অধ্যাপক মরহুম ড. হুমায়ুন আজাদের ২০০৪ সালের জুন মাসে দেয়া একটি সাক্ষাৎকার :



          
  

 সৌজন্যে ; অপার বাংলা ডট কম এবং দেবদুলাল  মুন্না ; )

     

স্থিতাবস্থা রক্ষার জন্য আমি কিছুই লিখি না : হুমায়ুন আজাদ 

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: দেবদুলাল মুন্না



বইমেলায় আততায়ীর হাতে আক্রান্ত হবার পর হুমায়ুন আজাদ আবার সুস্থ্য হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে এলে গত ৩ জুন, ২০০৪ সালের বিকালে তার বাসভবনে যুগান্তরের পক্ষে মুখোমুখি হই আমি।

আমার  নেয়া  এই  সাক্ষাতকারে  হুমায়ুন আজাদ আবারও দ্ব্যর্থহীনভাবে তার বিশ্বাস ও মতামতগুলো বলেছিলেন


প্রশ্ন : নারী, প্রতিক্রিয়াশীলতার দীর্ঘ ছায়ার নীচে, শুভব্রত ও তার সম্পর্কিত সুসমাচার, আমার অবিশ্বাস, পাকসার জমিমন সাদবাদ এসব বই লিখে আপনি আসলে কি নিশ্চিত নিরুপদ্রব জীবনের বিপরীতে নিজেকে নিযে যেতে চেয়েছেন? নিটশের মতোই আপনি কি আপনার নিয়তি জানতে এবং বলবেন I am not a man, I am dynamic?

হুমায়ুন আজাদ : নিটশে এরকম বলেছে নাকি? নিটশের বিখ্যাত উক্তি হচ্ছে god is deadবইগুলো লেখার অর্থ কি নিজের জীবনকে উপদ্রবকবলিত করে তোলা? যদি কেউ উপদ্রবকবলিত জীবন চায় তাহলে বাই লেখার চেয়ে অন্য অনেক জিনিস রয়েছে যা দিয়ে মানুষ তার জীবন উপদ্রুত করে তুলতে পারে। তুমি অসুস্থ হিংস্র সমাজে বাস করো বলেই বইগুলো এবং আমার সম্পর্কে এ ধারণা জন্মেছে। আমি যে বইগুলো লিখেছি, যা লিখেছি তা প্রথাগত চিন্তাভাবনার সঙ্গে খাপ খায় না। আমি আতঙ্কগ্রস্ত সমাজের মধ্যে বাস করতে চাই না বলেই এই বইগুলো লিখেছি। আমি মানুষের জন্য মুক্ত জীবন চেয়েছি- যে জীবন উদার সৃষ্টিশীল যা মানুষকে বিকশিত করে। এই বইগুলো এই বন্ধ সমাজ থেকে উত্তরণের জন্যই লেখা হয়েছে। যেমন চারপাশে যে প্রতিক্রিয়াশীলতা দেখতে পাচ্ছি এবং এক সম্প্রদায় আরেক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংস্র হয়ে উঠেছে এবং কিছু বদ্ধ মানুষ কিছু মুক্ত মানুষকে হনন করার জন্য উদ্যত হয়েছে। এ ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করার জন্যই প্রতিক্রিয়াশীলতার দীর্ঘ ছায়ার নীচেবইটি লিখেছি। শুভ্রব্রত ও তার সম্পর্কিত সমাচারউপন্যাসটি বদ্ধ সমাজ থেকে মুক্তির জন্য রচিত একটি বিশাল উপন্যাস। এই উপন্যাসটি একজন ধর্মপ্রবর্তককে নায়ক হিসাবে নিয়েছি যে ক্রমশ তার উন্মত্ততার মধ্য দিয়ে এক বিধাতার সন্ধান পায় এবং সমস্ত সমাজ রাষ্ট্রকে তার বিশ্বাসের অনুগত করতে চায় এবং একটি মৌলবাদী সমাজ স্থাপন করতে চায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার প্রতিষ্ঠিত সমাজে, রাষ্ট্রে তারও দম বন্ধ হয়ে আসে এবং সে ঘোষণা করে যে, বিধাতা আমার মনেরই সৃষ্টি। তখন ক্ষমতা ও ধনলিপ্সু সেনাপতিরা তাকে হত্যা করে এবং দেশের পর দেশ জয় করতে বেরিয়ে পড়ে। এটি একটি মহৎ উপন্যাস। এই বইগুলো আমি লিখেছি একটি মুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বপ্ন থেকে এবং শিল্প সৃষ্টি করার জন্য। কোন অন্ধ মৌলবাদীর হাতে নিহত হওয়ার জন্য নয়।

প্রশ্ন : নাস্তিক্যবাদ দিয়ে ধর্মের মোকাবেলা করা যায় কি? ধর্মের পর্যালোচনা করেছেন কি রাজনৈতিক স্বার্থে?

হুমায়ুন আজাদ : প্রথমত, আমরা কয়েকটি শব্দের অর্থ ভালোভাবে বুঝে নিতে চাই। শব্দগুলো হচ্ছে আস্তিক, নাস্তিক, আস্তিকতা, নাস্তিকতা। এই শব্দগুলোর মূল হচ্ছে অস্তিশব্দটি। যার অর্থ হচ্ছে আছে। এখন আস্তিক হচ্ছে যিনি মনে করেন ঈশ্বর আছে। এ বিশ্বাস হচ্ছে আস্তিকতা। আর যে মনে করে ঈশ্বর নেই সে নাস্তিক। আর তা বিশ্বাস হচ্ছ নাস্তিকতা। প্রাচীনকালে মানুষ কিন্তু এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করত না। এখনও হিন্দু ধর্মে নানা রকম দেবদেবিতে বিশ্বাস পোষণ করা হয়। একেশ্বরবাদ প্রবল হয়েছে গত তিন হাজার বছরে এবং একেশ্বরবাদ যেহেতু কোন দ্বিতীয় বিধাতার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না, ফলে এর বিশ্বাসীরা বেশ হিংস্র হয়ে থাকে। মানুষ প্রাচীনকালে নাস্তিক ছিল ভবিষ্যতেও নাস্তিক থাকবে। গত তিন হাজার বছর হচ্ছে আস্তিকতার উৎপীড়নের কাল। এখনও যারা আস্তিক তারাও কিন্তু অভিন্ন ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না। ইহুদির যিহোবা, খ্রিস্টানদের গড এবং মুসলিমদের আল্লাহ অভিন্ন ঈশ্বরে বিশ্বাস কওে একেশ্বরবাদী ধর্মগুলো অন্তত তিনটি বিধাতাকে কোন এক অলৌকিক জগতে লালন পালন করেছে। তোমার এই প্রশ্নটি খুবই লঘু- কেননা মোকাবেলা করার ব্যাপারটি প্রধান নয়। মানুষ মননশীল, সৃষ্টিশীল। অন্ধ বিশ্বাস অতিক্রম করে সত্য আবিষ্কার করেছে। অজস্র পৌরাণিক বিশ্বাস এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এটা মোকাবেলার ব্যাপার নয়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সত্য উদঘাটন করতে চাই। কোনরূপ অলৌকিক গ্রন্থ দিয়ে পরিচালিত হতে চাই না। মানুষ মননশীল বলেই আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা যদি অন্ধ বিশ্বাস পোষণ করি তাহলে বিশ্বাস করতে হবে পৃথিবী হচ্ছে কেন্দ্র আর চাঁদ-সূর্য ওঠে এবং তারার গোলকের বাইরে দেদূতেররা ও ঈশ্বরবাস করে। প্রচণ্ড আস্তিকও এখন আর এ বিশ্বাস পোষণ করে না। যদিও ধর্মগ্রন্থগুলো এ ধরনের জগতের কথাই প্রচার করে থাকে। আবারও বলি মোকাবেলা বড় ব্যাপার নয়। মূল ব্যাপার হচ্ছে জ্ঞানচর্চা এবং জ্ঞানের সাহায্যে সত্য উদঘাটন। আর পর্যালোচনা আমিই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি করেছি এদেশে। আমার একটি বই রয়েছে যার নাম আমার অবিশ্বাস। এই বইতে আমি পৃথিবীর বড় বড় ব্যক্তি যেমন রবিন্দ্রনাথ, এলিয়ট, দান্তের বিশ্বাসের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করেছি এবং দেখিয়েছি তাদের বিশ্বাগুলো ভুল। যেমন দান্তে ডিভাইন কমেডিতে যে স্বর্গ-নরকের কথা বলেছেন নরকের স্তরে স্তরে পাপীদের শাস্তি দিয়েছেন- নরকের ভেতর দিয়ে যেয়ে স্বর্গে উপনীত হন- এসবই ভুল তবে কবিতা হিসাবে অসাধারণ। এলিয়টের কবিতা যে খ্রিস্ট ধর্মীয় বিশ্বাস সেগুলো ভুল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বিশ্বাসী ছিলেন এবং তিনি যখনই উপলব্ধি করে বুঝতে পারতেন না তখন বিমূর্ত শব্দ ব্যবহার করতেন। যেমন আমাদের এই রোদ হচ্ছে সূর্য থেকে বিকিরিত আলো। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যখনই রোদের কথা বলেছেন তখন তা আর পার্থিব রোদ থাকে না, হয়ে ওঠে ঈশ্বরীয় রোদ। অর্থাৎ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুগুলোকে অতীন্দ্রিয় করে তোলা। আমি এসবের পর্যালোচনা করেছি। এই বইটিতে ধর্মের উৎপত্তি, বিকাশ, পরিণতি নিয়ে আলোচনা করেছি। পৃথিবীতে প্রচলিত ধর্মগুলো অলৌকিক নয় এসব মানুষেরই সৃষ্টি করা।
পাশ্চাত্যের প্রতিটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে দেখি সমাজটা খ্রিস্টধর্ম থেকে মুক্ত নয়। পাশ্চাত্যের জ্ঞান, বিজ্ঞান, চিন্তা সংস্কৃতি ও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডের ভিত্তি হিসাবে খ্রিস্টধর্ম প্রবলভাবেই বিদ্যমান। শুধু ধর্মকে রাষ্ট্রের আইন বা বিধিবিধান প্রণয়নের ভিত্তি হিসাবে গণ্য করে না। কিন্তু সমাজে তো চার্চের ভূমিকা আছে। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি তাদের রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারে কিন্তু সমাজ তো ধর্মমুক্ত নয়। তাছাড়া ধর্মকে সমাজ থেকে মুক্তি দেয়া ওইসব বুর্জোয়া সংবিধান বা রাষ্ট্রের লক্ষ্যও নয়। কিন্তু আমাদের দেশে রাষ্ট্রকে যতটা না সেক্যুলার করার জন্য লড়ছে প্রগতিশীলরা- তারচেয়ে বেশি লড়ছে সমাজকে ধমৃমুক্ত করতে।

প্রশ্ন : ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হতে পারে ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের স্বপ্ন কিভাবে দেখছেন?

হুমায়ুন আজাদ : প্রথম কথা, তোমার প্রশ্ন স্পষ্ট নয়। ইউরোপে রাষ্ট্র এবং গির্জার মধ্যে দীর্ঘকাল সংঘর্ষ চলছে এবং রাষ্ট্র বা রাজা জয়ী হয়েছে। শক্তিশালী রাজা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে প্রত্যাহার করেছে। ইউরোপের রাষ্ট্র ধর্মের পৃষ্ঠপোষক নয়; কিন্তু সমাজে নানা ধর্ম রয়েছে সেগুলো সাধারণত বড়রাই পালন করে থাকে। তরুণ-তরুণীরা ধর্ম নিয়ে মাতামাতি করে না। ইহুদি খ্রিস্টধর্মের একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছ ধর্মবিশ্বাসীদের দিনভর ধর্মকর্ম করতে হয় না। কথায় কথায় ঈশ্বরের বন্দনা করতে হয় না। কিন্তু ইসলামের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দিনভরই বন্দনা করতে হয় এবং সবাইকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হয়। এখন আমাদের দেশে ইসলামের নিরংকুশ আধিপত্য চলছে। পঞ্চাশ-ষাট বছর আগে কিন্তু এমন ছিল না। আমি বাল্যকালে দেখেছি আমার এলাকার মুসলমানরা মুসলমান ছিল কিন্তু ধর্ম নিয়ে মাতামাতি করত না। তখন এত মসজিদ গড়ে ওঠেনি। কথায় কথায় বিসমিল্লাহ’ ‘আলহামদুল্লিাহবলা হত না। ক্যাম্পাসে বোরকা দখা যেত না। কিন্তু এখন ধর্ম প্রবলভাবে আমাদের ওপর চেপে বসেছে। ইউরোপ এগিয়েছে আর আমরা পেছনেই পড়ে রয়েছি। ধর্মে এখন আর আধ্যাত্মিকতা নেই, রয়েছে ধর্মকে ঘিরে রাজনীতি এবং এর ফলে ধর্ম রাষ্ট্রকে গ্রাস করছে। ইউরোপের রাষ্ট্র কিন্তু ধর্মমুক্ত। আমাদের কি রাষ্ট্র কি সমাজ সবকিছুকেই গ্রাস করছে ধর্ম। অনুন্নত অশিক্ষিত সমাজে এটা হওয়াই স্বাভাবিক। আমাদের সমাজে দুর্নীতির সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক রয়েছে। যত দুর্নীতি বাড়ছে তত ধর্ম বাড়ছে এবং মানুষকে ধর্ম দিয়ে নির্যাতন করানো হচ্ছে। যেমন আমাদের রাজনীতিবিদরা কথায় কথায় ধর্মের শ্লোক বলে। তারা সিনেমা হল উদ্বোধন করতে নতুন জাহাজ উদ্বোধন করতে গিয়ে ধর্মের শ্লোক বলে। ষাটের দশকে কোন অনুষ্ঠানে আমি ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ শুনিনি। কিন্তু এখন কোরাআন পাঠ অনুবাদ করে ব্যাখ্যা চলে এবং প্রত্যেক বক্তা এসে কয়েকটা ধর্মের শ্লোক বলে শুরু করেন এবং শেষ করেন। এগুলো ধর্মের সামাজিক রূপ নয় রাজনৈতিক রূপ। ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হচ্ছে সমাজে ধর্ম থাকবে যার ইচ্ছা পালন করবে যার ইচ্ছা পালন করবে না। রাষ্ট্র কোন পক্ষ নেবে না এবং যারা ধর্ম পালন করে না তাদের পীড়ন করবে না। আমাদের এখানে ধর্ম ঐশ্বরিকতা হারিয়ে ফেলেছে। তবে মানুষ তার সৃষ্টিশীলতা মননশীলতা দিয়ে একদিন ধর্ম ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ কেন, ধর্মমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করবে।

প্রশ্ন : ইউরোপীয় আধুনিকতাকে কিভাবে দেখেন আপনি?

হুমায়ুন আজাদ : ইউরোপীয় আধুনিকতা পদটি বিভ্রান্তিকর। কারণ আধুনিকতা মানেই হচ্ছে ইউরোপীয়। ইউরোপ ছাড়া কোথাও আধুনিকতা ছিল না। শুধু আধুনিকতা কেন, রোমান্টিসিজমের জন্মও ইউরোপে। ইউরোপ সবসময়ই স্রষ্টা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে রোমান্টিক কবি-তিনি শেলি দ্বারা প্রভাবিত। বোদলেয়ার, …….বো, মালার্মে, এলিয়ট, পাউন্ড এদের চেতনা গ্রহণ করেই বাংলা সাহিত্য গড়ে উঠেছে। এই আধুনিকতা ইরানে, মধ্যপ্রাচ্যে পাওয়া যায় না। ১৯৪০-৫০ পর্যন্ত বাঙালি মুসলমান আধুনিকতার সঙ্গে সম্পর্কিত হয়নি। বাঙালি মুসলমানেরা ওমর খৈয়ম, হাফিজ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে। আমরা যখন আইয়ুব খানের দ্বারা পীড়িত ছিলাম তখন খুঁজে নিয়েছি শুদ্ধ বাঙলা ভাষা। যে ভাষা বাঙালি মুসলমানের মধ্যে ছিল না। আধুনিকতা ইউরোপ ও আমেরিকা ছাড়া নেই। মুসলমান জগতে তো নেই-ই। শিক্ষিত বাঙালি মুসলমানের মগজ যে জ্ঞান ধারণ করে তা ইউরোপীয় ও মার্কিনী জ্ঞান। আমরা যে কোন চিন্তাবিশ্বের কথাই বলি না কেন তা পেয়েছি ইউরোপ থেকে। আমি নিজে ইউরোপীয় আদুনিকতার খুব অনুরাগী। আমাদের যে আধুনিক কবিদের প্রভাবে। আমি নিজে ভাষার ক্ষেত্রে শুদ্ধতাবাদী। আমি বাংলা ভাষায় বাংলা শব্দই দেখতে চাই। আমি আরবি, ফার্সির কাছে হাত পানিতিন। এক গবেষক হিসাব করে দেখিয়েছেন বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিম যে পরিমাণ ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেছেন আমি তার থেকে কম ব্যবহার করেছি। বাংলা ভাষায় বিদেশি শব্দ সম্পর্কে দুএকটি কথা বলা যেতে পারে। কোন একটি ভাষার বিপুল পরিমাণ শব্দ ঢোকার প্রক্রিয়াকে বলে ভাষা সা¤্রাজ্যবাদ। আমি যেহেতু সব ধরনের সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সেহেতু ভাষা সাম্রাজ্যবাদের শিকার হতে চাইনি।

প্রশ্ন : কিন্তু এক সময় তো বাংলা ভাষায় আরবি ফার্সি শব্দ ছিল। ফোর্ট ইউলিয়াম কলেজের অধ্যাপকরা সংস্কৃতি শব্দ প্রচুর পরিমাণে ঢুকিয়ে আরবি ফার্সি শব্দগুলো বাদ দিলেন। এখন আরবি ফার্সি শব্দগুলো ব্যবহার করলে কি সাম্প্রদায়িকতার দুরভিসন্ধি ভাবা ঠিক?

হুমায়ুন আজাদ : বাংলা ভাষায় এক সময় যে প্রচুর পরিমাণ আরবি, ফার্সি শব্দ ঢুকেছে তা ভাষা সা¤্রাজ্যবাদের কারণে। এটা মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ তো ইরানে, আরবে গিয়ে বাংলা শব্দ নিয়ে এসে নিজের ভাষায় ব্যবাহর করেনি। মুসলামান শাসনের ফলে আরবি ফার্সি শব্দ ঢুকেছে। লক্ষ্য করলে দেখা যায় ফার্সি শব্দগুলো বিশেষভাবে ঢুকেছে জমি ও বিচারসংক্রান্ত ব্যাপারে। কারণ বাদশারা চাষীদের ওপর কর বসাত। ফলে করহয়ে উঠেছে খাজনা। তারা বিচার করত বলে বিচারালয়হয়ে উঠেছে আদালতএমকি লেখনিহয়ে উঠেছে কলম। আঠার শতকের মাঝামাঝি সময়ে উচ্চবর্ণের বাঙালি মুসলামান ও হিন্দুরা কথ্য ভাষায় শতকরা ৬০-৭০টি আরবি-ফার্সি ব্যবহৃত হত। কিন্তু সাধারণ মানুষের কথ্য ভাষায় এত আরবি-ফার্সি শব্দ ব্যবহার হত না। উচ্চবর্ণের মানুষরা রাজা-বাদশাদের পদানত ছিল ফলে তারা রাজা-বাদশাদের ভাষা গ্রহণ করেছে। পরে ইংরেজি আসার ফলে আরবি, ফার্সি আধিপত্য কমে এবং ইংরেজি শব্দের আধিপত্য বাড়ে। কিন্তু উনিশ শতকের বাংলা গদ্য লেখকেরা আরবি-ফার্সি বাদ দেন এমকি ইংরেজি গ্রহণ করেননি। তারা স্বায়ত্তশাসিত বাংলা ভাষা সৃষ্টি করেন। পাকিস্তান আন্দোলনের সময় মুসলমান লেখকরা তাদের লেখায় প্রচুর পরিমাণে আরবি-ফার্সি শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। তারা ছিলেন সামপ্রদায়িক। এখনও যারা ব্যবহারের পক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন তারাও সাম্প্রদায়িক। ঔপনিবেশিকতা মোকাবেলার কথা মিথ্যা প্ররোচণা মাত্র। আগের প্রসঙ্গে বলি ইউরোপ আমাদের নতুন চিন্তা দিয়েছে এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। ইউরোপই আমাদের চিন্তাজগৎকে সমৃদ্ধ করেছে।

প্রশ্ন : ইউরোপীয় শিক্ষাটা চাপিয়ে দেয়া না?

হুমায়ুন আজাদ : আমি যে আধুনিকতার কথা বলছি তা চাপিয়ে দেয়া হয়নি। বদলেয়ার, পাউন্ড, জেমস জয়েসের জন্য ইংরেজি শাসকরে বিশেষ দররদ ছিল না। ইংরেজের যে শিক্ষাব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা সেটা সুপরিকল্পিত। একটি উপনিবেশ শাসন করার জন্য যা দরকার তারা সে উদ্যোগই নিয়েছিল। কিন্তু তাদের উদ্যোগের শিকার হয়েছে কেরানিরা, দারগোরা। তবে শিকার কিন্তু লেখকরা হয়নি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোন ব্রিটিশ ভাইসরয়ের কাছে রোমান্টিসিজম শিখেননি। আমরা কোন ব্রিটিশ বা মার্কিন শাসকের কাছে আধুনিকতা শিখিনি। বাংলা আধুনিকতা ওদের সাহ্যি থেকেই অর্জন করেছি এবং বঙ্গীয় রূপে প্রকাশ করেছি। বাংলা ভাষার প্রধান সব লেককই মধুসূদন থেকে শুরু করে ইউরোপ থেকে গ্রহণ করেছেণ। একমাত্র পল্লী কবি জসীমউদ্দন এবঙ বাউলরাই ইউরোপ থেকে গ্রহণ করেনি এবং দেখো জসীমউদ্দীনের সাহিত্র নবম শ্রেণীতে বালক-বালিকাদের জন্য। ওগুলো জানার জন্য নবম শ্রেণী পাস হলেই চলে। কিন্তু সুধীনন্দ্রনাথ দত্ত বোঝার জন্য সুশিক্ষিত হতে হয়।

প্রশ্ন : কিন্তু স্যার ইউরোপ তো আমাদের বর্বর মনে করে। সভ্যতার সংর্ঘষতত্ত্ব নিয়ে আবু গারিব কয়েদখানা থেকে শুরু করে আফগানিস্তান, ইরাকে যে আচরণ করেছে সেটাকে কি বলবেন? সভ্য?

হুমায়ুন আজাদ : আমি মনে করি না এখন কোন সভ্যতার সংর্ঘষ চলছে। ধর্মেরও সংঘর্ষ চলছে না। আমেরিকা ওইসব দেশ দখল করেছে খ্রিস্টধর্ম প্রচারের জন্য নয়। আমেরিকার বিরুদ্ধে লেখা এখন খুবই প্রশংসার ব্যাপার। পৃথিবীর সব বুদ্ধিজীবী আমেরিকাকেন্দ্রিক। আমেরিকায় থাকতেও চায়, আবার গালিও দেয়। এডওয়ার্ড সাঈদ পাকিস্তানে থাকলে আমেরিকাকে গালি দিতেন না। ফলে আমেরিকা একটি দর্শনে পরিণত হয়েছে। আমাদের কথাই বলি। আমাদের দেশের সব মুসলমান আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। এখানকার বুদ্ধিজীবীরাও আমোিরা যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। অনেকে আমেরিকায় ভৃত্যের কাজ করে এসে এখানে মার্কসবাদী বুদ্ধিজীবী সেজে এনজিও করে এবং মজার ব্যাপার লিখতে গেলেই আমেরিকার বিরুদ্ধে লেখে। এমন বুদ্ধিজীবীরা আমেরিকার টাকায় চলে, আর লংগি পরে বাংলার ভাব নিয়ে লিখে। আমি কাউকে কাউকে জানি যারা আমেরিকার বিভিন্ চার্চের টাকা নেয় এবং আমেরিকাকে গালি দেয়। এটা তাদের এক ধরনের ব্যাধি। কারণ আমেরিকা তাদের মনোজগতে প্রবলভাবে ঢুকে আছে। আমি নিজে আমেরিকা যাওয়ার জন্য কখনও ব্যাকুল ছিলাম না, এখনও ব্যাকুল নই।

কিন্তু আমেরিকা বিজ্ঞান শিল্পকলার বড় কাজগুলো করেছে। অনেকে আমেরিকার ইরাক, আফগানিস্তানের ওপর সামরিক দখলকে ইসলামের বিরুদ্ধে আক্রমণ মনে করে। কিন্তু আমি এ রকম মনে করি না। আমেরিকায় এখনও ৫ কোটি মুসলমান বাস করে। কিন্তু সৌদি আরবে একটি গির্জা বা মন্দির তুলতে দেয়া হয়নি। আমেরিকায় যদিও মসজিদ রয়েছে।

কিন্তু আমেরিকা বিজ্ঞান শিল্পকলার বড় কাজগুলো করেছে। অনেকে আমেরিকার ইরাক, আফগানিস্তানের ওপর সামরিক দখলকে ইসলামের বিরুদ্ধে আক্রমণ মনে করে। কিন্তু আমি এ রকম মনে করি না। আমেরিকায় এখনও ৫ কোটি মুসলমান বাস করে। কিন্তু সৌদি আরবে একটি গির্জা বা মন্দির তুলতে দেয়া হয়নি। আমেরিকায় যদিও মসজিদ রয়েছে। ফলে এটা সভ্যতার বা ধর্মের সংর্ঘষ নয়। আমেরিকার হস্তক্ষেপ মঙ্গলজনক। তালেবানরা যে সমাজ রাষ্ট্র স্থাপন করেছিল তা অধিকাংশ আফগানিস্তানের জন্য ছিল দুঃসহ। সেখানে কোন সাহিত্য বিজ্ঞান শিল্পকলা ছিল না। তারা মধ্যযুগ স্থাপন করেছিল। হিংস্রতাকেই দর্শন বলে গ্রহণ করেছিল। আফগানিস্তানকে তালেবানের হিংস্রতা থেকে মুক্তি দিয়েছে আমেরিকা। আমাদরে দেশের মৌলোবাদীরা এক সময় স্লোগান দিত, ‘আমরা সবাই তালেবান বাংলা হবে আফগান। এখন তারা আর তা দেয়ার সাহস পায় না। আমেরিকা খণ্ডকালীনভাবে ইরাক দখল করেছে, তাতে মঙ্গল হয়েছে। তা না হলে তারা সাদ্দাম হোসেন ও তার পুত্রের একনায়কতন্ত্র থেকে মুক্ত হতে পারত না। ইরাকিদের উচিত ছিল তাদের এই মুক্তিকে সার্থক ব্যবস্থায় পরিণত করা। তার বদলে তারা হিংস্রতায় মেতে উঠেছিল। আবু গারিব কয়েদখানায় যে নির্যাতন হয়েছে তার চেয়ে বেশি করেছে সাদ্দাম। সভ্যতার সংঘর্ষ এটা নয়। ইসলামের মধ্যেই কিন্তু অভ্যন্তরীণ ধর্মীয় সংঘর্ষ রয়েছে। যেমন পাকিস্তানে সুন্নিরা শিয়াদের মুসলমান মনে করে না। তারা বারবার দাবি জানায় শিয়াদের অমুসলিম ঘোষণার জন্য ইরাকে শিয়া-সুন্নিদের বিরোধ এক ঐতিহাসিক ঘটনা এবং এখনও বিরোধ প্রবল। ইরান একটি শিয়া রাষ্ট্র এ জন্য অনেক সুন্নি মুসলমান ইরানকে পছন্দ করে না। ফলে মুসলমানের অভ্যন্তরেই বিরোধ রয়েছে। মুসলমানরা মুসলামানদের যত রক্ত ঝরিয়েছে অন্য কোন শক্তি মুসলমানদের তত রক্ত ঝরানি। আমাদের কথাই ধরা যাক। আমরা এক সময় পাকিস্তানে ছিলাম। পাকিস্তানিরা চলেছে ইসলাম ধর্মের আরবিকরণে। যেমন খোদা হাফেজের জায়গায় আল্লাহ আফেজ বলা হয়। আমি শুনেছি একটি টিভি চ্যানেলে এক ধর্ম আলোচক আমার পাকসার জমিন সাদবাদ এর কথা বলে আমাকে হত্যার ইঙ্গিত দিয়েছেন। আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন সংসদে জনৈক সাংসদ। এই ধর্মন্ধতা খুবই হিংস্র, অসভ্য।

প্রশ্ন : আপনার কাক্সিক্ষত রাষ্ট্র কেমন?

হুমায়ুন আজাদ : আমি যে রাষ্ট্রের কথা ভাবি কাঠামোগত দিক থেকে সেটা উদার ও গণতান্ত্রিক। সেখানে যে অর্থব্যবস্থা থাকবে তা শোষণমুলক হবে না। চেতনায় সে মাজে হবে শিল্পকলা ও বিজ্ঞানমনস্ক। সেখানে পৌরাণিক বিশ্বাস প্রধান্য পাবে না। এমন সমাজ এখন পৃথিবীতে নেই। কিন্তু যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কানাডায় কিচুটা আভাস দেখা যায়। এই রাষ্ট্রগুলো গণতান্ত্রিক। আমাদের দেশের মতো অগণতান্ত্রিক নয়। সেখানে প্রতিটি মানুষের অধিকার রয়েছে। ওই রাষ্ট্রগুলোর প্রধান ইচ্ছে করলেই কোন সাধারণ মানুষের প্রতি অবিচার করতে পারে না। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের বুশ অন্য দেশ দখল করতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রীয় অর্থকোষ থেকে একটি অর্থও নিতে পারে না। আমাদের এখানে সবাই স্বেরাচারী। আমার কাক্সিক্ষত রাষ্ট্রে কেউ সর্বশক্তিমান হবে না।

প্রশ্ন : আচ্ছা, আপনার সম্পর্কে কেউ কেউ এভাবে বলেন যে আপনি যে নৈরাজ্যবাদী দর্শন থেকে কথাগুলো বলেন তা কমিউনিস্ট মেনিফেস্টোর মতো ভয়ংকর শুনালেও শাসককুলের পক্ষেই আলটিমেটলি কাজ করে। কারণ আপনার দর্শনের নিরর্থকতার তত্ত¡ স্থিতাবস্থায় বাতিলের তাগিদকে মৃত করে দেয়। আপনি রাজনৈতিক স্বার্থে কিছু বলেন না।

হুমায়ুন আজাদ : এটা খুব বাজে কথা। আমি স্থিতাবস্থা রক্ষা করার জন্য কিছু লিখি না বরং স্থিতিবস্থাকে অস্থিতিশীল করা আমার লেখার একিট প্রধান কাজ। নৈরাজ্যবাদী শব্দটি এখানে ভুলভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ওটা রাশান দর্শন। অধিকাংশ এর সঙ্গে পরিচিত নয়। বললেই হল? আমি তো রাজনৈতিক লেখক নই। আমার কাজ নতুন সরকার আনা নয় বা নতুন রাষ্ট্র স্থাপন করা নয়। এই দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের। আমার সমস্ত লেখায় যা পাওয়া যাবে তা হচ্ছে প্রথাগত বিশ্বাসকে পরিত্যাগ করা। নতুন আবেগ ও সৌন্দর্য সৃষ্টি করা। আমি যখন সাহিত্যিক সমালোচক তখনও প্রথাগত মতগুলো বর্জন করি এবং নতুন মত পেশ করি। এখানে সাহিত্য সমালোচনাও এক ধলনের রাজনীতি। আমাদের সমারোচকরা সমাজের দিকে তাকিয়ে লেখকদের উৎকর্ষ-উপকর্ষ নির্ণয় করেন। যেমন রবীন্দ্রনাথের সীমাবদ্ধতা নিয় কউ কথা বলবে না, কেননা তাতে রবীন্দ্র অনুরাগীরা ক্ষিপ্ত হতে পারেন। আর নজরুল সমালোচনা করলে তো তার অনুরাগীরা চাপাতি নিয়ে ছুটে আসবে। আমি একবার নজরুলের কবিতা সম্পর্কে বলেছিলাম যে, তার অধিকাংশ কবিতা প্রতিক্রিয়াশীলতার জয়গানে মুখরিত। আমার এই উক্তিকে ভুলভাবে ব্যবহার করে তখনকার একনায়ক মসজিদে মসজিদে বক্তৃতা দিয়েছে। এমনকি তখন আমাদের প্রগতিশীলরা মাথা নত করে থেকেছেন। একনায়ককে সবাই ভয় পায়। আমি পাই না। আমাদের এখানকার প্রথাগত উপন্যাসে পারিবারিক গল্প বলা হয় এবং তা বিশেষ সীমার মধ্যে বিচরণ করে। আমি ও সীমানা ভেঙ্গে দিয়েছি। আমার লেখা কিছুতেই স্থিতাবস্থার পক্ষে নয়। যারা এসব বলে তারা ভাল করে পড়েনি এবং স্থিতাবস্থা নৈরাজ্যবাদ বোঝে না।

প্রশ্ন : আপনাকে কারা আক্রান্ত করছে- এ বিষয় আপনি বারবার বলছেন, কাজটা মৌলবাদীদের। কিন্তু এটা কি ভতের ওপর দোষ চাপানোর মতো নয়? আপনি স্পেসিফিকেলি কারো নাম বলছেন না? অথচ আপনাকে জামায়েতে ইসলামীর এক নেতা এবং এখন সাংসদ হুমকি দিয়েছিলেন, সেটা আগে বললেও এখন বলছেন না। কেন?

হুমায়ুন আজাদ : প্রশ্নটি শোচনীয় রূপে নিম্নমানের বলে মনে হচ্ছে। ভুতের ওপর দোষ চাপানো বাগধারা কি বাংলা ভাষায় রয়েছে? এর অর্থ কি? আমি মৌলবাদীদের কথা বলছি কারণ মৌলবাদীরাই আমার বিরুদ্ধে লিখেছে, সংসদে বক্তৃতা দিয়েছে, টেলিভিশনে উসকে দিয়েছে, এমনকি হত্যা করার প্ররোচনা দিয়েছে। আমি তো ঘাতককে ধরে রাখতে পারিনি। তার মুখও মনে নেই। ফলে এটা খুব ভাল হত, তাকে যদি ধরে তোমাদের হাতে দিতে পারতাম। তার রক্তমাংস পরীক্ষা করে বলতে পারতে সে মৌলবাদী কিনা? আমি বিভিন্ন কার্যকারণ পরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, মৌলবাদীরা পরিকল্পনা করছে, উসকে দিয়েছে এবং বাস্তবায়িত করেছে। #

মন্তব্যসমূহ