মানবতাবাদী ও দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের B.B.C. তে দেয়া (Reith Lecyure )বক্তৃতা মালার সার- মর্মকথা ৷
‘তাল মিলিয়ে চলা হল মৃত্যু , একমাত্র প্রতিবাদই দিতে
পারে জীবনের আশা’ ৷
‘
বর্তমান যুগে প্রশাম্তি আসতে পারে একমাত্র অন্ধ হলে কিংবা
পশুর মত আচরণ করলে’ ৷
‘
দুর্বৃত্তদের দলে থাকার জন্য যেসব গুণ
থাকা প্রয়োজন সেগুলো হল ঐক্য ও আনুগত্য’ ৷
‘ আমি একথারও কোনো যুক্তি
খুঁজে পাই না যে , সংখ্যাগরিষ্ঠরা যা
কামনা করে সেটাই সংখ্যালঘিষ্ঠদের কামনার
চেয়ে উত্তম ও গ্রহণযোগ্য’ ৷
‘ মানুষ
যে আসলে একটি বিশ্বপরিবার সে ধারণাই
এখন সতর্কতার সাথে শিক্ষা দিতে হবে
, যার বিপরীতটা এখন করা হচ্ছে’ ৷
বার্ট্রান্ড রাসেল ( অনুবাদ-পান্না লাল চৌধুরী )
মানবতাবাদী ও
দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের
B.B.C. তে দেয়া (Reith Lecyure )বক্তৃতা মালার সার- মর্মকথা ৷
১৯৪৯ সালের
দিকে বি বি সি , রেডিও-4 এর Reith
Lecture নামক বক্তৃতা মালায়
দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল কে একটি সিরিজ বক্তৃতা
দিতে অনুরোধ করা হয়
এবং দার্শনিক রাসেল ‘ Authority
and the Individual ’ (ব্যক্তি ও কর্তৃত্ব )
শিরোনামে একটি বক্তৃতা
মালা প্রদান করেন ৷ পরে যা ঐ শিরোনামেই ১৯৪৯ সালের শেষে প্রকাশিত হয় ৷ ঐ বক্তৃতার কিছু সার-মর্মকথা এখানে সংকলন
করে , সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখ
করা হল ৷
ঐ বক্তৃতায় দার্শনিক
বার্ট্রান্ড রাসেল বলেন যে , মানুষের
নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার
নিশ্চিত করতে সমাজ ও রাষ্ট্রকে যতটুকু
চেষ্টা করা উচিৎ
ঠিক ততটুকু মানুষের
প্রগতির জন্যও করা
প্রয়োজন সমাজ ও রাষ্ট্রকে ৷ তিনি এর
ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন যে , একজন মানুষের সমাজের প্রগতির জন্য যতটুকু ব্যক্তিগত
উদ্যোগের মাত্রা থাকা
দরকার , এর বিপরীতে একজন
মানুষকে তার জীবন
সংগ্রামে টিকে থাকতে
হলে তার মধ্যে ও
ততটুকু ঐক্যবোধ থাকা
প্রয়োজন ৷ আর এই
দু-টুর মধ্যে একটি
সমন্বয় ঘটাতে পারার
পরই ইহার একটি বাস্তবতা লাভ করতে
পারে ৷ তিনি আরো
বলেছন যে , একজন ব্যক্তির
স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে
হলে রাষ্ট্রীয় কাঠামো
সংক্রান্ত বিষয় থেকে
মানুষের নিজস্ব সাংস্কৃতিক
বিষয়গুলোকে অবশ্যই আলাদা করে ফেলতে হবে ৷ এই জন্য
প্রয়োজনে রাষ্ট্রকে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে
হবে ৷ যাতে
আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোর সমাধানে
রাষ্ট্রের পূর্ণ কর্তৃত্ব
বজায় রাখতে সক্ষম হয় ৷ অবশ্য এর
জন্যে প্রয়োজন হবে
একাদিক আন্তর্জাতিক আইন
প্রণয়নের , যে সব
আইনের মাধ্যমে একটি
রাষ্ট্র বা জাতির
বিরুদ্ধে অন্য রাষ্ট্র বা
জাতির আগ্রাসন বন্ধ করা
যায় ঐ সব আইনের প্রয়োগ
করে , কোনো রকম যুদ্ধ ছাড়াই ৷এই ব্যাপারটা নিয়ে অন্যএক লেখায় রাসেল বলেছেন -এই জন্যে দরকার একটা আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষ যা সকল বিবাদের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করবে এবং তার সিদ্ধান্ত যাতে বিবাদমান পক্ষ মানতে বাধ্য হয় সেজন্য যথেষ্ট ক্ষমতাও তার থাকা দরকার ৷
এ প্রসঙ্গে দার্শনিক রাসেল বলেছেন , একজন ব্যক্তির যে সব স্বাধীনতা ভোগ করার অধিকার আছে , তাকে সেই অধিকার ভোগ করতে দিতে হবে এবং সেই সঙ্গে সে যে সরকার ব্যবস্থাকে উত্তম মনে করবে তাকে সেই সরকার ব্যবস্থাকে ও সমর্থন করার স্বাধীনতা দিতে হবে ৷ (রাসেল সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোকে পছন্দ করতেন না , তাই সে দিক লক্ষ করে বোধহয় এই শেষের কথাটি বলেছেন ? )
এ প্রসঙ্গে দার্শনিক রাসেল বলেছেন , একজন ব্যক্তির যে সব স্বাধীনতা ভোগ করার অধিকার আছে , তাকে সেই অধিকার ভোগ করতে দিতে হবে এবং সেই সঙ্গে সে যে সরকার ব্যবস্থাকে উত্তম মনে করবে তাকে সেই সরকার ব্যবস্থাকে ও সমর্থন করার স্বাধীনতা দিতে হবে ৷ (রাসেল সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোকে পছন্দ করতেন না , তাই সে দিক লক্ষ করে বোধহয় এই শেষের কথাটি বলেছেন ? )
দার্শনিক রাসেল
তার বক্তৃতা মালায় মানুষের
সঠিক এবং বিজ্ঞানভিক্তিক জ্ঞান
অর্জনকে উৎসাহীত করতে গিয়ে
বলেছেন - মানুষের মধ্যে বৈজ্ঞানিক
জ্ঞানের প্রসার ঘটাতে
হবে ৷ মানুষকে বুঝতে হবে যে , প্রার্থনা করে
কোনো কিছু কেউ
অর্জন করতে পারে
না ৷ মানুষকে কোনো কিছু
অর্জন করতে হলে বৈজ্ঞানিক
ভাবে এবং প্রকৃতির
নিয়মাবলী মেনে যদি সে
সঠিক কাজ করতে সমর্থ
হয় তবেই সে তার চাওয়ার বস্তুকে পেতে
পারবে যা প্রার্থনার দ্বারা পাওয়া
সম্ভব হবে না ৷
তিনি আরো
একটি বিষয়কে গুরুত্ব
দিয়ে বলেছেন - মানুষ তার প্রাচীন
অন্ধবিশ্বাসকে ত্যাগ করতে
হবে ৷ এর জন্যে মানুষকে
প্রকৃত জ্ঞান অর্জন
করতে হবে ৷ অন্যদিকে তিনি মানুষের মধ্যে
সহমর্মিতা সৃষ্টি করার
লক্ষে সমাজকে
উৎসাহ প্রদান করতে বলেছেন-
একজন মানুষের মনে মানবজাতীকে সুখী
করতে হবে কারো
প্রতি অন্যায় আচরণ করা উচিৎ নয় , এই মনোভাব
নিয়ে কাজ করতে
হবে ৷ ফলে মানুষ ও
সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা
হবে , এতে সে তার নিজের মনে ও
প্রানে এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব করবে
৷
তিনি এর
বিপরীতের কাজকর্মকে বর্জন
করার জন্যে বলতে গিয়ে বলেছেন- মানুষের মন
ও সমাজ থেকে নিষ্ঠুরতা
, ঈর্ষাপরায়নতা , লোভ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতার
মনোভাব পরিহার করতে
হবে ৷ মানুষকে অবশ্যই অযৌক্তিক কাজ এবং অন্যায়
বিষয়কে মন থেকে
মুসে ফেলে দিয়ে
যৌক্তিক ও বিজ্ঞানভিক্তিক কাজে
মনোনিবেশ করতে হবে সবসময়ে ৷
দার্শনিক রাসেল ধর্মের প্রসঙ্গ
টেনে বলেছেন- এখন
থেকে মানুষকে ( ধর্মের বই থেকে ) চোখ তুলে
তাকাতে হবে আর বলতে হবে : ‘
না , আমি হতভাগা পাপী
নই ; আমি এমন একটা
প্রাণী যে দীর্ঘ ও
ঝুঁকিপূর্ণ পথ অতিক্রম
করে শিখতে সক্ষম হয়েছি যে বুদ্ধির
মাধ্যমে কিভাবে প্রকৃতির
বাঁধাগুলো অতিক্রম করা সম্ভব , কিভাবে স্বাধীনতা
আর আনন্দের পরিবেশে
বেঁচে থাকা যায় , কিভাবে নিজকে
নিয়ে শান্তিতে বসবাস
করা যায় এবং
তার ফলে , সমগ্র মানবজাতিকে
নিয়েই শান্তিতে বসবাস
করা যায়’ ৷ ( অনুবাদ- পান্না
লাল চৌধুরী ) তিনি মানুষকে বলেছেন - মানুষ যেেন দুঃখকে
বেছে না নিয়ে
আনন্দকে বেছে নেয় ৷ তাহলেই
মানুষ এর সুফল লাভ করতে পারবে ৷ আর মানুষ যদি
এটা করতে না পারে তবে চিরমৃত্যুই
মানুষকে তার উপযোগী
বিস্মৃতির সমাধিতে সমাহিত
করবে ৷
তিনি তার বক্তৃতায়
বলেছেন - স্বতঃসিদ্ধ
যৌক্তিকতার আলোকে সংখ্যাগরিষ্ঠ
এবং সংখ্যালঘিষ্ঠের সমস্যার
সমাধান বের করে তবেই তার সমাধান বের করতে
হবে ৷ সংখ্যাঘরিষ্ঠের জুরে কারো ওপর
কিছু চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না ৷
সর্বশেষে তিনি
বলেছেন - কিছু কিছু আদর্শ আছে , যেগুলো ধ্বংসাত্মক আর যেগুলো একমাত্র
বিপ্লব বা সামাজিক ও রাজনৈতিক যুদ্ধ ছাড়া অর্জন করা সম্ভব হবে না
৷ এর মধ্যে সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণটি হচ্ছে মানুষের
মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা
করা ৷ তবে বর্তমান বিশ্বে
শিল্পোন্নত দেশগুলোতে মানুষের
রাজনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত
হয়ে গেছে বলা যায় ৷ যা এখনও শিল্পোন্নত
নয় এমন সব দেশে রাজনৈতিক
ন্যায়বিচার অর্জিত হয় নি ৷ এটা
প্রতিষ্ঠা করা একান্ত
জরুরী বলে তিনি বলেছেন ৷ তিনি আরো বলেছেন - রক্তপাত ছাড়া
রাষ্ট্রে বা সমাজে অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার
প্রতিষ্ঠা করা খুবই কঠিন
ব্যাপার হবে ৷ এর জন্যে সমস্ত
বিশ্বব্যাপী একটা বিপ্লবের
প্রয়োজন হতে পারে ৷ তবে যেভাবেই হোক সমাজে ও রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে ৷ এটা না করতে পারলে মানুষে মানুষে অর্থনৈতিক অসমতার সৃষ্টি হবে ৷ ফলে
সমাজ ও রাষ্ট্রে ঈর্ষার
সৃষ্টি হবে আর এরই একপর্যায়ে এই
বিষয়টি সমাজ ও রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলার জন্ম
হবে , সমাজ ও রাষ্ট্রের
শান্তি বিঘ্নিত হবে ৷ তাই তিনি
বলেছেন- দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অবস্থা যে কোনো শান্তিপূর্ণ
উপায়ে উন্নত এবং পরিবর্তন করা
সম্ভব না হলে আগামী
শতাব্দীগুলোতে বিশ্বের প্রতিটি
সরকারের জন্যে এটা
একটা কঠিন সমস্যা হয়ে
দেখা দিবে ৷
বোধহয় বর্তমান
বিশ্বে এই সমস্যা আরম্ভ হয়ে
গেছে ৷ এবং ধর্মীয় আন্দোলন বা ধর্মীয়
বিপ্লবের নামে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে
পড়ছে এবং আরো পড়বে ৷ ধর্মই এখন
শ্রেণী সংগ্রামে রূপান্তরিত
হয়ে যাচ্ছে বিশ্বে
সম্পদের অসমবণ্টনের কারণে ৷আবার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার , বর্ণবাদকে উৎসাহীত করা হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৷ এর
একটি সমাধান বের
করা বিশ্বের সব রাষ্ট্রের অবশ্য
কর্তব্য হয়ে গেছে এখন ৷
(সূত্র;
পান্না লাল চৌধুরীর অনুবাদ করা -BERTRAND
RUSSELL : AUTOBIOGRAPHY এর বার্ট্রন্ড
রাসেল -
আত্মকথা ৩য় খণ্ডের ইংল্যান্ড প্রত্যাবর্তন অনুচ্ছেদের কিছু অংশের
অনুকরণ করে এই লেখাটি
তৈরি করা হয়েছে ৷ সৌজন্য -পান্না লাল চৌধুরী )
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন