একোত্তরের পঁচিশে মার্চের মধ্য রাত্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রমাণিত কিছু তথ্যাদি :



    

      একোত্তরের  পঁচিশে    মার্চের  মধ্য  রাত্রে   বাংলাদেশের  স্বাধীনতা  ঘোষণার  ঐতিহাসিকভাবে      প্রমাণিত কিছু  দালিলিক তথ্যাদি :

   ( সূত্র ;- বিভিন্ন  ঐতিহাসিক  লেখকের  লেখা  এবং  উইকিপিডিয়া  থেকে  সংকলিত  )


                This may be may last message. From today Bangladesh is Independent. I call upon the people of Bangladesh Wherever you might be and with whatever you have to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of the Pakistan Army is expelled from the soil of Bangladesh and final victory is achieved. JOY BANGLA.


মূল ঘোষণার অনুবাদ নিম্নরূপ:

"এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উত্খাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক"।

          (  তুমি আসবে ব’লে , হে স্বাধীনতা, 

শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক এলো দানবের মতো চিৎকার করতে করতে
তুমি আসবে ব’লে , হে স্বাধীনতা, ছাত্রাবাস , বস্তি উজাড় হলো ।
রিকয়েললেস রাইফেল আর মেশিনগান খই ফোটালো যত্রতত্র ।
তুমি আসবে ব’লে ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম ।
… তুমি আসবে ব’লে ,

হে স্বাধীনতা অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিলো পিতা-মাতার লাশের ওপর।  )

শামসুর  রহমান  
      

    যদিও  বাঙলার  সাধারণ  মানুষের  কাছে  স্বাধীনতা  ঘোষণার  সংকেতের জন্য ৭ মার্চের ভাষণই ছিল যথেষ্ট। সারাদেশের সাধারণ মানুষ কোন  ঘোষণা বা নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলেন না।

          ২৫ মার্চের রাত্রে Operation Search Light-এর প্রথম কামানের আওয়াজটাকেই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের বক্তৃতার নির্দেশ অনুযায়ী স্বাধীনতার ঘোষণার সঠিক মুহূর্ত বলে দেশবাসী মনে করেছিল ।

         “আর যদি একটা গুলি চলে, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সব কিছু বন্ধ করে দিতে হবে-আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে।”

             
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের তিন দিন আগেই বলেছিলেন, তিনি স্বাধীনতার সমতুল্য ঘোষণা দেবেন।

১৯৭১ সালের ৪ মার্চ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ও নিকট প্রাচ্য বিভাগের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ জে সিসকো মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম পি রজার্সকে যে তথ্য স্মারক পাঠান, তাতে এ কথার উল্লেখ পাওয়া গেছে।



       মার্কিন জাতীয় মহাফেজখানা থেকে প্রথম আলোর সংগ্রহ করা এই নথিতে (সরকারিভাবে অবমুক্ত কিন্তু অনলাইনে অপ্রকাশিত) বলা হয়েছে, পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে একটি নাটকীয় মোড় নিতে যাচ্ছে। ২০১২ সালে প্রথম আলো এই নথি সংগ্রহ করে। স্মারকে বলা হয়েছে, ‘শেখ মুজিবুর রহমান আজ ৩ মার্চে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া কর্তৃক ১০ মার্চ ঢাকায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে যোগদানের আমন্ত্রণ নির্দিষ্টভাবে নাকচ করে দিয়েছেন। ৩ মার্চে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন এবং ৭ মার্চে তাঁর আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঘোষণা করতে পারেন।’



   ৩ মার্চ মুজিবুর রহমান বিদেশি সংবাদদাতাদের ‘অব দ্য রেকর্ড’ বলেছেন, তিনি রোববারে যে ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন, তা হবে স্বাধীনতার সমার্থক।



মিজানুর রহমান খান |

   প্রথম  আলোর  প্রতিবেদনে  জনাব  মিজানুর  রহমান  এর  পরের  প্রসঙ্গের  উল্লেখ  করেননি  তার  এই  প্রতিবেদনে  ৷  এ  প্রসঙ্গে  হওয়াই  হাউসের  অন্য  একটি  ডকুমেন্টের  এখানে  উল্লেখ  করা  হলো  ৷
কারণ-
       মার্কিন সরকার ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যতই বিরোধিতা করুক, বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার ঘোষণাটি দিয়েছিলেন, সেই সঠিক তথ্যটি সংরক্ষণ পরিবেশন করতে ভুল করেনি।


         
হোয়াইট হাউসেরসিচুয়েশন রুমথেকে ২৬ মার্চ ১৯৭১- প্রকাশিত উওঅ (Defence Intelligence Agency)-এর SPOT REPORT- বলা হয়েছে- ÔPakistan was thrust into civil war today when Sheikh Mujibur Rahman proclaimed the east wing of the two part country to be the sovereign independent peopleÕs Republic of Bangladesh.

 বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা সম্পর্কে মার্কিন সরকারের গোপন দলিলে উল্লেখ আছে-

 The above despatch entiled ÔCivil War in PakistanÕ was sent by U.S. Defence Intelligence Agency in Dhaka on 26 March, 1971 at 14.30. EST. It was received in the White House on the same day at 3.55 p.m. EST.

 This document mentiones about the proclamation of independence by Sheikh Mujibur Rahman in which he, apart from declaring East Pakistan as a sovereign and independent state. named the state, as PeopleÕs Republic of Bangladesh.


   ( সূত্র  রশীদ  হায়দর , জনকণ্ঠে  একটি  লেখা  থেকে  সংগ্রহকৃত )


         ভারতীয়দের  কাছে  এর প্রথম  দালিলিক  প্রমাণ  প্রকাশ  করেন  তখনকার  বি এস  এফ  প্রধান  গোলক  মজুমদার 

         তিনি জানান  বিএসএফের কাছে বঙ্গবন্ধুর Wireless message টি  তাদের  অফিসিয়াল Wireless-এ ধরা পড়ে। পরে  তিনি  তার একটা কপি জণমাধ্যমে  প্রকাশও    করেছিলেন 
      
  স্বাধীনতার  ঘোষণার  প্রক্ষাপট  হচ্ছে -
      একজন  ইঞ্জিনিয়ার নূরুল হককে পূর্বের একটি আলোচনার সূত্র ধরে বঙ্গবন্ধু  একটি ট্রান্সমিটার আনতে বলেছিলেন  । সেটি খুলনা থেকে তিনি  তৈরি  করিয়ে  ঢাকায়  নিয়ে  এসেছিলেন  বলে  জানা  যায়  ব্যারিষ্টার  আমিরুল  ইসলামের  একটি  লেখা  থেকে ৷  ওটা দিয়ে তিনি  কি করবেন  সে বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছের নির্দেশনা কি  তা  জানতে ব্যারিষ্টার  আমিরুল  ইসলামের  বাসায়  তার  সঙ্গে  দেখা  করেন  নুরুল  হক  । আমিরুল  ইসলাম  তাঁকে বলেছিলের বঙ্গবন্ধু যা বলার তা  তো  ৭ মার্চেই নির্দেশনা দিয়ে ফেলেছেন    তখন  নাকি  নুরুল  হক  সাহেব  বলে  ছিলেন - " এতেই হবে।  but that may cost my life ; yet it  may be worth doing and i will do it "  .

                    আমিরুল  ইসলাম  পারে  জানতে  পারেন   ইঞ্জিনিয়ার নূরুল হক তাঁর প্রতিশ্রুতি রেখেছিলেন  তার  জীবনের  বিনিময়ে  

      পরে আমিরুল  ইসলাম  আরো প্রমাণ  সাপেক্ষে  জানতে পারেন  যে  তিনি তাঁর       প্রতিশ্রুতির মূল্য দিয়েছেন তাঁর জীবন দিয়েই 

               তিনি সেনাবাহিনীর  হাতে ধরা  পড়ার  পর   প্রথমে   কয়েকদিন তাঁকে সেনাবাহিনী বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে খুঁজে বের করতে বলেন যে, ট্রান্সমিটারটি তিনি কোথায় রেখেছেন। তাঁরা তাঁর বাড়িতেও তল্লাশি করান। এরপর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি আর ফিরে আসেননি ৷  নিশ্চয়  এর  জন্যে  তাকে  হত্যা  করা  হয় 

               ব্যারিষ্টার  আমিরুল  ইসলাম  তার    লেখায় আরো উল্লেখ  করেছেন  যে , 
    অনেকদিন পর  তিনি  অর্থাৎ  আমিরুল  ইসলাম বঙ্গবন্ধুর  একজন  ঘনিষ্ঠ  ব্যক্তি  হাজী গোলাম মোর্শেদের কাছ থেকে জানতে পারেন যে, হাজী  গোলাম  মোর্শেদরা  অর্থাৎ  তখন ২৫শে  মার্চ  রাত্রে  বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে  যারা  উপস্থিত  ছিলেন  তারা   বাড়ি ত্যাগ করার পর  হাজী  মোর্শেদ  বঙ্গবন্ধুর  বাড়িতে  থেকে  যান   এবং  বঙ্গবন্ধু ও গোলাম মোর্শেদকে বন্দী করার পূর্বেই একটা টেলিফোন আসে।

      কণ্ঠটি ছিল খুব গভীর ও দৃঢ়।তখন    ব্রক্তি  বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে চান  এবং  তিনি বলেন, আমি বলদা গার্ডেন থেকে বলছি  ।আমি  আমার কাজ শেষ করেছি। আমি এখন কি করব ।  হাজী  মুর্শেদি  বঙ্গবন্ধুকে তার এই কথাটির  ব্যাপারে  জিজ্ঞাসা করলে বঙ্গবন্ধু বলেন , তাকে  বলো  সে  যেন  ওটা ভেঙ্গে চুরে দিয়ে চলে যায়    স্থান  থেকে এখনি 

     দিল্লীতে যখন এম আর সিদ্দিকী আমিরুল  ইসলাম  সহ  অন্যান্যদের সঙ্গে দেখা করতে এলেন তখন তিনিও বি  এস এফ এর  প্রধান   গোলক  মজুমদারের  Wireless  message -এর প্রিন্টটি দেখে Confirm করেন যে এটাই সেই মেসেজ যেটা তাঁরা চট্টগ্রামেও পেয়েছিলেন।


   
   
      

            প্রসঙ্গক্রমে  উল্লেখযোগ্য  যে ,   মুক্তিযুদ্ধ একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ফসল  ।ইহা  কোনো  জনযুদ্ধ  বা  কোনো  সামরিক বিদ্রোহ  ছিল না ৷  এটা  ছিলো  একটি       অসাম্প্রদায়িক এবং  সার্বজনীন  মুক্তিযুদ্ধ  ৷ যার একমাত্র  লক্ষ্য ছিল পাক-হানাদার বাহিনীকে  বাঙলার  মাটি  থেকে  বিতাড়িত  করে  জনসমর্থন  সহকারে  একটি  স্বধীন  বাংলাদেশের  প্রতিষ্ঠা  করা  

         তৎকালীন জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত ছিল কোন রাষ্ট্রের অংশ স্বাধীনতা ঘোষণা করলে তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে কোন জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্র স্বীকৃতি বা সহযোগিতা দেবে না।

        অথচ বিশ্বের জনমত ও প্রত্যক্ষ সমর্থন ছাড়া কোন রাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছে এমন কোন নজির নেই  ।তাই  বঙ্গবন্ধু এই বাস্তবতার আলোকে পাকবাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ার পরেই আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণা দেন।

        যার ফলে বিশ্ববাসীর সমর্থন পাওয়া যায় এজন্য যে এটি মামুলি কোন বিচ্ছন্নতাবাদী আন্দোলন বা হঠকারিতার  আন্দোলন  ছিল  না ।

          একটি নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের কাছে রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তর না করে বরং পাক জান্তা সেই দলের নেতাকর্মী এবং সেই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে হত্যাযজ্ঞে লিপ্ত হয়। অর্থাৎ বাঙালীর জন্য স্বাধীনতা ছাড়া  অন্য  বিকল্প ছিল না এটা বিশ্ববাসীর কাছে নিশ্চিত করতে পারার পরই  বিশ্ব  সমর্থন পাওয়া যায়।

        আর বঙ্গবন্ধু যদি ভারতে যেতেন তাহলেও এতটা ক্রিয়াশীল হতো না। বন্ধী হওয়ার ফলে তার মুক্তি ও স্বাধীনতা সমার্থক হলে বেগবান হয়েছিল (বঙ্গবন্ধুর জন্য রোজা রেখেছেন হাজারো বাঙালী)। বঙ্গবন্ধুর এই কৌশলটি যথাসময়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে পারঙ্গমতার একটি নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে বিশ্বে প্রশংসিত।

          (  সূত্র ;৬ নভেম্বরের  দৈনিক  জনকণ্ঠের  চতুরঙ্গ  পাতার  এম  আমীর-উল  ইসলামের  ধারাবাহিক  লেখার  একটি সংকলিত  অংশ  ) 


        বাংলাদেশের  ঐ সময়ের  ঘটনা প্রবাহ লক্ষ্য করে বঙ্গবন্ধু নিশ্চিত হন যে হয় তাঁকে বন্দী  করা  হবে  অথবা হত্যা করা হবে। কিন্তু তার পূর্বে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রস্তুত করে ফেলেন এবং রাত বারোটা নাগাদ বন্দী হওয়ার পূর্বেই টিএন্ডটি/ইপিআর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সারাদেশে প্রচারের ব্যবস্থা নেন।

      রাত ১০টার মধ্য বঙ্গবন্ধু তার সহকর্মী তাজউদ্দীন আহমদ, যুবনেতা শেখ মনি, তোফায়েল আহম্মেদ, নুরে আলম সিদ্দিকী প্রমুখ বিশ্বস্তদের নিরাপদে চলে গিয়ে কিভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করবেন তা বুঝিয়ে দিয়ে তাঁর বাড়ি থেকে দ্রুত বিদায় করে দেন।

 স্বাধীনতার মূল ঘোষণাটি ছিল ইংরেজীতে যা নিম্নরূপ :

 This may be may last message. From today Bangladesh is Independent. I call upon the people of Bangladesh Wherever you might be and with whatever you have to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of the Pakistan Army is expelled from the soil of Bangladesh and final victory is achieved. JOY BANGLA.

 (সূত্র : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র ৩য় খন্ড পৃ. ১) 

       রাত বারোটা নাগাদ একদিকে বঙ্গবন্ধুকে পাকবাহিনী বন্দী করে অপরদিকে (২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে) বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে রেকর্ডকৃত স্বাধীনতা ঘোষণা বাণী টিএন্ডটি/ইপিআর ওয়্যারলেস নেট ওয়ার্কে দেশব্যাপী প্রচার হতে থাকে।

       চট্টগ্রামে ওয়্যারলেস বিভাগের মাধ্যমে রাত একটা নাগাদ জহুর আহম্মদ চৌধুরী স্বাধীনতার ঘোষণাটি পান এবং তা এম এ হান্নান এবং আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বঙ্গানুবাদ করে সাইক্লোস্টাইল করে শহরে বিতরণের ব্যবস্থা করেন। এছাড়া সে রাতেই মাইকযোগে প্রচার করা হয় যে, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। সমগ্র বাংলাদেশের জেলা/ মহকুমা শহরে সে রাতেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন বলে প্রচারিত হয়। ২৬মার্চ সকাল নাগাদ গ্রামাঞ্চলেও টিএন্ডটির মাধ্যমে টেলিগ্রাম আকারে এই খবর ছড়িয়ে পরে।

       হানাদার বাহিনীর জেনারেল নিয়াজীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালিক “উইটনেস টু সারেন্ডার” নামক প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ সম্মিলিত যে গ্রন্থটি রচনা করেছেন তাতে (পৃ. ৫) উল্লেখ রয়েছে যে, “যখন প্রথম গুলিটি বর্ষিত হলো, ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তান রেডিও সরকারী তরঙ্গের কাছাকাছি একটি তরঙ্গ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষীণ কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, মনে হলো পূর্ব রেকর্ডকৃত। তাতে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ঘোষণা করলেন।”

         তৎকালীন ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত প্রভাবশালী ছাত্রনেতা কাজী আরেফ আহমেদ (পরবর্তীতে জাসদ সংগঠক-প্রয়াত) সাপ্তাহিক বিচিত্রা স্বাধীনতা দিবস সংখ্যা/৯০ এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে উল্লেখ করেন, “রাত ১০টার কিছু পর সিরাজুল আলম খান বঙ্গবন্ধুর বাড়ি থেকে ইকবাল হলে এসে তাদের জানালেন, কিছু সময়ের মধ্যে শেখ মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষণা ইপিআর-এর পিলখানাস্থ ওয়্যারলেস সেট থেকে প্রচার করা হবে।

         “কাজী আরেফ ও মেজর সিদ্দিক সালিকের ভাষ্য থেকে ইহাই স্পষ্ট যে, বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে স্বাধীনতা ঘোষণার বাণীটি টেপে ধারণ হয় ইয়াহিয়া খানের ঢাকা ত্যাগের সন্ধ্যা এবং রাত ১০টার মধ্যে কোন এক সময় যা ইপিআর ও টিএন্ডটি বিভাগের মাধ্যমে রাত ১২টার পর প্রচার করার নির্দেশ দেয়া হয়।

         বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক এম এ হান্নান চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কালুরঘাটস্থ ট্রান্সমিটিং সেন্টার চালু করে স্বকণ্ঠে প্রচার করেন দুপুর দুটো নাগাদ। একই দিন রাতে বিবিসির সান্ধ্যকালীন অধিবেশনে বলা হয়, “শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন ঘোষণা করেছেন, যা গোপন বেতার থেকে প্রচারিত হয়েছে। অপর দিকে পাকিস্তানী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, পূর্ব পাকিস্তানে তার সরকারের কর্তৃত্ব পুনর্প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের উপর যুদ্ধ শুরু করেছেন। “এম এ হান্নানের কণ্ঠেই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারিত হয়েছিল বলে তৎকালীন ঘটনার প্রত্যক্ষকারী মেজর মীর শওকত আলী, ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভূইয়া প্রমুখ তাঁদের গ্রন্থে/ রচনায় উল্লেখ করেছেন। মেজর মীর শওকত আলীর (পরে লে. জে. এবং বিএনপি নেতা-মন্ত্রী) ভাষায়, যদি বলা হয় প্রথম বেতারে কার বিদ্রোহী কণ্ঠে স্বাধীনতার কথা উচ্চারিত হয়েছিল তা হলে আমি বলব, চট্টগ্রামের হান্নান ভাই সেই বিদ্রোহী কণ্ঠস্বর।”

(বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র- নবম খণ্ড দ্রষ্টব্য)

              
   শারমিন আহমদ
স্বাধীনতার অখণ্ডিত ইতিহাস ভবিষ্যতের পাথেয়  গ্রন্থ  থেকে  সংগৃহিত নিম্নের  তথ্যটি , ……

  বঙ্গবন্ধু আমার বাবা বা দলকে স্বাধীনতা ঘোষণা  করতে  অনুমতি  না দিলেও তিনি যে ভিন্ন মাধ্যমে ২৫ মার্চ মধ্যরাতে প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিলেন তা তথ্য এবং সাক্ষাৎকারসহ আমার বইতে স্পষ্ট উল্লিখিত  হয়েছে ৷
[১৪৭-১৪৮, ২৭৪-২৯১, ৩০১-৩১০ পৃষ্ঠা]


       বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার বার্তা পাঠিয়েছিলেন তার একমাত্র জীবিত সাক্ষী, বঙ্গবন্ধুর পারসোনাল এইড হাজী গোলাম মোরশেদ, যিনি ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ৩২ নম্বর রোডের বাসভবন হতে গ্রেফতার হন, তাঁর এবং প্রকৌশলী শহীদ নুরুল হক যিনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে খুলনা হতে ট্রান্সমিটার এনেছিলেন ঘোষণা দেবার জন্য, ওনার স্ত্রীর সাক্ষাৎকার আমার
বইতে লিপিবদ্ধ  আছে ৷ আরও উল্লিখিত যে, বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে ২৬ মার্চ দুপুরে এবং সেই সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতা আবদুল হান্নান স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়াকেই প্রথম ঐতিহাসিক তথ্য হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে। [


          মেজর জিয়াউর রহমান বেতার ভাষণ দেন ২৭ মার্চ। তিনি ২৬ মার্চ করইলডাঙ্গা গ্রামে ছিলেন। স্বাধীন বাংলা বেতার প্রতিষ্ঠার অন্যতম সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ তাঁর স্বাধীন


বাংলা বেতার কেন্দ্র গ্রন্থে (পৃ. ৫২) লিখেছেন যে ,  বেতার কেন্দ্র পাহারা দেয়ার জন্য মেজর জিয়াকে করইলডাঙ্গা গ্রাম থেকে বেতার কেন্দ্রে নিয়ে আসেন ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় এবং মেজর  জিয়া  তখন  একটি  বেতার ভাষণ দেন ।
         বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিল পত্র, তৃতীয় খন্ডে বর্ণিত আছে সে ঘোষণাটিঃ

     “Dear fellow freedom fighters, I, Major Ziaur Rahman, Provisional Persident and Commander-in-Chief of Liberation Army do hereby proclaim independence of Bangladesh and appeal for joining our liberation struggle, Bangladesh is independent. We have waged war for liberation war with whatever we have. We will have to fight and liberate the country from occupation of Pakistan Army. Inshallah, victory is ours.”
   
    এ প্রসঙ্গে মেজর জেনারেল কে.এম.সফিউল্লাহ, বীর উত্তম, মুক্তি বাহিনীর ৩নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সেনাবাহিনী প্রধান, যিনি পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দলীয় নির্বাচিত সংসদ সদস্য ১৯৮৯ সালে তাঁর রচিত Bangladesh at war গ্রন্থে লিখেন, “Having settled his score with his commanding officer on the night of march 25, Zia decided to take his battalion on the outskirts of the city to reorganise, strengthen and then launch a decisive blow on Chittagong. All troops were collected at a place near patiya.


 ......All the troops then took an oath of allegiance to Bangladesh. The oath was administered by Zia at 1600 hrs on March 26. Thereafter, he distributed 350 soldiers of East Bengal Regiment and about 200 troops of East Pakistan Rifles to various task forces under command of an officer each. These task forces were meant for the city. The whole city of Chittagong was divided into various sectors and each sector was given to a task force. After having made these arrangements, Zia made his first announcement on the radio on March 26. In this announcement apart from saying that they were fighting against Pakistan army he also declared himself as the head of the state. This, of course, could have been the result of tension and confusion of the moment.  As the battalion began to gather strength, in the afternoon of March 27, Zia made another announcement from the Shawadhin Bangla Betar Kendra established at Kalurghat. The announcement reads as follows:


  a. “I Major Zia, provisional commander–in chief of the Bangladesh liberation army, hereby proclaim, on behalf of Sheikh Mujibur Rahman, the independence of Bangladesh.”


 b. “I also declare, we have already formed a sovereign, legal government under Sheikh Mujibur Rahman which pledges to function as per law and the constitution.”


 c. “The new democratic government is committed to a policy of non-alignment in international relations. It will seek friendship with all nations and strive for international peace.”

d. “I appeal to all governments to mobilize public opinion in their respective countries against the brutal genocide in Bangladesh

  


 e. “The government under Sheikh Mujibur Rahman is sovereign legal government of Bangladesh and is entitled to recognition from all democratic nations of the world”.


 He further said, “We shall not die like cats and dogs but shall die as worthy citizens of Bangla Ma. Personnel of the East Bengal Regiment, the East Pakistan Rifles and the entire police force had surrounded West Pakistani troops in Chittagong, Comilla, Sylhet, Jessore, Barisal and Khulna. Heavy fighting was continuing.”  (Bangladesh at war, Academic Publisher, Dhaka 1989, page 44-45).

        বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের বিশেষ সহকারী জনাব মঈদুল হাসান তরফদার আরো পরিস্কার করে লিখেন,“২৭ শে মার্চ সন্ধ্যায় ৮-ইবির বিদ্রোহী নেতা মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করেন। মেজর জিয়া তাঁর প্রথম বেতার বক্তৃতায় নিজকে ’রাষ্ট্রপ্রধান’ হিসাবে ঘোষণা করলেও, পরদিন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পরামর্শক্রমে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার কথা প্রকাশ করেন” (মূলধারা:৭১, পৃষ্ঠা ৫)।

         এখানে উল্লেখযোগ্য যে, মেজর জিয়া পরবর্তীতে শেখ মুজিবের নির্দেশের কথা বললেও নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে ঘোষণা সংশোধন করেননি।
মার্চ ২৭: মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে সকাল ১১টায়[৮] স্বাধীনতার আরেকটি ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। ঘোষণাপত্রটির ভাষ্য নিম্নরুপ:

      আমি,মেজর জিয়া, বাংলাদেশ লিবারেশন আর্মির প্রাদেশিক কমাণ্ডার-ইন-চিফ, শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। আমি আরো ঘোষণা করছি যে, আমরা শেখ মুজিবর রহমানের অধীনে একটি সার্বভৌম ও আইনসিদ্ধ সরকার গঠন করেছি যা আইন ও সংবিধান অনুযায়ী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের সরকার জোট-নিরপেক্ষ নীতি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর। এ রাষ্ট্র সকল জাতীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে এবং বিশ্বশান্তির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। আমি সকল দেশের সরকারকে তাদের নিজ নিজ দেশে বাংলাদেশের নৃশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। শেখ মুজিবর রহমানের সরকার একটি সার্বভৌম ও আইনসম্মত সরকার এৰং বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাবার দাবিদার।

    বিভিন্ন মাধ্যমে ঘোষণাপত্র[সম্পাদনা]

    ২৫-শে মার্চ থেকে ঢাকার হোটেল ইন্টারকোন্টিনেন্টালে অবস্থানরত সকল সাংবাদিককে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ২ দিন যাবৎ অবরুদ্ধ করে রাখে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ঘোষণা হয় যে “শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে সাড়ে সাত কোটি জনগণকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলা দেশের নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করেছেন”। গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে স্বাধীনতার মূল ঘোষক কে ছিলেন তা নিয়ে ব্যপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই কারণে ১৯৮২ সালে সরকারিভাবে একটি ইতিহাস পুস্তক প্রকাশিত হয় যাতে ৩টি বিষয় উপস্থাপিত হয়।
      শেখ মুজিবুর রহমান একটি ঘোষণাপত্র লিখেন ২৫-এ মার্চ মাঝ রাত কিংবা ২৬–শে মার্চ প্রথম প্রহরে।
       শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণাপত্রটি ২৬ তারিখে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়। কিন্তু সীমিতসংখ্যক মানুষ সেই সম্প্রচারটি শুনেছিল।

        পূর্ব বাংলা রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের হয়ে ২৭-শে মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রচার করে, ফলে বিশ্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে জানতে পারে। ঘোষণাটি ছিল নিম্নরূপঃ

     On behalf of our great national leader, supreme commander of Bangladesh Sheikh Mujibur Rahman do hereby proclaim the independence of Bangladesh. It is further proclaimed that Sheikh Mujibor Rahman is sole leader of elected representatives of 75 million people of Bangladesh. I therefore appeal on behalf of our great leader Sheikh Mujibur Rahman to the government of all democratic countries of the world specially big world part and neighboring countries to take effective steps to stop immediately. The awful genocide that has been carried on by the army of occupation from Pakistan. The legally elected representatives of the majority of the people as repressionist, it is cruel joke and contradiction in terms which should be fool none. The guiding principle of a new step will be first neutrality, second peace and third friendship to all and anonymity to none. May Allah help us, Jai Bangla.        


অনুবাদঃ“    আমাদের মহান নেতা, বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের হয়ে আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। এটি আরও ঘোষণা করা হচ্ছে যে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের একমাত্র নেতা হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমান। আমি সেই কারণে আমাদের মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের হয়ে বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিশেষ করে বৃহৎ বিশ্ব ও প্রতিবেশীদের কাছে কার্যকারী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হামলার ফলে ভয়াবহ গণহত্যা শুরু হয়েছে। অধিকাংশ জনগণের বৈধভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নিপীড়নকারী, এটি একটি ক্রূর কৌতুক ও মিথ্যা অপবাদ যার কাউকে বোকা বানানো উচিৎ নয়। বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রধান পদক্ষেপগুলোর মধ্যে প্রথম হতে হবে নিরপেক্ষতা, দ্বিতীয় শান্তি এং তৃতীয় সকলের সাথে বন্ধুভাবপন্ন ও কারো সম্বন্ধে অজ্ঞানতা নয়। আল্লাহ্ সহায় হোক, জয় বাংলা।

সূত্র;-
 
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের কালপঞ্জি - উইকিপিডিয়া

      মেজর জিয়া ১৯৭২ সালে দৈনিক বাংলায় স্বাধীনতা দিবস সংখ্যা (বর্তমানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র ৯ম খণ্ড পৃ. ৪৪-এ সংযোজিত দলিল) এবং ১৯৭৪ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রার প্রকাশিত নিবন্ধে উল্লেখ করেন যে, তিনি ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে এসে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন।

         এই রচনায় মেজর জিয়া উল্লেখ করেছেন যে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ তাঁর কাছে গ্রীন সিগন্যাল মনে হয়েছিল। তিনি যে ২৫ মার্চ রাত ১১টায় ‘সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে যাচ্ছিলেন, তাও উল্লেখ রয়েছে। উক্ত নিবন্ধে ২৭ মার্চ/ ৭১ তারিখ সন্ধ্যায় পরে জিয়াউর রহমান যে ভাষণ দেন তাঁর স্বকণ্ঠে বাণীবন্ধ টেপ থেকে নিম্নে তুলে দেয়া হলো :-

      The Government of the Sovereign State of Bangladesh on behalf of our Great Leader, The supreme commander of Bangladesh Sheikh Mujibur Rahman, we hereby proclaim the independence of Bangladesh and the Government headed by Sheikh Mujibur Rahman has already been formed. It is further proclaimed that Sheikh Mujibur Rahman is the sole leader of the elected representatives of seventy Five Million People of Bangladesh, and the Government headed by him is the only legitimate government of the Independent Sovereign government of the people of the Independent Sovereign State of Bangladesh, which is legally and constitutionally formed, and is worthy of being recognized by all the governments of the World. I therefore, appeal on behalf of our Great Leader Sheikh Mujibur Rahman to the government of all the democratic countries of the world, specially the Big Power and the neighboring countries to recognize the legal government of Bangladesh and take effective steps to stop immediately the awful genocide that has been carried on by the army of occupation from Pakistan. The guiding principle of a new state will be first neutrality, second peace and third friendship to all and enmity to none. May Allah help us. JOY BANGLA”. 

( সূত্র  -সরদার  সিরাজুল  ইসলাম , জনকণ্ঠে  প্রকাশিত )


ছাব্বিশ  মার্চ / একোত্তর-  এর   মুক্তিযুদ্ধের   প্রথম   প্রহরে   কি   ঘটেছিল  চট্রগ্রামে ,    তার   একটি   বর্ণনা  ;

    ( সূত্র ; বইয়ের  নাম;- “ বাংলাদেশের  মুক্তিযুদ্ধ    সর্বাধিনাক   ওসমানী 
               লেখক ;  মোঃ  আব্দুল  আজিজ  ,  সময়  প্রকাশন   থেকে  ,  এপ্রিল      ২০০০  সালে   প্রথম   প্রকাশিত   হয়েছে  ,  এখানে   বইটির  আট   অধ্যায়ের  
        কিছু   অংশের বর্ণনা  হুবহু   এখানে   উল্লেখিত   হলো    )    

          ২৬  মার্চ ’    ৭১  সকালের   দিকে   ইংরেজিতে   লেখা   একটা   হ্যান্ডবিল   চট্রগ্রামে   লোকের   হাতে   হাতে   পৌঁছে   যায়      হ্যান্ডবিলটির  বঙ্গানুবাদ  করেছিলেন   ডাক্তার  মনজুলা    এর  ভাষ্যটি  ছিলো  নিম্নরূপ  :

          বাঙ্গালী  ভাইবোনদের   কাছে   এবং   বিশ্ববাসীর   কাছে   আমার  আবেদন  ,   রাজরবাগ  পুলিশ  ক্যাম্প    পিলখানা    পি  আর  ক্যাম্পে  রাত  ১২  টায়  পাকিস্তানী  সৈন্যরা  অতর্কিতে  হামলা  চালিয়ে  হাজার  হাজার  লোককে  হত্যা   করেছে    হানাদার   পাকিস্তানী  সৈন্যদের  সঙ্গে  আমরা  লড়ে  যাচ্ছি    আমাদের  সাহায্য  প্রয়োজন  এবং   পৃথিবীর  যে  স্থান  থেকেই   হোক    এমতবস্তায়  আমি  বাংলাদেশকে  স্বাধীন  সার্বভোম  রাষ্ট্র  বলে   ঘোষণা   করছি ৷  তোমরা  তোমাদের  সমস্ত  শক্তি  দিয়ে  মাতৃভূমিকে   রক্ষা  কর    আল্লাহ্   তোমাদের   সহায়  হউন  ৷”

         (  শেখ  মুজিবুর  রহমান )

    ( সূত্র; দৈনিক  বাংলা ,  ২৬  মার্চ  , চৌধুরী, শামসুল  হুদা , একাত্তরের  রণাঙ্গন,  প্রকাশ  ১৯৮৪ , পৃ, ১৫ )
  
           ওই  দিন  চট্রগ্রামের   কালুরঘাটে  সংগঠিত   ‘ স্বাধীন  বাংলা  বিপ্লবী  বেতার  কেন্দ্রে’র  প্রথম  সান্ধ্য  অধিবেশনে  আবুল  কাশেম  সন্দীপের  উপস্থাপনায়    হ্যান্ডবিলটি  প্রচারিত  হয়েছিল    ইতিপূর্বে  চট্রগ্রাম  জেলা  আওয়ামী  লীগের  তৎকালীন  সভাপতি  জনাব  আব্দুল  হান্নান  অপরাহ্ন  প্রায়  দু’টার  সময়  চট্রগ্রাম  বেতার ( আগ্রাবাদ ) থেকে  আনুমানিক  পাঁচ  মিনিটের  এক  সংক্ষিপ্ত  ভাষণ  রেখেছিলেন  দেশবাসীর  উদ্দেশ্যে    বঙ্গবন্ধু  কর্তৃক  স্বাধীনতা  ঘোষণার  বাণীর  আলোকেই   ছিল  জনাব  এম ,  এ ,  হান্নানের  এই  ভাষণ    স্পষ্টতঃই  চট্রগ্রাম  বেতার  কেন্দ্র  থেকে  বাংলাদেশের  স্বাধীনতা  ঘোষণার  পক্ষে  বিপ্লবী  ভাষণ  প্রচারের  গৌরব  অর্জন  করেছিলেন  জনাব  এম  ,  এ ,  হান্নান 

 ( সূত্র; চৌধুরী,  শামসুল  হুদা , একাত্তরের  রণাঙ্গন, প্রকাশ- ১৯৮৪ , পৃ , ১৬ ,  ৩০-৩১   )

          বেলাল  মোহাম্মদ    আবুল  কাশেম  সন্দ্বীপ  প্রমুখের    উদ্যেগে  ২৬  মার্চ  সন্ধ্যা  ৭-৪০  মিঃ  কালুরঘাটের  বেতার  কেন্দ্রে  যে    “ স্বাধীন  বাংলা  বিপ্লবী  বেতার  কেন্দ্র”  চালু  হয়  সেখানে  এসেও   জনাব  হান্নান  নিজ  নাম  ঘোষণা  ছাড়াই  একটি  ভাষণ  প্রচার  করেছিলেন 

          পরদিন  এই  বেতার  কেন্দ্রটির   প্রহরার  ব্যবস্থা  করার  জন্যে  বেলাল  মোহাম্মদ    আরো  কয়েকজন  পটিয়ায়   গেলেন  এবং  সেখান  থেকে  মেজর  জিয়াকে  নিয়ে  আসেন ৷ 
          বেলাল  মোহাম্মদের  পরামর্শে  মেজর  জিয়া  ২৭  মার্চ  বেতারের  সান্ধ্য  অধিবেশনে   স্বকণ্ঠে  ইংরেজিতে  একটি   ঘোষণা  প্রচার  করেন    বেলাল  মোহাম্মদের  স্মৃতি  অনুযায়ী  সেদিন  মেজর  জিয়া  ঘোষণা  করেছিলেন , 
       “ I , Major  Zia ,  on  behalf  of  our  great  national  leader  Bangabandhu  Sheickh  Mujibur  Rahman , do  hereby  declare  Independence  of  Bangladesh”  (  আমি  মেজর  জিয়া , আমাদের  মহান  নেতা  বঙ্গবন্ধু  শেখ  মুজিবুর  রহমানের  পক্ষে  বাংলাদেশের  স্বাধীনতা  ঘোষণা  করছি  ) ৷
      ( সূত্র; মোহাম্মদ  বেলাল ,  স্বাধীন  বাংলা  বেতার  কেন্দ্র ,  অনুপম  প্রকাশনী , ১৯৯৭ , পৃ, ৪০ )

          ২৮  মার্চ  দুপুর  থেকে   বেতার  কেন্দ্রের  নাম  থেকে  বিপ্লবী  শব্দটি  বাদ  দেয়া  হয়    ওই  দিন  সন্ধ্যায়  মেজর  জিয়া  আবার  নিজকে  অন্তবর্তীকালীন  সরকার  প্রধান    মুক্তিবাহিনীর  প্রধান  ঘোষণা  করে  বেতারে  একটি  ঘোষণা  প্রচার  করেন 

          ৩০  মার্চ  প্রভাতী  অধিবেশনে  মেজর  জিয়ার  আরেকটি  ইংরেজী  ভাষণ  প্রচার  করা  হয়    এতে    কে  খানের  পরামর্শে  পূর্বতম  ঘোষণা  সংশোধন  করে  মহান  নেতা  বঙ্গবন্ধুর  নামে  ঘোষিত  হয়েছিলো    সেদিন  দুপুরে  ২-৩০  মিঃ  কালুরঘাট  বেতার  ভবনে  হানাদার  বাহিনী  বোমা  বর্ষণ  করে    এতে  বেতারের  ৩১  কলোওয়াট  শক্তির  প্রেরক  যন্ত্রটি  ছিন্নভিন্ন  হয়ে  যায়    এরপর  সেই  ভবনে  রক্ষিত    কিলোওয়াট  শক্তিসম্পন্ন  প্রেরকযন্ত্রটি  খুলে  রামগড়  নিয়ে  যাওয়া  হয়    সেখান  থেকে    এপ্রিল  অন্যসূত্র  থেকে  পাওয়া  ২০০  কিলোওয়াট  শর্টওয়েভ  প্রেরকযন্ত্র  থেকে  রাতের  বেলা    ঘন্টা  স্থায়ী  একটি  অধিবেশন  চালানো  হয়      এপ্রিল  ১ কি.  ওয়াট  যন্ত্রটি  স্থাপন  করে  সমবেত  কর্মীরা  দু’দলে  ভাগ  হয়ে  দু’টি  কেন্দ্রের  অনুষ্ঠান  প্রচার  শুরু  করেন    ২৫  মে  সকাল  পর্যন্ত    ব্যবস্থা  অব্যাহত  থাকে    ওই  দিন  সন্ধ্যায়  মুজিব  নগরে  ৫০ কি. ওয়াট  শক্তির  একটি  কেন্দ্র  চালু  হলে  বেতার  কর্মীরা  সে  কেন্দ্রে  যোগদানের  উদ্দেশ্যে  পরদিন  মুজিব  নগর  পৌছেন   

         এই  সময়ে   চট্রগ্রামের  ষোল   শহর  ৮ম  ইস্ট  বেঙ্গল  রেজিমেন্ট    চট্রগ্রাম  সেনানিবাসে  রেজিমেন্টাল  সেন্টারে   প্রায়  ২০০০  নতুন   রিক্রুট   বাঙালি  সৈন্য   ছিল    রাত  ১১-৩০  মিঃ  বেলুচ  রেজিমেন্টের  সৈন্যরা  অতর্কিতে   রেজিমেন্ট   সেন্টারে  আক্রমণ  চালায়  এবং  এতে  এক  হাজারের  বেশী  বাঙালি  সৈন্য  নিহিত  হয়    কিছু  সৈনিক  পালিয়ে  গিয়ে  ষোল  শহরে  ৮ম  ইস্টবেঙ্গলে  সাহায্য  প্রার্থী  হলে    তারা  প্রত্যাশিত  সাহায্য  পায়নি    রেজিমেন্টের  উপ-প্রধান  মেজর  জিয়াকে  তখন  পাঠিয়ে  দেয়া  হয়েছিলো  বন্দরে  এম ,  ভি  , সোয়াত  থেকে  অস্ত্র  খালাসে  সাহায্য  করার  জন্য   
          তিনি  পথে  ব্যারিকেডের  সম্মুখীন  হন    ব্যারিকেড  পরিস্কার  করার  সময়  তিনি  খবর  পান  যে  বেলুচ  রেজিমেন্ট  কর্তৃক  রেজিমেন্ট  সেন্টার  আক্রান্ত  হয়েছে 
  খবর  পাওয়া  মাত্র  তিনি  সিদ্ধান্ত  পাল্টে  ষোল  শহর  যাত্রা  করেন  এবং  সেখানে  পৌঁছে  ব্যাটালিয়ান  কম্যাণ্ডারকে  ঘুম  থেকে  ডেকে  তুলে  গ্রেফতার  করেন    তখন  মিলিটারি  টেলিফোন  অকেজো  হয়ে  গেছে    তাই  সিভিল  টেলিফোন  অপারেটরকে  ফোনে  পেয়ে  অনুরোধ  জানান  যে  ইস্ট  বেঙ্গল  রেজিমেন্টের  ব্যাটালিয়ান  স্বাধীনতা  যুদ্ধ  ঘোষণা  করেছে     সংবাদটি  যেন  চট্রগ্রামের  কমিশনার  ,  পুলিশের  ডি  আই  জি  আর  রাজনৈতিক  নেতাদের  জানিয়ে  দয়া  হয়  ৷ মার্চের  ২৬  তারিখে  পায়ে  হেঁটে  তিনি  পটিয়া  পাহাড়ে  পৌঁছে  গেলেন    তাঁর  ভাষায়  “ স্বাধীনতা  যুদ্ধের  প্রথম  পাহাড়   
(  সূত্র; চৌধুরী ,  শামসুল  হুদা  ,  পূর্বোক্ত ,  পৃ. ১৮ )

        অন্যদিকে    পি  আর  এর  চট্রগ্রাম  সেক্টরের  এডজুটেন্ট  ক্যাপ্টেন  রফিক  পূর্ব  থেকেই  যোগাযোগ  রক্ষা  করে  চলছিলেন    পি  আর  বাহিনী  এবং  আরো  কিছু  কর্মকর্তা    রাজনৈতিক  নেতৃবৃন্দের  সাথে    ২৫  মার্চ  রাতে  যখনই  খবর  পাওয়া  গেল  যে  ঢাকার  রাস্তায়  ট্যাঙ্ক  নেমেছে  তখনই  তিনি  রওয়ানা  হয়ে  গেলেন  ওয়ারলেস  কলোনীর  দিকে    সেখানে  অবস্থানরত  ক্যাপ্টেন  হায়াত  একটি  প্লাটুন  কম্যাণ্ড  করছিলেন    তিনি  অতর্কিত  আক্রমনে  বিনা  রক্তপাতে  ক্যাপ্টেন  হায়াত    তার  পাকিস্তানী  সাঙ্গোপাঙ্গোদের  বন্দি  করতেই  বাঙালি  সেন্যরা  তাদের  সাথে  যোগ  দিল    সেখান  থেকে  হালিশহরে  এসে  ৩০০  পাকিস্তানী  সেনাকে  গ্রেফতার      করেন    এখানকার  তটি  অস্ত্রাগার  তাদের  নিয়ন্ত্রনে  আসে      রাতের  অন্ধকারে  ক্যাপ্টেন  রফিক  প্রায়  সারা  চট্রগ্রাম  শহর  নিজ  দখলে  আনেন    তিনি  কাপ্তাই    রামগড়ে  ওয়ারলেস  বার্তা  পাঠান  এবং  বাঙালি  ই পি  আর  সৈন্যদের  চট্রগ্রাম  এসে  তাঁর  সঙ্গে  যোগ  দিতে  আহ্বান  জানান     কিন্তু  কাপ্তাই    রামগড়  থেকে  আগত  ই পি  আর  সৈন্যদের  মেজর  জিয়া  কালুরঘাটে  থামিয়ে  দেন  এবং  অষ্টম  ইস্ট  বেঙ্গলের  অন্তর্ভুক্ত  করেন ” ৷ 
 ( সূত্র ;  হক , কায়সুল , সম্পাদক  পাক্ষিক  শৈলী ,  ১৬  ড়িসেম্বর ’ ৯৯  প্রবন্ধ : মেজর  অবসরপ্রাপ্ত  রফিকুল  ইসলাম  পিএসসি ,    ‘ মুক্তিযুদ্ধে  প্রাথমিক  প্রতিরোধ’ )


          ২৫  মার্চ  রাতের  প্রথম  প্রহরে  ক্যাপ্টেন   এস  এম  ভূইয়া  ছিলেন  চট্রগ্রামের  শেরশাহ  কলোনীতে    গুলির   শব্দে  তিনি  জেগে  ওঠেন  এবং  তখনই  একজন  বাঙালি  হাবিলদার  ইস্টবেঙ্গল  রেজিমেন্ট  সেন্টার  থেকে  দৌড়াতে  দৌড়াতে  এসে  জানায়  যে  সকল  বাঙালি   সৈন্যকে  হত্যা  করা  হয়েছে    প্রতিরোধের  স্পৃহা  নিয়ে  তিনি  মুহূর্তেই  ফোনে  ৮ম  বেঙ্গল  রেজিমেন্টে  মেজর  জিয়ার  সাথে  যোগাযোগের  চেষ্টা  করে  ব্যর্থ  হন    পরে  ভোরের  দিকে  পায়ে  হেঁটে  হাজির  হন  ৮ম  বেঙ্গল  রেজিমেন্টে    কিন্তু  সেখানে  কারো  সাথে  দেখা  হয়নি    চলে  আসেন  শহরে    সেখানে  তিনি  বেঙ্গল  রেজিমেন্টর  কিছু  জোয়ান , ই পি  আর    পুলিশ  বাহিনীর  লোক  জড়ো  করে  ক্যান্টনমেন্ট  আক্রমন  করবেন  সাব্যস্ত  করেন    কিন্তু  ক্যাপ্টেন  রফিকের  পরামর্শে  সে  পরিকল্পনা  বাদ  দিয়ে  সন্ধ্যার  দিকে  কুমিরায়  পৌঁছান  কুমিল্লা  থেকে  চট্রগ্রামগামী  হানাদার  বাহিনীর  মোকাবিলা  করতে      টার  দিকে  শত্রুবাহিনী  সেখানে  পৌঁছলে  অধিনায়ক  ইকবাল  শফি    তাঁর  জীবনের  সবচেয়ে  মারাত্মক  চ্যালেঞ্জের  মুখামুখি  হয়ে  গেলেন    সুশিক্ষিত  এবং  আধুনিক  অস্ত্রে  সজ্জিত  তার  সৈন্যদের   অর্ধেকের   বেশি  নিয়ে  আমাদের  এমবুশের  মধ্যে  ধরা  পড়ে  গেলেন  ইকবাল  শফি    কুমিরায়  মহাসড়কটির  এই  অংশে  স্থানীয়  জনগণ  আগ  থেকেই  ব্যারিকেড  স্থাপন  করেছিল  ৷ ….. তখন  সন্ধ্যা    টা ৷  আমাদের  সব  সৈন্যরা  একযোগে  পাকিস্তানীদের  উপর  ব্যাপক  গুলিবর্ষণ  শুরু    করে    ডান  ,  বাম  , ও  সম্মুখ  তিন  দিক  থেকেই  ঝাঁকে  ঝাঁকে  গুলি  ছুটে  আসতে  থাকে    …..কুমিরায়   এই  এমবুশে  পাকিস্তানীদের  অনেক  যানবাহন  ধ্বংস  হয়  এবং  ৭০  জনের  অধিক  হতাহত  হয়    …..পার্শ্ববর্তী  এক  পাহাড়ের  দিকে  পালিয়ে  প্রাণ  বাঁচালেন  ইকবাল  সফি    ….কুমিরায়  এমবুশ  এবং  পরবর্তী  রক্তক্ষয়ী  সংঘর্ষে  আমাদের  ১৪  জন  হতাহত  হয়  ৷…….
          এক  পর্যায়ে  মেশিনগানের  গুলি  শেষ  হয়ে  যাওয়ায়     ক্যাপ্টেন  রফিক  সহ  অন্যান্যদের  সাথে  যোগাযোগে  ব্যর্থ  হওয়ায়  ক্যাপ্টেন  ভুইয়া  শহরে  প্রত্যাবর্তন  করেন  এবং  মেজর  জিয়ার  বাহিনীর  সাথে  যোগ  দেন 
         
  (  সূত্র;  বীর  উত্তম, রফিকুল  ইসলাম  ,  লক্ষ  প্রাণের  বিনিময়ে  ,  অন্যান্য , প্রকাশ  ১৯৯৭ ,  পৃ , ১২০-২১ )

          পকিস্তানবাহিনী  নৌ    বিমানযোগে  চট্রগ্রামে  নতুন  শক্তি  সষ্ণয়  করে    ২৮  মার্চ  তারিখের  মধ্যে  পক  সেনারা  চট্রগ্রাম  সার্কিট  হাউসে  হেডকোয়ার্টার  স্থাপনে  সক্ষম  হয়    ৩১  মার্চ  বীরত্বপূর্ণ  সংগ্রামের  মধ্যে  দিয়ে  হালিশহর    পি  আর  সদর  দফতরের  পতন  ঘটে    ক্যাপ্টেন  রফিক  তখন  সাহায্যের  আশায়  ছিলেন  সীমান্তের  ওপারে   

         
  চট্রগ্রাম  শহর  ছেড়ে  মুক্তিযুদ্ধারা  কালুরঘাটে  সমবেত  হয়    ক্যাপ্টেন  হারুন  এবং  লেফটেন্যান্ট  শমসের  মবিন  চৌধুরীর  নেতৃত্বে  মুক্তিযুদ্ধারা    এখানে  প্রতিরক্ষাব্যুহ  রচনা  করে 
  (  সূত্র; হক ,  কায়সুল     …পূর্বোক্ত  প্রবন্ধ  )

          ১০  এপ্রিল  নাগাদ  পাকিস্তানীরা  কালুরঘাট  ব্রিজের  কাছাকাছি  এসে  অবস্থান  নেয় ৷   ১১  এপ্রিল  সকাল    টায়  পাকিস্তানীদের  আর্টিলারি  এবং  নৌবাহিনীর  কামান  সমূহ  মুক্তিবাহিনীর  অবস্থানের  ওপর  তীব্র  আক্রমন  শুরু    করে      পাকিস্তানী  বাহিনী  কালুরঘাট  ব্রিজ  এলাকা  দখলের  জন্য  মরণপণ  লড়াইয়ে  অবতীর্ণ  হয়    ক্যাপ্টেন  হারুন  এই  যুদ্ধে  গুরুতরভাবে  আহত  হন  এবং  লেফটেন্যান্ট  শমসের  মবিন  চৌধুরী  শত্রুর  হাতে  ধরা  পড়েন    অষ্টম  ইষ্ট  বেঙ্গল  তিনটি  দলে  বিভক্ত  হয়ে  পিছনে  সরে  আসে   মেজর  মীর  শওকত  আলীর  নেতৃত্বে  একটি  দল  রাঙামাটি  ,   দ্বিতীয়  দলটি  ক্যাপ্টেন  মাহফুজের  নেতৃত্বে  কাপ্তাই  এবং  তৃতীয়  দলটি  ক্যাপ্টেন  খালিকুজ্জামানের  নেতৃত্বে  কক্সবাজারের  দিকে  অগ্রসর  হয়    অবশেষে  তারা  সবাই  ভারতীয়  এলাকায়  অবস্থান  করে 
 (  সূত্র ; হক,  কায়সুল….পূর্বোক্ত )

          মেজর  জিয়া  ৩০  মার্চ  সীমান্তবর্তী  রামগড়ে  পৌছেন      সম্পর্কে  ফরুক  আজিজ    খান  লিখেছেন  ,     Maj….Zia’s  quick  departure  from  the  scene  had  a  disasterous  effect  on  the  morale  of  the  fighting  men  who  were  now  in  total  disarray  .  It  is  an  anticlimax  after  the  inspiration  and  courage  his  radio  broadcast  had  given  to  the  freedom  fighters  and  many  others  like  us  .
  (  মেজর  জিয়ার  তড়িঘড়ি  করে  ঘটনাস্থল  ত্যাগ  করায়  সৈন্যদের  নৈতিক  মনোবলের  ওপর  প্রভাব  পড়ে  এবং  তারা  সম্পূর্ণ  বিশৃঙ্খল  হয়ে  পড়ে    বিশেষ  করে  উৎসাহ  ব্যঞ্জক  রেডিও  ঘোষণায়  মুক্তিযোদ্ধা    অন্যান্যদের  মনে  সাহস  যোগানোর  পর  এটি  ছিলো  একটি  বৈপরিত্যমূলক  ঘটনা  ) 
   ( সূত্র ;   khan , F . A .   ….পূর্বোক্ত,.. পৃ,  ৯৮  )


      এর  পর  চট্রগ্রামের  নানাস্থানে  বিক্ষিপ্তভাবে  লড়াই  করে  ২ মে  রাত্রে  মুক্তিযুদ্ধারা  পিছু  হটে  ভারতীয়  এলাকা  সাব  রুমে  আশ্রয়  নিতে  বাধ্য  হয় 
          সারা  চট্রগ্রাম  চলে  যায়  হানাদার  বাহিনীর  কবলে  ৷ ……….

          ইতোমধ্যে    এপ্রিল  মেজর  জিয়া  চট্রগ্রাম  থেকে  সিলেটের  তেলিয়াপাড়া  এসে  মেজর  খালেদ  মোশাররফ    সফিউল্লার  যৌথ  কমান্ড  থেকে  দু’কোম্পানি  সৈন্য  চেয়ে  নেন 

        মুক্তিযুদ্ধের  প্রাথমিক  পর্যায়ে    এপ্রিল  তেলিয়াপাড়া  চা  বাগানে  মেজর  সফিউল্লার    সদরদফতরে  এক  সভায়  অবসরপ্রাপ্ত  কর্ণেল  মুহাম্মদ  আতাউল  গনি  ওসমানী  ,  লে. ক .আব্দুর  রব ,  মেজর  জিয়াউর  রহমান ,  মেজর  খালেদ  মোশাররফ ,  মেজর  সফিউল্লাহ্ ,  মেজর  কাজী  নুরুজ্জামান  ,  মেজর  নুরুল  ইসলাম  ,  মেজর  মমিন  চৌধুরী , মেজর  শাফায়াত  জামিল ,  মেজর  মঈনুল  হোসেন  চৌধুরী     এবং  আরও  কয়েকজন উপস্থিত  হন    সেখানে  তারা  মুক্তিযুদ্ধের  বিভিন্ন  দিক  পর্যালোচনা  করে  সরকার  গঠনের  জন্যে  অপেক্ষা  না  করে  সমস্ত  বিদ্রোহী  ইউনিটের  সমবায়ে  সম্মিলিত  মুক্তিফৌজ  গঠন  করেন  এবং  কর্নেল  ওসমানীকে  তা  পরিচালনার  দায়িত্ব  অর্পন  করেন      সভায়  যুদ্ধ  সম্পর্কিত  এলাকার  দায়িত্ব  বন্টন  করা  হয়    মেজর  জিয়াউর  রহমানের  কম্যাণ্ডে  আসে  চট্রগ্রাম - পার্বত্য  এলাকা   
  (  সূত্র ;  হাসান,  মঈদুল,  মূলধারা’ ৭১ , ইউ , পি  , এল , ১৯৮৬, পৃ , ১৫  এবং  সফিউল্লা  বরউত্তম ,  মে. জে . কে এম , মুক্তিযুদ্ধে  বংলাদেশ , আগামী , ১৯৯৫ , পৃ, ৯০-৯১  ) 
         
   এই  লেখা   থেকে   আগ্রহীরা   মেজর   জিয়া  ,  চট্রগ্রামের  মুক্তি  যুদ্ধের  প্রাথমিক  পর্যায়ে ,  স্বাধীনতার   ঘোষণা   সহ   আর  কি  কি  ভূমকা   পালন   করেছিলেন   এবং   অন্যান্যরা   কি  ভূমিকা   পালন  করে  ছিলেন   তা   সহজে   জানতে পারবেন   ,  তার নিজের লেখা সহ   যুদ্ধাদের   বিভিন্ন   লেখা  থেকে 

 
       এই  লেখাটি  শেষ  করা  হলো  কবি  সুকান্তের  একটি  কবিতার  উল্লেখ  করে ;
     

     জাগবার দিন আজ-

    সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা

জাগবার দিন আজ, দুর্দিন চুপিচুপি আসছে ;
যাদের চোখেতে আজো স্বপ্নের ছায়া ছবি ভাসছে-
তাদেরই যে দুর্দিন পরিণামে আরো বেশী জানবে,
মৃত্যুর সঙ্গীন তাদেরই বুকেতে শেল হানবে ।
আজকের দিন নয় কাব্যের-
আজকের সব কথা পরিণাম আর সম্ভাব্যের ;
শরতের অবকাশে শোনা যায় আকাশের বাঁশরী,
কিন্তু বাঁশরী বৃথা, জমবে না আজ কোন আসর-ই ।
আকাশের প্রান্তে যে মৃত্যুর কালো পাখা বিস্তার-
মৃত্যু ঘরের কোণে, আজ আর নেই জেনো নিস্তার,
মৃত্যুর কথা আজ ভাবতেও পাও বুঝি কষ্ট
আজকের এই কথা জানি লাগবেই অস্পষ্ট ।
তবুও তোমার চাই চেতনা,
চেতনা থাকলে আজ দুর্দিন আশ্রয় পেত না,
আজকে রঙিন খেলা নিষ্ঠুর হাতে করো বর্জন,
আজকে যে প্রয়োজন প্রকৃত দেশপ্রেম অর্জন ;
তাই এসো চেয়ে দেখি পৃথ্বী
কোনখানে ভাঙে আর কোনখানে গড়ে তার ভিত্তি ।
কোনখানে লাঞ্ছিত মানুষের প্রিয় ব্যক্তিত্ব,
কোনখানে দানবের ‘মরণ-যজ্ঞ’ চলে নিত্য ;
পণ করো, দৈত্যের অঙ্গে
হানবো বজ্রাঘাত, মিলবো সবাই এক সঙ্গে ;
সংগ্রাম শুরু করো মুক্তির,
দিন নেই তর্ক ও যুক্তির ।
আজকে শপথ করো সকলে
বাঁচাব আমার দেশ, যাবে না শত্রুর দখলে ;
তাই আজ ফেলে দিয়ে তুলি আর লেখনী,
একতাবদ্ধ হও এখনি ॥


   
  


মন্তব্যসমূহ