হিন্দু
পৌরাণিক গ্রন্থের ‘ মদন
ভস্ম ’ এবং মদনের পুনর্জম্মের কাহিনি :
আমাদের সমাজে অনেক
সময়ে
বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের মধ্যে
দিয়ে কোনো একটি ঘটনার সমাপ্তির পর
নুতনভাবে তা আবার জন্মনিলে তখন
এই নতুন জন্ম
নেয়াকে অনেকে বলেন
ইহা যেন ‘ মদন
ভস্ম ’ এর পর পুনরায়
জেগে উঠার কাহিনি ৷
এই
‘ মদন ভস্ম ’ কথাটির উৎপত্তির
কারণ খুঁজতে গিয়ে
যা জানা গেল
তা নিম্নরূপ ;
হিন্দুধর্মের স্রষ্টা
ব্রহ্মা কোনো এক
অবসর সময়ে স্বইচ্ছায়
একটি প্রজাপতিকূলের সৃষ্টি
করেন ৷ যখন
ব্রহ্মা প্রজাপতিদের সৃষ্টির
কাজে মগ্ন ছিলেন
তখন ব্রহ্মার মনে
হঠাৎ করে দেবতা-
দক্ষ , মরীচি সহ কিছু
দেবতা ও একটি
পরমাসুন্দরী নারীর আয়বর
তাঁর মানসপটে ভেসে
উঠে ৷
ব্রহ্মা
তখন প্রজাপতিকূলের সঙ্গে
তাঁর মানসপটে যাদের
আগমন ঘটেছিল তাদেরকে
ও সৃষ্টি করে
ফেলেন ৷ তখন দেবতা ছাড়াও
যে নারীকে ব্রহ্মা
সৃষ্টি করলেন , তার নাম
দেয়া হল সন্ধ্যা
৷ সম্ভবত পরবর্তীকালে
ব্রাহ্মা সৃষ্ট এই
নারী সন্ধ্যাকে সম্মান
জানাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের
ভক্তরা সন্ধ্যা কালে
সন্ধ্যা পুজার প্রবর্তন
করেছে ৷
কিত্তু
পরমাসুন্দরী এই নারীকে
সৃষ্টির পর স্বয়ং
ব্রহ্মা সহ দক্ষ
ও মরীচি দেবতাগণ ভাবতে
শুরু করেন যে , দেবতা
সৃষ্টির সময়ে যে
মানব নারীর সৃষ্টি
হয়ে গেছে সেই
নারীকে এখন তাঁরা
কি করবেন ? কেইবা এই
মানবী নারীকে গ্রহণ
করবে ৷ দেবতাদের মনের
কথা ব্রহ্মা অচিরেই
বুঝতে পারলেন ৷ আর
এর সামাধান করলেন
ব্রহ্মা আর এক
মানব পুরুষের সৃষ্টি
করে ৷ ব্রহ্মার
নতুন সৃষ্ট এই সুন্দর মানব পুরুষ
দেখে দেবতাগণও মোহিত
হয়ে যান ৷
নতুন সুষ্ট
মানব পুরুষ সষ্টার
কাছে জানতে চাইল
তার করনীয় হবে
কী কাজ , আর তার নামইবা
কী হবে ? আর তার জীবন
সঙ্গীই বা কে হবে ?
ব্রহ্মার
পক্ষ থেকে উত্তর
আসলো , এখন থেকে
তুমি হবে পুষ্পবান
৷ আর তুমি
পুষ্পবান দিয়ে দেবতাদের
সকলের মনে মত্ততা
ও আনন্দ সৃষ্টি
করবে ৷ সে এই কাজে
যখন সফল হলো ,
তখন ব্রহ্মা তাকে
বললেন , তুমি দেবতাদের সকলের
চিত্ত মথিত করতে পেরেছো , তাই তোমার নাম
দেয়া হলো ‘ মন্মথ ’ ৷
তা ছাড়া এখন
থেকে তুমি হবে
অসাধারন কামরূপী , তাই তোমার আরেক
নাম হবে ‘ কাম ’ ৷
আর
তুমি সমস্ত মানবজাতিকে
তুমি মত্ত করবে , সেই
জন্যে তোমাকে ‘ মদন ’ নাম
করণ করা হলো ৷
অন্যদিকে তুমি আবার
দেবতা মহাদেবের সকল
দর্প চূর্ণ করবে , সেই
কারণে তোমাকে ‘ কর্ন্দপ ’ নাম
দেয়া হলো ৷ আর
এখন থেকে স্বর্গ
, মত্য , ও পাতালে
তোমার সমান অবস্থিতির
ব্যবস্থা করা হলো ৷
বহ্মার নামকরণ
ও কাজের বিবরণ
শুনে নতুন সৃষ্ট মানব মদন তার কাজ আরম্ভ
করে দিল ৷ মদন প্রথমেই নারী মানবী
সন্ধ্যার সম্মুখে তাঁর
কুসুম শরাসন ও
পুষ্মময় পষ্ণষর ব্রহ্মার
ওপর নিক্ষেপ করলো ৷
পরমসুন্দরী সন্ধ্যার সম্মুখে ব্রহ্মার
ওপর এই শর
নিক্ষেপ করায় ব্রহ্মা
সন্ধ্যার প্রতি মোহিত
হয়ে পড়েন ৷ দেবতা মহাদেব
ব্রহ্মার এই কামাতুর
ভাব দেখে অসন্ত্তষ্ট
হয়ে ব্রহ্মাকে উদ্দেশ্য
করে বলেই ফেললেন , ব্রহ্মার পুত্রবধু , কন্যা ও
মাতৃতুল্যের প্রতি কামাসত্ত
হওয়া মোটেই ঠিক
নয় নি ৷ ব্রহ্মার
জন্যে ইহা পাপ
কার্য হয়েছে ৷ এর কারণ
ব্যাখ্যা দিয়ে মহাদেব
ব্রহ্মাকে বললেন ব্রহ্মা
হচ্ছেন বেদের নিয়ামক , তাই
তিনি কোনো ভাবেই
এই পাপ কার্য
করতে পারেন না ৷
মহাদেবের
তিরস্কারে ব্রহ্মা দুঃখিত
হয় যান এবং
মদনকে দোষ দিয়ে
বলেন , মদন তোমার জন্যে
আমি অপমানিত হয়েছি ৷ তোমার
এই অপরাদের জন্যে
তোমাকে এই অভিশাপ
দিচ্ছি যে , তুমি মহাদেবের অগ্নিবাণে
দগ্ধ হয়ে 'মদন
ভস্মে ' পরিণত হবে ৷
মদন ব্রহ্মার এই
অভিশাপে ভয় পেয়ে
ব্রহ্মার কাছে অপরাদের
ক্ষমা চেয়ে নানা ভাবে অনুনয় - বিনয় আরম্ভ করে
দিল ৷ মদনে এই
আকুতি মিনতিতে ব্রহ্মার
মনে দয়ার সৃষ্টি
হয় ৷ ব্রহ্মা তখন মদনকে বললেন
, মদন তুমি মহাদেবের ক্রুধানলে ভস্মীভূত
হলেও ব্রহ্মার অনুগ্রহেই
তোমার আবার পুণর্জম্ম
হবে ৷ আমি তোমাকে
এই কথা দিলাম ৷
উপরে
বর্ণিত এই ঘটনাই ‘ মদন ভস্ম ’ ও মদনের
পুর্জম্মের কাহিনি
৷
‘
সূত্র; (জনকণ্ঠে প্রকাশিত
একটি প্রতিবেদনের
আলোকে এই
লেখাটি তৈরি করা হয়েছে )
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন