দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের আটোবাওগ্রাফিতে ( আত্মকথায় ) বর্ণিত কিছু উল্লেখযোগ্য উক্তি ৷ ( প্রেক্ষাপটের উল্লেখ ছাড়া )



              দার্শনিক  বার্ট্রান্ড  রাসেলের আটোবাওগ্রাফিতে ( আত্মকথায় ) বর্ণিত কিছু উল্লেখযোগ্য উক্তি ৷ ( প্রেক্ষাপটের উল্লেখ ছাড়া )

       (  অনুবাদ করেছেন তার আত্মকথার অনুবাদকারী পান্না লাল চৌধুরী ও ও সম্পদ বড়ুয়া  , প্রথম  খন্ডের  উক্তি গুলো )

        বিংশ শতকের  বিশ্বের  বিখ্যাত  ব্যক্তিদের  মধ্যে  সবচেয়ে  উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি  ছিলেন  মানবতাবাদী  এবং  বিজ্ঞান    গণিত  শাস্ত্র  বিশারদ  এবং  দার্শনিক  ব্যক্তিত্য  বার্ট্রান্ড  রাসেল  ৷ ১৯৫০  সালে  তিনি  সাহিত্যে  নোবেল  পুরস্কার  লাভ  করেন  এবং  পরে  বৃটেনের  সর্বোচ্চ  বেসামরিক  উপাধি   অর্ডার  অব  মেরিট   তাকে  প্রদান  করা  হয় ৷  তবে  প্রথম  বিশ্বযুদ্ধের  পর  যুদ্ধবিরোধী বিশ্বজনমত  গঠনে নিজের  মতামত  প্রকাশ করে নিবন্ধ  লিখার অপরাধে ১৯১৮ সালে দণ্ডিত হয়ে কারাভোগ করতে হয়েছে  তার  ৷ কিত্তু বার্ট্রান্ড রাসেলের জ্ঞানের গভীরতা ছিল অতুলনীয় ও অপরিমেয় ৷ তার  রচিত বিশ্ব বিখ্যাত  গ্রন্থ সমূহের  অন্যতম ছিল Why I am not a Christian গ্রন্থটি  ৷ রাসেল একজন  মানবতাবাদী ব্যক্তিও  ছিলেন ৷ তাই বিশ্বব্যাপী  সহিংসতা , অন্যায় ,অবিচার , বৈষম্য , শাসকের হাতে শাসিতের অত্যাচার ,উৎপীড়ন ,শোষণ ,বঞ্চনা ; ব্যাক্তিমানুষের অজ্ঞতা , কুসংস্কার , ধর্মান্ধতা ও যুক্তিহীনতার বিরুদ্ধে তিনি কলম  ধরেছেন এবং উচ্চকণ্ঠে এসবের প্রতিবাদ  করেছেন এবং নিজেও ব্যক্তিগতভাবে সক্রিয় ভূমিকা  পালন  করেছেন ৷

      কিত্তু ব্যক্তিগত দাম্পত্য জীবনে তিনি  প্রথম দিকে শান্তি  পান নাই ৷ ৮০ বছর বয়সে তিনি যখন ৪র্থ বিয়ে  করেন তখন থেকে পরবর্তি ১৮ বছর তিনি সংসার জীবনে  যথেষ্ট  সুখ ও  শান্তিতে  ছিলেন ৷এরই  প্রেক্ষাপটে তার ঐ স্ত্রী এডিথের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করে একটি কালজয়ী কবিতা  লিখে গেছেন ৷ এই  কবিতাটি  দিয়েই  তার  আত্মজীবনী  লিখা  আরম্ভ  করেছেন

  বার্ট্রেন্ড রাসেলের  ব্যক্তি  পরিচয়  হচ্ছে -তিনি ১৮৭২ সালের ১৮ মে ব্রিটেনের ওয়েলস -এর ট্রেলেক নামক স্থানে জন্ম গ্রহণ  করেন এবং চার বছর বয়সের মধ্যেই পিতা ও মাতা হারিয়ে পিতামহ    পিতামহীর  কাছে মানুষ হন ৷অবশ্য  তার  পিতামহও  তার    বছর  বয়সে  মৃত্যু  বরন  করেন পরে  পিতামহী  তারে  মানুষ  করেছিলেন  ইংলেন্ডের এক  ঐতিহ্যমন্ডিত পরিবারের বংশধর রাসেলের পিতামহ লর্ড জন রাসেল উনিশ শতকের মধ্যভাগে দুইবার ইংল্যাণ্ডের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ৷

     রাসেল ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের  ট্রিনিটি কলেজ থেকে গণিত ও দর্শনশাস্ত্রে প্রথম শ্রেণী অর্জন করেন এবং ৩১ বছর বয়স থেকে বিশ্বমানের গ্রন্থসমূহ রচনা আরম্ভ করেন ৷

       ১৮৯৪ সালে ২২ বছর বয়সে এ্যালিস পিয়ারসল  স্মীথ কে  বিয়ে  করেন এবং ১৭ বছর তার সঙ্গে সংসার করার পর তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে ৷ পরে ১৯২১ সালে ডোরা উইনফ্রেড  ব্ল্যাককে বিয়ে  করেন ৷ সে বিয়ে বেশীদিন ঠিকেনি ৷ তাই ১৯৩৫ সালে মিস প্যাট্রিসিয়া স্পেন্স নামক মহিলার সঙ্গে বিয়ে হয় ৷ কিত্তু তৃতীয় বারের মত এই দাম্পত্য জীবনও রাসেলের টিকে নি ৷ শেষ পর্যন্ত  ৮০ বছর বয়সে ১৯৫২ সালে এডিথ ফিন্সকে  বিয়ে করেন এবং তাকে নিয়ে তার জীবনের শেষদিন পর্যন্ত  শান্তিপূর্ণ  ও সুখের দাম্পত্য জীবন যাপন করেন এবং ১৮ বছর সুখের সংসার যাপনের পর ৯৮ বছর বয়সে ১৯৭০ সালের ২ ফেব্রুয়ারী  বার্ট্রেন্ড রাসেল মৃত্যুকে বরণ করেন ৷

  More information of MR. Bertrand  Rassell :


     The Autobiography of Bertrand Russell

The Autobiography of Bertrand Russell (1967–1969) is a three-volume work by Bertrand Russell.

    

·                    Three passions, simple but overwhelmingly strong, have governed my life: the longing for love, the search for knowledge, and unbearable pity for the suffering of mankind. These passions, like great winds, have blown me hither and thither, in a wayward course, over a deep ocean of anguish, reaching to the very verge of despair


      Bertrand Russell

Psychology Press, 1998 - Biography & Autobiography - 750 pages

Bertrand Russell was born in 1872 and died in 1970. One of the most influential figures of the twentieth century, he transformed philosophy and can lay claim to being one of the greatest philosophers of all time. He was a Nobel Prize winner for Literature and was imprisoned several times as a result of his pacifism. His views on religion, education, sex, politics and many other topics, made him one of the most read and revered writers of the age. This, his autobiography, is one of the most compelling and vivid ever written.


       

   




Born
Bertrand Arthur William Russell
18 May 1872
Trellech, Monmouthshire,
[1]United Kingdom
Died
2 February 1970 (aged 97)
Penrhyndeudraeth,
Wales, United Kingdom
Residence
United Kingdom
Nationality
British
Awards

Era
Region
Western philosophy
Main interests
·                                 Epistemology
·                                 Ethics
·                                 Logic
·                                 Mathematics
·                                 Metaphysics
·                                 History of philosophy
·                                 Philosophy of language
·                                 Philosophy of logic
·                                 Philosophy of mathematics
·                                 Philosophy of mind
·                                 Philosophy of perception
·                                 Philosophy of religion
·                                 Philosophy of science
Notable ideas
Influences[show]
Influenced[show]
Signature
Bertrand Russell signature.svg

Bertrand Russell - Biographical

Bertrand Arthur William Russell was born at Trelleck on 18th May, 1872. His parents were Viscount Amberley and Katherine, daughter of 2nd Baron Stanley of Alderley. At the age of three he was left an orphan. His father had wished him to be brought up as an agnostic; to avoid this he was made a ward of Court, and brought up by his grandmother. Instead of being sent to school he was taught by governesses and tutors, and thus acquired a perfect knowledge of French and German. In 1890 he went into residence at Trinity College, Cambridge, and after being a very high Wrangler and obtaining a First Class with distinction in philosophy he was elected a fellow of his college in 1895. But he had already left Cambridge in the summer of 1894 and for some months was attaché at the British embassy at Paris.
In December 1894 he married Miss Alys Pearsall Smith. After spending some months in Berlin studying social democracy, they went to live near Haslemere, where he devoted his time to the study of philosophy. In 1900 he visited the Mathematical Congress at Paris. He was impressed with the ability of the Italian mathematician Peano and his pupils, and immediately studied Peano's works. In 1903 he wrote his first important book, The Principles of Mathematics, and with his friend Dr. Alfred Whitehead proceeded to develop and extend the mathematical logic of Peano and Frege. From time to time he abandoned philosophy for politics. In 1910 he was appointed lecturer at Trinity College. After the first World War broke out, he took an active part in the No Conscription fellowship and was fined £ 100 as the author of a leaflet criticizing a sentence of two years on a conscientious objector. His college deprived him of his lectureship in 1916. He was offered a post at Harvard university, but was refused a passport. He intended to give a course of lectures (afterwards published in America as Political Ideals, 1918) but was prevented by the military authorities. In 1918 he was sentenced to six months' imprisonment for a pacifistic article he had written in the Tribunal. His Introduction to Mathematical Philosophy (1919) was written in prison. HisAnalysis of Mind (1921) was the outcome of some lectures he gave in London, which were organized by a few friends who got up a subscription for the purpose.
In 1920 Russell had paid a short visit to Russia to study the conditions of Bolshevism on the spot. In the autumn of the same year he went to China to lecture on philosophy at the Peking university. On his return in Sept. 1921, having been divorced by his first wife, he married Miss Dora Black. They lived for six years in Chelsea during the winter months and spent the summers near Lands End. In 1927 he and his wife started a school for young children, which they carried on until 1932. He succeeded to the earldom in 1931. He was divorced by his second wife in 1935 and the following year married Patricia Helen Spence. In 1938 he went to the United States and during the next years taught at many of the country's leading universities. In 1940 he was involved in legal proceedings when his right to teach philosophy at the College of the City of New York was questioned because of his views on morality. When his appointment to the college faculty was cancelled, he accepted a five-year contract as a lecturer for the Barnes foundation, Merion, Pa., but the cancellation of this contract was announced in Jan. 1943 by Albert C. Barnes, director of the foundation.
Russell was elected a fellow of the Royal Society in 1908, and re-elected a fellow of Trinity College in 1944. He was awarded the Sylvester medal of the Royal Society, 1934, the de Morgan medal of the London Mathematical Society in the same year, the Nobel Prize for Literature, 1950.
In a paper "Logical Atomism" (Contemporary British Philosophy. Personal Statements, First series. Lond. 1924) Russell exposed his views on his philosophy, preceded by a few words on histori

  ( source – internate )
 
 বার্ট্রান্ড  রাসেল তার আত্মজীবনী  মূলক  রচনা আত্মকথার  ভূমিকায়  লিখিছেন - তার জীবনে  প্রবল তিনটি  তাড়নাই  ছিল তার জীবনের  চালিকা শক্তি ;
  প্রথমটি ছিল ভালবাসার  জন্যে  তার  আকুলতা ;
  দ্বিতীয়টি ছিল জ্ঞান লাভের জন্যে তার  অনুসন্ধিৎসা ;

  আর শেষেরটি  ছিল মানবজাতির দুঃখ  বেদনায় তার অসহনীয়  করুণাবোধ ৷

    
     আমি প্রবল তৃঞ্চা নিয়ে জ্ঞানকে  তন্ন তন্ত করে খুঁজেছি ৷ মানুষের অন্তরকে বুঝার চেষ্টা করেছি ৷ আকাশের তারা কেন  জ্বল্ জ্বল্ করে তাও জানতে চেয়েছি ৷ পিথাগোরাসের শক্তির সূত্রও আমি বুঝতে চেষ্টা করেছি যার সাহায্যে অনবরত পরিবর্তনশীলতার উপর স্থির সংখ্যা কর্তৃত্ব ঠিক রাখে ৷খুব বেশী না হলেও এর কিছুটা আমি হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছি’

    
আমাকে অন্তরীক্ষের দিকে নিয়ে গেছে আমার ভালবাসা আর আমার জ্ঞান ৷ আর আমাকে করূনাই মর্ত্যভূমিতে ফিরিয়ে এনেছে বার বার ৷ আমার হৃদয়তন্ত্রীকে প্রত্যহ নাড়া দিয়েছে বেদনার ও  কান্নার ধ্বনি ও প্রতিধ্বনী ৷ উংপীড়কের হাতে নির্যাতিত মানবকুল আর দূর্ভক্ষের রাহুগ্রাসে বিপন্ন শিশুর দল - অসহায় বৃদ্ধের মর্মযাতনা ও বোঝাসম আপন সন্তানের কাছে - নিঃসঙ্গতা , দারিদ্র্য আর বেদনাক্লিষ্ট বিশ্বজগত -আর্থাৎ যেসব দৃশ্যই মানবজীবনকে উপহাস করছে - সবসময়  করছে অসার প্রতিপন্ন মানবজাতিকে  ; সমাজের
এই সব মহা অকল্যাণকে দুর করতে  ছিল আমার যত ব্যাকুলতা ৷ কিত্তু তা  না পারতে পারার  দুঃখে পরে নিজেই পাই ৷ এহাই ছিল আমার জীবন  ৷ আর এই জীবনকেই আমার কাছে যাপনযোগ্য মনে হয়েছে ’ ৷   

     বার্ট্রান্ড রাসেল তর আত্মকথায় বলেছেন -  সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাসের যৌক্তিক ভিত্তি খুঁতে গেলে আমি বৈজ্ঞানিক যুক্তিকেই সর্বাগ্রে বিচার করব’  ৷

‘ আলৌকিকতা ও ঐশ্বরিক ক্ষমতার একমাত্র নিয়ন্ত্রক যদি ঈশ্বর হন  তবে তার তৈরী প্রাকৃতিক নিয়মগুলো কেউ লংঘন না করার কথা ৷আবার সৃষ্টিকর্তা যদি প্রাকৃতির আইনের নির্মাতা হন তবে মাঝে মধ্যে এই সব আইনকে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে ত্রুটিপূর্ণ আইনের পরিবর্তন আনতে হয়  ৷ ঈশ্বরের আইন কী ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে বা হওয়া   উচিত ? তবে প্রকৃতির একটি নিয়ন্ত্রক শক্তি ক্রিয়াশীল থাকতে পারে বলে প্রাথমিক জীবনে তিনি স্বীকার করেছেন ’   তবে রাসেল বলেছেন   ‘ বিবর্তনবাদী ধারণা বিশ্বাস করতেই আমি বেশী আগ্রগী  এবং  সকল ক্ষেত্রেই আমি যুক্তিবোধকে ( Reason ) অনুসরণ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি  ৷ তিনি আরো বলেছেন ‘ প্রশংসার নূ্যনতম প্রত্যাশা না করে আর বিবেকের জ্যোতিকে অন্ধের ন্যায় অভ্রান্ত পথ প্রদর্শক হিসেবে ধরে না নিয়ে নিজের যুক্তির নির্দেশিত নীতির আলোকে কাজ করার চেষ্টা করি’ ৷        
  
     রাসেল মানুষের অভিজ্ঞতালব্দ ধারণা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন -‘ আমার অভিমত হল অভিজ্ঞতালব্দ ধারনা থেকে যোক্তিক অনুমানই নীতিশাস্ত্রের প্রকৃত পদ্ধতি ; আর এ পদ্ধতির সঠিক প্রয়োগ একটি নৈতিক গবেষণাগারেই হতে পারে যার দ্বার জীবন সে ব্যক্তির নিকট উন্মোচন করে যার দৃষ্টি এর জন্য উন্মুক্ত ৷ সুতরাং আমি যেসব নীতির সপক্ষে বলব সেগুলো হল এ ধরণের বাস্তব নৈতিক আভিজ্ঞতা থেকে সিদ্ধ যৌক্তিক অনুমানের  সমষ্টি’  ৷

     উপযোগবাদের প্রসঙ্গে রাসেল বলেছেন-  ‘ অধিবিদ্যা ও গণিতশাস্ত্রের ন্যায় যে জ্ঞান আদর্শ ও চিরন্তন বস্তুর সাথে সংশ্লিষ্ট এবং ঈশ্বরের সৃষ্ট ক্লেশময় জগত থেকে দূরে তার তুলনায় যে জ্ঞানের বিষয়বস্তু শুধু অস্তিত্বশীল জগৎ ,  যাকে আমরা সাধারনভাবে বিজ্ঞান বলে থাকি , তার মৃল্য অত্যন্ত কম’ ৷


   ১৯০২ সালে   গ্রীক নাট্যকার ও কবি গিলবার্ট কে  লিখিত পত্রে একটি কথা প্রসঙ্গে রাসেল বলেছেন-
 ‘ তোমার যখন ক্ষমতা আছে , তোমার কর্তব্যও আছে  ? আমরা প্রত্যেকেই এক একজন এ্যাটলাস যাকে তার নিজস্ব ভাবের জগৎকে বহন করতে হয় ৷ অন্য যেকোনো জনের চেয়ে একমাত্র কবিই পারেন সেই শ্রান্ত স্কন্ধের ভার হালকা করতে ৷ আমার ইচ্ছে হচ্ছে যদি আমি সৌন্দর্যের জগত আর নৈতিক জগতকে একটি সমন্বয় করতে পারতাম ‘  !  গিলবার্ট কে লিখা  ঐ একি পত্রে তার স্ত্রী এ্যালিস সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে রাসেল বলেছেন        ‘ এ্যালিস ভালই আছে ৷  কুয়াশাচ্ছন্ন সূর্যের নীচে  নদীকে বার্ণিশ করা ব্রোঞ্জের মত দীপ্তিমান মনে হচ্ছে আর বজরাগুলো যেন শৈশবের স্বপ্নিল স্মৃতির মত সে উজ্জ্বলতার  ভিতর দিয়ে ভেসে চলেছে’  ৷  

          কবি গিলবার্ট কে ১৯০২ এর ডিসেম্বরে লিখা অন্য একটি পত্রে লন্ডনের তখনকার অবস্থা  বুঝাতে গিয়ে রাসেল লিখেছেন -    ‘ লন্ডন  একটি  ক্লান্তিময়  স্থান  যেখানে একজন  মানুষের  উপযোগী  কোনো  কিছু  চিন্তা  করা  বা  অনুভব  করা  একেবারেই  অসম্ভব ৷  আমি  এখানে  ভীষনভাবে  ম্রিয়মান  বোধ  করছি ৷ এখানে  নদী  আর  শঙ্খচিলই ( GULL ) আমার  বন্ধু ; তারা  টাকাও  বানাচ্ছে  না , ক্ষমতালোভীও নয় ‘৷ ( বাংলাদেশের  বর্তমান সামাজিক  অবস্থা একজন নিরপেক্ষ কবি বা সাহিত্যিকের জন্যে এমনকি একজন সাধারন মানুষের জন্যেও  ১০০ বছর আগের লন্ডনের  মতই  আছে ৷ তবে তখন লন্ডনে মানুষের নিরাপত্তা  ছিল ৷ বর্তমান  বাংলাদেশে  সেটাও নেই ) ৷

         ঐ একই  পত্রে  রাসেল গিলবার্টে  একটি  প্রক্ষাপট প্রসঙ্গে বলেছেন -  ‘ আমরা  এ  আশা  দ্বারা  যেন  আত্ম-প্রতারিত  না  হই যে সর্বোত্তম  বিষয়টি  সবার  নাগালের  মধ্যেই  আছে  অথব  যে  আবেগ  চিন্তার  অভিন্ন  আবরণে  প্রকাশ  পায়  তা  সর্বোচ্চ  স্তরে  পৌছাতে  পারে  ৷ এ  ধরনের  সকল  আশাবাদ , আমার  মনে  হয়  সভ্যতার  জন্য  বিপজ্জনক  এবং  সে  হৃদয়  থেকেই  সৃষ্ট  যা  এখনও  মনস্তাপে  যথেষ্ট  দগ্ধ  হয়  নি ৷ নিজের  মধ্যেই  মর  একটি  প্রাচীন  আপ্তবাক্য ৷ কিত্তু  তোমার  প্রতিবেশীকে  নিজের  মত  ভালবাস , এই  প্রসঙ্গটি  নূতন ৷ এর  মধ্যে  একধরনের  সত্য  নিহিত’ ৷
         
         লুসি  মার্টিন  ডনেলী কে লিখা একটি  পত্রে তার  কাজের  প্রসঙ্গে  নিদারুন  ক্লান্ত এবং অনেকটা নূতন কিছু লিখতে নিজকে অক্ষম  মনে করে  লিখেন -

   ‘ অবয়বহীন (Abstract ) কোনো  সৃষ্টি  ষদি  কেউ  উত্তমরূপে  করতে  চায়  তাহলে  সে  সৃষ্টির  জন্য  সৃষ্টিকারীর  মানবিক  অস্তিত্বকেই  ধ্বংস  করে  ফেলতে হয় ৷ এর  দ্বারা  একটি  সৌধ  নির্মিত  হয়  যা  একাধারে  তার  সমাধিও  বটে  যার ভিতর সে  স্বেচ্ছায়  নিজকে  সমাহিত  করে ৷…..আনন্দের  মাঝে  যে  অভিজ্ঞতা  লাভ  হয়  তার  সহস্রগুন বেশী লাভ হয় ৷ তাই  একজন  শিল্পীর  আবেগ ( Passion )থাকতে  হয় কিত্তু তিনি  আসলেই  আত্মপ্রতারণা  করেন  যখন  তিনি  নিজের  কামনা  বাসনাকে  প্রাধান্য  দেয়া  শ্রেয়  মনে  করেন ৷  যাকে  মতবাদ  মনে  করে  এবং যে কৌশল বা টেকনিক থেকেই লিখা আসুকনা কেন  তা  পুরোটাই কিত্তু  ভ্রমাত্মক হতে  বাধ্য ৷  লিখন  হচ্ছে  অনুভূতির  নির্গমন পথ  যে  অনুভূতি  প্রায়  বশীভূতই করে  ফেলে  আবার  বশীভূতও হয় ৷ তাই দুটো  বিষয়  অনুশীলন  করা  দরকার’ ৷    রাসেল  লুসির  কাছে অন্য এক পত্রে  লিখেছেন -        ‘ কেউ  যদি অসাধারন  অভিজ্ঞতা  অর্জন  করতে  চায়  তাহলে  একটু  আত্মত্যাগ , একটু  কর্তব্য  পালনের  মাধ্যমে  তা  করতে  পারে ৷ কারণ  কর্তব্য  পালনে  যে  অসাধারন  অনুভূতি  জাগবে তা  মহাবিশ্বের  সকল  সূক্ষ  অনুভূতি  জড়ো  করলেও  পাওয়া  যাবে  না ৷ কিত্তু  গ্রন্থে  নিবন্ধ  লিখলে  জীবনে  অতুলনীয়  স্নিগ্ধতা  ও  প্রশান্ত  পাওয়া যায় ’ ৷ তিনি  অন্য  আরএকটি পত্রে লিখেছেন  ‘ মানুয়  শুধু  চিন্তনেই ( চিন্তাধারা অনুসারে ) ইশ্বরতুল্য , কিত্তু  কর্মে  ও  কামনায়  মানুষ ঘটনার  দাস মাত্র ‘ ৷

         ১৯০৩ সালের এপ্রিল  মাসে  লুসির কাছে  লিখা  এক পত্রে উল্লেখ  করেছেন-    ‘ আমি  অতীতকে  দেখি  রৌদ্রের  আলোয়  উজ্জ্বল  এক  প্রান্তরের  মত  যেখানে  বিশ্বের  শোকার্তরা  আর  বিলাপ  করে না ৷  নদীরূপ  সময়ের  তীর  ধরে  যুগ  থেকে  যুগান্তরের  শোকাকুল  মানুষের  মিছিল  ধীরে  ধীরে  কবরের  দিকে  এগিয়ে  চলে ; কিত্তু  অতীতের সে  নীরব  প্রান্তরে  ক্লান্ত পথিকেরা  বিশ্রাম  নেয়  আর  তাদের  ক্রন্দন  ধ্বংনি  স্তিমিত  হয়ে  যায় ’  ৷   অন্য  পত্রে ১৯০৩ সালের জুলাই মাসে লুসিকে অন্য প্রসঙ্গের  উল্লেখ করে লুসি লিখেছেন      ‘ বিবাহের  মত  অন্যান্য  ঘনিষ্ঠ  সম্পর্কের  ক্ষেত্রে  দুঃখ  বেদনার  অনন্ত  সম্ভাবনা  থাকে , তথাপি  আমি  বিশ্বাস  করি  মানুষের  সাথে  ঘনিষ্ঠ  সম্পর্কে  আসা  ভাল ৷ অন্যথায়  যা  জানা  ভাল  তার  অনেক  কিছুর  ব্যাপারেই  মানুষ  অজ্ঞ  থাকে৷  একমাত্র এ  কারণে  যে  এসব  জগতেরই  ব্রাপার এবং  অন্যারা  যে  কষ্ট ভোগ  করে  সে  কষ্ট ভোগ করার  জন্যই  তা  বন্ধুত্ব  বৃদ্ধি  করে ৷ … আসলে  বেদনাই  হচ্ছে  প্রকৃত  খাদ্য  যা  মানুষকে  বাঁচিয়ে  রাখে  ’ ৷ তাই  নিজের  জন্যে হউক  আর  অন্যের  জন্যেই  হউক , সুখকে  কমবেশী  গুরূত্বহীন  মনে  করার  শিক্ষা  মানুষকে  নিতে হবে’  ৷   

         লোয়েস  ডিকিনসন গোল্ডী কে লিখা পত্রাবলী থেকে কিছু উক্তি যা প্রকৃতি এবং এবং অন্য কিছু প্রসঙ্গ নিয়ে এই সব উক্তিগুলো রাসেল তার লিখা পত্র লিখেছেন -

          ‘ আমি  মনে  করি  সর্বোত্তম  ঐশ্বীবাণী ( Gospel )হল  সু;খ  দুঃখে উদাসীন  থাকার  সেই  দার্শনিকতত্ত্ব ( Stoicism ) তা সত্ত্বেও ইহা এক  অতি আশাবাদী  ধারণা , কারণ  বস্তুজগৎ যেকোন  সময়  সদগুনের প্রতি মানুষের  নিষ্ঠাকে  ধ্বংস  করে  দিতে  পারে ৷…অতীতকে  ভাবতে  হবে  একজন  শান্তিদায়ী  সঙ্গীর  মত  যে  মহানবস্তুর  সম্ভাবনা  সম্পর্কে  মনে  করিয়ে  দেবে  এবং  বৈরাগ্য  আর  নিষ্ঠুরতাকে  তিরস্কার  করবে ৷ তাই  আমি  শাশ্বত  বিষয় সমূহ বাঁচতে চাই না ফলে আমি বাস্তবে এর অল্পই  অনুসরণ করি ৷ আমি  অন্তর  দিয়ে  বিশ্বাস  করি যে  , সর্বোৎকৃষ্ট  সকল  কিছুই  ক্ষণস্থায়ী  ও  ভঙ্গুর ৷  আমি  অতীতের  মধ্যে  এক  ধরনের  যাদু  দেখি  যা  মহাকালের ( Eternity )মধ্যে  নেই ৷ আবার  অতীতের  চেয়ে  শাশ্বত  আর  কিছুই  নেই , বর্তমান ও  ভবিষ্যৎ  কালের  অধীন  ৷ কিত্তু  অতীত  অমরত্ব  লাভ  করে  ফেলেছে -আর  কাল  তার  যত  ক্ষতি  করার ক্ষমতা  আছে  তা  করে  ফেলেছে , তবুও কাল  অদ্যাবধি  বেঁছে  আছে ৷ ….তাই  সকল  ভাল  জিনিসকেই  দুষ্টলোকের  হাতে  মাঝে মধ্যে  ছেড়ে  দেয়া  উচিত , কারণ  সবগুনগুলোকেও  একটি  কাঁচের  পাত্রে  রাখলেই  অমলিন থাকে  আর শুধু  শোভাবর্ধন  করে কিত্তু ব্যবহারিক  কাজে  লাগে  না ৷….আমি  প্রায়ই  ভাবি , সূর্য  যেভাবে  কম  উজ্জ্বল  তারকাকে  নিস্প্রভ  করে  দেয় , সেভাবে  ধর্মও  কম  উজ্জ্বল  মতকে  একেবারে  ম্লান  করে  দিয়েছে ; তবে  যা  সুন্দর তার  সৌন্দর্যের  মাত্রা  কম  হলেও  তা  ঈশ্বরবিহীন  অন্ধকার  জগতে  মানুষের  কাছে  আলোস্বরূপ ৷  আমি  নিশ্চিত যে  স্বর্গীয়  দ্যুতি  যাদের  চোখ  ঝলছে  দেয় নি  তাদের কাছে  মানব  জীবনের  দীপ্তিই  বেশী ৷ আমার মনে হয় তখনই  মানুষে  মানুষে  বন্ধুত্বের  সম্পর্ক  আরও  ঘনিষ্ট ও  কোমল  হয় এ  অনুভূতি  থেকে যে , মানুষেরা  সকলেই  প্রকৃতির  এক  প্রতিকূল  সমুদ্রতীরে  নির্বাসিত  এক  একটি  প্রাণী ’  ৷

  (প্রথম পর্ব সমাপ্ত )

   সৌজন্যে ;- এই আত্মজীবনী আত্মকথার অনুবাদকারী -পান্না  লাল  চৌধুরী এবং
      এবং  সম্পদ  বড়ুয়া , যাদের  অনুবাদের কোনো পরিবর্তন না করেই এই
         লেখাটি আগ্যহী পাঠকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে ৷    

          ‘                                                                                                                                 

মন্তব্যসমূহ