জেনারেল জিয়া কি
তার ২৭ মার্চের স্বাধীনতা
ঘোষণায় কি বলেছিলেন
তা কি ভূলে
গিয়েছিলেন ?
অন্ততঃ বেলাল
মোহাম্মদের লেখা থেকে
তাই মনে হওয়া
স্বাভাবিক ৷ বেলাল
মুহাম্মদ তার বইয়ে লিখেছেন
-
স্বনামধন্য বেলাল মোহাম্মদ। তাঁর ঐতিহাসিক গ্রন্থ ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্ধৃতি দিচ্ছি:
ক. অফিস কক্ষে শুধু আমরা দু’জন।
আমি ও মেজর জিয়াউর রহমান। বলেছিলাম : আচ্ছা, মেজর সাহেব, আমরা তো সব ‘মাইনর’, আপনি ‘মেজর’ হিসেবে স্বকণ্ঠে কিছু প্রচার করলে কেমন হয়।
কথাটা ছিল নিতান্ত রসিকতা। তিনি নিয়েছিলেন গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব হিসেবে। সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলেন : হ্যাঁ। কিন্তু কি বলা যায়, বলুন তো।
আমি এক পাতা কাগজ এগিয়ে দিয়েছিলাম। তিনি নিজের পকেট থেকে কলম হাতে নিয়েছিলেন। প্রথমে তিনি লিখেছিলেন : ও, Major Zia do hereby
declare independence of Bangladesh .
আমি তখন বলেছিলাম : দেখুন, ‘বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে’ বলবেন কি?
তিনি বলেছিলেন : হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন।
নিজের নামের শেষে তীর-চিহ্ন দিয়ে লিখেছিলেন ; on behalf of
our national leader
Bangabandhu Sheik Mujibur
rahman …
খ. সেই সান্ধ্য অধিবেশনে মেজর জিয়াউর রহমানের স্বকণ্ঠে ঘোষণার পর অনুবাদটিও অন্যদের কণ্ঠে
বার বার প্রচার হয়েছিল।
ঘোষণাটি প্রধানত আমার সঙ্গে আলোচনা করে রচিত এবং ক্যাপ্টেন অলি আহমদের উপস্থিতিতে। আর বাংলায় অনুবাদের সময় আমাকে সহায়তা করেছিলেন অধ্যাপক মমতাজ উদ্্দীন আহমদ।
ঘোষণার মর্মবাণী ছিল, মেজর জিয়া মহান জাতীয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছেন। বাংলাদেশের সর্বত্র দখলদার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছে। তাদের সম্পূর্ণরূপে দমন করতে আমাদের একদিন বা দু’দিনের বেশি সময় লাগবে না। এখন দেশ-বিদেশের কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র সাহায্য পাওয়া আমাদের প্রয়োজন ইত্যাদি।
আজকের অধিবেশনে আবুল কাসেম সন্দ্বীপ সংবাদ বুলেটিন রচনা করে আমাকে দেখিয়ে নিয়ে স্বকণ্ঠে প্রচার করেছিলেন। সংবাদ বুলেটিনে মেজর জিয়াউর রহমানের ঘোষণাকে ‘বিবৃতি’ বলে কভারেজ দেয়া হয়েছিল।
প্রক্ষেপণের দায়িত্বে ছিলেন আমিনুর রহমান ও আবদুশ শুকুর। মোহরা গ্রামের সেকান্দর হায়াত খান ও হারুণ-অর-রশীদ খান দুই ভাই আমাদের সহযোগিতায় নিয়োজিত হয়েছিলেন।
গ. মেজর জিয়াউর রহমানের ঘোষণার ইংরেজী পাণ্ডুলিপিটি আমার পকেটে ছিল।
বাসায় ফেরার পর ডাক্তার মোহাম্মদ শফীকে দেখতে দিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন : এসব কাগজ
রাখতে নেই। প্রচার করা হয়ে গেছে। প্রয়োজন মিটে গেছে।
বলেই তিনি খণ্ড কাগজটি চুলার আগুনে ফেলে দিয়েছিলেন।
১৯৭৫ সালের বিজয় দিবসের দু’একদিন আগের কথা। ক্ষমতাসীন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান সরাসরি আমার সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেছিলেন। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে।
: আপনি বেলাল বলছেন?
: জি।
: চট্টগ্রামের বেলাল তো?
: জি। আমাকে কি আপনার মনে আছে?
: মনে না থাকলে কথা বলছি কেন?
আপনার কি মনে আছে, আমি কি কলম দিয়ে ২৭ মার্চের ঘোষণাটি লিখেছিলাম?
: কলমটা আপনার নিজের পকেট থেকেই নিয়েছিলেন। সেটা কি কলম ছিল, মনে নেই।
একই দিনে আন্তঃসার্ভিস জনসংযোগের পরিচালক টেলিফোনে আমাকে মেজর জিয়াউর রহমানের ঘোষণার খসড়াটির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলেন।
অনুযোগ দিয়েছিলেন, সেটা কেন নষ্ট করা হলো! জবাবে আমি কড়া কথা শুনিয়ে দিয়েছিলাম। পরে তিনি অনুরোধ করেছিলেন, স্মৃতি থেকে উদ্ধার করে যেন তাঁকে জানাই। স্বয়ং জেনারেল এ বিষয়ে আগ্রহী।
এক ঘণ্টার ব্যবধানে টেলিফোনে জানিয়ে দিয়েছিলাম। সেই প্রসঙ্গে দাবি করেছিলাম, আমার স্মৃতিচারণায় ভাষা ও শব্দগত বিভ্রম ঘটলেও, বক্তব্য অবিকৃতই রয়েছে।
(অনুপম প্রকাশনীর ৪র্থ মুদ্রণ থেকে)
এই লেখার
সূত্র ধরে এটা
বলা যায় যে
ঐ ঐতিহাসিক এবং
জেনারেল জিয়ার নিজের
হাতের লেখা কাগজটি
অক্ষত থাকলে বাংলাদেশের
স্বাধীনতা ঘোষণার তারিখটির
বির্তক সৃষ্টি করার
সুযোগ থাকতো না ৷
কারণ
বেলাল মোহাম্মদের নেতৃত্বে কালুরঘাট থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও চালু করা হয় ২৭ মার্চ, ১৯৭১।
তবে ২৬ মার্চ ১৯৭১ আগ্রাবাদে অবস্থিত
চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হান্নান সাহেব স্বকণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার কথা বলেছিলেন
৷
কিন্তু জিয়া ২৬ মার্চ দৃশ্যপটে মোটেই ছিলেন না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও আছেন তা দেশবাসীকে জানানোর জন্য একজন সেনা কর্মকর্তার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল।
তখন , সিনিয়র সেনা অফিসার হিসেবে মেজর জিয়া চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন, তাই চিটাগাং
এরিয়াতে অনেক আগ
থেকে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের
পরিকল্পনায় এবং সরাসরি
মেজর জিয়ার আগেই যুদ্ধে
লিপ্ত হয়ে পড়া ক্যাপ্টেন রফিকের চাইতে মেজর জিয়ার ঘোষণার গুরুত্ব চলে আসে দৃশ্যপটে ।আর
বেলাল মোমাম্মদের লেখা
থেকে জানা গেল জেনারেল জিয়া তো নিজেই ২৭ মার্চ তারিখের তার পড়া ঘোষণাই খুঁজছিলেন।
তাই ওটা থাকা দরকার ছিল, তাহলে তার ঘোষণার একটি লিখিত রূপ কাগজে প্রকাশিত হতো এবং তাঁর অনুসারীরা মেজর জিয়া
কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার
তারিখ ২৭
থেকে ২৬, এবং পরে ২৬
থেকে ২৫ তারিখে এগিয়ে এনে জিয়াকে তেলের ড্রামে দাঁড় করাতে পারতেন না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন