অসমের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র উলফার আন্দোলনে বাংলাদেশের একসময়ের ভূমিকা ( সূত্র;- গবেষক আজিজুর রহমান )
অসমের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র উলফার আন্দোলনে একসময়ের বাংলাদেশের ভূমিকা নিয়ে গবেষক আজিজুর রহমানের একটি প্রতিবেদনের সংক্ষিপ্ত রূপ ৷
( সূত্র ; জনকণ্ঠে প্রকাশিত গবেষক আজিজুর রহমান উলফা ৷৷ সন্ত্রাসেই সর্বনাশ নামক প্রতিবেদনটিকে সংক্ষেপ করে এই লেখাটি তৈরি করা হয়েছে ৷ )
একটি ভারতীয়
বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠনের নাম ছিল দি ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব অসম (ইউএলএফএ) বা
উলফা । এই সশস্ত্র উলফার আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন-শোষণ আর নিপীড়নের
বিরুদ্ধে লড়াই করে অসম রাজ্যকে ভারত ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন সার্বভৌম
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে।
এই লক্ষ্য উলফা ভারত
রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে আর এরই অংশ হিসেবে উলফা গেরিলা যুদ্ধের নামে আরম্ভ করে পুলিশ, আধাসামরিক ও সামরিক বাহিনীর ওপর অতর্কিত আক্রমণ, হত্যা, ইত্যাদি সহ জনপদ-জনসমাবেশ, বাস-ট্রেনে বোমা হামলা চালিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা করা ৷ এছাড়াও শিল্প-কারখানা সংশ্লিষ্টদের অপহরণ, থানা-ব্যাংক লুট, খুন, রাস্তা-ব্রিজ-পুল ইত্যাদি উড়িয়ে দেয়ার মতো নানা গণবিরোধী সন্ত্রাসী
কর্মকাণ্ডে
ও তারা জড়িয়ে পড়ে ।
ভারতের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন দেশগুলোকে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহারে উলফা হয়ে ওঠে এক
অপ্রতিরোধ্য শক্তি । দক্ষিণ
এশিয়ার ভূরাজনৈতিক সমীকরণ বিবেচনায় ভারতের সঙ্গে বৈরী সম্পর্কের সূত্র ধরে
প্রতিবেশী অনেক রাষ্ট্রের অতীতের সরকারগুলো উলফাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা
দিয়েছে বলে প্রমাণিত তথ্য পাওয়া গেছে ৷ এমনকি প্রশিক্ষণ
দিয়েও সহায়তা করেছে বলে জানা যায় । উলফার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থ ও অস্ত্র যোগানসহ
প্রধান মদদদাতা হিসেবে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের বিরুদ্ধে ভারত
বিভিন্ন সময় প্রচুর তথ্য প্রমাণ দিয়ে পাক- সরকারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে বলে ও জানা যায় ৷
ভারতীয় গোয়েন্দারা সূত্রে জানা যায় যে , আইএসআই কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে
উলফার নানা তৎপরতায় সহায়তা দিয়ে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল । এরই ধারাবাহিকতায় নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার এবং
বাংলাদেশে উলফা ঘাঁটি গাড়তে পেরেছিল বলে তদন্তে জানা গেছে ৷
১৯৮৯ সালে উলফা প্রথম বাংলাদেশে ঘাঁটি গাড়ে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে
এরশাদের ক্ষমতা ছাড়ার বছরখানেক আগে দেশের চরম রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে এবং কোনো এক পক্ষের সহযোগীতায় তখন
বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার গারো পাহাড়সংলগ্ন সীমান্তবর্তী এলাকায় ১৩-১৪টি ক্যাম্প
স্থাপন করে সংগঠনটি ভারতবিরোধী তৎপরতা প্রথমে আরম্ভ করে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে ।
এরপর বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার
(১৯৯১-৯৬) ক্ষমতা গ্রহণের পরই সরকারের সক্রিয় সমর্থন ও সহযোগিতায় উলফা পেতে সক্ষম হয় ৷ এই করণে বাংলাদেশে তাদের
তৎপরতা নতুন ভাবে আরও ব্যাপক, বিস্তৃত ও জোরদার
করতে ও সক্ষম হয় । পর্যায়ক্রমে তারা
সমরাস্ত্র ও বিস্ফোরকের চালান বাংলাদেশের ওপর দিয়ে অবাধে পাচারের নেটওয়ার্ক গড়ে
তোলে।
মূলত এই সময় থেকেই উলফার শীর্ষ পর্যায়ের
নেতারা বাংলাদেশে তাদের স্থায়ী আস্তানা গড়ে তুলতে শুরু করে এবং উলফার অর্থনৈতিক ভীত মজবুত করতে বাংলাদেশে উলফা ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেমে পড়ে।
তখনকার বাংলাদেশের বিএনপি সরকার উলফাকে শুধু আশ্রয়-প্রশ্রয় ও সার্বিক সহযোগিতাই প্রদান করেনি বরং বাংলাদেশের ভূখণ্ড ও ব্যবহার করে ভারতের অভ্যন্তরে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে পশ্চাদভূমি হিসেবে বাংলাদেশে নিরাপদ আশ্রয় নেয়ার সুযোগও সৃষ্টি করে দেয় ৷
তখনকার বাংলাদেশের বিএনপি সরকার উলফাকে শুধু আশ্রয়-প্রশ্রয় ও সার্বিক সহযোগিতাই প্রদান করেনি বরং বাংলাদেশের ভূখণ্ড ও ব্যবহার করে ভারতের অভ্যন্তরে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে পশ্চাদভূমি হিসেবে বাংলাদেশে নিরাপদ আশ্রয় নেয়ার সুযোগও সৃষ্টি করে দেয় ৷
আর এই উদ্দেশ্যে
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী ৫টি জেলা - জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও হবিগঞ্জের বিশাল দুর্গম এলাকা কার্যত উলফার দখল ও
নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এখান থেকেই তারা
ভারতবিরোধী সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে শুরু করে দেয় ৷
এরপর আওয়ামী লীগ
(১৯৯১-৯৬) শাসনামলে উলফার সব ধরনের তৎপরতা বন্ধ করে দেয় সরকার। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে হাসিনা
সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে উলফা নেতারা বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। বিচ্ছিন্নতাবাদ, জঙ্গীবাদসহ সকল ধরনের সন্ত্রাস নির্মূলে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক
অঙ্গীকার আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমর্থন লাভ করে।
এর ফল হিসেবে ১৯৯৭
সালের ২১ ডিসেম্বর সংগঠনটির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা অনুপ চেটিয়াসহ আরও দুজন নেতা বাবুল
শর্মা ও লক্ষ্মীপ্রসাদ বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। অনুপ চেটিয়ার কাছ থেকে দুটি বাংলাদেশী
পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়। এসব অবৈধ পাসপোর্ট
ব্যবহার করে তার আমেরিকা, ব্রিটেন, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, থাইল্যান্ড, ফিলিপিন্স, সিঙ্গাপুর, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন
দেশ ভ্রমণের তথ্য পাওয়া যায়।
অনুপ চেটিয়া উলফার অতি গুরুত্বপূর্ণ নেতা। ভীমকান্ত বুড়াগোহাইন ও অনুপ চেটিয়ার ডাকে ১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল অরবিন্দ রাজখোয়া, পরেশ বড়ুয়া, প্রদীপ গগৈ, শশধর চৌধুরী, চিত্রবন হাজারিকা, বেনিং রাভা, রামুমেচ, রাজু বড়ুয়া, কমল বোড়া, বৃষ্টি রাজখোয়াসহ বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শিবসাগর জেলার রঙঘরে এক বৈঠকে মিলিত হয়ে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম অসম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগ্রামের আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে গঠন করেন স্বাধীনতাকামী সংগঠন দি ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব অসম সংক্ষেপে উলফা। প্রথম দিকে সংগঠন পরিচালনার জন্য গঠন করা হয় ১৬ সদস্যের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি। পরবর্তীকালে এই কমিটিকে বর্ধিত করে রাজনৈতিক ও সামরিক এই দুই শাখার সমন্বয়ে ২৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয় ৷
অনুপ চেটিয়া উলফার অতি গুরুত্বপূর্ণ নেতা। ভীমকান্ত বুড়াগোহাইন ও অনুপ চেটিয়ার ডাকে ১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল অরবিন্দ রাজখোয়া, পরেশ বড়ুয়া, প্রদীপ গগৈ, শশধর চৌধুরী, চিত্রবন হাজারিকা, বেনিং রাভা, রামুমেচ, রাজু বড়ুয়া, কমল বোড়া, বৃষ্টি রাজখোয়াসহ বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শিবসাগর জেলার রঙঘরে এক বৈঠকে মিলিত হয়ে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম অসম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগ্রামের আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে গঠন করেন স্বাধীনতাকামী সংগঠন দি ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব অসম সংক্ষেপে উলফা। প্রথম দিকে সংগঠন পরিচালনার জন্য গঠন করা হয় ১৬ সদস্যের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি। পরবর্তীকালে এই কমিটিকে বর্ধিত করে রাজনৈতিক ও সামরিক এই দুই শাখার সমন্বয়ে ২৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয় ৷
ভারতের
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অসম, মেঘালয়, মনিপুর, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল ও হিমাচল মিলে সেভেন সিস্টারস হিসেবে খ্যাত এই ৭ রাজ্যের
অন্যতম হচ্ছে অসম। ২০১১ সালের তথ্য
অনুযায়ী, ৭৮ হাজার ৫৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ২৭
জেলা নিয়ে গঠিত রাজ্যটির মোট জনসংখ্যা ৩ কোটি ১১ লাখ ৬৯ হাজার । এই জেলাগুলোকে ৪টি ম-ল অর্থাৎ ৪টি অঞ্চলে ভাগ
করে শুরু হয় ভারত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই।
কিন্তু ক্রমশ এ যুদ্ধ
চলে যায় অসমের সাধারণের মানুষের বিরুদ্ধে। দিন যতই যেতে থাকে সংগঠনটি ধীরে ধীরে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে
বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হয়। প্রথম থেকেই আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যায় উলফার সকল নেতারা।
পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত জোট (২০০১-০৬) শাসনামলে বাংলাদেশে উলফা আরও বেপরোয়া ও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে এবং সংগঠনটির তৎপরতা আগের তুলনায় বেশি প্রকাশ্যে ও চলে আসে। শুধু উলফাই নয়, বিএনপি-জামায়াতের এই শাসনকালে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৭ রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী বেশ কয়েকটি সংগঠন বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় ঘাঁটি গেড়ে ভারতবিরোধী তৎপরতা চালাতে থাকে।
পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত জোট (২০০১-০৬) শাসনামলে বাংলাদেশে উলফা আরও বেপরোয়া ও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে এবং সংগঠনটির তৎপরতা আগের তুলনায় বেশি প্রকাশ্যে ও চলে আসে। শুধু উলফাই নয়, বিএনপি-জামায়াতের এই শাসনকালে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৭ রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী বেশ কয়েকটি সংগঠন বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় ঘাঁটি গেড়ে ভারতবিরোধী তৎপরতা চালাতে থাকে।
বাংলাদেশের অন্যতম
প্রধান রাজনৈতিক শক্তি বিএনপির সঙ্গে উলফার এই সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে
মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত মুসলমানদের
দি মুসলিম ইউনাইটেড লিবারেশন টাইগারস অব অসম (এমইউএলটিএ) বা মুলটা এবং দি মুসলিম
ইউনাইটেড লিংকস ফোর্স অব অসম (এমইউএলএফএ) বা মুলফা নামের সংগঠন দুটির সঙ্গে
বাংলাদেশের জামায়াতের ইসলামী ও কয়েকটি জঙ্গীগোষ্ঠীর আদর্শগত সম্পর্কের সূত্র ধরে
সম্মিলিতভাবে তারা এই ভূমিকা পালন করে আর পাকিস্তানের গোয়েন্দা
সংস্থা আইএসআই তো আছেই। এভাবেই উলফা
বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে।
উলফা ধীরে ধীরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের ব্যবসা-বাণিজ্যে, প্রশাসনে, সমাজে ও সরকারের
অভ্যন্তরে শক্তি সঞ্চয় আর আধিপত্য বিস্তার করে পরিণত হয় সন্ত্রাসের
দানব-ফ্রাঙ্কেনস্টাইনে। একপর্যায়ে দেশের
অভ্যন্তরেও সন্ত্রাস বিস্তারে অদৃশ্য ভূমিকা রাখতে শুরু করে।
উলফা নেতারা অনেকে
সীমান্তবর্তী অঞ্চলে তাদের উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিয়ে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করে
অনেকটা স্থায়ী বাসিন্দাদের সমপর্যায়ে উঠে আসে। তাছাড়া প্রচুর অর্থবিত্তের কারণে এসব এলাকায়
তাদের ব্যাপক প্রভাববলয়ও গড়ে ওঠে। সর্বোপরি
অসমের অহমিয়া জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বাংলাদেশের গারো পাহাড় সংলগ্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর
দৈহিক আকৃতি ও সংস্কৃতিগত সাদৃশ্য থাকায় উলফাদের তারা ‘স্বজাতি’ ভেবে একাত্মবোধ থেকে অহমিয়াদের স্বাধীনতার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে
ওঠে। এছাড়া অসম স্বাধীনতা লাভ করলে উপজাতি
অধ্যুষিত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাও অসম রাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত হবে এমন একটি আকাক্সক্ষা থেকে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর
লোকজন উলফাদের আশ্রয় ও নিরাপত্তাসহ যে কোন সহায়তা দিতে আরম্ভ করে ৷
উলফার আয়ের প্রধান উৎস ছিল আন্তর্জাতিক অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান, বনের কাঠ পাচার, অপহরণ, বাণিজ্য, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও গুদাম লুট এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ। তবে অঢেল অর্থের মালিক এই সংগঠনের নেতাদের অর্থসম্পদের পরিমাণের সঠিক তথ্য পাওয়া খুব কঠিন। কারণ সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোর অর্থ কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে এবং এত বেশি হাতবদল হয় যে ওই জটিল-কঠিন অন্ধকার ব্যূহ ভেদ করে প্রকৃত হিসাব বের করা সত্যি দুঃসাধ্য। তবে এতটুকু জানা যায় যে , উলফা বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যবসা খাতেও অর্থ বিনিয়োগ করে। এর মধ্যে রয়েছে মিডিয়া, পানীয়, খাদ্য, আবাসিক হোটেল, বেসরকারী হাসপাতাল এবং একাধিক মোটরযান প্রশিক্ষণ স্কুল। তবে পরেশ বড়ুয়া এককভাবে মনিটরিং করতেন ট্যানারি শিল্প, গার্মেন্টস, নৌ ও সড়ক পরিবহন, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরস, ট্রাভেল এজেন্সি খাতে বিনিয়োগ বাণিজ্য।
২০০৫ সালে জানা যায়, বাংলাদেশে উলফার হোটেল ও ব্যাংক হিসাব পরিচালনার খবর। ভারতের সীমান্ত রক্ষাবাহিনী বিএসএফ তখন দাবি করে, ঢাকার মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে, মিরপুর ও বনানীতে উলফা পরিচালিত ৩টি হোটেল রয়েছে। এছাড়া, সিলেটে আরও ২টি হোটেল রয়েছে। ঢাকার ৩টি হোটেল পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন সবুল বড়ুয়া ওরফে আহমদ, সতীশ শর্মা ওরফে কামাল এবং আশীষ ডেকা ওরফে হোসাইন। সিলেটের জিন্দাবাজার ও বিশ্ববিদ্যালয় সড়কে উলফার হোটেল দুটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন দুলাল রায় ওরফে সাইদুল এবং অনিল কুমার দে ওরফে সোহেল। উলফার ৩টি ব্যাংক হিসাবের মধ্যে ১টি ঢাকায়, ১টি সিলেটে ও ১টি চট্টগ্রামে- এই ৩টির হিসাবই ইসলামী ধারার একটি ব্যাংকে খোলা হয়েছিল। সংগঠনটির শীর্ষ পর্যায়ের অন্তত এক ডজন নেতা বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছিল। পরেশ বড়ুয়া কামরুজ্জামান খান নামে এবং উলফাপ্রধান অরবিন্দ রাজখোয়ার ইনামুল হক নামে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করার তথ্য পাওয়া যায়।
উলফার আয়ের প্রধান উৎস ছিল আন্তর্জাতিক অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান, বনের কাঠ পাচার, অপহরণ, বাণিজ্য, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও গুদাম লুট এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ। তবে অঢেল অর্থের মালিক এই সংগঠনের নেতাদের অর্থসম্পদের পরিমাণের সঠিক তথ্য পাওয়া খুব কঠিন। কারণ সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোর অর্থ কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে এবং এত বেশি হাতবদল হয় যে ওই জটিল-কঠিন অন্ধকার ব্যূহ ভেদ করে প্রকৃত হিসাব বের করা সত্যি দুঃসাধ্য। তবে এতটুকু জানা যায় যে , উলফা বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যবসা খাতেও অর্থ বিনিয়োগ করে। এর মধ্যে রয়েছে মিডিয়া, পানীয়, খাদ্য, আবাসিক হোটেল, বেসরকারী হাসপাতাল এবং একাধিক মোটরযান প্রশিক্ষণ স্কুল। তবে পরেশ বড়ুয়া এককভাবে মনিটরিং করতেন ট্যানারি শিল্প, গার্মেন্টস, নৌ ও সড়ক পরিবহন, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরস, ট্রাভেল এজেন্সি খাতে বিনিয়োগ বাণিজ্য।
২০০৫ সালে জানা যায়, বাংলাদেশে উলফার হোটেল ও ব্যাংক হিসাব পরিচালনার খবর। ভারতের সীমান্ত রক্ষাবাহিনী বিএসএফ তখন দাবি করে, ঢাকার মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে, মিরপুর ও বনানীতে উলফা পরিচালিত ৩টি হোটেল রয়েছে। এছাড়া, সিলেটে আরও ২টি হোটেল রয়েছে। ঢাকার ৩টি হোটেল পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন সবুল বড়ুয়া ওরফে আহমদ, সতীশ শর্মা ওরফে কামাল এবং আশীষ ডেকা ওরফে হোসাইন। সিলেটের জিন্দাবাজার ও বিশ্ববিদ্যালয় সড়কে উলফার হোটেল দুটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন দুলাল রায় ওরফে সাইদুল এবং অনিল কুমার দে ওরফে সোহেল। উলফার ৩টি ব্যাংক হিসাবের মধ্যে ১টি ঢাকায়, ১টি সিলেটে ও ১টি চট্টগ্রামে- এই ৩টির হিসাবই ইসলামী ধারার একটি ব্যাংকে খোলা হয়েছিল। সংগঠনটির শীর্ষ পর্যায়ের অন্তত এক ডজন নেতা বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছিল। পরেশ বড়ুয়া কামরুজ্জামান খান নামে এবং উলফাপ্রধান অরবিন্দ রাজখোয়ার ইনামুল হক নামে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করার তথ্য পাওয়া যায়।
ওই একই সময়ে বাংলাদেশে বসবাসকারী নাগাল্যান্ডের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন ন্যাশনাল সোস্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ড (এনএসসিএন)-এর চেয়ারম্যান ইসাক সু ও অন্য আরেক নেতা এন্থনি শিমরাইর বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছিলেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে ৷
এই সময়ে এন এসসি এন নাকি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মনিপুর ও অরুণাচলের দেড় ডজনেরও বেশি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠনের
সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। উলফার সঙ্গে সম্পর্ক
রয়েছে এমন বেশকিছু সংগঠনকে বাংলাদেশে ঘাঁটি গেড়ে ভারতবিরোধী তৎপরতা চালাতে সুযোগ করে দেয় তখনকার বিএনপি সরকার এবং এসব সংগঠনের নেতাদের তখন বাংলাদেশে বসবাসের
সুযোগও করে দেয়া হয়।
বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে আশ্রয় পাওয়া
সংগঠন এবং এসব সংগঠনের নেতারা হলেন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট অব বোরোল্যান্ড (এনডিএফবি)
এর চেয়ারম্যান রঞ্জন দাহমারী, কামতাপুর লিবারেশন
অর্গানাইজেশন (কেএলও) ও এর চেয়ারম্যান জীবন সিংহ, ন্যাশনাল লিবারেশন অব ত্রিপুরা (এনএলএফটি) ও এর চেয়ারম্যান বিশ্বমোহন
দেব বর্মা, অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স (এটিটিএফ) ও
এর চেয়ারম্যান রণজিৎ দেব বর্মাসহ আরও কিছু সংগঠন এবং এর নেতৃবৃন্দ। এদিকে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের
সহায়তায় পাকিস্তানের আফগান সীমান্তবর্তী এলাকায় উলফার সদস্যদের নিয়মিত সামরিক
প্রশিক্ষণ দেয়া হতো।
আইএসআইয়ের মাধ্যমে
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন জইশে মোহাম্মদ, লস্করই তৈয়াবা, হিজবুত তাহরীর, হরকাতুল জিহাদের মতো
উগ্র ধর্মান্ধ জঙ্গীগোষ্ঠীর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এছাড়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে মিয়ানমারের
বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠনগুলোসহ শ্রীলঙ্কার তামিল টাইগারদের সঙ্গেও। এই সংগঠনটির সঙ্গে উলফার সম্পর্কের গভীরতার
প্রমাণ পাওয়া যায় বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে কক্সবাজারে আকস্মিকভাবে ধরা পড়া
অস্ত্রের বিশাল চালানটি দেখে।
উলফাকে দেয়ার জন্য
তামিল টাইগারদের নিয়ে আসা ওই চালানে ৫০০টি ছিল একে-৪৭, ৫০টি রকেট লঞ্চার এবং ২ হাজার পিস্তল। তখন কয়েক তামিল টাইগার সদস্যকেও আটক করা
হয়েছিল। এছাড়া অজ্ঞাত সূত্র
থেকে আনা বগুড়ায় এক ট্রাক অস্ত্রসহ আরও অনেক ছোট ছোট অস্ত্রের চালান ধরা পড়লেও, আকস্মিকভাবে ধরা পড়া চালানের মধ্যে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় চট্টগ্রামের
১০ ট্রাক অস্ত্রের চালানটি। সর্বশেষ
২০১৪ সালের জুন মাসে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ির গহীন অরণ্যের ৯টি
পরিত্যক্ত বাঙ্কার থেকে রকেট লঞ্চার, মেশিনগান, বিভিন্ন ধরনের ভারি আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার
করে রেব । একসময় সাতছড়ির টিলাসমৃদ্ধ গহীন অরণ্য ছিল
বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন ত্রিপুরা পিপলস ডেমোক্র্যাটি ফ্রন্ট (টিপিডিএফ), ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা (এনএলএফটি), ইউনাইটেড লিবারেশন অব অসম (আলফা), অল ত্রিপুরা টাইগার
ফোর্স (এটিটিএফ), ট্রাইবাল ফোর্স ত্রিপুরা কিংডম (টিএফটিকে), পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ), মনিপুর রাজ্যের পিপলস
ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট (পিইউএলএফ), প্রিপাক ও উলফার নিয়ন্ত্রণে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত চতুরতার সঙ্গে গ্রেফতারের
নাটক সাজিয়ে নেতাদের অনেকেই ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। তবে নিজেদের বাঁচাতে সমর্থ হলেও সংগঠনকে
বাঁচাতে পারেননি।
কারণ ২০০৯ সালে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোট ক্ষমতা গ্রহণের
পরই মূলত উলফার মৃত্যু অনিবার্য হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আশ্রয় নেয়া ও সরকারের প্রত্যক্ষ মদদ ছাড়া অসমের
স্বাধীনতা যুদ্ধ দীর্ঘদিন চালিয়ে যাওয়াও যাওয়া সম্ভব হয় নি ৷ বাংলাদেশের
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তাড়া খেয়ে পালিয়ে বেড়ানো বেশিরভাগ নেতারা বিষয়টি
উপলব্ধি করে নিশ্চিত হন যে এভাবে আর আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় ।
একুশ শতকে বিশ্ব রাজনীতির যে গতিপ্রকৃতি সৃষ্টি হয়েছে , তাতে করে শেখ হাসিনার
মতো গতিশীল আধুনিক রাজনীতিসমৃদ্ধ নেতার কাছ থেকে আর কোন ধরনের সন্ত্রাসের জন্য সমর্থন
পাওয়া সম্ভব নয় আর বাংলাদেশের সমর্থন না পাওয়া গেলে সশস্ত্র আন্দোলন চালিয়ে যাওয়াও সম্ভব হবে না ৷
ফলে নিজেদের ভবিষ্যত
নিয়ে উদ্বিগ্ন ও হতাশ হয়ে পড়েন নেতারা। তাই শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধ পরিত্যাগ
করে অসমের সঙ্কট নিরসনে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে নিঃশর্ত আলোচনার সিদ্ধান্ত
নিলেও, স্বদলীয় কট্টরপন্থী যোদ্ধাদের বন্দুকের
নলের টার্গেট হওয়ার আশঙ্কায় ভীতসন্ত্রস্ত নেতাদের অনেকেই গ্রেফতারের নামে
আত্মসমর্পণ করে ভারত সরকারের নিরাপত্তা হেফাজতে চলে যান।
উলফা চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়াসহ ৫ কেন্দ্রীয়
শীর্ষ নেতার আত্মসমর্পণ করেন প্রথমে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে ৷ আত্মসমর্পণকারী অন্য নেতারা হলেন সংগঠনের
আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শশধর চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ
সম্পাদক ও অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক চিত্রবন হাজারিকা, ডেপুটি কমান্ডার ইন চীফ রাজু বড়ুয়া এবং নারী বাহিনীর প্রধান কাবেরি
কাছাড়ি।
যে ১৬ জনকে নিয়ে
উলফার কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত, তাদের ১০ জনই চলে যান
ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে। উলফার
ভাইস চেয়ারম্যান প্রদীপ গগৈ ধরা পড়েছেন অনেক আগেই। সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া গ্রেফতার হয়ে এখন
বাংলাদেশের জেলে। উলফার তাত্ত্বিক নেতা ‘ফাদার অব উলফা’ হিসেবে খ্যাত ভীমকান্ত বুড়াগোহাইন মারা গেছেন। আরেক নেতা রামুমেচ সংগঠন ছেড়ে দিয়েছেন। অন্য ৩ জন ভাইস চেয়ারম্যান অশান্ত বাঘফুকান, মেজর রবিন নেওগ ও মেজর বেনিং রাভা ভুটানে উলফাবিরোধী শিবিরের
দায়িত্বে থাকাকালীন সে দেশের সরকারী বাহিনীর উলফাবিরোধী অভিযানে শিবির ধ্বংসের পর
আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
উলফার শীর্ষ
নেতৃত্বের মধ্যে এখন শুধু কট্টরপন্থী নেতা পরেশ বড়ুয়া সক্রিয়। উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে যখন অসমের
তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী হিতেশ্বর সাইকিয়া উলফার কিছু নেতাকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে যান, তখনই সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্বে মতবিরোধ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ওই আলোচনাকে কেন্দ্র করেই উলফার অভ্যন্তরে
কট্টরপন্থী ও আলোচনাপন্থী বিভাজন শুরু হয়। কট্টরপন্থীদের চাপে আলোচনাপন্থীরা এতটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন যে, তাদের অনেকে দেশ ত্যাগসহ আত্মগোপনে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। অসমের রাজ্য সরকারের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা ও
পুনর্বাসনের অঙ্গীকারে তখন প্রায় ৫ হাজার উলফা সদস্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। কিন্তু এক সময়ে তাদের সহযোদ্ধা কমরেডদের
আক্রমণ থেকে বাঁচতে সরকার সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র
সরবরাহ করে। মূলত ওই সময়ই সংগঠন
চলে যায় কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত কমান্ডার ইন চীফ পরেশ বড়ুয়ার মুঠোয়। আর এখন পরেশ বড়ুয়াই কোণঠাসা। পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাকে। কখনও চীনে, কখনও মিয়ানমারের
জঙ্গলে। তবে চীন-ভারত-মিয়ানমার
সীমান্তে মিয়ানমারের কাচিন প্রদেশের দুর্গম ও গহীন অরণ্যে নাগাল্যান্ডের
বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন ন্যাশনাল সোস্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ড (এনএসসিএন)-এর
শিবির হচ্ছে পরেশ বড়ুয়ার গোপন আশ্রয়স্থল। তবে তার সঙ্গে উলফা কেন্দ্রীয় কমিটির কোন সদস্যই নেই।
পরেশ বড়ুয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন উলফার ২০ নম্বর
ব্যাটালিয়নের ‘বি’ গ্রুপের দুই কমান্ডার
অন্তু সাউদাং ও পার্থ গগৈয়ের মতো কয়েকজন সঙ্গী রয়েছেন তার সঙ্গে। এমনকি ২০ নম্বর ব্যাটালিয়নও পুরোপুরি তার
সঙ্গে নেই। ওই ব্যাটালিয়নের ‘এ’ ও ‘সি’ গ্রুপ দুটি রয়েছে
চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়ার সঙ্গে। মৃণাল
হাজারিকার নেতৃত্বাধীন অসমের সমস্যা সমাধানে আলোচনায় বিশ্বাসী উলফার কথিত ‘সেনাবাহিনীর’ ওই অংশ বহু আগেই যুদ্ধ পরিত্যাগ করেছে।
আদর্শ যত মানবিক হোক
আর লক্ষ্য যত মহৎই হোক না কেন , সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ইচ্ছার পূর্ণ প্রতিফলন
এবং ব্যাপক অংশগ্রহণ ছাড়া অস্ত্রনির্ভর কোন পথ ও পদ্ধতি দিয়ে আদর্শ প্রতিষ্ঠা
কিংবা লক্ষ্য অর্জনে সাফল্য তো আসেই না, বরং অসংখ্য নিরীহ-নির্দোষ
সাধারণ মানুষের প্রাণ এবং সম্পদহানি ঘটনা ঘটিয়ে প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে ধ্বংস হয়ে যায়
অস্ত্রবাজ ও সন্ত্রাসীরা । জনবিচ্ছিন্ন আর সন্ত্রাসের কারণেই সর্বনাশ ঘটেছে অস্ত্রবাজ উলফার।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন