সচিবালয়ের পরবর্তী সম্প্রসারণ হয় জুন-জুলাই ও সেপ্টেম্বর মাসে। জুনে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসের পদত্যাগকারী সদস্য মাহবুব আলম চাষীকে পররাষ্ট্র সচিব নিযুক্ত করা হয়। পরবর্তী মাসে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার প্রশাসক হোসেন তৌফিক ইমাম হন মন্ত্রিসভা সচিব। আগস্ট মাসে সিলেটের জেলা প্রশাসক আবদুস সামাদ হন প্রতিরক্ষা সচিব। একই মাসে আওয়ামী লীগ নেতা প্রাইভেট ডাক্তারি পেশায় নিযুক্ত ডাঃ তাজুল হোসেন হন স্বাস্থ্য সচিব। বিদেশে প্রশিক্ষণরত একজন কেন্দ্রীয় সরকারের উপসচিব তথ্য বিভাগের আনোয়ারুল ইসলাম প্রশিক্ষণ শেষে মুজিবনগর সরকারের আনুগত্য স্বীকার করে কলকাতায় পৌঁছেন। তাকে সেপ্টেম্বর মাসে তথ্যসচিব নিযুক্ত করা হয়। একই মাসে আওয়ামী লীগ নেতা বদরুন্নেসা আহমেদের স্বামী পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অবসরপ্রাপ্ত চীফ কনজারভেটর অব ফরেস্ট নুরুদ্দিন আহমেদকে কৃষি সচিব নিযুক্ত করা হয়। একই সময়ে দিনাজপুরের জেলা জজ আবদুল হান্নান চৌধুরীকে আইন সচিব নিযুক্ত করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের ইনপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ আবদুল খালেককে স্বরাষ্ট্র সচিব এবং একজন সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার এমদাদ আহমেদকে পূর্ত সচিব নিযুক্ত করা হয়। জয় গোবিন্দ ভৌমিক নামে ফরিদপুরের জেলা জজকে নিযুক্ত করা হয় ত্রাণ কমিশনার। ৩ জন রাজনীতিবিদ বিশেষ প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিশোরগঞ্জের জাতীয় সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান বাংলাদেশ বেতার বোর্ডের প্রধান নিযুক্ত হন। রংপুরের ব্যবসায়ী এবং আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান বাণিজ্য বোর্ডের চেয়ারম্যান হন এবং দিনাজপুরের এমপি আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক ইউসুফ আলী ত্রাণ ও পুনর্বাসন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। জাতীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর সমন্বয়কের দায়িত্ব নেন। মনে রাখা ভাল যে, বাংলাদেশের আশ্রয়প্রার্থীদের সাহায্যের জন্য সম্ভবত বিশ্বের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ সংখ্যায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তখন ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করে।
দেশে-বিদেশে জনমত আদায়ের উদ্দেশ্যে এবং বিশ্ব বিবেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সমর্থনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মুজিবনগর সরকার সবিশেষ নজর দেয়। এই বিষয়ে তাদের প্রধান সহায়ক হয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং ভারতের একাডেমিয়া, সুধিসমাজ এবং বিশেষ করে কলকাতার শিক্ষা জগত। তাদের উদ্যোগে একদল নবেল লরিয়েট বিশ্ব গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আপীল প্রকাশ করে। ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং উত্তর আমেরিকায় সংবাদ মাধ্যম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে সারাটি বছরই ভারতের সংবাদ মাধ্যমের মতই প্রাধান্য প্রদান করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যে রকম বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন সারা বিশ্বে গড়ে উঠে এবং নয় মাসব্যাপী স্থায়ী হয় তার নজির খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কলকাতায় এবং দিল্লীতে বুদ্ধিজীবীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে থাকে। কিন্তু বহির্বিশ্বে প্যারিস, লন্ডন, টরেন্টো, ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক, টোকিওতেও তার কোন কমতি ছিল না। এসব সম্মেলনে বিশ্বের বুদ্ধিজীবীদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা জোরালো আওয়াজ তোলেন। সুইডিশ নোবেল লরিয়েট গানার মিরডাল, আমেরিকার বুদ্ধিজীবীদের নেতৃস্থানীয় ডিন জন মেসন এবং অধ্যাপক রাষ্ট্রদূত গলব্রেইত, ফরাসী মানবতাবাদী নেতা আন্দ্রে মার্লো এরা সবাই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের পক্ষে সক্রিয় থাকেন। পাকিস্তানের প্রতি শুধু মার্কিন জোরালো সমর্থনের কারণে বাংলাদেশের প্রশ্নটি জাতিসংঘে কোন মঞ্চে কখনও আলোচিত হতে পারল না। পৃথিবীর বিভিন্ন জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের পক্ষে প্রস্তাব পাস হলো কিন্তু একমাত্র ভারত ছাড়া কোন রাষ্ট্রই বাংলাদেশকে সহায়তা প্রদান থেকে বিরত থাকে। অবশ্য সকলেই ভারতে আশ্রয়প্রার্থী প্রায় ১ কোটি বাঙালীর কষ্ট নিরসনে টোকেন সহায়তা দেন। জাতিসংঘের আবেদনের জবাবে বিভিন্ন সূত্রে শরণার্থীদের আশ্রয়, ভরণপোষণ ও স্বাস্থ্যখাতে আন্তর্জাতিক মোট সহায়তা মিলে ২১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ভারত একাই কিন্তু এর চেয়ে পাঁচগুণ বেশি এখাতে খরচ করে। ভারতীয় পররাষ্ট্র দফতর সারাটি বছরই আন্তর্জাতিক উদ্যোগে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাফল্যের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। এই প্রচেষ্টার স্বপক্ষে দলমত নির্বিশেষে ভারতের উল্লেখযোগ্য সব নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী প্রচার চালান। এছাড়া ভারতীয় ডায়াস্পোরা এবং সামান্য কতিপয় দেশে বাঙালী ডায়াস্পোরা (যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান) সারা বছরই বিশ্বব্যাপী সক্রিয় থাকে।
৩ জানুয়ারি : ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বাংলাদেশের নির্বাচিত ১৬৭ জনপ্রতিনিধির ছয়দফা বাস্তবায়নের শপথ গ্রহণ।
১২ জানুয়ারি : পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের ঢাকা আগমন এবং মুজিব ইয়াহিয়া বৈঠক।
১৪ জানুয়ারি : জেনারেল ইয়াহিয়া শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা।
১৭ জানুয়ারি : জেনারেল ইয়াহিয়া পশ্চিম পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন করে সিন্ধু প্রদেশের লাড়কানায় বসলেন ইয়াহিয়া ভুট্টো বৈঠকে।
৩০ জানুয়ারি : দু’জন কাশ্মিরবাসী একটি ভারতীয় উড়োজাহাজ ছিনতাই করে লাহোরে নিয়ে গেল।
ইতোমধ্যে ভুট্টোর অবিরাম বক্তব্য যে তিনি ক্ষমতা প্রয়োগে অংশীদার হবেন। আওয়ামী লীগকে তার এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে।
২১ ফেব্রুয়ারি : জেনারেল ইয়াহিয়া তার বেসামরিক মন্ত্রিসভাকে বরখাস্ত করলেন। তার উপদেষ্টা হলেন শুধু সেনাবাহিনীর বড়কর্তারা।
৩ মার্চ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সারা পূর্ব পাকিস্তানে সর্বাত্মক ধর্মঘট। চট্টগ্রামে স্থানীয় ও মোহাজেরদের মধ্যে দাঙ্গায় ১২০ জন নিহত এবং ৩৩৫ জন আহত।
৬ মার্চ : লাটসাহেব ভাইস এডমিরাল এস এম আহসান পদচ্যুত এবং প্রাদেশিক সামরিক প্রশাসক লে. জেনারেল সাহেবজাদা এম ইয়াকুব অতিরিক্ত দায়িত্বে লাটসাহেব নিযুক্ত।
৭-২৫ মার্চ : পূর্ব পাকিস্তানে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন। দাবি মাত্র চারটি ১. নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর; ২. সব সেনা সদস্যকে প্রত্যাহার করে ক্যান্টনমেন্টে ফিরিয়ে নেয়া; ৩. বেসামরিক জনগণকে হত্যার জন্য বিচার এবং ৪. নির্বাচিত গণপরিষদে সময়মতো সংবিধান প্রণয়ন।
৭ মার্চ : ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ১৮ মিনিটের অনবদ্য বক্তৃতা তার জীবনের শ্রেষ্ঠ ও বিশ্ব ইতিহাসে স্মরণীয় কতিপয় বক্তব্যের একটি।
মার্চ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধীনতার ঘোষণা সমর্থন করে না বলে পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ঘোষণা।
১-২৫ মার্চ : সারা দেশ এক জনপ্রিয় নেতার হুকুমে পরিচালিত। অত্যাশ্চর্য বিষয় ছিল যে কোন প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ ছাড়াই শান্তি ও শৃঙ্খলা বহাল থাকে।
৭ মার্চ : জেনারেল টিক্কা খান লাট নিযুক্ত। কিন্তু তাকে শপথ দিতে ঢাকা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বি. এ. সিদ্দিকীর অপারগতা জ্ঞাপন। (পরে ৯ এপ্রিলে তিনি শপথ গ্রহণ করেন)।
১৪ মার্চ : ভুট্টো প্রথমবারের মতো দুই পাকিস্তানের কথা- পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের কথা বললেন।
১৭ মার্চ : সরকার এবং আওয়ামী লীগ সংলাপ। শেখ মুজিব এবং জেনারেল ইয়াহিয়া সদলবলে আলোচনা চালালেন।
: পূর্ব পাকিস্তানে সদ্য নিযুক্ত সামরিক প্রশাসক জেনারেল খাদেম হোসেন রাজার অপারেশন সার্চলাইট-এর রূপরেখা প্রণয়ন। চলবে...
১৯ মার্চ : ইয়াহিয়া-মুজিব সংলাপের তৃতীয় রাউন্ড অনুষ্ঠিত। সংলাপের শেষে দু’জনের মধ্যে ৯০ মিনিটের বৈঠক।
: চতুর্থ রাউন্ড বৈঠক যেখানে সকল উপদেষ্টারা হাজির ছিলেন।
: শেখ মুজিবের সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের নেতাদের বৈঠক : কাউন্সিল মুসলিম লীগের মিয়া মমতাজ দৌলাতানা, ন্যাপের ওয়ালি খান এবং জামাতুল উলামা এ ইসলাম নেতা মুফতি মাহমুদ।
২০-২৩ মার্চ : ব্যারিস্টার এ কে ব্রোহী ঢাকায় আসলেন, জেনারেল ইয়াহিয়াকে আইনী বিষয়ে সহায়তা করতে।
২১ মার্চ : ভুট্টোর সদলবলে ঢাকা আগমন।
২১-২৫ মার্চ : ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর মধ্যে ছয় দফা বৈঠক।
২২ মার্চ : ভুট্টো-মুজিব-ইয়াহিয়া যৌথ বৈঠক।
২২ মার্চ : ২৫ মার্চে নির্ধারিত জাতীয় পরিষদ বৈঠক অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত।
২৩ মার্চ : চট্টগ্রামে সোয়াত জাহাজ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নোঙর করল কিন্তু জাহাজ থেকে অস্ত্র-শস্ত্র খালাস প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো।
২৩ মার্চ : সকাল ও বিকাল দুই অধিবেশনে দুই দলের সংলাপ। ইয়াহিয়ার পরামর্শকবৃন্দ এম এম আহমদ, বিচারপতি এ. আর. কর্নেলিয়াস, লে. জেনারেল পীরজাদা এবং কর্নেল হাসানের সঙ্গে শেখ মুজিবের পরামর্শকবৃন্দ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও ড. কামাল হোসেনের আলোচনা।
২৪ মার্চ : আবারো সকালে বিকালে দুই পরামর্শক দলের আলোচনা সভা।
২৫ মার্চ : জে এ রহিম এবং মোস্তাফা খরসহ জুলফিকার আলী ভুট্টোর ইয়াহিয়ার সঙ্গে বৈঠক।
: কাউন্সিল মুসলিম লীগের মিয়া মমতাজ দৌলাতানা জাতীয় পরিষদের বিভক্ত বৈঠক চান না।
: ভুট্টো মন্তব্য করেন যে ছয় দফার স্বায়ত্তশাসন প্রায় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করবে।
২৫ মার্চ : পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ দৌলতানা, বাজেঞ্জো এবং ওয়ালি খানের ঢাকা ত্যাগ।
২৫ মার্চ : রাত ৮টায় ইয়াহিয়া পূর্ব পাকিস্তান ধ্বংস ও বাঙালী গণহত্যার হুকুম দিয়ে জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং এম এম আহমদকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানের পথে উড়াল দিলেন।
২৫ মার্চ : মধ্যরাতে বারোটার আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইউনিট ঢাকা ছাউনি থেকে ট্যাংক, মেশিনগান এবং অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ধাবিত হলো, পিলখানায় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলের সদর দফতর ও ঘাঁটিতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের দিকে এবং সংবাদপত্র পিপলের দফতরে। মুহূর্তে শুরু হলো হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ। সামান্য প্রতিরোধ পেল পুলিশ লাইনে এবং পিলখানা রাইফেলের ঘাঁটিতে।
২৫ মার্চ : মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একদল সেনাসদস্য তার ধানম-ির ৩২ নম্বর রাস্তার বসতবাড়িতে গ্রেফতার করে সেনা ছাউনিতে নিয়ে গেল।
২৫ মার্চ মধ্যরাত : বঙ্গবন্ধু গ্রেফতারের আগে তার স্বাধীনতা ঘোষণার বাণী রেডিও ওয়ারলেসে ইপিআর এর ওয়ারলেস কেন্দ্রে প্রেরণ করলেন।
২৬ মার্চ : চট্টগ্রাম কালুরঘাট সম্প্রচার কেন্দ্র থেকে অপরাহ্নে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ মান্নানের বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ। রাত ১০টা পর্যন্ত এই ঘোষণা বার বার পাঠ করা হলো।
২৬ মার্চ : আবু সায়ীদ চৌধুরী জেনেভায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের বৈঠক থেকে লন্ডনে গেলেন।
২৭ মার্চ : মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট সম্প্রচার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করলেন।
২৫-২৭ মার্চ : ঢাকা হলো মৃত্যুপুরি। পুলিশ লাইন শূন্য, ইপিআর ঘাঁটি শূন্য, ইংরেজী দৈনিক চবড়ঢ়ষব-এর দফতর ভূলুণ্ঠিত। মহানগর এখানে সেখানে বিধ্বস্ত। পলায়নপর জনতা মহানগর ছেড়ে গ্রামমুখী।
২৫ মার্চ-৬ এপ্রিল : চট্টগ্রামে ইপিআর-এর ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম শুধু সমুদ্রপোত ও বিমানপোত ছাড়া মহানগরকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দখলমুক্ত রাখতে সক্ষম।
২৬ মার্চ থেকে ১৭ এপ্রিল : মেহেরপুর মহকুমা হাকিম তওফিক এলাহী, মহকুমা পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুব আহমদ, কুষ্টিয়ায় ছুটিতে অবস্থানকারী মেজর আবু উসমান এবং বরিশাল এবং ফরিদপুরে ছুটিতে অবস্থানকারী মেজর জলিলের নিয়ন্ত্রণে।
২৭ মার্চ : ওয়াশিংটনে পাকিস্তান মিশনের কাউন্সিলর মুহিতের বাড়িতে স্থানীয় বাঙালীদের বৈঠক ও বাংলাদেশের পক্ষে আন্দোলনের জন্য কর্মসূচী গ্রহণ।
২৯ মার্চ : ওয়াশিংটনে কংগ্রেসের সামনে বাংলাদেশের পক্ষে র্যালিতে প্রায় ২শ’ বাঙালী ও অন্যান্য সমর্থকদের অংশগ্রহণ।
১ এপ্রিল : মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশ পরিস্থিতি বিষয়ে উদ্বেগ ও আশু সমাধানের জন্য সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি ও সিনেটর পল হ্যারিসের বক্তৃতা।
২ এপ্রিল থেকে ৬ এপ্রিল : তাজউদ্দীন আহমদ চুয়াডাঙ্গায় ভারতীয় সীমান্ত বাহিনীর সহায়তায় দিল্লীতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে মোলাকাত এবং আলোচনা করেন।
৪ এপ্রিল : সীমান্ত এলাকা দিয়ে পলায়নে সফল চার সেক্টরের সেনাপতিদের তেলিয়াপাড়ায় কর্নেল ওসমানীর সঙ্গে বৈঠক। এতে ছিলেন চট্টগ্রাম সেক্টরের মেজর জিয়াউর রহমান, সিলেট কুমিল্লা সেক্টরের মেজর খালেদ মোশাররফ, জয়দেবপুর ময়মনসিংয়ের মেজর কে এম সফিউল্লাহ এবং ঢাকা কুমিল্লা ফেনীর মেজর নুরুজ্জামান। কর্নেল এম এ জি ওসমানীর সঙ্গে ছিলেন কর্নেল এম এ রব।
৬ এপ্রিল : দিল্লীস্থ পাকিস্তান দূতাবাস থেকে দ্বিতীয় সচিব মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন ও সহকারী প্রেস এটাশি আমজাদুল হক আনুগত্য পরিবর্তন করে বাংলাদেশের পক্ষে যোগদান। দূতাবাসে কর্মরত বাঙালী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আনুগত্য পরিবর্তনের এই হলো সূচনা।
৭ এপ্রিল : বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে প্রতিনিধি সেমুর হেলপার্নের বক্তৃতা।
১০ এপ্রিল : কলকাতায় তাজউদ্দীনের প্রচেষ্টায় স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারিত এবং বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা। সরকার হলো ছয় জনকে নিয়ে যার মধ্যে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অনুপস্থিত। ১. রাষ্ট্রপতি অনুপস্থিত শেখ মুজিবুর রহমান। ২. সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম (অস্থায়ী সভাপতি বটে)। ৩. প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। ৪. অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ মনসুর আলী। ৫. পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মুশতাক আহমদ। ৬. ত্রাণমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান।
১০ এপ্রিল : বিচারপতি আবু সায়ীদ চৌধুরী লন্ডনে বিবিসিতে ঘোষণা দিলেন যে, তিনি পাকিস্তানের কোন প্রতিনিধি বা পদাধিকারী আর নন। তিনি বাংলাদেশের প্রতি অনুগত এবং বাংলাদেশের জন্যই তিনি যা করতে পারবেন তাই করবেন।
১০ এপ্রিল : সিনেটর কেস ও সিনেটর সন্ডেইল মার্কিন সিনেটে বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধের জন্য এবং শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের জন্য একটি প্রস্তাব (জবংড়ষঁঃরড়হ) উত্থাপন করলেন।
১১ এপ্রিল : প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের বিবৃতি।
১১ এপ্রিল : চারজন বাঙালী মেরিন কর্মকর্তা আবদুল আওয়াল মিন্টু, আনোয়ার হোসেন, আবুল কাশেম ও তাহেরুন ইসলাম বাল্টিমোর বন্দর থেকে পাকিস্তানী জাহাজ ‘ময়নামতি’ ও ‘শালিমার’ পরিত্যাগ করে আমেরিকায় আশ্রয়প্রার্থী হন।
১২ এবং ১৪ এপ্রিল : ওয়াশিংটন পোস্ট দৈনিকে হার্ভাড অধ্যাপক রবার্ট ডর্ফম্যানের উদ্যোগে পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা বন্ধের জন্য ২৯ জন বিশ্ব বুদ্ধিজীবীর এক পৃষ্ঠা জুড়ে বিবৃতি বিজ্ঞপ্তি হিসেবে প্রকাশিত। এই বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে কিছু নোবেল লরিয়েটও ছিলেন।
১৩ এপ্রিল : বিশ্বব্যাংকে কর্মরত বিশেষজ্ঞ হারুন অর রশিদকে ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত বাঙালী কর্মকর্তাগণ তাদের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমসাময়িক তথ্য, যথাযথ নির্দেশনা ও উপদেশ নিয়ে আসতে প্রেরণ করেন। হারুন এই কাজটি করতে আগ্রহ প্রকাশ করায় ব্যবস্থাটি গ্রহণ করা হয়। হারুন কলকাতায় পৌঁছেন মুজিবনগর সরকারের অভিষেকের সামান্য আগে। তিনি মুজিব নগরের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে একটি তারবার্তা আমাকে পাঠান ২০ এপ্রিলে। তারপর তিনি ফিরে আসেন ২৫ এপ্রিল।
১৪ এপ্রিল : কর্নেল এমএজি ওসমানীকে এবহবৎধষ ঙভভরপবৎ ঈড়সসধহফরহম রহ ঈযরবভ ড়ভ ঃযব খরনবৎধঃরড়হ অৎসু হিসেবে মন্ত্রীর মর্যাদায় নিযুক্তি দেয়া হয়। তখন সেক্টর ছিল আটটি।
১৫ এপ্রিল : মার্কিন সিনেটে পাকিস্তানে সামরিক সহায়তা বন্ধের পক্ষে কেস মডেইল প্রস্তাব পেশ।
১৭ এপ্রিল : মুজিবনগর সরকারের বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে শপথ গ্রহণ এবং প্রতিষ্ঠা উৎসব।
১৮ এপ্রিল : কলকাতার পাকিস্তান ডেপুটি হাইকমিশনার হোসেন আলীর ৬৫ জন কর্মকর্তাসহ বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা। মিশনের দ্বিতীয় সচিব আনোয়ারুল করিম চৌধুরী এই উদ্যোগে বিশেষ ভূমিকা পালন। ডেপুটি হাইকমিশনার দফতর মুজিবনগর সরকারের প্রধান দফতর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
২১ এপ্রিল : লন্ডনে অবস্থানকারী পূর্ব পাকিস্তানের বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বাংলাদেশের এনভয় হিসেবে ইউরোপ ও জাতিসংঘে নিযুক্ত।
২২ এপ্রিল : জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল উ থান্ট ভাগাত আল তাবিলকে ঢাকার তার বিশেষ দূত হিসেবে ঘোষণা দিলেন। তিনি ৭ জুনে ঢাকায় পদায়িত হন।
২৫ এপ্রিল : স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত।
২৬ এপ্রিল : নিউইয়র্কে পাকিস্তানের ভাইস কনসাল আবুল হাসান মাহমুদ আলীর বাংলাদেশের সমর্থনে আনুগত্য পরিবর্তন।
২ মে : মুজিবনগর সরকারের শেষ দখল রামগড়ের পতন।
২ মে : অধ্যাপক রেহমান সোবহান অর্থনৈতিক এনভয় নিযুক্ত এবং লন্ডন হয়ে ওয়াশিংটন আগমন।
১২ জুন : নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সামনে কাজী শামসুদ্দিন আহমদ এবং বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার উদ্যোগে বাংলাদেশ গণহত্যা বন্ধ ও মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা কামনা করে র্যালি অনুষ্ঠিত। বাঙালী এবং অন্যান্য সমর্থক নিয়ে এইটি ছিল প্রায় ৫০ জনের র্যালি।
২১ জুন : প্যারিসে পাকিস্তান দাতা কনসোর্টিয়ামের নতুন আর্থিক সহায়তা দান স্থগিত।
২৮ জুন : জেনারেল ইয়াহিয়ার পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র রচনার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ গ্রুপ প্রতিষ্ঠা।
৩০ জুন : ওয়াশিংটনের পাকিস্তান দূতাবাস থেকে অর্থনৈতিক কাউন্সিলর এ এম এ মুহিতের আনুগত্য পরিবর্তন।
১০ জুলাই : পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থিতির ওপর বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন, পূর্ব পাকিস্তানে কোন সহায়তা দেয়ার সুযোগ নেই। সারাদেশে ভয়াবহতার রাজত্ব বিরাজিত এবং ভীতির রাজত্ব প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। প্রতিরোধ দমন হলো পাকিস্তান সরকারের একমাত্র কাজ এবং এই কাজে তারা নৃশংস, বর্বর ও লাগামহীনভাবে স্বেচ্ছাচারী। চলবে...
সুদীর্ঘ ষাট বছরের বিচিত্র কর্মজীবন
২৯ জুলাই : লন্ডনে বাংলাদেশের ডাক টিকেটের প্রদর্শনী। এমপি এবং প্রাক্তন ডাকমন্ত্রী জন স্টোনহাউস ছিলেন প্রধান উদ্যোক্তা।
১ আগস্ট : নিউইয়র্কে পণ্ডিত রবিশংকরের অনুরোধে জর্জ হ্যারিসন কর্তৃক বাংলাদেশ কনসার্ট মেডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে অনুষ্ঠিত। বিটলের সঙ্গে রবিশংকর, আলি আকবর খান ও ডায়লান টমাসের অংশগ্রহণ।
১ আগস্ট : এনবিসি টেলিভিশনে সাপ্তাহিক ‘কমেন্টস’ প্রোগ্রামে এ এম এ মুহিতের বক্তব্য উপস্থাপনা ডযু ও য়ঁরঃ চধশরংঃধহ ঊসনধংংু
৫ আগস্ট : পাকিস্তানের পূর্ব পাকিস্তান সমস্যা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশিত। শ্বেত মিথ্যাচার বলে সারা বিশ্বে এইটি পরিচিতি।
৫ আগস্ট : ওয়াশিংটন প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ প্রতিনিধি এ এম এ মুহিতের সংবাদ সম্মেলনে ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্কের পাকিস্তান দূতাবাস ও মিশনের সকল বাঙালী কূটনীতিবিদ ও অন্যান্য কর্মচারীদের মোট ১৪ জনের আনুগত্য পরিবর্তন করে বাংলাদেশের পক্ষে ঘোষণা।
৯ আগস্ট : জেনারেল ইয়াহিয়ার রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার ঘোষণা।
৯ আগস্ট : সোভিয়েত রাশিয়া এবং ভারত বন্ধুত্ব চুক্তি সম্পাদিত।
১১ আগস্ট : ঢাকা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বোমা বিস্ফোরণ।
১৬ আগস্ট : পশ্চিম পাঞ্জাবের মিয়ানওয়ালী জেলখানায় বিশেষ আদালতে শেখ মুজিবুর রহমানের দেশদ্রোহ ও পাকিস্তান ভাঙ্গনের ষড়যন্ত্র মামলার শুনানি শুরু হয়। শেখ মুজিব অভিযোগ শুনেই আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন উদ্যোগ নেবেন না বলেই জানিয়ে দেন যদিও সরকার ব্যারিস্টার এ কে ব্রোহিকে আসামি পক্ষের উকিল নিয়োগ করে। ট্রাইব্যুনালের সদস্য ছিলেন চেয়ারম্যানসহ তিনজন সামরিক কর্মকর্তা এবং একজন বেসামরিক জেলা জজ।
২১ আগস্ট : করাচীর অদূরে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের পাকিস্তান বিমানবাহিনীর বিমানে করে পলায়নের প্রচেষ্টা ব্যর্থ ও তার শাহাদাতবরণ।
২১ আগস্ট : চট্টগ্রামে পাকিস্তানের দুটি জাহাজ ‘আল আব্বাস’ এবং ‘হরমুজ’-এ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরা বিস্ফোরণ ঘটায়।
৩ সেপ্টেম্বর : পূর্ব পাকিস্তানে জেনারেল ইয়াহিয়া ড. আবদুল মুত্তালিব মালিককে লাট সাহেব নিযুক্ত করেন।
৮ সেপ্টেম্বর : বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় পরামর্শক কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা। (১) সভাপতি মৌলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী
(২) আহ্বায়ক প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ
সদস্য (৩) অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ (ন্যাপ নেতা)
(৪) মণি সিং (কমিউনিস্ট পার্টি নেতা)
(৫) মনোরঞ্জন ধর (কংগ্রেস নেতা)
(৬) মনসুর আলী (আওয়ামী লীগ নেতা)
(৭) এ এইচ এম কামরুজ্জামান (মুজিবনগর সরকার প্রতিনিধি)
১১ সেপ্টেম্বর : অসন্তুষ্ট ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের তাজউদ্দীন আহমদের পদত্যাগ দাবি। দাবিটি হলো- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এবং সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি পদত্যাগ করবেন।
১৭ সেপ্টেম্বর : লাট সাহেব আবদুল মুত্তালিব মালিকের দশ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন।
১৮ সেপ্টেম্বর : নয়াদিল্লীতে দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত।
১২ অক্টোবর : বাংলাদেশ নৌবাহিনী এমভি প্রকাশ এবং এমভি পদ্মা নামে দুটি নৌযান নামাল।
১২ অক্টোবর : জেনারেল ইয়াহিয়ার ক্ষমতা হস্তান্তর পরিকল্পনা ঘোষণা। ৭৮টি জাতীয় পরিষদের আসন শূন্য ঘোষণা এবং ২৩ ডিসেম্বরে উপনির্বাচনের ঘোষণা। নবগঠিত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বানের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর।
১৩ অক্টোবর : প্রাক্তন লাট সাহেব এবং রাজাকার হিসেবে ঘৃণিত আবদুল মোনেম খান বনানীতে তার নিজগৃহে মুক্তিযোদ্ধা দলের পিস্তলের গুলিতে নিহত।
২০ অক্টোবর : জাতিসংঘ মহাসচিবের পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তে পরিদর্শক নিযুক্তির প্রস্তাব। যুদ্ধে লিপ্ত সৈন্যরা তাদের নিজের সীমান্তের অভ্যন্তরে অবস্থান করবে।
২৪ অক্টোবর : ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর ১৯ দিনব্যাপী পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ সব রাজধানী ব্রাসেলস, ভিয়েনা, লন্ডন, ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক, প্যারিস ও বন ভ্রমণ। তিনি বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সমাপ্তি এবং ভারতে বাংলাদেশের আশ্রয়প্রার্থী সমস্যার সমাধানের জন্য আবেদন করেন।
৩ নবেম্বর : ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুত কেন্দ্র বোমা বর্ষণে বিকলকরণ এবং চট্টগ্রামে বৃহৎ তেলবাহী জাহাজ ধ্বংস।
৫ নবেম্বর : জুলফিকার ভুট্টোর চীন ভ্রমণ। পাকিস্তানের সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী প্রধানদের নিয়ে চীনের সহায়তা কামনা।
১১ নবেম্বর : বেলোনিয়া এলাকায় অবশেষে পাকিস্তানী অস্তিত্বের বিলোপ সাধন।
১৭ নবেম্বর : ঢাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কার্ফ্যু জারি।
২২ নবেম্বর : ভারতীয় সেনাবাহিনীর বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থনে ‘আত্মরক্ষামূলক আক্রমণ’ শুরু।
৩ ডিসেম্বর : পাকিস্তানের ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা।
৩ ডিসেম্বর : ভারতীয় বিমানবাহিনীর আখড়ায় পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ব্যর্থ আক্রমণ।
৩ ডিসেম্বর : ভারতে বাংলাদেশের আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ৯৯.৮ লাখ।
৪ ডিসেম্বর : জাতিসংঘে পাকিস্তানের উদ্যোগে ও মার্কিন সমর্থনে নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব রাশিয়ার ভেটোতে নাকচ।
৫ ডিসেম্বর : রাশিয়ার যুদ্ধবিরতি এবং বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান প্রস্তাব জাতিসংঘে গৃহীত হলো না।
৫ ডিসেম্বরে : যুদ্ধবিরতির জন্য আমেরিকার দ্বিতীয় উদ্যোগে প্রস্তাব। রাশিয়ার দ্বিতীয় ভেটোতে ব্যর্থ।
৬ ডিসেম্বর : ভারতের বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দান।
৭ ডিসেম্বর : যশোর যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পাকিস্তানীদের পলায়ন। শত্রুমুক্ত যশোর এলাকায় আশ্রয়প্রার্থীদের প্রত্যাবর্তন শুরু।
৭ ডিসেম্বর : ভুটানের বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান।
৭ ডিসেম্বর : নুরুল আমিনকে প্রধানমন্ত্রী এবং জুলফিকার ভুট্টোকে উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ইয়াহিয়ার ঘোষণা। তারা দায়িত্ব নেবেন ২৭ ডিসেম্বরে।
৮ ডিসেম্বর : ভারত বাংলাদেশ বাহিনীর যৌথ কমান্ড ঘোষণা।
৯ ডিসেম্বর : প্রেসিডেন্ট নিক্সনের মার্কিন সপ্তম বহরকে চট্টগ্রামে ধাবিত হওয়ার নির্দেশ প্রদান।
১০ ডিসেম্বর : ইন্দো বাংলাদেশ বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান হিসেবে লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার নিযুক্তি।
১১ ডিসেম্বর : প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার অনুমোদন নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের গবর্নর ডা. আবদুল মুত্তালিব মালিক এবং পূর্বাঞ্চলের সেনাবাহিনীর লে. জেনারেল রাও ফরমান আলী জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে আত্মসমর্পণের আবেদন জানালেন জাতিসংঘের ঢাকা প্রতিনিধি পল মার্ক অরির কাছে (চধঁষ গধৎপ ঐবহৎু)। কিসিঞ্জারের উদ্যোগে এই আত্মসমর্পণের আবেদন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া প্রত্যাহার করলেন।
১২ ডিসেম্বর : মার্কিন নৌবাহিনী বাংলাদেশ উপকূলের ২৪ মাইলের মধ্যে পৌঁছাল।
১৩ ডিসেম্বর : হেনরী কিসিঞ্জারের উদ্যোগে তৃতীয় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আবারও রাশিয়ার ভেটোতে ব্যর্থ হলো।
১৪ ডিসেম্বর : ঢাকায় মৌলবাদীদের জঘন্য হত্যালীলার তা-ব।
খুঁজে খুঁজে দেশের সেরা সন্তানদের ধরে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা। লাট ভবনে ভারতীয় বাহিনীর বোমা হামলা। গবর্নর ডা. মালিক পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ এলাকা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আশ্রয় নিলেন।
১৬ ডিসেম্বর : বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণ। জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ নিয়াজির রেসকোর্স ময়দানে ৯১ হাজার সৈন্যসহ আত্মসমর্পণ।
১৮ ডিসেম্বর : ঢাকার রায়ের বাজারে কতিপয় বুদ্ধিজীবীদের বিকৃত মরদেহ উদ্ধার।
২১ ডিসেম্বর : ন্যাপ নেতা অধ্যাপক মুজাফফর আহমদের সর্বদলীয় জাতীয় সরকার গঠনের আবেদন।
২২ ডিসেম্বর : কলকাতা থেকে বাংলাদেশ সরকারের সব নেতৃবর্গের ঢাকায় আগমন।
২৪ ডিসেম্বর : ইসলামাবাদের অদূরে সিহালা বিশ্রামাগারে ভুট্টো মুজিব বৈঠক। ভুট্টো জানালেন যে, তিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হয়েছেন। বাংলাদেশ, ভারত ও রাশিয়ার দখলে চলে গেছে।
২৬ ডিসেম্বর : ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স ঢাকা-কলকাতার মধ্যে নিয়মিত বিমান সেবা প্রদান শুরু করে।
২৭ ডিসেম্বর : শেখ আবদুল আজিজ, ফণি ভূষণ মজুমদার, আবদুস সামাদ আজাদ এবং জহুর আহমদ চৌধুরী মন্ত্রিসভায় যোগ দিলেন।
২৭ ডিসেম্বর : ভুট্টো মুজিব দ্বিতীয় বৈঠক ভুট্টো পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্রসত্তার আবেদন করেন। বঙ্গবন্ধু জানালেন যে, তিনি বাংলাদেশের অবস্থা না দেখা পর্যন্ত ও সেখানে নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের সঙ্গে আলোচনা না করে কোন মতামত দিতে পারবেন না।
২৮ ডিসেম্বর : অধ্যাপক ইউসুফ আলী শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন।
৩রা জানুয়ারি ১৯৭২ : করাচী জনসভায় ভুট্টোর প্রশ্ন : বঙ্গবন্ধুকে কি মুক্ত করা যায়।
৭ জানুয়ারি : ভুট্টো-বঙ্গবন্ধু বৈঠক। পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা।
বঙ্গবন্ধুর অবস্থান- বাংলাদেশে কি হয়েছে সেটা ঠিকমতো জানা ও দেশের লোকের সঙ্গে না বুঝে তার পক্ষে কোন মতামত দেয়া সম্ভব নয়।
৮ জানুয়ারি : রাতে পিআইএ বিমানযোগে বঙ্গবন্ধুর অনির্দিষ্ট যাত্রাপথে রওনা। ড. কামাল হোসেন ও তার পরিবার তার সফরসঙ্গী। ভোর বেলা তারা জানলেন যে, তারা লন্ডনে যাচ্ছেন। ব্রিটিশ সরকারও তখন অবহিত হলো।
৯ জানুয়ারি : লন্ডন ক্ল্যারিজ হোটেলে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এওয়ার্ড হীতের সঙ্গে মোলাকাত।
১০ জানুয়ারি : ব্রিটিশ বিমানে বঙ্গবন্ধু ঢাকার পথে দিল্লীতে নামলেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ তাকে দিল্লীতে অভ্যর্থনা করলেন।
দিল্লীতে বিমান তেল সংগ্রহ করার পর ঢাকার পথে যাত্রীদের নিয়ে উড়াল দিল, অপরাহ্ণে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। (সমাপ্ত)
-
-
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন