সমাজবিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণ থেকে নারীজাতির অবরোধ প্রথা ও মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা থেকে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা :


        সমাজবিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণ থেকে নারীজাতির অবরোধ প্রথা ও মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা থেকে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা  :
    

                                  (দ্বিতীয়  পর্ব )

                                নারীজাতির মহাপরাজয়ের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট  বিশ্লেষণ

              নারীদের পরাজয়ের তত্ত্ব রচনা করেছেন অনেকেই , তবে এঙ্গেলসই লেখেছেন সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য রচনাটি   ৷ এঙ্গেলস তার লেখায় পেশ করেন পিতৃতন্ত্রের ইতিহাস ও অর্থনীতির এক সংহত ও গ্রহনযোগ্য বিবরণ  এবং তিনিই প্রথম আক্রমন করেন পিতৃতন্ত্রের বহুনন্দিত পরিবার   নামক  সংস্থাটিকে  

              তবে পিতৃতন্ত্রবাদীরা বিশ্বাস করেন পিতৃতন্ত্র ও পরিবারসংস্থা মানুষের সমাজসংস্থাগুলোর মধ্যে অনাদি     তাঁরা মনে করেন এগুলোর উদ্ভব ঘটেছিলো প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায়   পুরুষের জৈবিক শক্তি ও সহজাত প্রাধান্যকে ভিত্তি করে তারা মনে করেন এটিই বিধাতার স্বর্গীয় বিধান এ ছাড়াও তারা মনে করেন দেহই নারীর নিয়তি  ৷ কারণ   তার শারীরিক কম-শক্তি , ঋতুস্রাব , গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব সহ অন্যান্য তার সহজাত প্রভৃত্তিই তাকে বাধ্য করেছে  পুরুষদের নিকট  পরাজিত লিঙ্গে পরিণত হতে

                  নারীবাদীদের কেউ কেউ একথা দ্বিধাভরে মেনে নিলেও কেইট মিলেট (১৯৬৯ ,১০৯ )   
  এটা মেনে না নিয়ে বলেন  যে  সামাজিক ও রাজনীতিক সংস্থা কেবল দেহবল বা শক্তির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে না , গড়ে ওঠে সমাজের মূল্যবোধ ও উৎপাদন পদ্ধতির ভিত্তি করে  তাঁর মতে পিতৃতন্ত্র একটি সংস্থা  মাত্র  ৷ মানুষের বিকাশের বিশেষ একটা সময়ে এর উদ্ভদ ঘটেছে   এবং এর পেছনে রয়েছে বিশেষ এক  সামাজিক   রাজনৈতিক পরিস্থিতি  

                সমাজবিশ্লেষক   ম্যাথিয়াস ও ম্যাথিলডা ভ্যারটুং ( আধিপত্যশীল লিঙ্গ , ১৯২৩ ) মনে করেন পিতৃতন্ত্রের আগে ছিলো মাতৃতন্ত্র বা নারীতন্ত্র  যেখানে নারীরাই ছিলো আধিপতশীল  যেমন পিতৃতন্ত্রে এখন আধিপত্যশীল পুরুষেরা ।  


                  প্রগতিশীল নারীবাদীরা মনে করেন   পিতৃতন্ত্র মানুষের ইতিহাসের একটা অধ্যায় মাত্র   তাই ক্রমান্নয়ে এর সমাপ্তি ঘটবেই   এবং এর সমাপ্তির পরবর্তী পর্বে সৃষ্টি হবে-নরনারীর সম্পর্কের আরেক  ও উন্নত  পর্ব তবে তা সেচ্ছায় বা ক্রমান্নয়ে হবে না   তার জন্যে প্রয়োজন হবে প্রগতিশীল ও  উন্নত মন-মানুষিকতা সম্পূর্ণ আধুনিক শিক্ষায়  শিক্ষিত এবং কুসংষ্কার মুক্ত মানুষের এক প্রচণ্ড সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপ্লবের

                 সমাজবিজ্ঞানী ও সমাজ সংষ্কারক বাখোফেন ও এঙ্গেলস তাদের গবেষণায় দেখতে পান  যে মানুষের আদিম সমাজ ব্যবস্থায় এক ধরণের আদিম সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত ছিল   যেখানে ছিল না কোনো ব্যক্তিমালিকানা সমাজের ক্রমবিকাশের এক পর্বে পিতৃতন্ত্রের  উদ্ভদ ঘটেছে  ,    একরাশ সামাজিক রোগ নিয়ে  

           তখন দেখা দেয় সম্পত্তির ব্যক্তিগত অধিকার , নারী-অধীনতা ও দাসপ্রথা ৷ সমাজ তখন ভাগ হয়ে যায় নানা শ্রেণী ও বর্ণে , দেখা দেয় শাসক ও সম্পত্তিশীল শ্রেণীর   ৷ তখন শুরু হয়ে  যায়  সম্পত্তির অসম বন্টনব্যবস্থা   এবং শেষে পর্যায়ক্রমে শোষণের নির্মম বিকট যন্ত্ররূপে আবির্ভাব ঘটে রাষ্ট্রের

               এঙ্গেলস, বাখোফেন ও মর্গানের সাথে নিজের সমাজতান্ত্রিক তত্তের সমন্বয় করে রচনা করেন সমাজবিবর্তনের এক বিশ্বজনীন ইতিহাস  ৷ যাতে তিনি ব্যাখ্যা করে দেখান  যে  কীভাবে উদ্ভূত হয়েছে পরিবার ,  বিভিন্ন সমাজসংস্থা ইত্যাদির  ৷ মানুষ কীভাবে সম্পদ উৎপাদনের জন্যে হাতিয়ার তৈরি করেছে   কীভাবে  কৃষিকাজ শুরু করেছে  এবং  কীভাবে  পরে ব্যবসায়ী হয়েছে আর  সব শেষে কীভাবে হয়েছে শিল্পপতি  
               পরিবারের ইতিহাসকে তিনি বিভিন্ন স্তরে ভাগ করে দেখিয়েছেন - কীভাবে মাতৃতন্ত্র বা মাতৃ-অধিকারের স্তর থেকে নির্বিচার বা মুক্ত যৌনসম্পর্কের  সৃষ্টি  হয়েছে  ,  
             কীভাবে    সমষ্টি বিয়ের  সৃষ্টি  হয়েছে  ,

              কীভাবে    জোড়বাঁধা বিয়ের  আরম্ভ  কয়েছে
  ,
                কীভাবে একরক্তসম্পর্কের বিয়ের  প্রচলন  হয়েছে  

               আর  পরিশেষে  কীভাবে  পুনালুয়া বিয়ে প্রভূতি থেকে উদ্ভূত হয়েছে পিতৃতান্ত্রিক একপতিপত্নী বা একপতিবহুপত্নী বিয়ের  ব্যবস্থা  

         বং দেখিয়েছেন  সবশেষে কীভাবে নারী হয়ে ওঠেছে পুরুষের সম্ভোগসামগ্রী ও বিশ্বস্থ পরিচারিকারূপে  ।  

       সমাজবিজ্ঞানীরা  মানুষ সভ্যতার আদিম ইতিহাস পর্যালোচনা করে তিনটা পর্বে ভাগ করেছেন

       পর্বগুলো হচ্ছে;- ১ . আরণ্য পর্ব 

                      ২ . বর্বরতার  পর্ব  

                      ৩ . সভ্যতার পর্ব


   ১ .   আরণ্যপর্ব:  

                       আরণ্যপর্বে মানুষ ছিলো অরণ্যের সন্তান ;

                 মানুষ তখন প্রকৃতি থেকে তার নিত্য প্রয়োজনীয় সম্পদগুলো ও খাবার আহরণ করে বেঁচে থাকতে  হত   তাই  তাকে  ঘন ঘন স্থান পরিবর্তনেরও প্রয়োজন হতো তখন হাতিয়ার বলতে শুধু হাত দুটিই ছিলো মানুষের একমাত্র সম্বল ধারণা করা হয়  যে ,  এক স্থান থেকে স্থানান্তরে যাওয়ার সময়  ভারবহনের ভারটা হয়তো পড়তো তখন নারীরই ওপর ৷   কারণ পুরুষকে তখন তার নিজের হাত দুটি মুক্ত রাখতে হতো বন্য ও ভয়ঙ্কর  পশুর আক্রমন থেকে নিজদের  সবাইকে   বাঁচাতে   অর্থাৎ  নারী ভার বইতো আর পুরুষেরা করতো আরো শক্ত ও ভয়ঙ্কর কাজ

               কিন্তু এরপর ও নারীরা বাঁধা ছিলো ঋতুস্রাব , গর্ভধারণ , ও সন্তান ধারণ   সন্তানের  প্রসবের জৈব শেকলে ৷   যা নারীদেরকে তখনো করে রেখেছিলো বিরূপ  বা  প্রতিকুল   বিশ্বে এক  অসহায় অবস্থার  মধ্যে  তাই নারীকে অন্য ও আশ্রয়ের জন্যে নির্ভর করতেই হতো মুক্ত ও  স্বাধীন  পুরুষের ওপর

             আবার নারী পুরুষের মতো সৃষ্টি বা উদ্ভাবন করে নি করতে  পারেনি বিভিন্ন  সীমাবদ্ধতা  প্রতিকুলতার কারণে   কারণ   সে গর্ভবতী হয়েছে   সন্তান  ও প্রসব করেছে কিন্তু পুরুষের  মতে ,    গর্ভধারণ ও প্রসব কোনো  অতিরিক্ত  কাজ নয়   ইহা যেন  তাদের  প্রকৃতিক    জৈব ব্যাপার  মাত্র      তাই  নারীকে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে  তাদের নিজেরই জৈবনিয়তির কাছে

             এই সুযোগে পুরুষ তার জৈব ও পাশবিক স্বভাব অতিক্রম করে হয়ে উঠেছে স্রষ্টা বা উদ্ভাবক হয়েছে মর্যাদাসম্পন্ন পুরুষ মানুষ ।  পুরুষেরা বিপজ্জনক কাজ ও ভয়ঙ্কর জন্তুদের সাথে লড়াই করে জীবন বিপন্ন করেছে ৷   পুরুষেরাই  মানুষকে পশুর পর্যায় থেকে উত্তীর্ণ করেছে মানুষের পর্যায়ে

             অন্যদিকে  নারী টিকিয়ে রেখেছে মানুষের  প্রজাতিকে   আবার  পুরুষ বদলে দিয়েছে পৃথিবীকে ৷  কিন্তু  নারীর নিয়তি ,   অন্তত এখন পর্যন্ত , হয়ে রয়েছে জীবনের পুনরাবৃত্তি        করা   কিন্তু জীবনের পুনরাবৃত্তি করে কেউ পৃথিবীর প্রভু হতে পারে না

             জৈবিক ও আর্থিক কারণে পুরুষ হয়েছে পৃথিবী ও নারীর প্রভু আরণ্যপর্বে নরনারীর যৌনসম্পর্কের রীতি ছিলো নির্বিচার বা মুক্ত   যৌনসম্পর্ক ৷ যে-কোনো নারী মিলিত হতে পারতো যে-কোনো পুরুষের সাথে আরণ্য পর্বের মানুষ আজকের মত ভণ্ডামি আয়ত্ত করে ওঠেনি তখন  মানুষের  জীবনে  এত  জটিলতা    এত  ভন্ডামি  ছিল  না 

      
        ২ . বর্বরতার পর্ব:  


                   মানুষের আরণ্যপর্বের পর আসে কৃষি বা বর্বরতার পর্ব  যাযাবর মানুষ স্থির হতে থাকে কোনো  উর্বর অঞ্চলে , তখন সে হয়ে ওঠে কৃষক ; এবং নারী ও পশু হয় তার প্রধান সম্পদ , আর  মানুষ হয়ে  ওঠে  গোস্বামী ভূমিকা বদলায় সে সময় নারীরও যাযাবর মানুষের ছিল শুধু     বর্তমান ৷   কিন্তু কৃষিসমাজে মানুষের বর্তমানের সঙ্গে , অতীত ও ভবিষ্যৎ ও যুক্ত হয়ে  যায়  

              তখন পুরুষ কৃষক অনুভব করে নারী ও জমি একই প্রকৃতির ,  উভয়ই উর্বর ;

                      চাষ করলে উভয়ই  উৎপাদন করে , জমি ফলায় ফসল ,আর নারী প্রসব করে সন্তান  

                  তবেএই-সময়ে সন্তান  উৎপাদন  ও ফসল  উৎপাদনের  দায়িত্বও ছিলো নারীর ৷  তাই নারী শুধু সন্তানই ধারন করতো না নারীরা তখন চাষের কাজও করতো তাই তার অনেক  মূল্য ছিলো অনেক গৌরব ছিল  নারীর  
                   
এ-সময় তাই দিকেদিকে দেখা দেয় নারীর আরেক রূপ , তখন তাকে অভিহিত করা হয় উর্ভরতার মহাদেবী ;   ও মহামাতা উপাধিতে  

                   এ-সময়ে নারীপুরুষের যৌনসম্পর্কেরও  কয়েকটি রূপ দেখা দেয় ,  উন্মেষ ঘটে পরিবারের আদিরূপটিরপরিবারের আদি রূপটি হচ্ছে একরক্তসম্পর্কের     পরিবার

                  একরক্তসম্পর্কিত পরিবারে বিয়ে হতো প্রজন্মক্রমে     পিতামহ ও পিতামহী  পরস্পরের ভাইবোন ও স্বামী-স্ত্রী ,তাদের পুত্রকন্যারা একে-অন্যের ভাইবোন ও স্বামী-স্ত্রী , তাদের পুত্রকন্যারাও ভাইবোন ও স্বামী-স্ত্রী


                   
তবে  পর্যায়  ক্রমে নিষিদ্ধ হয় একরক্তসম্পর্কিতদের মধ্যে বিয়ে উদ্ভূত হয় এমন এক ধরনের পরিবারের  যাকে   ,মর্গান ও এঙ্গেলস  বলেছেন     
                     পুনালুয়া পরিবার 

                        পুনালুয়া পরিবারে আপন বা সমান্তরবর্তী কজন বোন হতো তাদের সাধারণ স্বামীদের সাধারণ স্ত্রী ,    তবে বাদ পড়তো তাদের ভাইয়েরা এ-পরিবারে স্বামীরা পরস্পরের ভাই হতো না ,তারা হতো একে-অন্যের ঘনিষ্ঠ সাথী বা পুনালুয়া ঠিক একইভাবে একদল আপন বা সমান্তরবর্তী ভাইয়েরা মিলিতভাবে বিয়ে করতো একদল নারীকে ,    এবং স্ত্রীরা হতো একে-অন্যের সাথী এটা ছিলো সমষ্টি বিয়ে ,     যা থেকে উৎপত্তি হয়েছিলো গোত্রের  

               সমষ্টিগত   বিয়ের পরিবারে বাপের ঠিক ছিলো না , কিন্তু মা ছিলো সুনিশ্চিত সমষ্টিগত  বিয়ের মায়েরা পরিবারের সব সন্তানকেই নিজের সন্তান মনে করতো  তবে নিজের পেটের সন্তানদের চিনতে পারতো পৃথক করে  তাই সমষ্টি বিয়েতে শুধু মায়ের দিক থেকেই সম্ভব ছিলো বংশপরস্পরা ঠিক করা   ;     তাই তাতে স্বীকৃতি পেতো শুধু মাতৃধারা ৷  
               সমষ্টি বিয়ের কালে বা তারও আগে কিছু সময়ের জন্যে দেখা দিয়ে ছিলোজোড়বাঁধা পরিবার ;

                 যাতে বহু স্ত্রীর মধ্যে একটি পুরুষের থাকতো একটি মুখ্য স্ত্রী  

                  আবার ওই পুরুষটি হতো ওই নারীর বহু পতির মধ্যে মুখ্য বা প্রধান পতি রক্তসম্পর্কিত বিয়ে নিষিদ্ধ হওয়ার আগে পুরুষের জন্যে নারীর অভাব ঘটতো না , পর্যায়ক্রমে নারী দুস্প্রাপ্য হয়ে ওঠে এর ফলে নারীর অভাবে জোড়বাঁধা বিয়ের প্রচলনের সাথেসাথে শুরু হয়ে যায়        নারীহরণ ও নারী কেনাবেচা  প্রক্রিয়া   

                  তবে জোড়বাঁধা বিয়ে ছিলো অস্থায়ী ও দুর্বল ;   তাই এর ফলে আগের   সাম্যতন্ত্রী পরিবার    গৃহস্থালি ভেঙ্গে যায় নি  
               সমষ্টি বিয়ের সাম্যতন্ত্রী পরিবারে  নারীদের আধিপত্য ছিলো কারণ জনক কে নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হতো না   , তাই মা-ই ছিলো স্বীকৃত ,  পিতা তখনো স্বীকৃতি পায় নি

             অর্থাৎ সমাজের সূচনাকালে নারীরা পুরুষের দাসী ছিলো না ; আরণ্য পর্বের ও কৃষি বা বর্বর পর্বের নারীরা ছিলো স্বাধীন ও সম্মানিত সাম্যতন্ত্রী পরিবারে নারীরা বা বেশির ভাগ নারী হতো একই গোত্রের, আর পুরুষেরা হতো বিভিন্ন গোত্রের ; তাই আদিম যুগে ছিলো নারীর আধিপত্য

                আর নারীরাও এখনকার মতো বিচ্ছিন্ন ছিলো না শ্রম থেকে , তখন  নারীকে তাঁর শ্রমই সত্যিকার ভাবে সম্মানের আসনে   অধিষ্টিত  করত     সমষ্টি বিয়েতে এক নারীর ছিলো বহু পতি ,   অবশ্য পরে তা একপতিতে সমাপ্তি পায়

                পাতিব্রত্য এখন নারীর  বিশেষ  গুণ হিসেবে  বিবেচিত  হয়    কিন্তু একপতিতে সীমাবদ্ধ হওয়ার প্রথম দিকে  নারীর  পাতিব্রত্য হওয়া ছিলো নারীর অপরাদ যার জন্যে নারীকে প্রায়শ্চিতও করতে হতো 

           এই সময়ে নারীদের বিচিত্র ধরণের যৌনসম্পর্কের বিধান প্রচলিত ছিলো  তখনকার সমাজে   , বিশেষ করে উপজাতি সহ কোনো কোনো অঞ্চলের  কুমারী নারীদের মধ্যে পরবর্তীকালে আর্থনীতিক বিকাশের ফলে এসবের অবসান ঘটেছে

      ৩ .সভ্যতার যুগ : 


             বর্বরতার মধ্যস্তর থেকে শেষ স্তরে ওঠার সময় থেকে জোড়বাঁধা বিয়ে থেকে উদ্ভব ঘটে একপতিপত্নী বিয়ের

               অর্থাৎ সভ্যতার যুগের সূচনার সময় থেকেই একপতিপত্নী বিয়েই রীতি হয়ে ওঠে এর ভিত্তি ছিলো পুরুষাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে সুনিশ্চিত পিতৃত্বে সন্তান উৎপাদন তখন পিতাই সমস্ত সম্পত্তির মালিক ছিলো তাই পিতা এমন কাউকে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করবে না , যে তার ঔরষে জন্ম নেয় নি   ; বাপের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে তার নিজের সন্তান ,বিশেষ করে পুত্র, এটাই স্বাভাবিক নয় কী ?  


                 এই ভাবে সভ্যযুগে  সূচনাতেই   নারীদের  বীরযুগের পতন ঘটে  পরিবর্তন  ঘটে নারীদের  লামাজিক   অবস্থানেরও  

            আর তখন থেকেই দেখা যায় পুরুষেরা বিয়ের বাইরে যৌনসম্পর্ক রাখছে  বা  রাখতে  সক্ষম  হচ্ছে  স্ত্রী  ছাড়া  অন্য  নারীদের  সঙ্গেও 

            কিন্তু নারীরা বাধ্য হচ্ছে কঠোর সতীত্ব বা পাতিব্রত্য পালন করতে সভ্যতার যুগে  আরম্ভ  থেকেই  নারী হয়ে ওঠে পুরুষের বৈধ উত্তরাধিকারীর জননী , তার প্রধান গৃহকর্ত্রী এবং দাসীদের প্রধান স্বামীরা দাসীদের নিয়মিত সম্ভোগ করতো  বা  করতে  পারত  আবার বাইরে গণিকা উপভোগ  করতো  বা  করতে  পারত  কিন্তু স্ত্রীদের থাকতে হতো আপাদমস্তক সতী কঠোরভাবে  রক্ষা  করতে  হতো  তার  সতিত্বকে 

       তাই একপতিপত্নী বিয়ে নির্মমভাবে সত্য হয় শুধু নারীর জন্যে  কিত্তু   পুরুষের জন্যে নয়   তাই একপতিপত্নী বিয়েতে দেখা দেয় নি নারী পুরুষের সদ্ভাবের কোন লক্ষণ বা বিয়ের একটি আদর্শ রূপ হিসেবেও  একবিয়ে  প্রতিষ্ঠা পায় নি   প্রথমে  যেরূপ  এটি দেখা দিয়েছিলো নারীর ওপর পুরুষের আধিপত্যরূপে এবং এখনো তাই আছে  

                  উৎপাদন বা আর্থিক-ক্রিয়াকাণ্ডে যার অংশ কম বা নেই তার  দুরবস্থা কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে না ৷ নারীর  দুরবস্থার কারণও তাই ;   নারী বহুকাল ধরে আর্থিক ক্রিয়াকলাপ থেকে নির্বাসিত হয়ে পরগাছায় পরিণত হয়েছে (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া )আর যে নারী আর্থনীতিকভাবে শোষিত     সে সব দিকেই শোষিত বলা যায়  

                 পশ্চিমের নারীবাদীরা এখন আর একপতিপত্নী বিয়ের পবিত্রতাকে বিশেষ মূল্যবান মনে করেন না      তারা নারীর সামাজিক-আর্থিক ও যৌন সব ধরণের বর্তমান প্রচলিত প্রথা থেকে মুক্তি চান ৷ গত চারদশকে পশ্চিমের নারীবাদীরা বদলে দিয়েছেন তাঁদের সামাজিক বহু এলাকা  এবং যৌন এলাকায়  তারা যে পরিবর্তন ঘটিয়েছেন  তাকে বিপ্লব বলা যায়  
               তবে পৃথিবী এখনো পুরুষের   আর   নারীরা এখনো পরাজিত ও বন্দী ৷ নারীর মুক্তির জন্যে দরকার বড়ো ধরনের সামাজিক বিপ্লবের ;   যতোদিন ওই বিপ্লব না ঘটানো যাবে , ততোদিন নারী  হয়ে থাকবে পুরুষের অধীনে  থাকবে  পুরুষের  দাসী ও যৌনসামগ্রী হয়ে ( অবশ্যই কিছু ব্যতিক্রম বাধে )

        
 ( যারা এসব ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী, তাঁরা হুমায়ুন আজাদের নারী গ্রন্থের  নারীজাতির ঐতিহাসিক মহাপরাজয় অধ্যায়-৫১ - ৬১ , পড়তে পারেন ) 
   
      সূত্র ;-এই লেখাটি হুমায়ুন আজাদের নারী গ্রন্থের অনুকরণে লেখা হয়েছে
  
        (বি : দ্র : এই লেখাটায় কারো ধর্মীয় বিশ্বাসে বা অন্য কোনোভাবে
            কাউকে আঘাত দেয়ার জন্যে লেখা হয় নাই ,কোনো গণমাধ্যমে
            ও ইহা প্রকাশ করা যাবে না, লেখকের অনুমতি ছাড়া ,ধন্যবাদ )

   

মন্তব্যসমূহ