“ প্রার্থনা বা বিনয়ের সাহায্যে আপনি নিজের ইচ্ছেমতো কিছুই বদল করতে পারেন না , কিন্তু পারেন প্রাকৃতির নিয়ম সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ ক’রে ৷ এই কথাটি বলেছেন দার্শনিক রাসেল !
( ( সৌজন্যে;- প্রিয়.কম)
ইশ্বর বা অতিপ্রাকৃত কোনো শক্তিতে চূড়ান্ত বিশ্বাসকে মানসিক রোগ হিসেবে
রায় দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাইকোলজিকাল এসোসিয়েশন। তাদের মতে এমন
বিশ্বাস মানুষকে বিজ্ঞানসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে বাধা প্রদান করে। পাঁচ বছর
গবেষণার পর গবেষকরা জানান ধর্মীয় বিশ্বাসে বিশ্বাসী মানুষরা প্রায়ই
হতাশাগ্রস্থ থাকে এবং আবেগী হয়ে থাকে। তাদের মাঝে হ্যালুসিনেশন এবং
মস্তিষ্কবিকৃতিও দেখা যায়। গবেষণায় বলা হয়, যারা ইশ্বরকে ভয় পায় তারা
শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ থাকে। আরা যারা ইশ্বরকে উদার মনে করে
তারা কিছুটা কম মানসিক সমস্যায় ভোগেন। কিন্তু ধর্মীয় এ বিশ্বাস অনেক
সময়ই তাদেরকে বাস্তবতা থেকে দূরে রাখে। মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড.
লিলিয়ান এন্ড্রু জানান, প্রতিবছর পৃথিবীতে অনেক মানুষ ধর্মীয় বিশ্বাসের
কারণে অনেক চিকিৎসা নেয় না এবং মারা যায়। তাদেরকে এমনও বলা হয়ে
থাকে যে এই চিকিৎসা না নিলে তিনি মারাও যেতে পারেন। ‘তবুও তারা
চিকিৎসা নেন না এবং ইশ্বরের উপর ভরসা রাখেন যে তারা হয়তো তাকে
বাঁচাবেন। কিন্তু এই ভ্রান্ত ধারণাই তাদের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’ জানান
তিনি। তিনি আরো বলেন, জেনোভাহ উইটনেসে বিশ্বাসীরা কোনোভাবেই
কারো রক্ত নিতে চান না। প্রয়োজনে তারা মৃত্যুবরণ করবেন কিন্তু রক্তগ্রহণ
করবেন না। অনেকে বিশ্বাস করেন তাদের রোগ প্রতিরোধ এতো ভালো তাদের
কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। কেউ ইশ্বরের সঙ্গে কথা বলেন বলে দাবি
করে, কেউবা আবার ঐশ্বরিক অনেক কিছুই দেখতে পান। এগুলো সবকিছুই
মানসিক ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ বলে উল্লেখ করেন লিলিয়ান এবং এই ধর্মকে
ঘিরেই যুগে যুগে ঘটেছে অনেক ধ্বংসযজ্ঞ এবং হত্যাযজ্ঞ। এপিএ এমন একটি
আইন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে যার দ্বারা মানুষের জীবন বাঁচাতে চিকিৎসা নিতে
বাধ্য করা হবে। এবং যারা ধর্মীয় অজুহাত দেখিয়ে চিকিৎসা নিতে চাইবে না
তাদেরকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে ঘোষণা করা হবে। চলতি বছরের
আগস্টে এই গবেষণার বিস্তারিত জার্নালে প্রকাশিত হবে বলে জানায়
আমেরিকান সাইকোলোজিকাল এসোসিয়েশন - )
একটি কথা আমাদের সমাজে প্রচিলিত আছে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর !
আমাদের সমাজে বোধহয় সর্বকালে এবং সর্বযুগেই কিছু মুক্তমনা ও যুক্তিবাদী মানুষের জন্ম হয়েছে ৷ না হয় প্রায় শত বছর আগে একটি অশিক্ষিত ও কুসংষ্কারপূর্ণ বাংলাদেশে এই রকম একটি অতিবাস্তব ও দার্শনিক প্রবাদের সৃষ্টি হত না , বলা হত না বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর ৷ অর্থাৎ প্রাপ্তি হউক
বা না হউক এখানে বিশ্বাসকেই প্রধান্য
দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের বাস্তবতাকে চিন্তা করে
৷ তবে বর্তমানে প্রমাণিত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে যে , আসলে কুসংস্কার , অন্ধ বিশ্বাস বা যুক্তিহীন ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে গরীব বা ধনী দেশ কিংবা উন্নত , অনুন্নত বা শিক্ষিত অশিক্ষিত দেশে এর কোনো
সম্পর্ক নেই ৷ শিক্ষীত এবং সম্পদশালী ও
উন্নত দেশ হলেই সে দেশের সমাজ
অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারে বিশ্বাস ত্যাগ করতে
পারে না ৷ তাই সব অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের সঙ্গে দেশ , কাল , ও সমাজের নির্বিশেষে একটি যোগসূত্র রয়েছে ৷ পৌরণিক বিশ্বাস , প্রাচীন ধর্ম বিশ্বাস বা অন্ধ বিশ্বাস এবং কুসংস্কারে বিশ্বাস করে তা মেনে চলা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক এবং অবাস্তব জিনিষ ! এটা উন্নত
বিশ্বের মানুষ অনেকেই এখন পর্যন্ত বিশ্বাস
করতে বা মেনে নিতে পারে না ৷
পরবর্তী লেখায় উন্নত ও শিক্ষিত দেশ আমেরিকার একটি সত্য ঘটনার বর্ণনা দেয়া হবে ৷ তার পূর্বে এরসঙ্গে সঙ্গিতপূর্ণ বাংলাদেশের কিছু কুসংস্কারমূলক ও মতলবাজী ঘটনার উল্লেখ করা হল ৷
আজ থেকে প্রায় ৫০ / ৬০ বছর আগে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসার এত সুযোগ ছিল না ৷ তখন একটা উপজেলাতে হয়ত দু’এক জন এল , এম , এফ ডাক্তার এবং তাদের সহকারী ছাড়া এলোপাতিক লাইনের কোনো চিকিৎসকের অস্থিত্ব ছিল না ৷ হোমিওপাত চিকিংসার সুযোগ ও সীমিত ছিল এবং বিশেষ কিছু রোগ ছাড়া এই চিকিৎসারও সীমাবদ্ধতা ছিল ৷
ফলে কিছু বুদ্ধিমান ও চালক লোক সমাজে কুসংষ্কার ও অন্ধবিশ্বাসের বীজ ছড়িয়ে মানুষের রোগ শোককে কাজে লাগিয়ে তাদের স্বার্থ আদায় করে নিত ৷ এই সব ক্ষেত্রে ধর্ম বিশ্বাসকে ও সামাজিক কুসংস্কারকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হত ৷ বর্তমানে এর তেমন কোনো পরিবর্তন লক্ষীত হয় না , তবে প্রযোগের ক্ষেত্রের রূপান্তর ঘটেছে ৷
আগে গ্রামদেশে মানুষের অসূখ হলে তার প্রতিকারে সাধারণত তাবিজ, কবজ , ঝাঁড়পুকের প্রচলন ছিল ব্যাপকভাবে ৷ তবে কিছু অবস্থাশালীরা মসজিদের ঈমাম দ্বারা কোরান খতম পড়াতেন আর ওঝার স্বরণাপর্ণ হতেন
৷ ঈমামরা সাধারণত নগদ কোনো টাকা পয়সা নিতেন না ৷ তবে পুরুষমানুষের অসূখ হলে তারা বলতেন রোগীর কোনো প্রিয় জানদার প্রাণী আল্লাহ্ র নামে বিলিয়ে দিতে আর মহিলা হলে বলতেন রোগীনীর ব্যবহারের সোনার কোনো অলংঙ্কার আল্লাহ্ র নামে ধার্মিক কাউকে বিলিয়ে দিতে ৷ উভয় ক্ষেত্রেই এসব বিলিয়ে দেয়া জিনিষ ঈমাম নিজে তার দু’এক জন সহযোগীরা গ্রহণ করতেন ৷ আর রোগীকে নিশ্চয়তা দিয়ে তারা বলতেন আল্লাহ্ যদি তার হায়াত দরাজ করেন তবে নিশ্চয় ভাল করে দিবেন আর হায়াত না থাকলে আল্লাহ্ র মাল আল্লাহ্ তুলে নেবেন ৷ এতে দুঃখিত হওয়ার কিছু নেই , হায়াত মওউত নিশ্চয় আল্লাহ্ র হাতে ৷ কিন্তু ভূলে ও একবার ডাক্তারী চিকিৎসার কথা বলতেন না ৷ তাহলে তো তাদের স্বার্থের হানি হয়ে যাবে ! আর কেউ মারা গেলে ও তাদের লাভ হয় ৷ কারণ জানাযা পড়া বা কোরান
খতম ইত্যাদি কাজ তো ঈমাম বা মুল্লা
শ্রেণীর লোকে দিয়েই করাতে হয় ৷ এতেতো
তারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকেন ৷ তাই
বলা হয় মূর্দা বেহেশতে যাক আর দোজখে
যাক , হুজুরদের কোনো ক্ষতি নেই ৷ কারণ
তাদের পারিশ্রমিক তো উভয় ক্ষেত্রেই দিতে
হবে ৷ তবে যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকত তারা হয়ত বেঁচে যেতেন ৷ তখন ইহা খতমের গুণে হত বলে প্রচার করা হত ৷ তাবিজ কবজ ঝাঁড়পুক করে ওঝারা ও ঈমামদের অনুরূপ বক্তব্য দিতেন রোগীর ভাল হওয়া না হওয়ার জন্যে ৷ তবে ওঝারা নগদ সীমিত পরিমান টাকা নিতেন তাদের পারিশ্রমিক হিসেবে ৷
বর্তমানে বাংলাদেশে এই অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে ৷ এখন শতকরা ৯৫ % মানুষ অসূখ হলেই চিকিৎসকের কাছে আগে যান ৷ পরে অসূখের আশানুরূপ উন্নতি না হলে তখন কেউ কেউ কোরান খতমের ব্যবস্থা করেন ৷ আর ঈমাম ও ধার্মিক শ্রেণীর লোকেরা কোনো সময়ই নিজের বা পরিবারের জন্য কোরান খতম পড়েন না বা পড়াননা ৷ তারা প্র্রথমেই ডাক্তারের কাছে যান ৷ নিজেদের বেলায়
কোরান খতম তাদের কাছে গুরুত্ব বহন করে না ৷ এখন বিশ্বের উন্নত এবং সম্পদশালী দেশ আমেরিকার একটি সত্য ঘটনার বর্ণনা করা হচ্ছে ৷
ঘটনাটা ঘটেছে ১৯০৮ সালের দিকে ৷ বাইবেলের উপর আক্ষরিক ভাবে বিশ্বাস রাখতে গিয়ে এক দম্পতি তাদের মেয়েকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন ৷ উইসকনসিন দাম্পতির মেয়ে মেডেলিন কারা নিউম্যান ১১ বছর বয়সে ডায়বেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে ৷ আমেরিকাতে প্রতি ৪০০ জনের মধ্যের একজন কম বয়সীরা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠে ৷ কিন্তু এই দম্পতি খ্রিস্টধর্মে প্রচণ্ড ভাবে বিশ্বাসী ছিল ৷ তাদের বিশ্বাস ছিল কেবল প্রার্থনার মাধ্যমে তারা তাদের মেয়েকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ করে তুলতে পারবে ৷ তাই তারা মনে করেছেন কারার মাথায় কিছু তেল মালিশ করে যীশুর কাছে প্রার্থনা করলেই যীশু তাদের মেয়ে কারাকে সুস্থ করে দেবেন ৷
কারণ বাইবেলের যাকোবের পত্র ০৫ : ১৪-১৫ তে বলা হয়েছে -
“ তোমাদের মধ্যে কেউ কি অসুস্থ হয়েছে ? তবে সে মণ্ডলীয় প্রাচীনদের ডাকুক ৷ তারা প্রভুর নামে তার মাথায় একটু তেল দিয়ে তার জন্য প্রার্থনা করুক ৷ বিশ্বাসপূর্ণ প্রার্থনা সেই অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ করবে , প্রভুই তাকে সুস্থতা দেবেন ” ৷
“ তোমাদের মধ্যে কেউ কি অসুস্থ হয়েছে ? তবে সে মণ্ডলীয় প্রাচীনদের ডাকুক ৷ তারা প্রভুর নামে তার মাথায় একটু তেল দিয়ে তার জন্য প্রার্থনা করুক ৷ বিশ্বাসপূর্ণ প্রার্থনা সেই অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ করবে , প্রভুই তাকে সুস্থতা দেবেন ” ৷
বাইবেলের এই কথাটিকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে কারার বাবা কেবল কারার মাথায় কেবল তেল দিয়ে প্রার্থনা করে গেছেন ৷ যখন কারার ওজন কমে গিয়ে তার সব উদ্দীপনা কমে যাচ্ছিল , তার ঘন ঘন তৃষ্ণা পাচ্ছিল আর অবসাদে ক্লান্ত হয়ে পড়ে সে চোখে অন্ধকার দেখছিল তখন তার বাবা এক যীশু বিশ্বাসী ওঝা এবং তার প্রিয় চার্চের প্রতিষ্ঠাতা ফাদার-ডেভিড ইলস এর কাছে নিয়ে যান কারাকে তার
চিকিৎসার জন্যে ৷
ফাদার ইলস তার নোটবই থেকে কারার বাবাকে যে বাণী শোনালেন তা হচ্ছে -
“ যীশু কখনোই কাউকে ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে পাঠাননি ৷ যীশু কেবল একটি মাধ্যমেই সকলের চিকিৎসা করেছেন ৷ সেটা হচ্ছে বিশ্বাসের মাধ্যমে-হিলাং বাই ফেইথ ” ৷
ফাদার ইলস তার নোটবই থেকে কারার বাবাকে যে বাণী শোনালেন তা হচ্ছে -
“ যীশু কখনোই কাউকে ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে পাঠাননি ৷ যীশু কেবল একটি মাধ্যমেই সকলের চিকিৎসা করেছেন ৷ সেটা হচ্ছে বিশ্বাসের মাধ্যমে-হিলাং বাই ফেইথ ” ৷
এর পর কারা এতোই দুর্বল হয়ে য়ায় এবং তার হটা চলা বন্ধ হয়ে য়ায় , এমনকি কথা বলাও তার বন্ধ হয়ে যায় ৷ এর পর ও বাইবেলের অন্ধ বিশ্বাসে কারাকে কোনো ডাক্তারকে দেখানো হয় নি ৷ তাই কারার মা ও বাবার চোখের সামনেই ২০০৮ সালের ২৩ মার্চ মেডেলিন কারা নিউম্যান মৃত্যুর মূখে ঢলে পড়ে ৷
আমেরিকার আইন অনুসারে কারার অভিভাবকদের অভিযুক্ত করা হয় সন্তানকে অবহেলা এবং হত্যার অভিযোগে এবং শাস্তি হিসেবে কয়েক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় কারার মা
ও বাবাকে ৷ মামলা চলাকালীন সময়ে কারার বাবা ডেল নিউম্যান আদালতে দাঁড়িয়ে নিরুত্তাপ গলায় বলেন- “ প্রার্থনা বাদ দিয়ে রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়াকে আমি ঠিক মনে করি না ৷ এটা করলে ডাক্তারকে খোদার উপর খোদকারি করার অধিকার দেয়া হয় ” ৷
অন্ধ ধর্মবিশ্বাসের দেশ বা কাল নেই ৷ আমাদের দেশে নিজের ছেলেকে কোরবানী দেয়ার সংবাদ মধ্যে মধ্যে শুনা যায় ৷ তবে আমেরিকার মতো এদেশে হয়ত শাস্তি হয়না তেমন ভাবে ৷
প্রার্থনা বর্তমানে সারাবিশ্বে যেন এক নয়া কুটির শিল্পে রূপ নিয়েছে ৷ তাই দেখা যায় স্বাস্থ্য , চাকুরীর শিশ্চয়তা , নিরাপত্তা , ভাল রেজাল্ট , চাকুরীর প্রমোশন , বিত্ত বা আরো বৃহৎ কোনো লক্ষ্য যেমন বিশ্ব শান্তি ও মানব জাতির দুর্দশার অবসান ইত্যাদি আরো হাজারো নানান বিষয়ে প্রতিদিন মানুষ সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করে থাকে ৷
কিন্তু আদৌ কি প্রার্থনা কি কাজ করে ? আসলে প্রার্থনা কাজ করার সপক্ষে কোনো প্র্রমান তো পাওয়া যায়নি , বরং কিছু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় উলটো ফলাফল বেরিয়ে এসেছে ৷
ডিউক ইউনিভার্সিটির কিছু চিকিৎসক প্রার্থনায় ফলদায়ক প্রভাব যাচাইয়ের জন্যে আমেরিকার নয়টি হাসপাতালের ৭৪৮ জন রোগীর উপর এক গবেষণা চালান ৷ লে এবং মোনাস্টিক ক্রিশ্চিয়ান , সুফি মুসলিম এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ সারা বিশ্বের বারোটি প্রার্থনা গ্রুপ এর সঙ্গে যুক্ত করা হয় ৷ প্রার্থনা ই-মেইলের মাধ্যমে জেরুজালেমেও পাঠানো হয়েছিল ৷
করোনারি আর্টারি অবস্ট্রাকসনের রুগীদের কম্পুটারের মাধ্যমে রেনডম সিলেকশনের মাধ্যমে নির্বাচন করা হয় এবং ১২ টি প্রার্থনা গ্রুপের কাছে প্রেরণ করা হয় ৷ তখন প্রর্থনা গ্রুপগুলো রোগীদের সম্পূর্ণ আরোগ্যের জন্য প্রার্থনা করে ৷
দ্বৈত অন্ধ ( Double blind ) পদ্ধতির এটা একটা ক্লিনিক্যাল ট্রায়েল ছিল চিকিৎসকদের ৷ তবে হাসপাতালের ষ্টাফ এবং স্বয়ং রোগীরা কেউই জানতো না কার জন্য প্রর্থনা করা হচ্ছে ৷ The Lancet জার্নালে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয় ৷ প্রকাশিত ফলাফল থেকে জানা যায় যে , দুই গ্রুপের মধ্যে যে গ্রুপের জন্যে প্রার্থনা করানো হয়েছিল এবং যে গ্রুপের জন্যে প্রার্থনা করানো হয় নি , তাদের উভয়
ডিউক ইউনিভার্সিটির কিছু চিকিৎসক প্রার্থনায় ফলদায়ক প্রভাব যাচাইয়ের জন্যে আমেরিকার নয়টি হাসপাতালের ৭৪৮ জন রোগীর উপর এক গবেষণা চালান ৷ লে এবং মোনাস্টিক ক্রিশ্চিয়ান , সুফি মুসলিম এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ সারা বিশ্বের বারোটি প্রার্থনা গ্রুপ এর সঙ্গে যুক্ত করা হয় ৷ প্রার্থনা ই-মেইলের মাধ্যমে জেরুজালেমেও পাঠানো হয়েছিল ৷
করোনারি আর্টারি অবস্ট্রাকসনের রুগীদের কম্পুটারের মাধ্যমে রেনডম সিলেকশনের মাধ্যমে নির্বাচন করা হয় এবং ১২ টি প্রার্থনা গ্রুপের কাছে প্রেরণ করা হয় ৷ তখন প্রর্থনা গ্রুপগুলো রোগীদের সম্পূর্ণ আরোগ্যের জন্য প্রার্থনা করে ৷
দ্বৈত অন্ধ ( Double blind ) পদ্ধতির এটা একটা ক্লিনিক্যাল ট্রায়েল ছিল চিকিৎসকদের ৷ তবে হাসপাতালের ষ্টাফ এবং স্বয়ং রোগীরা কেউই জানতো না কার জন্য প্রর্থনা করা হচ্ছে ৷ The Lancet জার্নালে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয় ৷ প্রকাশিত ফলাফল থেকে জানা যায় যে , দুই গ্রুপের মধ্যে যে গ্রুপের জন্যে প্রার্থনা করানো হয়েছিল এবং যে গ্রুপের জন্যে প্রার্থনা করানো হয় নি , তাদের উভয়
গ্রুপের রোগ নিরাময় হওয়া এবং স্বাস্থ্যের মধ্যে তাংপর্যপূর্ণ কোনো পার্থক্য পাওয়া যায় নি ৷ অর্থাৎ শুধু চিকিৎসা এবং পার্থনা সহ চিকিৎসা প্রাপ্ত গবেষণার আওতার রাখা রোগীদের মধ্যে কোনো শারীরিক বা
মানুসিক তফাৎ পরিলক্ষিত হয় নাই ৷
পরিবর্তিতে হার্ভার্ড এবং মায়ো ক্লিনিকের তত্ত্বাবধানে এই রকম আর একটি স্টাডি পরিচালিত হয় ৷ যা স্টেপ স্টাডি নামে পরিচিত ৷ এই ট্রায়ালে ১৮০২ জন রোগীকে বেঁচে নিয়ে তাদের ওপর গবেষণা চালান হয় ৷ স্টেপ স্টাডির প্রাপ্ত ফলাফল থেকে জানা যায় যে , প্রার্থনায় তো কোনো ফলাফল পাওয়া যায় নি বরং এ ক্ষেত্রে রোগীদের কারো কারো মানসিক উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলেছে প্রার্থনা ৷ কারণ যাদের জন্যে প্রার্থনা করা হয়েছিল পরবর্তীতে তাদের শারীরিক অবস্থার অবগতি ঘটেছে ৷ কারণ এইসব গবেষণার আওতার রোগীরা যখন জানছে যে তাদের জন্যে প্রার্থনা করানো হয়েছে তখন তারা মনে করেছে তাদের অবস্থা এতোটাই গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছেছিল , যার জন্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে তাদের জন্যে প্রার্থনার ব্যবস্থা করতে হয়েছিল ৷ এর পরিণামে তাদের মধ্যে উদ্বেগের পরিমান বৃদ্ধি পেয়ে যায় ৷ ফলে
তাদের শারীরিক জটিলতা আগ থেকে আরো বৃদ্ধি পেয়ে যায় ৷ এই সব কেইস স্টাডি থেকে প্রমাণিত তথ্য বেরিয়ে এসেছে যে , চিকিৎসা ছাড়া শুধু প্রার্থনার দ্ধারা কোনো অসূস্থ রোগীকে তার রোগের নিরময় করা যায় না ৷
ষোড়শ শতকে সুইজারল্যান্ডের বেসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাসায়ান শাস্ত্র এবং ভেষজবিদ্যার অধ্যাপক ফিলিপ্রাস প্যারাসেলসাস ঘোষণা করেন যে , মানুষের অসুস্থতার কারণ কোনো পাপের ফল কিংবা অশুভ শক্তির প্রভাবের জন্যে নয় ৷ রোগের কারণ হলো জীবাণু ৷ ওষুধ প্রযোগে জীবানু নাশ করা সম্ভব হলেই রোগ ভাল হয়ে যাবে ৷ এক্ষেত্র প্রার্থনার বা অন্য কিছুর প্রয়োজন নাই ৷
কিন্তু প্যারাসেলসাসের এই বৈজ্ঞানিক এবং আধুনিক তত্ত্ব শুনে ধর্ধবিশ্বাসী তা মানতে চাইলেন না ৷ বরং সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক ধর্মবিরোধী মতবাদ প্রচারের জন্যে তার বিচার করা হয় এবং তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় ৷ তবে প্যারাসেলসাস বুদ্ধি প্রয়োগ করে তার নিজের মাতৃভূমি থাকে পলায়ন করে জীবন বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিলেন ৷
কিন্তু এর পূর্বে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক অবিষ্কার করার অপরাদে বিভিন্ন ধর্মের বিশ্বাসীর হাতে অনেক বৈজ্ঞানিকে দণ্ডিত করা হয়েছ ৷ এদের মধ্যে অন্যতমরা ছিলেন - গ্যালিলিও , ব্রুনোই , লুচিলিও ,ভানিনি , টমাস কিড , ফ্রান্সিস কেট এবং বার্থৌলোমিউলিগেট সহ আরো অনেকে ৷ কিন্তু তাদের আবিষ্কারের ফল বিশ্বাসীরাই এখন টাকার জুরে বেশী ভোগ করছেন ৷ এই তো সেদিন সৌদি বাদশাহ্ আমেরিকা গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন ৷ মুসলিমরা এখন ইবনে খালিদ , যিরহাম , আল-দিমিস্কি , ওমর খৈয়ম , ইবনে সিনা , ইবনে বাজা , আল কিন্দী , আল রাজি কিংবা ইবনে রুশদের মতো দার্শনিকদের জন্য গর্ববোধ এখন করেন ৷ কিন্তু এই সব দার্শনিক বা বৈজ্ঞানিকদের সবাই তাদের সময়ে বৈজ্ঞানিক সত্য বা মুক্তমত প্রকাশের কারণে মৌলবাদী ও কুসংষ্কারের অন্ধবিশ্বাসীদের হাতে নিগৃহীত, নির্যাতিত কিংবা নিহত হয়েছিলেন ৷ এ প্রসঙ্গে শারীরিক শিক্ষাবিদ টিনা ব্রুস বলেছেন -
“ আপনি যদি আপনার শিশুর মাথায় ধর্মীয় কুসংস্কার প্রবেশ না করান তবে প্রকৃত জ্ঞান রখার জন্য অনেকখানি জায়গা পাওয়া যায় ” ৷
কিন্তু প্যারাসেলসাসের এই বৈজ্ঞানিক এবং আধুনিক তত্ত্ব শুনে ধর্ধবিশ্বাসী তা মানতে চাইলেন না ৷ বরং সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক ধর্মবিরোধী মতবাদ প্রচারের জন্যে তার বিচার করা হয় এবং তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় ৷ তবে প্যারাসেলসাস বুদ্ধি প্রয়োগ করে তার নিজের মাতৃভূমি থাকে পলায়ন করে জীবন বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিলেন ৷
কিন্তু এর পূর্বে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক অবিষ্কার করার অপরাদে বিভিন্ন ধর্মের বিশ্বাসীর হাতে অনেক বৈজ্ঞানিকে দণ্ডিত করা হয়েছ ৷ এদের মধ্যে অন্যতমরা ছিলেন - গ্যালিলিও , ব্রুনোই , লুচিলিও ,ভানিনি , টমাস কিড , ফ্রান্সিস কেট এবং বার্থৌলোমিউলিগেট সহ আরো অনেকে ৷ কিন্তু তাদের আবিষ্কারের ফল বিশ্বাসীরাই এখন টাকার জুরে বেশী ভোগ করছেন ৷ এই তো সেদিন সৌদি বাদশাহ্ আমেরিকা গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন ৷ মুসলিমরা এখন ইবনে খালিদ , যিরহাম , আল-দিমিস্কি , ওমর খৈয়ম , ইবনে সিনা , ইবনে বাজা , আল কিন্দী , আল রাজি কিংবা ইবনে রুশদের মতো দার্শনিকদের জন্য গর্ববোধ এখন করেন ৷ কিন্তু এই সব দার্শনিক বা বৈজ্ঞানিকদের সবাই তাদের সময়ে বৈজ্ঞানিক সত্য বা মুক্তমত প্রকাশের কারণে মৌলবাদী ও কুসংষ্কারের অন্ধবিশ্বাসীদের হাতে নিগৃহীত, নির্যাতিত কিংবা নিহত হয়েছিলেন ৷ এ প্রসঙ্গে শারীরিক শিক্ষাবিদ টিনা ব্রুস বলেছেন -
“ আপনি যদি আপনার শিশুর মাথায় ধর্মীয় কুসংস্কার প্রবেশ না করান তবে প্রকৃত জ্ঞান রখার জন্য অনেকখানি জায়গা পাওয়া যায় ” ৷
তবে কি বিশ্বাস এবং প্রার্থনায় কোনও কাজ হয় না ? না ! নিশ্চয়
প্রার্থনায় অবশ্যই কোনো কাজ হয় না ৷ নির্বোধেরা শুধু একটু সাময়িক ভরসা পায় প্রার্থনায় ৷ এ প্রসঙ্গে দার্শনিক বার্ট্র্যান্ড রাসেলের একটি উক্তি এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক হওয়ায় তা উল্লেখ করে এই লেখাটির শেষ করা হল ৷
তিনি বলেছেন -
“ প্রার্থনা বা বিনয়ের সাহায্যে আপনি নিজের ইচ্ছেমতো কিছুই বদল করতে পারেন না , কিন্তু পারেন প্রাকৃতির নিয়ম সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ ক’রে ৷
এভাবে আপনি যে-শক্তি অর্জন করেন , তা প্রার্থনার- সাহায্যে- অর্জন - করা-যায়- ব’লে-বিশ্বাস-করা শক্তির থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী ও অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য ;
কেননা আপনি জানেন না স্বর্গে আপনার প্রার্থনা সদয়তার সাথে বিবেচিত হবে কি না ৷
তাছাড়া প্রার্থনার রয়েছে বিশেষ সীমা ; খুব বেশি চাওয়া অধার্মিকতা ব’লে বিবেচিত হবে ৷
কিন্তু বিজ্ঞানের শক্তির কোনো সীমা নেই ৷ আমাদের বলা হয়েছে বিশ্বাস পর্বত স্থানান্তরিত করতে পারে , কিন্তু কেউ তা বিশ্বাস করে না ৷ এখন আমাদের বলা হয় আণবিক বোমা পর্বত স্থানান্তরিত করতে পারে , এবং সবাই তা বিশ্বাস করে ৷( বাংলা অনুবাদ ; হুমায়ুন আজাদ )
“ প্রার্থনা বা বিনয়ের সাহায্যে আপনি নিজের ইচ্ছেমতো কিছুই বদল করতে পারেন না , কিন্তু পারেন প্রাকৃতির নিয়ম সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ ক’রে ৷
এভাবে আপনি যে-শক্তি অর্জন করেন , তা প্রার্থনার- সাহায্যে- অর্জন - করা-যায়- ব’লে-বিশ্বাস-করা শক্তির থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী ও অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য ;
কেননা আপনি জানেন না স্বর্গে আপনার প্রার্থনা সদয়তার সাথে বিবেচিত হবে কি না ৷
তাছাড়া প্রার্থনার রয়েছে বিশেষ সীমা ; খুব বেশি চাওয়া অধার্মিকতা ব’লে বিবেচিত হবে ৷
কিন্তু বিজ্ঞানের শক্তির কোনো সীমা নেই ৷ আমাদের বলা হয়েছে বিশ্বাস পর্বত স্থানান্তরিত করতে পারে , কিন্তু কেউ তা বিশ্বাস করে না ৷ এখন আমাদের বলা হয় আণবিক বোমা পর্বত স্থানান্তরিত করতে পারে , এবং সবাই তা বিশ্বাস করে ৷( বাংলা অনুবাদ ; হুমায়ুন আজাদ )
( সূত্র;- অভিজিৎ রায়ের -
বিশ্বাসের ভাইরাস বইয়ের
অষ্টম অধ্যায় , ভাইরাস
থেকে মুক্তি থেকে কিছু তথ্যাদি
সংগ্রহ করে এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
থেকে এই লেখাটি তৈরি করা হয়েছে )
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন