বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের রাজনীতির বাস্তবতা ও একজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান :



      
                          বাংলাদেশ    পাকিস্তানি  রাজনীতির  বাস্তবতা :

     হে মোর দুর্ভাগা দেশ, যাদের করেছ
অপমান
অপমান হতে হবে তাহাদের
সবার সমান।

             
              


স্বাধীনতার   মূল ঘোষণার অনুবাদ নিম্নরূপ:

"এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উত্খাত করএবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক"




        শেখ মুজিবুর রহমান (মার্চ ১৭, ১৯২০ - আগস্ট ১৫, ১৯৭৫) বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক নেতা যিনি পূর্ব পাকিস্তান কে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব এবং বাংলাদেশের জাতির জনক হিসেবে বিবেচিত। তিনি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সভাপতি, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং পরবর্তীতে এদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। জনসধারণের কাছে তিনি "শেখ মুজিব" এবং "শেখ সাহেব" হিসাবে বেশি পরিচিত এবং তার উপাধি 'বঙ্গবন্ধু' তার কন্যা শেখ হাসিনা ওয়াজেদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান সভানেত্রী এবং বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।

১৯৪৭- ভারত বিভাগ পরবর্তী পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতির প্রাথমিক পর্যায়ে শেখ মুজিব ছিলেন ছাত্রনেতা। ক্রমে তিনি আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতৃত্বের উচ্চপদে আসীন হয়েছিলেন। তার বড় গুণ ছিল তুখোড় বক্তৃতা প্রদানের ক্ষমতা। সমাজতন্ত্রের পক্ষসমর্থনকারী একজন অধিবক্তা হিসেবে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তনের জনগোষ্ঠীর প্রতি সকল ধরণের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। জনগণের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি একসময় ছয় দফা স্বায়ত্ত্বশাসন পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন যাকে পশ্চিম পাকিস্তানে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিকল্পনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। ছয় দফা দাবীর মধ্যে প্রধান ছিল বর্ধিত প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসন যার কারণে তিনি আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের অন্যতম বিরোধী পক্ষে পরিণত হন। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের সাথে যোগসাজশ ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তার বিচার শুরু হয় এবং পরবর্তীতে তিনি তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বচনে তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করে। তথাপি তাকে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়া হয় নি।

পাকিস্তানের নতুন সরকার গঠন বিষয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে শেখ মুজিবে আলোচনা বিফলে যাওয় পর ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মার্চ ২৫ মধ্যরাত্রে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকা শহরে গণহত্যা পরিচালনা করে। একই রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং পরবর্তীকালে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। রহিমুদ্দিন খান সামরিক আদালতে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে তবে তা কার্যকরা হয় নি। মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। সমাজতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতাকে ভিত্তি করে সংবিধান প্রণয়ন এবং সে অনুযায়ী রাষ্ট্র চালনার চেষ্টা সত্ত্বেও তীব্র দারিদ্র্য, বেকারত্ব, সর্ববযাপী অরাজকতা এবং সেই সাথে ব্যাপক দুর্নীতি মোকাবেলায় তিনি কঠিন সময় অতিবাহিত করেন। ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দমনের লক্ষ্যে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি সকল দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে নিজেকে আজীবনের জন্য রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। এর সাত মাস পরে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখে একদল সামরিক কর্মকর্তার হাতে তিনি সপরিবারে নিহত হন। (সূত্র; ইন্টারনেট )






          পাকিস্তানের এক সাহিত্যিক বলেছেন, 'আমরা কায়েদে আজমকে হত্যা করিনি, কিন্তু

তাঁর আদর্শ লক্ষ্য হত্যা করেছি।

          তিনি চেয়েছিলেন  এই  অঞ্চলে   মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র

গড়তে। আমরা সেই লক্ষ্য বিসর্জন দিয়ে একটি ধর্মভিত্তিক শরিয়াহ স্টেট গড়েছি। ফলে আজ পাকিস্তান

ধ্বংসের মুখে।


   বাংলাদেশে   বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু  এখনও সম্পূর্ণভাবে   তাঁর লক্ষ্য

আদর্শকে হত্যা করা সম্ভব হয়নি। তাঁর লক্ষ্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষ সোনার বাংলা গড়ে তোলা  এবং ৭১

 সালের  মুক্তিযুদ্ধের  চেতনায়  একটি  অসাম্প্রদায়িক  ধর্মনিরপেক্ষ  রাষ্ট্র  প্রতিষ্ঠা

   করা , যেখানে  ধনী    গরীবের  মধ্যে  কোনো  বৈষম্য  থাকবেনা 

     সেই লক্ষ্যকে রক্ষা করার সংগ্রাম নানা ব্যর্থতার মধ্যে  দিয়ে  এখনো এগিয়ে  চলছে ।

          বঙ্গবন্ধু এই যুদ্ধেরও এখন ও মূল  নায়ক এবং তিনি  মানুষের  মনে  এখনো   বেঁচে

আছেন । তিনিই   এখন  পর্যন্ত  বাংলাদেশের  প্রোটেক্টর রয়েই  গেছেন  অন্ততঃ  অধিকাংশ

 বাঙালীর  মনে  ৷ তাই  আমার  ধারনা   কোনো আঘাতই বাংলাদেশের স্বাধীনতা

গণতান্ত্রিক অস্তিত্ব ধ্বংস করতে পারবে না  । আমি এই পাকিস্তানি  সাহিত্যিকের  কথার  মধ্যে বাস্তবতা  খুঁজে  পাই  এবং  সহমত  পোষণ  করি ৷



          পাকিস্তানী শাসকদের শোষণ-বঞ্চনা, ঔপনিবেশিক লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে বাঙালী জাতিকে মুক্ত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।

একাত্তরের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস পাকিস্তানী জল্লাদরা কারাবন্দী রেখে কবর খুঁড়েও যাঁকে হত্যা করার সাহস পায়নি; অথচ স্বাধীনত মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় সেই হিমালয়সম ইষ্পাতদৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একাত্তরের পরাজিত শক্তির পেতাত্মা নরপিশাচ ঘাতকরা হত্যা করে ক্ষমতার পালাবদল করেছিল।

   কিন্তু তারপরও একটি জাতি অবহেলিত মানুষের মুক্তির অগ্রদূত হিসেবে বঙ্গবন্ধু শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বেই ইতিহাস হয়ে রয়েছেন।

    
নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ দেশের মানুষের প্রতি মমত্ববোধের কারণে বাঙালীর জাতির জনক উপাধি অর্জন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।

        জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বিংশ শতাব্দীতে যাঁরা মহানায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

        সাম্য, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার বিরামহীন সংগ্রামে অবিস্মরণীয় ভূমিকার কারণে বঙ্গবন্ধু ভূষিত হয়েছিলেন নোবেলখ্যাত বিশ্বশান্তি পরিষদেরজুলিওকুরিপদকে।

      বিশ্বের কোটি কোটি বাঙালীর হৃদয়ের মনিকোঠায় বঙ্গবন্ধু যে অমলিন, তার প্রমাণ মেলে সারা বিশ্বের বাঙালীর ওপর পরিচালিত বিবিসির জরিপে। সারাবিশ্বের বাঙালীর শ্রদ্ধাঞ্জলিতে বঙ্গবন্ধহাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম বাঙালী হিসেবে নির্বাচিত হন।
        গ্রামের হিন্দু, মুসলমানদের সম্মিলিত সামাজিক আবহে তিনি দীক্ষা পান অসাম্প্রদায়িকতার। বস্তুত পক্ষে সমাজ পরিবেশ তাঁকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম করতে শিখিয়েছে। তাই পরবর্তী জীবনে কোন শক্তির কাছে, যে যত বড়ই হোক, আত্মসমর্পণ করেননি; মাথানত করেননি  তাই  বাঙালীর  কাছে  তিনি  এখনও  একমাত্র  আর্দশ  নেতাই    রয়ে  গেছেন 
 সৌজন্য;  (কিছু  অংশের  জন্যে  জনকণ্ঠের  একটি  প্রতিবেদন )


        

মন্তব্যসমূহ