মানুষের মস্তিষ্কের গঠন প্রক্রয়া এবং মস্তিষ্কের কার্যকমের কিছু অংশের বর্ণনা ৷ আর গবেষণাগারে মানুষের কৃত্রিম মস্তিষ্ক সৃষ্টি প্রসঙ্গ ৷
মা নুষের মস্তিষ্কের
গঠন প্রক্রিয়া এবং
মস্তিষ্কের কার্যক্রমের বর্ণনা
এবং গবেষণাগারে কি
মানুষের মস্তিষ্ক তৈরি
করা সম্ভব ? যদি
সম্ভব হয় তবে
কিভাব তা তৈরি
করা যাবে ৷ ইহা কি
মানব সভ্যতায় কোনো
উপকার করতে পারবে ?
গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের মস্তিষ্ক দু’ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়। এক. সিস্টেমেটিক পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে যুক্তিসিদ্ধ সিদ্ধান্ত। দুই. সহজ বুদ্ধির ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত।
গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের মস্তিষ্ক দু’ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়। এক. সিস্টেমেটিক পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে যুক্তিসিদ্ধ সিদ্ধান্ত। দুই. সহজ বুদ্ধির ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত।
মানুষের মস্তিষ্ক
একটি অতি জটিল
অঙ্গ ৷ মানুষের
মস্তিষ্কের করোটির ভিতরে
প্রায় দেড়-কিলো ওজনের
একটি থকথকে ধূসর
রংয়ের পদার্থ আছে
বলে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত
করেছেন ৷ এই ধূসর
পদার্থের মধ্যে আবার
গাদাগাদি করে অবস্থান
করেছে প্রায় দশ
হাজার কোটি স্নায়ু
বা নিউরন আর
কোটি কোটি সায়ন্যাপসেস
নামক জিনিষটি ৷ এই ধূসর
পদার্থটি আবার চারটি
অংশে বিভক্ত হয়ে
ঐ চার অংশের
ভেতর তৈরি করেছে
অনেক গুলো জটিলতম
কাঠামোর ৷ বিজ্ঞানীরা
মস্তিষ্কের প্রধান ঐ
চার কাঠামোর নাম দিয়েছেন
- ১ , সেরিব্রাম , ২ , সেরিবেলাম , ৩ , ডাইসেফেলন
এবং ৪ , ব্রেইনস্টেম ৷
বিজ্ঞানী ও
প্রকৌশলী অভিজিং বায়
২০০২ সালে সিঙ্গাপুরের
ন্যাশন্যাল ইউনিভার্সিটিতে মানুষের
মস্তিষ্ক নিয়ে পিএইচডি
এর গবেষণামূলক কাজ
করতে গিয়ে পিএইচডি
ডিগ্রির কাজের অংশ
হিসেবে মানুষের মস্তিষ্কের
মোট ৪৩টি অংশ
সনাক্ত করতে সক্ষম
হয়েছিলেন ৷ অভিজিৎ
রায় তার কাজের
বাস্তবতা প্রমাণের জন্যে
মানুষের মস্তিষ্কের ঐ
৪৩টা অংশের একটি
ত্রি-মাত্রিক মডেল তৈরি
করিছিলেন ৷ ঐ ৪৩টি
অংশের আলাদা আলাদা
যে সব নামকরণ
করা হয়েছে এর
মধ্যের কয়েকটির নাম
হচ্ছে - ১ , কর্পাস ক্যালসাম , ২ ,
ফরনিক্স , ৩ , হিপোক্যাম্পাস , ৪ , হাইপোথ্যাল্মাস , ৫ , ইনসুলা , ৬ , গাইবাস , ৭
, কডেট নিউক্লিয়াস , ৮ , পুটামেন , ৯ , অ্যালমাস
, ১০ , সাবাস্ট্যানশিয়া নাইয়াগ্রা এবং ১১ , ডেন্ট্রিকুলাস ইত্যাদি
৪৩টি নাম ৷
মানুষের চিন্তাভাবনা , কর্মকাণ্ড , চালচলন এবং
মানুষের প্রাত্যাহিক কাজের
বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ইত্যাদির অনেকাংশেরই
কার্যক্রম মস্তিষ্কের এই
সমস্ত বিদগুটে নামধারী মস্তিষ্কের প্রত্যঙ্গগুলোর সঠিক
কর্মকাণ্ডের এবং তাদের
কাজের সমন্বয়ের উপর
নির্ভরশীল বলে বিজ্ঞানীরা
নিশ্চিত হয়েছেন ৷
ইহা ছাড়াও
স্নায়ু বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করেছেন মানুষের
মস্তিষ্কের কর্পাস ক্যালসাস
নামের গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোটি মস্তিষ্কের বামদিক
ও ডানদিকের মধ্যের
স্থানে অবস্থান করে
মস্তিষ্কের কাজের সম্বনয়
সাধন করে থাকে
৷ কারণ মস্তিষ্ক
একটি হলেও ইহা
ডান ও বাম
দুই গোলার্ধে বিভক্ত
হয়ে আছে
৷
তাই মস্তিষ্কের মাঝ আংশে অবস্থিত এই কর্পাসক্যালোসাস অংশে কোনো কারণে আঘাতপ্রাপ্ত হলে মস্তিষ্কের ডান ও বাম দিকের কাজের সম্বনয় ব্যহত হওয়া আরম্ভ হয় ৷ ফলে ঐ আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তির মধ্যে দ্বৈত সত্তার ( Spit Brain Experience ) উদ্ভব ঘটতে পারে ৷ আবার বিজ্ঞানীরা আরো নিশ্চিত হয়েছেন যে , মানুষের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস নামের অংশটিকে কৃত্রিমভাবে বৈদ্যুতিক ভাবে উদ্দীপ্ত করা হলে তখন ঐ ব্যক্তির অনুভূতিতে দেহ বিচ্যুত আবস্থার সৃষ্টি করা যায় ৷ মূলত মৃগী রোগের চিকিৎসায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় ৷ তখন রোগীরা মানুসিকভাবে সে তার দেহ থেকে আলাদা বা বিযুক্ত হয়ে শূন্যের উপর ভেসে ভেসে বেড়াচ্ছে মনে করে থাকে ৷
মানুষের মস্তিষ্কের
কোন গোলার্ধের কোন
কাজ ?
মস্তিষ্কের
বাম গোলার্ধের কাজ ;-
যুক্তিবাদিতা . বাস্তবাদিতা , রৈখিক উপলব্দি , বিশ্লেষক ধর্মী , প্রতিরক্ষা ধর্মী , নির্দিষ্টতা , অংক জ্ঞান , সব
সময় আয়ত্তে ৷
ডান
গোলার্ধের কাজ ;-
মুক্ত মন , শৈল্পিক , সৃষ্টিশীলতা , সময়
ডান ব্রেন , আমোদ ও মজা , কাব্যচর্চা . যৌন ও জৈবিনিক , চাহিদার ডান
সক্রিয় , আসক্তি , ভয়হীনতা , অ্যাডভেঞ্চার ৷
( সংগৃহিত )
তাই মস্তিষ্কের মাঝ আংশে অবস্থিত এই কর্পাসক্যালোসাস অংশে কোনো কারণে আঘাতপ্রাপ্ত হলে মস্তিষ্কের ডান ও বাম দিকের কাজের সম্বনয় ব্যহত হওয়া আরম্ভ হয় ৷ ফলে ঐ আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তির মধ্যে দ্বৈত সত্তার ( Spit Brain Experience ) উদ্ভব ঘটতে পারে ৷ আবার বিজ্ঞানীরা আরো নিশ্চিত হয়েছেন যে , মানুষের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস নামের অংশটিকে কৃত্রিমভাবে বৈদ্যুতিক ভাবে উদ্দীপ্ত করা হলে তখন ঐ ব্যক্তির অনুভূতিতে দেহ বিচ্যুত আবস্থার সৃষ্টি করা যায় ৷ মূলত মৃগী রোগের চিকিৎসায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় ৷ তখন রোগীরা মানুসিকভাবে সে তার দেহ থেকে আলাদা বা বিযুক্ত হয়ে শূন্যের উপর ভেসে ভেসে বেড়াচ্ছে মনে করে থাকে ৷
মানুষের মস্তিষ্কের
অন্য একটির নাম
টেম্পোরাল লোব ৷
বর্তমানে নিউরো বিজ্ঞানীরা
এর নতুন একটি
নামকরণ করেছেন ৷
নতুন নামটি হচ্ছে ‘গড
স্পট’ ( GOD SPOT ) ৷ কারণ মানুষের
ধর্মীয় আবেগ এবং
ধর্মীয় বিশ্বাস এবং
ধর্মীয় অনুভূতি মস্তিষ্কের
এই অংশটি নিয়ন্ত্রন
করে থাকে ৷
তাই মানুষের মস্তিষ্কের
এই অংশটিকে কৃত্রিমভাবে
উদ্দীপ্ত করে একজন
মানুষের মনে ধর্মীয়
আবেশ সৃষ্টি করতে
বিজ্ঞানীরা সফল হয়েছেন
৷ মস্তিষ্কের এই
অংশের ব্যবহারেই অনেকের
ক্ষেত্রে ইশ্বর-দর্শন করা
বা গায়েবীভাবে ‘ওহী প্রাপ্তি’ সম্ভব বলে
নিউরো বিজ্ঞানীরা প্রমাণে
সক্ষম হয়েছেন বলে জানিয়ছেন ৷
বিজ্ঞানী পারসিঙ্গার এই লক্ষে
মস্তিষ্কের টেম্পোরাল লোবকে
কৃত্রিমভাবে উদ্দীপ্ত করে
আগ্রহীদের ধর্মীয় আবেশ ও অভিজ্ঞতা
অর্জনের জন্যে তৈরি
করেছেন তার বিখ্যাত ‘ গড হেলমেট’ এবং একটি
প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে এই god helmate এর কার্যকারীতা
প্রমাণ করেছেন ৷ বর্তমান
বিশ্বে ধর্মীয় জঙ্গীবাদ
সৃষ্টিতে মস্তিষ্কের এই
GOD SPOT ব্যবহার করে
একজন ব্যক্তকে আত্মঘাতি
হামলাকারী হিসেবে রূপান্তরিত
করে মৌলবাদীরা তাকে
ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহার
করছে ৷
জীববিজ্ঞানীরা তাদের
বিভিন্ন গবেষণায় দেখিয়েছেন
যে , সৃষ্টির প্রথম লগ্ন
থেকেই মানুষ প্রকৃতির
সঙ্গে সংগ্রাম করে
তিলে তিলে বর্তমান
অবস্থায় পৌঁছেছে আর
মানুষকে এই অবস্থানে
আসতে মানব মস্তিষ্কই
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করেছে ৷
বিজ্ঞানীরা বলেন মানব
মস্তিষ্ক অনেক বিবর্তিত
হয়েই আজকের পর্যায়ে
আসতে সক্ষম হয়েছে
৷ যার জন্যে শুধু
মানুষেরাই প্রকৃতির সবচেয়ে
বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে
প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ৷
বৈজ্ঞানিক গবেষণা
থেকে জানা যায়
একটি মানব শিশুর
যখন তার কেন্দ্রিয়
স্নায়ুতন্ত্র প্রকৃতিক উপারে
তৈরি হয় , তখন প্রাথমিক
অবস্থায় স্নায়ুতন্ত্রে প্রচুর
সংখ্যক স্নায়ুকোষ বা
নিউরন আর গ্লিয়াল
সেল ছাড়া তাতে
আর কিছু থাকে
না , থাকে না
কোনো বুদ্ধিমত্তা ৷
পরবর্তিতে বহির্জগত থেকে
একটি একটি করে স্টিমূলেট হয়ে
অর্থাৎ স্টিমুলেশন পদ্ধতিতে
স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রম পরিচালনা
শুরু
করে ৷ যেমন শব্দ , গন্ধ , আলো ইত্যাদি
স্নায়ুকোষে প্রবেশ আরম্ভ করতে থাকলে
তখন মস্তিষ্কের মধ্যে
এই বহির্জগতের স্টিমুলেশন
একটি ইলেক্ট্রিক সিগন্যালে
রূপান্তরিত হয়ে মস্তিষ্কের
মাঝের একটি নিউরন থেকে
আরেকটি নিউরনে চলতে
শুরু করে ৷
এইভাবে একটি ইলেক্ট্রিক
সিগন্যাল যে কয়টি
নিউরনের মধ্যে দিয়ে
চলাচল করে তখন সেস্থানে একটি
পথের সৃষ্টি করে ,
সেই পথটিকে বলা
হয় সিগন্যালের চলাচলের
জনে নিউরাল পাথ ৷তাই
বিজ্ঞানীরা বলেন প্রয়োজনে মানব
মস্তিষ্কে নতুন নতুন নিউরাল
পাথওয়ে তৈরি হওয়া
একটি প্রকৃতিক স্বাভাবিক
ঘটনা ৷
কিন্তু কোনো কারণে কোনো অঞ্চলে এই কাজ বন্ধ হয়ে পড়লে তখন এই বন্ধ হয়ে যাওয়া অংশটি দুর্বল হয়ে পড়ে ৷এই অবস্থার যখন সৃষ্টি হয় তখন এই অংশটি আস্তে আস্তে অন্যান্য নিউরাল প্রক্রিয়ার সঙ্গে আপনা আপনি যুক্ত হয়ে যায় এবং যতখানি নিজকে কার্যক্রম রাখা যায় তারই চেষ্টা আরম্ভ করে দেয় ৷
অন্য কথায় বিজ্ঞানীরা নিউরাল প্লাস্টিসিটি বা কানেকশন প্লাস্টিসিটি বলতে নার্ভের সুযোগগুলোকে কাজে লাগিয়ে এর পরিবর্তনশীলতা বোঝান যা প্রকৃতিকভাবেই ঘটে থাকে ৷ তবে বিজ্ঞানীরা বলেন মানব মস্তিষ্ক ভূল করতে পারে ৷ কিন্তু যখন কেউ কৃত্রিমভাবে মানব মস্তিষ্ক বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরিতে সক্ষম হবে , তখন সেই তৈরি কৃত্রিম মস্তিষ্ক প্রকৃতিক মানব মস্তিষ্কের মত ভূল করবে না ৷ফলে অনেক জটিল প্রক্রিয়ার সৃষ্টি হয়ে মনব সভ্যতার জটিলতাও সৃষ্টি করতে পারবে ৷কারণ কোনো বিপদে পড়লে মানব মস্তিষ্ক এই বিপদ থেকে নিজকে বাঁচাতে যে কোনো তড়িৎ সিন্ধান্ত নিয়ে নিজকে বিপদ থেকে উদ্দারের চেষ্টা করবে ভাল-মন্দ ঝাচাই না করেই ৷ কিত্তু কিত্রিম মস্তিষ্ক বা কিত্রিম বুদ্ধিমত্তা যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করার পূর্ব পুরোপুরি নিশ্চিত হতে চাইবে সে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে তা শতভাগ নিশ্চিত পদক্ষেপ , যা তাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবে ৷ কিত্তু কিত্রিম মস্তিষ্ক বা কিত্রিম বুদ্ধিমত্তা যতক্ষণ সময় নিবে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ততক্ষণে নিশ্চয় যা ঘটার তা তো ঘটেই যাবে ৷ তাই এই ব্যাপারটি ও গবেষকদের বিবেচনায় রাখতে হবে নিশ্চয় ৷
কিন্তু কোনো কারণে কোনো অঞ্চলে এই কাজ বন্ধ হয়ে পড়লে তখন এই বন্ধ হয়ে যাওয়া অংশটি দুর্বল হয়ে পড়ে ৷এই অবস্থার যখন সৃষ্টি হয় তখন এই অংশটি আস্তে আস্তে অন্যান্য নিউরাল প্রক্রিয়ার সঙ্গে আপনা আপনি যুক্ত হয়ে যায় এবং যতখানি নিজকে কার্যক্রম রাখা যায় তারই চেষ্টা আরম্ভ করে দেয় ৷
অন্য কথায় বিজ্ঞানীরা নিউরাল প্লাস্টিসিটি বা কানেকশন প্লাস্টিসিটি বলতে নার্ভের সুযোগগুলোকে কাজে লাগিয়ে এর পরিবর্তনশীলতা বোঝান যা প্রকৃতিকভাবেই ঘটে থাকে ৷ তবে বিজ্ঞানীরা বলেন মানব মস্তিষ্ক ভূল করতে পারে ৷ কিন্তু যখন কেউ কৃত্রিমভাবে মানব মস্তিষ্ক বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরিতে সক্ষম হবে , তখন সেই তৈরি কৃত্রিম মস্তিষ্ক প্রকৃতিক মানব মস্তিষ্কের মত ভূল করবে না ৷ফলে অনেক জটিল প্রক্রিয়ার সৃষ্টি হয়ে মনব সভ্যতার জটিলতাও সৃষ্টি করতে পারবে ৷কারণ কোনো বিপদে পড়লে মানব মস্তিষ্ক এই বিপদ থেকে নিজকে বাঁচাতে যে কোনো তড়িৎ সিন্ধান্ত নিয়ে নিজকে বিপদ থেকে উদ্দারের চেষ্টা করবে ভাল-মন্দ ঝাচাই না করেই ৷ কিত্তু কিত্রিম মস্তিষ্ক বা কিত্রিম বুদ্ধিমত্তা যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করার পূর্ব পুরোপুরি নিশ্চিত হতে চাইবে সে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে তা শতভাগ নিশ্চিত পদক্ষেপ , যা তাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবে ৷ কিত্তু কিত্রিম মস্তিষ্ক বা কিত্রিম বুদ্ধিমত্তা যতক্ষণ সময় নিবে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ততক্ষণে নিশ্চয় যা ঘটার তা তো ঘটেই যাবে ৷ তাই এই ব্যাপারটি ও গবেষকদের বিবেচনায় রাখতে হবে নিশ্চয় ৷
এই কারণেই
বোধহয় বিজ্ঞানী স্টিফেন
হকিং মনে করেন কৃত্রিম
বুদ্ধিমত্তার প্রভাবে পৃথিবীর
মানব সভ্যতা একদিন
ধ্বংস হয়ে যেতে
পারে ৷তাই কৃত্রিম
মস্তিষ্ক তৈরির পূর্বে
এর ভাল-মন্দ আগেই
ঝাচাই করে নেয়া
উচিত ৷
মানব দেহের
অন্য সব কোষের
স্বতঃস্ফূর্ত পূনঃস্থাপন প্রক্রিয়া
চালু থাকলেও মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষের
বা নিউরনের সেই
প্রকৃতিক শক্তি নেই ৷
তবে জীববিজ্ঞানের ইতিহাস
থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান
থেকে জানা গিয়েছে যে , মানবের বিবর্তন
হয়েছে তার মস্তিষ্কের
বিকাশের সঙ্গে তাল
রেখে আর
এই বিকাশের প্রক্রিয়া
হয়েছে সম্পূর্ণ প্রকৃতিক
নিয়মেই ৷
তাই মানুষের
মস্তিষ্কের বিবর্তনে মানুষের
চিন্তাশক্তিই কার্যকর ভূমিকা
পালন করেছে ৷
তাই অন্যান্য প্রাণীকুল
যেখানে প্রকৃতিক নিয়মকে
মেনে চলেছে সেখানে
মানুষ তার চিন্তা
শক্তিকে বিকাশ ঘটিয়ে
তার সংস্কৃতি ও
প্রযুক্তিকে করছে উন্নত
দিন দিন ৷
এখন মানুষ
চেষ্টা আরম্ভ করেছে
প্রযুক্তি এবং যন্ত্র
আবিষ্কার করে এবং সে
প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বা সে প্রযুক্তি
ও যন্ত্রকে ব্যবহার
করে তা দিয়ে
মানুষের মস্তিষ্কের মত চিন্তাভাবনা করার
সুযোগ সৃষ্টি করতে ৷ আর একাজ
করতে হলে প্রয়োজন
হবে মানুষের মস্তিষ্কের
মত করে একটি
কৃত্রিম মস্তিষ্ক তৈরি
করা ৷ কারণ এইসব কাজ
যে জায়গা থেকে
সৃষ্টি হয় সে
স্থানটিই হলো মানুষের
মস্তিষ্ক ৷ তাই মানুষের তৈরি
করা কৃত্রিম যন্ত্র মস্তিষ্ক মানুষের
মস্তিষ্কের মত চিন্তা ভাবনা করতে সক্ষম
হবে ৷ আর এই
কাজটিকেই বলা হচ্ছে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ৷ আর
এই কাজে এখন
বিজ্ঞানীরা অনেক এগিয়ে
গেছেন বলে জানা
গেছে ৷
মস্তিষ্কের কার্যক্রম
বিশ্লেষণে জানা যায় যে
, নিউরন বা স্নায়ুকোষই
মস্তিষ্কের অজস্র স্মৃতি
ধরে রাখে ৷ এই
স্মৃতি থেকে পাওয়া তথ্যাদি মস্তিষ্কে
সন্নিবেশিত হয় ৷ তার মধ্য
থেকে মানুষ তার
প্রয়োজনীয় তথ্য গ্রহণ
করে তার কিছু
তথ্য মস্তিষ্কে রেখে
দেয় ৷ সেই
রেখে দেয়া তথ্যকে
মানব মস্তিষ্ক বিশ্লেষণ
করে পরবর্তি সিন্ধান্ত
গ্রহণ করে ৷
কিত্তু মানুষ ছাড়া
অন্য কোনো প্রাণী
মানুষের মত কোনো
ঘটনাকে বিশ্লেষণ করতে
অক্ষম ৷ তাই
তারা শুধু সিন্ধান্ত
টানতে পারে কোনো
বিচার বিশ্লেষণ ছাড়া ৷
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
বা কৃত্রিম মস্তিষ্ক
তৈরির গবেষণার কাজ
প্রথমে আরম্ভ হয়
১৯৫০ সালে ৷ বর্তমানে ঐ
সব কাজে নিয়োজিত
গবেষক ও বিজ্ঞানীরা
মনে করেন আগামী
১০ বছরের মধ্যেই
হয়ত তৈরি হয়ে
যাবে একটি পূর্নাঙ্গ
এবং কার্যকর একটি কৃত্রিম মানব
মস্তিষ্ক ৷
২০০৫ সালে
প্রফেসর ও বিজ্ঞানী
মার্কার একদল গবেষক
নিয়ে এই কৃত্রিম
মানব মস্তিষ্ক তৈরির
কাজে নিয়োজিত হন ৷ তারা ব্লুব্রেইন
নামক একটি প্রজেক্ট
তৈরি করে এই
প্রজেক্টের মাধ্যমে তাদের
কাজ আরম্ভ করেন
৷
মানুষের কৃত্রিম
মস্তিক তৈরি করতে
হলে যে উপাদানটির
প্রয়োজন তার নাম
হচ্ছে স্নায়ু বা
নিউরন ৷ তাই
এই প্রজেক্টের গবেষকরা
এই স্নায়ু নিয়েই
কাজ করছেন ৷
বর্তমানে ল্যাবরেটরিতে তারা
স্নায়ু নিয়ে গবেষণা
ও বিশ্লেষণের কাজ
করে চলেছেন ৷ এই
গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখতে
পান যে , স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মস্তিষ্কের
ধরন ও কার্যক্রম
ভিন্ন ৷ এর কারণ
বিশ্লেষণে দেখা যায়
স্তন্যপায়ী প্রাণীরা বংশবৃদ্ধি
সামাজিক সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও
আরো কিছু জটিল
কাজে নিজেদের মস্তিষ্ক
ব্যবহার করে থাকে
৷ গবেষকরা তাই
মনে করেন স্তন্যপায়ীদের
এই সব কাজ
তাদের মস্তিষ্কের সঙ্কেতের
ভিত্তিতেই পরিচালিত হয় ৷ তাই
মস্তিষ্কই হচ্ছে প্রাণীদেহের সব থেকে সটিলতম স্থান ৷
নিউরো গবেষক
প্রফেসর হেনরি মার্কার বলেন
প্রাণীভেদে মস্তিষ্কের বিবর্তন
ঘটে থাকে ৷ যেমন ইঁদুরের
মস্তিষ্কে যত নিউরন
থাকে তার থেকে
হাজারগুণ বেশি থাকে মানুষের মস্তিষ্কে
৷ অন্যদিকে আবার মস্তিষ্কের
বিবর্তন কিত্তু অব্যাহত
রয়েছে এবং এই
বিবর্তন অতি দ্রুততার
সঙ্গে ঘটছে বলে
গবেষকরা মনে করেন ৷
তাই ইঁদুর নিয়ে
করা গবেষণা থেকে
মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ে
গবেষণা শতগুণ কঠিন ৷ তবে
ইঁদুরের মস্তিষ্কের গবেষণার
পথ ধরেই গবেষকদের
এগিয়ে যেতে হবে
মানুষের মস্তিষ্কের গবেষণা
জন্যে ৷
প্রফেসর মার্কার
ও তার গবেষকদল
গত প্রায় ১৫ বছর ধরে
এই গবেষণার কাজ
করতে গিয়ে মানুষের
মস্তিষ্কের স্নায়ু কলাম
বা স্তম্ভের একটি
কাঠামো প্রস্তুত করতে পেরেছেন
৷ এই কাজটি করতে
গবেষকরা মস্তিষ্কের প্রতিটি
স্নায়ু চরিত্র বিশ্লেষণ
করেছেন এবং এই
কাজ করতে হয়েছে মানুষর মস্তিষ্কের যোগাযোগ
পদ্ধতি এবং কানেক্টিভিটির উপর ৷
অবশ্য এই কাজের
জন্যে একটি সফটওয়্যার
মডেল তৈরি করতে
হয়েছে তাদের ৷ এখন এই
সফটওয়্যার মডেল দিয়ে
তারা হাজার হাজার
স্নায়ু থেকে প্রতিটা স্নায়ুর
ভিন্নতা বের করার
কাজ করছেন ৷ ভবিষ্যতে
প্রাপ্ত ফলের উপর
ভিত্তি করেই তৈরি
হবে কৃত্রিম নিওকার্টিক্যাল কলাম ৷
কারণ
ঐ নিউরোকর্টিক্যাল কলামই
মানুষের মস্তিষ্কের সমস্ত
চিন্তা ও চেতনা
নিয়ন্ত্রন করে থাকে ৷
ব্লুব্রেইন পজেক্টের
গবেষকেরা প্রথমে শুধু
মানুষের মস্তিষ্কের একটি
অংশ নিয়ে কাজ
করছেন এখন ৷
এই অংশটির তারা
নাম দিয়েছেন মস্তিষ্কের
নিওকরটেক্স অংশ ৷ এই
কাজে সফলতা আসলে
গবেষকরা পরবর্তিতে গবেষকরা
পুরো মস্তিষ্ক অর্থাৎ
মস্তিষ্কের সবগুলো কলাম
বা কাঠামো নিয়েই
গবেষণার কাজ আরম্ভ
করবেন এবং একসময়ে
হয়ত গবেষকগণ প্রথম
মানুষের কৃত্রিম মস্তিষ্ক
আবিষ্কারে সক্ষম হবেন ৷ আশার
কথা , বর্তমানে একটি ভার্চুয়াল
দেহে ব্লুব্রেইন নামের ক্ষুদ্র একটি
মস্তিষ্কের অংশ নির্মান
করে তা দেহে
স্থাপন করা হয়েছে
এবং এখন এর
কার্যক্রম বিশ্লেষণ করা
হচ্ছে ৷ এখন আমাদের
প্রাপ্ত ফলাফলের জন্যে
আর ১০ / ১২ বছরের
অধিক সময়ের অপেক্ষা
করতেই হবে তবে
আমাদের নিরাশ হওয়া
চলবে না নিশ্চয়
৷
( সূত্র; ,অবিজিৎ
রায় এবং রায়হান
আবিরের অবিশ্বাসের দর্শন এবং এস এম
সাজ্জাদ বিন লতাফের
এটি প্রবন্ধ, যা জনকণ্ঠে
কৃপ্রিম বুদ্ধিমত্তার পথে
নামে প্রকাশিত হয়েছে
৷ )
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন