ইসলাম ধর্মের কোন শাখাটির মধ্যের কোন উপশাখাটিকে অনুসরন করা উচিত ?



       সৌজন্য ;   শাহিনুর রহমান শাহিন এবং  আমার  ব্লগ ডট কম

        লেখাটির  আগের  একটি প্রসঙ্গকথা ; 

     (  জীবনের শেষপ্রান্তে এসে রবীন্দ্রনাথ তাঁর মানবধর্ম মতবাদ সম্পর্কে মোহাবিষ্ট হয়ে পড়েন।
ফলে কলকতায় অনুষ্ঠিত ১৯৩৭ সালের ৩ মার্চ বিশ্বধর্ম সম্মেলনের তৃতীয় দিনের অধিবেশনের সভাপতি হিসেবে জ্ঞানগর্ভ ভাষণে তিনি বলেন-
“সমগ্র মানবজাতির একটিমাত্র ধর্ম থাকবে, একই বিশ্বজনীন পদ্ধতিতে সকলে উপাসনা করবে এবং একই আদর্শে সকলের ধর্ম পিপাসা তৃপ্তি লাভ করবে, আমি এমন কথা বলি না। যে রূঢ় সাম্প্রদায়িক মন বিনা কারণে নামমাত্র কারণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, সূক্ষ্ম বা স্থূলভাবে অত্যাচার করে, তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে যে, কবিতার ন্যায় ধর্মও কোনও আদর্শবাদ নয়, উহা অভিব্যক্তি মাত্র। সৃষ্টির বিচিত্রতার মধ্যেই ঈশ্বরের বহুমুখীন আত্মপ্রকাশ; অনন্ত সম্পর্কে আমাদের আদর্শও তদ্রুপ ব্যক্তিত্বের নিরবচ্ছিন্ন এবং অনমনীয় বিচিত্রতার মধ্যেই প্রকাশ করতে হবে। কোনও ধর্ম যখন সমগ্র মানবজাতির উপর তার শিক্ষা চাপিয়ে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে, তখন উহা আর ধর্ম থাকে না,
তখন উহা হয়ে পড়ে স্বৈরাচার, ইহাও একপ্রকার সাম্রাজ্যবাদ। অধিকাংশ স্থানেই এ জন্যই দেখতে পাই, পৃথিবীর ধর্মজগতেও চলছে ফ্যাসিজমের তাণ্ডব, অনুভূতিবিহীন পদভারে উহা মানবাত্মাকে দলিত-মথিত করছে।”
( সূত্র; ব্লগ লেখন মি: বীরেন্দ্রের বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন এবং কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়ে একটি লেখার অংশ )
কবির দীর্ঘদিন আগের বাস্তব অভিজ্ঞতার উপলব্দির বাস্তবতা এখন আরো যে বেশী সত্য তা বলার অপেক্ষারাখে না ৷ তাই কথাটি নতুনভাবে এখন বোধহয় আমাদের সকলের মনে রেখে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া আবশ্যিক ! )
            
   মূল  লেখা -


   
           ইসলাম ধর্মের  কোন শাখাটির মধ্যে কোন উপশাখাটিকে অনুসরন করা উচিত ? যেখানে এক শাখা  বা উপশাখা নিজেদের ব্যতিরেকে  অপর শাখা বা উপশাখা গ্রহণকারীদের  পথভ্রষ্ট বলে ভাবে এবং ঘৃনা করে!

              বর্তমানে  প্রচলিত ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা সমূহের নাম ও তাদের চিন্তা-ধারা প্রসঙ্গে কিছু  তথ্যাদি ;



                                 ইসলামের বৃহত্তম শাখা সুন্নি 

                             এর  আবার  অসংখ্য উপশাখা রয়েছে।

                                  এদের মধ্যে প্রধান উপশাখাসমূহ হলো-


     এক,

          হানাফি উপশাখা;

               এদেরকে সবচেয়ে বেশী দেখা যায় আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায়। এদের ধর্ম পালনের রীতি-নীতি সম্পর্কে আমাদের সবার কমবেশী ধারনা রয়েছে। তাই সেগুলো আলাদা করে উল্লেখ করছি না। এখন এরা মোটামুটি বেরেলভি, দেওবন্দি, ইলিয়াসি জামাত, মওদুদি জামাত প্রভৃতি আকিদায় বিভক্ত হয়ে গেছে।


          বেরেলভি বা বালাকোটি সুন্নিগণ

              শুরুতে ওহাবি মতবাদের অনুসারি হলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন ইসলামি ব্যক্তিত্বকে, যেমন মাওলানা সৈয়দ আহমদ বেরেলভি, মাওলানা কেরামত আলী জৌনপুরী প্রভৃতি মৌলবিকে আল্লাহর মতো আলিমুল গায়েব বা অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞানী বলে বিবেচনা করে এবং এদেরই আদেশ-নির্দেশের অন্ধ অনুকরণ করতে থাকে। এরা বিখ্যাত দারুল হারবতত্ত্বের স্রষ্টা। দেওবন্দিগণ ও আহলে হাদিসগণ এদেরকে কাফের হিশেবে আখ্যায়িত করেছে। এমনকি এদের সাথে মেলামেশা করা কিংবা সৌহার্দ্র প্রকাশের বিরুদ্ধেও ফতোয়া জারি করেছে।


              মাওলানা কাসেম নানতুবি আরো কয়েকজনের সহযোগিতায় ভারতের উত্তর প্রদেশে দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এই মাদ্রাসা থেকে যে ইসলামের জন্ম হয়, তা দেওবন্দি ইসলামনামে পরিচিত।

              আমাদের দেশের অধিকাংশ ক্বওমি মাদ্রাসা এদের নেতৃত্ব মেনে চলে। আমাদের দেশে জঙ্গিবাদ মূলত এদের হাত ধরেই সৃষ্টি হয়েছে।


                ইলিয়াসি তাবলিগ জামাত

              চিল্লার দ্বারা প্রচারকেই ইসলামের মূল লক্ষ্য বলে মনে করে। এরা ছয় উশুলে আস্থা রাখে এবং বলে যে, ভালো করে দোয়া-দরুদ পাঠ, নামাজ-রোজা পালন ও বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌছে দেয়াই মুসলমানদের ধর্মীয় কাজ।


                   মওদুদি জামাত

              রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা দখলকে ভাবে তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় দায়িত্ব। আমাদের দেশের জামাতে ইসলামির কর্মকাণ্ড হচ্ছে মওদুদি জামাতের চিন্তা-ধারার স্পষ্ট প্রতিফলন। এরা নামাজ-রোজা-হজ্জ্ব-যাকাতকে সাধারন ট্রেনিং কোর্স মনে করে, যা মূলত ঈমানকে মজবুত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে সহায়ক হয়। অন্যান্য সুন্নীগণ এদের পেছনে নামাজ আদায় করাকে মাকরুহে তাহরিমি বলে ঘোষণা দিয়েছে।


          বেরেলভি-দেওবন্দি-ইলিয়াসি জামাত ও মওদুদি জামাত প্রমুখ ইসলামের একই শাখার একই উপশাখার অন্তভূর্ক্ত।

               কিন্তু এরা কেউ কাউকে সঠিক মনে করে না, সহ্য করতে পারে না।


     দুই,

                 শাফেয়ি উপশাখা;

              মূলত ফিলিস্তিন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, জর্দান, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সোমালিয়া, কুর্দিস্তানের অধিকাংশ এবং সৌদি আরব, ইয়েমেন ও মিসরের কিছু অংশের মুসলমানগণ ইমাম শাফেয়ি'র অনুসারি। এরা হানাফিদের থেকে ভিন্ন ভাবে নামাজ-রোজা পালন করে থাকে। শাফেয়ি ও হানাফি মাযহাবের রক্তাক্ত দ্বন্দ্বে ইসলামের ইতিহাস পরিপূর্ণ।
এদের মতে, মেয়েদের বিয়ের সময় অভিভাবককে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে, দাড়ি কেটে ফেলা জায়েজ, দাবা খেলা না জায়েজ ইত্যাদি।


      তিন,

                     মালেকি উপশাখা;

                 উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকা, আরব আমিরাত, কুয়েত এবং সৌদি আরব ও মিসরের একাংশের মুসলমানগণ মালেকি মাযহাব মেনে চলে। এরাও অন্য সবার থেকে আলাদা হয়ে নিজেদের মতো করে ধর্ম-কর্ম পালন করে।

               এদের মতে, একজনের হজ্জ অন্যজন প্রক্সি দিতে পারবে না, দীর্ঘশ্বাস ফেললে নামাজ ভেঙ্গে যাবে, কাকের মাংস খাওয়া জায়েজ, মিসওয়াক করা জায়েজ নয়, শুক্রবারে রোজা রাখতে হবে ইত্যাদি।

     চার,

               হাম্বলি উপশাখা;

               সৌদি আরবের অধিকাংশ মানুষ এই মাযহাবের অনুসারি। সৌদি আরব ছাড়াও কাতারের অধিকাংশ এবং সিরিয়া ও ইরাকের কিছু মুসলমান এই মাযহাব অনুসরন করে থাকে। অন্যদের মতো এদেরও নিজস্ব নিয়ম রয়েছে।

                   এদের মতে, ওজু নিয়ে সামান্যতম সন্দেহ হলে বা মাংস খেলে ওজু ভেঙ্গে যাবে, সামান্য রক্ত বের হলে রোজা ভেঙ্গে যাবে, নগদ টাকায় যাকাত দেয়া যাবে না, এজিদ ছিল ন্যায়ের পক্ষে ও ইমাম হোসাইন ছিল অন্যায়ের পক্ষে ইত্যাদি।


             হানাফি-
            শাফেয়ি-
            মালেকি
          ও হাম্বলি
হচ্ছে ইসলামের বিখ্যাত চার মাযহাব।

            বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এরা  নবী মুহাম্মদ (সঃ)  কে পাশ কাটিয়ে তার সাহাবাদের উক্তি ও কাজ-কর্মকে শরিয়া সম্মত দলিল হিশেবে গ্রহণ করে।

          এতদসত্ত্বেও এদের মধ্যে প্রচুর দ্বন্দ্ব বিরাজমান। এদের কেউ একটি বিষয়কে ফরজ বা আবশ্যক বলে মনে করলে অন্যজন মনে করে মুস্তাহাব এবং অন্য আরেকজন মনে করে হারাম!

          এধরনের মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ দ্বন্দ্বের ফলে অতীতে প্রত্যেকের জন্য একই স্থানে আলাদা আলাদা মসজিদ নির্মান করতে হয়েছিল।

              এমনকি,

              এক মাযহাব অন্য মাযহাবে বিয়ে করা হারাম বলে ফতোয়া জারি করেছিল। এখন প্রত্যেককে সমানভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে বলে দ্বন্দ্ব কিছুটা কমে গেছে।

        পাঁচ,

             ওহাবি বা সালাফি উপশাখা;

                        সৌদি রাজপরিবারের সদস্যগণ এসব মতবাদ পালন করে থাকে। এরা কোরান-হাদিস ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ইসলামের প্রথম দিকের আলেমগণ তথা সাহাবি, তাবেঈ ও তাবে তাবেঈগণের অনুসরন করে। এরা সুফিবাদের সম্পূর্ণ বিরোধী। এরা আল্লাহকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সহকারে সশরীরে অস্তিত্বশীল মনে করে, যিনি আকাশের অনেক উপরে অবস্থান করছেন।

                 নবী   মুহাম্মদ (সঃ) র জন্মদিন পালন করা  ,   তার বিষয়ে কোন স্মরণসভার আয়োজন করা কিংবা তার কবর জেয়ারত করাকে এরা শিরক ও হারাম মনে করে। মক্কা ও মদিনার সকল সাহাবার কবর ভেঙ্গে-চুরে এরা সমতল করে দিয়েছে।

          অতিরিক্ত প্রতিটি ধর্মীয় কাজকেই এরা ভাবে বিদ'আত। তারা নবীগণকেও নিষ্পাপ বলে মনে করে না।


       ছয়,

             আহলে হাদিস উপশাখা;

                        এই মতবাদের জন্ম ভারতীয় উপমহাদেশে। এরা সুনির্দিষ্ট ভাবে কোন মাযহাব অনুসরন করে না। মাযহাব অনুসরন করাকে এরা শিরক বা অমার্জনীয় অপরাধ হিশেবে চিহ্নিত করে থাকে।

               অর্থাৎ, এদের চোখে হানাফি-মালেকি-শাফেয়ি-হাম্বলিগণ মুশরিক

              এরা মনে করে, যারা নামাজ পড়ে না, তারা কাফির এবং তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে। দেওবন্দি ও বেরেলভি আলেমগণ এদেরকে কাফের ঘোষণা করেছে।


         সাত,

              জাহিরি উপশাখা;

                        সুদান, মরক্কো ও পাকিস্তানের বেশকিছু মানুষ এই মাযহাব অনুযায়ী ধর্ম-কর্ম করে। আগে অনেক মানুষ এর অনুসারী ছিল। এখন দিনে দিনে এটি দূর্বল হয়ে পড়ছে। এদের সাথে আহলে হাদিস মতাদর্শের অনেক মিল পরিলক্ষিত হয়।


                                  ইসলামের দ্বিতীয় বৃহত্তম শাখা শিয়া।

                                      শিয়াদের মধ্যেও রয়েছে অনেকগুলো উপশাখা।

                চিন্তা-ভাবনা ও কর্মপদ্ধতির দিক থেকে এই উপশাখাগুলোও পরস্পর থেকে আলাদা।


          এক,

           ইশনা আশারিয়া বা জাফরিয়া উপশাখা;

                   ইরাক, ইরান, আজারবাইজান, লেবানন ও বাহরাইনের অধিকাংশ মানুষ এর অনুসারি। এছাড়া পাকিস্তান, আফগানিস্তান, কুয়েত ও আলবেনিয়ার অনেক মানুষ ইশনা আশারিয়া শিয়া।
এদের ধারনা, মুহম্মদের মৃত্যুর পর হযরত আলী হচ্ছেন মুসলমানদের নেতা বা ইমাম। সাহাবাগণ হযরত আলীকে ইমাম না বানিয়ে আবুবকর-ওমর-উসমানকে খলিফা বানিয়েছে, যা আল্লাহর আদেশের সরাসরি লঙ্ঘন।

                     তারা অধিকাংশ সাহাবিকে মুনাফিক মনে করে এবং খুতবায় নিয়মিত গালিগালাজ করে। তারা বিশ্বাস করে বারো ইমামতে, যা মুহম্মদ (সঃ) থেকে শুরু করে আলীর বংশধর ইমাম মাহদির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। এই ইমামগণের মর্যাদা নবী-রাসুলদের চেয়ে বেশী।


                             ইশনা আশারিয়াদের কিছু কর্মকাণ্ড অদ্ভূত। এরা মুতা বিবাহ বা পতিতাবৃত্তিকে জায়েজ মনে করে, তিনবারে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, হজ্জ্বের চেয়ে হযরত আলীর মাজার দর্শনকে অধিক পূণ্যের বলে বিবেচনা করে। এদের নিজস্ব হাদিস আছে। বোখারি, মুসলিম প্রমুখ হাদিসগ্রন্থে এরা আস্থা রাখে না।


            দুই,

              জাইদিয়া উপশাখা;

                      ইয়েমেনের অর্ধেক মানুষ এই মতাদর্শের শিয়া। বহুল আলোচিত হুথিগণ এদের মধ্যে অন্যতম। শিয়াদের মধ্যে এরা সবচেয়ে প্রাচীন। আগে এদের রমরমা অবস্থা থাকলেও ১৯৬২ সালে ইমামত লোপের পরে তারা বেকায়দায় পড়েছে।

           অনেক শতাব্দী আগে ইমাম নির্বাচনের প্রশ্নে মতানৈক্য হওয়ায় অন্য একদল শিয়া আলাদা হয়ে ইশনা আশারিয়া সম্প্রদায়ের সৃষ্টি করে। এরা বিশ্বাস করে মুহাম্মদ আল বাকিরের ইমামতে, আর জাইদিয়া শিয়াগণ জাইদ ইবনে আলীর ইমামতে বিশ্বাস করতে শুরু করে। এরা ইমাম হোসাইন পর্যন্ত আধ্যাত্নিকতায় বিশ্বাস করে, তারপরের ইমামগণের স্বর্গীয় আধ্যাত্নিকতায় বিশ্বাস করে না।

         তিন,

                    ইসমাঈলিয়া উপশাখা;

                       এরা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ভারত, চীন, মধ্য এশিয়া ও ইউরোপে এদের দেখা মেলে। এরা বলে, ইসলামের সপ্তম ইমাম হচ্ছেন ইসমাঈল ইবনে জাফর। অন্যদিকে জাফরিয়া শিয়াগণ বলে, সপ্তম ইমাম মুসা ইবনে কাজিম। এত্থেকে দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে শিয়াদের এই নতুন উপশাখা যাত্রা শুরু করে।

                এদের বিশ্বাস হলো, আধ্যাত্নিকতা  নবী মুহাম্মদ (সঃ) হতে হয়রত আলী এবং তার থেকে বংশানুক্রমে প্রবাহিত হতে হতে বর্তমান পর্যন্ত চলে এসেছে। এই স্বর্গীয় আধ্যাত্নিকতা এখন অবস্থান করছে তাদের বর্তমান ইমাম প্রিন্স করিম আগা খানের শরীরে।

            আগা খান তাদের ৪৯তম ইমাম। কোন পাপ বা ভুল তাকে স্পর্শ করতে পারে না। প্রতিটি ইসমাঈলিয়াকে তাদের আয়ের বারো ভাগের এক ভাগ ইমাম আগা খানের ভাণ্ডারে প্রদান করতে হয়। অধঃস্তনদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থে ফুলে-ফেপে ওঠা এই সম্পদশালী ব্যক্তিকে প্রায়ই খবরে দেখা যায়।
                  বর্তমানে ঈসমাইলিয়া শিয়াগণ নিজারি, হাফিজি, তাইয়াবি প্রভৃতি বিভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে।

           চার,

                 আলাভি বা নুসাইরি বা আনসারি উপশাখা;

                          ক্ষমতাসীন সরকারসহ সিরিয়া ও তুরস্কের বেশকিছু মুসলমান আলাভি শিয়া। এরা মূলত ইশনা আশারিয়া থেকে এসেছে। এরা মনে করে, আল্লাহ অনেকবার মানুষের রূপ ধরে পৃথিবীতে আগমন করেছেন। এমনকি নবী মুহাম্মদ (সাঃ), হযরত আলী ও সালমান ফার্সি'র বেশ ধরেও তিনি পৃথিবীতে এসেছেন। অর্থাৎ নবী মুহম্মদ (সঃ) , সালমান ফার্সি ও হযরত আলী ছিলেন মূলত আল্লাহ। তারা পূনর্জন্মে বিশ্বাস করে।


                           ইসলামের তৃতীয় বৃহত্তম শাখা

                         আহমদিয়া।

                   অনেকের কাছে এরা কাদিয়ানি নামে পরিচিত।

               প্রথমদিকে তারা হানাফিদের একটি উপশাখা ছিল। পরবর্তীতে হানাফিদের চিন্তা-ধারা পরিত্যাগ করে এরা নতুন মতবাদ সৃষ্টি করে। আমাদের উপমহাদেশে অসংখ্য আহমদিয়া মুসলমান বসবাস করে।

           এরাও মোটামুটি দুভাগে বিভক্ত।


              এক,

                   আহমদিয়া আঞ্জুমান ইশাত ই ইসলাম উপশাখা;

              এদের মতে, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা মির্জা গোলাম আহমেদ কাদিয়ানি হচ্ছেন প্রতিশ্রুত মসিহ, ইমাম মাহদি ও যীশু খ্রিস্ট। তবে তিনি নবী নন। তারা মনে করে, যীশু খ্রিস্ট ক্রুশবিদ্ধ অবস্থা থেকে পালিয়ে এসে কাশ্মীরে বসবাস করতে শুরু করেন। তিনি এখানেই মারা যান। তার কবর কাশ্মীরের উয আসাফে। এখন তিনি বেহেশতে আছেন। নতুন যীশু যিনি এসেছেন, তিনি শেষ নবী মুহাম্মদের উম্মত। আর তিনি হচ্ছেন মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি।


            দুই,

                    জামাতে আহমদিয়া;

                        এরা মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানিকে একজন নবী বলে দাবী করে।নবী মুহাম্মদ  (সঃ)কে  ও এরা নবী বলে মানে, তবে শেষ নবী হিশেবে স্বীকার করে না। এরা বলে, নবী মুহাম্মদ (সঃ) হচ্ছে পূর্নাঙ্গ নবী। তারপরে অনেক নবী এসেছেন, যারা পূর্ণাঙ্গ নবী নন। গোলাম আহমদ কাদিয়ানি হচ্ছেন এমনি একজন নবী।


              চতুর্থ বৃহত্তম শাখা

                    ইবাদি।

                    ওমান ও আফ্রিকার জাঞ্জিবার দ্বীপে এদের দেখা মেলে। এছাড়া আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া ও পূর্ব আফ্রিকায় এদের বসবাস রয়েছে। ধারনা করা হয়, এরা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া খারেজিদের একটি উপশাখা।


                     ইবাদিগণ খলিফা আবু বকর ও খলিফা উমরকে সঠিক বলে মানে। তবে অনেকক্ষেত্রে খলিফা আলী ও খলিফা উসমানের বিরোধিতা করে।

               শিয়াদের মতো এদের নিজস্ব ধর্মীয় নেতা বা ইমাম রয়েছে। এই ইমাম গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হন। এদের মতে, আল্লাহ কখনো দেখা দেবেন না, বিচার দিবসেও না। কোরানকে এরা সৃষ্টগ্রন্থ মনে করে, আল্লাহর কথা বলে মনে করে না।


                          ইসলামের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা সুফিজম।


              এদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা কঠিন। দেখা যায়, একেক এলাকায় একেকজন সুফি আসন গেড়ে বসেছেন। সেখানে তিনি নিজের আস্তানা তৈরী করেছেন, মানুষজনকে মুরিদ বানিয়েছেন। মুরিদগনের ধর্ম-কর্মের সবকিছু তাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। তিনি মুরিদকে যা যা করতে বলেন, যেভাবে নামাজ পড়তে বলেন, রোজা রাখতে বলেন, মুরিদগণ তাই করে। এক্ষেত্রে অনেক সুফি নিজস্ব স্বতন্ত্র নিয়ম-কানুন অনুসরন করেন। আমাদের দেশের

 শাহজালাল,

 চরমোনাই,

 দেওয়ানবাগী,

কুতুববাগী

প্রমুখ হচ্ছেন সুফিবাদের উদাহরণ।


এদের সংখ্যা অসংখ্য।

 তবে এদেরকে কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

 এগুলো হচ্ছে

 আলেভি,

বেকতাশি,

বোরহানিয়া,

 মেভলেভি,

 বালাভিয়া,

 চিশতিয়া,

 রিফাঈ,

খালবাতি,

নকশাবন্দি,

 নিমাতুল্লাহি,

কাদেরিয়া,

বোস্তামিয়া,

 সাধিলিল্লা,

 মাইজভান্ডারি,

 মোজাদ্দেদিয়া,
 কালান্ধারিয়া,

 সোহরাওয়ার্দিয়া ইত্যাদি।


       এদের বাইরেও ইসলামের অসংখ্য শাখা উপশাখা রয়েছে,

       যাদের মধ্যে দ্রুজ, বাহাই, আলাভিয়া ইত্যাদি অন্যতম।

           এছাড়াও অসংখ্য শাখা-উপশাখা সময়ের সাথে সাথে বিলুপ্ত 

হয়ে গেছে কিংবা নতুন কোন শাখায় পরিবর্তিত হয়েছে।

         যারা বিলুপ্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে

 খারেজি,

মুরজিয়া,

 মুতাজিলা,
মুশাব্বিয়া,
জাহমিয়া,
 জারারিয়াহ
, নাজ্জারিয়া,
 কালবিয়াহ
 ইত্যাদি অন্যতম।



তাহলে,

         একজন মুসলিম  কোন ধর্মের কোন শাখাটির মধ্যে কোন উপশাখাটিকে অনুসরন    করবে ?, যেখানে সমস্ত উপশাখা নিজেদের ব্যতিরেকে অন্যদের পথভ্রষ্ট বলে ভাবে এবং ঘৃনা করে!

·               সূত্র ;  শাহিনুর রহমান শাহিন-এই  লেখাটির  মূল  লেখক ৷ লেখাটি  আমার  ব্লগে  প্রকাশিত  হয়েছে ৷ এই তথ্যবহুল  লেখাটিকে কিছুটা  সংক্ষিপ্ত  করে  এই  লেখাটি  তৈরি  করা হয়েছে ৷


মন্তব্যসমূহ