মানব সভ্যতা যখন আজ মঙ্গলগ্রহে বসতি বানানোর স্বপ্ন দেখছে, তখন আমরা মধ্যযুগীয় ‘উদ্ভট এক উটের পিঠে চড়ে’ পিছনের দিকে যাত্রা শুরু করেছি। ক্ষমতাশালীরা সব সময় প্রগতির গলা চেপে ধরার অস্ত্র হিসেবে ধর্ম ও ধর্মীয় মৌলবাদ লালন করেছে। তারা জয়ীও হয়েছে কখনও কখনও। কিন্তু যত সময় লাগুক না কেন, মানবসভ্যতা তাকে হারিয়ে দিয়ে আবার এগিয়ে গিয়েছে।
তোমরা তো সব সময় ছিলে…
হাইপেশিয়ার শরীরের মাংস তোমরাই চিরে চিরে উঠিয়েছিলে। অসংখ্য নির্দোষ ‘ডাইনি’ পুড়িয়েছ তোমরা। সতীদাহে মেতেছ। ব্রুনোকে আগুনে পুড়িয়ে দানবীয় আনন্দ পেয়েছ। কূপমণ্ডূকের মতো গ্যালিলিওকে শাস্তি দিয়ে স্বস্তির ঢেঁকু্র তুলে ভেবেছ, এই বুঝি পৃথিবীর ঘোরা চিরতরে বন্ধ করে দিতে সক্ষম হলে!
বন্যা আহমেদ
ইসলামে
শিয়া , সুন্নি , ওয়াহাবী
ও আহমদিয়া ধারার
মত কী কোনো নতুন
ধারার ইসলামের অভ্যুদয় আসন্ন ? না উল্লেখিত
ধারার একটি সম্মিলিত
রূপ নিয়ে নতুন
ধারার একটি ইসলাম
অভ্যুদয় হতে যাচ্ছে
অদূর ভবিষ্যতে
?
বর্তমান ইসলামী
বিশ্বে যে গৃহ
যুদ্ধ শুরু হয়েছে
তার ফলে বর্তমান
প্রচলিত ঈসলাম ধর্ম
একটি সঙ্কটে পড়েছে
বলে সংশ্লিষ্টরা মনে
করছেন ৷ তবে
মুসলমানদের মধ্যে প্রতীকি
অর্থে একটি কথা
চালু আছে
‘
ইসলাম জিন্দা হোতা
হ্যায় হর কারবলা
কি বাদ ’ ৷ অর্থাৎ
প্রত্যেক গৃহযুদ্ধ বা
কারবালার পর ইসলামের
পুর্নজন্ম হয় ৷
বিশ্বের ধর্মের
ইতি্হাস পর্যালোচনা করলে
দেখা যায় যে , একসময়
খ্রিস্টান ধর্মকেও বর্তমান
আলোকিত যুগে পৌঁছার
পূর্বে অনেক অন্ধকার
এবং রক্তাক্ত অধ্যায়
অতিক্রম করতে হয়েছে
৷ তাই ইসলাম
ও বোধহয় এই
রকম খ্রিস্টান ধর্মের
মত একটি অধ্যায় অতিক্রম করতে
বর্তমান এই গৃহ
যুদ্ধের মধ্যে পতিত
হতে হয়েছে ৷
বর্তমানে এই
ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত করেছে এমন একটি
বক্তব্য যে বক্তব্যটি
দিয়েছেন ঐতিহাসিকভাবে রক্ষণশীল
মুসলিম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান
এবং সুন্নি ইসলামী
শিক্ষার প্রাচীনতম পীঠস্থান
আল-আজহার মসজিদের গ্র্যান্ড
ইমাম শেখ আহমেদ
আল তায়ীব ৷ সম্প্রতি
তিনি মুসলিম বিশ্বের
ইসলামী শিক্ষার আমূল
পরিবর্তন ও সংস্কার করার একটি প্রস্তাব
করেছেন ৷
আবার সৌদি
সমর্থনপুষ্ট মিসরের বর্তমান
প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহ
আল সিসি বলেছেন
ইসলামকে চরমপন্থী পথ
ত্যাগ করে এবং সে পথ
থেকে বের হয়ে
আসতে হবে ৷ তিনি ইসলামকে
চরমপন্থী প্রবণতাসমূহ থেকে
মুক্ত করতে একটি
ইসলামী বিপ্লবের আহ্বান
জানিয়েছেন ৷ এ প্রসঙ্গে
তিনি বলেছেন ইসলামী
বিশ্ব দিন দিন ক্ষত
বিক্ষত হয়ে ধ্বংস
হয়ে যাচ্ছে ; শেষ হয়ে
যাচ্ছে আর মুসলমানরা
নিজরাই ইসলামকে ধ্বংস
ও শেষ করে দিচ্ছে
৷
এর বিপরীতেও আবার
অনেক মুসলমানের মনমানসিকতার
বিরাট এক পরিবর্তন
লক্ষ্য করা যাচ্ছে
৷ ইদানিং মুসলমান তরুণ
ও তরুণীদের দলে
দলে আই এস এর
যুদ্ধে যোগ দিচ্ছে
একটি প্রচণ্ড মানসিক
উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে ৷ এর
পেছনের কারণও অনুসন্ধানের
সময় এসেছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে
করছেন ৷
তবে এখনও
উদারপন্থী মুসলমানেরা অনেকে
আশাবাদ ব্যক্ত করেন ৷
কিত্তু বিশ্লেষকরা মনে
করেন ইসলাম ধর্মের
অবস্থান বর্তমানে তার
কেন্দ্রস্থান থেকে পেছনের
দিকে সরে যেতে
শুরু করেছে ৷
যদিও কেউ মুখ
ফুটে এই কথাটি
প্রকাশ করতে সাহস
পাচ্ছে না মৌলবাদী
ইমামদের ভয়ে আর পারিবারিক
অপমান , অমর্যাদা বা সহিংসতার
আশঙ্কায় ৷
বর্তমান ইসলামিক
গৃহযুদ্ধের কারণ বিশ্লেষণ
কারে সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষকরা
মনে করেন বর্তমানে
চরমপন্থী গ্রুফগুলোর যে
আদর্শের ও বিশ্বাসের
উপর ভিত্তি করে
জন্ম হয়েছিল , গৃহযুদ্ধে তারা সে
আদর্শ প্রতিষ্ঠা থেকে
সরে গিয়ে সে
তার বিপক্ষের গ্রুফগুলোকে
পরাজিত করার বিষয়ে
বেশী আগ্রহী হয়ে
উঠেছে ৷ এখন ইসলামের
পণ্ডিতগণ প্রকৃত ইসলাম
কোনটি তার ব্যাপারে
তাদের কোনো নিজস্য
বক্তব্য বা মতামত
প্রকাশ করছেন না
বা হয়ত প্রকাশে
সাহস পাচ্ছেন না ৷
বর্তমানে ইসলামিক চরমপন্থীরা
যে ইসলামের প্রতিষ্ঠার
জন্যে যুদ্ধ আরম্ভ
করছে এবং এর পক্ষে
প্রচারণা চালাচ্ছে সে ইসলামকে
নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গীর অধিকারীরা
ইসলামের বিকৃত রূপ
বলে গণ্য করেন ৷ কিত্তু
কেউ জোর দিয়ে এই কথাটি
প্রচারে এগিয়ে আসছেন
না ৷
ইসলামের উদারপন্থীরা
বলেন প্রকৃত ইসলাম মানুষের
ধর্মীয় স্বাধীনতা স্বীকার
করে এবং অন্য
ধর্ম মতের প্রতি
নিজে শ্রদ্ধাশীল থাকে
এবং নিজপক্ষের বা
আপন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি
এই কাজ করতে
আহ্বান জানায় ৷
তবে বর্তমানে ইসলামের
কার্যত হেফাজতকারী হিসেবে
পরিচিত সৌদি আরবের
শাসকদের অনুসৃত মতবাদ
এবং নীতি কতটুকু
সঠিক ! অর্থাৎ সৌদি
ওয়াহাবী মতবাদের প্রবক্তারা
কী প্রকৃত ইসলামের প্রতিনিধিত্বকারী ? এ
ব্যাপারে ইসলামী পণ্ডিতগণ
কোনো স্পষ্ট ধারনা
সমাজে প্রকাশ না করে এ
ব্যাপারে নিরবতা অবলম্বন
কেন করছেন তার জবাব
খুঁজার সময় এসেছে
বলে ও উদারপন্থীরা মনে করেন ৷
তাই প্রকৃত
ইসলামকে রক্ষা করতে
হলে ইসলামের আসল
প্রবক্তা বা ইসলামের
প্রকৃত প্রতিনিধিত্বকারী কে বা
কারা তা নির্ধারণ
করা জরুরী বলে সংশ্লিষ্টরা
মনে করেন ৷
তা করতে ব্যর্থ
হলে ইসলাম অস্থিত্ব
সংকটে পড়তে পারে
বলেও তারা মনে
করেন ৷
কিত্তু তা
কেউ না করে
ইসলামের প্রবক্তা ও
সমালোচক উভয় গ্রুফই
তাদের ভিন্ন ভিন্ন
রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক এবং ব্যক্তিগত
স্বার্থসিদ্ধির জন্য যখন
যা প্রয়োজন তার
প্রচারে নিজকে নিয়োজিত
করেন বলে দেখা যায় ৷
বর্তমানে বিশ্বের
উন্নত ও বহু
সংস্কৃতির দেশে যেখানে নিজস্য
মুক্ত মতামত প্রকাশে স্বাধীনতা আছে , আছে
গনতান্ত্রিক পরিবেশ আছে ধর্মনিরপেক্ষতা এমন সব পশ্চিমা
বিশ্বের দেশগুলোতে
অধিক সংখ্যক মুসলমানদের বসবাস
বেড়ে গেছে এখন ৷ ফলে ঐ
সব দেশে বসবাসরত
মুসলমানদের মনোজগতে এক
বিরাট পরিবর্তন এসে
গেছে ৷ তাদের
কাছে এখন ব্যক্তিস্বাধীনতা ও
মানবাধিকার ও ধর্মনিরপেক্ষতা
ইত্যাদির একটি বিশ্বাস
তাদের ব্যক্তিগত মনোজগতে
প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে ৷
তাই
এদের কাছে আদিযুগের
ইসলামের কায়েমি স্বার্থের
ধ্যান ও ধারনার
প্রতি বিশস্থতা থাকা
না থাকার কোনো ব্যাপারটি
তাদের কাছে হারিয়ে
গেছে ৷ ফলে পশ্চিমা
বিশ্বে বসবাসরত তরুণ
প্রজন্মের অনেকের কাছেই
জাতি , সংস্কৃতি , লিঙ্গ ও
ব্যক্তিগত জীবন ধারায়
কোনো পার্থক্য তারা মানতে নারাজ
৷ তাই পশ্চাত্যে জন্ম
নেয়া ও বেড়ে
ওঠা মুসলিম তরুণেরা
তাদের নিজেদের বাবা -মায়ের
প্রজন্মের চিন্তা , চেতনা বা জীবনধারার
সঙ্গে নিজেদের জীবন
প্রণালীর কোনো মিল
খুঁজে পাচ্ছে না ৷
ফলে
বর্তমানে দ্বিতীয় ও
তৃতীয় প্রজন্মের আমেরিকান
ও ইউরোপীয় মুসলিমদের অনেকেই
তথাকথিত ইসলামিক অনুশাসন
ও ইসলামিক রীতিনীতি
প্রত্যাখ্যান করা শুরু
করছে ৷ তারা বিশ্বাস করে
এসব রীতিনীতি তাদের
ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে এবং তাদের
সমাজের প্রধান মূল্যবোধের
সঙ্গে খাপ খায়
না ৷ শুধু ধর্মের নামে
এসব তারা আর
মানতে রাজি নয় ৷
এই নতুন
প্রজন্মের বিশ্বাস , ইসলামকে
যদি বর্তমান যুগে
ঠিকিয়ে রাখতে হয় তবে
ইসলামের বর্তমান তার আত্মঘাতি পথ
থেকে সরে আসতে হবে ৷ তাদের মতে একটি
নির্দিষ্ট পাত্রে সবকিছুকে
একত্রিত করে রাখার ইসলামের
নীতি থেকে সরে এসে
ইসলামকে মুক্তকরে দিতে
হবে ৷ ইসলামকে ঠিকিয়ে
রাখতে হলে মানুষের
চিন্তা চেতনার ও যুগের সঙ্গে যা
খাপ খায় তা যুক্ত
করে ইসলামের নতুন
নিয়ম ও রীতিনীতি
চালু করতে হবে ৷
এ প্রসঙ্গে
তুরস্কের একজন সুপরিচিত
লেখক লেভেন্ট গুলতেকিনের
একটি মন্তব্যের উল্লেখ
করা হলো এখানে
৷ গুলতেকিন মনে করেন
এক বিংশ শতকের প্রেক্ষাপটে
ইসলাম ধর্মের প্রকৃত
অনুসারিদের এখনই অনুধাবণ
করতে হবে ইসলামের বর্তমান মূল
সমস্যাকে ৷ তিনি মনে
করেন এই সমস্যার
মূল কারণ ইসলাম
অনুসারিদের অনুধাবন করতে
না পারার জন্যেই
এই এর সৃষ্টি
হয়েছে ৷ এ থেকে বেরিয়ে
আসার পথ খুঁজে বের করতে
না পারলে মুসলমানেরাই
ইসলামের ধ্বংস ডেকে
আনবে বলে গুলতেকিন
মনে করেন ৷
সম্প্রতি গুলতেকিন
পশ্চিমের একটি মিডিয়া - সাইট
আল মনিটারেরকে দেয়া
এক সাক্ষাতকারে উপরোক্ত
মন্তব্য করেছেন ৷ তার
মতে ইসলামের নির্ভেজাল
ধর্মীয় নীতিমালা এবং
সততা , ন্যায়বিচার , সাম্য ও
ব্যক্তি স্বাধীনতার মতো
মানুষের ধারনাগুলোকে একটি সার্বজনীন রূপ
দিয়ে তাকে ইসলামিক
সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে
হবে ৷ আর
এই কাজটি করতে
হলে অবশ্যই রাষ্ট্রপরিচালনায় ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি গ্রহণ করতে
হবে ৷ তাই
তিনি মনে করেন ধর্মনিরপেক্ষতাকে
রাষ্ট্র পরিচালনায় কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপন
করা সম্ভব হলেই
বর্তমান ধর্মীয় বিষয়গুলোর
ক্রীয়াশীলতার অবসান হবে
এবং ধর্মের ও
মুক্তি আসবে ৷ আর আলোকিত একটি সমাজে
প্রতিষ্ঠা হবে যেমন
সপ্তদশ ও অষ্টাদশ
শতাব্দীতে খ্রীস্টান ধর্মের
বেলায় ঘটেছে ৷ ইসলাম
ধর্ম ও মুসলিমদের
বেলায়ও এর ব্যতিক্রম
ঘটবে না বলে ভাষ্যকার গুলতেকিন
মনে করেন ৷
আমেরিকান এক
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসমা
আফসার উদ্দিন ইসলামের
বর্তমান সংকটকে মুসলিমদের
নিজেদের ভেতরকার স্বার্থের
দ্বন্দ্বের পরিণতি বলে
মন্তব্য করেছেন ৷ তার
মতে এই দ্বন্দ্বের
সৃষ্টি হয়েছে সস্বিবাদী (সহিংসবাদী
) ও উদারপন্থীদের মধ্যে ৷ এই দুই গ্রুফের ভেতরকার ভিন্ন
দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতিদ্বন্ধিতার ফলে এর
উৎপত্তি হয়েছে ৷
এই ভিন্ন
মতের একটি হচ্ছে
অতীতকে কোনো বাচ- বিচার
ও ব্যাখ্যা ছাড়া
অন্ধের মত অনুকরণ ও অনুসরণ করা
এবং বর্তমানে একে এক
জমাট হয়ে য়াওয়া
নিথর ও অলীক
কোনো অতীত সত্তা হিসেবে বিবেচনা
করতে হবে কি
না তা নির্ধারণ করতে
না পারা ৷
অন্যটি হচ্ছে
ইসলামিক সমাজে একটি সার্বজনীন
মূল্যবোধ এবং সাম্ভাব্য
কার্যক্রমের একটি সমষ্টিক
রূপ প্রদান করা ৷ যা
সময়ের সঙ্গে এবং যে
কোনো পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে
তার নিজস্য মতামত
দ্বারা প্রভাবিত হয়ে
যে কোনো ঘটনার
একটি পরিবর্তিত অন্য রূপ
দেয়ার ক্ষমতা প্রদান
করা ৷
অধ্যাপক আসমা
মনে করেন শেষ
বিচারে মুসলিমদের মধ্যেকার
উদারপন্থী গুষ্ঠীদের জয়ের
ওপরই নির্ভর করছে একবিংশ শতাব্দীর
ধর্ম হিসেবে ইসলামের
ভবিষ্যত ৷ তিনি
মনে করেন এটাই ইতিহাসগতভাবে অধিকতর
বিশ্বাসযোগ্য এবং নৈতিক
ও সামাজিক দিক
দয়েও একটি গ্রহণযোগ্য
বিকল্প ৷
(সূত্র;- ইন্ডিয়াস মুসলিম
স্প্রিং : হোয়াই ইজ নো বডি টকিং এবাউট ইট
? গ্রন্থের লেখক - হাসান সুরুর
একটি লেখাকে ( নতুন ইসলাম
অভ্যুদয়ের পথে ? )
বাংলায় অনুবাদ করে এনামুল
হক জনকণ্ঠে প্রকাশ
করেছেন ৷ জনাব
হকের এই লেখাটির
অনুকরণ করে মূল লেখাকে সংক্ষিপ্ত
করে এই লেখাটি
তৈরি করা হয়েছ )
সৌজন্য; এনামুল হক
ও জনকণ্ঠ :
এই লেখাটার সঙ্গে প্রাসঙ্গিত নিম্নের লেখাটি ও এই সঙ্গে যুক্ত করা হল ৷
ইসলাম ধর্মের বর্তমান সমস্যার
সমাধানে মুসলমানদের সংস্কারই হলো সর্বোত্তম পন্থা। । সুদীর্ঘকাল পর অবশই ইসলামের সংস্কারের সময় আজ সমাগত।
বিশ্বের বর্তমান তিন শ্রেণীর
মুসলমানের মধ্যে
প্রথম শ্রেণীর মুসলমানরাই অধিকাংশই বর্তমান
ইসলামী বিশ্বের সমস্যার জন্য দায়ী।
এই শ্রেণীর মুসলমানরা শরিয়া বা ইসলামী ধর্মীয় আইন ভিত্তিক শাসনব্যবস্থার কথা ভাবে। তাদের লক্ষ্য মহানবী মুহম্মদ (দ)-এর শিক্ষাবলীকে পালন করাই শুধু নয়, উপরন্তু মদিনা গমনের পর মহানবী (দ) যেসব সামরিক ব্যবস্থা বা কর্মকা- চালিয়েছিলেন সেগুলোও অনুকরণ করা। নিজেরা সহিংস কার্যকলাপে লিপ্ত না হলেও এই শ্রেণীর লোকেরা সহিংসতাকে মার্জনা করতে দ্বিধা করে না।
দ্বিতীয় শ্রেণীর মুসলমানরাই হলো গোটা মুসলিম বিশ্বের সুস্পষ্ট সংখ্যাগুরু অংশ। এরা ইসলামের মূল শিক্ষার প্রতি অনুগত এবং নিষ্ঠার সঙ্গে ইবাদত-বন্দেগী করে থাকে। তবে তারা সহিংসতার চর্চা করতে বা সহিংসতার কথা প্রচার করতে আগ্রহী নয়। ধর্মপ্রাণ খ্রীস্টান বা ইহুদীরা যারা প্রতি সপ্তাহে উপাসনালয়ে যায় এবং খাওয়া দাওয়া ও পোষাক আষাকে ধর্মীয় বিবিবিধান মেনে চলে তাদের মতো এই শ্রেণীর মুসলমানরাও ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। কখনও কখনও এই শ্রেণীর কিছু সদস্যকে ভুলবশত ‘মডারেট’ অ্যাখ্যা দেয়া হয়ে থাকে।
তৃতীয় শ্রেণীতে রয়েছে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক মানুষ যাদের ইসলামের মধ্যেই জন্ম কিন্তু তারা যে ধর্মবিশ্বাসের মধ্যে বেড়ে উঠেছে সেটি সম্পর্কে সমালোচনাধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চিন্তাভাবনা করার চেষ্টা করে।
এরা হলো
মুসলিম বিরুদ্ধবাদী। আমরা অল্পকিছু মানুষ অভিজ্ঞতা থেকে এই উপসংহারে পৌঁছতে বাধ্য হয়েছি যে, আমরা আর ঈমানদার হিসেবে থাকতে পারব না। তথাপি আমরা ইসলামের ভবিষ্যত নিয়ে বিতর্কে গভীরভাবে নিয়োজিত রয়েছি। তবে বিরুদ্ধবাদীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ হলো সংস্কারবাদী ইমানদার, যারা এই উপলব্ধিতে পৌঁছেছে যে, ইসলামের অনুসারীদের যদি সহিংসতার সীমাহীন চক্রে নিপতিত হতে না হয় তাহলে তাদের ধর্মের অবশ্যই পরিবর্তন ঘটতে হবে।
প্রথম শ্রেণীর মুসলমানরা অর্থাৎ ধর্মান্ধ ইসলামপন্থীরা প্রত্যেকের কাছেই হুমকি। পাশ্চাত্যে এই শ্রেণীটির
অস্তিত্বের
অর্থ হলো এদের কারণে সন্ত্রাসের ঝুঁকি শুধু বৃদ্ধিই পায় না, উপরন্তু নারীবাদী এবং লিঙ্গ সমতা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও সমকামী অধিকারের মতো সংখ্যালঘু অধিকারের জন্য আন্দোলনকারীদের কষ্টার্জিত যা কিছু অর্জন সেগুলোও সূক্ষ্মভাবে হারিয়ে যায়। শুধু ইউরোপে নয়, উত্তর আমেরিকাতেও এই হুমকি বৃদ্ধি পাওয়ার ব্যাপারটা কেউ যদি অস্বীকার করে তাহলে বুঝতে হবে, তিনি অভিবাসন এবং মুসলমান অভিবাসীদের মনোভাব বিষয়ক তথ্য-উপাত্তগুলো দেখেননি।
তবে ধর্মান্ধরা
মহানবী (দ)-এর যুগে সহিংস পন্থায় ফিরে যাওয়ার যে স্বপ্ন দেখে সেটা একই ধর্মাবলম্বী মুসলমানদের জন্য আরও বড় হুমকি। এরা সংখ্যাগরিষ্ঠ যেসব মুসলমান শান্ত নিস্তরঙ্গ জীবনযাপন করতে চায় তাদের অবস্থানকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলছে। আরও মন্দ ব্যাপার হলো তারা বিরুদ্ধবাদী ও সংস্কারপন্থীদের জীবনের প্রতিও সর্বক্ষণ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা হচ্ছি সেই শ্রেণীর মুসলমান যারা সমাজচ্যুত ও প্রত্যাখ্যাত হওয়ার সম্মুখীন, যাদের সব ধরনের অপমান-অবমাননা সহ্য করতে হবে, যাদের গুম-প্রাণনাশের হুমকির মোকাবেলা করতে কিংবা খোদ মৃত্যুরই মুখোমুখি হতে হবে।
সূত্র;- (সৌজন্য -জনকণঠে প্রকাশিত - )
ইসলাম সংস্কারক বনাম ধর্মান্ধ মুসলমান
মূল
: আইয়ান হিরসি আলী
অনুবাদ
: এনামুল হক
তাঁর
সদ্য প্রকাশিত গ্রন্থ ‘হেরেটিক :
হোয়াই ইসলাম নিডস্্ রিফর্মেশন নাউ’]
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন