২১শে ফেব্রুয়ারী /১৫ থেকে কী বাংলাদেশের বাঙালীরা দুই ধারায় ফাইনেলী বিভক্ত হয়ে পড়লো ??



            দেশের বর্তমান বিরূপ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে গেলেন না সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

ভাষা শহীদদের জন্য বিশেষ মোনাজাতে খালেদা  :

             ভাষা আন্দোলন আমাদের গর্বের, অন্যায়কে না মেনে নেয়ার, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত্তি স্থাপন করে দেয়ার একটা সোপান। আর সেই আন্দোলনের সময় যারা জীবন দিয়ে আমাদের মায়ের ভাষাকে সারা পৃথিবীর কাছে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, সেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিএনপি নেত্রী শহীদ মিনারে গেলেন না।  -


                                আজ  ২১শ  ফেব্রুয়ারী   থেকে  বাংলাদেশের  বাঙালী  জাতি  কী  তাদের অতীতের  আবহাওয়মান  কৃষ্টি ও সংস্কূতি  এবং  চিন্তা ও  চেতনায়  রাজনৈতিকভাবে  বিভক্ত  হয়ে  গেল  ?

                 আজ  ২১শে  ফেব্রয়ারী / ১৫  থেকে  বাংলাদেশের  রাজনীতিতে  স্পষ্ট  ভাবে  প্রমাণিত  হয়ে  গেল যে ,  বর্তমানে  বাংলাদেশের  আদর্শ  এবং  সাংস্কৃতিক  ধারা  দু’টু আলাদা  ধারার  বিভক্তি  সম্পূর্ণ  হয়ে  গেছে ৷

          যে  ধারাটিকে  পূর্বে  বিএনপির    অনেকেই  মেনে  নিতে  দ্বিধান্তিত  ছিলেন  ৷  কারণ অনেকে  সবকিছু  জেনে  শুনেতো  আর বিএনপি  নামক  জাতিয়তাবাদী  রাজনৈতিক  দলের ঐ   রাজনীতিতে  যোগ  দেন  নাই  ৷  বাংলাদেশের  বর্তমান  বিরাজিত   এই দু’টু রাজনৈতিক  ধারা  এর  একটি  ধারা  ১৯৭১ সালের  স্বাধীনতা  ও  মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের  জনগণের  মনে  লালিত  অসম্প্রদায়িক রাজনৈতিক  এবং  ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক  চেতনার  ধারা , যাকে  ধারণ  করতে  পারার  জন্যেই ৭১-এ  মুক্তিযুদ্ধ  সংঘটিত করা  সম্ভব  হয়েছিলো  ৷  এর  পূর্বেই  অবশ্য  আওয়ামী  লীগ  তাদের  দলের  নাম  থেকে  মুসলিম  শব্দটি  বাদ  দিয়ে  ফেলেছিলো  ৷আর  তখন  মুসলিম লীগ  ও  এত  ধর্মীয়  ও  সাম্প্রদায়িক  দল  ছিল  না  ভিতরে  ভিতরে  ৷  যা  ছিল  তার  অনেকটি  ছিল  তাদের  রাজনীতির  অংশ  মাত্র  ৷  তখন  ধর্মীয়  রাজনীতিও  বর্তমানের  এত  শক্তিশালী  ছিল  না  ৷  কারণ  তখন  তাদের  অর্থের  এত  যোগানদাতা  ছিল  না  ৷এত  মাদ্রাসা  ও  ধর্মীয়  প্রতিষ্ঠানের  সৃষ্টি  করা  হয়  নি  ৷  যেমন  বাংলাদেশের  স্বাধীনতার  পরে  পরিকল্পিতভাবে  সৃষ্টি  করা  হয়েছে  পাকিস্তান  ও  আরব  বিশ্বের  অর্থে  ৷

     অন্য  ধারাটি  ছিল বাঙালী  কৃষ্টি  ও  সংস্কৃতি  থেকে  সম্পূর্ণ  ভিন্ন একটি  ধারা  ও  আলাদা  এক  চিন্তা ও  শুধু  অমানবীক একটি   ধর্মীয়  চেতনা  ৷  প্রথমে   এই  অঞ্চলে    এই   ধারাটির  জন্ম  হয়ছিল পাকিস্তানী  দ্বীজাতিতত্তের  ধারনার  উপর  ভিত্তি  করে  ৷যা  পরে  এক  বিরাট  সম্প্রদায়িকতার  রূপ  নিয়ে  এক  দানবে  পরিণত  হয়েছিল , 

মুক্তিযুদ্ধ  চলাকালিন  সময়েও  এর  অস্থিত্ব  বিদ্যমান  ছিল  ৷  তবে  সংখ্যায়  কম  ছিল  ৷  ঐ  গুষ্ঠীটিই   ৭১-এ  বাংলা  দেশের   মুক্তি  যুদ্ধ  চলাকালিন  সময়ে  রাজাকার  , আলবদর  , আল-শামস  ইত্যাদি  সৃষ্টি  করেছিল    এবং  এগুলোতে   যোগদান  করে     পাকবাহিনীক  সহায়তা  করেছে  ৷  এবং  মুক্তিযুদ্ধের  পক্ষের  হিন্দু  সম্প্রদায়ের  প্রায়   ৩০  লাখ  মানুষ  হত্যা  করেছে  ৷
      
                  স্বাধীনতার  পর  এই চিন্তা ধারার  লোকদের  গোপনে  সংঘটিত  করা  আরম্ভ  হয়  বিভিন্ন  ছত্রছায়ায় ৷        এবং  এটা  সম্পূর্ণের  পর  ৭৫-এর  ১৫ই  আগষ্ট  দেশের  রাষ্ট্রপতিকে  হত্যাকরে  রাষ্ট্রক্ষমতা  দখল  করা  হয়  ৷

               এতদিন  থেকে   এই ৭৫  সালের  পরে  সৃষ্ট  এই চিন্তা   ধারার  পক্ষে  বিভিন্ন  কার্যক্রম  গ্রহণ  করা  করা  হচ্ছিল  গোপনে ৷ কিত্তু  একটি  ব্যালেন্সিং এর  প্রয়োজনে  এতদিন  কিছু  বামধারার  নেতাদের  বাহ্যিকভাবে বিএনপির  নেতৃত্বে  রাথা  হয়েছিল  ৷ এই  ধারার  প্রয়োজনীয়তা এখন   তারেক  জিয়া সিনিয়র  ভাইসপ্রেসিডেন্ট  হওয়ার  পর  শেষ  হয়ে     গেছে  বলে  অনুমিত  হচ্ছে  ৷ 

       আর  মান্নান  ভূঁইয়ার মৃত্যুর  পর  তাকে  কবরে  প্ররণের  আগেই   খালেদা  জিয়া  তাকে  ধর্মহীন  কমুনিষ্ট  আখ্যাদিয়ে  এই  তথাকথিত  বাম  ধারার  কবর ও সম্পূর্ণ  করে  ফেলেছিলেন  ৷  তবে  লোক  দেখানো  কিছু  কার্যক্রম  এর  পরেও  চালিয়ে  যাওয়া  হচ্ছিল  ৷  বোধহয়    জনমতকে  বিভ্রান্ত  করতে  ৷   ৷   এখন  তারেক  জিয়া  ও  জামায়াত  পন্থীদর  কাছে বিএনপির  সম্পূর্ণ  নেতৃত্ব  চলে  গছে  ৷  তাই  এখন  আর  দলের  সিনিয়র  নেতাদের  ও  গুরুত্ব  দেয়া  হচ্ছে  না    ৷ এখন  দলের  এবং  জোটের  বর্তমান  সন্ত্রাসী  কার্যক্রম  তীর্ণমূল  পর্যায়ের  জামায়াত  বিএনপি  নেতা  বা  কর্মীদের  দ্বারা  পরিচালিত  হচ্ছে    ৷   তাই  এখন   পূর্বের  এই  সব  লোক দেখানো  কার্যক্রমের  প্রয়োজনও  শেষ  হয়ে  গেছে  বলে  মনে  করা  হচ্ছে  ৷অন্ততঃ  বর্তমান  মূল  নেতা  তারেক  জিয়া  তাই  মনে  করেন  বলে  সংশ্লিষ্টরা  ধারণা  করছেন  ৷

               তাই  বর্তমান  ধারাবাহিক  সস্ত্রাসী  আন্দোলনের  উছিল্লায় শহীদ  মিনারে  যাওয়া  থেকে  বিরত  থেকে  খালদা  জিয়া  ফাইনেলী  প্রমাণকরে  দিলেন  যে  বাংলাদেশের  মানুষের  একাঅংশকে  তিনি  পাকিস্তানী  দ্বীজাতিতত্তের মূল   আদর্শে  দেশ  স্বাধীন  হওয়ার  মাত্র  ৪৩ বছরের  মধ্যেই  ফিরিয়ে  নিতে  সক্ষম  হয়েছেন  ৷

      তাই  বাংলাদেশের  এইসব তথাকথিত   আনুষ্ঠানিকতা     এখন  আর  তার  কাছে  কোনো   মূল্য  নেই  ৷  আর   তার  এই  সব  অনুষ্ঠানে   অংশগ্রহণের  ও  প্রয়োজন  নেই এখন  আর  ৷      জামায়াতের  মত  বা  অন্য  ধর্মীয়  সংঘটনের  মত   তিনিও  এখন  আর  এসবে  বিশ্বাস  করেন  না  এটা   প্রমাণ  করতে  এই  উচ্ছিলার   আশ্রয়  তাকে  নিতে  হয়েছে ৷  ৷এতে নিশ্চয়   তারেক  জিয়ার  ও  সমর্থন  এবং  নির্দেশনাও  ছিল ? এতে  করে  একটি  স্পষ্ট  সিগন্যাল  ও     দেশে  ও  বিদেশে  অবস্থানরত  এইচিন্তাধারার   লোকদের  কাছে  পৌছে  যাবে  ৷ইসলামিক  ষ্টেট  বা  আই এস  জঙ্গীরা  এতে  খুশী  হয়ে  তাদের  সহযোগীতার  হাত  বাড়েয়ে  দিবে  , অর্থাৎ  এক  ডিলে  অনেক  কাজ  সম্পূর্ণ  হয়ে  গেল  ৷

           বাংলাদেশের  আবহয়ামান থেকে  চলমান এইসব কৃষ্টি  ও  সংস্কৃতীতে  তার  কোনো  আগ্রহ  নেই , নেই  কোনো  বিশ্বাস  ৷  এর  একটি  কারণ  হিসেবে  সংশ্লিষ্টরা  বলেন  খালেদাজিয়ার  জন্ম  হয়েছিল  ব্রিটিস  কালচারের  পরিবেশে  আর  তারেক  জিয়ার  জন্ম  হয়েছে  পাকিস্তানী  কালচারের  আওতায়     ৷  তাই  বাঙালী  কৃষ্টি ও  সংস্কৃতি এবং  বাংলাদেশের  স্বাধীনতার  চেতনা   তাদের  চিন্তা ও  চেতনার    তেমনভাবে  প্রবেশ  করতে  পারেনি  ৷ তাদের  মনে  এই  শিকড়  তৈরি  হতে  পারে  নি  ৷  তাই  তাদের  কাছে  বাঙালীদের  আদর্শের  কোনো  মূল্য  নেই  ৷  তাই  তারা  আরো  ত্রিশ  লাখ  মানুষের  জান  মালের  বিনিময়েও  রাষ্ট্র  ক্ষমতা  দখলে  পিছপাঁ  হবেনা  তারা ৷  অর্থাৎ  তোমরা  যে  যা  বল  ভাই ,  আমার  রাষ্ট্রক্ষমতা  চাই  ৷,যে  কোনো  কিছুর  বিনিময়ে  হলেও   , এতে  দেশের  স্বাধীনতা  বা  সার্বভৌমত্তের  বিনিময়ে  বা  পাকিস্তানের  সঙ্গে  কনফেডারেশ  করতে  হলে  তাদের  আপত্তি  নেই  ৷

               আসলে উনিশ  পচচত্তর  সালের পর  বাঙালী  মুসলমনাদের  মনোজগতে যে অপরাধপ্রবণতা আধিপত্য বিস্তার করে আসছে তার প্রভাব যে কত ব্যাপক এখন তা বোঝা যাচ্ছে। প্রশাসন, মিডিয়া, ব্যবসা, রাজনীতি, এনজিও, ‘সুশীল’দের একটা বড় অংশ এই প্রবণতায় আক্রান্ত। সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকে বিষয়টি অনুভব করতে পারেন না। যে কারণে দেখি সন্ত্রাসকেও আন্দোলন বলেন, বুদ্ধিজীবীদের একাংশ, মিডিয়া, মধ্যবিত্ত কেউ-ই এই প্রভাব থেকে মুক্ত নন।


            বাংলাদেশ-পাকিস্তানের দ্বন্দ্বটি এখন শেষ পর্যায়ে। হয়ত ক্রিমিনাল পাকিস্তানীরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করবে না,পচ্চাত্তর-এর বিজয়ী বাঙালীরা  ও আধিপত্য বিস্তার করতে  থাকবে। যাঁরা ভাবছেন অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহার করলে সব আগের  মত  ঠিকঠাক হয়ে যাবে তাঁরা অলীক স্বর্গে বাস করেছেন। জঙ্গী মৌলবাদী ও সন্ত্রাসীরা যখন বোতলমুক্ত হয়ে যায় তখন তারা  তাদের  নিজ ইচ্ছায়-ই চলে, তাদের আবার দমন  করা খুবই  দুরূহ  ব্যাপার  । লাদেন মারা যাওয়ার  পর   সন্ত্রাস জঙ্গীবাদ বন্ধ হয়  নাই  ৷  হয়ত  স্বরূপ  এর  কিছু  পরিবর্তন  হয়েছে  ৷ ক্রিমিনাল রাজনীতিবিদরা যা শুরু করেছেন তা থেকে মুক্তি পেতে   জনগণের  তা  বুঝতে  আরো  অনেক  সময় লাগবে। নিজেদের ভাল চাইলে  আমাদের  উচিত হবে স্বাভাবিক জীবনযাপন চালিয়ে যাওয়া। তা হলেই ক্রিমিনাল রাজনীতিবিদরা আর রাজনীতি-সমাজ সংলগ্ন থাকবেন না।


         জামায়াতে ইসলামের অনেক নেতা নাকি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোকে ধর্ম সম্মত মনে করেন না। শুনেছি তারা নাকি এটা পছন্দও করেন না। তাহলে কি বিএনপি এখন জামায়াতকে অনুসরণ করা শুরু করলো!  জামায়াতের নেতারা তো বাংলাদেশের স্বাধীনতায়ও বিশ্বাস করতেন না, তাহলে কি বিএনপিও এখন সেই পথেই আছে! বাংলা ভাষা, সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা না জানিয়ে, শহীদ মিনারে না গিয়ে খালেদা জিয়া কি বার্তা তার নেতা-কর্মীদের দিলেন, তিনিই ভালো বলতে পারবেন।  -



         তাই  আজ  থেকে  বোধহয়  বাংলাদেশের  বাঙালীরা  রাজনৈতিকভাবে  এবং  তাদের  চিন্তা ও  চেতনায়  দ্বীখন্ডিত  হয়ে  গেল  ৷  অন্যদিকে এখন  থেকে  বাংলাদেশের  রাজনীতিতে  জামায়াতের  চিন্তা  ও  চেতনার  এবং  অন্যান্য  ধর্মীয়  ও  সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক  চিন্তা  ও  চেতনার  প্রধান্য  প্রতিষ্ঠা  বিএনপি  নামক  রাজনৈতিক  দল  ও  জোটের  মাধ্যমে  সম্পূর্ণ  হয়ে  গেল  !!


   
  

মন্তব্যসমূহ