জড়ানো হয়। তার ভাষায়, ‘জেনারেল মনজুরকে পলাতক অবস্থা থেকে ধরে এনে কোন তদন্ত ছাড়াই সুপরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রপূর্বক ঠাণ্ডা মাথায় অন্তরীণ অবস্থাতেই হত্যা করা হয়। হত্যার পর তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে জিয়া হত্যার জন্য দায়ী করা হয়। জেনারেল মনজুরকে অন্তরীণ অবস্থায় হত্যার কারণ হলো, নিরপেক্ষ তদন্তও বিচার হলে জিয়া হত্যার ষড়যন্ত্রের আদ্যোপান্ত প্রকাশ পেয়ে যেত। আর তাকে হত্যা করা না হলে ভবিষ্যতে অনেকের কার্যসিদ্ধির পথ হতো কণ্টকময়।’ [পৃ. ১২৪] তার মতে ‘মূলত জেনারেল মনজুরকে হত্যা করা হয়েছে ক্ষমতালোভী, উচ্চাভিলাষী, ষড়যন্ত্রকারী ও কিছু অমুক্তিযোদ্ধা অফিসারের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে। এটি সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের ফল।’ [পৃ. ১২৫]
জেনারেল এরশাদ মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের কীভাবে সরালেন তার বিবরণ আছে। কোন আইন-কানুনের ধার না ধেরে তাদের ফাঁসি দেয়া হয়। এটি ছিল মইনুলের ভাষায়, ‘আর্মির মুক্তিযোদ্ধা অফিসার নিধনের নীলনকশা।’
এ প্রসঙ্গে জেনারেল ওসমানী যে আচরণ করেছিলেন তার উল্লেখ করতে হয়। মইনুলের পেছনে তখন সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা লাগানো। এদিকে বন্দী মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের আত্মীয়-স্বজনরা তার কাছে নিয়ত সাহায্যের জন্য আসছে। তখন অনেক চেষ্টা করে গোপনে তিনি মুফলেহ ওসমানীর বাসায় জেনারেল ওসমানীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। মইনুল কাকুতি-মিনতি করে ওসমানীকে বলেন, একটি বিবৃতি দিতে। প্রথমে তিনি বলেন, ‘তুমি দেশে হানাহানি শুরু করতে চাও নাকি?’ তারপর অপ্রাসঙ্গিকভাবে বললেন, ‘তাহলে তোমরা (মুক্তিযোদ্ধারা) দুই বছরের সিনিয়রিটি নিলে কেন? সে জন্যই আজ এত গণ্ডগোল হচ্ছে। তারা প্রতিশোধ নিচ্ছে ইত্যাদি।’ [পৃ. ১২৮] এরপর তিনি উত্তেজিত হয়ে চলে গেলেন।
পরে ওসমানী একটি বিবৃতি দেন। সেই বিবৃতি দেয়ানোর ব্যাপারে কর্নেল নুরুজ্জামান বীরউত্তম, শাহরিয়ার কবির, ডা. কাজী কামরুজ্জামান, আমিসহ বিভিন্ন সময় দৌড়াদৌড়ি করেছি বলে অস্পষ্ট মনে পড়ছে, কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।
এরশাদ এখানেই থামেননি। ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে তিনি চাকরিচ্যুত করেন। বিমানবাহিনী প্রধান সদরুদ্দীন নিজের মর্যাদা রক্ষার্থে পদত্যাগ করেন। মইনুল লিখেছেন, এ রকম আরেকটি ঘটনা ১৫ বছর পর ঘটেছিল যখন নাসিম সেনাপ্রধান। নাসিম কিন্তু নিজের মর্যাদা রাখেননি। মইনুল এরপর রাষ্ট্রপতি ও বিচারপতি সাত্তারের সঙ্গে দেখা করেন। কারণ, ইতোমধ্যে তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে। তিনি সাত্তারকে জানান যে, এরশাদ ‘মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরিচ্যুত ও বিদেশে পাঠিয়ে তার অবস্থান পাকাপোক্ত করছেন এবং শীঘ্রই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার জন্য তৈরি হচ্ছেন।’ [পৃ. ১৩৯] সাত্তার কোন উত্তর দেননি। এরপর তিনি বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। বেগম জিয়া তাকে জানান, তিনি ভালভাবেই বুঝছেন যে জিয়া হত্যায় মনজুর জড়িত ছিলেন না। ভাগ্যের পরিহাস হলো মইনুল জিয়া ও বেগম জিয়াকে এক সময় রক্ষা করেছেন। এরশাদের ষড়যন্ত্রের কথা বেগম জিয়াকে জানিয়েছিলেন, সেই বেগম জিয়া পরে মইনুলকে সেনাবাহিনীতে ফেরত নিতে অস্বীকার করেছিলেন।
জেনারেল মইনুল তার গ্রন্থের উপসংহারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করেছেন যার সঙ্গে আমি এবং আরও অনেকে একমত। তার মতেÑ
১. ‘একটি সামরিক বাহিনীকে দক্ষ, কৌশলী, সৎ ও নিষ্ঠাবান করে গড়ে তোলার জন্য প্রাথমিকভাবে প্রয়োজন সৎ, বিনয়ী ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব’ যার মধ্যে রয়েছে চারিত্রিক দৃঢ়তা, উন্নত আত্মমর্যাদাবোধ, পেশার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা এবং নৈতিক শৃঙ্খলা। আমাদের সেনাবাহিনীতে এসব বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে গঠিত নেতৃত্বের অভাবই ছিল প্রকট।’ [পৃ. ১৪১]
২.‘আমাদের সামরিক বাহিনীর সামনে এখন সুনির্দিষ্ট কোন লক্ষ্য নেই। লক্ষ্যহীন সামরিক বাহিনী তাই কোন উদ্দেশ্যহীন বৈষয়িক লাভ-লোকসান বিচারে ব্যস্ত। [পৃ. ১৪২]
৩.‘অফিসাররা মানসিকতার দিক থেকে ঔপনিবেশিক। এদের অধিকাংশই দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও ঔপনিবেশিক ও পাকিস্তানী মানসিকতা বদলাতে পারেননি। ফলে জনসাধারণের প্রতি থেকেছেন উন্নাসিক।’ [পৃ. ১৪৩]
৪. ‘সামরিক বাহিনীর পেশা ও শৃঙ্খলাকে কখনই গুরুত্ব দেয় হয়নি, বরং বিভিন্ন সময় হীন ব্যক্তি বলে তা পদদলিত করা হয়েছে।’ [ওই]
তার বিবরণ এরশাদ আমলের মাঝামাঝি পর্যন্ত। কিন্তু এ বিবরণই স্পষ্ট করে তোলে কীভাবে জিয়া ও এরশাদ নিজ স্বার্থে সেনাবাহিনীকে শুধু নষ্ট নয় পাকিস্তানীকরণও করেছিলেন, যার ফল আমরা ২০০৬-০৮ সালে তা দেখেছি।
(সমাপ্ত)
    











মন্তব্যসমূহ