হজ্জ পালন সম্পর্কে ইরানী দার্শনিক ডক্টর আলি শরিয়তির দৃষ্টিভঙ্গী ঃ



   হজ্জ  পালন  সম্পর্কে  ইরানী  দার্শনিক  ডক্টর  আলি  শরিয়তির  দূষ্টিভঙ্গী  :

          ডক্টর  আলি  শরিয়তি    তেহরানে  একটি  গ্রন্থ  রচনা  করে  প্রকাশ  করেন   আরবী  ভাষায়   এবং  ঐ  গ্রন্থটির ইংরেজি  অনুবাদ  প্রকাশ  করেন  লালেহ  বখতিয়ার  নামের  একজন  ব্যক্তি  ইরানে ১৯৮৮  সালে  ৷  এই  বইয়ের  ৪৬  থেকে  ৪৮   পৃষ্টায়   হজ্জ  পালন  সম্পর্কে  মন্তব্য  করতে  গিয়ে  ডক্টর  শরিয়তি  লিখেছেন  যে , বর্তমানে  মুসলিমরা  তাদের  সমাজের   পাশ্চাত্যকরণের  প্রক্রিয়ায়   ফলে   বাধ্য  হয়ে  তাদের  ধর্মীয় বিশ্বাস  ও  সাংস্কৃতিক  শেকড়  হতে  ধীরে  ধীরে  বিচ্ছিন্ন  হয়ে  পড়েছে  ৷ 

তাই  ইসলামের  এই  অসঙ্গতি  দূর  করতে  হলে  মুসলিমদের  অবশ্যই  তাদের  বিশ্বাসের  প্রাচীন  প্রতীক  সমূহকে  নতুন  করে  ব্যাখ্যা  করতে  হবে  ৷  বতর্মান  সমাজিক  অবস্থার  পরিপ্রেক্ষিতে  এবং  পরিপার্শ্বিক  অবস্থা  বিবেচনা  করে  মুসলিমদের  নতুন  ভাবে  বিষয়টি  নিয়ে  ভাবতে  হবে  ৷  হযরত  মুহাম্মদ (সঃ) যেমন  তার  সময়  প্রচলিত  প্রাচীন  পৌত্তলিক  আচার   হজ্জকে    তার  প্রচারকৃত  একেশ্বরবাদী  ইসলাম  ধর্মে  গ্রহণ  করেন  এবং  হজ্জ  পালনের  একটি  ইসলাম  ধর্মীয়  প্রাসঙ্গিকতা  ও  দেন  ৷ সংশ্লিষ্টরা  বলেন  নবীজী ( সঃ ) তখনকার  আরবের  আর্থ- সামাজিক   এবং  অর্থনৈতিক  দিক  বিবেচনা  করেই  আরব  অঞ্চলের  প্রাচীন  একটি  পৌত্তলিক  আচারকে  বাধ্য  হয়েই  এর  ইসলামিকরণ  করতে  বাধ্য  হয়েছিলেন  ৷  যা  ইসলাম  ধর্মের মূল মৌলিক  আদর্শের  অনুকুলে  ছিল    না  ৷   ডক্টর  শরিয়তী  এই  দৃষ্টান্তকে  বিবেচনায়  নিয়ে  বর্তমানে  মুসলিমদের  সামনের  দিকে  অগ্রসর  হতে  হবে  বলে  মনে  করেন  ৷  তিনি  ইহাকে  অন্যায়  বা  অনইসলামিক  পদক্ষেপ  গ্রহণ  মনে  করেন  না  ৷

তিনি  তার এই   লেখায়  আরো  বলেছেন  যে , মক্কায়  হজ্জপালন করা  তীর্থ  যাত্রী  বিশ্বাসীদের মনে  ঈশ্বর  সম্পর্কে   একগতিময়   ধারণার  জন্ম  দেয় ৷  যার  ফলে      প্রত্যেক  হজ্জ  যাত্রীকে     নিজেদের  মধ্যে হজ্জ  সম্পর্কে  এক  কাল্পনিকতার  সৃষ্টি  করে  নিতে  সক্ষম  করে  তুলে  ৷    তাই  হজ্জ  পালন  করাকে  তিনি  চুড়ান্ত  গন্তব্য  হিসাবে  না  দেখে  হজ্জ  করাকে তিনি  একটি  নিদর্শন  হিসেবে  দেখেতে  আগ্রহী  ৷  তাই  তিনি তার  লেখায়   বলেছেন   হজ্জ  পালনকারী  বিশ্বাসীদের  হজ্জ  পালন করলে  বিশ্বাসীদের  শুধু  একটি  দিকদর্শনা   চিনিয়ে  দেয়  ৷  ফলে  আর   বিশ্বাসীরা  তাদের  বিশ্বাসের   পথ  হারিয়ে  ফেলতে  পারে  না  ৷ অর্থাৎ  হজ্জ  পালন  বিশ্বাসীদের  মনে  তাদের  পুরাতন  ধর্মীয়  বিশ্বাসকে  আবার  নতুন  রূপে   প্রতিস্থাপন  করে ৷

এই  প্রক্রিয়ার  মাধ্যমে  বিশ্বাসীরা  কাব্বাহ  ও  ঈশ্বর  সম্পর্কে  সকল  প্রকার  মানবীয়  প্রকাশকে  অতিক্রম  করে  বটে ,  তবে  তার  মতে  ইহা  শেষ  কথা  নয়  ৷  কাব্বাহ্  গৃহ  একটি  সাজসজ্জাহীন  একটি  সাধারণ  বর্গাকৃত  ঘর  যা  বিশ্বাসীদের  কাছে  ঈশ্বরের  রহস্য  তুলে  ধরে  ৷   তিনি  মনে  করেন  ঈশ্বর  হচ্ছেন  নিরাকার ,  বর্ণহীন , রূপহীন  ৷   মানুষ  ঈশ্বরের  যে  আকার  কল্পনা  করুন  না  কেন  তা  কিন্তু প্রকৃত  ঈশ্বর  নয়  ৷

ডক্টর  শরিয়তির  কাছে  হজ্জ  পালন  হচ্ছে  ধর্ম  থেকে  বিচ্ছিন্নতা  বোধের  এক  এন্টিথিসিস  ৷  তাই  হজ্জ  পালনকারী  বিশ্বাসীদের  হজ্জ  তাদেরকে  অস্তীত্ববাদী  করে  তুলে    আর  হজ্জ  পালন  বিশ্বাসীদের  জীবনকে  এক  অনির্বচনীয়  ঈশ্বরের  দিকে  স্থাপন  করে  ৷  তার  এই  গ্রন্থ  তখনকার  ইরানে    অনেক  বিতর্কের  জন্ম  দেয়  এবং  তিনি  শাহর  গুপ্ত  পুলিশের  নির্যাতন  সহ্য  করে  ও  ইরান  বসবাস  করতে  পারেন  নাই  ৷  তাকে  ইরান  থেকে  বহিষ্কার  করা  হয়  ৷  পরে  ১৯৭৭  সালে  লন্ডনে  তার  অস্বাভাবিক  মৃত্যু  হয়  ৷  এই  মৃত্যুর  জন্যেও  শাহের  গুপ্ত  পুলিশ  সৌদি  কর্তৃপক্ষকে  সন্দেহ  করা  হয়েছে  ৷  আয়াতউল্লাহ্  খোমেনীর  ইসলামী  বিপ্লবে  ডক্টর  শরিয়তীকে  নতুন  ভাবে  মূল্যায়ন  করা  হয়  এবং  খোমেনির  মত  তাকেও  সম্মান  করা  হত  ৷
 
  ( সূত্র ; স্রষ্টার  ইতিবৃত্ত , অনু ; শওকত  হোসেন , পূষ্টা -৪৮৪ )

মন্তব্যসমূহ