ইতিহাস , ধর্মজ রাষ্ট্র ও মানুষের জীবনযাপন প্রসঙ্গে ;
কোনো সমাজে তাদের শত বা হাজার বছরের ইতিহাস
ও ঐতিহ্যের পরিবর্তে কোনো
নতুন দর্শনের প্রতিস্থাপন
করতে হলে প্রথমেই
সে জাতির পুরাতন
ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধবংস করে ফেলতে হয় ৷ সে কাজ করতে হলে প্রথমে সে জাতির মনোজগতের
পরিবর্তনের কাজ বিভিন্ন
কৌশলপূর্ণ উপায়ে করা আরম্ভ করতে হয় এবং
পরে সে দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে হয় ৷ ঐ
নতুন দর্শন জনমানুষের
উপর চাপিয়ে দিতে ৷ ইতিহাসে এরকম অনেক দৃষ্টান্ত
পাওয়া যায় ৷ মানুষের চিন্তার
রাজ্যের পরিবর্তনের জন্য দরকার হয় মানুষের সুস্থ্য ও স্বাধীন চিন্তা
চেতনার পথে প্রতিবন্ধকতা
স্থাপন করার বিভিন্ন
পদক্ষেপ গ্রহণ করা ৷ আর
প্রয়োজন হয় সে জাতির পুরাতন
ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে এবং প্রচলিত সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে ফেলা ৷ আরবে আই এস যুদ্ধারা বা আফগান্স্তানে তালেবানরা
যা সফলভাবে করতে পেরেছে বিশ্ব বিবেকের কোনো প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ ছাড়াই ৷ এক্ষেত্রে ধর্মের
ব্যবহার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট
পন্থা বলে সারা বিশ্বে এখন প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে ৷ যা
বর্তমানে আরববিশ্ব সহ বিভিন্ন মুসলিম
দেশে এর পৃর্ণাঙ্গ প্রয়োগ
আরম্ভ হয়েছে বা হচ্ছে ৷
বাংলাদেশে বর্তমানে ধর্মজ ও জঙ্গী হিসেবে পরিচিত রাজনৈতিক দলগুলো
দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে (ক্ষমতাশীন দল সহ ) অত্যান্ত সুকৌশলে এবং ধর্মের নামে ব্যবহার
করে যে
ভূমিকা পালন করছে তা বিশ্লেষণ
করে শংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত
হয়ে বলতে চাচ্ছেন
যে , আসলে বাংলাদেশের
ধর্মজ রাজনৈতিক দলগুলো আসলে ধর্মের আড়ালে বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে নতুন এক ধর্মবিশ্বাসের
দর্শন প্রতিস্থাপনের কাজ আরম্ভ করছে ৷
যে ওয়াহাবী ইসলামী
দর্শন একসময়ে বাংলাদেশে
পরিত্যক্ত হয়েছিল ব্রিটিশদের
দেওবন্দ ওয়াহাবী মাদ্রাসা
প্রতিষ্ঠার পরেও ৷বর্তমানে বাংলাদেশে
সে ধর্মীয়ধারার প্রতিষ্ঠার
কাজ আরম্ভ করা হয়েছে অত্যান্ত সফলভাবেই ৷
বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যক্তির আর্থিক উন্নতিকে সামনে নিয়ে আসা
হয়েছে প্রায় সব ক্ষেত্রেই ৷ যেখানে বাঙ্গালীর ইতিহাস
বা ঐতিহ্যের এমনকি সাংস্কৃতির ও আদর্শের কোনো স্থান
রাখা হয় নি ৷ তাই
ধীরে ধীরে আর্থিক
উন্নতিকে রাষ্ট্রের মূলকেন্দ্রে
নিয়ে আসায় জনগণও তাদের আর্থিক নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠা
করতে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে বিভিন্ন কার্যক্রম
চালাতে গিয়ে একপর্যায়ে
ধর্মকেও রাষ্ট্রের কেন্দ্রে
প্রতিস্থাপনের কাজ আরম্ভ করে
দিয়েছে ৷ এক্ষেত্র মানিলন্ডারিং ও রাষ্ট্রীয় আর্থিক দুর্নীতি ও রাষ্ট্রের বিচারহীনতার
কালচার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করছে ৷ তাই
বোধহয় ক্ষমতাশীনরা সহ সকল ধর্মজ এবং নিরপেক্ষ পরিচয়ে আগ্রহী সকল রাজনৈতিক
দলগুলো এই কাজে মাঠে নেমে পড়েছেন
নিজেদের আর্থিক উন্নতি সাধন করতে কোনো বিচার বিশ্লেষণ না করেই ৷
প্রথমে ইহা প্রতিষ্ঠা করতে যে
কাজটি করা আরম্ভ হয়েছে তা হচ্ছে বর্তমানে
স্কুল , কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ পাঠ্যক্রম
থেকে ইতিহাস নামক বিষয়টিকে বাদ দেয়া হয়েছে অত্যান্ত পরিকল্পিত উপায়ে ৷ এই কাজটি প্রথমে ধর্মজ রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে আরম্ভ করলেও বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ নামধারীরাও এর মধ্যেই ঘোর পাঁক
খাচ্ছেন এখনও ৷ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ধর্মীয় ধারায় বিশ্বাসী ধর্মজ রাজনৈতিক
দলগুলো বাঙালীর প্রচলিত
শিক্ষা ও সংস্কৃতি এবং ইতিহিস ও ঐতিহ্যকে পরিত্যাগ
করে ধর্মের নামে মানুষের আত্মার শান্তি প্রতিষ্ঠা করার নামে
ধর্মের মনোস্তাত্তিকতাকে রাষ্ট্রের
কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠার পথ বেঁচে নিয়েছে ৷ একসময়ে যা সমাজের সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে দেয়া হবে এই উদ্দেশ্যেই
তারা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করারও সুযোগ
তৈরি করে নিতে সফল হয়েছে ৷ তাই এখন সমাজের
সকলস্তরেই মানুষের দূষ্টি ফিরিয়ে
নেয়া হচ্ছে পরোলৌকিকতার দিকে সুপরিকল্পিতভাবে ৷ তাই সহজ পন্থায় এখন অনেকেই স্বর্গপ্রাপ্তির আশায় শহীদের পথ বেঁচে নিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে , এতে নিজের প্রাণ ত্যাগ
করতে হলেও আপত্তি নেই অনেক বিশ্বাসীদের ৷
কিত্তু এই কাজটি সহজে সম্পূর্ণ করতে হলে ধর্মকে রাষ্ট্রীয় পরিচালনার কেন্দ্রে
নিয়ে আসতে হবে ৷ যেমন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার
পূর্বে দ্বীজাতিতত্তের একটি আদর্শ জনগণের সামনে নিয়ে আসা হয়েছিল
৷ যে ধারার ধারাবাহিকতায় এখন পাকিস্তান
নামক রাষ্ট্রটি পরিচালিত হচ্ছে ৷ ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা
অর্জন সম্ভব না হলে বাংলাদেশে এখনও পাকিস্তানী ধারায়ই পরিচালিত
হত ৷ এখন আবার ধর্মজ রাজনৈতিক দলগুলো বাংলাদেশকে
ধর্মের নামে পাকিস্তানী ধারায় ফিরিয়ে নিতে সব ধরনের প্রচেষ্টা নিচ্ছে ৷
তাই এখন বাঙালী সংস্কৃতিকে পরিহার
করে ধর্মকে রাষ্ট্রের এবং জাতির সংস্কৃতির কেন্দ্র প্রতিস্থাপন করতে হবে
৷ আর এই কাজটি সবার অলক্ষে বোধহয় সমাপ্তের
পথে এখন ! তাই আলহামদুলিল্লা জাতিয় শব্দ শিক্ষিত ও কমশিক্ষিত এবং মাদ্রাসার
ছাত্র ছাড়াও অন্যপ্রতিষ্ঠানের পড়ুয়াদের মূখে শোভা পাচ্ছে হরদম ৷
এখন শুধু ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মান্ধতাকে সম্রাজ্যবাদীশক্তির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে ৷ একাজে ও অগ্রগতি হচ্ছে ৷ যে বাংলাদেশে
একসময় ওয়হাবী বলে কিছু লোককে গাল দেয়া হত ৷ সে ওয়াহাবীরাই একন সমাজের সকল স্তরে বিরাজমান
হয়ে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে অর্থের জোরে ৷
ডেনিয়েল পাইপস * নামক একজন ইতিহাসবিদ
‘ ইন দি পাথ অব গড : ইসলাম এ্যান্ড পলিটিক্যাল
পাওয়ার’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ
করেছেন ৷ এই বইটিতে তিনি দেখেয়েছেন
যে , ধর্মান্ধতা জ্ঞানের সহায়ক নয়
, ধর্মান্ধতা জঙ্গীবাদী হস্তক্ষেপমূলক
রাষ্ট্রের সাহায্যে কাজ করে থাকে ৷ তাই
ধর্মান্ধতার সর্বাধিক প্রয়াস
হচ্ছে বর্তমান পাকিস্তান , ভারত এবং বাংলাদেশকে যে কোনো
জনকল্যাণের কাজ থেকে সরিয়ে আনা , যে
কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে হলেও ৷ এ ক্ষেত্রে ধর্মের ব্যবহার তো যে ভাবে
প্রয়োজন সে ভাবেই করতে হবে এবং করাও হচ্ছে ৷
এই ধর্ম সঠিক না বেঠিক সে প্রশ্ন এখানে অবান্তর ৷ ডেনিয়েল ধর্ম সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বলেছেন যে , যে কোনো ধর্ম সে ইসলাম হউক কিংবা খ্রীস্টান হউক কিংবা ইহুদী আথবা হিন্দু
ধর্মই হোক না কেন , সব ধর্মের মধ্যেই
একটা অধস্তনতার বোধ আছে , সমাজকে অনগ্রসরতার দিকে ঠেলে
দেয়ার একটা প্রচেষ্টা সব সময়ই পরিলক্ষিত
হয় ৷ যদিও বলা হয় ধর্ম তো একটি সাধারন ব্যাপার ৷ কিত্তু বাস্তবে ধর্ম ও ধর্মান্ধতা একে অপরের পরিপূরক ৷ তাই ধর্মকে ডেনিয়াল পাইপ একটি বিপজ্জনক
বিজনেস বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন
ধর্ম আসলে একটি রাজনৈতিক আন্দোলন , যে আন্দোলন বিশ্বজোড়া লিবারেলিজমের ক্ষেত্রে
হস্তক্ষেপ করে চলেছে , মানবজাতির দীর্ঘদিনের
প্রচলিত সভ্যতাকে এলোমেলো
করে দিচ্ছে , ফ্যানাটিসিজম এবং ইনসারেকশনকে পৃথিবীর সর্বত্র ছডিয়ে
দিচ্ছে ৷মানুষকে খুন করে মানুষের মনে ভয়ের সৃষ্টি করা হচ্ছে ৷ তাই ধর্মের নামে মানুষ খুন করা
যেমন সহজ হয়ে গেছে , তেমনি মানুষের
মনে হত্যার সঙ্গে ভয়ও যুক্ত হয়ে গেছে এখন ৷
তবে কি ভয়ের জন্যে মানুষ নিজকে ধর্ম বিশ্বাস থেকে ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করা আরম্ভ
করবে ! সর্বশেষে তিনি বলেছেন ভবিষ্যতে
সে যাই হউক না কেন , ধর্মজ উৎসাহের
বিপরিত পিঠ হচ্ছে মৌলবাদ
৷ আর মৌলবাদ দেশে দেশে নাকি ঘোষণা দিয়ে
প্রচার করছে , যার সহজ অর্থ হচ্ছে বর্তমানে মৌলবাদই মানবতার একমাত্র শত্রু ৷
নভেল বিজয়ী গুন্টার গ্রাস বলেছেন যে , মানুষ প্রত্যহ এবং রোজ তার স্বাভাবিক
জীবনযাপনের মধ্যে দিয়েই প্রকৃত সত্যে
উপনিত হয় ৷তাই মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন ধর্মের চেয়ে বড় এবং অনুকরণীয়
৷ফলে মানুষ জীবনযাপন করেই প্রমান করে জীবন ধর্মের চেয়েও অনেক বড় ৷
ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় যে ঐতিহাসিক বিজ্ঞানগুলো মানবিকতার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে ৷তাই ইতিহাস ও বিজ্ঞান সব সময়েই সেক্যুলারিজমের পক্ষে কাজ করেছে ৷ তাই ইতিহাসের কাছে সভ্য মানুষের একটা কমিটমেন্ট সব সময় থেকেই যায় ৷তাই একজন মানুষকে অবশ্যই জ্ঞানের ক্ষেত্রে সাহসের সঙ্গে প্রবেশ করতে হবে ৷ প্রয়োজনে রাজনীতিতেও প্রবেশ করতে হবে জাতিকে রক্ষা করতে ৷ ভয়কে জয় করেই এসব কাজ করতে হবে ৷ ভিকো (*) বলেছেন
'মানুষ নিজেদের ইতিহাস তৈরি করে ৷ আর এই উপলব্ধী বা এই বোধই হচ্ছে সকল ইতিহাসভিত্তিক জ্ঞানের কেন্দ্র : একে অস্বীকার করলে সমাজে ঠিকে থাকা যাবে না '৷
ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় যে ঐতিহাসিক বিজ্ঞানগুলো মানবিকতার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে ৷তাই ইতিহাস ও বিজ্ঞান সব সময়েই সেক্যুলারিজমের পক্ষে কাজ করেছে ৷ তাই ইতিহাসের কাছে সভ্য মানুষের একটা কমিটমেন্ট সব সময় থেকেই যায় ৷তাই একজন মানুষকে অবশ্যই জ্ঞানের ক্ষেত্রে সাহসের সঙ্গে প্রবেশ করতে হবে ৷ প্রয়োজনে রাজনীতিতেও প্রবেশ করতে হবে জাতিকে রক্ষা করতে ৷ ভয়কে জয় করেই এসব কাজ করতে হবে ৷ ভিকো (*) বলেছেন
'মানুষ নিজেদের ইতিহাস তৈরি করে ৷ আর এই উপলব্ধী বা এই বোধই হচ্ছে সকল ইতিহাসভিত্তিক জ্ঞানের কেন্দ্র : একে অস্বীকার করলে সমাজে ঠিকে থাকা যাবে না '৷
প্রত্যেক সমাজের বুদ্ধিজীবীদের সমাজের প্রতি একটি কমিটমেন্ট থাকে ৷ তাই বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান থেকে সঠিক পথে দেশ ও জাতিকে ফিরিয়ে আনতে হলে তাদের গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা অবশ্যই পালন করতে হবে এখন ৷
( * )
*
Vaiko | |
---|---|
Born | V Gopalsamy 22 May 1944 Kalingapatty, Sankarankovil,India |
Nationality | Indian |
Occupation | Politician |
Political party | MDMK |
Religion | Rationalist[1] |
*
‘ Daniel
Pipes (born
September 9, 1949) is an American historian, writer, and political
commentator. He is the president of the Middle East
Forum, and publisher of itsMiddle East Quarterly journal. His writing focuses on the
American foreign policy and the Middle East. He is also an Expert at Wikistrat.
After
graduating with a PhD from Harvard and studying abroad, Pipes taught at a
number of universities. He then served as director of the Foreign Policy Research Institute,
before founding the Middle East Forum. His 2003 nomination by U.S. President George W. Bush to the board of directors of the U.S. Institute of Peace was protested by Islamists, Arab-American groups, and Democratic leaders, who cited his oft-stated
belief that victory is the most effective way to terminate conflict.[2][3] The Bush administration sidestepped the
opposition with a recess appointment.
Pipes
has written a dozen books, and served as an adviser to Rudolph Giuliani's 2008 presidential campaign. He was in 2008–11 the Taube
Distinguished Visiting Fellow at Stanford University's Hoover Institution.
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন