আজ ১২ ভাদ্র ১৪২২ বঙ্গাব্দ বুধবার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৯তম প্রয়াণ দিবস।
‘বিশ্বাস করুন আমি কবি হতে আসিনি আমি নেতা হতে আসিনি,
আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম প্রেম পেতে এসেছিলাম।
সেই প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নিরস পৃথিবী থেকে
নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম...।
তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আর আমি জাগিব না,
কোলাহল করি সারা দিনমান কারও ধ্যান ভাঙিব না।
নিশ্চল নিশ্চুপ
আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধুর ধূপ...।
‘পূজারী দুয়ার খোলো ,
মসজিদে কাল শির্নী আছিল,-অঢেল গোস্ত–র”টি, বাঁচিয়া গিয়াছে,
মোল্লা হাঁকিল-‘তা হলে শালা, সোজা পথ দেখ!
ভুখারী ফিরিয়া চলে,
তব মস্জিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী।
ভেঙে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া-দ্বার !
মানুষেরে ঘৃণা করি’ ও’ কারা কোরান,
গাহি সাম্যের গান-যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান
যেখানে মিশছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুস্লিম-ক্রীশ্চান।
মিথ্যা শুনিনি ভাই,
(বিদ্রোহী কাজী নজরুলের সাম্যবাদী)
‘পূজারী দুয়ার খোলো ,
ক্ষুধার ঠাকুর
দাঁড়ায়ে দুয়ারে পূজার সময় হ’ল !
’স্বপন
দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয়,
দেবতার বরে আজ রাজা-টাজা
হ’য়ে যাবে নিশ্চয় !
জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র,
ক্ষুধায় কন্ঠ ক্ষীণ, ডাকিল পান’,
‘দ্বার খোল বাবা, খাইনি ক’ সাত দিন !
’সহসা
বন্ধ হ’ল মন্দির, ভুখারী ফিরিয়া চলে,
তিমির রাত্রি, পথ জুড়ে তার ক্ষুধার মানিক জ্বলে
!
ভুখারী ফুকারি’ কয়,
‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয় !’
মসজিদে কাল শির্নী আছিল,-অঢেল গোস্ত–র”টি, বাঁচিয়া গিয়াছে,
মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটি কুটি,
এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে আজারির চিন্,
বলে, ‘ বাবা, আমি ভূখা-ফাকা আমি আজ নিয়ে সাত
দিন!
’ তেরিয়া
হইয়া হাঁকিল মোল্লা-‘ভ্যালা
হ’ল
দেখি
লেঠা,ভূখা
আছ মর গো-ভাগাড়ে গিয়ে!
নামাজ পড়িস বেটা?
’ভূখারী
কহিল, ‘না
বাবা!’
মোল্লা হাঁকিল-‘তা হলে শালা, সোজা পথ দেখ!
’ গোস–র”টি নিয়া মসজিদে দিল তালা !
ভুখারী ফিরিয়া চলে,
চলিতে চলিতে বলে-
‘আশিটা
বছর কেটে গেল,
আমি
ডাকিনি তোমায় কভু,
আমার ক্ষুধার অন্ন তা ব’লে
বন্ধ করনি প্রভু।
তব মস্জিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী।
মোল্লা-পুরত লাগায়েছে তার সকল
দুয়ারে চাবী!
’কোথা
চেঙ্গিস্, গজনী-মামুদ, কোথায় কালাপাহাড়?
ভেঙে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া-দ্বার !
খোদার ঘরে কে কপাট লাগায়, কে দেয় সেখানে তালা ?
সব
দ্বার এর খোলা রবে, চালা
হাতুড়ি শাবল চালা !
হায় রে ভজনালয়,তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে
স্বার্থের জয় !
মানুষেরে ঘৃণা করি’ ও’ কারা কোরান,
বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি’ মরি’
ও’ মুখ
হইতে কেতাব গ্রন্থ’ নাও
জোর ক’রে
কেড়ে,
যাহারা
আনিল গ্রন্থ’-কেতাব
সেই মানুষেরে মেরে,
পূজিছে গ্রন্থ’ ভন্ডের
দল !
মূর্খরা সব শোনো,
মানুষ এনেছে গ্রন্থ’;-গ্রন্থ’ আনেনি মানুষ কোনো।
গাহি সাম্যের গান-যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান
যেখানে মিশছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুস্লিম-ক্রীশ্চান।
কে তুমি?- পার্সী? জৈন? ইহুদী? সাঁওতাল, ভীল, গারো?কন্ফুসিয়াস্? চার্বআখ চেলা?
বন্ধু, বলিনি ঝুট, এইখানে এসে লুটাইয়া পড়ে সকল
রাজমুকুট।
এই হৃদ্য়ই সে নীলাচল,
কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন,বুদ্ধ-গয়া এ, জেরুজালেম্
এ, মদিনা, কাবা-ভবন,মস্জিদ এই, মন্দির এই, গির্জা
এই হৃদয়,এইখানে ব’সে ঈসা মুসা পেল সত্যের পরিচয়।
এই রণ-ভূমে বাঁশীর কিশোর গাহিলেন মহা-গীতা,
এই রণ-ভূমে বাঁশীর কিশোর গাহিলেন মহা-গীতা,
এই মাঠে হ’ল
মেষের রাখাল নবীরা খোদার মিতা।
এই হৃদয়ের ধ্যান-গুহা-মাঝে বসিয়া
শাক্যমুনি ত্যজিল রাজ্য মানবের মহা-বেদনার ডাক শুনি’।
এই কন্দরে আরব-দুলাল শুনিতেন আহবান,
এইখানে বসি’ গাহিলেন
তিনি কোরানের সাম-গান !
মিথ্যা শুনিনি ভাই,
এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই।
(বিদ্রোহী কাজী নজরুলের সাম্যবাদী)
কবি আরো বলেছেন
‘ যেদিন আমি চলে যাব সেদিন হয়তবা বড় বড় সভা হবে,
কত প্রশংসা কত কবিতা বেরুবে হয়ত আমার নামে,
দেশপ্রেমিক-ত্যাগী-বীর-বিদ্রোহী বিশেষণের পর বিশেষণ,
টেবিল ভেঙ্গে ফেলবে থাপ্পড় মেরে,
বক্তার পর বক্তা এই অসুন্দরের শ্রদ্ধা নিবেদনের শ্রাদ্ধ দিনে-বন্ধু তুমি যেন যেওনা।
যদি পার চুপটি করে বসে আমার অলিখিত জীবনের কোন একটি কথা স্মরণ করো,
তোমার ঘরের আঙ্গিনায় বা আশেপাশে যদি একটি ঝরা পায়ে পেষা ফুল পাও
সেইটিকে বুকে চেপে বলো,
বন্ধু আমি তোমায় পেয়েছি...।
‘বিদ্রোহী’ কবিতা নজরুল’
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন