ক্যান্সার চিকিৎসায় নিত্যনতুন অগ্রগতি ঘটে চলেছে। বের হচ্ছে নতুন নতুন ওষুধ। এমনি একটি নতুন ওষুধ বের হয়েছে যার নাম কিট্রুডা। এটি সাধারণ ফুসফুসের ক্যান্সার চিকিৎসায় কার্যকর। এর উদ্ভাবক বৃহৎ মার্কিন ওষুধ কোম্পানি মার্ক। courtecy;- janokanto
- এনামুল হক
ক্যান্সার চিকিৎসায় নিত্যনতুন অগ্রগতি ঘটে চলেছে। বের হচ্ছে নতুন নতুন ওষুধ। এমনি একটি নতুন ওষুধ বের হয়েছে যার নাম কিট্রুডা। এটি সাধারণ ফুসফুসের ক্যান্সার চিকিৎসায় কার্যকর। এর উদ্ভাবক বৃহৎ মার্কিন ওষুধ কোম্পানি মার্ক।
মার্কের প্রধান নির্বাহী কেন ফ্রেজিয়ার ২০১১ সালে এই কোম্পানিতে যোগ দেয়ায় সময় তাকে কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। কোম্পানি সম্ভাবনাময় দুটি নতুন ওষুধ বের করেছিল যেমন ডায়াবেটিসের জন্য জানুভিয়া ও সার্ভাইকাল ক্যান্সারের প্রতিরোধক টিকা গার্ডাসিন। তবে কোম্পানিটি গবেষণা ও উন্নয়নের পিছনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছিল সে তুলনায় প্রাপ্তিটা ছিল নৈরাশ্যজনক। বিনিয়োগকারীরা প্রশ্ন তুলেছিল বিজ্ঞানের পিছনে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে কি-না। কিন্তু মি. ফ্রেজিয়ার তাঁর ল্যাবগুলোকে সাহায্য সমর্থন দেয়া অব্যাহত রাখার পক্ষেই সিদ্ধান্ত নেন এবং স্টক মার্কেটের আশু সন্তুষ্টির জন্য নয় বরং দীর্ঘমেয়াদি সুফলের কথা ভেবে গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যয় চালিয়ে যেতে প্রকাশ্যে অঙ্গীকার করেন।
প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের সুযোগ শীঘ্রই মিলে যায়। আরেক ওষুধ কোম্পানি শেরিং প্লাউ-এর সঙ্গে মার্কের একীভবনের কিছুদিন এমকে ৩৪৭৫ নামে এক নতুন ক্যান্সার ওষুধ বের হয়। প্রথমে মার্কের বিজ্ঞানীরা এই ওষুধটি নিয়ে তেমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেননি। বরং পরে লাইসেন্স নেয়া হবে এমন ওষুধের তালিকায় এটাকে রেখে দেয়া হয়। দেহের ইঞ্জিন সিস্টেমকে কাজে লাগিয়ে ক্যান্সার কোষ আক্রমণে কোন ওষুধ কার্যকর হবে কিনা তা নিয়ে তখন ব্যাপক সংশয় ছিল।
এরপর মার্ক কোম্পানি লক্ষ্য করে যে, তার প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রিস্টল মায়ার্স স্কুইব (বিএমএস) ইমিউনো-অনকোলজি ড্রাগ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে সাফল্য পাচ্ছে। ব্যস, আর যায় কোথায়। মার্ক এমকে ৩৪৭৫ নিয়ে নতুন উদ্যমে নেমে পড়ে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার এক উদ্ভাবনীমূলক পরিকল্পনাকে কাজে লাগিয়ে মার্ক যত দ্রুত সম্ভব ওষুধটি পরীক্ষা করে দেখে। অচিরেই তা ক্যান্সার চিকিৎসায় এক বিস্ময়কর ওষুধ হিসেবে মর্যাদা লাভ করে এবং তার চেয়েও দ্রুত এটি ২০১৩ সালে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পায়। ২০১৪ সালে কিট্রুডা (পেমক্রোলিজুমার) পরিণত অবস্থার মেলানোমা চিকিৎসার ওষুধ হিসেবে বাজারে পৌঁছে এবং কয়েক মাসের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী ওষুধ বিএমএস কোম্পানির ওপডিভোকে (নিভোলুমার) হারিয়ে দেয়। কিট্রুডা বেশ ভালই বিক্রি হতে থাকে এবং ২০১৬ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক নাগাদ এর মোট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়ায় ১শ’ কোটি ডলার।
তবে সত্যিকারের বাণিজ্যিক পুরস্কারটা মিলেছিল ফুসফুসের ক্যান্সার চিকিৎসায় যে চিকিৎসা থেকে ওষুধ শিল্প বিপুল অঙ্কের অর্থ উপার্জন করে থাকে। এক্ষেত্রে মার্ক আরেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে। সিদ্ধান্তটা হচ্ছে ‘বায়োমার্কার’ ব্যবহার। চিকিৎসায় ভালভাবে সাড়া দিতে শারীরিকভাবে যেসব রোগীর সম্ভাবনা বেশি তাদের বেছে নেয়ার একটা কৌশল হলো ‘বায়োমার্কার’। এতে পরীক্ষার সকল পরিণতি লাভের সম্ভাবনা বাড়ে। এই কৌশলের খারাপ দিকটা হলো অনুমোদিত হলে ওষুধটি শুধু সেইসব রোগীকে দেয়া যাবে যাদের ঐ মার্কার আছে। এতে বিক্রি কমে যাবে।
মার্ক ও বিএমএস ফুসফুসের ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য তাদের ওষুধের অনুমোদন লাভের চেষ্টা চালালে সমস্যাটি সুস্পষ্ট আকার ধারণ করে। গোড়াতে ওষুধগুলো চিকিৎসার দ্বিতীয় কৌশল হিসেবে এবং তারপর প্রধান চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা চালানো হয়। কিট্রুডা ব্যবহার করতে হলে আগে রোগীর বায়োমার্কার পরীক্ষা করতে হবেÑ এই সীমাবদ্ধতার কারণে ওপডিভো বিক্রির দিক দিয়ে কিট্রুডাকে ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু পালাবদল ঘটল ২০১৬ সালের মাঝামাঝি যখন দেখা গেল সাধারণ ধরনের ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রথম চিকিৎসা হিসেবে পরীক্ষামূলক ব্যবহারে কিট্রুডা কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। অন্যদিকে ওপডিভো ব্যাপকসংখ্যক রোগীর ওপর প্রয়োগ করে দেখা গেছে সেটা কার্যকর হতে পারেনি। বায়োমার্কার ব্যবহার না করায় রোগীদের বেঁচে ওঠার হার বেড়েছে কি বাড়েনি তা দেখাটা কঠিন হয়ে পড়েছিল।
২০১৭ সালে কিট্রুডার বিক্রি প্রায় তিনগুণ বুদ্ধি পেয়ে ৩৮০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। সর্বশেষ একটি প্রান্তিকে এর বিক্রি ওপডিভোর বিক্রিকে প্রায় ধরে ফেলে। মার্কের ঐশ্বর্যগত ভাগ্য এখন তার এই আশ্চর্য দাওয়াই এর ওপর বহুলাংশে নির্ভর করছে। ভার্মিন ডিভান নামে এক বিশ্লেষক ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, ২০৩০ সালে কিট্রুডার বিক্রি ১০৭০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে। যে কোম্পানির বার্ষিক আয় ৪০০০ কোটি ডলার তার জন্য এই বিক্রিটা মন্দ নয়।
মার্ক কোম্পানি প্রতিষেধক টিকার ব্যবসায়েও ভাল করছে। গত বছর ভ্যাকসিন বিক্রি করে আয় করেছিল ৬৫০ কোটি ডলার। এর প্রাণী স্বাস্থ্য বিভাগটিও বেশ শক্তিশালী। তবে প্রতিযোগিতায় দাঁড়াতে না পেরে এর কোলেস্টেরলের ওষুধ জেটিয়া ও ভাইটোরিনের বিক্রি বেশ পড়ে গেছে। এর দুটি বেশ লাভজনক ডায়াবেটিসের ওষুধ জানুভিয়া ও জানুমেট অন্য কোম্পানির নতুন নতুন ওষুধের আগমনের কারণে হুমকির মুখে পড়তে পারে।
কিট্রুডার নতুন প্রতিযোগী আসছে। রশ ও অস্ট্রাজেনেকার মতো কোম্পানিগুলোও তাদের নিজস্ব ইমিউনো-অনকোলজি ওষুধ বের করার জন্য জোর চেষ্টা করছে। মার্কের দৃষ্টি অনকোলজির ওপর এবং বিশেষভাবে একটি ড্রাগের ওপর নিবদ্ধ থাকায় বিশেষজ্ঞরা উদ্বিগ্ন যে, কোম্পানিটি যথেষ্ট মাত্রায় বিকেন্দ্রীকৃত ও বিভিন্নমুখী নয়। কিন্তু তারপরও এটি কোন পরোয়া না করে এগিয়ে চলেছে। গত বছর এটি ব্রিটিশ ওষুধ কোম্পানি অস্ট্রাজোনেকাকে তার ক্যান্সারের ওষুধ লিনপারজাকে উন্নত ও বাণিজ্যিকীকরণ করতে ৮৫০ কোটি ডলার দিতে রাজি হয়েছিল। লিনপারজা (ওলাপারির) কিট্রুডার সঙ্গে একত্রে ভাল কাজ করবে এমন সম্ভাবনা আছে। মার্ক গত সেপ্টেম্বরে ৫৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার দিয়ে ইমিউনো-অনকোলজি বায়োটেক ফার্ম রিগনটেক কিনে নিয়েছে।
সূত্র : ইকোনমিস্ট
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন