ওহী বা প্রত্যাদেশ নাজিল নিয়ে ও সন্দেহ ?
এই লেখাটি আরম্ভ করার পূর্বে কিছু ভূমিকার উল্লেখ করা হল ৷ কারণ কোরআনে কি ভাবে এবং কোন পদ্ধতিতে ওহী নাযিল হয় বা হয়েছে তা না জানলে বিষয়টি স্পষ্ঠ হবে না ৷ তাই ওহী নাযিলের একটি পটভূমি ব্যাখ্যা করে মূল লেখাটায় আলোকপাত করা হয়েছে ৷ সমঝদারদের জন্যে ইশারাই কাঁফি !! তাই বিস্তারিত কিছু না লিখে কোনো মন্তব্য ছাড়া শুধু ঘটনাগুলির বিবরণাদি দেয়া হল আগ্রহিদের জন্যে ৷ পাঠকরা নিজেরাই একটি সিন্ধান্তে পৌছাতে পারবেন ঘটনাগুলো অবগতির পর আশাকরি ৷ তাই প্রথমে তথ্যাদি বর্ণনা করা হল , পরে মূল ঘটনা বর্ণনা করা হল আগ্রহীদের জন্যে ৷ একটি প্রশ্ন মনে আসতে পারে যে এতো সতর্কতার পরেও শয়তান কীভাবে ওহী নকল করেছে বা কীভাবে ভূল আয়াত নাযিলে বা যুক্ত করতে কৃতকার্য হয়েছে ? না কি ডালমে কোচ হায় ?
কোরআনে ওহি নাযিল বিষয়ে কিছু তথ্যাদি ;-
সাধারণত মানুষের মধ্যের তিনটি জিনিষের ক্ষমতা নাকি অনুশীলনের মাধ্যমে বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় ৷ প্রথমটি পঞ্চইন্দ্রিয় , দ্বিতীয়টি বোধি বা জ্ঞান এবং শেষটি হচ্ছে অলৌকিকভাবে কোনো গায়েবী বা পরলৌকিক ক্ষমতা অর্জন ৷ কিন্তু ৩য় বা শেষটিকে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি এবং ধর্মীয় বিশ্বাসীরা অলৌকিক নির্দেশ প্রাপ্তি বা ওহী ( প্রাত্যাদেশ ) নাযিল হওয়া বলেন ৷ ওহী শুধু আল্লাহ্ মনোনিত ধর্মীয় গুরু অর্থাৎ নবী এবং রসুলরা পেয়ে থাকেন ৷ অর্থাৎ মানুষ অনেক কিছুই তাদের পঞ্চইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে জানতে পারে, বুঝতে পারে ৷ আবার বোধী বা ধ্যান , তপস্যা ইত্যাদির মাধ্যমে ও মানুষ অনেক শক্তি অর্জন করে অনেক কিছু উপলব্দী করতে সক্ষম হয় ৷
কিন্তু যে সমস্ত বিষয়াদি সাধারণ মানুষদের অর্জিত ইন্দ্রিয়লব্দ অভিজ্ঞতা কিংবা বোধী প্রাপ্ত জ্ঞান আহরণের বাইরে থেকে যায় , যাকে সাধারণ মানুষ বা বিশেষভাবে অনুশীলনপ্রাপ্ত জ্ঞানি মানুষরা কোনো বোধী , ধ্যান , তপস্যা বা আরাধণার মাধ্যমে অর্জন করতে সক্ষম হয় না , তাহাই সষ্টার বা আল্লাহ্ র পক্ষ থেকে আল্লাহ্ র মনোনিত নবী বা রসূলরা ওহী বা প্রত্যাদেশের মাধ্যমে পেয়ে থাকেন ৷ অনেকের মতে মানুষের জ্ঞান বা বুদ্ধির সীমা যেখানে শেষ হয়ে যায় , সেখান থেকেই ওহী প্রাপ্তি জ্ঞানের কার্যকারিতা শুরু হয়ে যায় ৷
ওহী বা প্রত্যাদেশ প্রাপ্তির ও মোটামোটি ৫ টি পদ্ধতি আছে বলে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় ৷
১ম পদ্ধতি হচ্ছে যার উপর ওহী নাযিল হবে , ওহী নাযিলের পূর্বে তাঁর কিছু শারীরিক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায় ৷ তাছড়া ঘণ্টার আওয়াজ শোনা সহ তিনি নানা প্রকার শারীরিক অভিজ্ঞতার সম্মূখিন হতে হয় ৷ শারীরিক অনেক কষ্ট সহ্য করার মুহূর্তে মৃদ কিছু শব্দ করে ওহী নাযিল সম্পূর্ণ হয় ৷ তবে ওহী গ্রহণকারী তা অনায়াসে গ্রহণ করতে পারেন ৷ তবে ঐ সময়ে ঐ স্থানে ৩য় কোনো পক্ষের উপস্থিতি কেহ টের পায় না ৷ তবুও বিশ্বাসীরা শুনতে পাওয়া মৃদ আওয়াজকে ৩য় কোনো পক্ষের আওয়াজ বলে বিশ্বাস করেন ৷
২য় পদ্ধতিতে আল্লাহ্ র দূত ফেরেশতা হযরত জিবরাঈল (আ: ) স্বয়ং মানুষের রূপে নবীজী (স:) এর কাছে উপস্থিত হয়ে সরাসরি নবীজীকে (স:) ওহী পৌঁছে দিয়ে যেতেন ৷ ঐ সময়ে হযরত জিবরাঈল সাধারণত সাহাবী হযরত কালবী ( রা ) এর আকৃতি ধারণ করে আসতেন বলে বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায় ৷
৩য় পদ্ধতি ; এই পদ্ধতিতে হযরত জিবরাঈল (আ:) অন্য কারো রূপ ধারণ না করে সরাসরি নিজের আসল রূপেই আবির্ভূত হতেন ৷ তবে শেষ নবীর জীবনে নাকি মাত্র তিনবার নবীজী(স:) এর সামনে উপস্থিত হয়েছেন ৷ একবার নবীজী(সঃ) এর অনুরোধে স্বরূপে আবির্ভূত হয়েছেন ৷ ২য় বার মি’রাজের রাতে এবং শেষবার নবুওয়েতের প্রাথমিক যুগে মক্কার “ আজইয়াদ” নামক স্থানে ৷ তবে ৩য় বারের দেখা দেয়ার ব্যাপারটি সন্দেহযুক্ত বলে মনে করেন কেউ কেউ ৷ ( সূত্র; ফতহুল-বারী , ১ম - খন্ড , ১৮-১৯ পৃষ্ঠা )
চতুর্থ পদ্ধতি হচ্ছে কোনো মাধ্যম ছাড়া সরাসরি আল্লাহ্ র সঙ্গে সরাসরি বাক্যালাপ ৷ যেমন মি’রাজের রাত্রিতে এরকম ঘটনা ঘটেছে ৷ অন্য একবার নাকি নবীজী (সঃ) স্বপ্নযোগে আল্লাহ্ র সঙ্গে বাক্যালাপ করেছেন ৷ ( সূত্র; আল-এতক্কান- ১ম, খন্ড , ৪৬ পৃষ্ঠা )
পঞ্চম এবং শেষ পদ্ধতি ; হজরত জিবরাঈল (আঃ) অদৃশ্য অবস্থায় থেকে নবীজীর অন্তরের মধ্যে কোনো কথা ফেলে দিতেন , যাকে “ ফছফির-বুহ” বলা হয় ৷ (সূত্র; আল- এতক্কান - ১ম খনড , ৪৩ পৃষ্ঠা )
এই পদ্ধতিগুলোকে আবার বিভিন্ন সুরাতে আয়াত নাযিল করে নিশ্চিত করা হয়েছে ৷ নিম্নে এরকম কিছু আয়াতের উল্লেখ করা হল ৷
কোরআনের ২নং সুরা বাকারার ৯৭নং আয়াত ;
“ বলো ‘ যে জিবরাঈলের শক্রু সে জেনে রাখুক সে তো আল্লাহ্ র নির্দেশে তোমার হৃদয়ে এ পৌঁছে দেয় যা এর পূর্ববর্তী ( কিতাবের ) সমর্থক আর বিশ্বাসীদের জন্য যা পথপ্রদর্শক ও শুভসংবাদ” ৷
কোরআনের ১৬ নং সুরা নাহল এর আয়াত -১০১ , ১০২ ও ১০৩ নং -
১০১ নং-আয়াত ; “আমি যখন এক আয়াতের জায়গায় অন্য এক আয়াত উপস্থিত করি , তখন তারা বলে , ‘ তুমি তো কেবল মিথ্যা বানাও ’ ৷ আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেন তা তিনি ভালো জানেন , কিন্তু ওদের অনেকেই ( তা ) জানে না ৷
১০২ নং আয়াত ; “ বলো, ‘ তোমার প্রতিপালকের কাছ থেকে পবিত্র আত্মা ( জিবরাঈল ) সত্যসহ এ নিয়ে এসেছে বিশ্বাসীদেরকে শক্ত করার জন্য এবং মুসলমানদের জন্য পথনির্দেশ ও সুখবররূপে ” ৷
১০৩ নং আয়াত ; “ আমি অবশ্যই জানি যে ওরা বলে , ‘ তাকে ( মুহাম্মদকে ) শিক্ষা দেয় এক মানুষ ’ , ওরা যার প্রতি ইঙ্গিত করে তার ভাষা তো অ- আরবি , কিন্তু এ তো পরিষ্কার আরবি ভাষা ” ৷
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য যে তখন অবিশ্বাসীদের মধ্যে একটি কথা প্রচলিত ছিল যে , নবী মুহাম্মদ (সঃ) কে খৃষ্টধর্ম থেকে বহিস্কৃত সারজিয়াস নামক এক মস্ক বা পোরহিত যে খৃষ্ট ধর্মের ব্যাপারে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করার জন্যে তাকে খৃষ্ট জগত থেকে বের করে দেয়া হয় , সে গোপনে নবীর সঙ্গে সাক্ষাত করে নবীকে খৃষ্ট ধর্মের ব্যাপারে ভ্রান্ত ধারণা দেয়ার চেষ্টা করে ৷ এরই প্রেক্ষাপটে সুরা নাহল এর ১০৩ নং আয়াত নাযিল হয়েছে ৷
মূল ঘটনাবলি;
হিজাজের বেদুঈন সহ আরবরা আল-লাত , আল- উয্ যা এবং মানত কে প্রতিমা রূপে অত্যান্ত সম্মানের চোখে দেখত ৷ এই জন্যে তারা এই তিন দেবতার অবস্থানের স্থান - নাখলাহ্ , তায়েফ , এবং কুদাইদকে ও পবিত্র স্থান এবং পবিত্র উপাসনার গৃহ মনে করে সেই সব স্থান দর্শনে নিজেদের অস্তিত্বের খোঁজ পেত এবং এক ধরনের আধ্যাত্মীক শান্তিি পেত ৷
পবিত্র কোরানে এই তিন কন্যার ব্যাপারে একটি আয়াত নাজিল হয়েছে ৷ অনেকের মতে কোরানে এই তিন দেবীকে স্বীকৃতি দেয়া একটি নাজিলকৃত আয়াত পরে জিরাইল (আ) এর মাধ্যমে নাজিল হয় নাই প্রমানিত হওয়ায় তা প্রত্যাহার করা হয় ৷
ইবনে সা’দ এবং তাবারি লিখিত ইতিহাস থেকে জানা যায় যে , একবার শয়তান ঐশী বা প্রাত্যাদেশ অবতরণের সময়ে হস্তক্ষেপ করতে সক্ষম হয়েছিল ৷ কোরানের ৫৩ নং সুরা নজম অবতীর্ণ হওয়ার সময় এমন দুটি আয়াত উচ্চারণের প্রেরণা লাভ করেছিলেন মুহাম্মদ (সঃ ) ৷ যেখানে আল-লাত , আল-উয্ যা এবং মানতকে ঈশ্বর ও মানুষের মাঝে একটা মাধ্যম হিসেবে শ্রদ্ধা করা যাবে , এমন ঘোষণা নাকী ছিল ? কুরাইশরা যেহেতু বানাত আল-ল্লাহ্ কে স্বর্গীয় সত্তা বলে বিবেচনা করত ৷ তাই তারা ভূলবশতঃ বিশ্বাস করে বসেছিল যে কোরান এবং মুহাম্মদ (সঃ) ঐ তিন কন্যাকে ঈশ্বরের সমমর্যাদায় স্থান দিয়েছেন অবশেষে ৷ তাই তাদের মধ্যেকার তিক্ত বিরোধের অবসান ঘটে যাচ্ছে বলে ধারণা জন্মে যায় কুরাইশদের মনে ৷
কিন্তু মূল গল্পটা ছিল এমন যে , মুহাম্মদ ( সঃ) এর পর যে প্রত্যাদেশ লাভ করেন তাতে এমন ইঙ্গিত প্রদান করা হয় যে বানাত আল-ল্লাহ্ র বিশ্বাসকে মেনে নিয়ে আয়াত নাজিল হওয়ার ব্যাপারটি আসলে শয়তানের অনুপ্রেরণায় ঘটেছে ৷
এর পরিণামে পরবর্তিতে কোরান থেকে ঐ তথাকথিত দুটো আয়াত এক্সপাঞ্জ করা হয় ৷ এবং তার স্থলে নিম্নলিখিত নতুন আয়াত প্রতিস্থাপিত হয় ৷ সেখানে ঘোষিত হয় ; ঐ তিন কন্যা বা দেবী আরবদের কল্পনা মাত্র এবং তারা উপসনার কোনো যোগ্যতাই রাখে না ৷ তবে মুসলিমরা এগল্পকে অপ্রামাণিত এবং অসত্য গল্প বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে ৷
মক্কায় অবতীর্ণ ৫৩ নং সুরা নজ্ ম এর ১৯ নং থাকে ২৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে ,
-
“ ১৯- তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও উজ্জা সম্বন্ধে ,
২০- আর মানাত সম্বন্ধে ?
২১ - তোমরা কি মনে কর তোমাদের জন্যে পুত্রসন্তান আর আল্লাহ্ র জন্য কন্যাসন্তান ?
২২ -এরকম ভাগ তো অন্যায় ৷
২৩ - এগুলো তো কেবল কতকগুলো নাম যা তোমাদের পূর্বপুরুষেরা ও তোমরা রেখেছ ৷ আর এর সমর্থনে আল্লাহ্ কোনো দলিল প্রেরণ করেন নি ৷ তোমরা তো অনুমান ও নিজেদের স্বভাবেরই অনুসরণ কর , যদিও তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের তরফ থেকে পথনির্দেশ এসেছে ৷ (* )
ঐতিহাসিক তথ্য মতে এবং মুহাম্মদ (সঃ) এক নিকট আত্মীয় উরওয়াহ বিন আল-যুআয়ের ভাষ্য থেকে জানা যায় যে প্রথমদিকে কুরাইশরা মহাম্মদ (সঃ) কে মেনেই নিয়েছে ৷ তবে তিনি যতক্ষণ দরিদ্র এবং অভাবীদের জন্যে দরদ মেশান আল্লাহ্ র ধর্ম প্রচার করেছেন ততক্ষণ পর্যন্ত ৷ মক্কার প্র্ত্যেকে প্রাচীন পরম ঈশ্বরের পরিবর্তিত ধর্ম গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিল ৷
কিন্তু যেই তিনি ঘোষণা দিলেন যে আল্লাহ্ র উপাসনা করার পূর্বশর্ত হিসেবে অন্যান্য প্রাচীন দেবতার অর্চনা বাদ দিতে হবে ৷ তখনই কুরেইশরা তাঁর এবং তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ৷ আর এদের মধ্যে বেশিরভাগ ছিল যাদের সম্পত্তি আল-লাত দেবতার শহর তায়েফে ছিল , সেই সব কুরাইশরা ছিল সবার মধ্যে প্রথম এবং সংখ্যায় ও অধিক ৷ তবে আব - আলিয়াহ্ র বক্তব্য থেকে আরো জানা যায় যে কুরাইশরা একটা আপোস রফায় আসতে চেয়েছে যদি মুহাম্মদ (সঃ) তিন বানাত আল-ল্লাহ্ সম্পর্কে কিছু ভাল মন্তব্য করেন ৷ আর এর জন্যে কুরাইশরা মুহাম্মদ ( সঃ) কে মক্কার ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ঢোকার অনুমতি দিতে ও প্রস্তুত ছিল ৷ সে অনুযায়ী বলা হয়ে থাকে যে , হয়ত মুহাম্মদ (সঃ) আল-লাত , আল-উযযা এবং মানাতের ব্যাপারে প্রশংসাসূচক দুটো আয়াত আবৃত্তি করেছেন আর তাদের বৈধ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বর্ণনা করেছেন ৷
ঐতিহাসিক তাবারির মতে মুহাম্মদ (সঃ) সত্যিকার এবং সৃজনশীল একটা সমাধানের চেষ্টায় থাকা কালিন সময়ে একদিন কা’বায় ধ্যানরত অবস্থায় ৫৩ নং আয়াতের দুটো আয়াতের আবৃত্তি করেছেন ৷ তখন কা’বায় উপস্থিত কুরাইশরা তা শুনতে পেয়ে অন্যদেরকে ও জানায় এবং সবাই আনন্দও প্রকাশ করেছে ৷ ঐ দুটো আয়াত বলা হয়-যে
“ তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও উযযা সম্মন্ধে , আর তৃতীয়টি মানাত সম্বন্ধে , এরা মহিমান্বিত পাখী (যারানিক ) যাদের মধ্যস্থতা স্বীকৃত ” ৷
ঘটনার এই বিবরণ অনুযায়ী , এই আবৃত্তিকে নতুন এক প্রত্যাদেশে মনে করে কুরাইশরা অত্যন্ত খুশি হয়ে উঠে ৷ এবং ইহা সারা শহরে রটিয়ে দিয়ে বলে যে মুহাম্মদ ( সঃ) কুরাইশদের তিন দেবতার সম্পর্কে চমৎকার কথা বলেছেন যাতে দেবতাদের কে মহামান্বিত যারনিক উল্লেখ করে তাদের মধ্যস্থতার অনুমোদন দিয়েছেন ৷
এর পর মুহাম্মদ ( সঃ) যখন শুনলেন তাঁর উচ্চারিত আয়াতগুলোতে শয়তানের প্ররোচনা ছিল ৷ তিনি তখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন ৷ তখন ঈশ্বর সঙ্গে সঙ্গে একটা প্রাত্যাদেশ পাঠানোর মাধ্যমে তাঁকে আশ্বস্ত করেন ৷ যেখানে বলা হয়েছে অন্য পয়গম্বরগণও একই রকম “ শয়তানি ভ্রান্তি’র” শিকার হয়েছেন ৷ কারণ ঈশ্বর সবসময় বাতিলযোগ্য আয়াতের চেয়ে অনেক উন্নতমানের আয়াত নাজিল করে অবস্থার উন্নতি ঘটান ৷ এই ব্যাপার নিয়ে নাজিল কৃত ২২ নং সুরা হজ এর ৫১ , ৫২ এবং ৫৩ নং আয়াতের উল্লেখ করা হল নিম্নে ৷
২২ নং সুরা হজ (মক্কায় অবতীর্ন )
আয়াত ৫১ ; আর যারা প্রবল হওয়ার উদ্দেশ্যে আমার আয়াতকে নাস্যাৎ করার চেষ্টা করে তারাই জাহান্নামে বাস করবে ৷
৫২ নং আয়াত ; আমি তোমার পুর্বে যেসব নবি ও রসুল পাঠিয়েছিলাম তারা যখনই কিছু আবৃত্তি করত তখনই শয়তান তাদের আবৃত্তিতে বাইরে থেকে কিছু ছুড়ে ফেলত ৷ কিন্তু শয়তান যা বাইরে থেকে ছুড়ে ফেলে আল্লাহ্ তা দূর করে দেন ৷ তারপর আল্লাহ্ তাঁর আয়াতগুলোকে সুসংবদ্ধ করেন ৷ আর আল্লাহ্ তো সর্বজ্ঞ তত্ত্বজ্ঞানী ৷
৫৩ নং আয়াত ; এজন্য যে , শয়তান যা বাইরে থেকে ছুড়ে ফেলে তা দিয়ে তিনি পরীক্ষা করেন তাদেরকে যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে , এবং যারা পাষাণহৃদয় ৷৷ সীমালঙ্ঘনকারীরা অশেষ মতভেদে রয়েছে ৷
(*) ( সূত্র - কোরানশরিফ , সরল বঙ্গানুবাদ , অনুবাদক মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান )
কুরাইশদের সঙ্গে চূড়ান্ত বিচ্ছেদের ঠিক পরে ১১২ নং সুরা ইখলাস অবতীর্ন হয় ৷ যাতে বলা হয়েছে -
“ ১ ) বলো , তিনি আল্লাহ্ ( যিনি) অদ্বিতীয় ৷
২) আল্লাহ্ সবার নির্ভরস্থল ৷
৩ ) তিনি কাউকে জন্ম দেন নি ও তাঁকেও কেউ জন্ম দেয় নি ৷
৪ )আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই ’ ৷
এর পর উল্লেখিত বিতর্কের চীর অবসান হয় ৷
১ )
সূত্র; -মুহাম্মদ , মহানবীর (সঃ) জীবনী :
মূল : ক্যারেন আর্মস্ট্রং ,
অনুবাদ : শওকত হোসেন ৷
২ ) তফসীরে মা’আরেফুল- কোরাআন ( ১ম খন্ড,
অনুবাদ , মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
ইসলামিক ফাউণ্ডেশন, বাংলাদেশ ,১৯৮৮ ইং
৩) প্রাসঙ্গিক হওয়ায় পূর্বের একটি লেখার কিছু অংশ এই লেখাতে যুক্ত করা হয়েছে ,
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন