শয়তানের উৎস সন্ধানে পৌরাণিক কাহিনি সমূহ :

                

        শয়তান  এর  উৎস  সন্ধানে  পৌরাণিক  কাহিনি  ও  মনোবিজ্ঞান  

      আজ  থেকে  প্রায়  ৫  হাজার  বছর  আগে  সর্ব  প্রথম  হিন্দু  পৌরাণিক  শাস্ত্রে  শয়তানের  অনুরূপ  একটা  চরিত্রের  সন্ধান  পাওয়া  যায়  ৷  ঐ  পৌরাণিক  শাস্ত্রে  উল্লেখিত ‘ নারদ  মুনি ’   এর  যে  পরিচয়  দেয়া  হয়েছে  তা  থেকে  জানা  যায়  যে  ,  ‘নারদ ’  এর  কোনো  মাতাপিতা  ছিলো  না  , তবে  সে  ছিলো  ব্রাম্মার  মানস  সৃষ্টি  ৷  এক  সময়ে  তার  বাসস্থান  ছিলো    স্বর্গে  ৷  তখন  স্বর্গ  বাসি  ধার্মিকদের  মধ্যে  সে  ছিলো  একবারে  ধার্মিকদের  মধ্যে  চুড়ামণি  ৷  কিন্তু  কোন  কারণে  সে  একবার  সৃষ্টিকর্তার  একটা  আদেশ  অমান্য  করে  ৷  এর  পরিপেক্ষিতে  সে  তখন  সৃষ্টিকর্তা  কর্তৃক  অভিশপ্ত  হয়ে  মানব  রূপে  মর্ত্যে  বা  পৃথিবীতে  প্রেরিত  হয়  ৷  সে  ছিলো  সর্ববিদ্যাবিশারদ  , ফলে  স্বর্গ - মর্ত্য - ও  অন্তরীক্ষে  তার  ছিলো  অবাধ  গতি  ৷ (সূত্র ;- সুবল  চন্দ্র  মিত্রের  - সরল  বাঙ্গালা  অভিধান গ্রন্থের  ৪৫৩  পৃষ্টা  )   

  তাই  এর  থেকে  দেখা  যাচ্ছে  যে  হিন্দু  পৌরাণিক  শাস্ত্রের   ‘ নারদ ’ কে  পরবর্তিতে  শয়তানে  রূপান্তরিত  করা  হয়েছে  ,  তবে  তা    শয়তানের  , শয়তান  হিসাবে  রূপান্তরের  প্রথম  সংস্করণ  বা  ‘  নারদ  ’     কে  শয়তানের  প্রথম  জেনারেশন  হিসেবে  ঐতিহাসিকরা  অভিহিত  করতে  চান  ৷ 

                ঐতিহাসিকদের  মতে  ইরান  দেশের  প্রাচীন  পার্সি  ধর্মের  প্রবর্তক  ছিলেন         “  জোরওয়াস্টার  ”  এবং  পার্সিয়ানদের  এই  সময়ের  প্রধান  ধর্মগ্রন্থের  নাম  ছিলো  ‘ জেন্দা - আভেস্তা ’  আর  ঐ  ধর্মে  সৃষ্টি কর্তার  নাম  ছিলো  ‘  অহুর -মজ্ দা ’ 

                 জেন্দা- আভেস্তা  অনুসারে  অহর-মজ্ দা এর  ইচ্ছাক্রমেই  পৃথিবী  ও  মানুষ্যাদি  সহ  অন্যান্য  প্রাণী  কুলের  সৃষ্টি  হয়েছিলো  ৷ তবে  জেন্দা-আভেস্তার  অন্য  এক  অংশে  দুইজন  সৃষ্টিকর্তার  আভাস  দেয়া  হয়েছে  ৷  ঐ  মত  অনুসারে  সৎপদার্থের  বা  সদগুণসমূহের  সৃষ্টিকর্তা  একজন  এবং  অসৎপদার্থ  বা  অসদগুণের  সৃষ্টিকর্তা  অপর  একজন  ৷  তাই  জগতের যতকিছু  ভালো  তা  সৃষ্টি  করেছেন  অহুর-মজ্ দা  এবং  মন্দগুলো  সৃষ্টি  করেছেন  যে  তার  নাম   ‘আহ্ রিমান’ ৷   সংক্ষেপে ,  পরবর্তি  এক  পর্যায়ে  অহুর-মজ্ দা  কর্তৃক  স্বর্গিয়  দূতসমূহ  ও  পৃথিবীর সৃষ্টি  হয় এবং  আদিমনুষ্য  বা  ‘ গেওমাড’  এর ও  সৃষ্টি হয় ৷ এক  মতবিরোধের  কারণে তখন  আহরিমানকে  যুদ্ধে  পরাস্ত  করেন  অহুর-মজ্ দা  এবং  পরাজিত  আহরিমানকে   অহুর -মাজ্ দা  কর্তৃক   তখন  মর্ত্যে  প্ররণ  করা হয় ৷  সে  তখন থেকে  সব  সময়  মানুষ্য  জাতিকে  কু-পথে  পরিচালিত  করতে  দৃঢ  প্রতিজ্ঞ  হয়ে  কাজ  আরম্ভ  করে ৷

    তাই  এখানে  ও  দেখা  যাচ্ছে  স্বর্গ  হতে  অহুর-মজ্ দা  কর্তৃক  বিতাড়িত  আহরিমান  ও শয়তানের  ভূমিকায়  অবতীর্ণ  হয়েছে পরবর্তিতে  ৷  তাই  আহরিমানকে  শয়তানের  দ্বিতীয়  সংস্করণ  বা  দ্বিতীয়  জেনারেশন  হিসেবে  ঐতিহাসিকগণ  অভিহিত  করেছেন  ৷

          প্রাচীন  হিব্রু  জাতির  মধ্যে  অসংখ্য  রূপকথা  ও  উপকথার  কাহিনি   প্রচলিত  ছিলো  ৷  যা  ছিলো  সম্পূর্ণ  কাল্পনিক  এবং  প্রাচীন  অবিকাশিত  আদিম মানুষের  সৃষ্ট  কাল্পনিক  কল্প- কাহিনি  ৷  কালক্রমে  ইহুদি  পুরোহিত  বা  ‘  রাব্বিগণ  ’ ঐ  কাহিনিগুলোকে  সংকলন  করে  বিরাট  দুইটা  পুস্তক  লেখেন  , তালমুদ  ও  মিদ্রাস  নাম  দেয়া  হয়  এই  দু,টু  গ্রন্থের  ৷  ঐ  গ্রন্থ  দুইটা  রূপকথা ও উপকথার  অফুরন্ত  ভাণ্ডার  ছাড়াও  ইহা  ছিলো  কুসংস্কারেরেও  ভরপূর  ৷  বর্তমানে  প্রচলিত যতো  কুসংস্কার  আছে  ,  তার  মূল  উৎস  এই  বই  দুইখানিই  ৷  পরবর্তি কোন  এক  পর্যায়ে  ঐ  কল্পিত  কাহিনিগুলোর  অনেকগুলো  ধর্মীয়  কাহিনি  হিসেবে   ওল্ড  বাইবেলে  গৃহিত  হয়ে  যায় , ধর্ম  বিশ্বাসের  পরিধি  বর্ধিত  করার  উদ্দেশ্যে  ৷ ঐ  তালমুদ  গ্রন্থের  অনেক  উপকথার  একটি  হচ্ছে  লিলিথের  উপকথা  ৷  এই  উপকথা  থেকে  জানা  যায় যে  , তখন  লিলিথ  নামে  মানুষের  মতোই  মাটির  তৈরী  একজন  স্ত্রীলোক  ছিলো  ৷ লিলিথ  প্রথমে  শয়তানকে  বিয়ে  করেছিলো ৷ তবে  পরে  সে  শয়তানকে  ত্যাগ  করে  আদমকে  বিয়ে  করে  ৷ তখন  তাদের  বাসস্থান  ছিলো  স্বর্গে  ৷  পরে  তার  আদমের  সঙ্গেও  বনিবনা  না  হওয়ায় সে  আদমকে  ছেড়ে  কোথাও  পালিয়ে  যায়  ৷  আদম  তখন  তার বিরুদ্বে   ঈশ্বরের    কাছে  নালিশ   করেন ৷  ঈশ্বরের  নির্দেশে  তিনজন  স্বর্গদূত  লিলিথকে  খুজে  আনতে  ব্যর্থ  হয়  ৷ পরে  আদমকেও  উদ্যান  এদন  থেকে  বিতাড়িত  করা  হলে ,তিনি  তখন মর্ত্যে  এসে  হাওয়ার  সঙ্গে  বিচ্ছিন্ন  হয়ে  পড়েন  ৷ মর্ত্যে  তখন  আবার  আদমের লিলিথের  সাক্ষাত  হয়ে  যায়  ৷ তখন  আদমের সঙ্গে  লিলিথের  পুনঃরায়  বিয়ে  হয়ে গেলে  তারা  উভয়ে  ৩০  বছর  এক  সঙ্গে  ঘর-সংসার  করেন ৷ এই  সময়ে  লিলিথের  গর্ভে  যে  সকল  সন্তানের  জন্ম  হয় , তাদেরকে   ‘ শেদিম’  (Shedim ) বা  দানব  হিসেবে  অভিহিত  করা  হয় ৷ আর  ঐ  শেদিমকেও  পরবর্তিতে  শয়তানের  ভূমিকা  পালন  করতে  দেখা  যায়  ৷  ঐ  শেদিমকে  ঐতিহাসিকগণ  বর্তমান  শয়তানের  তৃতীয়  সংস্করণ  বা  তৃতীয়  জেনারেশন  হিসেবে  দেখে  থাকেন ৷
       ( সূত্র;- শচীন্দ্রোনাথ  চট্রোপাধ্যায়ের  প্রাচীন  ইরাক  গ্রন্থের  ১১৩--১১৫  পৃষ্টা ) 

      এই  উপকথা  থেকে  আরো  জানা  যায়  যে  শয়তান  ছিলো  সিরাফিম  গোষ্ঠীর  একজন  আর্কেঞ্জেল,  তার  ইহুদি  নাম  সামমায়েল ৷  তার  বারোটি  পাখা  ছিলো ৷ ঈশ্বরের  আদেশ  অমান্য  করায়  শয়তানকে  তার  অনুচরসহ  স্বর্গ থেকে  নির্বাসিত  করা  হয়  ৷  শয়তান  ঈশ্বরের  আদেশ  প্রত্যাখ্যান  করলে  ঈশ্বরের  দূতগণের  সঙ্গে  তার  যুদ্ধ  আরম্ভ  হয়ে  যায়         ( ইহা  অনেকটা  পারসিকদের  অহুর-মজদা  ও  আহরিমান- এর আখ্যানের  অনুরূপ )  স্বর্গ  দূত  বাহিনীর  নেতা  আর্কেঞ্জেল মাইকেল  ও  তার  বাহিনীর  সঙ্গে  যুদ্ধে  শয়তান  ও  তার  অনুসারীদের  পতন  হয় ৷  তাই শাস্তিসরূপ   তাদেরকে  মর্ত্যে  প্রেরণ  করা  হয়  ৷  আর  সেই  সময়  হতে  মানুষের  ক্ষতিসাধন  ও  ঈশ্বর  বিরোধী যে  কোনো  কাজে  মানুষকে  বিপথে  পরিচালনা  করাই শয়তানের  একমাত্র  ব্রত  হয়ে  দাঁড়ায়

    সিমেটিক  শেষ  ধর্মে  অর্থাৎ  ইসলাম  ধর্মীয়  গ্রন্থ  পবিত্র  কোরানে  শয়তানের  যে  বর্ণনা  দেয়া  হয়েছে   তা  থেকে  জানা  যায়  যে  শয়তান  পূর্বে  ছিলো  ‘ মকরম’ নামক  একজন  প্রথম  শ্রেণীর  ফেরেস্তা  এবং  অত্যন্ত  মুছল্লি  ৷  সে  এতই  খোদাভক্ত   ছিলো  যে  জগতে  এতটুকু  স্থান  বাকি  ছিলোনা , যেখানে  তার  সেজদা  পড়েনি  ৷ কিন্তু  আল্লাহ্ তা’লার  হুকুম  মোতাবেক  সে  বাবা  আদমকে  সেজদা  না  করায়  তার  ফেরেস্তার  পদ  ও  মর্যাদা  বাতিল  করা  হয়  ঈশ্বর  কর্তৃক  , আর  তখন  থেকে  সে  ‘শয়তান’ আখ্যা  পেয়ে  মানুষকে  চিরকাল  অসৎ  কাজের  প্ররোচনা  দেয়ার  প্রতিজ্ঞা  করে ৷  শাস্তিহিসেবে  তাকে  তখন   পৃথিবীতে নেমে আসতে  হয়  ৷ তাই  সে  পৃথিবীতে  নেমে  আসার  পর  থেকে   এবং  অদ্যাবধি  নানাবিধ  উপায়ে  অসৎ  কাজে  মানুষকে  প্ররোচনা  বা  দাগা  দিয়ে  চলেছে  ৷ 

         উপসংহারে  এটা  অনুমান  করা  যেতে  পারে  যে  সৃষ্টি , বাসস্থান  ,  স্বর্গচ্যুতি  ও  গুণাবলির  বর্ণনায়  ‘ নারদ ’    এবং   ‘ শয়তান ’    এর  মধ্যে  তেমন  কোনো  পার্থক্য  নেই  ৷  শয়তান  যেনো  নারদের  এক  নব  সংস্করণ ,  তবে  তা  দ্বিতীয়  বা  তৃতীয়  নয়  , তা  হচ্ছে  শয়তানের  চতুর্থ  সংস্করণ  ৷  হিন্দু  পৌরাণিক  শাস্ত্রের  নারদ রূপান্তরিত  হয়ে  পার্সি  ধর্মের  আহরিমান  হয়েছে  ৷  ইহুদি  ধর্মে  আহরিমান  রূপান্তরিত  হয়েছে  সেদিম  রূপে  , আর  সিমেটিক  শেষ  ধর্মে  সেদিম  রূপান্তরিত  হয়ে  প্রতিষ্ঠিত  হয়েছে  শেষ  জামানার  শয়তান  রূপে  ৷  অর্থাৎ  শেষ  এবং  চতুর্থ  সংস্করণের  নাম  হচ্ছে  বর্তমান  শয়তান  ৷ যাকে  শয়তানের  চতুর্থ  জেনারেশন  হিসেবেও  চিহ্নিত  করা  হয়ে  থাকে  ৷

      
    উপরের  আলোচনার  ভিত্তি  ছিলো  কিছু  প্রাচীন  পৌরাণিক  কাহিনি  এবং  বিভিন্ন  ধর্মগ্রন্থে  উল্লেখিত  শয়তান  সম্পর্কে  উল্লেখযোগ্য  ঘটনাসমূহ  যা  বর্তমান  বিশ্বের  বহুল  আলোচিত 
মিথোস  ও  লোগোস  এর  সম্মন্নয়ের  একটা  চেষ্টার  ফসল  হিশেবে  ইহাকে দেখা যেতে  পারে  ৷

       এই  পর্যায়ে  এখন  শয়তানকে  নিয়ে  লোগোস  ভিত্তিক  অর্থাৎ  বিজ্ঞান ভিত্তিক  এবং  যৌক্তিক আলোচনা  করবো  ৷  

        আধ্যাত্মিক  ব্যক্তিবর্গরা  বলে  থাকেন যে ,  মানুষের  মধ্যে  ছয়টি  আধ্যাত্মিক  শত্রু  আছে  ,  যাকে  তারা  ‘   ষড়রিপু  ’  নামে  অভিহিত  করেন  ৷  এই  ষড়রিপুর  মধ্যে  আছে -(১) কাম  ,  (২)  ক্রোধ  ,  (৩)  লোভ  ,  (৪)  মোহ  ,  (৫)  মদ  ,  (৬)  মাৎসর্য   ৷  মানুষ  এই  ষড়রিপুর  তাড়নায়  নানাবিধ  অসৎকাজ  করে  থাকে  ৷  যদি  কোনো  উপায়ে  এই  ষড়রিপুর  কাজকে  দমন  করা  সম্ভব  হয়    ,  তবে  মানুষের  অনেক  শয়তানি  কমে  আসবে  , অর্থাৎ  শয়তানের  কার্যকলাপ  এ  ক্ষেত্রে  সীমিত  হয়ে  আসবে  ৷ 

    অন্যদিকে  মনোবিজ্ঞানীরা  বলেন  যে  সভ্যতার  ঊষালোক  পাবার  পূর্বে  আহার - বিহারে  মানুষ  ও  ইতর  জীবের  মনোবৃত্তিতে  বিশেষ  পার্থক্য  ছিলো  না  ৷  সে  সময়ের  মানুষের  মন  ছিলো  কৃত্রিমতাহীন  ,  সরল  এবং  স্বাধীন  ৷  তখন  মানুষ  তার  যে  কোন  ইচ্ছা  বা  প্রবৃত্তিকে  চরিতার্থ  করতে  পারত  ৷  কারণ  তখন  প্রবৃত্তিই  ছিলো  মানুষের  যথাসর্বস্ব  ৷  জ্ঞান  উন্মেষের  সাথে  সাথে  মানুষ  প্রথমে  দলবদ্ধ  ও  পরে  সমাজবদ্ধ  হয়ে  বসবাস  করতে  শুরু  করে  ৷  তখন  এই  দল  বা  সমাজকে  রক্ষা  করতে  ত্যাগ  ও  সংযমের  প্রয়োজনীয়তা  দেখা  দেয়  ৷  আদিতে  এই   ‘ ত্যাগ ’ ও  ‘ সংযম ’  ছিলো  স্বেচ্ছাধীন  ৷  ক্রমে  সভ্যতা  বৃদ্ধির  সঙ্গে  সঙ্গে  দল  ও  সমাজের  ত্যাগ  ও  সংযমকে  কঠোর  নিয়ম  ও  নীতির  শৃঙ্খলে  আবদ্ধ  করা একান্ত  আবশ্যিক  হয়ে  পড়ে  ৷  এর  ফলে  মানুষের  সেই  স্বাধীন  প্রবৃত্তিগুলোকে  ‘  সু  ’ ও  ‘ কু ’   - এই  দুই  ভাগে  বিভক্ত  করে  ‘  সু ’  প্রবৃত্তিগুলোকে  স্বাধীন  রাখা  হয়  ,  কিন্তু  ‘ কু ’ প্রবৃত্তিগুলোকে  কারারুদ্ধ  করা  হয়  ৷ ফলে  কারাবাসী  কুপ্রবৃত্তিগুলো  মনের  অন্ধকার  কারাকক্ষে  ঘুমিয়ে  রইলো  ৷ মনের  যে  অংশে  এই  রুদ্ধপ্রবৃত্তি  বাস  করে  ,  বৈজ্ঞানিক  পরিভাষায়  তাকে  ‘ অচেতন  মন  ’ বা   ‘ নির্জ্ঞান  মন ’   ( Unconscious Mind  )   বলা  হয়  ৷ 

         প্রসঙ্গতঃ  উল্লেখযোগ্য  যে  মানুষ  তার  জীবনের  হাজার  হাজার  বছরের  পুরাতন  ‘ অবচেতন  মন ’   এর  মূলধন  উত্তরাধিকার  সূত্রে  প্রাপ্ত  হয়ে  এই  পৃথিবীতে  জন্মগ্রহন  করে  এবং  ব্যক্তিগত  জীবনে  মানুষ  যে  সকল  অশুভ  কামনা  ,সমাজের  নীতি  ,  ধর্মের  বিধান  ও  রাষ্ট্রের  শাসনের  ভয়ে  চরিতার্থ  করতে  পারে  না ,  তাহাও  ক্রমে  বিস্মৃতির  অতলগর্ভে  ডুবে  গিয়ে  একসময়ে  অবচেতন  মনে  স্থান  করে  লয়  ৷  আর  অবচেতন  মনে  রুদ্ধপ্রবৃত্তিগুলিকে  যে  শক্তি  অবরুদ্ধ  করে  রাখে  ,  তাকে  কারারক্ষী  ( censor) বলা  হয়  ৷  কারাবন্দী  কুপ্রবৃত্তিগুলো  সময়  সময়  জাগ্রত  হয়ে  কারারক্ষীকে  ফাঁকি  দিয়ে  বাহিরে  চলে  আসে  এবং  সুপ্রবৃত্তিগুলোর  সহিত  মেলামেশার মাধ্যমে  তাদেরকে ও  তখন  বিপথে  চালিত  করে  ফেলে  ৷  ইহা  থেকেই  মানব  সমাজের  বড়ো  ধরণের  বিড়ম্বনার  সৃষ্টি  হয়  ৷  কারণ  মানুষের  যাবতীয়  অশুভচিন্তা  ও  অসৎকাজের  উদ্যোক্তা  এই   ‘ অবচেতন  মন ’    ৷

   উপরে  উল্লেখিত  বিষয়গুলো  পর্যালোচনা  করলে  দেখা  যায়  যে ,  মানুষের  যাবতীয়  অসৎকাজের  উদ্যোক্তা  তার  অভ্যন্তরীণ  রিপুসমূহ  ,  বাইরের  কিছু  নয়  ৷ তবে  কি  মানুষের  ‘ কু ’ প্রবৃত্তিগুলোকেই  “ শয়তান ” বলা  হয়  ,  না  মানবদেহাতিরিক্ত  স্বতন্ত্র  সত্তাবিশিষ্ট  “ শয়তান” -এর  কোনো  প্রমান  পাওয়া  যায়  ?
         না  এসব  ব্যাপারে  আরো  বৈজ্ঞানীক  গবেষণার  প্রয়োজন  আছে  ?


 ( সূত্র ;- আরজ  আলী  মাতুব্বর  এর  রচনা  সমগ্র -১  এবং  ২ , আনুকরণে  লেখা  হয়েছে  )

          বি : দ্র : কারো  ধর্ম  বিশ্বাসে  আঘাত  করতে  এই  লেখা তৈরী  করা  হয়  নি ,
                     ইহা  একটি  পৌরাণিক  কাহিনি  ভিত্তিক  ও  মনোবিজ্ঞান  ভিত্তিক  লেখা ,
                       কোনো  গণমাধ্যমে  ইহা  প্রকাশ  করা  যাবে না , লেখকের  অনুমতি ছাড়া,
                           ধন্যবাদ পাঠকদের  সবাইকে

                       

মন্তব্যসমূহ