আইএস এর উৎপত্তি সম্পর্কে কিছু তথ্য ( সৌজন্য ; - কালের কণ্ঠ অনলাইন এবং সূত্র : হাফিংটন পোস্ট :)



       আইএস এর উৎপত্তি সম্পর্কে কিছু তথ্য

           সৌজন্য  ; - কালের কণ্ঠ অনলাইন  এবং  সূত্র : হাফিংটন      পোস্ট :

             আইএস এর উৎপত্তি সম্পর্কে কিছু তথ্য-


               ইরাকে আইএস এর নাটকীয় উত্থানে পশ্চিমাদের অনেকেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে সংগঠনটির প্রতি সৌদিদের দোটানা মনোভাবের কারণে পশ্চিমারা আরো বেকুব বনে যায়। পশ্চিমাদের মনে একটাই প্রশ্ন ছিল, ''সৌদিরা কি বুঝতে পারছে না আইএসআইএস তাদের জন্যও হুমকি হয়ে উঠতে পারে।''

               এমনকি এখনো সৌদি আরবের শাসকশ্রেণি এই ইস্যুতে বিভক্ত হয়ে আছে। সৌদির শাসকশ্রেণির একাংশ এই বলে হাত তালি দিচ্ছে, আইএস তাদের শত্রু ইরানের শিয়াদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আর তা ছাড়া একসময় সুন্নিদের দখলে থাকা ওই অঞ্চলে ফের আরেকটি বড় সুন্নি রাষ্ট্রের জন্ম হচ্ছে।

                সৌদি শাসকশ্রেণির আরেকটি অংশ আবার সৌদ বংশের বিরুদ্ধে ওহাবি ইখওয়ানিদের বিদ্রোহের কথা স্মরণ করে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। ১৯২০ এর দশকে ওহাবিদেরই একটি অংশ সৌদ রাজবংশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বংশটিকে প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। এরাই ইতিহাসে ওহাবি ইখওয়ান নামে পরিচিত।

               আইএস-কে নিয়ে সৌদিদের দ্বৈততা এই রাজবংশটির মতবাদ এবং ঐতিহাসিক উৎসে যে দ্বৈততা রয়েছে তার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে। সৌদিদের একটি ধারা এসেছে ওহাবি মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব থেকে। তার মতবাদকে অবলম্বন করেই ইবনে সৌদ নজদের বেদুইন গোত্রগুলোকে একত্র করে সৌদি রাজবংশের গোড়াপত্তন করেন।

               আর এই হতবুদ্ধিকর দ্বৈততার দ্বিতীয় ধারাটির সূচনা হয় ১৯২০ এর দশকে। এ সময় রাজা আবদুল আজিজ সৌদি আরবের ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার গোড়াপত্তন করেন। ব্রিটেন ও আমেরিকার সঙ্গে একটি জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে কুটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্যই তিনি একটি সুসংগঠতি রাষ্ট্রব্যবস্থার গোড়াপত্তন করেন। একই লক্ষ্যে তিনি ওহাবি ইখওয়ানিদের বিশৃঙ্খলাও কঠোর হস্তে দমন করেন। এরপর ১৯৭০ এর দশকে এসে তেলের খনিগুলো থেকে অফুরন্ত প্রেট্রোডলার আয়ের সুযোগটিও হাতছাড়া করেনি সৌদি রাজবংশ। আর মুসলিম বিশ্বব্যাপী একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ঢেউ তুলে ওহাবি ইখওয়ানিদেরকে সৌদি আরব থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেওয়ারও ব্যবস্থা করেন তিনি। যাতে তারা দেশের ভেতরে আর কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে।

                 এই 'সাংস্কৃতিক বিপ্লব' এর মূল ভিত্তি ছিল আবদুল ওয়াহাবের বিপ্লবী ইসলামী মতবাদ। এই মতবাদে ইসলামকে সব ধরনের কুফরি ও শিরকি থেকে মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র এবং জিহাদি শুদ্ধি অভিযানের ডাক দেওয়া হয়।

              আবদুল ওয়াহাব মতাদর্শগত দিক থেকে ১৪ শতকের ইসলামী পণ্ডিত ইবনে তাইমিয়ার ভাবশিষ্য ছিলেন। আব্দুল ওয়াহাবও তাইমিয়ার মতো খুবই বিশুদ্ধাচারী মতবাদের অধিকারী ছিলেন। তিনি ইসলামের প্রথমদিককার সাদাসিধে জীবনাচার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। জাঁকজমক, সৃজনশীলতা, ধূমপান, মাদক সেবন, মিসরীয় ও অটোমান মুসলিমদের আভিজাত্য এসবকে অনৈসলামিক আচার বলে আখ্যায়িত করেন। আবদুল ওয়াহাবের মতে এরা সত্যিকার মুসলিম নয়; ভণ্ড ও আত্মপ্রতারক মুসলিম। এমনকি স্থানীয় বেদুইনদের জীবন যাত্রাকেও আব্দুল ওয়াহাব অনৈসলামিক বলে ঘোষণা করেন। কারণ এরা সাধু-সন্তদের ভক্তি করতো এবং তাদের মাজার বানিয়ে পুঁজো করতো। ইসলামবহির্ভূত বিভিন্ন কুসংস্কারেও বিশ্বাস করতো।

               আবদুল ওয়াহাব এই সব ধরনের আচার-বিহারকে বিদাআ’ত বা আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেন। ইবনে তাইমিয়ার মতো আব্দুল ওয়াহাবও মদীনায় মোহাম্মদ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত সমাজ ব্যবস্থাকেই আদর্শ ইসলামি সমাজ ব্যবস্থা বলে মনে করতেন। আর সকল মুসলিমের সেদিকে ফিরে যাওয়া উচিৎ বলেও মনে করতেন তিনি। সালাফি মতবাদেরও একই মূলকথা।

                ইবনে তাইমিয়া শিয়া ইসলামী মতবাদ, সুফি মতবাদ ও গ্রিক দর্শনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। এমনকি মহানবীর কবর জিয়ারত এবং জন্মদিন পালনেরও ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি। তার মতে এসব মূলত খ্রিষ্টানদের যিশুকে ঈশ্বর হিসেবে পূজার ধারণা থেকে এসেছে। আবদুল ওয়াহাবও ইবনে তাইমিয়ার ইসলাম সম্পর্কিত এই ধ্যান-ধারণা গ্রহণ করে ঘোষণা করেন, যারা ইসলামের এই বিশেষ ব্যাখ্যাকেই ইসলামের একমাত্র ব্যাখ্যা হিসেবে গ্রহণ করে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করবে না তাদেরকে সম্পত্তি ও বেঁচে থাকার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে।

                আবদুল ওয়াহাব সকল মুসলিমকে ব্যক্তিগতভাবে একজন খলিফার প্রতি আনুগত্য পোষণ করতে হবে বলে ঘোষণা দেন। আর যারা তার এই ইসলামী মতবাদ মানবে না তাদেরকে হত্যা করা হবে, তাদের স্ত্রী ও কন্যাদের ধর্ষণ এবং তাদের ধন-সম্পদ লুট করা যাবে। এমনটাই লিখেছেন আবদুল ওয়াহাব। তার মতে শিয়া এবং সুফি মুসলিমদেরকেও হত্যা করা যাবে। আর এর বাইরে যারা আছে তাদেরকেতো তিনি মুসলিমই মনে করতেন না। আইএস এর ধ্যান-ধারণাগুলোর সঙ্গেও এই মতবাদের কোনো ফারাক নেই।

               পরবর্তীতে আবদুল ওয়াহাবের 'এক শাসক, এক কর্তৃত্ব, এক মসজিদ' নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেওয়া হয় সৌদি রাজাদের কর্তৃত্বকে বোঝানোর জন্যও। আর সেখানেই আইএস এর সঙ্গে সৌদি আরবের ওয়াহাবি মতবাদের পার্থক্যটা ধরা পড়ে।

              আইএস সৌদি রাজতন্ত্রের ক্ষমতার এই তিন স্তম্ভকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। অথচ এই তিন ধারণার ওপরই সৌদি আরবের সুন্নি রাজতন্ত্রটির কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা টিকে আছে। এই ধারণাগুলো অস্বীকার করার কারণেই আইএস সৌদি রাজতন্ত্রের জন্যও বড় এবং গভীর একটি হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। 

      মূল   সূত্র : হাফিংটন পোস্ট

মন্তব্যসমূহ