৭০ হাজার বছর আগেই ধ্বংস হয়ে যেতো মানবজাতি!
b
সৌজন্য; ডেস্ক, বাংলামেইল২৪ডটকম
ঢাকা: পৃথিবীর অন্য অনেক বিলুপ্ত প্রাণির মতো আমাদের মানবজাতিও অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারতো। আর সেটা হলে আমাদের আজকের এই পৃথিবীতে কোনো মানুষের অস্তিত্ব থাকতো না। থাকতো অন্য প্রাণিদের অস্তিত্ব। সারা পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াতো ওরা।
শুনতে রূপকথার মতো মনে হলেও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এটাই প্রমাণিত। প্রায় ৭০ হাজার বছর আগেই মানবজাতির ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। বড় ধরনের একটি দূর্ঘটনা থেকে বেঁচে গিয়েছিল হাতে গোনা কিছু মানুষ। আর আমরা তাদেরই বংশধর।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা মতে, প্রায় ৭০ হাজার বছর আগে ইন্দোনেশিয়ার একটি আগ্নেয়গিরি থেকে ভয়াবহ এক অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটেছিল। ওই অগ্ন্যুপাতে কালো ছাইয়ে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল আকাশ। পৃথিবীজুড়ে শুরু হয়েছিল একটি বরফ যুগের। এতে মারা গিয়েছিল অগণিত মানুষ। শুধু বেঁচে ছিল অল্প কিছু ‘কৈ মাছের প্রাণ’।
তবে আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনাটির সাথে অনেক বিজ্ঞানী-ই এখন দ্বিমত পোষণ করেন। কিন্তু এটা সত্য যে প্রায় ৭০ হাজার বছর আগে মানবজাতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছিল।
মার্কিন গণমাধ্যম ‘বিজনেস ইনসাইডার’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনাটি আমাদের পূর্ব-পুরুষদের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন করেছিল। সৃষ্টি করেছিল জনসংখ্যা হ্রাস, বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘জেনেটিক বোটলনেক’। এই জেনেটিক বোটলনেক জনসংখ্যার জিনগত বৈচিত্র্যকে কমিয়ে আনে।
গবেষণায় দেখা যায়, স্বল্প জনসংখ্যা রোগ ও পরিবেশগত বিপর্যয় রোধে অনেক বেশি সক্ষম এবং জিনগত বৈচিত্র্য কমে গেলে এরা দ্রুত একস্থানে জড়ো হতে পারে। কোনো প্রজাতির সদস্য সংখ্যা কম থাকায় জিনগত রূপান্তর ঘটে খুব ধীরে। আর তাই বিবর্তনকেও অনেকটা ধীরগতিসম্পন্ন করে দেয় বোটলনেক।
এ অবস্থায় যে উপকারী রূপান্তরটি ঘটে তা হলো: ছোট সম্প্রদায়ের মধ্যে জিনগুলো খুব দ্রুত প্রবাহিত হয়। এছাড়া জেনেটিক বোটলনেকের প্রধান প্রতিক্রিয়া হচ্ছে: ছোট এবং বিচ্ছিন্ন জনসংখ্যাকে খুব দ্রুত তার মূল বংশধারা থেকে সরিয়ে নেয়। যেহেতু পৃথিবীব্যাপী জনসংখ্যা ছড়িয়ে পড়ছে আর এদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে নানা বৈচিত্র্য। তাই বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, এ থেকে প্রমাণিত হয়, বেশ কয়েকটি বোটলনেকের সম্মুখীন হয়েছিল মানবজাতি। এ কারণেই একই মানবজাতি থেকে সৃষ্টি হয়েছে অনেক উপজাতি।
এর একটি ভৌগোলিক মানচিত্র তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এতে দেখা যায়, একটি বোটলনেক ঘটেছিল উত্তর আফ্রিকার ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠির মধ্যে। এই জনগোষ্ঠি যখন বিভক্ত হয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপ এবং এশিয়ার কিছু অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে ঘটেছিল আরেকটি বোটলনেক। আরো একটি বোটলনেক ঘটেছিল যখন আমাদের পূর্ব-পুরুষরা অস্ট্রোনেশিয়ার উদ্দেশ্যে বেরিং ভূ-সেতু পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ত্যাগ করেছিল এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়েছিল।
আর এ কারণে আদিবাসী আমেরিকানদের চেয়ে আফ্রিকার জনগণের ডিএনএ-তে জিনগত বৈচিত্র্য অনেক বেশি এবং অন্য প্রাণিদের চেয়ে মানুষের ডিএনএ’র জিনগত বৈচিত্র্য অনেক কম।
নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে এবং বিংশ শতাব্দির শুরু দিকের গবেষণায় দেখা যায়, অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনাটি ঘটেছিল ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে। এটি এশিয়ার আকাশকে সম্পূর্ণরূপে রুদ্ধ করে দিয়েছিল। আর এতে পৃথিবীজুড়ে প্রায় হাজার বছরব্যাপী বিরাজ করেছিল ঠাণ্ডারযুগ। যাকে আমরা বলি বরফযুগ।
তবে প্রত্মতাত্ত্বিক গবেষণা প্রমাণ করে, সে সময়ে ভারতে বসবাসকারী শিকারজীবি মানুষেরা ওই অগ্ন্যুৎপাত দ্বারা খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তারা খুব দ্রুতই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়।
পূর্ব আফ্রিকার মালাউই হ্রদের তাপমাত্রা সূচকে দেখা যায়, সেখানকার আবহাওয়া কখনোই এতটা ঠাণ্ডা হয়ে যায়নি যে মানুষ বসবাস করতে পারবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, বড় ধরনের কোনো অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা যদি ঘটে না থাকে তবে ৭০ হাজার বছর আগের বোটলনেকটি কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল।
এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত না। এমনো হতে পারে, কোনো রোগের কারণে ঘটেছিল ভয়াবহ একটি বোটলনেক। তবে ঘটনা যা-ই ঘটুক না কেন এটা নিশ্চিত যে ৭০ হাজার বছর আগে আমাদের মানবজাতি ভয়ানক এক বিপদের মধ্যে পড়েছিল এবং তাতে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারতো পুরো মানবজাতি। নিশ্চিত বিষয়টি জানার জন্য বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কারের অপেক্ষায় থাকতে হবে আমাদের।
সৌজন্য; ইল২৪ডটকম/ আরএস
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন