সত্যজিতের ধর্মভাবনা
লিখেছেনঃ সফিউদ্দিন আহমাদ (তারিখঃ বুধবার, ০২/০৫/২০১২
– ( সৌজন্য ; আমার ব্লগ ও ·
সফিউদ্দিন আহমাদ-এর ব্লগ )
আজ ২ মে সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন , (১৯২১-১৯৯২)।
তার মৃত্যু দিবস ছিল ২৩ এপ্রিল ।
তার মৃত্যু দিবস ছিল ২৩ এপ্রিল ।
সত্যজিতের মহাপ্রয়ানের পর প্রকাশিত এক লেখায় কলকাতার এক বহুল প্রচারিত দৈনিকের সাংবাদিক লিখেছিলেন-‘মৃত্যুর পূর্বে যদি একবার তার সাক্ষাৎকার নেবার সুযোগ পেতাম,তাহলে তাকে একটি কথাই জিজ্ঞেস করতাম – ‘আপনি কি এখনও নাস্তিক?’
সত্যজিৎ তার জীবদ্দশায় অসংখ্যবার বিভিন্ন আলাপে ,লেখায়,সাক্ষাৎকারে এ ব্যপারে তার দৃষ্টিভঙ্গির কথা জানিয়েছেন । সর্বশেষ গবেষক ও জীবনীকার এন্ড্রু রবিনসনের সাথে গনশত্রু’ সম্পর্কে যে কথোপকথন হয় তাতেও তিনি সুস্পষ্ট ভাবে সে কথা জানান যে, তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসী নন ।
-আপনি কি বিলিভার,বিশ্বাসী ?
-আমি একজন নাস্তিকই,তবে যত দিন যাচ্ছে ও বয়স বাড়ছে ,ততই মনে হচ্ছে আমি অজ্ঞেয়বাদী ( agnostic) হয়ে পড়ছি) ।
অন্য এক জায়গায় তিনি লিখেছেন-আমার নিজের অনুভূতি হচ্ছে মানুষই ঈশ্বরকে
সৃষ্টি করেছে ।অবশ্য প্রাণের শুরুর ব্যপারটি নিয়ে রহস্য তো আছেই । কিন্তু আমার মনে
হয় ঈশ্বর তেমন কিছু ব্যপার নয় যাতে আমি বিশ্বাস করতে পারি ।’
এরপরেও সেই সমালোচকের সন্দেহ থেকে যায়, যার জন্য মৃত্যুপথযাত্রীকে আরেকবার প্রশ্নটি করে সন্দেহমুক্ত করতে চেয়েছিলেন । তার স্বপক্ষে তিনি আগন্তুক ছবির কিছু দৃশ্যের উল্লেখ করেন যেখানে ব্রম্মার নাম জপের ব্যপার ইত্যাদি আছে। আসলে বিশ্বাসী মানুষ ভাবতেই পারেননা মানুষ কি করে অবিশ্বাসী হয় ,বিশেষ করে যারা কৃতবিদ্য , আদর্শবাদী মহান স্রষ্ঠা ।
সত্যজিৎ রায় এযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি ,রবীন্দ্রনাথের পরে যাকে নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে । এবং সুখের বিষয়,এরা দুজনেই ধর্মের ব্যপারে উদার মুক্ত এবং গোঁড়া আচার অনুষ্ঠানের নিগঢে বাঁধা ছিলেন না । রবীন্দ্রনাথ যদিও বিশ্বাসী ছিলেন ,কিন্তু প্রচলিত অর্থে নয়। তা ছিল তার নিজস্ব এবং প্রচলিত কোন ধর্মমতের নয় ।সে অর্থে তাকে শুদ্ধ আস্তিকও বলা চলেনা - তার জীবনদেবতা আসলে কে এবং কী তা নিয়ে অনেক গবেষণা, বিতর্ক আছে। সাধারণ মানুষের মত ঈশ্বর-স্বর্গ-নরক প্রভৃতি ধারণার মধ্যে তিনি আবর্তিত হন নাই। বলতে গেলে সারা জীবনই বাউলের গানের মতই তাঁকে খুঁজেছেন । শেষ বয়সে সে খোঁজা ‘শূন্য খোঁজা’ কিনা সে নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করেছেন। ‘আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ’ গ্রন্থে আবু সয়ীদ আয়ুব সে কথা বিশদ ভাবে লিখেছেন।
সত্যজিৎ ছিলেন বিবেকবান,যুক্তিবাদী,কল্যানকামী ও নৈতিক সাহসে ঋদ্ধ। সমসাময়িক অনেক স্বদেশীর চাইতেও উদার মুক্ত, ধর্মীয় গোঁড়ামীর প্রতিবাদে দ্ব্যর্থহীন ।
-আমি ধর্মীয় গোড়ামীর বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার তো বটেই,আমি খোদ ধর্মকেই কোন জরুরী বিষয় বলে ভাবিনা । বিশ্বাস করিনা । কেমন করে এবং কেনই বা ধর্মীয় মতে বিশ্বাস করবো যা কেবলই মানুষের মধ্যে বিভেদ আনে-বিভেদ আনে বর্ণে, মেকী প্রাচীর তুলে দেয় মানুষে মানুষে ।’
তার নিজের লেখা ও পরিচালিত ছবি ‘আগন্তুক’ এর এক চরিত্রের মাধ্যমে বলছেন- ‘আমি ধর্ম মানিনা ,আমি আনঅর্থডক্স। যে জিনিষ মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে তাকে আমি মানিনা ।রিলিজিয়ন এটা করে, অর্গানাইজড রিলিজিয়ন তো করেই । সেই একই কারণে আমি জাতও মানিনা ।’
গনশত্রু’ ছবিতে তিনি শুধু বিজ্ঞান ও ধর্মের সংঘাতকেই তুলে ধরেন নি , ধর্ম বিশ্বাস যে কী ভয়ঙ্কর হতে পারে তাও দেখিয়েছেন । ছবিতে মন্দিরের মাড়োয়ারি মালিক চরনামৃত বিক্রি করেন। সেই চরনামৃত দূষিত জল দিয়ে তৈরি- তা প্রমান করেন আদর্শবাদী ডাক্তার গুপ্ত । কিন্তু ধর্ম ব্যবসায়ী মি: ভার্গব তা মানবেন না -
-এটা আপনি কি করলেন ডা: গুপ্ত ?
-কেন ?
-আপনি কি রিপোর্ট লিখলেন-আমার তো মাথা ঘুরে গেল ?
-জলের রিপোর্ট যখন পাই আমার মাথাও অমনি ঘুরে গিয়েছিল ,ব্যপারটা খুবই সীরিয়স।
-কিন্তু এর মধ্যে আপনি আমার মন্দিরকে টানছেন কেন ?
-ওই জলে রোগের জীবানু পাওয় গেছে- আর মন্দিরের জল তো সেই একই জল।
এবার মি ভার্গব তার পকেট থেকে একটা শিশি বের করে ডা: গুপ্তকে দেখিয়ে বললেন,
- এটা কি আপনি জানেন? দিস্ ইজ্ চরনামৃত । এটাক আপনি টেস্ট করুন ।এর মধ্যে যদি একটা জার্ম বের করে দিতে পারেন তো আমার নাম ভার্গব নাই ।
-কি বলছেন ?
-এর প্রপার্টিজ আপনার মেডিকেল সাইন্স বুঝবেনা । দিস চরনামৃত এন্ড অল চরণামৃত ইজ ফ্রী ফ্রম জার্ম ।’
-এ তো অদ্ভুত কথা ।
-নো স্যার, নট অদ্ভুত। এটা শুধু কলের জল নয় । গঙ্গাজল ভি আছে ,নয়তো পূজা হবে কি করে?
we get regular গঙ্গাজল from
calcutta. then there is milk বেলপাতা,তিল and
most important of all তুলসীপাতা । আপনি কি জানেন তুলসীপাতায় জলের সব দোষ কেটে যায় ? না আপনি জানবেন না ডা: গুপ্ত । But
Hindus have known it for thousand of years .
-কিন্তু ওইসব খেয়ে অসুখ নিয়ে তো লোকেরা আমার কাছে এসেছে ?
-কিন্তু ওইসব খেয়ে অসুখ নিয়ে তো লোকেরা আমার কাছে এসেছে ?
-But not চরণামৃত। আপনি তো মন্দিরে যান না ,আপনি হিন্দু রিলিজিয়ন বুঝবেন না –মন্দিরে জলের ব্যপার কিছু নেই।‘
এই হোল ধর্ম আর বিশ্বাস ।এই বিশ্বাস থেকে শত যোজন দুরে ছিল সত্যজিতের অবস্থান ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন