সমাজবিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণ থেকে নারীজাতির অবরোধ প্রথা ও মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা থেকে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা :
সমাজবিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণ থেকে নারীজাতির অবরোধ প্রথা ও মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা থেকে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা :
(দ্বিতীয় পর্ব )
নারীজাতির মহাপরাজয়ের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ
নারীদের
পরাজয়ের তত্ত্ব রচনা করেছেন অনেকেই , তবে এঙ্গেলসই লেখেছেন
সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য রচনাটি ৷ এঙ্গেলস তার
লেখায় পেশ করেন পিতৃতন্ত্রের ইতিহাস ও অর্থনীতির এক সংহত ও গ্রহনযোগ্য বিবরণ এবং তিনিই প্রথম আক্রমন করেন পিতৃতন্ত্রের বহুনন্দিত
পরিবার নামক সংস্থাটিকে ।
তবে
পিতৃতন্ত্রবাদীরা বিশ্বাস করেন পিতৃতন্ত্র ও পরিবারসংস্থা মানুষের সমাজসংস্থাগুলোর
মধ্যে অনাদি ৷ তাঁরা মনে করেন এগুলোর উদ্ভব ঘটেছিলো প্রাকৃতিক
প্রক্রিয়ায় পুরুষের জৈবিক শক্তি ও সহজাত প্রাধান্যকে ভিত্তি করে । তারা মনে করেন এটিই বিধাতার স্বর্গীয় বিধান । এ ছাড়াও তারা মনে করেন দেহই নারীর নিয়তি ৷ কারণ তার শারীরিক কম-শক্তি
, ঋতুস্রাব , গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব সহ অন্যান্য তার সহজাত প্রভৃত্তিই
তাকে বাধ্য করেছে পুরুষদের নিকট পরাজিত লিঙ্গে
পরিণত হ’তে ।
নারীবাদীদের কেউ
কেউ একথা দ্বিধাভরে মেনে নিলেও কেইট মিলেট (১৯৬৯ ,১০৯ )
এটা মেনে না নিয়ে বলেন যে সামাজিক ও রাজনীতিক সংস্থা কেবল দেহবল বা শক্তির ওপর
ভিত্তি করে গড়ে ওঠে না , গড়ে ওঠে সমাজের মূল্যবোধ ও উৎপাদন পদ্ধতির ভিত্তি করে । তাঁর মতে পিতৃতন্ত্র একটি সংস্থা মাত্র ৷ মানুষের
বিকাশের বিশেষ একটা সময়ে এর উদ্ভদ ঘটেছে এবং এর পেছনে রয়েছে বিশেষ এক সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ।
সমাজবিশ্লেষক ম্যাথিয়াস ও ম্যাথিলডা ভ্যারটুং ( আধিপত্যশীল লিঙ্গ , ১৯২৩ ) মনে করেন পিতৃতন্ত্রের আগে ছিলো মাতৃতন্ত্র বা নারীতন্ত্র যেখানে নারীরাই ছিলো আধিপতশীল যেমন পিতৃতন্ত্রে এখন আধিপত্যশীল পুরুষেরা ।
প্রগতিশীল
নারীবাদীরা মনে করেন পিতৃতন্ত্র মানুষের ইতিহাসের একটা অধ্যায় মাত্র ৷ তাই ক্রমান্নয়ে
এর সমাপ্তি ঘটবেই ৷ এবং এর সমাপ্তির
পরবর্তী পর্বে সৃষ্টি হবে-নরনারীর সম্পর্কের আরেক ও উন্নত পর্ব । তবে তা সেচ্ছায় বা ক্রমান্নয়ে হবে না ৷ তার জন্যে প্রয়োজন হবে প্রগতিশীল ও উন্নত মন-মানুষিকতা সম্পূর্ণ আধুনিক
শিক্ষায় শিক্ষিত
এবং কুসংষ্কার মুক্ত মানুষের এক প্রচণ্ড সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপ্লবের ।
সমাজবিজ্ঞানী ও সমাজ সংষ্কারক বাখোফেন ও এঙ্গেলস তাদের গবেষণায় দেখতে পান যে মানুষের আদিম সমাজ ব্যবস্থায় এক ধরণের আদিম সাম্যবাদ
প্রতিষ্ঠিত ছিল ৷ যেখানে ছিল না
কোনো ব্যক্তিমালিকানা । সমাজের
ক্রমবিকাশের এক পর্বে পিতৃতন্ত্রের উদ্ভদ ঘটেছে ,
একরাশ সামাজিক রোগ নিয়ে ৷
তখন দেখা দেয় সম্পত্তির ব্যক্তিগত অধিকার , নারী-অধীনতা ও দাসপ্রথা ৷ সমাজ তখন ভাগ হয়ে যায় নানা শ্রেণী ও
বর্ণে , দেখা দেয় শাসক ও সম্পত্তিশীল শ্রেণীর ৷ তখন শুরু হয়ে যায় সম্পত্তির অসম বন্টনব্যবস্থা ৷ এবং শেষে পর্যায়ক্রমে শোষণের নির্মম বিকট
যন্ত্ররূপে আবির্ভাব ঘটে রাষ্ট্রের ।
এঙ্গেলস,
বাখোফেন ও মর্গানের সাথে নিজের সমাজতান্ত্রিক তত্তের সমন্বয় করে রচনা করেন
সমাজবিবর্তনের এক বিশ্বজনীন ইতিহাস ৷ যাতে তিনি
ব্যাখ্যা করে দেখান যে কীভাবে উদ্ভূত
হয়েছে পরিবার , বিভিন্ন সমাজসংস্থা ইত্যাদির ৷ মানুষ কীভাবে সম্পদ উৎপাদনের জন্যে হাতিয়ার তৈরি করেছে ৷ কীভাবে কৃষিকাজ শুরু করেছে এবং কীভাবে পরে ব্যবসায়ী
হয়েছে আর সব শেষে কীভাবে হয়েছে শিল্পপতি ।
পরিবারের ইতিহাসকে তিনি বিভিন্ন স্তরে ভাগ ক’রে দেখিয়েছেন - কীভাবে মাতৃতন্ত্র বা
মাতৃ-অধিকারের স্তর থেকে নির্বিচার বা মুক্ত যৌনসম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছে ,
কীভাবে সমষ্টি বিয়ের সৃষ্টি হয়েছে ,
কীভাবে জোড়বাঁধা বিয়ের আরম্ভ কয়েছে
,
কীভাবে
একরক্তসম্পর্কের বিয়ের প্রচলন হয়েছে ৷
আর পরিশেষে কীভাবে পুনালুয়া বিয়ে
প্রভূতি থেকে উদ্ভূত হয়েছে পিতৃতান্ত্রিক একপতিপত্নী বা একপতিবহুপত্নী বিয়ের ব্যবস্থা ৷
এবং দেখিয়েছেন সবশেষে কীভাবে নারী হয়ে ওঠেছে পুরুষের
সম্ভোগসামগ্রী ও বিশ্বস্থ পরিচারিকারূপে ।
সমাজবিজ্ঞানীরা মানুষ সভ্যতার আদিম ইতিহাস পর্যালোচনা করে তিনটা পর্বে ভাগ করেছেন।
পর্বগুলো হচ্ছে;- ১ . আরণ্য পর্ব
২ . বর্বরতার পর্ব
৩ . সভ্যতার পর্ব ।
১ . আরণ্যপর্ব:
আরণ্যপর্বে মানুষ ছিলো অরণ্যের সন্তান ;
মানুষ তখন প্রকৃতি থেকে তার নিত্য প্রয়োজনীয় সম্পদগুলো ও
খাবার আহরণ করে বেঁচে থাকতে হত ৷ তাই তাকে ঘন ঘন স্থান
পরিবর্তনেরও প্রয়োজন হতো । তখন
হাতিয়ার বলতে শুধু হাত দুটিই ছিলো মানুষের একমাত্র সম্বল । ধারণা করা হয় যে , এক স্থান থেকে স্থানান্তরে যাওয়ার সময় ভারবহনের ভারটা হয়তো পড়তো তখন নারীরই ওপর ৷ কারণ পুরুষকে তখন তার নিজের হাত দুটি মুক্ত রাখতে হতো
বন্য ও ভয়ঙ্কর পশুর আক্রমন থেকে নিজদের সবাইকে বাঁচাতে । অর্থাৎ নারী ভার বইতো আর পুরুষেরা করতো আরো শক্ত ও ভয়ঙ্কর কাজ ।
কিন্তু এরপর ও নারীরা
বাঁধা ছিলো ঋতুস্রাব , গর্ভধারণ , ও সন্তান ধারণ ও সন্তানের প্রসবের জৈব শেকলে ৷ যা নারীদেরকে তখনো ক’রে রেখেছিলো বিরূপ বা প্রতিকুল
বিশ্বে এক
অসহায় অবস্থার মধ্যে । তাই নারীকে অন্য
ও আশ্রয়ের জন্যে নির্ভর করতেই হতো মুক্ত ও স্বাধীন পুরুষের ওপর ।
আবার নারী পুরুষের মতো সৃষ্টি বা
উদ্ভাবন করে নি , করতে
পারেনি
বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকুলতার কারণে ৷ কারণ সে গর্ভবতী
হয়েছে সন্তান ও প্রসব করেছে । কিন্তু পুরুষের মতে ,
গর্ভধারণ ও প্রসব কোনো অতিরিক্ত কাজ নয় ৷ ইহা যেন তাদের প্রকৃতিক ও জৈব ব্যাপার
মাত্র ৷ তাই নারীকে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে তাদের নিজেরই জৈবনিয়তির কাছে ।
এই সুযোগে পুরুষ তার জৈব ও পাশবিক স্বভাব অতিক্রম ক’রে হয়ে উঠেছে স্রষ্টা বা উদ্ভাবক । হয়েছে মর্যাদাসম্পন্ন পুরুষ মানুষ । পুরুষেরা বিপজ্জনক কাজ ও ভয়ঙ্কর জন্তুদের সাথে লড়াই করে
জীবন বিপন্ন করেছে ৷ পুরুষেরাই মানুষকে পশুর
পর্যায় থেকে উত্তীর্ণ করেছে মানুষের পর্যায়ে ।
অন্যদিকে নারী টিকিয়ে
রেখেছে মানুষের প্রজাতিকে ৷ আবার পুরুষ বদলে
দিয়েছে পৃথিবীকে ৷ কিন্তু নারীর নিয়তি , অন্তত
এখন পর্যন্ত , হয়ে রয়েছে জীবনের পুনরাবৃত্তি করা ৷ কিন্তু জীবনের
পুনরাবৃত্তি করে কেউ পৃথিবীর প্রভু হতে পারে না ।
জৈবিক ও আর্থিক কারণে পুরুষ হয়েছে
পৃথিবী ও নারীর প্রভু । আরণ্যপর্বে
নরনারীর যৌনসম্পর্কের রীতি ছিলো নির্বিচার বা মুক্ত যৌনসম্পর্ক ৷ যে-কোনো নারী মিলিত হতে পারতো যে-কোনো পুরুষের সাথে । আরণ্য পর্বের মানুষ আজকের মত ভণ্ডামি আয়ত্ত করে ওঠেনি । তখন মানুষের জীবনে এত জটিলতা ও এত ভন্ডামি ছিল না ৷
২ . বর্বরতার পর্ব:
মানুষের আরণ্যপর্বের পর আসে কৃষি বা বর্বরতার পর্ব । যাযাবর মানুষ স্থির হতে থাকে কোনো উর্বর অঞ্চলে , তখন সে হয়ে ওঠে কৃষক ; এবং নারী ও পশু হয় তার প্রধান সম্পদ , আর মানুষ হয়ে ওঠে গোস্বামী । ভূমিকা বদলায় সে সময় নারীরও । যাযাবর মানুষের ছিল শুধু বর্তমান ৷ কিন্তু কৃষিসমাজে মানুষের বর্তমানের সঙ্গে , অতীত ও ভবিষ্যৎ ও যুক্ত হয়ে যায় ।
তখন পুরুষ কৃষক অনুভব করে নারী ও জমি একই প্রকৃতির , উভয়ই উর্বর ;
চাষ করলে উভয়ই উৎপাদন করে , জমি ফলায় ফসল ,আর নারী প্রসব করে সন্তান ।
তবেএই-সময়ে সন্তান উৎপাদন ও ফসল উৎপাদনের দায়িত্বও ছিলো নারীর ৷ তাই নারী শুধু সন্তানই ধারন
করতো না , নারীরা তখন চাষের কাজও করতো । তাই তার অনেক মূল্য ছিলো , অনেক গৌরবও
ছিল নারীর ।
এ-সময় তাই দিকেদিকে দেখা দেয় নারীর আরেক রূপ , তখন তাকে অভিহিত করা হয় উর্ভরতার মহাদেবী ; ও মহামাতা উপাধিতে ।
এ-সময় তাই দিকেদিকে দেখা দেয় নারীর আরেক রূপ , তখন তাকে অভিহিত করা হয় উর্ভরতার মহাদেবী ; ও মহামাতা উপাধিতে ।
এ-সময়ে নারীপুরুষের যৌনসম্পর্কেরও কয়েকটি রূপ দেখা দেয় , উন্মেষ ঘটে পরিবারের আদিরূপটির। পরিবারের আদি রূপটি হচ্ছে
একরক্তসম্পর্কের পরিবার ।
একরক্তসম্পর্কিত পরিবারে
বিয়ে হতো প্রজন্মক্রমে ৷ পিতামহ ও পিতামহী পরস্পরের ভাইবোন ও স্বামী-স্ত্রী
,তাদের পুত্রকন্যারা
একে-অন্যের ভাইবোন ও স্বামী-স্ত্রী , তাদের পুত্রকন্যারাও ভাইবোন ও স্বামী-স্ত্রী।
তবে পর্যায় ক্রমে নিষিদ্ধ হয় একরক্তসম্পর্কিতদের মধ্যে বিয়ে , উদ্ভূত হয় এমন এক ধরনের পরিবারের যাকে ,মর্গান ও এঙ্গেলস বলেছেন
পুনালুয়া পরিবার’ ।
পুনালুয়া পরিবারে আপন বা সমান্তরবর্তী কজন বোন
হতো তাদের সাধারণ স্বামীদের সাধারণ স্ত্রী , তবে
বাদ পড়তো তাদের ভাইয়েরা । এ-পরিবারে স্বামীরা পরস্পরের ভাই হতো
না ,তারা হতো একে-অন্যের ঘনিষ্ঠ সাথী বা
পুনালুয়া । ঠিক একইভাবে একদল আপন বা সমান্তরবর্তী ভাইয়েরা
মিলিতভাবে বিয়ে করতো একদল নারীকে , এবং
স্ত্রীরা হতো একে-অন্যের সাথী । এটা ছিলো সমষ্টি বিয়ে , যা থেকে উৎপত্তি হয়েছিলো গোত্রের ।
সমষ্টিগত
বিয়ের পরিবারে বাপের ঠিক ছিলো না , কিন্তু মা ছিলো সুনিশ্চিত । সমষ্টিগত বিয়ের মায়েরা পরিবারের সব সন্তানকেই নিজের
সন্তান মনে করতো ৷ তবে নিজের পেটের সন্তানদের চিনতে পারতো পৃথক করে । তাই সমষ্টি বিয়েতে শুধু মায়ের দিক
থেকেই সম্ভব ছিলো বংশপরস্পরা ঠিক করা ; তাই তাতে স্বীকৃতি পেতো শুধু মাতৃধারা ৷
সমষ্টি বিয়ের কালে বা তারও আগে কিছু সময়ের জন্যে দেখা
দিয়ে ছিলোজোড়বাঁধা পরিবার ;
যাতে বহু স্ত্রীর মধ্যে একটি পুরুষের থাকতো
একটি মুখ্য স্ত্রী ।
আবার ওই পুরুষটি হতো ওই নারীর বহু পতির মধ্যে মুখ্য বা প্রধান পতি । রক্তসম্পর্কিত
বিয়ে নিষিদ্ধ হওয়ার আগে পুরুষের জন্যে নারীর অভাব ঘটতো না , পর্যায়ক্রমে নারী দুস্প্রাপ্য হয়ে ওঠে । এর ফলে নারীর অভাবে জোড়বাঁধা বিয়ের প্রচলনের সাথেসাথে
শুরু হয়ে যায় নারীহরণ ও নারী কেনাবেচার প্রক্রিয়া ।
তবে জোড়বাঁধা
বিয়ে ছিলো অস্থায়ী ও দুর্বল ; তাই এর ফলে আগের সাম্যতন্ত্রী পরিবার ও
গৃহস্থালি ভেঙ্গে যায় নি ।
সমষ্টি বিয়ের সাম্যতন্ত্রী পরিবারে
ও নারীদের আধিপত্য ছিলো । কারণ জনক কে নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হতো না
, তাই মা-ই ছিলো স্বীকৃত , পিতা তখনো স্বীকৃতি পায় নি ।
অর্থাৎ সমাজের সূচনাকালে নারীরা পুরুষের দাসী
ছিলো না ; আরণ্য পর্বের ও কৃষি বা বর্বর পর্বের
নারীরা ছিলো স্বাধীন ও সম্মানিত । সাম্যতন্ত্রী পরিবারে নারীরা বা বেশির
ভাগ নারী হতো একই গোত্রের, আর
পুরুষেরা হতো বিভিন্ন গোত্রের ; তাই আদিম যুগে ছিলো নারীর আধিপত্য ।
আর নারীরাও এখনকার মতো বিচ্ছিন্ন ছিলো না শ্রম থেকে , তখন নারীকে তাঁর শ্রমই সত্যিকার ভাবে সম্মানের আসনে
অধিষ্টিত করত
। সমষ্টি বিয়েতে
এক নারীর ছিলো বহু পতি , অবশ্য
পরে তা একপতিতে সমাপ্তি পায় ।
পাতিব্রত্য
এখন নারীর বিশেষ
গুণ হিসেবে
বিবেচিত হয়
৷ কিন্তু একপতিতে সীমাবদ্ধ হওয়ার প্রথম
দিকে নারীর পাতিব্রত্য হওয়া ছিলো নারীর অপরাদ । যার জন্যে
নারীকে প্রায়শ্চিতও করতে হতো ।
এই সময়ে
নারীদের বিচিত্র ধরণের যৌনসম্পর্কের বিধান প্রচলিত ছিলো তখনকার সমাজে , বিশেষ
করে উপজাতি সহ কোনো কোনো অঞ্চলের কুমারী নারীদের
মধ্যে । পরবর্তীকালে
আর্থনীতিক বিকাশের ফলে এসবের অবসান ঘটেছে ।
৩ .সভ্যতার যুগ :
বর্বরতার মধ্যস্তর থেকে শেষ স্তরে ওঠার সময় থেকে জোড়বাঁধা বিয়ে থেকে উদ্ভব ঘটে একপতিপত্নী বিয়ের ।
অর্থাৎ সভ্যতার
যুগের সূচনার সময় থেকেই একপতিপত্নী বিয়েই রীতি হয়ে ওঠে । এর ভিত্তি ছিলো পুরুষাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে সুনিশ্চিত
পিতৃত্বে সন্তান উৎপাদন । তখন পিতাই সমস্ত
সম্পত্তির মালিক ছিলো । তাই পিতা এমন
কাউকে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করবে না , যে তার ঔরষে
জন্ম নেয় নি ; বাপের সম্পত্তির
উত্তরাধিকারী হবে তার নিজের সন্তান ,বিশেষ করে পুত্র, এটাই স্বাভাবিক নয় কী ?
এই ভাবে সভ্যযুগের সূচনাতেই নারীদের বীরযুগের পতন ঘটে
পরিবর্তন ঘটে নারীদের লামাজিক অবস্থানেরও ।
আর তখন থেকেই দেখা যায় পুরুষেরা বিয়ের বাইরে
যৌনসম্পর্ক রাখছে বা রাখতে সক্ষম হচ্ছে স্ত্রী ছাড়া অন্য নারীদের সঙ্গেও ৷
কিন্তু নারীরা বাধ্য হচ্ছে কঠোর সতীত্ব বা
পাতিব্রত্য পালন করতে । সভ্যতার যুগের আরম্ভ থেকেই নারী হয়ে ওঠে
পুরুষের বৈধ উত্তরাধিকারীর জননী , তার
প্রধান গৃহকর্ত্রী এবং দাসীদের প্রধান । স্বামীরা দাসীদের নিয়মিত সম্ভোগ করতো বা করতে পারত আবার বাইরে গণিকা উপভোগ ও করতো বা করতে পারত ৷ কিন্তু স্ত্রীদের থাকতে হতো
আপাদমস্তক সতী কঠোরভাবে রক্ষা করতে হতো তার সতিত্বকে ৷
তাই একপতিপত্নী বিয়ে নির্মমভাবে সত্য হয় শুধু নারীর
জন্যে কিত্তু পুরুষের
জন্যে নয় । তাই একপতিপত্নী বিয়েতে দেখা দেয় নি নারী পুরুষের সদ্ভাবের কোন
লক্ষণ বা বিয়ের একটি আদর্শ রূপ হিসেবেও একবিয়ে প্রতিষ্ঠা পায় নি । প্রথমে যেরূপ এটি দেখা
দিয়েছিলো নারীর ওপর পুরুষের আধিপত্যরূপে এবং এখনো তাই আছে ।
উৎপাদন বা আর্থিক-ক্রিয়াকাণ্ডে যার অংশ কম বা নেই তার দুরবস্থা কেউ
ঠেকিয়ে রাখতে পারে না ৷ নারীর দুরবস্থার কারণও তাই ; নারী
বহুকাল ধরে আর্থিক ক্রিয়াকলাপ থেকে নির্বাসিত হয়ে
পরগাছায় পরিণত হয়েছে (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া )আর যে নারী
আর্থনীতিকভাবে শোষিত সে সব দিকেই শোষিত
বলা যায় ।
পশ্চিমের নারীবাদীরা এখন আর একপতিপত্নী বিয়ের পবিত্রতাকে বিশেষ
মূল্যবান মনে করেন না ৷
তারা নারীর সামাজিক-আর্থিক ও যৌন সব ধরণের বর্তমান প্রচলিত প্রথা থেকে মুক্তি চান ৷ গত চারদশকে
পশ্চিমের নারীবাদীরা বদলে দিয়েছেন তাঁদের সামাজিক বহু এলাকা এবং যৌন এলাকায় তারা যে পরিবর্তন ঘটিয়েছেন
তাকে বিপ্লবও বলা যায় ।
তবে পৃথিবী এখনো পুরুষের আর নারীরা এখনো
পরাজিত ও বন্দী ৷ নারীর মুক্তির জন্যে দরকার বড়ো ধরনের সামাজিক বিপ্লবের ; যতোদিন
ওই বিপ্লব না ঘটানো যাবে , ততোদিন নারী হয়ে থাকবে পুরুষের অধীনে
৷ থাকবে পুরুষের দাসী ও যৌনসামগ্রী হয়ে ৷( অবশ্যই কিছু ব্যতিক্রম বাধে )।
( যারা এসব ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী, তাঁরা হুমায়ুন আজাদের নারী গ্রন্থের নারীজাতির ঐতিহাসিক মহাপরাজয় অধ্যায়-৫১ - ৬১ , পড়তে পারেন )
সূত্র ;-এই লেখাটি হুমায়ুন আজাদের নারী গ্রন্থের অনুকরণে লেখা হয়েছে ।
(বি : দ্র : এই লেখাটায় কারো ধর্মীয় বিশ্বাসে বা অন্য কোনোভাবে
কাউকে আঘাত দেয়ার জন্যে লেখা হয় নাই ,কোনো গণমাধ্যমে
ও ইহা প্রকাশ করা যাবে না, লেখকের অনুমতি ছাড়া ,ধন্যবাদ )
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন