সমাজবিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণে বাংলাদেশের বর্তমান সমাজ , রাষ্ট্র এবং লুম্পেন পুঁজিপতি শ্রেণীর বিকাশের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট :

 
     
                   সমাজবিজ্ঞানীদের  বিশ্লেষণে  বাংলাদেশের  বর্তমান  সমাজ , রাষ্ট্র  এবং  লুম্পেন  পুঁজিপতি  শ্রেণীর  বিকাশের  ঐতিহাসিক  প্রেক্ষাপট : 

                কিছুলোকের হাতে বিশালভাবে অর্থ পুঞ্জীভূত হয়ে ‍আছে। যারা অর্থবান তারাই শক্তিমান।  দু’টো অকল্যাণের শক্তি হাতে হাত ধরে চলছে।  পেশীশক্তি এবং অর্থশক্তি দুটো ‍যুক্ত হয়ে একটা ভারসাম্যহীন সমাজব্যবস্থা সৃষ্টি করেছে। এখন তরুণ সমাজ মনে করছে, কোনভাবে কোন দলের নেতা হতে পারলে আমার কাছে পেশীশক্তি আসবে এবং সেই পেশীশক্তি ব্যবহার করে আমি অর্থবান হব।  এটা ভয়ানক। ’  অনুপম সেন   । 
              

    ভূমিকা ;
            সর্বোপ্রথম বিশ্বে  তখনকার  গ্রিসের  উপজাতীয়  সমাজ  ভেঙ্গে  নগর-রাষ্ট্রের  এবং বিভিন্ন  ধরনের  শাসন  বা  রাষ্ট্রব্যবস্থার  বিকাশ  ঘটেছিল ৷ প্রথমে  গ্রিসে  ছোট  ছোট  রাজতন্ত্র পরে  অভিজাততন্ত্র  এবং আরো  পরে  ধনিকতন্ত্র  সহ  স্বৈরতন্ত্র  এবং  সবশেষে  গণতন্ত্রের  বিকাশ  এবং বিবর্তন  ঘটেছিল ৷ তবে  কোন  তন্ত্রের  পর  কোন  তন্ত্রের  উদ্ভব  বা  উথ্থান  হবে  তার  কোনো  নির্দিষ্ট  ধারা  না  থাকলেও  রাষ্ট্রব্যবস্থার  বিবর্তেনের  মাধ্যমেই  তা  প্রতিষ্ঠিত  হয়েছে  ৷

          গ্রিসে  তখনই দার্শনক ও চিন্তাশীল  ব্যক্তিদের  মনে  রাষ্ট্র  ও  ব্যক্তির  সম্পর্ক  নিয়ে একটি প্রশ্ন  দেখা    দিয়েছিল ৷তাই গ্রিসের  দার্শনিকেরা তখন  প্রশ্ন  উথ্থাপন  করেন যে , রাষ্ট্র  মানুষকে  ‘ সভ্য মানুষ’  হয়ে  ওঠার  পথে  কি ভূমিকা  পালন  করবে ? ব্যক্তি  রাষ্ট্রের  জন্যে , না  রাষ্ট্র  ব্যক্তির  জন্য ? রাষ্ট্রের  মধ্যে  কি  ব্যক্তির  পূর্ণতাপ্রাপ্তি  ঘটবে ? না  রাষ্ট্র  কেবল  বিভিন্ন  গোষ্ঠী  স্বার্থের  হাতিয়ারে ব্যবহৃত  হবে ? রাষ্ট্রের  সহায়তায়  কোনো  এক  পর্যায়ে  এসে কি       ‘ ব্যক্তি  মানুষের আত্মার ’  পূর্ণ  ও  স্বাধীন  মুক্তি  সম্ভব  হবে ?

          এই সব  প্রশ্নের  একটা  প্রাথমিক  রূপরেখা  দার্শনিক  ও  রাষ্ট্রবিজ্ঞানী  প্লেটোর লেখা ও সমাজদর্শেনে  পাওয়া  যায় ৷ যখন  এথেন্স  ও  স্পার্টার  মধ্য  ৩০  বছর  স্থায়ী পেলোপনেশিয়ান  যুদ্ধ  চলছিল তখন  ৪২৭  সালে  এথেন্সে  দার্শনিক  প্লেটো  জন্মগ্রহন  করেন  ৷ এই সময়ে  এথেন্সে  দুর্ভিক্ষ  ও  মাহামারীতে দেশের তিনভাগের  একভাগ  লোকই মারা  যায় ৷ তখন গ্রিসের রাষ্ট্রব্যবস্থায়  অনেক  পরিবর্তন ঘটে এবং  অনেক  সংঘাতের  পর আবার  গ্রিসে গণতন্ত্রের  প্রতিষ্ঠা   হয় ৷ তাই বোধহয়  প্লটো  জন্মেই  দেখেন ক্ষুব্ধ এক  এথেন্সকে  ৷ তবে  প্লটোর  জন্মের  অনেক  পূর্বেই খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ  শতকে গ্রিসের  কৌম  সমাজ  ভেঙ্গে  ধীরে  ধীরে এক ধরনের অভিজাতাতান্ত্রিক , রাজতান্ত্রিক এবং গণতান্ত্রিক  নগররাষ্ট্র  গড়ে  উঠেছিল ৷  

         প্লেটো  রাষ্ট্রের  বা  সমাজের  স্বরূপ  অনুসন্ধান  করতে গিয়ে  সত্তার  জ্ঞানতত্ত্ব  বা  EPISTOMOLOGY  এর মূল সূত্র বুঝতে  চেষ্টা  করেন  ৷ প্লেটো  রাষ্ট্র  ও  সমাজের  অবস্থা  বিশ্লেষণে  এর  একটি  FORM বা  IDEA নামক    তত্ত্বটি আবিস্কার  করে তার  ব্যবহার  করেছেন  এবং  বলেছেন এটাই  তাঁর  রাষ্ট্রতত্ত্বের EPISTEMOLOGICAL  বা  জ্ঞানতত্ত্বের  ভিত্তি ৷ তিনি  এই  তত্ত্বটিকে  METHODOLOGY  বা  পদ্ধতি  হিসেবেও কাজে  লাগিয়েছেন ৷ তাই  তিনি  Republic এ  রাষ্ট্রের  যে  রূপরেখা  দিয়েছেন , তাতে  তিনি  দেখিছেন যে , রাষ্ট্রের  আদি  রূপ  থেকে বিচ্যুতি  ঘটলে  জন্ম  নেয়  Tymarchy বা অভিজাততন্ত্র  ৷ যা রাষ্ট্রের আদি IDEA এর  কাছাকাছি এবং  তাদের  সামনেও  একটি  আদর্শ  থাকে , থাকে  একটি  সম্মানবোধ  ৷

            কিত্তু  যখন  রাষ্ট্রপরিচালকরা  রাষ্ট্রের  ট্রেজারি  বা  অর্থ-বিত্তের  কর্তৃত্ব  পয়ে  যান  তখন রাষ্ট্রের পরবর্তী  বিচ্যুতি  ঘটে ৷ তখন  রাষ্ট্রযন্ত্র  পরিণত  হয়ে  যায়  OLIGARCHY  বা ধনিকশ্রেনীর  রাষ্ট্রে , জন্ম  নেয়  ধনিকতন্ত্রের  ৷ ধনিকতন্ত্রে  কিছু  ধনিকশ্রেণী  রাষ্ট্রক্ষমতায়  অধিষ্ঠিত  হয়ে নিজেদের  স্বার্থে  রাষ্ট্র  পরিচালনা  আরম্ভ  করেন  ৷ ধনীরা  যারা  তাদের  সমশ্রেণীভক্ত ধনী  নয়  তাদেরকে  রাষ্ট্রক্ষমতা  থেকে  বঞ্চিত  করেন ৷ তাঁরা  তখন অধিকাংশ  ক্ষেত্রে  শঠতা , অস্ত্র  বা  পেশীশক্তির  জোরে  ক্ষমতাকে  নিরস্কুশ  করার চেষ্টা  করেন ৷   রাষ্ট্র  তখন ধনীর  রাষ্ট্র  ও  গরিবের  রাষ্ট্রে   পরিণত হয়ে একটি ব্যাধিগ্রস্ত  রাষ্ট্রের রূপ  নেয় ৷

            ক্ষেত্রবিশেষে  গৃহযুদ্ধ  বা  শ্রেণী  যুদ্ধের ( এমনকি  ধর্মযুদ্ধের ) ক্ষেত্র  প্রস্তুত হয় ৷ প্লেটো  আরো  অনেক  বিচার  বিশ্লেষণ  করেছেন  একটি  আধুনিক  রাষ্ট্র  প্রতিষ্ঠার  ক্ষেত্র  তৈরি  করতে  ৷ প্লেটো  বলেছেন  মানুষের  আত্মার  রয়েছে  তিনটি বিশেষ গুণ - জ্ঞান বা  wisdom , সাহস বা spirit  এবং  appetite বা  স্পৃহা ৷  তিনি  আরো  বলেছেন  একটি  মানুষের  পরিচয়  বা  বৈশিষ্ট্যনির্ভর  করে  তার  মধ্যে  কোন  গুণের  প্রভাব  বেশী  তার  ওপর  ৷ তার  মতে  রাষ্ট্রের  পরিচালনের  ব্যাপারে  ও  তাই  ঘটে ৷    তবে  শেষপর্যন্ত  প্লেটো  এমন  একটি  রাষ্ট্র  চেয়েছিলেন  যেখানে দার্শনিকেরাই  রাষ্ট্র  পরিচালকের সকল দায়িত্ব  পালন  করবেন  ৷

          আর  একজন  রাষ্ট্রবিজ্ঞানী  ও  দার্শনিক  এরিস্টোটল  বলেছেন , মানুষের  সমাজে  রাষ্ট্রের  আগে  পরিবারের  উদ্ভব  হলেও  রাষ্ট্রই  মানুষের  প্রকৃতিগত প্রভুস্বরূপ  ৷ কারণ  মানুষ  কেবল  রাষ্ট্রের  মধ্যেই  তার  মানবসত্তাকে  পূর্ণতা  দিতে  পারে ৷ তাই  তিনি  বলেছেন ‘ A human  being  is  by  nature a political  animal ’ ,  আদিম  সমাজে  মানুষ তার  যৌনপ্রবৃত্তি  এবং  ক্ষুধা-তৃষ্ণাকে  পরিতৃপ্তি  দিতে  পারলেও সেখানে  নিজের  মানবসত্তাকে সম্পূর্ণ  পরিস্ফুট  করতে  পারতো    না ৷ এরিস্টোটলের  মতে  রাষ্ট্রই  মানুষকে  যথেষ্ট বিকাশ  ও অবকাশের  সুযোগ করে দেয় ৷ রাষ্ট্র  কর্তৃক  মানুষ যথেষ্ট  অবকাশের  সুযোগ  পেলেই  একজন  যথার্থ  মানুষ  হয়ে  উঠতে  পারে ৷ তবে  তিনি  এও  বলেছেন  রাষ্ট্র  পরিচালনায়  সুশাসনের  একটি  অর্থ-সামাজিক  ভিত্তি অবশ্যই থাকতে  হবে ৷ যা শুধু একটি  সুশিক্ষিত  ও  সচেতন  মধ্যবিত্ত  শ্রেণী  এর  নিশ্চয়তা  দিতে  পারে ৷    
          তবে প্লেটোর এই  বক্তব্য  সমাজে সাদরে  গৃহিত  হয়  নি ৷ গৃহিত  হয়েছে আব্রাহাম  লিঙ্কনের  গ্যাটিসবার্গ  বক্তৃতার  সারমর্মের  কথাগুলো  ৷ তিনি  বলেছেন যে , রাষ্ট্রের  জন্ম  হয়  ব্যক্তির  জন্যে ৷ আব্রাহাম  একটি  গণতান্ত্রিক  রাষ্ট্রের ব্যাপারে  বলেছেন যে , একটি  প্রকৃত  গণতান্ত্রিক  রাষ্ট্র  ব্যক্তির  সার্বিক  বিকাশকে  উন্মুক্ত  করার  পরিবেশ  তৈরি  করে ব্যক্তির  বিকাশকে  প্রস্ফুটিত  করে এবং  ব্যক্তির  সাধ্যের  পরিধি  বৃদ্ধি  করে দেয় ৷ এটাই  একটি  আদর্শিক  রাষ্ট্রর  অন্যতম  কাজ হওয়া  উচিত ৷

  

মূল  বিষয় ;
          আধুনিক  রাষ্ট্রে  ব্যক্তির  অধিকারকে  প্রতিষ্ঠা  করতে  পাশ্চাত্যের  সমাজ-দার্শনিকরা যে গভীর  রাষ্ট্রতত্ত্বের  জন্ম  দিয়েছিলেন , প্রাচ্যে  তেমন  কিছু কাজ   হয়নি ৷ এর  অন্যতম  কারণ প্রাচ্যের  সমাজ-বিন্যাসের বা Social Formation এর  প্রকৃতি  পাশ্চাত্য  থেকে  আলাদা  ছিল ৷ তাই  পাশ্চাত্যের  মত  প্রাচ্যের  সমাজবিন্যাসে  কোনো সংস্কার মুক্ত  শহরকেন্দ্রিক  বুর্জোয়াশ্রেণীর  বিকাশ  ঘটেনি ৷

           ফলে প্রাচ্যে  বণিকসংঘ বা merchant  guilds , শিল্পসংঘ বা craft guilds বা corporate house ইত্যাদির  বিকাশ  হয়নি যার  মাধ্যমে ব্যক্তি  স্বাধীনতা বা  ব্যক্তি  অধিকার অর্জন  করতে পারা যায় ৷ প্রাচ্যের  শ্রীহিন ,  শস্ত্রহীন  গ্রাম সমাজ  রাষ্ট্রকে  দূর থেকে খাজনা   দিয়েছে ৷ গ্রামের কৃষক তার  স্বাধীনতা  বিঘ্নিত হচ্ছে কি  না  বুঝতে  না পারায় বা সে যে পরাধীন তা  তর  মনে না  হওয়ায়  রাষ্ট্র থেকে তারা স্বাধীনতা  অর্জনের  কোনো  চেষ্টাই  করেনি ৷ফলে রাষ্ট্রথেকে ব্যক্তির  অধিকার  আদায়ে কেউ অগ্রসরই হয় নি ৷ তা  ছাড়া  প্রাচ্যের  রাষ্ট্রের   ‘ রাজস্ব  আদায়কারীরা’ জমির  মালিকানা  না  পাওয়ায়  তাদের  পক্ষে  উৎপাদক  বা কৃষককে  ভূমি  থেকে  উৎখাত  করে তাদেরকে  শ্রম-বিক্রিকারী  শ্রমিকে  পরিণত  করাও সম্ভব  হয় নি ৷

   এই কারণে প্রাশ্চাত্যে  ব্রিটিশরা  আসার  আগ পর্যন্ত  রাষ্ট্রের  বা  তার  প্রতীক  রজার  নিরঙ্কুশ  ক্ষমতা  অক্ষুণ্ন  থেকেছে এবং রাষ্ট্র  স্বেচ্ছাচারী বা despotic থেকে  গেছে ৷

          পাশ্চাত্যে  শ্রেণীবিকাশ  ও  শ্রেণীদ্বন্দ্বের  কারণে আইনের  ভিত্তিকে  ইহজাগতিক  করতে  হয়েছে ৷ কিত্তু  প্রাচ্যের  অধিকাংশ  দেশেই  ধর্মীয়  আইন ব্যবহার  করে নাগরিকের  জীবনকে  নিয়ন্ত্রন  করে  তাদেরকে  শাসন  করা  হয়েছে ৷ রাজা বা  সুলতান বা  রাষ্ট্র  তাঁদের  সীমাহীন  ক্ষমতা প্রয়োগ  করেছেন   বা   স্বেচ্ছাচার  চালিয়ে গেছেন  ধর্মীয়  বিধান  ব্যবহার  করে ৷ তখন জণপ্রতিনিধির  কোনো  ভূমিকা  না  থাকায়  রাষ্ট্র  নিরঙ্কুশ  ক্ষমতা  প্রয়োগ  করছে ৷ ফলে  ব্যক্তি  সব  সময়  রাষ্ট্রের  নিপীড়ন  বা  আত্যাচারে  অসহায়  থাকতে  হয়েছে ৷

          ব্রিটিশরা  এদেশে  তাদের  শাসন  প্রতিষ্ঠা করতে  গিয়ে প্রথমে  তাদের  নির্মিত  ইহজাগতিক আইন  এদেশেও  প্রবর্তন  করে ৷ এর ফলে এই উপমহাদেশে  ব্যক্তি  প্রথমবারের  মত  আইনের  মাধ্যমে  কিছুটা  ব্যক্তি  অধিকার  ফিরে  পায় ৷ কিত্তু ব্রিটিশ  ঔপনিবেশিক  শাসকরা  উপমহাদেশের  জন্যে  আলাদা  এক  আমলাতন্ত্র  প্রতিষ্ঠা  করে  ৷ ব্রিটিশ  আমলাতন্ত্রকে  যেখানে  Rational Bureaucracy বা   
যৌক্তিক আমলাতন্ত্র  বলা  হয়  কিত্তু  সেখানে  এই  উপমহাদেশে  ইংরেজদের  সৃষ্ট  আমলাতন্ত্র শুধু  তাদের  শাসন শোষণের  প্রয়োজন  মিটিয়েছে ৷ এই দেশের  নাগরিকদের  স্বার্থ  আংশিক  রক্ষা  করেছে  মাত্র  ৷ এই  আমলাতন্ত্রের  প্রধান  কাজ  ছিল ইংরেজ  বুর্জোয়াদের  স্বার্থ রক্ষা করে এই দেশকে  শাসন  করা এবং  এদেশের  সম্পদ  ব্রিটেনে  পাচার  করে  এদেশকে  ব্রিটেনের  কেন্দ্রীয়  শিল্প-পুঁজির  বাজারে  পরিণত  করা ৷

          এদেশে  বহু  শতাব্দী  ধরে  অমাত্য , মহামাত্য , প্রাদেশিক , রাজুক ,আমীর , ওমরাহ , মনসবদার ,সুবেদার , জায়গীরদার , দেওয়ান , জমিদার , ইজারাদার , ইত্যাদি  রাজস্ব-আহরক  রাষ্ট্রের  প্রতিভূ  বা  রাজ-কর্মচারী  হিসেবে  কৃষকের  বা  উৎপাদকের  খাজনা  এবং  উদ্বৃত্ত  আহরণ  করতেন ৷ সম্রাট  বা  বাদশাহের  মর্জিমাফিক বা  ইচ্ছাতেই  এঁদের  ভাগ্য  নির্ধারিত  হতো ৷ এঁদের  পার্লামেণ্ট  বা  সিনেট  প্রভৃতি  যে  সময়ে  যা  নামে  মাত্র  থাকতো এঁদের কোনো  জনপ্রতিনিধি বা  কোনো  পরিষদ বা  কোনো  সংস্থার  কাছে  জবাবদিহি  করতে  হতো  না ৷ এঁদের  ওপর  কোনো  শ্রেণী  কর্তৃত্ব ও ছিল না ৷

          মুখ্যত  এইসব  নানা  উপাধিধারী  কর বা খাজনা  আহরণকারীদের  নিয়েই  গঠিত  হয়েছিল  প্রচ্যের  রাষ্ট্রযন্ত্রের  আমলাতন্ত্র ৷ এই প্রচলিত  আমলাতন্ত্রের  আদর্শেকে  সামনে  রেখে   ব্রিটিশ ওয়ারেন হেস্টিংস  ও প্রধান  ভূমিকা  পালনকারী লর্ড  কর্নওয়ালিস এদেশে  পূর্বে  প্রচলিত  মোগল  প্রশাসন-কাঠামোকে  অনুসরণ  করেই    ইউরোপীয়  ধাঁচের  শাসনব্যবস্থা  কায়েমের  উদ্যোগ  গ্রহণ  করেন ৷ তাই রাজস্ব  আদায়ের  জন্যে মোগল সম্রাট  আকবর   যেভাবে দেশকে সুবা , সরকার , পরগনা বা মহলে  ভাগ  করেছিলেন  - সেই  রাজস্ব  বিভাগকেই  অনেকটা  নতুন  ব্যবস্থায়  গ্রহণ  করা  হয় ৷  তবে ব্রিটিশ  ব্যবস্থার  মুখ্য  কেন্দ্র  বা  ভিত্তি  ছিল  জেলা  প্রশাসন  ৷ তাই   জেলার  রাজস্ব  আদায়করা  এবং  জেলার  আইনশৃঙ্খলা  রক্ষার  দায়িত্ব  দেওয়া  হয়  জেলা  প্রশাসকেই  ৷ শাসন কেন্দ্র থেকে  অনেক দূরে  অবস্থিত  রাজস্ব  আহরণের  দায়িত্বে  নিয়োজিত  মোগল  আমলারা  যে  রকম  অসীম  ক্ষমতার  অধিকারী  ছিলেন , ইংরেজ  প্রবর্তিত  প্রশাসন  ব্যবস্থায়  জেলা  প্রশাসককেও  সে  রকম  অসীম  ক্ষমতা  দেয়া  হয় ৷ আর  এক  বিশেষ  প্রশিক্ষণ  ব্যবস্থা  প্রবর্তন  করে  এই  উপনিবেশের প্রশাসনের  সার্বিক  দায়িত্বে  নিয়োজিত  আমলাদের
‘ প্লেটোর  গার্জিয়ান’ ক্লাসের  মতো  এক  অভিভাবক  শ্রেণীতে  পরিণত  করা  হয় ৷

          এই  ব্যবস্থায়  আমলাদের  সঙ্গে  জনতার  এমনকি অন্যান্য অভিজাত্য , বিত্তশালী  বা  শিক্ষিত  মধ্যবিত্ত শ্রেণীর  মধ্যে ও  দূরত্ব  সৃষ্টি  হয় ৷ তবে ব্রিটেনের  প্রশাসনে  আমলাদের  এত  ক্ষমতা  দেয়া  হয়  নি ৷ সেখানে  আমলারা  ছিলেন  প্রধানত  পুঁজিপতি  শ্রেণীর  নিয়ন্ত্রণাধীন ৷ তাই  বোধহয়  ব্রিটেনে  আমলাতন্ত্রে  কোনো  গার্জিয়ান  ক্লাস  গড়ে  ওঠে  নি  ৷

          ব্রিটিশদের  দু’শ’  বছরের শোষণের  প্রধান  লক্ষ্য ছিল ভূমির  উৎপাদক  ও  কৃষক ৷ ব্রিটিশরা  এদেশে  শিল্পায়নে  কোনো  উৎসাহ তো  দেয়ইনি , বরং তারা  প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি  করেছে  নিজ  দেশের  শিল্প ও পুঁজির  স্বার্থে ৷ এর  ফলে  উপমহাদেশে  বিশেষত  বাংলাদেশে  ঔপনিবেশিক  শোষণ  দীর্ঘস্থায়ী  হওয়ায়  কৃষিতে  জনসংখ্যার  চাপ  বেড়ে  গিয়ে  মাথাপিছু  জমির  পরিমান  ক্রমশই  কমে  যায় ৷ ফলে  বাংলাদেশের  প্রায়  সব  কৃষকই  ক্ষুদ্র  কৃষকে  পরিণত  হতে  হয়েছে ৷ তাই  ইংরেজরা  এদেশ  ছেড়ে  চলে  যাওয়ার  অব্যবহিত  পরেও  কৃষি  ও  শিল্পে  বড়  ধরনের  পুঁজিবাদের  বিকাশ  সম্ভব  হয় নি ৷ ফলে  রাষ্ট্রক্ষমতায়  আসীন  দেশীয়  আমলাতন্ত্রকে  কোনো  শ্রেণী  নিয়ন্ত্রনে  আনা  সম্ভব  হয়নি ৷ অন্যদিকে  ব্রিটিশ শাসন  অবসানের  পরবর্তী  অর্ধশতাব্দীর ( অল্প সময়  বাদে ) পুরো  সময়টাই  বেসামরিক-সামরিক  আমলাতন্ত্র  এদেশকে ( পাকিস্তান  ও  তৎপরবর্তী  বাংলাদেশ ) শাসন  করেছে ৷

          এই  সুযোগে  আমলারা  এদেশের  আইন-কানুন  এমনকি  সংবিধানকেও  তারা  তাদের  নিজেদের শ্রেণীগত  স্বার্থমতে  ভেঙ্গে  তৈরি  করে  নিয়েছে  তাদের  স্বার্থ  রক্ষার একটি  হাতিয়ার রূপে ৷ এরই  পরিপেক্ষিতে  বাংলাদেশে  যে  শিল্পায়ন  হয়েছে  তার সবটাই  হয়েছে  রাষ্ট্রানুকূলে এবং  আমলাতন্ত্রের  তত্ত্বাবধানে ৷  রাষ্ট্রায়ত্ত  ব্যাংকের  ভান্ডার  উন্মুক্ত  করে  জনগণের  সম্পদ ও  অর্থকে  রাষ্ট্রের  আনুকূল্য-ধন্য  ব্যক্তিদের  মধ্যে  বিতরণ  করা  হয়েছে  ৷আর  দেশের  উন্নয়নমূলক  প্রকল্পের  শত  শত  কোটি  টাকা  ভাগ ভাটোরা  করে  নেয়ার  ব্যবস্থা  করা  হয় ৷ এইভাবেই  বাংলাদেশে কিছু রাজনৈতিক নেতা ও সামরিক -বেসামরিক  আমলাতন্ত্রের  সমন্বয়ে  গড়ে উঠেছে  একটি  লুম্পেন  পুঁজিপতি  শ্রেণী ৷ তাই  দেশ  ও দেশের  জনগণের  কাছে  এই  শ্রেণীটির  কোনো দায়বদ্ধতা   নেই ৷ এই  লুম্পেন  পুঁজিপতিরা  আবার  অশিক্ষিত  বা  অল্পশিক্ষিত  হওয়ার  ফলে  বাঙালি  সংস্কৃতি এবং  বিশ্ব  সংস্কৃতির  মহৎ  অর্জনগুলোর  সঙ্গেও  এদের  অনেকের  কোনো  যোগাযোগ ঘটে নি ৷ এমনকি  বাঙালির  ঐতিহ্য থেকে এবং সভ্যতা-সংস্কৃতির  মহৎ  মূল্যবোধ  থেকেও  বিচ্ছিন্ন  এই  নবোথ্থিত  লুম্পেন  বুর্জায়শ্রেণী ৷

          বাঙালি জাতীয়তাবাদকে  বিকৃত  করে  একধরনের বুর্জোয়া অদর্শ-ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি  করেছে  এই  লুম্পেন  গোষ্ঠী ৷ ধর্মকে  বিকৃত  করে  তৈরি  করেছে  এক সাম্প্রদায়িকতায়  পূর্ণ  ধর্মীয়  বিশ্বাস  যা  প্রকৃত  ধর্ম  নয় ৷ ধর্মের  মূল  আদর্শ  মানব  প্রেম , মৈত্রী  ও  করুণা ও  শান্তি  প্রতিষ্ঠা  থেকে  সরে  এসে এরা   বিদ্বেষপূর্ণ  সাম্প্রদায়িক জীবন  ও  কর্মকে  বেঁচে  নিয়েছে ধর্মের  নামে ৷ প্রকৃত  জাতীয়বাদ  হলো  সেই  বোধ  যেখানে  ব্যক্তি  রাষ্ট্রের  ভালো-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণের  সঙ্গে  একাত্মবোধ  করে , রাষ্ট্রের  ভালো  নিজের  ভালো , রাষ্ট্রের  মন্দকে  নিজের  মন্দ মনে  করে ৷কিত্তু  এই  লুম্পেন বুর্জোয়া গোষ্ঠী  বাঙালী জাতীয়তাবাদকে বিকৃত  করে  তাদের  রাজনৈতিক  আদর্শে  জাতীয়তাবাদকে  খণ্ডিত  ও  সাম্প্রদায়িকতায়  আদর্শে ও ধর্মীয় বিদ্বেষে  পূর্ণকরে     তুলেছে এবং  দেশের  সংখ্যাগুরু  অংশকে  খণ্ডিত করে  বিকৃত  ধর্মীয়  ও  জাতীয়তাবাদে  আচ্ছন্ন  করে  রেখেছে এবং  দেশের  সংখ্যালঘু  অংশের  ওপর  নির্যাতন , নিপীড়ন  অব্যাহত  রেখে  জাতীয়তাবাদের  সঞ্জীবনী  চেতনা  থেকে  তাদের  বঞ্চিত  করে  চলেছে ৷

          সাতচল্লিশ-উত্তর  বাংলাদেশে  সচ্ছল  কৃষিজীবী  শ্রেণী  তাদের  ছেলেমেয়েদের  উচ্ছশিক্ষায়  শিক্ষিত  করে  একটা  পেশাজীবী  ও  মধ্যবিত্ত  শ্রেণী  তৈরি  করেছিল ৷ এই  মধ্যবিত্ত  শ্রেণীই  পঞ্চাশ, ষাট ও  সত্তরের  দশকে  বাঙালি মুসলিম  সমাজ  মানসে  এক  নবজাগরণ  ও  রেনেসাঁসের  সূচনা  করেছিল ৷  এঁদের  অন্তরে  বা মানসপটে  বাংলাদেশের  মুক্তিসংগ্রাম ও  মুক্তিযুদ্ধের  মাধ্যমে  স্বাধীনতার  চিন্তা  জাগ্রত  হয়েছিল ; ভাষা  আন্দোলন , একুশ দফা  আন্দোলন  ও  সর্বশেষে  ছয়  দফা  আন্দোলনের  মধ্যে  দিয়ে    একাত্তরের  মুক্তিযুদ্ধে  পূর্ণতা  পেয়েছিল ৷ সে  সময়  মধ্যবিত্ত  শ্রেণীই  সমাজকে নিয়ন্ত্রিত  করেছে , চালিত  করেছে ৷ সেই  মধ্যবিত্ত  শ্রেণীর  আয়তন  এখন  যদিও  অনেক  বড়  হয়েছে ৷ কিত্তু  সমাজের  নেতৃত্ব  এখন  আর  তাদের  হাতে  নেই ৷ এখন  আমলাতন্ত্রের  স্বার্থে  এবং  আমলাতন্ত্রের  সহায়তায়  এই  লুম্পেন  বুর্জোয়াশ্রেণীই  বাংলাদেশের  সমাজ  ও  রাষ্ট্রের  নেতৃত্বে  আসীন  হয়ে  গেছে ৷


          বর্তমানে  দেশটিতে  প্রতিষ্ঠিত  হয়েছে  চরিত্রহীন  পেটিবুর্জোতন্ত্র ;  আর সন্ত্রাস    দূর্নীতিতন্ত্র  এখন  বাংলাদেশের  মূলভিত্তি এবং  মূলনীতি ৷  বাংলাদেশের  স্বাধীনতার  শ্রেণী  চরিত্র  এখন  নব্য  ধনী  শ্রেণীর  কর্তৃত্বপরায়ণ  চরিত্র    উন্নত  বিশ্বের  বুর্জোয়া  রাষ্ট্রে  যে  আইনের  শাসন  থাকে  তা  কিন্তু  বাংলাদেশে  প্রায়  অনুপস্থিত  অথবা  অস্বীকৃত 


                 ঔপনিবেশিক  আমলের  মানুষিকতা  থেকে  বাংলাদেশকে  মুক্ত  করতে  বঙ্গবন্ধু    তাঁর  সরকার  কয়েকটি  বড়  সংস্কারমূলক  পদক্ষেপ  ঘোষণা  করেন    ফলে  ঔপনিবেশিক  কাঠামোর  আমলাতন্ত্র  এবং  নতুন  গড়ে  ওঠা  মিলিটারি  ব্যুরোক্রেসির  একটি  উচ্চাভিলাষী    পাকিস্তানী  মনা  অংশকে  আতঙ্কিত  করে  তোলে    এই  সঙ্গে    বাকশাল  পদ্ধতি    নির্বাচিত  জেলা  গভর্ণর  প্রথা  প্রবর্তনের  দ্বারা  আমলাতন্ত্রের  পুরানো  কাঠামোর  পরিবর্তন  করা  হবে  এবং  পূর্বে  ঘোষিত  সর্বদলীয়  ছাত্রদের  ১১  দফার  আলোকে  রাষ্ট্রীয়করণ  নীতি    কমান্ড  অর্থনীতি  প্রবর্তনের  সংবাদ    প্রকাশিত   হয়    তখন  উপরে  উল্লেখিত    শ্রেণী গোষ্ঠির  সমর্থনকারীরা  দেখতে  পান  যে  তাদের  চোখের  সামনে  তাদের  আমলাতান্ত্রিক  ক্ষমতা  সহ  দেশে  বৃহৎ  পূঁজি  বিকাশের  নতুন  সুযোগ  অবরূদ্ধ  হয়ে  যাচ্ছে    অপরদিকে  তারা  দেখলেন যে  যদি  স্বাধীন  দেশে বাকশাল  পদ্ধতি  প্রবর্তিত  হয়ে    শ্রেণী  স্বার্থভিত্তিক  বহু  দলীয়  রাজনৈতিক  ধারা    বিলীন  হয়ে  যায়   এবং  এর  পরিবর্তে  স্বাধীনতা  যুদ্ধের  আদর্শে  বিশ্বাসী  এবং  মুক্তিযুদ্ধে  অংশ  গ্রহণকারী  দলগুলোকে  নিয়ে  মোর্চা  গঠন  করে  রাষ্ট্রক্ষমতা  তাদের  হতে  ন্যাস্ত  হয়ে  যায়  ,  তবে তারা  যে  উদ্দেশ্যে  আওয়ামী  লীগকে  সমর্থন  করে  স্বাধীনতা  যুদ্ধে  অংশ  নিয়েছিল  তা  ব্যর্থ  হয়ে  যাবে  তাই  বঙ্গবন্ধু  কে  শুধু শপরিবারে  হত্যা  করা  হয় নাই  স্বাধীনতার  চিহ্নিত  শত্রুদের  ক্ষমতায়  বসানো  হয়  এবং  পাকিস্তানী দ্বীজাতিতত্ত্বের  ধারাকে   স্বাধীন  বাংলাদেশে  ফিরিয়ে  আনা হয় এবং  প্রতিষ্ঠা  করা  হয় 
        

         তাই  বাংলাদেশে  আশির  দশক  থেকে  পেশীশক্তি  ও  অর্থশক্তিই  সমাজ  ও  রাষ্ট্রের  নিয়ামক শক্তি হয়ে উঠেছে ৷ ফলে দেশ   এখন  এক  ভীতিকর রূপ নিয়ছে যা রাষ্ট্র ও  সমাজের  সকল  স্তরে  বিরাজমান ও  প্রতিষ্ঠিত  হয়েছে ৷ হয়তো কাগজে-কলমে  ব্যক্তির  অধিকার  রয়েছে , কিত্তু  সমাজের  ও  রাষ্ট্রের  সর্বগ্রাসী  কর্তৃত্বের  সামনে  ব্যক্তি এখন  সম্পূর্ণ   অসহায় হয়ে  পড়েছে ৷

          বাংলাদেশ  মুক্তিযুদ্ধের  মাধ্যমে  স্বাধীনতা  অর্জনের  পর  মনে  করা  হয়েছিল  পাকিস্তানী  দ্বিজাতিতত্ত্বের  অবসান  হয়েছে  ৷ মনে  করা  হয়েছিল  স্বাধীন  বাংলাদেশে  ব্যক্তির  পরিচয়  হবে  ‘ মানুষ’  হিসেবেই ৷ ‘ মানুষ ’   পরিচয়ই হবে  মানুষের  প্রকৃত  পরিচয় স্বাধীন দেশে ৷ যে  কোনো  আধুনিক  রাষ্ট্রে, যেখানে  ব্যক্তির  মৌল  অধিকারসমূহ  বা Fundamental  Rights  স্বীকৃত , সেখানে  ব্যক্তির  সব  নাগরিক  অধিকারের  ভিত্তি  এই ‘ মানুষ’ পরিচয়ই বহন  করে  থাকে ৷ একটি  আধুনিক  ও  সভ্য  রাষ্ট্রে ,  রাষ্ট্র  ও  ধর্ম  আলাদা  থাকে  , কারণ রাষ্ট্র  ইহজাগতিক আর  ধর্ম  পরজাগতিক ৷ তাই  ধর্ম  ব্যক্তির  নিজস্ব  বিশ্বাস  আর  রাষ্ট্র  হচ্ছে  তার  সব  নাগরিকের নিরাপদ  বাসস্থান ৷

          পকিস্তান  প্রতিষ্ঠার  কয়ক  দশক  আগে  থেকে  এই  উপমহাদেশকে  যেভাবে  দ্বিজাতিতত্ত্বের  উন্মাদনায়  ভাসানো  হয়েছিল এবং  পাকিস্তান  প্রতিষ্ঠার  পর  তাতে  যেভাবে  ধর্মান্ধতার  ইন্ধন  যোগানো  হয়েছিল , তার  ফলে  জনমানসের  গভীরে এর  বিরাট প্রভাব  পড়েছিল এবং দীর্ঘকালব্যাপী  প্রচারণার কারণে  একটা  আদর্শিক রেশ বা Hang Over মানুষের  মনে  থেকে গিয়েছিল  যা  মুক্তিযুদ্ধের  সময়ে  সুপ্ত  অবস্থায়  ছিল ৷ আশির  দশক থেকে  এই  সুপ্ত বা ঘুমন্ত  দ্বিজাতিয়তত্ত্বের  বিশ্বাসকে পুণরায়  জাগরণের  পরিবেশ  সৃষ্টি  করা হয় , বর্তমানে এই  বিশ্বাসের    জাগরণ  বোধহয় সম্পূর্ণ  হয়ে  যাচ্ছে  ৷ আর  এই পরিবেশ  সৃষ্টি  করেছে  এই  সামরিক-বেসামরিক  আমলাতন্ত্র  এবং লুম্পেন  বুর্জোয়া পুঁজিপতি  শ্রেণী  ৷ দুর্ভাগ্যের বিষয়, বাংলাদেশে হীন রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি চলছে। এই বাড়াবাড়ি থেকে ধর্মান্ধতার সৃষ্টি হয়েছে, যা আজ হিংস্র মৌলবাদের চেহারা ধারণ করে বাংলাদেশেও বিভীষিকার রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।

এই  ধারা  রোধ  করা  এখনই  সম্ভব  না  হলে   মুক্তিযুদ্ধের  চেতনা  দিন দিন  কমে  যাবে এবং সম্পূর্ণ সমাজ  ও  রাষ্ট্র  এই অশুভ  চক্রের  কবলে  চলে  যাবে ৷

  ( সূত্র; অনুপম  সেনের রচিত  ‘ ব্যক্তি ও রাষ্ট্র ৷৷ সমাজবিন্যাস  ও সমাজদর্শনের  আলোকে’  যে রচনাটি এবারের ঈদ সংখ্যা জনকণ্ঠে
       প্রকাশিত  হয়েছে সেই লেখার  কিছু  অংশ  সংক্ষেপ করে এই লেখাটি
         প্রস্তুত  করা হয়েছে ৷ সৌজন্য- জনকণ্ঠ , এবং এই ব্লগের  আর একটি  লেখার কিছু অংশ এই  লেখাতে
            যুক্ত  করা হয়েছে ৷ )



 


মন্তব্যসমূহ