বাংলা ও বাঙালীর গত প্রায় ১০ হাজার বছরের কিছু
আজানা
কথা ৷
১৯৭১ সালেই বাঙালী তার হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে
এই প্রথম নিজেদের
একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় এবং
জনগণই রাষ্ট্রের সব ক্ষমতার উৎস বলে ঘোষিত হয়
৷আর প্রথমবারের মত বাংলাদেশের
একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান রচিত হয়
যার মূল
চারনীতির একটি ছিল অসাম্প্রদায়িকতা ৷
চট্রগ্রাম অঞ্চলের
সীতাকুন্ড নামক পাহাড়ী এলাকায় বাংলাদেশে
প্রাগঐতিহাসিক আমলের একটি প্রস্তরখণ্ড
বা পাথর আবিস্কৃত
হয়েছে যার বিশ্লেষণ করে ঐতিহাসিকরা
ধারনা করছেন যে , এই পাথরটি
নব্যপ্রস্তর যুগের একটি পাথর এবং এরই ধারাবাহিকতায় তারা মনেকরেন এই
অঞ্চলে প্রায় ১০ হাজার বছর পূর্বেই মানববসতি
গড়ে উঠেছিল ৷
ঐতিহাসিকদের মতে
এই অঞ্চলে একসময় পুন্ড্র-বঙ্গ-হরিকেল
নামক উপজাতি ছাড়াও এই অঞ্চলে রাঢ ও বরেন্দ্রে নামক উপজাতির বসতি ছিল ৷ মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারতেও
বঙ্গ , অঙ্গ , ও পুন্ড্র-বর্ধনের উল্লেখ আছে ৷ তবে প্রায় ১২শত
বছর আগে রাজা শশাঙ্কের
রাজ্যত্বের পর পালবংশের পাল রাজারা তাদের রাজ্যের সীমানা বর্ধিত করে বঙ্গভূমিকে
নিয়ে বৃহৎ পাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেন এবং প্রায়
৪ শত বছর এ অঞ্চল শাসন করেন ৷ পাল রাজাদের হাত থেকে একপর্যায়ে রাষ্ট্রক্ষমতা ছিনিয়ে
নেন সেন বংশের সেন রাজারা ৷ সেন বংশও প্রায়
শতবছর এই অঞ্চল শাসন করেছেন ৷
পরবর্তিকালে ১৩ শতকে
বখতিয়ার খিলজি বঙ্গ দখল করে নেন ৷ আর সুলতানী আমল থেকে বাংলাভাষা একটি পূর্ণাঙ্গ
ভাষার স্থান দখল করে নেয় এই বাংলায় ৷ যদিও এ অঞ্চলে পূর্বেই বৌদ্ধ-চর্যা ও দোহা জাতিয়
গানে আদি বাংলা ভাষার প্রচলন ছিল ৷ কিত্তু
বাংলাভাষা শুধু সাধারণ জনগণের ভাষাই থেকে যায় ৷ ৫২ সালের বাংলাভাষের জন্যে বাঙালীর আন্দোলনের এবং রক্তপাতের আগ পর্যন্ত বাংলাভাষা কোনোদিন বাংলার কোনো রাষ্ট্রের সরকারী ভাষার স্থান
লাভ করতে পারেনি ৷ এই বঙ্গঅঞ্চলে বিভিন্ন
সময়ে বিভিন্ন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা হলেও রাজা , সুলতান , সুবেদার বা নবাব গণ রাজ্যের অধিপতি হলে ও জনগণ দেশের কোনো অধিকার
পায়নি ৷ রাজ্যগুলো সবসময় রাজা কেন্দ্রিক ছিল
৷ তাই বাঙালীর কোনোদিন কোনো নিজস্ব সংবিধান ছিল না যাকে বাঙালীরা নিজেদের সংবিধান বলে দাবী করতে
পারে ৷
১৯৭১ সালেই বাঙালীরা এক অচিন্ত্যনীয়
ও বিশাল রক্তক্ষয়ী মুক্তি ও স্বাধীনতা যুদ্ধের
মাধ্যমে বাঙালীর সে আশা অর্জিত
হয়েছে ৷ সে আকাঙ্খা পূর্ণ হয়েছে ৷ ৩০
লাখ বাঙালীর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছে বাঙালীরা ৷
দার্শনিক হেগেল বলেগেছেন
–বিশ্বের ইতিহাস হচ্ছে স্বাধীনতার অগ্রগতির প্রতিক , অগ্রগতির ইতিহাস ৷ আজ বিশ্ববাসির কাছে বাংলাদেশ তারই
স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছে ৷একটি
জাতির মধ্যে সাম্য , মৈত্রী ও স্বাধীনতা না
থাকলে সে জাতির উন্নতি
হতে পারে না ৷মাত্র ৪৪ বছরের মাথায় বাংলাদেশের এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবনে যে অভাবনীয় পরিবর্তনটি এসেছে তা শুধু সম্ভব হয়েছে একটি বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ বলেই। সাময়িকভাবে প্রতিবিপ্লবীরা বাংলাদেশের
মুক্তিযুদ্ধের ধারাকে বিঘ্নতা সৃষ্টি করেছিল সে প্রচেষ্টাকে এখন প্রতিহত
করে বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাচ্ছে ৷ আজ বাংলাদেশের অগ্যগতি এবং উন্নতির ধারা বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্তের স্থান দখল করেছে ৷ বাংলাদেশ
আজ বিশ্বের ৪৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত
হতে পেরেছে এরই মধ্যে ৷ পর্যবেক্ষকরা মনে করেন এই ধারাকে কোনো ৩য়
শক্তি যদি বিঘ্নিত না করতে পারে এবং এই ধারার
ধারাবাহিকতা যদি অব্যাহত রাখা সম্ভব হয় তবে ২০৫০ সালের মধ্যে এ দেশ বিশ্বের উন্নত দেশের পর্যায়ে
পৌছে যাবে ৷
কিত্তু বাংলাদেশের
এই অগ্রগতি ও উন্নতির ধারাবাহিকতা ধরে
রাখতে হলে বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থাকে যুক্তি-নির্ভর , কুসংস্কারমুক্ত এবং জ্ঞানও বিজ্ঞানভিক্তিক একটি মানবিক সমাজ হিশেবে
রূপান্তরিত করতে হবে ৷ এটা করা সম্ভব না হলে এসব অর্জন একসময় ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে ৷
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন