অদ্ভুত আঁধারেপথ দেখিয়েছে জীবন     জীবন বাঁচাতে সে এগিয়ে এসেছে।
                   
          বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আজ আমাদের জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে, এগুলোকে বাদ দিয়ে চলা কোনক্রমেই সম্ভব না। তারপরও বিজ্ঞানকে অস্বীকার করার প্রবণতা বাড়ছে। বিজ্ঞানের কাজ হচ্ছে সত্যকে বের করে আনা, সেটাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে যখন কোন সত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হয় তখন সেটাকে অস্বীকার বা অবিশ্বাস করা মূর্খতার পরিচায়ক। বিজ্ঞানে অবিশ্বাসীরা নিজেদের মূর্খ হিসেবেই বার বার প্রমাণিত করে চলেছে। সূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফি  ( অনুবাদ  করেছেন  এনামূল  হক )                       

                 মানুষের  আচরণের   নিষ্ঠুরতা এসেছে তাদের পারিবারিক কালচার এবং শিক্ষার অভাব থেকে ৷ একজন মানুষ যখন অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক এবং সেইসঙ্গে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মালিক হয়ে  যায়  কোনো  উপলক্ষে  বা  কারো  স্বার্থ  সংরক্ষণ  করতে  , তখন সুশিক্ষাই তাঁকে সংবেদনশীল সঠিক পথে চলতে সাহায্য করে।



            যার শিক্ষার অভাব থাকে,  এবং  সেই  সঙ্গে  পারিবারিক  কোনো সংস্কৃতিক  বা  শিক্ষাদীক্ষার  কোনো পারিবারিক  ঐতিহ্য  থাকে না   তখন  সে   যে  কোনো  কিছুই   করতে পারে।



            বোমা-পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে মারতে পারে ৷  সে মানুষ খুন   করতে  পারে  নিজের ব্যক্তিগত   স্বার্থে  ৷ সে   বাস-ট্রেন-টেম্পোর যাত্রীই হোক না কেন  বা যানবাহনের চালক হোক না কেন  এমনকি   কর্মক্ষেত্রে গমনকারী শ্রমজীবী-কর্মজীবীই  নারীই   হোক না কেন  এতে  তার  কিছু  আসে  যায়  না    হউক   না কেন  দেশের ও সমাজের     মাথা , এতে  তার  কিছু  আসে  যায়  না     তাই  বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষক  বা  বুদ্ধিজীবী  তার  কাছে  সাধারণ  থেকে  আলাদা  গণ্য  হয় না    তখন  অনায়াসে ঐ  গুষ্ঠী  রাষ্ট্রক্ষমতা  ধরে  রাখতে  চব্বিশ শে  আগষ্টের  মত  ঘটনা  ঘটাতে  পারে    তেমনি  ডঃ  হুমায়ুন  আজাদ  বা ডঃ  অভিজিৎ  রায়কে  হত্যা  করতে  পারে     আর  বর্তমান  বাংলাদেশে  এদের  সমর্থনকারীর  সংখ্যা  কম  নয় 




                      বাঙালীর ইতিহাস  ও মনোজগতের চিন্তা  চেতনা     বিশ্লেষণে  দেখা  যায়  গত  ১০  বছরে  বাঙালীর  মনোজগতের  বা  চিন্তা-চেতনায়  তেমন  কোনো  পরিবর্তন  আসে  নি    প্রকৃতিক  বিবর্তন    বোধহয়  এক্ষেত্রে  তেমন কোনো প্রভাব  রাখতে  পারেনি !  না  হয়  শতবছরের  আগের  কবির  কল্পনা    বাস্তব  উপলব্দী  আজকেও  সত্য  হয়  কীভাবে ? একাত্তর  সালের  মুক্তিযুদ্ধ    বাঙালী  জাতির  স্বাধীনতা  অর্জন    গত  তেতল্লিশ   বছরেই  ব্যর্থতায়  পর্যবেশিত  হয়ে  যাচ্ছে ! 

    তাই  প্রায়  শতবছরের  আগের  কবির  কথার  বাস্তবতা  এখনও  কেমনে  সত্য  হয় ?

অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে পৃথিবীতে আজ,

 যারা অন্ধ, সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা;

 যাদের হৃদয়ে কোন প্রেম নেই-প্রীতি নেই-করুণার আলোড়ন নেই

 পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।

 যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি,

 এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয়

 মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
 শকুন শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।

 জীবনানন্দ দাশের এই কবিতার প্রতিটি কথা আজকের বাংলাদেশের এই সময়, দেশের সুশীল সমাজ এবং শকুন শেয়ালের হাতে অভিজিতের মতো মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে কতই না সাযুজ্যপূর্ণ  ৷ এক  এক  করে  সমাজের  অবশিষ্ট  মুক্ত  চিন্তার  মানুষের  এই  একই  পরিণতি  এখন  শুধু  সময়ের  ব্যাপার  নয়  কী  ? এর  পরে ও মুক্তচিন্তার  মানুষেরা  সমাজের  অন্ধবিশ্বাসকে দূরভূত  করতে  এগিয়ে  চলেছে   

     এ  প্রসঙ্গে কলাম  লেখক  মিলু  মিলু  শামস্  এর  একটি  পর্যবেক্ষণের  উল্লেখ  করা  হলো  ৷ এ  থেকে  বাংলাদেশের  পেছনে  চলে  যাওয়ার  কারণ  সহজেই  অনুমান  করা  সম্ভব ৷ 

        শিক্ষা সমাজ বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। সমাজের লক্ষ্যের সঙ্গে এর লক্ষ্য জড়িত। সামন্তবাদী সমাজে শিক্ষার যে প্রয়োজন, পুঁজিবাদী সমাজের প্রয়োজন তা থেকে আলাদা। সামন্ততান্ত্রিক সমাজের চাহিদা মেনে এক সময় অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম হয়েছিল ধর্মচর্চার কেন্দ্র হিসেবে। কিন্তু যখনই সমাজে বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে, সমাজ বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সেক্যুলার মননচর্চার পরিসর তৈরি হয়েছে, ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধর্মচর্চার কেন্দ্র হিসেবে নিজেদের পরিচয় ঘুচিয়ে সেক্যুলার মননচর্চার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

     আজকের দিনে কারও পক্ষে কি কল্পনা করা সম্ভব অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম হয়েছিল নির্ভেজাল ধর্মচর্চার জন্য?

    অথচ এ দেশের কওমী মাদ্রাসাগুলো সামন্ততান্ত্রিক সমাজে যেমন ছিল আজও তেমনই আছে। সময়ের পরিবর্তনের কোন ছাপ এতে পড়েনি। পড়তে দেয়ার উদ্যোগও সেভাবে নেয়া হয়নি। বড় রাজনৈতিক দলগুলো এসব মাদ্রাসাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে নিজেদের ভোটব্যাংক হিসেবে রিজার্ভ রেখেছে।

       সভ্য দুনিয়ার আলো-বাতাসহীন ওই বদ্ধ কুয়া যদি এখন জঙ্গীবাদের ঘাঁটি হয় তাহলে কাকে দোষ দেয়া যাবে? ভেবে দেখার সময় এসেছে।
সমাজের প্রবণতাই নির্ধারণ করে শিক্ষার স্বরূপ। শুধু মাদ্রাসা শিক্ষা নয়, সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায়ও বাংলাদেশের এখনকার সামাজিক প্রবণতার চিত্র ফুটে ওঠে।

       

      আমরা কিন্তু হারতে আসিনি। চূড়ান্ত লড়াইয়ে আমরাই জিতব। শামসুর রাহমানের কবিতার মতো-
‘আকাশের নীলিমা এখনো


হয়নি ফেরারি, শুদ্ধাচারী গাছপালা
আজও সবুজের
পতাকা ওড়ায়, ভরা নদী
কোমর বাঁকায় তন্বী বেদিনীর মতো।
এ পবিত্র মাটি ছেড়ে কখনো কোথাও
পরাজিত সৈনিকের মতো
সুধাংশু যাবে না।’


মন্তব্যসমূহ