মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান যুদ্ধে আমেরিকার ভূমিকা এবং ইসলামিক স্টেট এর জন্মের কাহিনি :


     

   মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান  যুদ্ধে আমেরিকার  ভূমিকা  এবং  আইএস  এর  জন্মের  কাহিনি :

          চলতি  বছরের  সেপ্টেম্বর  মাসে  আমেরিকার  ইরাকে  হামলা  করে আধুনিক  এবং  ধর্মনিরপেক্ষ   ইরাককে  ধ্বংস  করার  ১১  বছর  পূর্ণ  হয়েছে  ৷  এই  ১১  বছরে  ইরাকে   কয়েকলাখ  মানুষ প্রাণ  হারিয়েছে  ৷  কিন্তু  যুদ্ধের  সমাপ্তি  হয়  নি   বরং  যুদ্ধের  ক্ষেত্র  প্রসারিত    হয়েছে আর দিন  দিন  নতুন  নতুন যুদ্ধ  ক্ষেত্রের  সৃষ্টি  করা  হচ্ছে   ৷

          এরপটভূমি  অনুসন্ধানে  জানা  যায়  প্রায়  ১২ বছর  আগে  আমেরিকান  রক্ষণশীল  প্রেসিডেন্ট  জর্জ  দ্বিতীয়  বুসের  আমলে  সমগ্র  পশ্চিম  এশিয়া  অর্থাৎ  মধ্যপ্রাচ্যের  ব্যাপারে  নতুন  এক  পরিকল্পনা  প্রণয়ন  করা  হয়েছিল  ৷  আগামী  ৩০  বছর  ব্যাপি আমেরিকার   সেই  মহাপরিকল্পনাকে   আমেরিকান  “ স্ট্র্যাটেজিক  ডকট্রিন”  নামে  আখ্যায়িত  করা  হয়েছে  ৷  

         এই  পরিকল্পনার  অংশ  হিসেবে  প্রথমে  ধর্মনিরপেক্ষ    সাদ্দাম  হোসেনের  আধুনিক  ইরাককে  ধ্বংস  করা  হয়েছে  এবং  পরে  এখন  এই  যুদ্ধের  কার্যক্রম  বাগদাদের  পর  প্রথমে   দামেস্ক এবং  আরো  পরে   তেহরান  ও  শেষে   রিয়াদ পর্যন্ত  এই  যুদ্ধ   ছড়িয়ে  দেয়ার  পরিকল্পনা  গৃহিত   হয়েছে  ৷   অর্থাৎ  আগামী  ৩০  বছর  ব্যাপি  আমেরিকা  মধ্যপ্রাচ্যের  ব্যাপারে  যে  নীতি  ও  পরিকল্পনা  গ্রহন  করেছে  এই  সেপ্টেম্বর  মাসে  এর  মাত্র  ১১  বছর  শেষ  হয়েছে  ৷

              তাই  এই  পরিকল্পনার  বেশিরভাগ  এখনও  অবাস্তবায়িত  রয়ে  গেছে  ৷ মধ্যপ্রাচ্যে  আমেরিকা  তাদের  এই  কার্যক্রম  পরিচালনার  জন্যে তাদের  মহাপরিকল্পনার  অৎশ  হিসেবে প্রথমে  এই  অঞ্চলের  জঙ্গী , জিহাদী , সালাফি  ও  তকফিরিদের  সাহায্য  ও  সহায়তার  অন্য  একটি  দীর্ঘ  মেয়াদী    পরিকল্পনা  হাতে  নিয়েছিল   ৷  এখন  জিহাদীরা  এই  পরিকল্পনাকে  তাদের  নিজস্ব  পরিকল্পনা  বলা  আরম্ভ  করেছে  ৷ আর  অন্যদিকে   জিহাদীরাও এখন  বলছে   আফগানিস্তান  থেকে  আলজিরিয়া  ও  সাহেল  এলাকা  পর্যন্ত  গোটা  অঞ্চলকে তারা  তাদের  পছন্দমত  করে  নতুন  ভাবে  সাজাতে  আগ্রহী  ৷  তাই   এটা  করতে  হলে  প্রথমে  তো  বাইরের  শক্তির  সাহায্য  সহায়তা  প্রয়োজন  হতেই   পারে   ৷  তাই  আমেরিকা  এই  অঞ্চলের  জন্যে যে  ৩০  বছরের  পরিকল্পনা  গ্রহণ  করেছে  এবং  এর  সঙ্গে  জিহাদীদের  দীর্ঘমেয়াদী  পরিকল্পনাকে  সংশ্লিষ্টরা  একই  মুদ্রার  দুই  পিঠ  হতে  পারে  বলে  সন্দেহ  প্রকাশ  করেছেন  ৷
         
         আমেরিকানদের  এই  মহাপরিকল্পনার  প্রেক্ষাপট  বিশ্লেষণ  করে  সংশ্লিষ্টরা  বলেছেন  যে , দ্বিতীয়  বিশ্বযুদ্ধ  শেষ  হওয়ার  পরে  আমেরিকার  এককালের  প্রেসিডেন্ট ট্রম্যানের  নামানুসারে  “ ট্রুম্যান  ডকট্রিন” নামে  একটি  পরিকল্পনা  ঘোষিত     হয়েছিল  ৷  সেই  ঘোষিত  নীতি  অনুসারে  মধ্যপ্রাচ্যে  অঞ্চলের  জন্যে  এমন  এক  নীতির  উদ্ভাবন  করা  হয়েছে যে ,   সেখানে প্রথমে আরববিশ্বের  রক্ষণশীল  ও  দক্ষিনপন্থী  ইসলামিক  শক্তিকে  শাণিত  করে  তোলা  হবে  ইসলাম  ধর্ম  ব্যবহার  করে  এবং  পরে  উপসাগরীয়  দেশগুলোর  প্রতিক্রিয়াশশীল  শক্তি  ও  রাজতন্ত্রসমূহকে  এই  অঞ্চলের  কমিউনিজম  ও  সেক্যুলার  আরব  জাতীয়তাবাদীদের  বিরুদ্ধে  এক  সুদৃঢ়  প্রাচীর  নির্মাণ  করা  হবে তাদের  সৃষ্ট  এই  প্রতিক্রিয়াশীল  শক্তিকে  ব্যবহার  করে  ৷ 

     এই  পরিকল্পনার  অংশ  হিসেবে  প্রেসিডেন্ট  আইজেন  হাওয়ারের  সময়ে  হোয়াইট  হাউসের  দরবার  হলে  মুসলিম  ব্রাদারহুডের  নেতাদের  স্বাগত  জানানো  হয়েছিল  ৷  আর  তখন  থেকে  মার্কিন  কুটনৈতিকগণ  এবং  মার্কিন  গোয়েন্দা  সার্ভিসগুলো  জঙ্গী  ও  জিহাদী  থেকে  আরম্ভ  করে  মডারেট  মুসলিম  সহ  সব  ধরনের  ইসলামী  সংঘঠনগুলোর  প্রতিষ্ঠা  করেছে  এবং  এইসব  সংঘঠনের  প্রচার  ও  প্রসার  ঘটাতে  মার্কিনিরা  কয়েক  দশক  সময়  ব্যয়  করেছে  ৷  আর  মার্কিনিদের  অর্থের  সঙ্গে  এই অঞ্চলের  প্রতিক্রিয়াশীলদের  অর্থও  ব্যয়িত  হয়েছে এই  সব  সংঘটনের  পিছনে  ৷

          অন্যদিকে  প্রেসিডেন্ট  জিমি  কার্টারের  আমলে  আফগানিস্তানে সোভিয়েত বামপন্থী  সরকারকে  হঠাতে  সি আই এ আফগানিস্তানের  হাজার  হাজার  সাধারণ মানুষকে একটি  নির্দিষ্ট   ইসলামিক  ধর্মীয়  আদর্শে  অনুপ্রাণিত  করে সশস্ত্র  সামরিক  ট্রেইনিং  দিয়ে  জিহাদী  ও  তালেবান  হিসেবে  গড়ে  তোলে ৷  এই  লক্ষ্যে  প্রেসিডেনট  রোনাল্ড  রিগ্যান  আফগান  মুজাহিদীন  বাহিনীর  নেতাদের  হোয়াইট  হাউসে  স্বাগত  জানিয়েছেন  এবং  তাদের  প্রশংসা  করেছেন  আর  আফগানিস্তানের  ভাড়াটে  জিহাদী  নেতা  গুলবুদ্দীন  হেকমতিয়াকে  জর্জ  ওয়াশিংটন  বা  টমাস  জেফারসনের সমকক্ষ  বলেছেন এবং  তাদের  সঙ্গে  তুলনা  করেছেন  ৷
            এর   পরে   আমেরিকানরা   এই  তালেবানদের  ব্যবহার   করে  আফগানিস্তানের  সোভিয়েতপন্থী  সরকারের  পতন  ঘটায় এবং সেখানে  আমেরিকানদের  মনোনিত  সরকার  গঠন  করে  ৷  আর  পরে  কাজ  উদ্বার  হয়ে  গেলে  তাদের  সৃষ্ট  তালেবানদের এখন  ধ্বংস  করা  আরম্ভ  করেছে  ৷  ফলে  আফগানিস্তানে  এক  দীর্ঘমেয়াদী  গৃহ  যুদ্ধের  সূচনা  হয়েছে এবং  ইরাকের  মত  হাজার  হাজার  নিরীহ  মানুষ  মারা  যাচ্ছে  ৷  

      এর  পরবর্তী  পর্যায়ে    সিরিয়ার  স্বৈরাচারী  অথচ  সেক্যুলার  বাশার  আল-আসাদের  সরকারকে  উৎখাত  করতে  সেদেশে  আমেরিকা  একটি  জিহাদী  সংঘটন  গড়ে  তুলেছিল  ৷  প্রেসিডেন্ট  বারাক  ওবামা  কায়রোয়  মুসলিম  বিশ্বের  উদ্দেশ্যে  যে  ভাষণ  দিয়েছিলেন  সে  সময়ে  বক্তিতা  মঞ্চের  অতিকাছে  সামনের  সারিতে  মুসলিম  ব্রাদারহুদের  নেতাদের  বসতে  দেয়া  হয়েছে  ৷  এই  ভাবে  জেহাদীদের  ওবামাও  মূল্যায়ন  করেছেন  এবং  তাদের  কার্যক্রমে  উৎসাহ  যুগিয়েছেন  ৷      এই  সব  জিহাদীদের  পিছনে  কাতার  সরকার  ৩  শত  কোটি  ডলার  ব্যয়     করেছে  ৷
            এ  ছাড়াও   যুক্তরাষ্ট্র  এবং  তুরস্ক  ও  রাজতন্ত্রশাসিত  আরবের  দেশগুলো  সিরিয়ার  বাশারকে  উৎখাতের  জন্য  পরিচালিত  জিহাদে  বিপুল  অর্থ  যোগিছে  ৷  এই  অর্থের  সবচেয়ে  বড়ভাগ  পেয়েছে  আইসিস  ৷  ওদিকে  আফগানিস্তান , চেচনিয়া  ও  লিবিয়ায়  এর আগের  জিহাদে  অংশ  নেয়া  জঙ্গীদের  বিমানে  করে  তুরস্কে  আনা  হয়  প্রথমে  এবং  পরে  সেখান  থেকে  সিরিয়ায়  ঢুকিয়ে  দেয়া  হয়েছে  ৷  আবার  আইসিসের  কিছু  ক্যাডারকে  জর্দানে  প্রশিক্ষণ  দিয়েও  সিরিয়ায়  ঢুকানো  হয়  ৷  ফলে সিরিয়ার  একটি  সাধারন  গণঅভ্যুথ্থানকে  ধর্মীয়  জিহাদে  পরিণিত  করতে আমেরিকা ও  উপসাগরীয়  প্রতিক্রিয়াশীল  শক্তি খুব  সহজেই   সফল  হয়েছে  ৷

          কিন্তু  এক  পর্যায়ে  এসে  দুধ কলা দিয়ে  সাপ  পোষার  মত  এর  এর  ফল  হয়েছে  উল্টা  ৷  যুক্তরাষ্ট্র , ইসরাইল  ও  এই  অঞ্চলের  রাজতন্ত্রগুলো  সিরিয়ার  বিরুদ্ধে  ধর্মযুদ্ধের  নামে  যেসব  জিহাদীদের  তৈরি  করেছিল  অর্থ ,  অস্ত্র  ও  সামরিক  ট্রেইনিং  প্রদান  করে  সে  সব  জিহাদীরা  এখন  আমেরিকা  ও  সৌদিদের  সাহায্যে  সিরিয়া  ও  ইরাকের  কাছ  থেকে  দখল  করে  নেয়া  ভূখন্ডে  ইসলামী  ফিলাফতি রাষ্ট্র  প্রতিষ্ঠার  ঘোষণা  দিয়েছে  ৷  কারণ  এরা  লড়াইয়ের  বেশিরভাগ  অভিজ্ঞতা  অর্জন  করেছে  সিরিয়ার  সঙ্গের  যুদ্ধে  ৷  আর  যথেষ্ট  পরিমান   অর্থ  সংগ্রহ  করেছে  বিদেশিদের  দান  করা  অর্থ  থেকে ৷   আর পরে আরো  অর্থ  সংগ্রহ  করেছে     লুটের  মাল  ও  মুক্তিপনের  আদায়করা  অর্থ   থেকে   এবং  অধিকৃত  এলাকার  ব্যবসা  ও  অন্যান্য  সম্পতির  ওপর  কর  বসিয়ে  ৷  এই  প্রক্রিয়ায়  বিশ্বের  বিভিন্ন  দেশের  ফ্রিল্যান্স  জিহাদীরা  আকৃষ্ট  হয়ে  সিরিয়ায়  চলে  আসা  আরম্ভ  করেছে  এখন  ৷

          বর্তমানে   একদিকে  তুরস্ক  ও  জর্দান  সীমান্ত  অঞ্চল  অপরদিকে  ইরাকের  রাজধানী  বাগদাদের  দোরগোড়া  অবধি  প্রসারিত  ভূখন্ডকে  নতুন  ভাবে  রাজনৈতিক  নাম  করা  হয়েছিল  প্রথমে  ইসলামিক  স্টেট  অব  ইরাক  এন্ড  সিরিয়া  ৷  কিন্তু  এখন  এই  নাম  পরিবর্তন  করে  এই  অঞ্চলের  নতুন  নাম  রাখা  হয়েছে  ইসলামিক  স্টেট  বা    সংক্ষেপে  যাকে আই এস  বলা  হচ্ছে  ৷   আবার  এখন  এই  ইসলামিক  স্টেটকে  খলিফাহ্  শাসিত  রাষ্ট্র  ঘোষণা  করা  হয়েছে  এবং  মসুলকে  এই  নতুন   রাষ্ট্রের  রাজধানী  ঘোষণা  করা  হয়েছে  আর  সারা  বিশ্বের  মুসলমানদের  ওপর  এই  ইসলামী  রাষ্ট্রের  নবনিযুক্ত  খলিফাহ্ ও  আইসিসের  নেতা  আবু  বকর  আল-বাগদাদী  যিনি  এখন  নিজকে   খলিফাহ্ ইব্রাহিম   নামে  অবিহিত  করেছেন  , তাঁর  কর্তৃত্ব  মেনে  চলতে  নির্দেশ  প্রদান  করেছেন  ৷  অন্যকথায়  সারা  বিশ্বের  মুসলমানদের  ওপর  তাঁর  কর্তৃত্ব  দাবি  করেছেন  ৷  কারণ  তাঁর  মতে    ইসলামী  খিলাফত  বলতে  একক  রাজনৈতিক  ও  ধর্মীয়  নেতা  বা  খলিফাহ্ র  দ্ধারা  শাসিত  ইসলামী  রাষ্ট্রকে  বুঝায়  ৷ 

         এই  কারণের  বিশ্লেষণ  করে  তিনি  বলেছেন  যে , ইসলামিক  খলিফাহ্ রা  মহানবী  মুহাম্মদ (সঃ ) এর  উত্তরসুরি  এবং  সকল  মুসলমানের  ওপর  খলিফাহ্ কে তাঁর     সার্বভৌম  ক্ষমতা  প্রযোগকারী  ব্যক্তিত্ব  বলে  গণ্য  করতে  হয়  ৷  তিনি  দৃষ্টান্ত  দিয়ে  বলেছেন  যে , প্রথম  খিলাফতের  নেতৃত্ব  পর্যায়ক্রমে  দিয়েছেন- সর্বজনাব  আবু  বকর , উমর , ওসমান , ও  আলী ৷  এর  পর    ৬৬১  সাল  থেকে  ৭৫০  সাল  পর্যন্ত  নেতৃত্ব  দিয়েছেন  উমাঈয়া  বংশের  প্রতিনিধিরা  ৷  এর  পর  ৭৫০  সাল  থেকে  ১২৫৮  সাল  পর্যন্ত  নেতৃত্ব  দিয়েছেন  আব্বাসীয়  বংশের  প্রতিনিধিরা  ৷  এবং  সর্বশেষ  নেতৃত্বে  ছিলেন  অটোমান  সাম্রাজ্যের  খলিফাহ্ রা  ১৩০১  সাল  থেকে  ১৯২২  সাল  পর্যন্ত  ৷  এরপর  তুর্কীনেতা  কামাল  আতাতুর্ক  অটোমান  খলিফাহ্  মোসিতকে  অপসরণ  করেন  এবং  অটোমান  সাম্রাজ্যের  পতনের  সঙ্গে  সঙ্গে  খিলাফতেরও  অবসান  ঘটান  ৷  এর  পর  থেকে  মুসলিম  বিশ্বে  খিলাফত  বলে  কিছু  ছিল  না  ৷

          তবে  এবছরের  ৩০  জুন  ইসলামিক  স্টেট  ইন  সিরিয়া  এন্ড  দি  লিভেন্ট  বা  সংক্ষেপে  আইসিস  ইরাক  ও  সিরিয়ায়  জিহাদীদের  নিয়ন্ত্রিত  ভূখন্ডে  ইসলামী  খিলাফত  কায়েম   করার  ঘোষণা  দিয়েছে  ৷  এখন  আইসিসের  নাম  বদলে  আইএস  বা  ইসলামিক  স্টেট  নামকরণ  করেছে  ৷ পিডিএফ  ফাইলে   খিলাফত  ঘোষণার  যে  ১২ পৃষ্টা ব্যাপি  নির্দেশনাবলী  প্রকাশ  করা  হয়েছে  তাতে  বলা  হয়েছে  ইরাক  শুধু  ইরাকিদের  জন্যে  নয়  , আর  সিরীয়া  শুধু  সিরীয়দের  জন্যে  নয়  ৷  তাই  যারা  ইসলামের  ভূমিতে  চলে  আসতে  সক্ষম  হবেন  তাদের  জন্যে  ইসলামী  ভূমিতে  আগমন  করা  বাধ্যতামূলক  এবং  সবাইকে  ইসলামী  রাষ্ট্রে  ছুটি  আসার  আহ্বান জানানো  হয়েছে  ৷  এই  ঘোষণায়  আরো  বলা  হয়েছে যে , নবগঠিত  ইসলামিক  খিলাফত  রাষ্ট্রের  খিলাফতী  কর্তৃত্বের  উথ্থানের  সকল  শর্ত  পূরণ  করা  হয়ে  গেলে  , যেমন - সুনির্দিষ্ট  ভূখন্ড ,  প্রজা  জনগোষ্ঠী , সেনাবাহিনী  , রাষ্ট্রীয়  কোষাগার  ইত্যাদির  ওপর  খলিফাহ্ র  নিয়ন্ত্রন  প্রতিষ্ঠিত  হয়ে  গেলে  মুসলমানদের  জন্যে  অন্য  কারো  শাসনে  থাকা  অবৈধ  ও  অনৈসলামিক  হয়ে  যাবে  ৷  এবং  পরবর্তী  পর্যায়ে  খিলাফতের  প্রসারের  মধ্যে  দিয়ে  সকল  আমিরাত , গ্রুপ , রাষ্ট্র  ও  সংঘটনের  বৈধতা  বাতিল  হয়ে  যাবে  ৷  এই  ঘোষণা  নিশ্চয়  তাদের  একসময়ের  গডফাদার  ও  কাতারের  আমীর  বা  সৌদি  রাজপরিবারের  জন্যে  সুখবর  নয়  ৷  তাই  তারা  আইএসকে  এখন  সম্পূর্ণ  ধ্বংস  করতে  চায়  কিন্তু  আমেরিকা  এদের  কার্যক্রমকে  দুর্বল  এবং  সীমিত  করতে  আগ্রহী  ৷  কারণ  ইহা  আমেরিকার  ৩০  বছর  ব্যাপি  পরিকল্পনার  আংশ  ৷  আর  এতে  আমেরিকার  কোনো  ক্ষতির  কারণ  হবেনা  ৷  উভয়ক্ষেত্রেই  আমেরিকা  ভারী  এবং  হালকা  অস্ত্র  বিক্রি  বেড়ে  যাবে  যদি  এই  যুদ্ধকে  দীর্ঘায়িত করা  যায়  ৷  আমেরিকা  সে  প্রচেষ্টাই  চালাচ্ছে  এখন  ৷  

                সাদ্দাম  হোসেনের  ইরাক  ধ্বংসের  পর  একনায়ক  নূরী  আল-মালিকী  কে  আমেরিকা  ইরাকের  ওপর  চাপিয়ে  দিয়েছিল ৷  কিন্তু  নূরী  আমেরিকা  যা  চেলেছিল  সেই  দুটো  দায়িত্ব  পালনে  ব্যর্থ  হয়েছেন  ৷  কারণ  আমেরিকা  চেয়েছিল  ইরাক  থেকে  আনুষ্ঠানিক  সৈন্য  প্রত্যাহারের  পরও  নূরী  আমেরিকান বেশ কিছু  সামরিক  শক্তি  ইরাকে  স্থায়ীভাবে  মোতায়েন  রাখার  ব্যবস্থা  করতে  সক্ষম  হবেন  ৷  অন্যদিকে  আমেরিকার  ইচ্ছানুসারে  নূরী  পার্লামেন্টকে  দিয়ে  হাইড্রোকার্বন  বিরাষ্ট্রীয়করণের  বিল  পাশ  করিয়ে  নিতেও  ব্যর্থ  হয়েছেন  যাহাতে  আমেরিকান  বৃহৎ  তেল  কোম্পানিগুলো  এখন  ইরাক  থেকে  যে  বিপুলপরিমান  মুনাফা  হাতিয়ে  নিচ্ছে  তার একটা আইনগত  ভিত্তি  তৈরি  করে  দিতে  ৷  তাই  আমেরিকা  নূরীকে  ছেঁটে  ফেলে  তার  স্থানে  তাদের  অনুগত  কাউকে  বসিয়ে  দিয়ে  ঐ  দুটু  কাজ  করিয়ে  নিতে  ৷  এক্ষেত্রে  একটি  স্বল্পস্থায়ী  খিলাফত  থাকলে  আমেরিকা  মেনে    নেবে  বলে  অনেকে  মনে  করছেন  ৷

           তাই    সংশ্লিষ্টরা  আশংকা  করছেন  আই  এস  এর  উথ্থানর  ফলে  হঠাৎ  করে  আমেরিকা  ইরাককে    ত্রিখন্ডিত  করার  পদক্ষেপ  নেবে  ৷  আর  ইরাক  ত্রিখন্ডিত  হয়ে  গেলে  পরস্পরের  প্রতি  বৈরী  তিনটি  জাতিগত  ও  ধর্মগত  ক্ষুদে  রাষ্টের  সৃষ্টি  হবে  এবং  একে  অন্যকে  ধ্বংস  করতে  চাইবে  ৷    অন্যদিকে  হঠাৎ  করে  ইসরাইল  স্বাধীন  কুর্দিস্তানের  কথা  বলা  আরম্ভ  করছে  ৷  অবস্থাদৃষ্টে  সংশ্লিষ্টরা  মনে  করছেন  আইএস এর  বর্তমান  কার্যক্রম  যেন  তেলআবিবের  জন্যে  এই   সুযোগ  তৈরি  করে  দিয়েছে আর কোথায়  যেন  তাদের  মধ্যে  একটি  বুঝাপড়াও  হয়েছে ৷  এবং  এইএস  যেন আমেরিকার  আগামী  ৩০  বছর  ব্যাপি  পরিকল্পনার  অংশ  হয়ে  তাদের  বর্তমান  কার্যক্রম  আরম্ভ  করেছিল  ৷  কিন্তু  পরবর্তিত  পরিস্তিতিতে  আমেরিকা  বাধ্য  হয়ে  আইএস  এর  ওপর  সীমিত  পদক্ষেত  গ্রহণ  করতে  হচ্ছে  ৷

  ( সূত্র; ফ্রন্টলাইন  পত্রিকায়  প্রকাশিত  আইজাজ  আহমদের    “ মাদার  অব  অল  ভায়োলেন্স”  এবং  বিজয়  প্রসাদের  “ ব্লোব্যাক  টাইম” শীর্ষক  দুটি  নিবন্ধ  অবলম্বনে দৈনিক  জনকণ্ঠে  এনামুল  হক  একটি  অনুবাদ  প্রতিবেদন  প্রকাশ  করেন  ৷  এই  লেখাটা  এনামুল  হকের  অনুবাদের  সংক্ষিপ্ত  এবং  কিছু  পরিবর্তিত  রূপ )








মন্তব্যসমূহ