দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা কি ? এই দুটোর মধ্যে পার্থক্য কি ? ( courtecy;- internate & writer of this articles )



আদালত সম্পর্কে বিচারপ্রার্থীদের অনভিজ্ঞতা ও ভয়ভীতি পরোক্ষভাবে আদালতের দোরগোড়ায় তাঁদের ভোগান্তি বৃদ্ধি করে। মামলা সাধারণত ফৌজদারি বা দেওয়ানি—এ দুই প্রকার হয়। জমিজমা বা সম্পদ এবং পদসংক্রান্ত মামলাকে দেওয়ানি মামলা বলা হয়। দেওয়ানি মামলা বিচারে কয়েকটি ধাপ আছে এবং প্রতিটি ধাপের জন্য আইনের কিছু নির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। দেওয়ানি মামলার পূর্বশর্ত আরজি গঠন। বাদীর নালিশি লিখিত বিবরণকে আরজি বলা হয়।

মামলা দায়ের ও আরজি গ্রহণ
দেওয়ানি মামলা শুরু হয় আরজি গ্রহণের মাধ্যমে। দেওয়ানি আদালতের সেরেস্তাদার বা তাঁর অনুপস্থিতিতে সেরেস্তাদার হিসেবে কর্মরত কর্মকর্তা মামলার আরজি গ্রহণ করে আরজির গায়ে বা এর সঙ্গে যুক্ত অর্ডারশিটে বা স্লিপে মামলার ফাইলিং নম্বর লিখবেন। যেমন—দেওয়ানি মামলা নম্বর ৫৩৮/২০১২ ইং (এর অর্থ হলো ওই আদালতের ২০১২ সালে ৫৩৮ নম্বর দেওয়ানি মামলা)।
এরপর সেরেস্তাদার অর্ডারশিটটি আলাদা করে, সিলমোহর লাগিয়ে যিনি আরজি উপস্থাপন করবেন তাঁর কাছে ফেরত দেবেন। এরপর আরজির সঙ্গে দাখিল হতে পারে, এমন সব কাগজপত্রে মামলার নম্বর উল্লেখ করতে হবে। সেরেস্তাদার আর-১২ ফাইলিং রেজিস্টারে (যাকে স্যুট রেজিস্টারও বলা হয়) আরজির বিষয়বস্তু ক্রমানুসারে লিপিবদ্ধ করবেন। সাধারণত যেদিন আরজি গ্রহণ করা হয়, সেদিনই তা নিবন্ধন করা হয়।
সেরেস্তাদার আরজি পরীক্ষা করে আরজির প্রথম পৃষ্ঠার বাঁ প্রান্তের উপরিভাগে স্ট্যাম্প পর্যাপ্ত হয়েছে কি না তা লিখবেন। অপর্যাপ্ত স্ট্যাম্প থাকলে তাও উল্লেখ করবেন এবং বাকি স্ট্যাম্প আদায়ের পর দ্বিতীয়বার তা উল্লেখ করে প্রত্যয়ন করবেন। ২১ দিনের মধ্যে বাকি স্ট্যাম্প দিতে হবে। এভাবে একটি দেওয়ানি মামলা করা হয়।

আরজি ফেরত বা প্রত্যাখ্যান
আরজি ফেরত বা প্রত্যাখ্যান হওয়া উচিত মনে করলে সেরেস্তাদার তা বিচারকের কাছে উল্লেখ করবেন। বিচারক আইন অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। কোনো কারণে আরজি সঠিকভাবে মূল্যায়িত না হলে তা সংশোধনের জন্য পক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়, যার সময়সীমা ২১ দিন।

সমন জারি
একটি মামলা দায়েরের পরের ধাপ সমন জারি। সমন দুভাবে জারি করা হয়। আদালতে জারিকারকের (পদাতিক) মাধ্যমে এবং আদালতের সেরেস্তা কর্তৃক ডাকযোগে। সমনের সঙ্গে মামলার আরজি, বাদীর ফিরিস্তিযুক্ত কাগজের কপি (আরজির বিষয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কাগজপত্র, যা আরজির দাবিকে সমর্থন করে), ওকালতনামা, তলবনামা (বিবাদীর নামীয় সমন জারির ক্ষেত্রে সরকারকে দেওয়া কোর্ট ফি) দাখিল করতে হয়। মামলার সমন বিবাদী সরাসরি গ্রহণ করলে তা সরাসরি জারি হিসেবে গণ্য হবে। আদালতের জারিকারক যখন বিবাদীর ওপর সমন জারির জন্য যাবেন, তখন সমন নোটিশের অপর পৃষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট এলাকার দুজন নিঃস্বার্থ ব্যক্তির স্বাক্ষর বা টিপসই নেবেন। সাধারণত সমন বিবাদীর ওপর ব্যক্তিগতভাবে জারি হতে হয়। তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির ওপর সমন জারি হতে হবে। যদি ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো প্রতিনিধি পাওয়া না যায়, তবে পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ-সদস্যের ওপর জারি করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ভৃত্য পরিবারের সদস্য হিসেবে গণ্য হবে না (দেওয়ানি কার্যবিধি, আদেশ-৫, নিয়ম-১২ ও ১৫)। বিবাদী বা তাঁর পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো প্রতিনিধি বা তাঁর পরিবারের কোনো প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পাওয়া না গেলে বা সমন গ্রহণ না করলে বিবাদীর বাসগৃহের বহির্দ্বারে বা অন্য কোনো প্রকাশ্য স্থানে লটকে সমন জারি করতে হবে (দেওয়ানি কার্যবিধি, আদেশ-০৫, নিয়ম-১৭)। এ ক্ষেত্রেও জারিকারক সমন নোটিশের অপর পৃষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট এলাকার দুজন নিঃস্বার্থ ব্যক্তির স্বাক্ষর বা টিপসই নেবেন। সাময়িক অনুপস্থিতিতে বিবাদীর বাসগৃহের বহির্দ্বারের সামনে সমন লটকিয়ে জারি করা যুক্তিসংগত নয়। যদি ওই বিবাদীকে তাঁর বাসগৃহে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে পুনরায় তাঁর বাড়িতে সমন জারি করতে হয়। জারিকারক সমন জারি ফেরত দিলে নাজির যথাসম্ভব দ্রুত ও কমপক্ষে মামলার ধার্য তারিখের দুই দিন আগে সংশ্লিষ্ট আদালতে ফেরত দেবেন। অপরদিকে ডাকযোগে পাঠানোর পর ডাকরসিদ (অ্যাকনলেজমেন্ট ডিউ) থাকলে এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর এডি (ডাক-সমন) জারি হিসেবে গণ্য হবে। বিবাদী একের অধিক হলে প্রত্যেকের প্রতি সমন জারি হতে হবে। এ ছাড়া সমন সংশ্লিষ্ট জেলার নেজারত বিভাগের মাধ্যমে পাঠাতে হবে।

জবাব দাখিল
ববাদী মামলা প্রথম শুনানির তারিখে বা এর আগে বা আদালতের অনুমোদিত সময় দুই মাসের মধ্যে লিখিত জবাব দাখিল করবেন (দে.কা.বি. আদেশ-০৮, নিয়ম-০১)। তা না হলে মামলাটি একতরফাভাবে শুনানির জন্য নির্ধারিত হবে। তবে দেওয়ানি কার্যবিধি ৮০ ধারার নোটিশ জারি না হলে সরকার জবাব দাখিলের জন্য তিন মাস সময় পাবে। ববাদী যদি তাঁর দাবির সমর্থনে কোনো দলিলের ওপর নির্ভর করেন, তবে তা ফিরিস্তিসহ দাখিল করবেন।

প্রতিদ্বন্দ্বিতাবহির্ভূত শুনানি
প্রথম শুনানির তারিখে যদি দেখা যায়, মামলার পক্ষদের মধ্যে কোনো বিরোধীয় বিষয় নেই, তবে তা অবিলম্বে নিষ্পত্তি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মামলা মুলতবি করার কোনো সুযোগ নেই।

ইস্যু গঠন
মামলার প্রথম শুনানির তারিখ বা জবাব দাখিলের তারিখের মধ্যে যেটি পড়ে, তা থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ইস্যু গঠন করতে হবে (দে.কা.বি. আদেশ-১৪, নিয়ম-০১)। যেসব বিরোধীয় বিষয়ের ওপর মামলা নিষ্পত্তি হবে, সেসব বিষয়বস্তু নিয়ে ইস্যু গঠন করা হবে।

৩০ ধারার তদবির
ইস্যু গঠনের পর কোনো তদবির আছে কি না, এর জন্য এ পর্যায়টি রাখা হয়। ইস্যু গঠনের ১০ দিনের মধ্যে বাদী বা বিবাদী আদালতের অনুমতি নিয়ে অন্য পক্ষকে লিখিত প্রশ্ন দাখিল করতে পারবে।
তবে একটি পক্ষ একবারই প্রশ্ন দাখিল করতে পারবে (আদেশ-১১, বিধি-০১)। অন্য পক্ষকে এফিডেভিটের মাধ্যমে ১০ দিনের মধ্যে প্রশ্নোত্তর দাখিল করতে হবে (আদেশ-১১, বিধি-০৮)।

চূড়ান্ত শুনানির তারিখ নির্ধারণ
ইস্যু গঠনের ১২০ দিনের মধ্যে মামলার চূড়ান্ত শুনানির তারিখ ধার্য (এডি) করতে হয় (আদেশ-১৪, নিয়ম-০৮, দে.কা.বি.)।

চূড়ান্ত শুনানি
চূড়ান্ত শুনানির (পিএইচ) তারিখ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে মামলার শুনানি শেষ করতে হয় (আদেশ-১৮, নিয়ম-১৯, দে.কা.বি.)। চূড়ান্ত শুনানি (পিএইচ) ও পরবর্তী চূড়ান্ত শুনানি (এফপিএইচ) পর্যায়ে বিচারক জবানবন্দি, জেরা, দলিলাদি গ্রহণ করবেন এবং যুক্তিতর্ক শুনবেন।

রায় ঘোষণা
মামলা শুনানি সমাপ্ত হওয়ার পর অনধিক সাত দিনের মধ্যে আদালত রায় ঘোষণা করবেন (আদেশ-২০, বিধি-১১, দে.কা.বি.)।

ডিক্রি প্রদান
রায় ঘোষণার তারিখ থেকে সাত দিনের মধ্যে ডিক্রি প্রণয়ন করতে হবে (আদেশ-২০, নিয়ম-০৫, দে.কা.বি.)।
এ ছাড়া মামলার যেকোনো পর্যায়ে দুই পক্ষই আরজি, জবাব সংশোধন, অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, স্থানীয় পরিদর্শন ও স্থানীয় তদন্তের জন্য আদালতে দরখাস্ত দিতে পারবে। মামলার জবাব দাখিলের পর প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী পক্ষরা যেকোনো সময় আপস-নিষ্পত্তির জন্য আদালতের মধ্যস্থতায় বা আদালতের বাইরে বসতে পারেন। দেওয়ানি কার্যবিধির ৮৯(ক) ধারা মোতাবেক আপস-নিষ্পত্তির কথা বলা হয়েছে, যা এডিআর নামে পরিচিত।
লেখক  সহকারী জজ, লক্ষ্মীপুর।




★ছায়াবতী★  ছায়ামানবী ...

দেওয়ানি মোকাদ্দমা বা দেওয়ানি আদালাত কাকে বলে ? উঃ কোন বিষয়ে অধিকারের দাবি বা সম্পওি দাবি বা কোন ক্ষতির জন্য যে ক্ষতিপূ্রন দাবির জন্য যে মামলা করা হয় তাকে দেওয়ানি মোকাদ্দম বলে যে আদালাতে ,কোন বিষয়ে অধিকারের দাবি বা সম্পওি দাবি বা কোন ক্ষতির জন্য যে আদালাতে মামলা করা হয় তাকে দেওয়ানি আদালাত বলে জজ আদালাত ২। বাংলাদেশ এর বিচার ব্যবস্থা কে কত ভাগে ভাগ করা হয়েছে ? উঃ [ বাং লাদেশ সুপ্রীমকোট] ১ আপীল বিভাগ ২ হাইকো্ট বিভাগ ৩ জেলা জজ আদালাত ৪ অতিরিক্ত জেলা আদালাত ৫ যুগ্ন জজ আদালাত ৬ সিনিয়র সহকারী জজ আদালাত ৭ সহকারী জজ আদালাত ৩। বাংলাদেশ এর দেওয়ানি মামলা এর জন্য আদালাত সমুহ কি কি? ১।জেলা জজ আদালাত ২। অতিরিক্ত জেলা আদালাত ৩। যুগ্ন জজ আদালাত ৪। সিনিয়র সহকারী জজ আদালাত ক্রিমিনাল কেস বা ফৌজদারি মামলা কি ----------------------------- সাধারন ভাষায় কোন ব্যক্তিকে যখন মারামারি, চুরি,ডাকাতি,খুন, যখম, প্রতারনা, দস্যুতা, রেইপ, অপহরণ, বে-আইনি সমাবেশ, ইভ-টিজিং , জালিয়াতি, মিথ্যা সাক্ষ্যদান প্রভুতি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে তার বিরুদ্বে মামলা দায়ের করা হয় তাকে বলে ফৌজদারি মামলা ক্রিমিনাল কেস। পেনাল কোডে অপরাধ এবং এর শাস্তির পরিমাণ উল্লেখ আছে কিন্তু কিভাবে অপরাধিকে শাস্তি দেয়া হবে তার কথা উল্লেখ আছে কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮ বা ফৌজদারি কার্যবিধিতে। ব্যাপক ভাবে ক্রিমিনাল আদালত তিনভাগে বিভক্ত: (ধারা-৬) ---------------------------------------- ১। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোট ২। দায়রা জাজ আদালত ৩। ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আবার দুই ধরনের অধস্তন আদালতের সারি আছে। যেমন:- দায়রা আদালত এবং ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। জেলা পর্যায় যে বা যারা ক্রিমিনাল মামলা পরিচালনা করেন তাদের সেশন কোট বা দায়রা আদালত বলে। এই আদালতের বিচারকরা হলেন:- ১। দায়রা জাজ:- যিনি জেলায় পর্যায় ক্রিমিনাল মামলার প্রধান বিচারক। ২। অতিরিক্ত দায়রাজজ ৩। যুগ্ন দায়রাজজ। দায়রা জাজ আইন আরোপিত সব ধরনের শাস্তি দিতে পারেন। শুধু ডেথ পেনাল্টির কার্যকর করার ক্ষেত্রে হাইকোটের অনুমতি লাগবে। যুগ্ন দায়রাজজ ডেথ পেনাল্টি বা ১০ বছরের বেশি কারাদন্ড দিতে পারবেন না। (ধারা-৩১)


মন্তব্যসমূহ