সাহিত্যসাক্ষাৎকার ;-- সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ’ ( courtecy; tareque aziz &তানভীর দুলাল ও ইসমাইল সাদী ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৩:০০ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৬:৪০ paper prothom Allo )



সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী ২৭সেপ্টেম্বর।তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা

‘কবিতার উপাদান নিতে আমি ইউরোপের কাছে যাইনি’

তানভীর দুলাল ও ইসমাইল সাদী

আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৬:৪০
প্রিন্ট সংস্করণ





সৈয়দ শামসুল হক (২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৫—২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬)। প্রতিকৃতি: মাসুক হেলালসৈয়দ শামসুল হক (২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৫—২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬)। প্রতিকৃতি: মাসুক হেলালঅপ্রকাশিত এই সাক্ষাৎকারে সৈয়দ শামসুল হক বলেছেন তাঁর সতীর্থ কবিদের কবিতার প্রকরণ সম্পর্কে। পাশাপাশি উন্মোচন করেছেন নিজের কাব্যজগৎও। ২০১৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে তাঁর বাসভবনে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন তানভীর দুলাল ও ইসমাইল সাদী

প্রশ্ন
একেকজন কবির উপস্থাপনকৌশল একেক রকম।তবে শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, আল মাহমুদ—এই তিন কবির কাব্য ভাষা নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই।
সৈয়দ শামসুল হকআচ্ছা, তার আগে বলো তো, কাব্যভাষা বলতে কী বোঝো? কাব্যভাষা হলো কবির নিজস্ব কণ্ঠস্বর। যেমন ধরো, শামসুর রাহমানের ক্ষেত্রে বলব, একধরনের দুঃখবোধ আছে। এটা হচ্ছে তাঁর নিজস্ব ব্যাপার। এটা দোষের কিছু না; ভগবান বুদ্ধও বলেছেন যে, জগৎ দুঃখময়। কবি শামসুর রাহমান দুঃখের ভেতর দিয়ে জীবনকে দেখেন; মানে, দুঃখটা তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রশ্নআপনার বিষয়ে কী বলবেন?
সৈয়দ হকআমি নিজেরটা বলব না। ইউ হ্যাভ টু ডিসকভার। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, আল মাহমুদের ভেতর কী আছে? আল মাহমুদের ভেতর একটা প্রবণতা আছে নিজেকে গ্রামীণ বলে উপস্থাপন করার। এটা সব সময় যে ভেতর থেকে আসছে, তা নয়।
প্রশ্নএগুলোকে আপনি আরোপিত বলবেন?
সৈয়দ হক: যেমন ধরো, একটা কবিতার জন্য গদ্যকল্প বা চিত্রকল্পের একটাই আধার থাকে, একটাই ক্ষেত্র থাকে। মনে করো, মাছধরা। আমি সেই সূত্র ধরে যদি বলি, বড়শি, জল, জলের অতল, স্নিগ্ধতা, সাফল্য-ব্যর্থতা—আমার চিত্রকল্পগুলো একটা ক্ষেত্র থেকেই আসবে। কিন্তু কখনো আমি ধানের গোলায় আছি, কখনো কুটিরে আছি, কখনো আমন ধানের মধ্যে আছি, তখন বোঝা যাবে, ইউ আর নট কনফাইন্ড আ লং এরিয়া অব ইমেজেস। এখন যাঁরা কবিতা লেখেন, তাঁদের সম্পর্কে চালু সূত্রটি হলো তাঁদের কবিতার ভেতর চিত্রকল্পের কোনো বাপ-মা নেই। একটা হয়তো সুন্দর চিত্রকল্প পেয়েছে কিন্তু পরের পঙ্‌ক্তি বা স্তবকে হয়তো অন্য কিছু বলছে। একটা কবিতার জন্য একটাই ক্ষেত্র থাকবে। রবীন্দ্রনাথ লেখেন, ‘তুমি কি কেবলই ছবি...?’ তারপর তিনি বলেন, ‘ওই-যে সুদূর নীহারিকা/ যারা করে আছে ভিড়/ আকাশের নীড়/ ওই যারা দিনরাত্রি/ আলো-হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী/ গ্রহ তারা রবি,/ তুমি কি তাদের মতো সত্য নও?...’
প্রশ্ন: আবার ছবিতে ফিরে এসেছেন...
সৈয়দ হক: হ্যাঁ, এটা হচ্ছে চিত্রকল্প। কিংবা মনে করো, তাজমহল বা ‘শাজাহান’ কবিতাটা; একটা বিশেষ ক্ষেত্র আছে, একটা রাজকীয় সুষমা এবং সমৃদ্ধি...তিনি বাড়িয়ে যাচ্ছেন। আল মাহমুদের কবিতার ভেতরে গ্রামীণ চিত্রকল্পের প্রবণতা যেটা দেখা যায়, তাতে সব সময় খুব স্বাভাবিক দ্যোতনা আমরা পাই না।
প্রশ্ন: এটা আপনার কেন মনে হচ্ছে?
সৈয়দ হক: যেমন ধরো ‘তিলবর্ণ ধানের দোহাই’। শুনতে ভালো লাগে, কিন্তু ইটস মিনস নাথিং। এটা কোনো চিত্রকল্পের মধ্যে পড়ে না। কিন্তু মনে হয়, বাহ্! বোধ হয় একটা নতুন কিছু দেবে। না, নতুন কিছু নয়। কারণ, লুক অ্যাট দ্য হোল পোয়েম, দ্য হোল সনেট, দ্যাট ইউ ফাইন্ড ইট ইজ আ জার্নি। শুধু একটা ‘দোহাই’ দেওয়ার জন্য বা একটা কিছু করার জন্য নয়। আল মাহমুদের যেখানে সাফল্য, সেটা হচ্ছে, তিনি আমাদের গ্রামজীবনের উপকরণকে জসীমউদ্‌দীনের পর অনেকখানি তুলে আনতে পেরেছেন কিন্তু সংযোগটা সফলভাবে হয়তো সম্ভব হয়নি।
প্রশ্ন: উপস্থাপনের দিক থেকে একটা নতুনত্ব ও স্বকীয়তা তো আছে
সৈয়দ হকএটা এই জন্যই বলছি, শুরুর দিকে বাঙালি মুসলমানের জন্য এটা খুব স্বাভাবিক ছিল।
প্রশ্নবাঙালি মুসলমানের যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যতার কথা বলতে চাইছেন?
সৈয়দ হকখুব স্বাভাবিক ছিল নজরুলের মতো বা জসীমউদ্‌দীনের মতো লেখা। এটা অন্যায় কিছু না। আমরা সবাই শুরু করি কারও না কারও অনুকরণ করে। রবীন্দ্রনাথ শুরু করেছিলেন অনুকরণ করে। জীবনানন্দের মধ্যেও তেমন পাওয়া যায়। লেখা শেখার একটা পর্যায়ে এ রকমটা হয়।
প্রশ্নশামসুর রাহমান প্রথম দিকে জীবনানন্দ দ্বারা প্রভাবিত ছিলেনআপনার কি রকম কেউ আছে?
সৈয়দ হকনা না, আমার কথা কেন বলছ? আমি অনেকের কাছে শিখেছি। আমার কথা বলছি না। আমার কথা আমি বলব না। তোমাদের খুঁজে বের করতে হবে।
প্রশ্ন: আপনার সময়ে তো অনেকেই লিখেছেন?
সৈয়দ হকঅনেকেই লেখা শুরু করেছিলেন, আবার ছেড়েও দিয়েছেন। কেউ ১০ বছর পর ছেড়েছেন, কেউ ১৫ বছর, কেউবা ২০ বছর পর ছেড়েছেন।
প্রশ্ন: আপনার একটা কথা খুব ভালো লাগে, ‘লেখাটাকে পেশা হিসেবে নিতে হবে
সৈয়দ হকএটা তো ২৪ ঘণ্টার কাজ। অবসরের কাজ না। খণ্ডকালীন কাজ না। অনেকে মনে করে, সবকিছু করে রাতের বেলা বসে একটা লিখব। এভাবে আসলে লেখালেখি হয় না। শওকত আলীকে বলেছিলাম, শওকত চাকরি ছেড়ে দাও। ও বলে, খাব কী? আমি বলি, লিখবে কী? জগন্নাথ কলেজে পড়িয়ে জীবনটা...
প্রশ্ন: অন্য প্রসঙ্গে আসিজীবন আর মৃত্যু নিয়ে আপনার চিন্তাটা কী রকম?
সৈয়দ হক: ইদানীং এই যে চলে যাচ্ছে, ফুরিয়ে যাচ্ছে, শেষ হয়ে যাচ্ছে; দেখেছ তো ক্রমাগত লিখে সময় চলে যাচ্ছে। এটা কোনো কাজের কথা না। আমি জীবিত সকলের কবি হতে চাই। মৃত্যু মানুষের জন্য অবশ্যম্ভাবী। মৃত্যু সম্পর্কে মানুষের চিন্তা থাকতে পারে, দুশ্চিন্তা না। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে মৃত্যু সম্পর্কে এতটুকু ভাবি না। কিন্তু মৃত্যু সম্পর্কে তো দু-এক কলম লিখেছি। আমার একটা কবিতায় তো আমি এ রকম বলেছি, তুমি দেখবে ‘মৃত্যুর সঙ্গে আজ আমার ফাটাফাটি হয়ে যাবে’।
প্রশ্নআপনার জন্ম কুড়িগ্রামেআপনার বাবার জন্ম কোথায়?
সৈয়দ হক: সিরাজগঞ্জে।
প্রশ্ন: এই জায়গায় একটা যোগাযোগ খুঁজে পাওয়া যায়পরানের গহীন ভিতরকাব্যের যে ভাষা...
সৈয়দ হক: আমি বলছি তোমায়, এটা হচ্ছে পাবনা, ফরিদপুর—এই অঞ্চলটা...। আমার ব্যাপারে আঞ্চলিক ভাষার একটা দারুণ মিশ্রণ আছে।
প্রশ্নদুটোতেই আপনার দারুণ দখল আছে
সৈয়দ হকআমার মা হচ্ছেন মানিকগঞ্জের; বাবা হচ্ছেন সিরাজগঞ্জের এবং আমার জন্ম কুড়িগ্রামে। সেখানেই বড় হয়েছি। তিনটা ভাষার মিশ্রণ। আমার বাবা কথা বলতেন সিরাজগঞ্জের টানে, আমার মা মানিকগঞ্জের টানে...। আর বাড়িতে আমরা কথা বলতাম রংপুরের টানে। এমন একটা পরিবেশে মানুষ হয়েছি। জন্ম নেওয়া, বড় হওয়া এবং তার ভূগোল, সমতল, অবতল, উচ্চতা, জল-হাওয়া—মনের ভেতর সবকিছুই একটার পর একটা জায়গা নিয়ে থাকে।
প্রশ্ন: আপনার ভালোবাসার রাতে কাব্যগ্রন্থে সনেটের গঠনটা একটু আলাদামাঝেমধ্যে মনে হয় + ৬ গঠনটাকে আপনি ভেঙে দিয়েছেন
সৈয়দ হক: না। আট-ছয় আছে। আট-ছয় বা চৌদ্দ পুরোটাই আছে। কিন্তু মিলের ব্যাপারে প্রথাসিদ্ধ মিলগুলো ওইভাবে নেই। সনেট হচ্ছে, যদি তুলনায় বলি, আংটির ঠিক পাথরের মতো। একটুতেই সব এবং সেভাবেই আমি সনেট লিখেছি। আর ভালোবাসাররাতে বইয়ে যেটা হয়েছে, মধ্যযুগের বাংলা কবিতায় শরীরী ব্যাপারটা ছিল, আমাদের রাধা-কৃষ্ণলীলার একটা ব্যাপার ছিল। রবীন্দ্রনাথও প্রথম দিকে সেসব তাঁর কবিতায় এনেছেন। পরে তাঁর ওই ব্রহ্মমুগ্ধতা-শুচিতার জন্য এই জিনিসগুলোকে তিনি ঢেকে গেছেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি তা করেননি, কিন্তু কবিতায় ঢেকে গেছেন। এভাবে ত্রিশের কবিরা ভিন্ন দিকে সরে গেছেন, চল্লিশের কবিরা রাজনীতির দিকে বেশি ঝুঁকেছেন। আর আমাদের, পঞ্চাশের কবিদের কবিতায় ষাটের দশকে রাজনীতি এসেছে। কিন্তু ওই যে শারীরিক ব্যাপারটা—কাম-প্রেমের যে মেলানোর একটা ব্যাপার আছে, যেটা আমরা সেই মহাজন পদাবলি থেকে পেয়েছি; বাংলা সাহিত্যের যে একটা ধারা, এটাকে আমি আমার কাব্যে রতি-মিলন-রূপ-আকাঙ্ক্ষায় উন্নীত করেছি।
প্রশ্নরূপকাশ্রিত হয়েও কি শিল্পময় ভাবে কামের কথা বলা যায়যেটা আমরা পেয়ে ছি ভালোবাসার রাতেএবং ভালোবাসার পদাবলীতে
সৈয়দ হকপঞ্চাশের দশকে আমরা যখন লিখতে শুরু করি, একমাত্র আমি নিয়মিতভাবে গদ্যছন্দে কবিতা লিখেছি—একেবারে তিপ্পান্ন সাল থেকে।
প্রশ্ন: আপনার কবিতার পাশাপাশি আপনার স্বীকারোক্তি ও আছে মার্জিনে মন্তব্য বইয়ে
সৈয়দ হক: এটা আমি করেছি, যেটা আমার সমকালে আর কেউ করেনি। হাসান হাফিজুর রহমান মাঝেমধ্যে লিখেছেন। তাঁর সেই বিখ্যাত একুশের কবিতা। অনেক পরে, আতীকুল্লাহ করেছেন, কিন্তু একমাত্র আমি ১৯৫৩ সাল থেকে। আমার সেই প্রথম কবিতার বই একদাএকরাজ্যের ভেতরও সেই দৃষ্টান্ত আছে। আরেকটা ব্যাপার বলব, কবিতার উপাদান নিতে আমি ইউরোপের কাছে যাইনি।
প্রশ্ন: হ্যাঁআপনি বলেছেনআমাদের প্রাচ্য স্বয়ংসম্পূর্ণএখানেই প্রয়োজনীয় রসদ রয়েছে
সৈয়দ হক: আমি বলি পাশ্চাত্যের অনুকরণ সম্পূর্ণ একটা ভ্রান্ত পথ। শামসুর রাহমানকে বলেছিলাম কথাটা। শামসুর রাহমান আমাকে অবাক করে বলেছিলেন, আমাদের কী আছে, কী নিয়ে আমি লিখব? আমার তাৎক্ষণিকভাবে মনে পড়ল, বললাম, কেন, চাঁদসদাগর। তারপর অনেক পরে, তাঁর মারা যাওয়ার ১৫-২০ বছর আগে তিনি একদিন আমার বাসায় এসে হাজির। পকেট থেকে কাগজ বের করে বললেন, এই যে, চাঁদসদাগর। কিন্তু তিনি টেলেমেকাস, আগামেমনন—এগুলো আসলে মাথার ওপর দিয়ে যায়। আমি কিন্তু তিপ্পান্ন থেকে এ পর্যন্ত...। আই নেভার ওয়েন্ট ব্যাক। এদিক থেকে শামসুর রাহমান হচ্ছেন ত্রিশের কবিদের সম্প্রসারণ। তাঁর ব্যক্তিগত কবিতাগুলো ত্রিশের কবিতারই সম্প্রসারণ। ত্রিশের কবিরা ষাটে-সত্তরে এসে লিখলে, এ রকমই লিখতেন।
তবে রাজনীতিকে বিষয় করে—আমি আমার কথা বলছি, শামসুর রাহমান মারা যাওয়ার পরও বলেছি, এখনো বলা যায়, এটা ঐতিহাসিক বললে কম করে বলা হয় যে একটা জনগোষ্ঠীকে আধুনিক কবিতার সঙ্গে যুক্ত করেছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে তিনি একা না হলেও প্রধান। এই কাজটার জন্য আমরা এখনই তাঁকে অমরত্বের আসন দিতে পারি। তারপর কবিতায় রাজনীতির প্রবণতা চলে যাওয়ার পর উই হ্যাভ টু ওয়েট। তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতার সমালোচনা বোধ হয় আমি লিখেছিলাম ১৯৮১ সালে। তাতে বলেছিলাম, তাঁর নিজস্ব কাব্যভাষা নেই, আছে তিরিশেরই সম্প্রসারণ। যে কাব্যভাষাটায় বরং আল মাহমুদের অনেকখানি স্বাতন্ত্র্য আছে বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন: আপনার ‘ব্রহ্মপুত্রেরপ্রতি’ কবিতাটি অসাধারণ সৃষ্টিএটা নিয়ে কিছু জানতে চাই
সৈয়দ হক: ‘ব্রহ্মপুত্রের প্রতি’, এটা হচ্ছে আমাদের নদীমাতৃক দেশ। আমি তো বলি তেরোশত নদী। ব্রহ্মপুত্রের ব্যাপারটা হচ্ছে, আমরা নদীমাতৃক দেশ এবং এই নদীই আমাদের জনগোষ্ঠী গঠনে ভূমিকা রেখেছে। আমরা মিসরের কথা জানি, নীল নদের ভূমিকায় মিসরীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছে। ব্যাপারটা ওই রকম আরকি। আমাদের এখানেও যা কিছু সব নদীকেন্দ্রিকই। তার ভেতরে ব্রহ্মপুত্রকে আমি প্রধান ধরেছি এ জন্য যে এটি ব্রহ্মার পুত্র। তাই তাকে বলেছি, আমাকে শেখাও, আমাকে বলো...।
প্রশ্ন: প্রভাষক ব্রহ্মপুত্র...
সৈয়দ হক: প্রভাষক বলেছি, মহর্ষি বলেছি, অনেক কিছু বলেছি। কারণ, এই ব্রহ্মপুত্রের পার ঘিরেই তো আমাদের পূর্ব বাংলা। যেটাকে মূল বাংলা বলা যায়। দক্ষিণ বাংলায় তো অনেক নদী আছে। ব্রহ্মপুত্রের এইটাই কিন্তু হচ্ছে মূল বাংলা এবং বাঙালির মূল সংস্কৃতি একে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। রাঢ় সংস্কৃতি কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন। যে কারণে দেখি, হাসান আজিজুল হকের গল্প এ মাটির কথা বলে না। একজন লেখক কিন্তু বাধ্যতামূলকভাবে দেশপ্রেমিক। তাঁকে ভাষায় লিখতে হয়। ভাষায় লেখা মানে হলো, মানুষের কথায় লিখতে হয়। আর মানুষ মানে হচ্ছে সেই ভাষাভাষী মানুষ। আমি ওডিশার লোকের গল্প লিখতে পারব না, বার্মার লোকের ওপর গল্প লিখতে পারব না। তোমাকে এই মাটি, এই ভাষা, এই ভাষাভাষী—এদের ওপরে লিখতে হবে।

মন্তব্যসমূহ