শুক্রবার চার ঘণ্টার চন্দ্রগ্রহণ, কোথা থেকে কেমন দেখতে পাবেন, জেনে নিন (সৌজন্যে নিজস্ব প্রতিবেদন জনকণ্ট )
শুক্রবার চার ঘণ্টার চন্দ্রগ্রহণ, কোথা থেকে কেমন দেখতে পাবেন, জেনে নিন
যেমন করে গ্রহণ লাগে চাঁদে...।- ফাইল চিত্র।
ভরা পূর্ণিমায় ‘আত্মজা’ চাঁদকে শতাব্দীর দীর্ঘমেয়াদি অন্ধকারে ঢেকে দেবে পৃথিবী!
এই শতাব্দীতে (২০০১ থেকে ২১০০ সাল) এমন মহাজাগতিক ঘটনা আর ঘটবে না। এতটা সময় ধরে আর চাঁদের মুখ ঢাকা পড়ে থাকবে না ঘুটঘুটে অন্ধকারে।
ঠিক দু’দিন পর, শুক্রবার টানা প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে হবে চন্দ্রগ্রহণ। প্রায় পৌনে দু’ঘণ্টা (অঙ্কের সঠিক হিসেবে, ১ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট) ধরে চাঁদ পুরোপুরি ঢেকে যাবে পৃথিবীর ছায়ায়। আর তার আগে ও পরে দু’-দু’বার হবে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ। দু’টি আংশিক চন্দ্রগ্রহণই হবে ১ ঘণ্টা ৬ মিনিট ধরে।
যার মানে, পূর্ণ আর আগে-পরের দু’-দু’টি আংশিক চন্দ্রগ্রহণ মিলে মোট ৩ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট (১ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট + ১ ঘণ্টা ৬ মিনিট + ১ ঘণ্টা ৬ মিনিট) আলো-আঁধারিতে ঢাকা থাকবে চাঁদ।
কখন শুরু ও শেষ এই চন্দ্রগ্রহণের?
কলকাতার বিড়লা তারামণ্ডলের অধিকর্তা, জ্যোতির্বিজ্ঞানী দেবীপ্রসাদ দুয়ারি জানিয়েছেন, আগামী ২৭ জুলাই, শুক্রবার ভারতীয় সময় রাত ১১.৫৪ মিনিটে শুরু হবে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ। চলবে রাত ১টা পর্যন্ত। তার পর রাত ১টায় শুরু হবে শতাব্দীর দীর্ঘতম পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। তা শেষ হবে রাত ২.৪৩ মিনিটে। রাত ২.৪৩ মিনিটে ফের শুরু হবে আংশিক গ্রাস। যা শেষ হবে রাত ৩.৪৯ মিনিটে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
দেখা যাবে কলকাতা-সহ গোটা ভারতে
শতাব্দীর এই দীর্ঘতম চন্দ্রগ্রহণ কলকাতা-সহ গোটা ভারতে দেখা যাবে ২৭ জুলাই প্রায় মধ্য রাত থেকে ২৮ জুলাই ভোর রাত পর্যন্ত ৩ ঘণ্টা ৫৪ মিনিট ধরে। দেখতে পারবেন এশিয়া, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ইউরোপের মানুষও।
হাত বাড়ালেই মঙ্গল...
প্রতিবেশী ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলও পৃথিবীর খুব কাছে এসে পড়বে শুক্রবার। কারণ, কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে ওই দিনই পৃথিবীকে মাঝখানে রেখে সূর্যের ঠিক উল্টো দিকে চলে যাবে মঙ্গল, আর ১০০ বছরের মধ্যে যেখানে ‘উপনিবেশ’ বানানোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে মানবসভ্যতার। ফলে, ২৭ জুলাই সন্ধ্যা থেকে ২৮ জুলাই (শনিবার) ভোর পর্যন্ত মঙ্গলকে জ্বলজ্বল করতে দেখা যাবে আকাশে। গ্রহণের রাতে চাঁদ পুরোপুরি পৃথিবীর ছায়ায় ঢাকা পড়লে মঙ্গলকে আরও ভাল ভাবে নজরে পড়বে।
আরও পড়ুন- এমন ‘বিরল’ মহাজাগতিক ঘটনা ফের ১০৫ বছর পর!
‘লাল গ্রহ’ মঙ্গল
আরও পড়ুন- পৃথিবীতে এক দিন আর কোনও গ্রহণই হবে না!
যদিও ‘লাল গ্রহ’ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসবে ৩১ জুলাই, আগামী মঙ্গলবার। সে-দিন পৃথিবী থেকে মঙ্গলের দূরত্ব হবে প্রায় পাঁচ কোটি ৭৬ লক্ষ কিলোমিটার।
কেন শতাব্দীর দীর্ঘতম হবে এই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ?
দেবীপ্রসাদবাবুর ব্যাখ্যা, পৃথিবীকে কেন্দ্র করে উপবৃত্তাকার (অনেকটা ডিমের মতো) কক্ষপথে পাক খায় চাঁদ। পৃথিবীকে এক বার পাক খেতে তার গড়ে সময় লাগে সাড়ে ২৭ দিন। আর যেহেতু চাঁদ অনেকটা ডিমের মতো কক্ষপথে পাক মারে পৃথিবীকে, তাই ওই সাড়ে ২৭ দিনের মধ্যে চাঁদ এক বার পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে চলে আসে। আর তার পর এক বার সবচেয়ে দূরে চলে যায়।
চাঁদ আর পৃথিবীর মধ্যে দূরত্বটা যখন সবচেয়ে কমে যায়, তখন সেটাকে বলে ‘অনুভূ’ (এপিজি) অবস্থান। আর পৃথিবী ও চাঁদ যখন একে অন্যের থেকে সবচেয়ে বেশি দূরে থাকে, সেই অবস্থানকে বলে ‘অপভূ’ (অ্যাপোজি) অবস্থান। ২৭ জুলাই সেই ‘অ্যাপোজি’-তেই থাকবে চাঁদ ও পৃথিবী।
সূর্য, পৃথিবী (মাঝে) আর চাঁদ যে ভাবে থাকলে হয় পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ
গ্রহণ হয় কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে চাঁদ, সূর্য আর পৃথিবী একই সরলরেখায় এসে পড়লে। চাঁদ আর পৃথিবী কারওই নিজের আলো নেই। সূর্যের আলোতেই তারা আলোকিত হয়। সূর্য আর চাঁদের মাঝে তাই পৃথিবী এসে পড়লে মুখ ঢেকে যায় চাঁদের। হয় চন্দ্রগ্রহণ।
চেহারায় বড় কোনও বস্তু (এখানে সূর্য)-র সামনে কোনও বস্তু (এখানে পৃথিবী) এসে পড়লে ছায়ার দু’টি এলাকা তৈরি হয়। প্রচ্ছায়া (আমব্রা) আর উপচ্ছায়া (পেনাম্ব্রা)। প্রচ্ছায়া অংশটি হয় ঘন কালো। যেখানে কোনও আলোই ঢুকতে পারে না। তার দু’পাশে থাকে উপচ্ছায়া এলাকা। যেখানে হাল্কা অন্ধকার, হাল্কা আলো।
সল্টলেকের পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের অধিকর্তা সঞ্জীব সেন বলছেন, সূর্যের আলো পৃথিবীর ওপর পড়লে তেমনই একটি প্রচ্ছায়া কোণ (আমব্রাল অ্যাঙ্গেল)-এর সৃষ্টি হয়। কক্ষপথে পাক মারতে মারতে চাঁদ যখন সেই প্রচ্ছায়া কোণটির ঠিক মাঝামাঝি অংশটি দিয়ে যায়, তখন চাঁদের গতি মন্থর হয়ে যায়। ফলে, পৃথিবীর প্রচ্ছায়া কোণের ঠিক মাঝখানের অংশটিকে অতিক্রম করতে চাঁদের সময় লাগে অনেক বেশি। ঠিক সেই কারণেই শতাব্দীর দীর্ঘতম হচ্ছে এই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ।
গ্রহণে যে ভাবে চাঁদ ধীরে ধীরে হয়ে উঠবে ‘ব্লাড মুন’
মঙ্গল গড়ে ২৬ মাস অন্তর পৃথিবীর কাছে আসে আর তার ‘প্রতিযোগ’ হয়। তার মানে, সূর্য ও মঙ্গলের মাঝখানে আসে পৃথিবী এবং তারা সবাই একটি সরলরেখায় থাকে। এ বার এই ঘটনাকে ‘সুবর্ণ প্রতিযোগ’ বলছেন বিজ্ঞানীরা। মঙ্গল তার কক্ষপথে সূর্যের কাছাকাছি থাকার সময়ে প্রতিযোগ হলে তাকে সুবর্ণ প্রতিযোগ বলা হয়। এর ফলে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ জুড়ে রাতের আকাশে ঝলমলে লাল গ্রহের দেখা মিলবে। ২০০৩ সালের ২৮ অগস্ট পৃথিবী ও মঙ্গলের দূরত্ব কমে হয়েছিল প্রায় পাঁচ কোটি ৫৮ লক্ষ কিলোমিটার। গত ৬০ হাজার বছরের হিসেবে সেটাই ছিল দুই গ্রহের সব থেকে কাছাকাছি আসা। সুবর্ণ প্রতিযোগ হয়েছিল সে-বারেও।
এই শতাব্দীর দীর্ঘমেয়াদি চন্দ্রগ্রহণের পুরনো রেকর্ড
এর আগে, ২০০০ সালের ১৬ জুলাই এক ঘণ্টা ৪৬ মিনিট ধরে চলেছিল পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। তার ১১ বছর পর, ২০১১ সালের ১৫ জুন পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ হয়েছিল এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট ধরে। এ বার সব ‘রেকর্ড’ ভেঙে চন্দ্রগ্রহণ হবে ৩ ঘণ্টা ৫৪ মিনিটের।
সামনে আর কবে চন্দ্রগ্রহণ?
ভারতে ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই একটি চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে, তবে তা আংশিক। ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি হবে আরও একটি পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। তবে তা ভারত থেকে দেখা যাবে না।
যে দিন আর চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে না পৃথিবীতে
এক দিন আসবে, যখন পৃথিবী থেকে আর দেখা যাবে না সূর্যগ্রহণ। না, পূর্ণগ্রাস, খণ্ডগ্রাস, বলয় গ্রাস বা সংকর গ্রাস, কোনওটাই নয়। চাঁদ দিয়ে সূর্যের মুখ ঢাকা-চাপা দেওয়া আর সম্ভব হবে না। মুখ লুকোতে পারবে না চাঁদও। তাই সে দিন চন্দ্রগ্রহণও আর দেখা যাবে না আমাদের এই গ্রহ থেকে।
কারণ চাঁদ যে আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে দূরে। উত্তরোত্তর। বছরে হাতের নখ যতটা বাড়ে, ফি বছর আমাদের ছেড়ে ততটাই দূরে চলে যাচ্ছে চাঁদ। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে সূর্যের আরও কাছাকাছি। চাঁদ আছে বলেই তো যাবতীয় গ্রহণের আলো-আঁধারি। তাই সূর্য আর চন্দ্রগ্রহণ, যা নিয়ে আমাদের এত মাতামাতি, আর ৬৫ কোটি বছর পর পৃথিবী থেকে আর সে সব কিছুই দেখা যাবে না।
আরও পড়ুন- বিরল পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ ২৭ সেপ্টেম্বরে!
তার ফলে, পৃথিবী যে লাট্টুর মতো নিজের চার দিকে ঘুরছে, তার ওপর চাঁদের ‘খবরদারি’ কমে যাবে। কমে যাবে পৃথিবীর লাট্টুর গতি। আমাদের পার্থিব দিন আরও বড় হয়ে যাবে, ২৪ ঘণ্টার চেয়ে। চাঁদ অনেক অনেক দূরে চলে যাওয়ার ফলে আজ থেকে ৬৫ কোটি বছর পর পার্থিব দিন হবে ২৭ ঘণ্টার! এখনকার চেয়ে ৩ ঘণ্টা বেশি। বছরে দিনের সংখ্যাও আর ৩৬৫ থাকবে না। ঝুপ্ করে তা কমে যাবে অনেকটাই। সময় যত গড়াবে, যত বেড়ে যাবে দিনের আয়ু, বেলা দ্রুত পড়ে আসছে বলে আর আক্ষেপ করতে হবে না। বেলা যে কাটতেই চায় না বলে চরম অস্বস্তির দিন ঘনিয়ে আসছে! আর কী হবে? জোয়ার, ভাটার জোরও যাবে কমে। রাত ঢেকে যাবে আরও ঘুটঘুটে অন্ধকারে। এগিয়ে যেতে যেতে এক দিন সূর্যের ভয়ঙ্কর গ্রাসে চলে যাবে আমাদের আদরের চাঁদ। স্বপ্নের চাঁদ। যেন ৪০০ কোটি বছর ধরে তার মুখ ঢাকার ‘বেয়াদপি’র বদলা নেবে আমাদের নক্ষত্রমণ্ডলের ‘রাজা’- সূর্য। চাঁদকে গিলে নিয়ে!
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা হিসেব কষে দেখেছেন, সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগে জন্ম হয়েছিল পৃথিবীর। আর তার একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ গড়ে উঠেছিল আরও ৫০ কোটি বছর পর। আজ থেকে প্রায় ৪০০ কোটি বছর আগে। সেই সময় চাঁদ অনেক বেশি কাছাকাছি ছিল পৃথিবীর ‘হৃদয়’-এর। পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব ছিল তখন মাত্র সাড়ে ২২ হাজার কিলোমিটার বা ১৪ হাজার মাইল। একেবারে আমাদের নাগালের মধ্যেই! পৃথিবীর উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরুর দূরত্ব ১২ হাজার ৪৩০ মাইল। তার চেয়ে মেরেকেটে দেড় হাজার মাইল দূরে ছিল চাঁদ, তার জন্মের সময়ে। আর আজ, সরতে সরতে সেই চাঁদ চলে গিয়েছে পৃথিবী থেকে ৪ লক্ষ ২ হাজার ৩৩৬ কিলোমিটার বা আড়াই লক্ষ মাইল দূরে! মানে, প্রায় ১৮ গুণ বেশি দূরত্বে।
বছরে হাতের নখ যতটা বাড়ে, চাঁদ সরছে ততটাই!
অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের লুনার অ্যান্ড প্ল্যানেটারি ল্যাবরেটরির অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর বিষ্ণু রেড্ডি বলছেন, ‘‘বছরে আমাদের হাতের নখ যতটা বাড়ে, প্রত্যেক বছরে চাঁদ ঠিক ততটা দূরত্বই সরে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে। সেই দূরত্বটা বছরে ৩.৭৮ সেন্টিমিটার বা ১.৪৮ ইঞ্চি। তার ফলে, জন্মের পর থেকেই পৃথিবী যতটা জোরে লাট্টুর মতো ঘুরছে নিজের চার দিকে (পৃথিবীর আহ্নিক গতি), তা একটু একটু করে কমতে শুরু করেছে।’’
সহজে মালুম না হলেও, যার জেরে নিজের চার দিকে পাক মারতে ফি বছর ১৪ মাইক্রো সেকেন্ড করে সময় বেশি লাগছে পৃথিবীর। সে জন্যই পৃথিবীর ঘড়িকে আপডেটেড রাখতে ১৮ মাস অন্তর জুড়তে হয় ‘লিপ সেকেন্ড’। অধ্যাপক রেড্ডির বক্তব্য, ৬৫ কোটি বছর পর চাঁদ পৃথিবীর থেকে যে দূরত্বে পৌঁছে যাবে, সেখান থেকে তার পক্ষে আর সূর্যের মুখ ঢাকা সম্ভব হবে না। চাঁদ যে সূর্যের মুখ ঢাকছে, অন্তত পৃথিবী থেকে তা আর দেখা যাবে না। পুরোপুরি বা আংশিক, কোনওটাই নয়।
জন্মের পর থেকে এখনও পর্যন্ত চাঁদ আমাদের সঙ্গ ছেড়ে অনেকটাই দূরে চলে যাওয়ার ফলে, ইতিমধ্যেই আমাদের গ্রহে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। চাঁদ যত দূরে চলে যাবে, ততই কমতে থাকবে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সংখ্যা। সেই সময় খণ্ডগ্রাস আর বলয় গ্রাস সূর্যগ্রহণ বাড়বে। আর থাকবে সংকর গ্রাস। এখন ১৮ মাস অন্তর পৃথিবীর কোথাও না কোথাও হয় পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ।
জোরে ঘোরার দম কমছে পৃথিবীর! দিন বড় হচ্ছে
চাঁদ একটু একটু করে দূরে চলে যাচ্ছে বলেই পার্থিব দিন আগের চেয়ে অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগে যখন অনেক জোরে লাট্টুর মতো ঘুরতো পৃথিবী, তখন পার্থিব দিন ছিল মাত্র ২৩ হাজার সেকেন্ড বা সাড়ে ৬ ঘণ্টার। ৩০০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর লাট্টুর গতি যখন একটু কমল, তখন পার্থিব দিনের আয়ু বেড়ে হয় ৮ ঘণ্টা। ৬২ কোটি বছর আগে পার্থিব দিন ছিল ২২ ঘণ্টার। আজ যেটা দাঁড়িয়েছে ২৪ ঘণ্টাতে। আরও ৬৫ কোটি বছর পর হবে ২৭ ঘণ্টার দিন। অর্থাত্ যত দিন যাবে, এই সময় আরও বাড়তে থাকবে।
চাঁদ ‘বাই বাই’ জানাচ্ছে আমাদের!
সে দিন আসছে, যখন আমাদেরও ‘বাই বাই’ জানাতে হবে সব রকমের গ্রহণকে।
চাঁদ বন্ধুই ছিল আমাদের। কারণ, চাঁদই পৃথিবীকে তার কক্ষপথের ওপরে ২২.১ ডিগ্রি ঝুঁকিয়ে রাখতো। যার ফলে, গ্রীষ্মে উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে অনেকটাই ঝুঁকে থাকতো। যা ওই গোলার্ধকে উষ্ণতর করে তুলে তার দিনকে টেনে বাড়িয়ে দিত। আর শীতে উত্তর গোলার্ধ সূর্য থেকে দূরে ঝুঁকে থাকতো। ফলে, তার দিন ছোট হতো আর তা ঠান্ডা হয়ে যেত। কিন্তু চাঁদ প্রায় নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার পর কক্ষপথে পৃথিবী ঝুঁকে পড়বে আরও বেশি। কৌণিক মানে যা সাড়ে ২৪ ডিগ্রি। দুঃখে, আক্ষেপে!
বন্ধুবিচ্ছেদের দহনজ্বালা!
চাঁদের সঙ্গে ‘বন্ধুবিচ্ছেদ’-এর যন্ত্রণাটা তাই পৃথিবীকে সহ্য করতে হবে তখন সূর্যের গা ঝলসানো তাপে পুড়ে গিয়ে!
‘বন্ধুবিচ্ছেদ’-এর যন্ত্রণাটা তখন পৃথিবীর কাছে সত্যি সত্যিই হয়ে উঠবে দহনজ্বালা!
(এই খবর প্রথম প্রকাশের সময় সূর্যগ্রহণ সংক্রান্ত কয়েকটি গ্রাফিক ব্যবহৃত হয়েছিল। অনিচ্ছাকৃত সেই ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত।)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন