পবিত্র কোরানে নবীজী (সঃ)এর পত্নীগণের উদ্দেশ্যে নাজিল হওয়া কিছু পবিত্র আয়াত প্রসঙ্গে ;-


    পবিত্র কোরানে নবীজী (সঃ)এর পত্নীগণের উদ্দেশ্যে নাজিল হওয়া কিছু পবিত্র আয়াত প্রসঙ্গে ;-

      আধুনিক বিশ্বে, কবি ,সাহিত্যিক ও দার্শনিকগণ নারীদের  বিভিন্ন ভাবে সমাজে উপস্থাপিত করার প্রয়াস পেয়েছেন ;
 
 এর মধ্যে কেউ কেউ নারীদের রহস্যময়ী , ছলনাময়ী ও দুর্ব্বোধ্য ইত্যাদি বিশেষণে আখ্যায়িত করেছেন ।
   Wlliam Shakespear তার হ্যামলেট নাটকে বলেছেন- “Frailty, thy name of woman” 
  আবার তাঁর Romeo and Juliet এ বলেছেন-“What’s in a name? That which we call a rose by any other name would smell as sweet” 
     কবি সামরসেট বলেছেন- “Woman dislikes Husband Intelligences
    John Keats (1795-1821) বলেছেন- “Tender the night, and happy the Queen Moon is on her Throne” (Ode to a Nightingale)
    Jone Donne (1572-1631) “For God’s shake hold your tongue and let me love”, 

    বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নারীদেরকে জন্মভূমির সঙ্গে তুলনা করে তাঁর “ উর্বশী” কবিতায় লিখেছেন- “ নহ মাতা, নহ কন্যা, নহ বধু, সুন্দরী রূপসী,
                                  হে নন্দনবাসিনী উর্বশী!......
                           যুগযুগান্তর হতে তুমি শুধু বিশ্বের প্রেয়সী,
                                  হে অপূর্বশোবনা  উর্বশী ! …….
                            স্বর্গের উদয়াচলে মূর্তিমতী তুমি হে উষসী,
                                   হে ভুবনমোহিনী   উর্বশী !......”
                   তিনি আবার তাঁর বিদায়-অভিশাপ কবিতায় বলেছেন-
                               “ বিদ্যায় নাহিকো সুখ, নাহী সুখ যশে ,
                                        দেবযানী, তুমি শুধু সিদ্ধি মূর্তমতী -
                                  তোমারেই করিনু বরণ’ ,নাহি ক্ষতি, 
                                         নাহি কোনো লজ্জা তাহে ।
                                                 রমণীর  মন 
                                     সহস্রবর্ষেরই, সখা, সাধনার ধন    ……ইত্যাদি ।
      আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম নারীকে ভিন্ন ভাবে মূল্যায়ন ক’রে   তাঁর  নারী কবিতায় লিখেছেন -  

         
                                      “সামোর গান গাই-
                       আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই !  
                        বিশ্বে যা-কিছু মহান্ সৃষ্টি চির-কল্যান-কর ।
                        অর্দ্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্দ্ধেক তার নর ।…
                        বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ তাপ বেদনা অশ্রুবারি,
                         অর্দ্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্দ্ধেক তার নারী ।…
                                          সেদিন সুদুর নয়-     
                           যেদিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীরও জয়….
                                          হাতে রুলি, পায়ে মল,
                            মাথায় ঘোমটা, ছিঁড়ে ফেল নারী, ভেঙে ফেল ও-শিকল!
                             যে ঘোমটা তোমা করিয়াছে ভীরু ওড়াও সে আবরণ।
                               দূর ক’রে দাও দাসীর  চিহ্ন  যেথা যত  আভরণ  !”
    
       বেগম রোকেয়া নারীদের   মানসিক দাসত্বের (enslaved মনের) মুক্তি চেয়েছেন, তিনি বলেছেন, যেহেতু নারীরা অর্ধাঙ্গী এবং স্বামীরা অর্ধাঙ্গ তাই স্বামী শব্দের স্থলে অর্ধাঙ্গ হিসাবে স্বামীদের পরিচিতি পাইতে হবে ।
         নারীবাদী লেখক তাসলিমা নাসরিন -নারীদের বর্তমান অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে, প্রয়োজনে ইসলামী শরিয়াহ্ আইনের সংশোধন চেয়েছেন । তিনি বলেছেন- নারীদের জরায়ুর স্বাধীনতার অধিকার দিতে হবে ।
     পশ্চিমা বিশ্বে নারীবাদীরা বর্তমান বিশ্বকে “still its men’s World” বলে অভিহিত করে থাকেন ।  

কিন্তু পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরানশরিফে নারীদের ব্যাপারে অনেক আয়াত নাজিল হলেও, আমরা এখানে নবীজী (সঃ) এর স্ত্রীগণের ব্যাপারে সুনিদৃষ্ট যে আয়াত কোরানে আছে , সে সব আয়াতের কয়েকটা নিচে উল্লেখ করা হলো আগ্রহী পাঠকদের জন্য । মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের অনুবাদ করা  “কোরান শরিফ-সরল বঙ্গানুবাদ” গ্রন্থ থেকে । (ঐ আয়াত গুলো নাজিলের পেক্ষাপট বা শানে-নজুল ছাড়া )

   
     ৩৩নং সুরা আহজাব মদীনায় হিজরতে যাওয়ার পর । (মিত্রশক্তি) মদীনায় অবতীর্ণ ,ধর্ম প্রচারের শেষের দিকে,
 
  সুরা আহজাব-আয়াত ২৮;- হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে বলো, ‘ তোমরা যদি পার্থিব জীবন ভোগ ও বিলাসিতা কামনা কর, তবে এসো, আমি তোমাদের ভোগবিলাসের ব্যবস্থা করে দিই আর তোমাদেরকে ভদ্রতার সাথে বিদায় দিই’।

  আয়াত -২৯;- আর তোমরা যদি আল্লাহ্ , তাঁর রসুল ও পরকাল চাও, তবে তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করে আল্লাহ্ তাদের জন্য মহাপ্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন ।
     
    আয়াত ৩০;-হে নবীপত্নীগণ! যে-কাজ স্পষ্টত অশ্লীল তোমাদের মধ্যে কেউ তা করলে তাকে দ্বিগুণ শাস্তি দেওয়া হবে । আর এ আল্লাহ্ র জন্য সহজ ।
 
   আয়াত-৩১;- তোমাদের মধ্যে যে-কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রসুলের অনুগত হবে ও সৎকাজ করবে তাকে আমি দুবার পুরস্কার দেব এবং তার জন্য আমি সম্মানজনক জীবিকা রেখেছি ।
     আয়াত-৩২;- হে নবীপত্নীগণ! তোমরা তো অন্য নারীদের মতো নও । যদি তোমরা আল্লাহ্ কে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সঙ্গে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলবে না যাতে অন্তরে যার ব্যাধি আছে সে প্রলুব্ধ হয় । তোমরা ভালোভাবে কথাবার্তা বলবে। 

      আয়াত-৩৩;-  আর তোমরা ঘরে থাকবে , জাহেলিয়া (প্রাগ্ইসলামি) যুগের মতো নিজেদেরকে দেখিয়ে বেড়িয়ো না । তোমরা নামাজ কায়েম করবে ও জাকাত দেবে এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রসুলের অনুগত হবে । আল্লাহ্ তো কেবল তোমাদের মধ্য থেকে অপবিত্রতা দুর করতে ও তোমাদেরকে সম্পূর্ণ পবিত্র রাখতে চান ।

  আয়াত-৩৪;-আল্লাহ্ র আয়াত ও হিকমতের কথা তোমাদের ঘরে যা পড়া হয় তা তোমরা স্মরণ রাখবে। আল্লাহ্ তো সূক্ষ্মদর্শী, তিনি সব খবর রাখেন ।

 আয়াত-৩৫;-আল্লাহ্ ও তাঁর রসুল কোনো বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোনো বিশ্বাসী পুরুষ বা নারীর সে-বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে না । কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রসুলকে অমান্য করলে সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে ।

  আয়াত-৫৫;-(নবির স্ত্রীদের জন্য) তাদের পিতা, ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, পরিচারিকা ও তাদের  অধিকারভুক্ত দাসদসীদের ক্ষেত্রে এ (পরদা) না মানলে কোনো দোষ নেই । আল্লাহ্ কে ভয় করো, আল্লাহ্ তো সবই দেখেন ।

      আয়াত-৫৯-হে নবি! তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও বিশ্বাসী নারীদের বলো তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের মুখের ওপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে কেউ উত্যক্ত করবে না। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু ।

    ৬৬ নং সুরা     তাহ্ মিন (মদীনায় অবতীর্ণ )
         আয়াত-১;-হে নবি ! আল্লাহ্ তোমার জন্য যা বৈধ করেছেন কেন তুমি তা নিষিদ্ধ করছ তোমাদের স্ত্রীদেরকে খুশি করর জন্য ? আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু ।

 আয়াত;-২;- আল্লাহ্ তোমাদের শপথ থেকে মুক্তির ব্যবস্থা ক’রে দিয়েছেন, আল্লাহ্ তোমাদের সহায়। আর তিনি সর্বজ্ঞ, তত্ত্বজ্ঞানী।
  
    আয়াত-৩;- (স্বরণ করো) নবি তার স্ত্রীদের একজনকে গোপন কিছু বলেছিল । তারপর সেই স্ত্রী তা অন্যকে বলে দেয়, আর আল্লাহ্ নবিকে তা জানিয়ে দেন । এ-বিষয়ে নবি সেই স্ত্রীকে কিছু বললও কিছু বলল না। নবি যখন তাকে বলল তখন সে জিজ্ঞেস করল,  ‘কে আপনাকে একথা জানাল  ?’ নবি বলল,   ‘ আমাকে জানিয়েছেন তিনি যিনি সর্বজ্ঞ, যাঁর সব জানা ‘।

   আয়াত-৪;- তোমাদের হৃদয় যা কামনা করেছিল তার জন্য তোমরা দুজন অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ্ র দিকে ফিরে যাও । তোমরা যদি তার(নবির) বিরুদ্ধে একে অপরকে সাহায্য কর, তবে (জেনে রাখো) , আল্লাহ্ তার অভিভাবক; জিবরাইল ও সৎকর্মপরায়ণ বিশ্বাসীরা, আর তার ওপর ফেরেশতারাও, তাকে সাহায্য করবে। 

   আয়াত-৫;- নবি যদি তোমাদের সকলকে তালাক দেয়, তবে তার প্রতিপালক তোমাদের পরিবর্তে হয়তো তোমাদের চেয়ে আরো ভালো স্ত্রী তাকে দেবেন; যরা মুসলমান, বিশ্বাসী, তওবা করে ,এবাদত করে, রোজা রাখে, অকুমারী ও কুমারী । শেষ ।    


মন্তব্যসমূহ