‘ঈশ্বর কণিকা’ তো বিশ্বব্রহ্মা-কে মুছে ফেলতে পারে! ( সৌজন্যে দৈনিক জনকণ্ঠ এবং লেখক;- নাদিরা মজুমদার )
- নাদিরা মজুমদার
হিগস-বোসনের নামকরণ
১৯৬৪ সালে স্কটিশ পদার্থবিদ পিটার হিগস একটি পেপার
প্রকাশ করেন। ছিল তো ‘ল্যান্ডমার্ক’ পেপার। কারণ সেই পেপারে- ‘প্রাথমিক কণিকাদের (এলিমেন্টারি পার্টিকলস) কেন ভর থাকবে’র কথা বলেন তিনি। সেই সঙ্গে আরও বলেন, একটি
ত্রিমাত্রিক ‘ক্ষেত্র’ বিশ্বব্রহ্মা-ের
আনাচে কানাচে র্সবত্র (স্থানব্যাপী) ছড়িয়ে রয়েছে এবং যাই এর মধ্য দিয়ে ’‘পা টেনে টেনে হেঁটে’ যায়Ñক্ষেত্রটি তাকেই নিজের দিকে টানে। কিছু কিছু
কণিকার পক্ষে (অন্যদের তুলনায়) ক্ষেত্রটি অতিক্রম করা খুব সহজ হয় না, ফলে তারা হয় ভারিতর কণিকা।
হিগসের মতে এমন ক্ষেত্র, পরবর্তীকালে ক্ষেত্রটির নামকরণ
হয় হিগস ফিল্ড বা ক্ষেত্রÑযদি
বাস্তবিকই থেকে থাকে, তবে ক্ষেত্রটির সঙ্গে জড়িত একটি কণিকা : হিগস-বোসন, থাকতেই হবে। কারণ পদার্থবিদ্যা বলছে যে যখনই কণিকারা ক্ষেত্রের (যে কোন
ক্ষেত্রের) সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়া (ইন্টার্যাকশন) ঘটায়, মিথষ্ক্রিয়াটি
সব সময়ই কণিকার মধ্যস্থতায় ঘটে থাকে। যেমন : তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রে আলোর কণিকা
ফোটন মধ্যস্থতার দায়িত্ব পালন করে।
তবে হিগস-ক্ষেত্র করে কি?
অ-নে-ক অ-নে-ক অসংখ্য হিগস-কণিকা একত্রে ঝাড় বেঁধে
তৈরি করে হিগস-ক্ষেত্রের, আর বিনিময়ে ক্ষেত্রটি থেকে হিগস-কণিকারা ভর পেয়ে থাকে। হিগস-ক্ষেত্র
যদি না থাকত তো কি হতো? র্অথাৎ বিশ্বব্রহ্মা-ের হাল কি
হতো? হতো এই যে বিশ্বব্রহ্মা-ে অন্য কোন পরমাণুর অস্তিত্ব
থাকত না। ফলে সে তখন প্রায় আলোর গতিবেগের কাছাকাছি গতিবেগ সম্পন্ন একক একটিমাত্র
বিন্দু হয়ে হুস হুস করত। হিগস-ক্ষেত্র র্সবব্যাপী বলে কণিকারা সব সময়ই ক্ষেত্রটির
মধ্য দিয়ে চলাচল করছে। তবে তফাত মাত্র যে কম ভরের কণিকাদের তুলনায় ভারিতর ভরের
কণিকারা ক্ষেত্রটির সঙ্গে অধিকমাত্রায় মিথষ্ক্রিয়া ঘটাচ্ছে। আবার একই সাইজের দুটো
কণিকার ভিন্ন ভিন্ন ভর হয় কেন’র ব্যাখ্যাও পাওয়া যাচ্ছে।
কিভাবে সন্ধান মিলল?
পিটার হিগস সেই কবে, প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে-হিগস-কণিকার কথা বলেছেন। আর
তার দেখা মিলল ২০১২ সালে! প্রধান কারণ ছিল প্রযুক্তিগত। তদুপরি হিগস-কণিকা অত্যন্ত
অস্থির স্বভাবের এবং দ্রুত অতি দ্রুত ভেঙ্গে যেতে পটু, জন্ম
হতে না হতেই ভেঙ্গে যায়, ক্ষণজীবী সে। সুইজারল্যান্ডের
জেনিভা শহরের মাটির নিচে অবস্থিত ‘লার্জ হেড্রন কলাইডারে’
(র্বতমানে পরমাণু ভাঙ্গার পৃথিবীর বৃহত্তম যন্ত্র) প্রোটনকে
ক্রমান্বয়ে উত্তেজিত (ত্বরণবৃদ্ধি) করে করে প্রায় আলোর গতিবেগের কাছাকাছি নিয়ে আসা
হয় এবং ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করা হয়। কমসে কম প্রতি দশ বিলিয়ন (একের পরে নয়টি শূন্য
এক বিলিয়ন) সংঘর্ষে মাত্র একটি হিগস-কণিকার জন্ম হয়। কাজেই মাত্র একটি ‘ক্ষণজীবী’ হিগস জন্ম নিলে সরাসরি তাকে র্পযবেক্ষণের
সময় মিলবে না। বিজ্ঞানীরা তাই সংঘর্ষ-উত্তর অবশিষ্টাংশের রেকর্ড নেন এবং
ক্ষয়প্রাপ্ত হিগস থেকে কোন কোন কণিকার জন্ম হলো সেগুলোর বৈজ্ঞানিক হিসাব-নিকাশ
করেন। আর তাতেই ধরা পড়ে যে ‘ইতোপূর্বে অনাবিষ্কৃৃত এক
বোসন, যার ভর ১২৫ গিগাইলেকট্রনভোল্ট, আকারে প্রোটনের চেয়ে প্রায় ১২৫ গুণ বড়- হিগস-কণিকাই হবে।’ আসলেও হিগস-কণিকাই বটে!
নাম কেন ‘ঈশ্বর কণিকা’?
এই কণিকার এই নামই মিডিয়াকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে, পরিণত হয় ‘পিআর’ পরিচালনার মূল বিন্দুতে। হিগস-কণিকা
ওরফে ‘ঈশ্বর-কণিকা’র ‘জনপ্রিয়তাকে’ আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের
বিপুল সাড়া জাগানো জনপ্রিয়তার সঙ্গে অনায়াসে তুলনা করা যায়। উভয়
ক্ষেত্রেই-উন্মোচিত রহস্য জনসাধারণ কতটুকু বুঝেছে প্রধান বিষয় নয়, আসল কথা হলো যে এটুকু তারা বুঝতে পেরেছে যে (আপেক্ষিক তত্ত্বের অনুরূপ)
সম্ভবত হিগস-কণিকা বিজ্ঞানে নতুন প্রভাত নিয়ে আসছে।
পদার্থবিদ লিয়োন লিডারম্যান ডিক টেরেসিকে সঙ্গে
নিয়ে ১৯৯৩ সালে ‘দি গড
পার্র্টিকেল; ইফ ইউনিভার্স ইজ দি আনসার, হোয়াট ইজ দি কোয়েশ্চেন?’ নামক একটি বই লেখেন ও
প্রকাশ করেন। যদি বিশ্বব্রহ্মা- কেবল শক্তি উপাদানে গঠিত হতো, তবে সে আলোর গতিবেগে বেগমান থাকত। কিন্তু বস্তু ও শক্তি-এই দুই
উপাদানের সমন্বয়ে বিশ্বব্রহ্মা- গঠিত। এই বস্তুর কাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব
হিগস-কণিকার বা অন্যভাবে, অতি-পারমাণবিক (সাবএ্যাটামিক)
কণিকাদের পর্যাবৃত্ত বিন্যাস বা পিরিয়োডিক টেবল’-এ
হিগস-কণিকার অবস্থান থেকে সুস্পষ্ট যে বিশ্বব্রহ্মা- বিষয়ে চূড়ান্ত উপলব্ধির
চাবিকাঠি তার ওপরে ন্যস্ত হয়েছে, অথচ ‘সে কেবল পালিয়ে বেড়ায়, দৃষ্টি এড়ায়...’। তাই ‘হতাশাগ্রস্ত’ ত্যক্তবিরক্ত
বিজ্ঞানীরা আসলে বলেন ‘গডড্যাম’ (দুত্তোরিছাই) কণিকা। পুস্তক প্রকাশক ‘গডড্যাম
কণিকা...’য় আপত্তি করলে, ‘কণিকার’
ড্যাম অংশটি বাদ দেয়া হয়, থেকে যায় ‘গড’ অংশটি । ‘ঈশ্বর-কণিকা’
নামক নামের মাহাত্ম্য হিগস-কণিকাকে ‘সেলিব্রেটি’র আসনে প্রতিষ্ঠিত করে। চলবে...
লেখক : প্রবাসী সাংবাদিক, বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক
’ঈশ্বর-কণিকা’কে নিয়ে
বাড়াবাড়ির কারণ কি?
বাস্তবে ইশ্বর-কণিকা ওরফে হিগস-বোসনকে পেতে প্রচুর
‘কাঠখড়’ পোড়াতে হয়েছে। কমসে কম চার বছর ধরে নানা রকমের পরীক্ষা নিরীক্ষা
পরিচালিত হয়েছে; খরচাপাতির পরিমাণও কম নয়। প্রায় আট দশমিক
দুই (৮.২) বিলিয়ন পাউন্ড। পৃথিবীর নানা দেশের প্রায় এক হাজার বিজ্ঞানী
নাছোড়বান্দার মতো লেগে থেকেছেন। শেষ পর্যন্ত ইশ্বর-কণিকার দেখা মিলল, নিশ্চিতভাবে জানলাম যে ‘মৌলিক কণিকাগুলোর’
ভরের যোগান আসছে হিগস-মেকানিজম থেকে। তবে আমাদের প্রায়োগিক জীবনে
কি কাজে আসবে’র কোন ধারণা আমাদের নেই। তাতে বোধহয় আমাদের
হতোদ্যম হওয়ার কারণও নেই। যেমন : মাইকেল ফ্যারাডেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল-সদ্য
আবিষ্কৃত বৈদ্যুতিক মোটর কি কাজে আসতে পারে? ফ্যারাডে
সামান্যক্ষণ চুপ করে থাকেন, তারপর বলেন ‘জানি না, তবে এটুকু নিশ্চিত করে বলতে পারি যে
একদিন না একদিন এটির ওপর সরকার ট্যাক্স বসাবে।’ অবশ্য
বৈজ্ঞানিক জগতে-‘স্ট্যান্ডার্ড মডেল’ নামক যে একটি তত্ত্ব রয়েছে, হিগস-কণিকা
সেইটিকে পরিপূর্ণতা দেবে।
(আমাদের চারদিকে যত রকমের বস্তু রয়েছে, সেগুলো ‘মৌলিক কণিকা’ (এ্যালিমেন্টারি পার্টিকল) দিয়ে তৈরি, অর্থাৎ
তারা বস্তু মাত্রেরই ‘নির্মাণসামগ্রী বা বিল্ডিং ব্লক।’
তারা বিশ্বব্রহ্মা-ের নির্মাণসামগ্রী। প্রকৃতিতে যে চারটি মৌলিক
বল রয়েছে-সেসব বল কিভাবে নির্মাণসামগ্রীর মিথষ্ক্রিয়া (ইন্টারেকশন) পরিচালনা করছে-
তার ব্যাখ্যা দিচ্ছে ‘স্ট্যান্ডার্ড মডেল।’
চারটি মৌলিক বলের (শক্তিশালী বল, দুর্বল বল, তড়িৎচুম্বকীয় বল ও অভিকর্ষ বল) প্রথম তিনটির রয়েছে বল-বাহক কণিকা এবং
কণিকাগুলো ‘বোসন’ নামক
প্রশস্ত-শ্রেণীভুক্ত কণিকার অন্তর্ভুক্ত। বস্তুর কণিকাগুলো কি করে দেখা যাক!
কণিকাগুলো নিজেদের মধ্যে অসংলগ্নভাবে (ডিসক্রিট) ‘বোসনের’
বিনিময় করে, যার অর্থ শক্তির লেনদেন
করছে। প্রতিটি মৌলিক বলের রয়েছে নিজস্ব ‘বোসন’। যেমন : শক্তিশালী বলের বলবাহক বোসন হলো ‘গ্লুয়োন’,
তড়িৎচুম্বকীয় বলের বোসনের নাম ‘ফোটন’,
দুর্বল বলের বাহক কণিকারা ‘ডব্লিউ এবং
জেড বোসন।’ অভিকর্ষ বলের বল-বাহক বোসনের নাম কি? তার নাম : ‘গ্র্যাভিটন’। কিন্তু এর খোঁজ এখন পাওয়া যায়নি। (প্রথম তিনটি মৌলিক বল ‘স্ট্যান্ডার্ড মডেলে’ অন্তর্ভুক্ত)।
এ পর্যন্ত ‘ঈশ্বর-কণিকা’ ওরফে
হিগস-বোসন সম্বন্ধে যা জানছি, সবই ইতিবাচক। কিন্তু কারও
কি বিশ্বাস হবে যে হয়ত বা বিশ্বব্রহ্মা-ের নিয়তি/ভাগ্য/অদৃষ্ট - যাইÑই বলি না কেন, সেটির চাবিকাঠি বহন করছে ‘ঈশ্বর-কণিকা’ ওরফে হিগস-বোসন?
জ্যোর্তিপদার্থবিদ স্টিফেন হকিং ঈশ্বর-কণিকা বা ‘গডড্যাম-কণিকা’ আদৌ পাওয়া যাবে বলে মোটেই বিশ্বাস করতেন না। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮
সালে আরেক পদার্থবিদ গর্ডন কেইনের কাছে এক শ’ ডলারের
বাজিও ধরেন। সার্নয়ের পদার্থবিদরা ২০১২ সালে কণিকাটি শনাক্ত করলে, হকিং তখন বেদনার সঙ্গে বলেছিলেন যে, কণিকাটি
পদার্থবিদ্যার রোমাঞ্চকর আকর্ষণকে কমিয়ে দিল। কিন্তু ‘স্টারমাস’
নামক রচনা ও লেকচারের একটি সঙ্কলনের মুখবন্ধে হকিং সতর্ক করে
বলেন যে, কণিকাটি আমাদের জানা পরিচিত বিশ্বব্রহ্মা-ের
ধ্বংসের জন্য দায়ী হতে পারে। হকিংই অবশ্য একমাত্র বিজ্ঞানী নন যিনি এমন ধারায়
চিন্তা করছেন। ‘হিগস-বোসন ডুমসডে‘ নামে একটি সর্বনাশা বিপর্যয়ের তত্ত্ব রয়েছে- তত্ত্ব অনুযায়ী ‘কোয়ান্টাম’ কখনওবা কমবে আবার কখনওবা বৃদ্ধি
পাবে- প্রক্রিয়া ঘটিয়ে ‘বুদ্বুদ’সর্বস্ব
স্থানের সৃষ্টি করবে এবং এটিই স্থানসময়ে সম্প্রসারিত হয়ে বিশ্বব্রহ্মা-ের সর্বনাশ
ঘটাবে। অবশ্য বিজ্ঞানীরা আশ্বাস দিয়ে বলেছেন যে ধ্বংসযজ্ঞটি ‘এখনই’ যে ঘটছে, তা নয়
কিন্তু। যেমন : ফার্মি ন্যাশনাল এক্সিলারেটর ল্যাবের (বাটাভিয়া, ইলিনয়, যুক্তরাষ্ট্র) পদার্থবিদ জোসেফ লিকেনের
হিসেব মতে, দশ থেকে এক শ’ বছর
এবং একের পরে আরও এক শ’টি শূন্য বসিয়ে-যে সময়টির হিসাব
হচ্ছে, সেই পরিমাণ সময় আমাদের রয়েছে। তবে তো প্রচুর সময়ই
রয়েছে! কিন্তু লিকেন আবার এ-ও বলেন যে ‘বুদ্বুদ’সর্বস্ব স্থান সৃষ্টি হয়তবা ঘটে গেছে, বিশ্বব্রহ্মা-ের
দিকে ধেয়ে আসছে সে। আমরা কোন সতর্কবাণী পাচ্ছি না’র কারণ
কি? কারণ হলো যে, সে আসছে আলোর
গতিবেগে।’
হিগস-বোসনের ভরের পরিমাণ মাপজোকের পর থেকে ‘বিশ্বব্রহ্মা-ের বিপর্যয়’
পর্বটিও গুরুত্ব পেতে থাকে।
হিগস-বোসনের ভরের পরিমাণ প্রায় ১২৬ বিলিয়ন
ইলেকট্রন ভোল্ট বা প্রোটনের ভরের চেয়ে প্রায় ১২৬ গুণ বেশি। আবার বিশ্বব্রহ্মা-কে
স্থিতিহীনতার প্রান্তে ঠেলে দিতে যতটুকু ভরের পরিমাণ দরকার, সেটিই হিগস-বোসনের বর্তমান ভর।
অন্যভাবে, বিশ্বব্রহ্মা- স্থিতিহীনতার প্রান্তে অবস্থান
করছে! র্অথাৎ এমন এক নাজুক অবস্থায় বিশ্বব্রহ্মা- অবস্থান করছে যে, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম চিমটে পরিমাণ ‘এদিক ওদিক’
হলেই স্থিতিহীন হতে বাধ্য। আর এমন অবস্থা সংঘটনের সঙ্গে হিগসের
ক্ষেত্র সম্পৃক্ত (কারণ সে যে ভরের যোগানদার!)।
হিগস-ক্ষেত্রের আবির্ভাব ঘটে বিশ্বব্রহ্মা-ের
জন্মলগ্নে, বা
অন্যভাবে বিশ্বব্রহ্মা- জন্মগ্রহণ করে হিগস-ক্ষেত্রকে সঙ্গী করে এবং ক্ষেত্রটির
রয়েছে নিজস্ব শক্তি। ক্ষেত্রটি হয়ত নিজের জন্য অনুকূল সুবিধাজনক পরিমাণ ‘তেজ’ বজায় রাখার চেষ্টায় নিরত নিয়োজিত। ফলে
ধীরে ধীরে সে পরিবর্তিত হচ্ছে। ‘বস্তু’ মাত্রই যেমন তরল বা কঠিন অবস্থায় থাকতে পারে, স্থান-সময়ের
সর্বত্র বিরাজমান হিগস-ক্ষেত্রও কেবল এই দুই অবস্থায় থাকতে পারে বইকি!’ (সার্ণ ল্যাবের পদার্থবিদ জিয়ান জিয়ুডিস, ২০১৩
সাল)।
বর্তমানে হিগস-ক্ষেত্র এমন এক সর্বনি¤œ শক্তি-লেভেলে অবস্থান করছে যাকে
বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে : পাহাড় ও উপত্যকায় সমৃদ্ধ ক্ষেত্রের এক উপত্যকায়
হিগস-ক্ষেত্র অবস্থান করছে। এমন পরিস্থিতিতে হিগস-ক্ষেত্র’কে ‘উপত্যকার ঢালু’ অতিক্রম
করে আরেক অবস্থানে যেতে হলে যে বিÑশাÑল পরিমাণ শক্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং
হিগস-ক্ষেত্র যদি সফল হয় তো বিশ্বব্রহ্মা-ের অনিবার্য মহাবিপর্যয় ঠেকাতে পারবে না
কেউ (একদল পদার্থবিদের মতে)। ‘কোয়ান্টাম টানেলিং’ প্রক্রিয়ার সাহায্যেও
হিগস-ক্ষেত্র কিন্তু তার শক্তির ‘লেভেল’ পরিবর্তন করতে পারে এবং অপেক্ষাকৃত ‘কম
শক্তি-লেভেলে’ নেমে যাওয়াও সম্ভব। কোয়ান্টামের ওঠা-নামার
দরুন সৃষ্টি হয় কোয়ান্টাম টানেলিং প্রক্রিয়ার। পদার্থবিদ লিকেনের মতে কোয়ান্টামের
ওঠা-নামা ঘটবে নক্ষত্রপুঞ্জগুলোর মধ্যে বিরাজমান খালি বস্তুশূন্য স্থানের কোথাও
এবং সৃষ্টি করবে ‘বুদ্বুদে’ ভরা
স্থানের।
‘ঈশ্বর কণিকা’ তো বিশ্বব্রহ্মা-কে মুছে ফেলতে পারে!
‘ঈশ্বর কণিকা’ তো বিশ্বব্রহ্মা-কে মুছে ফেলতে পারে!
হিগস-মহাবিপর্যয়ের বর্ণনা দিতে হকিং বলেন যে (দি গ্র্যান্ড ডিজাইন) : ‘হিগসের আচরণগত বৈশিষ্ট্য হলো যে সে এক শ’ (বিলিয়ন) গিগাইলেকট্রনভোল্টের বেশি শক্তি অর্জন করতে সক্ষম এবং তার এই বৈশিষ্ট্যটিই আমাদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার বড় কারণ হয়েছে। কারণ এই পরিমাণ শক্তি অর্জন করে হিগস-ক্ষেত্র ‘মেটাস্ট্যাবলন্ত’ নামক বিশেষ ধরনের ’স্থিতিশীল’ অবস্থায় চলে আসতে পারে (মেটাস্ট্যাবল স্থানীয়ভাবে স্থিতিশীল বটে কিন্তু চিরস্থায়ীভাবে নয়)। ... এর অর্থ বিশ্বব্রহ্মা- আকস্মিক বুদ্বুদসর্বস্ব শূন্যতায় (ভ্যাকুয়াম) ঢেকে যেতে পারে আর এমতাবস্থায় আলোর গতিবেগে সে সম্প্রসারিত হতে থাকবে। যে কোন সময় ঘটনাটি ঘটতে পারে, তবে অচিরেই ঘটবে বলে মনে হয় না।’
হিগস-ক্ষেত্রের শক্তি বুদ্বুদের ভেতরে প্রবলতর হবে কিন্তু পরিবেষ্টিত পরিবেশ থেকে কম হবে। বুদ্বুদের ভেতরে থাকাকালে-হিগস-ক্ষেত্রের শক্তির পরিমাণ যদি বর্তমানের পরিমাণের চেয়ে যৎসামান্যও প্রবলতর হয় তো পরমাণুকে সঙ্কুচিত করার জন্য যথেষ্ট হবে এবং ফলস্বরূপ পারমাণবিক কেন্দ্র খান খান হয়ে ভেঙ্গে যাবে, থাকবে কেবল হাইড্রোজেনসমৃদ্ধ বিশ্বব্রহ্মা- (পদার্থবিদ জিয়ুডিসের ব্যাখ্যা- টেড টকে প্রদত্ত)।
-
লেখক : প্রবাসী সাংবাদিক, বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন