সমাজ বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত আধুনিক রাষ্ট্রের পেছনের কিছু তথ্যাদি !
মানব সভ্যতার
আদি লগ্নে একসময়ে
প্রতিটি মানব সমাজই
ছিল কৌম , উপজাতীয় বা
যাযাবর সমাজের অন্তর্ভূক্ত
৷ আবার কৌম সমাজ
বা Tribal Society
ছিল যাযাবর ৷ তাদের
জীবিকা ছিল প্রধানত পশুপালন
৷ ধীরে ধীরে কৌম
সমাজও কৃষিজীবী সমাজে
রূপান্তরিত হয়ে যায় ৷ তখনকার
সমাজ বিভিন্ন গোত্রে
বিভক্ত ছিল ৷ আবার ঐ
গোত্রগুলো গঠিত হতো
বিভিন্ন পরিবারের সমন্বয়ে
৷ তখন কৌম সমাজে
এক ধরনের সাম্য ছিল যদিও গোত্র প্রধানের
আলাদা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
থাকত ৷ ইতিহাস থেকে জানা
যায় আধুনিক রাষ্ট্রের
জন্ম হয়েছে আজ
থেকে প্রায় ৭/৮
হাজার বছর পূর্বে ৷
তখনকার উপজাতীয়
এবং কৌম সমাজই
বিবর্তনের মাধ্যমে প্রথমে
নগর রাষ্ট্র এবং
পরে বর্তমানের আধুনিক রাষ্ট্র
গড়ে উঠেছে ৷
নৃতাত্ত্বিক মতে
উপজাতীয় নেতৃত্ব বা Tribal
Leadership কে কেন্দ্র
করেই রাজতন্ত্র এবং
অভিজাত তন্ত্রের আকারে
প্রথমে রাষ্ট্রের বিকাশ
আরম্ভ হয়েছে ৷ পরে
অনেক সংগ্রামের এবং জীবন ক্ষয়ের পরে সমাজতান্ত্রিক ও আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্ম
হয়েছে ৷
মানুষ যখন
থেকে যৌথবদ্ধ বা
সমাজবদ্ধ ভাবে একটি
নির্দিষ্ট স্থানে বসবাস আরম্ভ করেছিল
তখন থেকেই কৌম বা উপজাতীয় মানবগোষ্ঠীর
সামাজিক জীবনের সূত্রপাত
ঘটেছে ৷ মানুষ যৌথ সমাজবদ্ধ
জীবনে প্রবেশ করার
কারণেই প্রথমে বিভিন্ন সামাজিক
সংগঠনের প্রয়োজন হয়েছে ৷ তখন
সেই সমাজকে বা সামাজিক
সংগঠনকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে মানুষ
নানা প্রথা -নিয়ম -কানুনের সৃষ্টি
করতে বাধ্য হয় ৷ পরবর্তিতে এইসব প্রথা ও নিয়ম-কানুনের
ওপর ভিত্তি করে মানুষের মধ্যে এক
ধরনের সামাজিক চিন্তার বিকাশ লাভ
করেছিল ৷ সমাজবিজ্ঞানীরা মানুষের এই
চিন্তার বিকাশকে লোকজ্ঞান বা Folk
Wisdom হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন
৷ এই লোকজ্ঞানের মূল
উদ্দেশ্য বা ভিত্তি ছিল সামাজিক
স্থিতি , সামাজিক সংহতি এবং সামাজিক শৃঙ্খলা
রক্ষা করা এবং সমাজকে
একটি যৌক্তিক চিন্তার
ক্ষেত্রের মধ্যে টিকিয়ে
রাখা ৷ ক্ষেত্রবিশেষে এই
সমাজচিন্তা কল্পনাশ্রয়ী হলে ও
তার একটি যৌক্তিক
ভিত্তি থাকা আবশ্যিক
ছিল ৷
উপজাতীয় মানুষ এই লোকজ্ঞান বা Folk Wisdom কে
আশ্রয় করে হাজার
হাজার বছর ধরে
উপজাতীয় সমাজ ব্যবস্থায়
এখনও বসবাস করছে পৃথিবীর
বিভিন্ন অংশে ৷ বেশকিছু
উপজাতি এখনও যুথবন্ধভাবে
প্রাক-রাষ্ট্রীয় সমাজে বাস
করছে লোকজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে বর্তমান পৃথিবীতেও
রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন ছাড়াই ৷
বর্তমান আধুনিক
রাষ্ট্রের বিকাশ হয়েছে
কৌম বা Tribal Leadership কে
কেন্দ্র করে ৷ সভ্যতার ক্রমবিকাশের
ধারা পর্যালোচনায় দেখা
যায় যে , একটি জনগোষ্ঠী বা উপজাতি
একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে
স্থায়ীভাবে দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করলে
এবং সেখানে যথেষ্ট
পরিমান উদ্বৃত্ত উৎপাদনে
সক্ষম হলেই ধীরে
ধীরে সে স্থানে
রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে
ওঠে ৷
এর কারণ
বিশ্লেষণে দেখা যায় যে , উদ্বৃত্ত
উৎপাদনের এক পর্যায়ে এসে সমাজের ওপর প্রভাব বিস্তারে সক্ষম একটি
অংশ সমাজের দুর্বল অন্যান্য
অংশের ওপর নিজেদের
আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়ে
উঠে ৷ তখন এই উদ্বৃত্ত উৎপাদনকে কেন্দ্র
করেই সমাজে শ্রেণী
বিন্যাস ঘটে ৷ পরবর্তিতে
এই শ্রেণী বা সামাজিক
স্তরবিন্যাসের অগ্রগতির মাধ্যমে
রাষ্ট্রের হয় বিকাশ ৷ আবার
এই উদ্বৃত্ত সম্পদভোগীদের
কেউ কেউ সমাজ ও রাষ্ট্রে
সাহিত্য - শিল্পকলা - জ্ঞান- বিজ্ঞান ও দর্শনের জন্ম দেন
৷
এই উদ্বৃত্ত
সম্পদভোগীদের কারো কারো
মনে যখন এই
প্রশ্নের জন্ম হয় যে , আমি কে ? আমাকে
কে সৃষ্টি করেছে ? আমার
অস্তিত্বের অর্থ কী ? আমার এই
অস্তিত্বের পেছনে কি
কোনো অদৃশ্য শক্তি
বা কোনো আত্মা
আছে ? মানুষের চার পাশের এই
বিশ্বব্রহ্মান্ড ও যে
প্রকৃতি বিরাজমান আছে
এর সঙ্গে মানুষের
সম্পর্ক কী ? এর সবকিছুর
পেছনে কি কোনো
স্রষ্টা রয়েছেন ? এর কি
প্রথম কারণ বা First
Cause রয়েছে ? এর থেকেই এক
পর্যায়ে জন্ম হয়েছে
আধুনিক দর্শন শাস্ত্রের যা পূর্বের
লোকজ্ঞানের বা Folk Wisdom এর আধুনিক রূপ ৷ এই
দর্শন শাস্ত্রের বাস্তবধর্মী
প্রয়োগে জন্ম হয়েছে
আধুনিক রাষ্ট্রের ৷
( সূত্র ; ঈদসংখ্যা জনকণ্ঠে প্রকাশিত অনুপম
সেন রচিত ‘ ব্যক্তি ও রাষ্ট্র ৷৷
সমাজবিন্যাস ও সমাজদর্শনের
আলোকে’ লেখাটি
থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই লিখাটি তৈরি করা
হয়েছে ৷)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন