প্রতিদিনের নাস্তা ও খাবার এবং কাজ করা প্রসঙ্গে ; ডা. শুভাগত চৌধুরীর ৷

  
     

                         কাজও করুন সুস্থও থাকুন


                         ডা. শুভাগত চৌধুরী  ৷ 

  

নিজের অবসরে সঙ্গী হতে পারে বই। মডেল: মারিয়া নূর, ছবি: সুমন ইউসুফ                   সংসার-অফিস সব সামলে চলতে হয় আপনাকে। এত কিছুর ভিড়ে নিজের দিকে তাকানোর সময় কই। ২৪ ঘণ্টাকে


                  যদি আরেকটু বাড়ানো যেত, তেমনটা ভাবেন তাঁরা। কর্মজীবী নারীর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য ২৪ ঘণ্টার একটি রুটিনবিধি দিয়েছেন অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী

                 কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে ওঠা সবচেয়ে ভালো। তবে কর্মজীবী নারীরা অনেক সময় তা পারেন না। ভোরে উঠলে দিনের সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও তাজা সময়টা পাওয়া যায়। এই সময় শরীর, মন, আত্মাকে প্রকৃতির সঙ্গে মেলাবার সময়।
                 ভোর ছয়টা

                                 ভোর ছয়টায় ঘুম থেকে উঠতে হবে। তবে বিছানা থেকে লাফ দিয়ে ওঠা নয়। শরীর ও মনকে দিনের সেই সময়ের সঙ্গে যুক্ত করা চাই দু-এক মিনিট। বিছানা থেকে ধীরে ধীরে ওঠার আগে বুকভরে তিন-চারটি শ্বাস নিতে হবে এবং ধীরে ধীরে ছাড়তে হবে। হাত-পা ছুড়ে নিলে ভালো। আড়মোড়া ভাঙা বেশ কাজের।
জগিং করতে পারেন নিয়মিতছয়টা পাঁচ

                  খালি পেটে দুই গ্লাস পানি পান (লেবুর পানিও পান করা যায়) করতে হবে। এরপর হাত-মুখ, পা ধোয়া। দাঁত মাজা। প্রাতঃকৃত্য করা। প্রচুর পানি পান করলে, সবজি-ফল খেলে পেট পরিষ্কার থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না। প্রস্রাবও হয় ঠিকমতো। একটা কথা বলা ভালো, দাঁত মাজার সঙ্গে, জিবও পরিষ্কার করতে হয় এবং মাড়ি মালিশ করতে হয়।
সকালে গোসল সেরে নিতে হবে। গোসলের আগে শরীরে তেল মেখে গোসল করা ভালো। তেলের মালিশ পছন্দ না হলে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন।

                 হাতে সময় থাকলে সকালে মিনিট বিশেক হাঁটলে ভালো। তা না হলে যোগব্যায়াম। সবচেয়ে ভালো প্রাণায়াম। অল্প সময় থাকলে শ্বাসক্রিয়া চর্চা। বেলি ব্রিদিং। শ্বাস গ্রহণের সময় যেন পেট ফুলে উঠে এবং ছাড়ার সময় চুপসে যাবে। ১০ বার এমন করতে হবে।


                  সকাল সাড়ে ছয়টা* সাড়ে ছয়টার মধ্যে স্বামী, ছেলেমেয়ে ও নিজের জন্য নাশতা তৈরি করা।

             নাশতা হতে হবে খুব স্বাস্থ্যকর।

                   * দুই টুকরো গমের রুটি, এক কাপ কর্ন ফ্লেকস। এক গ্লাস দুধ/ দই।

                   * একটি ডিম পোচ। একটি মৌসুমি ফল। ফলের ঘন রস।
                   * ওটমিল/ দুধ/ দই/ কলা ও কর্ন ফ্লেকস।

                      * সকালে প্রোটিন অবশ্য ডিম ও দুধ থেকে আসে।

                      * অনেকক্ষণ পেটও ভরা থাকবে। সকালে চিনি, মিষ্টি, চর্বি খাবার না খাওয়া ভালো।

                      বাচ্চাদের টিফিন বক্সে দিতে পারেন সবজি স্যান্ডউইচ, দুধ/ রুটি/ সবজি/ ফল, পানি। ফল/ ফলের রস।

                       লাঞ্চবক্সে দেওয়া যায় স্যান্ডউইচ সবজি, পনির/ সেদ্ধ ডিম/ ফল/ ফলের রস/ সবজি সলাদ। পানির বোতল থাকবে।
সকাল সাড়ে সাতটা


                   স্কুলে বাচ্চাদের রওনা করিয়ে দিয়ে নিজেও তৈরি হয়ে নিন। হালকা প্রসাধনী দিয়ে দৌড় অফিসে। এর আগে খবরের কাগজে চোখ বোলান।
মন ভালো থাকলে কাজ করতে ভালো লাগবে                সকাল সাড়ে দশটা


          * সকাল সাড়ে দশটায় হালকা নাশতা করতে পারেন অফিসে। এক টুকরো ফল, চিনি ও দুধ ছাড়া রং চা। লেবু বা আদা যোগ করা যায়। বিস্কুট দুটো এবং রং চা হতে পারে।


               দুপুর দেড়টা থেকে দুইটাদুপুরে খাবার খাবেন

                দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে। এই বেলার খাবারগুলো হবে সুষম ও বৈচিত্র্যময়। খাবার হবে নয় ইঞ্চি ব্যাসের প্লেটে। এর অর্ধেক জুড়ে থাকবে শাকসবজি ও ফল।


              * এক-চতুর্থাংশে থাকবে প্রোটিন। এক-চতুর্থাংশে শ্বেতসার। এক কাপ দুধ।

               * প্রচুর পানি। পানীয় হিসেবে পানি সবচেয়ে উত্তম।

                   * মৌসুমি শাকসবজি ভাপে সেদ্ধ। মৌসুমি ফল। আমিষ হবে চর্বি ছাড়া। কচি মাংস/ মাছ/ ডাল/ শিম/ বরবটি। শর্করা হবে লাল চালের ভাত দেড় থেকে দুই কাপ (চায়ের কাপে), আটার রুটি। ওটমিল। চিনি অতিসামান্য। লবণ অতিসামান্য। রান্নার জন্য এক চা চামচ তেল।
                  * ঘি/ মাখন/ মিষ্টি/ চর্বিযুক্ত খাবার না খেলে ভালো।
             সন্ধ্যা ছয়টা


                   বাড়িতে ফিরে ফ্রেশ হয়ে ৩০ মিনিট শরীরচর্চা। বাচ্চারা খেলাধুলা করার সময় নিজে সাইকেল চালাতে, জগিং, হাঁটতে, দৌড়াতে পারেন।

                স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলেও হাঁটতে যেতে পারেন। সাঁতার কাটতে পারেন। এতে পারস্পরিক বোঝাপড়া আরও বাড়বে।

                  ফিরে এসে হালকা নাশতা। যেমন: বাদাম, ছোলা, ফলের রস, পপকর্ন। নিজেও এক কাপ চা হাতে বারান্দায় বসতে পারেন। সতেজ লাগবে।
                সন্ধ্যা সাতটা

                      বাচ্চাকে পড়ালেখা করানো। সব কাজ মাকেই করতে হবে তা না। গৃহস্থালির কাজে স্ত্রীকে অবশ্যই সাহায্য করতে হবে। বাচ্চার পড়ানো থেকে রান্না সব কাজ স্বামী–স্ত্রীর ভাগাভাগি করে করা উচিত।

এক কাপ চা সতেজ রাখবে আপনাকেএক কাপ চা সতেজ রাখবে আপনাকেরাত আটটা থেকে নয়টা


রাত আট-নয়টার মধ্যে রাতের খাবার খাওয়া ভালো। তবে যানজটের কারণে ফিরতে দেরি হলে ফ্রেশ হয়েই খেয়ে নেবেন। বেশি রাত করে খাবার খাওয়া ঠিক না। রুটি, ভাতের সঙ্গে মাংস, মাছ, সবজি খাবেন। এরপর বাচ্চাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করবেন।


রাত ১০টাএর ফাঁকে নিজের সময়ও বের করে নিতে হবে। বই পড়তে পারেন। প্রিয় কোনো টিভি অনুষ্ঠানও দেখা যেতে পারে।


                   রাত ১১টাপ্রিয় গান শুনতে শুনতে এগারোটার মধ্যে ঘুম। ঘুমের কক্ষে কেবল শয্যা ও হালকা মিউজিকের জোগান থাকবে। আর কিছু নয়। ঘুম ভালো হলে সব ভালো। শরীর ভালো। মন ভালো। আবার পরের দিনের অপেক্ষা। ভোরে উঠে সেসব দিনরাত্রি চলে এভাবেই।
                   নিজেকে ও পরিবারকে প্রশ্রয় দিতে হলে ছুটির দিনে দেওয়া যায়। বই পড়া, ফেসবুকে বসা, সিনেমা দেখা এসব আপনার মানসিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজন। মনের খোরাক লাগে বৈকি।
অবসর অবকাশে বাচ্চাদের নিয়ে ঘোরা। একটু আহারে-বিহারে-আনন্দে প্রশ্রয়।
এভাবেই চলবে কর্মজীবী নারীর দিনরাত্রি।


              লেখক: পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা।

মন্তব্যসমূহ