বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের সাম্ভাব্য ও সাময়িক সমাধান প্রসঙ্গে :



             বাংলাদেশের  বর্তমান  রাজনৈতিক  সংকটের  সাম্ভাব্য  এবং  সাময়িক  সমাধান  হতে  পারে  কুরিয়ার  দৃষ্টান্ত  অনুকরণে  !


                  
               

     বাংলাদেশের  বর্তমান  রাজনৈতিক  পেক্ষাপট  এবং  বাঙালী  জাতীর  মনোজগত এবং বাঙালীদের  পূর্বের  ঐতিহাসিক  পেক্ষাপট  বিশ্লেষণ  করলে  এইটি  স্পষ্ট  হয়ে  যায়  যে  আসলে  বাঙালী  একটি  বিভক্ত  জাতীগোষ্ঠী  ৷  ব্রিটিশ  ভারতে ব্রিটিশরা  হিন্দু  মুসলমানদের  মনোজগতে  যে  বিভাজনের  সৃষ্টি  তৈরি   করেছিল  তারই  ধারাবাহিকতা  বাংলাদেশের হিন্দু -  মুসলমানরা  এখনও  বয়ে  চলেছেন  ৷  ১৯৭১  সালে  সব  বাঙলী  মুসলমান  কিত্তু  একটি  অসাম্প্রদায়িক  এবং  ধর্মনিরপেক্ষ  স্বাধীন বাংলাদেশ  নামক   রাষ্ট্রের  প্রতিষ্ঠা  মেনে  নিতে  মানুসিকভাবে  প্রস্তুত  ছিলেন  না  বলেই  এখন  প্রতিয়মান  হচ্ছে  ৷  এরই  ধারাবাহিকতা  বাংলাদেশের  রাজনীতিতে একটি  বিভাজন গত  প্রায়  ৪০  বছর  থেকে  চলছে  ৷ 

                তারই  ধারাবাহিকতায়    বর্তমান  বাংলাদেশের  রাজনীতিতে  দু’টি  ধারা  এখন  স্পষ্ট  হয়ে  উঠেছে  ৷এর  একটি  অসাম্প্রদায়িক  ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক  ধারা  এবং  একটি  ধর্মীয়  এবং  সামম্প্রদায়িক রাজনৈতিক     ধারা  ৷ 

                 দেশের  জোটভূক্ত  রাজনৈতিক  দলগুলোও  এই  দুই  ধারার  সমর্থনকারীদের  সমর্থন  পেয়ে  থাকেন  ৷  তাই বৃহৎ  রাজনৈতিক দলগুলো  পরস্পর  পরস্পরের  বিরোধ্যে  প্রকাশ্যে   অবস্থান  নিতে  বাধ্য  হচ্ছেন    ৷ অবশ্য  এটা  তারা  তাদের  রাজনৈতিক  হিসেব  নিকেশ    ভোটের  রাজনীতির  স্বার্থেই  করে  থাকেন    ৷  বাংলাদেশের  রাজনৈতিক  দলগুলোর  নেতারা  ব্যক্তিগত  ভাবে  সাম্প্রদায়িক  বা  অসাম্প্রদায়িক  রাজনীতির  অনেক  কিছুই  বিশ্বাস  করেন  না  ৷ তাদের  ধর্ম  বিশ্বাস  নিয়ে  অনেকেে  প্রশ্ন  তোলেন !  আর   তা  তাদের  সামাজিক  চালচলন   ছেলেমেয়েদের  লেখাপড়ার  বিষয়  এবং  তাদের  সামাজিক  অবস্থান  দেখে  বুঝা  যায়  ৷  কিন্তু  ভোটের  রাজনীতি  এবং  দলের  অবস্থানের  জন্যে  তারা   দলের সব  সিন্ধান্ত    মেনে  চলতে  বাধ্য  থাকেন         ৷  তাই   বোধহয়   বড়  দুই  জোটভূক্ত  রাজনৈতিক  দলগুলো  পরস্পরের  বিপরিতমূখি  অবস্থান  নিতে  বাধ্য্  হন    ৷  আর  এখনতো  তাদের  একে  অন্যের  প্রতি  নুন্যতম  শ্রদ্ধাবোধও বর্তমানে  অবশিষ্ট   নেই  ৷

         বৃহত্তরভাবে  বিচার  করলে  বলা  যায়  এখন  পর্যন্ত  ক্ষমতাশীন  আওয়ামী  লীগ  ৭১ এর  মুক্তিযুদ্ধের  পক্ষের  একটি  রাজনৈতিক  দল  ৷  অন্তত  যুদ্ধাপরাধীদের  বিচার  প্রক্রিয়া  আরম্ভ  করে  আওয়ামী  লীগ  তাই  প্রমান  করতে  চাচ্ছে  ৷

         যদিও  বর্তমান  আওয়ামী  লীগ  ৭১-এর  আওয়ামী  লীগ  থেকে  সম্পূর্ণরূপে  ভিন্ন  অবস্থান  নিয়েছে  বা  ভোটের  রাজনীতির  করণে  নিতে  বাধ্য  হয়েছে  ৷ 

          অন্যদিকে  মুক্তিযুদ্ধের  পক্ষের  এবং  অরাজনৈতিক  ব্যক্তরা  যারা  অসাম্প্রদায়িকতা  ও  ধর্মনিরপেক্ষ  রাজনীতিতে  বিশ্বাস  করেন  তারাও  অনেকটা  বাধ্য  হয়ে  এবং  নাই  মামা  থেকে  কানা  মামাই  ভাল  মনে  করে  বর্তমান  আদর্শহীন এবং  মুক্তিযুদ্ধের  চেতনাবিহীন   আওয়ামী  লীগকেই  সমর্থন  করেন  ৷

              তাদের  বিশ্বাস  এই  মূহর্তে মুক্তিযুদ্ধের  ধারা  এবং  মুক্তিযুদ্ধের  অবশিষ্ট  চেতনাটুকু  একমাত্র  আওয়ামী  লীগই  রক্ষা  করতে  পারে  ৷ না  হয়  বর্তমান  বাংলাদেশ  পাকিস্তানি  ধারার  একটি  মৌলবাদী  জঙ্গীরাষ্ট্র  রূপান্তরিত  হয়ে  যাবে  যদি  রাষ্ট্রক্ষমতা  কোনো  ভাবে  পুনরায়  বি এন পি  এবং  তাদের  জোটভূক্ত  জামাত সহ  অন্য  রাজনৈতিক  দলের  হাতে  চলে  যায়  ৷
               তখন  বাংলাদেশ  একটি  মিনি  পাকিস্তান  তথা  মুসলিম  বাংলায়  রূপান্তরিত  হয়ে  যাবে  ৷

               বাংলাদেশে  বর্তমানে  অন্য আর  এক  ধারার  রাজনীতির  ধারক  ও  বাহক  হচ্ছে  বি এন পি  নামক  রাজনৈতিক  দল  সহ  তাদের  জোটভূক্ত  জামাত  সহ  অন্য  সাম্প্রদায়িক  ও  ধর্মে  বিশ্বাসী   রাজনৈতিক  দলগুলো  ৷

          প্রথমে  বি এন পি এর  জন্ম  হয়েছিল  ৭৫  সালে  বাংলাদেশের  স্থাপতি  বঙ্গবন্ধু  শেখ  মজিবুর  রহমানকে  হত্যার  পরে  প্রেসিডেন্ট  জিয়ায়ুর  রহমানের  হাত  ধরে  ৷ 

      তখন  আওয়ামী  লীগকে  অপসন্দকারী  কিছু  মুক্তিযুদ্ধা  সহ  বামপন্থি  হিসেবে  পরিচিত  কিছু  রাজনৈতিক  নেতা  এবং  দলছূট  আরো  কিছু  রাজনৈতিক  নেতা  ও  কিছু  অরাজনৈতিক  ব্যক্তির  সমন্নয়ে  এই  দলটি   গঠিত  হয়েছিল  ৷ তখন  দলটি  বর্তমানের  মত  সাম্প্রদায়িক ও  মৌলবাদী  দৃষ্টিভঙ্গীর  প্রতীক  হিসেবে  চিহ্নিত  ছিল  না  ৷  এই  দলটিকে  তখন  একটি  বহুমতের এবং  ভিন্ন  ধর্মী  রাজনৈতিক  দল  হিসেবে  পরিচিত  করে  তোলা             হচ্ছিল ৷ 

              কিত্তু  প্রেসিডেন্ট  জিয়াকে  হত্যা  করে বা  হত্যায়   সহায়তা  কররেে   দলটি  নেতৃত্ব  দলের  সাম্প্রদায়িক এবং  পাকিস্তান পন্থি   ডানপন্থিরা  গ্রহণ  করেন  ৷  

          এর  ফলে  দলটির  রাজনৈতিক  চরিত্রের  পরিবর্তন  ও  আরম্ভ  হয়ে  যায়  ৷ দেশের  সাধারণ  জনগণের  অনেক  আন্দোলনের পর  মুক্তি  যুদ্ধের  পক্ষকে  কুটনৈতিক  প্রচেষ্টায়  এবং  সামরিক  বাহিনীকে  কাজে  লাগিয়ে   এই  ধারাকে  সাময়িকভাবে  হঠিয়ে  দিয়ে      ৯২ সালের   নির্বাচনে   বি এন পি  রাষ্ট্র  ক্ষমতায়  অধিষ্ঠিত  হয় ৷   আর  এই  সময়  থেকেই  বিএনপি ও  সমমনারা   মুক্তিযুদ্ধের  ইতিহাস  বিকৃত  করে  একটি  নতুন  রাষ্ট্রীয়  ইমেজের  প্রতিষ্ঠার  চেষ্টা  আরম্ভ  করে ৷ যাকে  সংশ্লিষ্টরা  তখন তাদের  কল্পিত  এই  নতুন  দেশটির এর  নাম  দিয়েছিলেন  মুসলিম  বাংলা বা    পাকিস্তানের  নতুন  পূর্বাঞ্চলীয়   সংস্করণ  ৷ 

       পরের  টার্মে     ভোট  জালিয়াতি  সহ  নানাবিধ  চেষটা  করেও   ২য়  টার্মে  ক্ষমতায়  আসতে  বর্থ  হয়  তখনকার  বিএনপি   জোট   ৷   তাই  পুনরায়    ক্ষমতায় ফিরে   আসতে   এবং   ক্ষমতায়   ঠিকে  থাকতে  জামাতকে  রাষ্ট্র  ক্ষমতার  অংশীদার  করার   সিন্ধান্ত  নিতে   জামাতকে  বিএনপি   জোটের  অন্তর্ভূক্ত  করা           হয়   ৷ফলে  পরের  টার্মে  বিএনপি  জোট  রাষ্ট্র   ক্ষমাতা   দখলে   সক্ষম  হয়  এবং   ক্ষমতায়   ঠিকে  থাকতে নানাবিধ  দূর্নীতির  জন্ম  দেয়া   হয় এবং   জামাতকে   রাষ্ট্রপরিচালনার     অংশীদার   করে  রাজাকার  ও  আলবদর  নেতাদের  মন্ত্রী  করা  হয়  ৷ এতে  জনমত  বি এন পি  বিপক্ষে  চলে  যায়  এবং পরবর্তী  নির্বাচনে  রাষ্ট্র  ক্ষমতায়  পূনরায়  আওয়ামী  লীগ    ফিরে     আসে  ৷ আর  আওয়ামী  লীগ  সরকার  এই  সুযোগে  যুদধাপরাধীর  বিচার  আরম্ভ  করে জনগণকে  তাদের  ভোেটের  আগে  দেয়া প্রতিশ্রুতি  রক্ষা  করার  উছিল্লায় এবং বিএনপিকে  কোোনঠাষা  করে  রাজনৈতিক  ফায়দা  নিতে  ৷

    বিএনপি  জোট        অনেক  আন্দোলন  করে  আওয়ামী  লীগকে  ক্ষমতা  থেকে  হঠাতে  ব্যর্থ  হয়  এবং  একপর্যায়ে  দলটি  সম্পূর্ণরূপে  জামাতের  আর্থিক  সহায়তা  সহ  প্রত্যক্ষ্য   নেতূত্ব  চলে  যায়  ৷

         পরে  শাসনতান্ত্রিক  ধারা  অব্যাহত  রাখতে  আওয়ামী  লীগ  পরের  টার্মের    নির্বাচনের  ব্যবস্থা               করে  ৷ বিএনপি  জোট  এই  নার্বচন  বয়কট  করে ৷ তখন  ক্ষমতাশীন  দল  পুনরায়  ক্ষমতায়  ঠিকে  যেতে  সক্ষম  হয়  ৷  এখন  বি এন পি  জোট  বর্তমান  সরকারকে  হঠাতে  সন্তাস  ও সহিংসতা  সহ  ব্যাপক  আন্দোলন  চালাচ্ছে  ৷  এতে  জণগনের  ভোগান্তি  বেড়েই  চলেছে  ৷  অন্যদিকে  এখনও  জণগনের  ব্যাপক  অংশ  গ্রহণ বিএনপি  জোটের   আন্দোলনে  দেখা  যাচ্ছে      না   আবার  ক্ষমতাশীনদের  পক্ষে  ও  অবস্থান  নিচ্ছে  না   ৷অন্যদিকে  ক্ষমতাশীনরও  কোনো  ছাড়  দিতে  রাজি  নয়  ৷বিএনপি  জামাতেও  ছাড়তে  পারছে  ৷তাই  জনগণ  বিএনপি  ক্ষমতায়  ফিরিয়ে  আনতে   একমত  হতে  পারছে  না  ৷  দলের  ক্যাডারটা  টাকার  বানিময়ে  আন্দোলন  কতদিন  চালাতে  সক্ষম  হবে  তা  বুঝা  যাচ্ছে  না  ৷  তাই  জনগণ  এখন  দ্বিধা-  বিভক্ত   হয়ে   পড়েছে   ৷৷  বিরোধীরা  আন্দোলনের  পাশাপাশি  কোনো  ৩য়  পক্ষ  এবং  আন্তর্জাতিক  বিশ্ব  মুরোব্বিদের  হস্তক্ষেপ  কামনায়  অপেক্ষারত  আছেন  বলে  শুনা        যাচ্ছে  ৷ 

       কিত্তু  জণমতের  বিভক্তি  বিশেষ  ভাবে  পরিলক্ষিত  হচ্ছে  ৷  এর সমাপ্তির  কোনো  লক্ষণ  দেখা  যাচ্ছে  না  ৷  আর  বিএনপি  কোনো  ভাবে  রাষ্ট্রীয়  ক্ষমতায়  যেতে  পারলেও  ইতিহাসের  পুনরাবিত্তি  ঘটবে  ৷  আওয়ামী  লীগ   সহ  তাদের  সমর্থনকারীরা  মৌলবাদী  ও  সাম্প্রদায়িক  রাষ্ট্র  মেনে  নিবে  না  ৷  তাই  আবার  সংগ্রাম  ও  আন্দোলন  আরম্ভ  হয়ে  যাবে  ৷  এর  থেকে  মুক্তির  একটি  পথের  সন্ধানের   আলোচনা  এখন  চাউর  হচ্ছে  একটি  সীমিত  পর্যায়ে  ৷

     অনেকে  এখন  কুরিয়ার  দৃষ্টান্ত  বাংলাদেশে  প্রযোগে  আগ্রহী  হয়ে  উঠছেন  ৷  এতে  নাকি  বিশ্ব  ও  আন্তর্জাতিক  মুরোব্বিদের  সহায়তা  থাকবে  ৷  বিষয়টি  হচ্ছে  একসময়ে  কুরিয়া  সমাজতন্ত্রী  ও  অসমাজতন্ত্রী  আদর্শে  বিভক্ত  হয়ে  পড়েছিল  ৷কোনো  পক্ষই  অন্য  পক্ষকে  মেনে  নিতে  চাচ্ছিল  না  ৷ তাই   একপর্যায়ে  বাধ্য  হয়ে  কুরিয়াকে  দুইভাগে   বিভক্ত  কুরিয়া  জনগণ  মেনে  নিয়েছিল  ৷  তাই  এর  সাময়িক  সমাধান  করা  হয়েছিস  কুরিয়াকে  দক্ষিন  ও  উত্তর  কুরিয়া  নামে  দুই  অংশে  বিভক্ত  করে  ৷ 

      মুক্তিযুদ্ধের  মাধ্যমে  অর্জিত  স্বাধীন  বাংলাদেশকেও  নাকি দেশের  একটি  অংশ  নিয়ে  বিশ্বমুরোব্বিরা  আওয়ামী  লীগ  সহ  তাদের  সমর্থনকারীদের  জন্য  একটি  ধর্ম  নিরপেক্ষ  অসাম্প্রদায়িক আলাদা রাষ্ট্র  গঠনে  আগ্রহী  হয়ে  উঠেছেন  ৷

         ঠিক  তেমনি  বিএনপি  সহ  তাদের  সমর্থনকারী ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক  এবং ধর্মীয় মৌলবাদীদেরকে  নিয়ে  আরএকটি  আলাদা  রাষ্ট্র  প্রতিষ্টা  করতে  আগ্রহী  ৷  এর  জন্য  অবশ্যই  আমাদের  প্রীয়  মাতৃভূমিকে  নতুন  ভাবে  দ্বি-খণ্ডিত  করতে  হবে  কুরিয়ার  মত  ৷  এটাই  নাকি  হবে  বাংলাদেশের  বর্তমান  সহিংসতা , সন্তাস  ও  আন্দোলনের  সমাপ্তির  একমাত্র সাময়িক  এবং  বর্তমান  সাম্ভাব্য   পথ  ৷ ( ইহা  একটি  কাল্পনিক  রাম্য  রচনা , কোরো  অনুভূতি  বা   আবেগে আঘাত  দিতে  এই  লেখাটি  রচিত  হয়  নি )

     এলেখাটির  সঙ্গে  প্রাসঙ্গিক  হওয়ায়  দৈনিক  জনকণ্ঠে  প্রকাশিত  মুনতাসির  মামুনের  একটি  লেখার  কিছু  অংশ  আগ্রহী  পাঠকদের  জন্যে  যুক্ত  করা  হলো ৷ ( সৌজন্যে  জনকণ্ঠ ) 

      

    মনে রাখা বাঞ্ছনীয় যে, পাকিস্তানী আদর্শ ভায়োলেন্স ও অর্থের সাহায্যে  ২০ বছরের মধ্যে বিত্তশালী একটি শ্রেণী সৃষ্টি করা হয়েছে যারা আবার রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং ভাবনার জগতে আধিপত্য সৃষ্টি করেছেএ কৌশল অসফল হয়েছে বলা যাবে না; কেননা নতুন জেনারেশনের একটি বড় অংশ বিভ্রান্তির রাজনীতি গ্রহণ করেছেআর মুক্তিযুদ্ধ এখন অতীতের বিষয়মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বড় দল আওয়ামী লীগ কখনও দূরদর্শী কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি, ভাবনার জগতে আধিপত্য বজায় রাখার চেষ্টা করেনি বরং আত্মপক্ষ সমর্থনে ব্যস্ত থেকেছে 
পাকিস্তানী আমল থেকে এখন ধর্মের জোর বেশিধর্মীয় পক্ষের যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁদের জীবনচর্চার সঙ্গে ইসলামী জীবনচর্চার কোন মিল নেই; কিন্তু তাদেরই ইসলামের রক্ষক মনে করা হচ্ছেযারা এদের সমর্থক তাদের সন্তান-সন্ততির কেউ মাদ্রাসায় পড়েনি, কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষাকে তারা পরিপুষ্ট করেছে হাতিয়ার হিসেবে এবং সাধারণকে অধস্তন রাখার জন্যএর মধ্যে শ্রেণীগত একটি ব্যাপারও আছেপাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ, ভোগী ও সুবিধাভোগী জীবনযাপনের অন্তিমে মাদ্রাসা-মসজিদ প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী হন; কিন্তু মেয়েদের বা প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনে উৎসাহী হন নাকারণ তাহলে তাদের উত্তরসূরিরা সাধারণের প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে 
রাজনৈতিক যুদ্ধের কৌশল হিসেবে বিএনপি-জামায়াত বা পাকিপন্থীরা আওয়ামী লীগ বা বামদের অধার্মিক হিসেবে চিহ্নিত করতে আগ্রাসী সব পন্থা গ্রহণ করেছেবিপরীতে আওয়ামী লীগ বা মধ্যপন্থী বা উদার বা মৃদুবাম এ ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেনি, আমার মুসলমানত্ব প্রমাণের দরকার নেইযারা আমাদের অধার্মিক বলে তারাই অমুসলমানকিন্তু মধ্যপন্থা এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ না করে সমঝোতা ও নিজেদের মুসলমানত্ব প্রমাণে ব্যস্ত থেকেছেএটি রাজনৈতিক ভুল যার মাসুল মুক্তিযুদ্ধ চেতনাপন্থীদের গুনতে হচ্ছে 
এই দ্বন্দ্বে নতুন এক গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছেতারা কিন্তু বিএনপি-জামায়াত আমলেই শক্তিশালী হয়েছেএরা নিজেদের নিরপেক্ষ বা সুশীল সমাজ বলে জাহির করেএরা পাকিস্তানপন্থী তা বলার সুযোগ নেইকারণ নিয়ত তারা এমন সেক্যুলার ডেমোক্র্যাটিক রাষ্ট্রের কথা বলেন যা নিয়ন্ত্রণ করবেন রাজনীতিবিদরা নন, তারামিডিয়া তাদের পছন্দ করেতাদের ইচ্ছা, রাজনীতিবিদ যদি ক্ষমতায় থাকেনই তাহলে তিনি যেন আওয়ামীপন্থী না হনএরপর হেফাজতীরা যখন সমাবেশ করছে তখন টিভির রিপোর্টাররা সমানে বয়ান করেছেন তাদের ‘তৌহিদী জনতা’, ‘ধর্মপ্রাণ’, ‘মুসল্লি’ ইত্যাদি হিসেবেএরা যখন কোরান পোড়াল এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালাল সে দৃশ্য ওই একদিন বা দু’দিন দেখানো হয়েছে, বার বার নয়, কারণ তাহলে প্রমাণিত হবে এরা ধর্মপ্রাণ নয়, এরা ধর্ম ব্যবহারকারী এবং এর ফলে বিভ্রান্ত রাজনীতির মুখোশ উন্মোচিত হবেবরং গুরুত্ব দেয়া হয়েছে কয় হাজার মারা গেছে সে বিতর্ক উপস্থাপন করে এবং বিএনপি-জামায়াত যে এই নাটকটি পরিবেশন করেছে তা নিপুণভাবে আড়াল করা হলো২০১৩ সালে জামায়াত নিষিদ্ধ করার জন্য আদালতে আলীপ করা হলোযেটি বাংলাদেশের জন্য শুধু নয়, উপমহাদেশের জন্য প্রধান সংবাদ১৩ তারিখে প্রকাশিত মাত্র দু’টি সংবাদপত্রÑ দৈনিক জনকণ্ঠ ও কালের কণ্ঠে তা শিরোনাম হয়েছে; অন্য কোন পত্রিকায় নয়আমি প্রথমে যা আলোচনা করেছি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এ ঘটনা 
৩০ লাখ মানুষ শহীদ হলেন যে সেক্যুলার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সে রাষ্ট্র চার বছরের শেষে কেন যাত্রা করল ধর্মরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, সেটি আমরা খুব একটা খতিয়ে দেখিনি। 


মন্তব্যসমূহ