মানবজাতির বলিষ্ঠ কণ্ঠধর এবং নারী পুরুষের সমতা ও নারী স্বাধীনতার অগ্রদূত কবি
কাজী নজরুল
ইসলান রচিত কিছু মানবতাবাদী কবিতার
নির্বাচিত পুংক্তিমালা ----
শুধু নারী হবে অসৎ অথচ পুরুষ নয়—এ ধারণা
ভেঙে দিতে
কবি বলেছেন-
শুন
ধর্মের চাঁই—
জারজ কামজ সন্তানে দেখি কোনো সে
প্রভেদ নাই!
অসতী
মাতার পুত্র যদি সে জারজপুত্র হয়
অসৎ
পিতার সন্তানও তবে জারজ সুনিশ্চয়।
নারীজাতিকে তাদের মার্যাদার
মূল্য দিয়ে বলেছেন –
স্বর্ণ-রৌপ্য
অলঙ্কারের যক্ষপুরীতে নারী
করিল
তোমায় বন্দিনী, বল, কোন্ সে অত্যাচারী?
আপনারে
আজ প্রকাশের তব নাই সেই ব্যাকুলতা,
আজ তুমি
ভীরু আড়ালে থাকিয়া নেপথ্যে কও কথা!
চোখে
চোখে আজ চাহিতে পারো না, হাতে রুলি পায়ে মল
মাথার
ঘোমটা, ছিঁড়ে ফেল নারী, ভেঙে ফেল ও শিকল!
যে-ঘোমটা
তোমা করিয়াছে ভীরু ওড়াও সে আবরণ!
দূর করে
দাস দাসীর চিহ্ন ঐ যত আভরণ!
সাম্যের
গান গাই
আমার
চক্ষে পুরুষ রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।
বিশ্বের
যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক
তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
…………………………….
সেদিন
সুদূর নয়-
যেদিন
ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীরও জয়।
নারীজাগরণের
অগ্নিমন্ত্র রচয়িতা কবি
মেলি
শতদিকে শত লেলিহান বসনা
জাগো
বহ্নিশিখা স্বাহা দিগ্ বসনা।
কুলি-মজুর
সর্বহারা শ্রেণীর কবি
দেখিনু
সেদিন রেলে
কুলি বলে
এক বাবুসাব তারে ঠেলে দিল নিচে ফেলে।
চোখ ফেটে
এল জল
এমনি করে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে
দুর্বল!
—
আসিতেছে শুভদিন
দিনে
দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ।
কৃষকের
মুক্তির কবি
ওঠ্ রে চাষী
জগদ্বাসী র্ধ কষে রাঙল!
. জেলেদের
মুক্তির কবি
আমরা
নিচে পড়ে রইব না আর
শোন্ রে
ও ভাই জেলে
এবার উঠব
সব ঠেলে।
গণ
মানুষের মুক্তির কবি ও মুখপাত্র
গাহি তাহাদের গান
ধরণীর
হাতে দিল যারা আনি ফসলের ফরমান।
শ্রম-কিণাঙ্ক
কঠিন যাদের নির্দয় মুঠিতলে
ত্রস্তা
ধরণী নজরানা দেয় ডালি ভরে ফুলে ফুলে।
বন্য-
শ্বাপদ-সঙ্কুল জরা-মৃত্যু-ভীষণা ধরা
যাদের
শাসনে হল সুন্দর কুসুমিতা মনোহারা।
জনগণের শক্তির পক্ষের অর্থাৎ
গণতন্ত্রের কবি
এ আশা
মোদের দুরশাও নয়, সেদিন সুদূর নয়
সমবেত রাজ-কণ্ঠে
যেদিন শুনিব প্রজার জয়।
গাহি সাম্যের গান
যেখানে
আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান,
যেখানে
মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম খ্রীশ্চান।
কে তুমি?—পার্সি? জৈন ? ইহুদী? সাঁওতাল ভীল, গারো?
কনফুসিয়াস? চার্বাক-চেলা? বলে যাও, বল আরো!
বন্ধু, যা খুশি হও,
পেটে-পিঠে
কাঁধে-মগজে যা-খুশি পুঁথি ও কেতাব বও,
কোরান-পুরাণ-বেদ-বেদান্ত-বাইবলে-ত্রিপিটক-
জেন্দাবেস্তা-গ্রন্থ-সাহেব পড়ে যাও যত সখ,–
কিন্তু কেন
এ পণ্ড শ্রম, মগজে হানিছ
শূল?
দোকানে কেন
এ দর কষাকষি?— পথে ফোটে তাজা ফুল!
—
মিথ্যা
শুনিনি ভাই
এই হৃদয়ের
চেয়ে বড়ো কোনো মন্দির-কাবা নাই।
কাজী
নজরুল ইসলাম সকল মানুষের স্বাধীনতার কবি
মহাবিদ্রোহী
রণক্লান্ত
আমি সেইদিন
হব শান্ত,
যবে
উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর
খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না,
বিদ্রোহী
রণক্লান্ত
আমি সেইদিন
হব শান্ত।.....
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন