১৯৭১ সালের আমার ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ ( ৩য় পর্ব )



                                   ১৯৭১  সালের  আমার  ব্যক্তিগত  স্মৃতিচারন  । ( ৩য়  পর্ব )

     প্রায় ৪৭ বছর আগের ঘটনার সঠিক ভাবে  বর্ণনা করা সত্যই খুব কঠিন একটি কাজ । একমাত্র  কোনো গবেষক জীবিতদের সাক্ষাতকারে  তাদের জবানবন্ধি  গ্রহণ করে পরে তা বিশ্লেষণ করে লিখা হয়ত সম্ভব হতে পারে । তাই আমার এই লেখার দিনক্ষণের কিছু বর্ণনায় কিছু ভূলতথ্য থাকতে পারে । তাই এই লেখাটি সরাসরি না লিখে আমার ব্যক্তিগত তখনকার ঘটে  যাওয়া  ঘটনার  বর্ণনার মাধ্যমে লিখতে হচ্ছে ।

   ১৯৭১ সালের জানুয়ারী থেকে গণআন্দোলনের  মাত্রা  দিন দিন বৃদ্ধি  পাচ্ছিল । তাই দেশবিদেশের খবর শুনতে আমাদের বাসায় তখনকার সবথেকে শ্ক্তিশালী ফিলিপ্সের ৬ বড় ব্যাটারীর  একটি রেডিও ক্রয় করা হয় । আমি সবসময় বাসায় অবসর থাকায় দেশ বিদেশের প্রায় সব প্রচারিত খবরই শুনার চেষ্টা করতাম  ।

   আর ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর তার মাত্রা আরো বৃদ্ধি পায় । ২৫ মার্চের ঢাকায়  পাকিস্তান আর্মির ক্রেক ডাউনের পর ২৬ মার্চ আমি প্রায় সারাদিনই  রেডিও টিউনিং করতে ছিলাম । তখন সিলেটে ৩ দিনের জন্যে কারফিউ জারি করা হয় । তাই মামা সহ আমরা সবাই ঘরে বন্ধি ছিলাম । দুপুর ১২টার দিকে ২৬ মার্চে হঠাৎ করে চট্রগ্রাম রেডিওতে একটি ভাষণ প্রচার করা হচ্ছিল । ভাষণ দিচ্ছিলেন চট্রগ্রামের আওয়ামী নেতা জনাব হান্নান । তার ভাষণে জানা যায় ২৫ মার্চ রাত ১২টার পর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন । পর পর দুইবার ভাষণটি  প্রচারিত হয় এবং বলা হয় বঙ্গবন্ধু কোনো গোপন স্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করছেন । জনাব হান্নানের ভাষণের পর শহীদ ছাত্রনেতা আব্দুর রবের ও একটি ভাষণ প্রচারিত হয় । ঐ ছাত্রনেতা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন এবং চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং সড়কের নাম করণ করা হয় শহীদ আব্দুর রব সড়ক নামে । পরে আমার সোনার বাংলা বাংলাদেশের নতুন জাতীয় সঙ্গিত প্রচার করে রেডিও  ষ্টেশনটি বন্ধ হয়ে যায় । পরে জানা গেছে ঐ ঐতিহাসিক ভাষণটি চট্রগ্রমের রেডিওর আগ্রবাদ ষ্টেশন  থেকে প্রচার করা হয় বেলাল আহমদের সহযোগিতায় । এই ভাষণের পরে আগ্রাবাদের রেডিও  টেন্সমিটার খুলে রেডিওর কালুরঘাট ষ্টেশনে নিয়ে স্থাপন করে সাত  রাত্রি ৭ টার পর  আবার ঐ ঘোষণা কয়েকবার প্রচার করে চট্রগ্রাম বাসীদের জন্যে কিছু কাজ করতে পরামর্শ দেয়ার পর ষ্টেশন বন্ধ হয়ে যায় । ২৭ মার্চ দুপুরে আবার ঐ ঘোষণা প্রচার করে মুক্তিযুদ্ধাদের কিছু নির্দেশ প্রদানের পর ষ্টেশনটি বন্ধ করা হয় । ২৭ মার্চ রাত্রে মেজর জিয়াউর রহমান স্বকণ্টে নিজকে প্রবেশনেল হেড অব ষ্ট্রেইট পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আবার ঘোষণা করেন এবং পরে ২৮ তারিখ আগের ভাষণের সংশোধন করে বঙ্গবন্ধুর নামে আর একটি ভাষণ প্রচার করেন । এর পরে বম্বিং করে ষ্টেশনটি ন্ষ্ট করে দেয়ার আগে  ট্রান্সমিটারটি খুলে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় ।

   ২৫ মার্চে ঢাকায় কিছু একটি ঘটতে যাচ্ছে এটি বুঝতে পেরে ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রত্যেক জেলায় জেলায় সংবাদ পৌঁছেদেন যে ২৫ মার্চ  বিকেলেই শহর ছেড়ে গ্রামে গোপন ও নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে । এই খবরটি জেনেই আমার আত্মীয় তখনকার সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ  আওয়ামী লীগ নেতা প্রবাসী বইয়ের লেখক ইংরেজী ফ্রিলেন্সার সংবাদিক সিলেট শহর থেকে এক কাপড়ে শহর ত্যাগ করেন । পরে তার কুমারপাড়ার ভাড়াতে বাসা থেকে তার ভক্সাওয়াগন
কারটি আর্মি রা তার বাসা তদন্তের সময় নিয়ে যায় অন্যানা গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রের সঙ্গে । পরে তিনি বিদেশে স্বাধীনতার যুদ্ধের পক্ষে বিভিন্ন দেশে  প্রচারের কাজে নিযুক্ত হয়েছিলেন এবং স্বাধীনতার  পর জেলা প্রশাসনের কাজ করা আরম্ভের আগ পর্যন্ত সিলেট ও কুমিল্লা প্রশাসন অঞ্চলের প্রশাসনের সেক্রেটারী নিযুক্ত হন এবং দেওয়ার ফরিদ গাজী ঐ প্রশাসনিক অঞ্চলের প্রেসিডেণ্ট ছিলেন ।  

  ৩ দিনের কারফিউ শেষ হলে
 ৪ ঘন্টার জন্যে ২৯ মার্চ কারফিউ শীতিল করে মানুষকে বাজার করতে দেয়া হয় । তখন আমি বন্দর বাজারের জেল রোডের চাউলের দোকান থেকে দুইমন
ওজনের  দুই  বস্তা  সিলেটের বিখ্যাত ময়নাশায়িল চাউল

সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় বাজার করে বাসায় নিয়ে আসি । তখন বাজারের মধ্যে অনেক আর্মিকে সিভিল ড্রেসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মানুষের গতিবিধি লক্ষ্য করতে দেখতে পাই ।  চলবে - (-এই  লেখায়  যে  তারিখের উল্লেখকরা  হয়েছে তার কিছু  হেরফের  হতে  পারে কারণ এটি আমার স্মৃতি থেকে  কোনো  লিখিত  তথ্য ছাড়াই  লিখেছি , ঐ সব  অনিচ্ছাকৃত ভূলের  জন্যে  আমি দুঃখিত )
     

মন্তব্যসমূহ