ব্যায়াম করলে শারীরিক উপকারিতা কী ? ব্যায়ামের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট গববেষকরা কী বলেন ?


        

                    ব্যায়াম  করা  নিয়ে  গবেয়করা  যা  বলেন  

               শরীরে বলশক্তি যেন নেই এমন অনুভূতির কারণ খুঁজতে গিয়ে ওয়াশিংটন ডিসির মাইন্ড-বডি মেডিসিন সেন্টারের পরিচালক এবং কমপ্লিমেন্টারি এ্যান্ড অলটারনেটিভ মেডিসিন পলিসির হোয়াইট হাউস কমিশনের চেয়ারম্যান ডা. জেমস. সি গর্ডন বলেন,

          এর একটি কারণ হলো শরীরচর্চার অভাব

              ডা. গর্ডন- বলেন   সবাই যেন ছুটছে ব্যস্তত্রস্তকখনও চাপের মধ্যেমনে হচ্ছে অনেক কাজ করছেন তারা এ জন্য সব রোগীর জন্য তিনি ব্যায়ামের পরামর্শ দেন। আমরা শুয়ে বসে আছি বেশি সময়হাঁটাচলা বড়ই কম। শরীরচর্চা নেই বললেই চলেশরীর মনে প্রচ- চাপ- ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে পড়ছে মানুষ এ জন্য 

                   আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনটিগ্রেটিভ মেডিসিনের একজন ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান ডা. মনিকা মিকলিবাস্ট বলেনমানুষ এত কাজের ভারে আছে যে একটু শ্বাসফেলার অবকাশ নেই। সঠিক শ্বাস-প্রশ্বাস মন ও শরীরকে প্রশান্ত করেএতে আত্মারও শান্তি হয় 


               
গভীর শ্বাসতলপেট থেকে উঠে আসা শ্বাস গ্রহণ বর্জন আমরা করিনা। ডা. মিকলিবাস্ট বলেন মনকে উজ্জীবিত করার জন্য গভীর ভাবে  শ্বাস  গ্রহন    শ্বাস  ছাড়া   খুবই উপকারী 
এই  জন্য  যা  করতে  হবে  তা  হচ্ছে  :  প্রথমে  পা দুটো ফাঁক করেশিরদাড়া সোজা করে বসতে  হবে    একটি চেয়ারে  ।   এর  পর  ধীরে ধীরে শ্বাস নিন নাকের ফুটো দিয়ে যাতে বাতাসে ভরে যায় দুটো ফুসফুসপেটের তলা পর্যন্ত,   ফুলে তুলতে  হবে পেটকে  এই  প্রক্রৃয়ায় ।  পরে নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়তে  হবে । এবং শ্বাস নিতে হবে এক থেকে তিন গোনা পর্যন্ত  , এরপর শ্বাস ছাড়তে  হবে   ২ গোনা পর্যন্ত

              মসৃণ এ চক্রে শ্বাস গ্রহণ   শ্বাস  ছাড়তে  হবে    বিরতি ছাড়া    এই শ্বাসকর্ম দুমিনিট  প্রথমে করে  পরে  তা  বাড়াতে  হবে    ৫-১০ মিনিট পর্যন্ত কমপক্ষে প্রতিমিনিটে বারোটি শ্বাসচক্র শেষ  করতে  হবে । যদি প্রয়োজন হয়মন নিবদ্ধ করতে  হবে  কোন মোমবাতির শিখার দিকে,   নয়ত কোন ফুল বা অর্থপূর্ণ কোন ছবির দিকে 

            ডালাসে কুপার ওয়েলনেস প্রোগ্রাম নির্বাহী পরিচালক কনিটাইন মনে করেনশক্তির মূল নিয়ামক হলো দৈহিক ফিটন্যাস। যত বেশি ফিটন্যাসকোন কাজ তত সাবলীলভাবে করতে পারি আমরা 
         
এ জন্য জিমে যাওয়া বা অনেক সময় খরচ করা প্রয়োজন নেই ফিটন্যাসের জন্য

           কু-পার ইনস্টিটিউট থেকে গবেষণা করে দেখা গেছে প্রতিদিনের জীবনযাপনের কাজকর্মে (যেমন সিঁড়ি বেয়ে ওঠাগাড়ি দূরে পার্কিং লটে রেখে হেঁটে গন্তব্যে আসা) একই সুফল পাওয়া যাবে। এই টুকরো টুকরো ফিটনেস চর্চাতে অবিলম্বে শক্তি আসে শরীরেসারা শরীরে অক্সিজেনপূর্ণ রক্ত পাম্প হয়। দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য বজায় থাকে। কারণ দিনে ৩০ মিনিট ব্যায়ামে বোনের ঝুঁকি অনেক কমে যায় 


!
          
টাইন পরামর্শ দেনজীবনে  শরীর সঞ্চালন যোগ করার সহজ উপায় খুঁজে নিন। রাতে টিভিতে খবর দেখার সময় ১০ মিনিট উঠ-বস ও পুশআপ করতে পারেন। আরও আছে , যেমন  উঠে দাঁড়ানহাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিন, যখন কম্পিউটার ডাউনলোড হচ্ছে বা প্রিন্টিং হচ্ছে । কর্ডলেস ফোনে কথা বলুন হেঁটে হেঁটে। হাঁটুন প্রতিদিন সঙ্গীর সঙ্গে 
লম্বা হয়ে দাঁড়ান  

                পোর্টল্যান্ডে ফেল্ডেনক্রেইটসগিল্ড অব নর্থ আমেরিকার সহকারি পরিচালক এন্ড্রি উইনার বলেনঅনেকের ধারণাসঠিক ও সুষ্ঠু দেহভঙ্গি মানে কেবল টানটান পেটএর চেয়ে বেশি কিন্তু এই  ব্যাপারটা  ৷ কেবল চলা নয়  ৷  সঠিক  ভাবেে  চলাচল করার অভ্যাস গড়ার শুরু করতে  হবে  ৷
               কি করে করতে  হবে  ?  প্রথমে  স্বাভাবিক দেহভঙ্গি করে দাঁড়ান। এবার লাফিয়ে ওঠার জন্য প্রস্তুতি নিন। দেখুন দেহভঙ্গি কি করে বদলে যায়। সামনের দিকে লাফানোর প্রস্তুতি নিনএরপর পেছন দিকেএরপর ডানদিকে বাঁ দিকে। প্রতিটি নড়নের সময় দেহভঙ্গির পরিবর্তনের দিকে নজর রাখুন। যে কোন দিকে তৎক্ষণাৎ নড়তে সাহায্য করে যে দেহভঙ্গি তাই ভাল দেহভঙ্গি 

             নিউইয়র্ক সিটির নিউইয়র্ক স্টেট সাইকিয়াট্রিক ইনস্টিটিউটে ক্লিনিক্যাল ক্রনোবায়োলজির পরিচালক ডক্টর মাইকেল টারম্যান বলেনক্লান্তির একটি কারণ হলো আলোর অভাব। অবশ্য এ বক্তব্য শীতপ্রধান দেশের মানুষের জন্য যেখানে কড়া আলো বড়ই বিরল 
তবে এ কথা ঠিক সূর্যালোকে হাটাজগিং করা বা যে কোন ধরনের ব্যায়াম শরীরে শক্তির উদ্বোধন ঘটায়। ভোরের আলো শরীর মনকে উজ্জীবিত করে 
কোন না কোন ধরণের শরীর চর্চা করুন ঘরের বাইরে ৩০-৪৫ মিনিট। সম্ভব হলে ঘুম থেকে উঠে হাঁটুন কিছু সময়। এমনকি মেঘলা দিনে হাঁটলেও আলোক ফটোন উদ্দীপ্ত করে মস্তিকে 

      


বসতে  হবে  সুন্দর করেস্বস্তিতে , যেমন 
গাড়ির হুইলের ওপর ঝুঁকে থেকে  বসলে বা   কম্পিউটার কি বোর্ডের ওপর নুয়ে  বসে  কাজ করলে ,   ঘাড়ে  ব্যথা   , গলায় ব্যথা  এবং  পিঠে ব্যথা  হতে  পারে । একে প্রতিরোধ করতে আলেকজান্ডার তৈরি  করেছেন  একটি    কৌশল

            আমেরিকান এ সোসাইটির প্রবক্তা হলেন হোপ গিলারম্যান 
 
তার  মতে     চেয়ারের সামনের কিনারায় বসে মেঝেতে দুটো পা রেখে   বসলে  শরীরের ওজন কোমরের হাড়ের ওপর সমভাবে বিতরণ হয়ে থাকে ৷
   
এবার আঙ্গুল দিয়ে হাতকে পেঁচিয়ে হাত মাথার ওপর তুললে  এবং হাতের তালু  ছাদ অভিমুখী  রাখুন  । দৃষ্টি সামনের দিকে রেখে শিরদাঁড়া উপর দিকে টেনে তুলুন। শিরদাঁড়া টানটান রেখে পাশে বাহু রেখে হাত ছেড়ে দিন। সম্পূর্ণ শ্বাস ছেড়ে দিনএরপর আস্তে আস্তে শ্বাস নিনধীরে ধীরে শিথিল করুন ঘাড়বাহুগ্রীবামুখ ও পিঠের পেশি 

                            এশল্যান্ডে ননপ্রফিট এনার্জি মেডিসিন ইনস্টিটিউটের সভাপতি ডনাএডেন বলেন“আধুনিক জীবনযাত্রা আমাদের ওপর এমন আঘাত হানছে যাতে শরীরের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছেজীবনের সমতাও নষ্ট হতে চলেছে এডেন ও তার সহযোগী বিজ্ঞানীরা দেখেছেন শরীরে রয়েছে হাল্কা পাতলা এনার্জি সিসটেম যা আমাদের সুস্থ রাখার জন্য তৈরি

             উজ্জীবিত ছন্দে শক্তি প্রবহমান রাখার জন্যযা শরীরকে সুস্থ রাখবেএমন শক্তির প্রবাহ রাখার কৌশল জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা  

                                 এই    জন্যে  এডেন যে  পরামর্শ  দিয়েছেন  তা  হচ্ছে  ,  সকালে যদি বিছানা ছেড়ে উঠতে কষ্ট হয়,   জোর  করতে হয়   বিছানা  ছাড়তে  , তাহলে  নিজের কান নিজে  মুচড়ে দিন। কানের ওপর দিকে টানুন এবং লতিও টানুন। এতে একুপাংচার বিন্দুগুলো উদ্দীপ্ত হবেত্বকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তড়িৎ চৌম্বক ক্ষেত্রগুলো নতুন দিনের শক্তি আহরণের জন্য খুলে যাবে। তখন  বিছানা  ছাড়তে  আর  অসুবিধা  হবে  না  ৷

             দিনের দুর্বল বা ঝুলে যাওয়া সময়গুলোতে কিভাবে শক্তির উদ্বোধন ঘটাবেন  ? এডেন তিনটি একুপাংচার বিন্দুকে মৃদু আঘাত বা ম্যাসেজ করার পরামর্শ দেন : কে-২৭ বিন্দুকণ্ঠাস্থির কেন্দ্রস্থল থেকে এক ইঞ্চি নিচেহাড়ের নিচে ঈষৎ নিচু স্থানে। বক্ষ ফলকের কেন্দ্রস্থলে। প্রীহাবিন্দুপ্রতিটি স্তনের ঠিক নিচে পাজরের উপরে অবস্থিত। প্রতিটি বিন্দুকে ১৫-২০ সেকেন্ড টোকা দেয়া বা মৃদু ম্যাসেজ করতে হবেসে সঙ্গে গভীর শ্বাস নিতে হবে
    
               ইয়োগা বিশেষজ্ঞ সারা ইভানহো বলেছেনযোগব্যায়ামে ক্লান্ত শরীর চনমন করে ওঠে। বিশেষ করে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে এ চর্চা বেশ ফলপ্রসূ। যেসব ভঙ্গি বক্ষের ব্যায়াম করায় সেগুলো উজ্জীবক সে  গুলোর  অভ্যাস করতে  হবে  । কারণ এতে শ্বাসগ্রহণ ক্ষমতা প্রসারিত হয় এবং স্নায়ুতন্ত্র উদ্দীপ্ত হয়। আর কিছু কিছু ভঙ্গি  আছে   যাতে শরীরকে এমনভাবে নোয়ানো হয় যেহৃৎপি- রেখা থেকে মাথা নিচুতে থাকেএতে মগজে রক্ত চলাচল বেড়ে গিয়ে শরীর উজ্জীবিত হয় 

    
             
‘এনাটমি অব দি ইলনেস’ নামে একটি ক্লাসিক গ্রন্থের লেখক নরমান কাজিনস লিখেছেন “  একটি দুরারোগ্য রোগ থেকে মুক্তি পাবার জন্য কাজিনস  হাস্য ও কৌতুক রসের সাহায্য নিয়েছেন। তিনি দেখেছেন দমফাটা হাসির চলচ্চিত্র ১০ মিনিট দেখলে দু’ঘণ্টা বেদনাহীন নিন্দ্রা যাওয়া যায়।  অন্যভাবে  জোরে  শব্দকরে  হাসলে  ও  উপকার  পাওয়া  যায়  ৷ 


               
নিউইয়র্কের হিউমার প্রোজেক্টের পরিচালক জোযেল গুডম্যান বলেনবৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণ রয়েছে হাসির নিরাময়ী ও উজ্জীবক ক্ষমতার পক্ষে। তিনি বলেনএকটি ভাল হাসির অনেক ইতিবাচক ফলাফল রয়েছে শরীরের ওপর  ,  হাসিতে  শরীর    উজ্জীবিত হয় ৷ শরীরে  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা  জন্মে  ,  হাসি   শ্বাসক্রিয়ার উন্নতি ঘটায়  , হাসি   স্ট্রেস হরমোনের মান কমিয়ে  ফেলতে  সক্ষম  ৷ 

     
               টাকসনে ক্যানিয়ন  হেলথ্ রিসোর্টে একজন মুভমেন্ট থেরাপিস্ট রেবেকা গরেল বলেন,

               “যখন অনেকে বলেনব্যায়াম করতে কষ্ট     ক্লান্ত লাগে  ৷  কিনত্তু  গবেষকরা    বলেন ,  সেই ক্লান্তি যত না বেশি দৈহিক এর চেয়ে বেশি মানসিক

           তাই নড়াচড়নে  বা  শরীর  সঞ্চলনে মানুষের শক্তির স্থানান্তর ঘটে  আবেগ সুস্থিত হয় এবং মনে আসে অপার আনন্দ

           তিনি আরও বলেন“তবে আমাদেরকে ব্যায়ামের পাশ্চাত্য ধাঁচের সামরিক দৃষ্টিভঙ্গির বদল করতে হবেএমন ধুমধাড়াক্কা ব্যায়াম যে খুব কঠোর ব্যায়ামআরও কঠোর ব্যায়াম ক্লান্তির সীমা পেরিয়েও-এমন ব্যায়াম আর নয়

       বরং করতে  হবে  প্রাচ্যধরণের ব্যায়াম-মনযোগ  সহকারে ৷ যে  ব্যায়াম উপভোগ করা যায়ভাললাগে এমন কোন শরীরচর্চা  করতে  হবে  ভাল  ফল  পেতে  হলে ।  আর সেই ব্যায়াম হলো নৃত্য। সব সংস্কৃতিতেই রয়েছে নৃত্য লোকায়ত চর্চায় ও শিল্পে 
         বাজনার  সঙ্গে  করতে  হবে  শরীর  চর্চার  নাচ  ব্যায়াম  ৷  পছন্দমতো শরীর নাচুক ছন্দে ছন্দে যেভাবে যে  চায়। যদি রাগ থাকে মনে তাহলে দুম্ দুম্ পা ফেলে  বা  বালিশে ঘুষি মেরে নাচ  করা যেতে  পারে । মনে যদি দুঃখ থাকে তাহলে ঈষৎ দুলে  শরীরকে   স্পন্দিত করতে  হবে । শরীরের মধ্য দিয়ে আবেগের প্রকাশ ঘটলে মনে শান্তি আসেমন সতেজ হয়

     
               সানফ্রানসিসকোর ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট এবং ইয়োগা প্রশিক্ষক ডক্টর জুডিথ হ্যানসন ল্যাসেটার বলেন,

             অনেক সময়ই আমরা যখন ক্লান্ত হয়ে পড়িতখন আমরা একে অতিক্রম করার জন্য কোন কিছুর জন্য হাত বাড়াই যেমন    চা বা কফি। কিন্তু আমাদের যা প্রয়োজন সে মুহূর্তে তা হলো ক্লান্তি দূর করা


  •                     
    ডা. ল্যাসেটার বলেন৫-১০ মিনিটের   গভীর শিথিলায়ন করবে শরীরকে খুব উজ্জীবক। দেয়ালে দুটো পা উঁচু করে ঠেকিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে শরীরকে   শিথিল করা  যায়  ৷  এতে  সবগুলো পেশিশরীরের ওজন যেন মাখনের মতো গলে মেঝেতে পড়ে যাবে ৷ তখন পেটভরে গভীর শ্বাস নিতে  হবে  ৷ এবং নিজেকে  একবারে  আলগা  করে  দিতে    হবে ৷ এতে  শরীর  মন  প্রফুল্ল  হয়ে  উঠবে  ৷

      (
    অধ্যাপক ডা. শুভাগত চেšধুরী  একটি  প্রতিবেদন  থেকে  এই  লেখাটি  তৈরি  করা  হয়েছে 

মন্তব্যসমূহ