পাকিস্তানীরা ১৯৭১ সালে গণহত্যা চালাবার সময় বলেছিল ‘আদমি নেহি মাঙতা, জমিন মাঙতা।’ আজ খালেদারাও একই ভাষায় হত্যা চালাবার সময় যেন বলতে চাচ্ছেন, ‘আদমি নেহি মাঙতা, কুরশি মাঙতা।’
বাতাসে লাশের গন্ধ
...........রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই
আজো আমি মাটিতে মৃত্যূর নগ্ননৃত্য দেখি,
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে…
এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দু:স্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময় ?
বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে
মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।
এই রক্তমাখা মটির ললাট ছুঁয়ে একদিন যারা বুক বেঁধেছিলো।
জীর্ণ জীবনের পুঁজে তারা খুঁজে নেয় নিষিদ্ধ আধাঁর,
আজ তারা আলোহীন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায়।
এ যেন নষ্ট জন্মের লজ্জায় আরষ্ট কুমারী জননী,
স্বাধীনতা – একি হবে নষ্ট জন্ম ?
একি তবে পিতাহীন জননীর লজ্জার ফসল ?
জাতির পতাকা খামচে ধরেছে আজ পুরোনো শকুন।
বাতাশে লাশের গন্ধ
নিয়ন আলোয় তবু নর্তকীর দেহে দুলে মাংসের তুফান।
মাটিতে রক্তের দাগ -
চালের গুদামে তবু জমা হয় অনাহারী মানুষের হাড়
এ চোখে ঘুম আসেনা। সারারাত আমার ঘুম আসেনা-
তন্দ্রার ভেতরে আমি শুনি ধর্ষিতার করুণ চিৎকার,
নদীতে পানার মতো ভেসে থাকা মানুষের পচা লাশ
মুন্ডহীন বালিকার কুকুরে খাওয়া বিভৎস্য শরীর
ভেসে ওঠে চোখের ভেতরে। আমি ঘুমুতে পারিনা, আমি
ঘুমুতে পারিনা…
রক্তের কাফনে মোড়া – কুকুরে খেয়েছে যারে, শকুনে খেয়েছে যারে
সে আমার ভাই, সে আমার মা, সে আমার প্রিয়তম পিতা।
স্বাধীনতা, সে আমার – স্বজন, হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন -
স্বাধীনতা – আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল।
ধর্ষিতা বোনের শাড়ী ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা।
www.banglarkobita.com
বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর কবীর চৌধুরী স্মৃতি বক্তৃতায় বলেছেন-
“মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদ মানুষের শত্রু। এই
শত্রুর স্বরূপ বড় জটিল।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও
বিভিন্ন অঞ্চলে মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদ হলোকাস্ট তৈরি করে চলেছে, সাধারণ মানুষকে ভিকটিম করে
চলেছে।
তাঁর এই সাধারণ মানুষ কারা? যারা সামান্য রোজগেরে, ঘরসংসার করে সন্তানসন্ততির
জন্য মৃত্যুর পূর্বে সামান্য বিত্ত রেখে যেতে চায় তাদেরকে
বেঁচে থাকার ব্রত থেকে সরিয়ে এনে মৌলবাদের মধ্যে, জঙ্গীবাদের মধ্যে, পরস্পরের মধ্যে, হিন্দু ও মুসলমান, খ্রীস্টান ও ইহুদী ধারণা
ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের হাতে তলোয়ার তুলে দিয়েছে।
মানুষকে এবস্যুলেট মুসলমান
করা, এবস্যুলেট
হিন্দু করা, এবস্যুলেট
খ্রীস্টান করা, এবস্যুলেট
বৌদ্ধ করা, এবস্যুলেট
ইহুদী করা মৌলবাদের জঙ্গীবাদের লক্ষ্য। এর ফলে নষ্ট হয় মানবিকতা, মানুষের অধিকার, মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই
করার কমনফ্রন্ট। মানুষ তখন লড়াই করে মানুষের বিরুদ্ধে। এই
লড়াই পাপ।
মানুষ সেক্যুলার না হলে মানুষ মানুষের ওপর টর্চার করে। এই টর্চার মানবাধিকারবিরোধী। জঙ্গীবাদ ও মৌলবাদ মানুষকে খুন করতে শেখায়- এই শেখানো কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।
এটি মনে করে পাকিস্তানীরা বা তাদের জারজ বা মানসপুত্ররা যাদের রাজনীতির ফের শুরু ১৯৭৫ থেকে। আমরা নই। তাই আমাদের কর্তব্য তা প্রতিরোধ করা। আমরা যেন তা মনে রাখি।
সবশেষে একটি কথা বলি, পাকিস্তানীরা ১৯৭১ সালে গণহত্যা চালাবার সময় বলেছিল ‘আদমি নেহি মাঙতা, জমিন মাঙতা।’ আজ খালেদারাও একই ভাষায় হত্যা চালাবার সময় যেন বলতে চাচ্ছেন, ‘আদমি নেহি মাঙতা, কুরশি মাঙতা।’ ( সৌজন্যে মুনতাসী )
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন