৭১ সালে বরিশাল ও ফিরোজপুর অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টারকমান্ডার মেজর (অবঃ) জিয়উদ্দিনের বয়ান এবং সাঈদীর রায় প্রসঙ্গে এটর্নিজেনারেলের বক্তব্য :
সেক্টার কমান্ডার
অবসরপ্রাপ্ত মেজর জিয়াউদ্দিন
এর বয়ান এবং সাঈদীর আপীলের
রায় প্রসঙ্গে কিছু কম প্রচারিত
তথ্য !!
যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর
আপীলের রায় প্রকাশিত
হওয়া পর সোসাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন মিডিয়ায়
রায়ের ব্যাপারে সরকারের
সঙ্গে একটা সম্জতার ফল হিসেবে এই রায়কে মূল্যায়ণ
করার একটা প্রয়াস
লক্ষ্য করা যাচ্ছে
৷ আমি সম্জতার
ব্যাপারটি সত্য কি মিথ্যা তার প্রমাণের দিকে না গিয়ে মিডিয়ায় প্রকাশিত
কিছু তথ্যাদির দিকে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি
আকর্ষণ করার প্রয়াস পাচ্ছি
এই লেখাতে ৷
এই রায় প্রকাশের পর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জিয়াউদ্দিন তার এক সাক্ষাতকারে
বলেছেন সাঈদীর কেইছের
তিনি একজন সাক্ষী
ছিলেন এবং একটি লিখিত সাক্ষী
ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছেন
৷ কারণ তিনি ১৯৭১ সালে ফিরোজপুর
ও বরিশাল অঞ্চলে
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে একজন সেক্টার
কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন এই অঞ্চলে
৷ পাকিস্তানের পরাজয়ের
পরও তিনি সে অঞ্চলে কিছুদিন অবস্থানও
করেছিলেন ৷ তখন স্থানীয়
লোকজন তার কাছে অনেক রাজাকারদের
বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ
নিয়া আসতেন ৷ তখন সাঈদীর
এলাকার কয়েকজন রাজাকারের
বিরুদ্ধেও তার কাছে অনেক অভিযোগ
এসেছিল ৷ কিন্তু
সাঈদীর ব্যাপারে তখন কেউ তার কাছে কোনো অভিযোগ জানায় নি ৷ তবে তিনি লোকমূখে
শুনেছেন সাঈদী তার
এলাকার একজন স্থানীয় রাজাকার ছিলেন এবং ঐ এলাকার আরো ৫ জন রাজাকারদের সঙ্গে মিলে ৫ তহবীল নামে একটি সংঘটনের সম্পাদক ও ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের এবং মুক্তিযুদ্ধাদের বিরুদ্ধে তার এলাকায় ব্যাপক কার্যক্রম
পরিচালনা করেছেন তিনি এবং তার সংঘটনের অন্যান্য রাজাকাররা ৷ জনাব জিয়াউদ্দিন তার কাছে সাঈদীর বিরুদ্ধে
কোনো অভিযোগ না আসার একটি কারণের উল্লেখ
করেছেন ৷ তিনি তার সাক্ষাতকারের
সময় বলেছেন সাঈদীর
এলাকার একজন মুক্তিযুদ্ধা
কমান্ডার তখন তার অধীনে এবং তার সেক্টারে
কাজ করতেন এবং তার জানা তথ্যমতে সেই মুক্তিযুদ্ধা কমান্ডার
সাঈদীর আত্মীয় ছিলেন ৷ দুইয়ে দুইয়ে চারের মত তিনি মনে করেন সাঈদীর
রাজাকার টিমের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে
তার কাছে অনেক অভিযোগ আসলেও কেন সাঈদীর
বিরুদ্ধে তার কাছে অভিযোগ আসেনি তা তার কাছে অজ্ঞাত রয়ে গেছে ৷
বর্তমানে সাঈদীর কেইছে সাক্ষীর সংখ্যা
কেন কম ছিল এই প্রশ্নের
জবাবে জনাব জিয়াউদ্দিন
বলেন ৭১ সালের তার সেক্টারের
সাঈদীর সেই আত্মীয়
মুক্তিযুদ্ধা কমান্ডার বর্তমানে
ঐ এলাকার স্থানীয়
সিটিং সংসদ সদস্য আছেন ৷ এ ব্যাপারে তার কোনো ভূমিকা
ছিল কিনা তা তিনি জানেন না বলে বলেছেন ! তাই ব্যাপারটার জন্য যে শুধু সরকার দায়ী তা বলা কি সমচীন হবে এই
সত্য ঘটনা প্রকাশ
হওয়ার পর ৷ ব্যক্তি পর্যায় সহ ট্রাইব্যুনালের কিছু আইনজীবিদেরকে ও অনেকে এ ক্ষেত্রে দায়ী মনে করেন ৷
অন্যদিকে এর্টনি
জেনারেল জনাব মাহবুবে
আলম এই একই সাক্ষাতকারে বলেছেন , ইব্রাহিম সহ অন্যদের হত্যা করাকে তারা ট্রাইব্যুনালের কোর্টে
প্রমাণ করতে ব্যর্থ
হয়েছিলেন ৷ কারণ হিসেবে
তিনি বলেছেন , বাংলাদেশ স্বাধীন
হওয়ার পর নিহত ইব্রাহিমদের পরিরারারের পক্ষ থেকে স্থানীয় কোর্টে একটি মামলা করা হয়েছিল ৷ সাঈদীর পক্ষের
আইনজীবি সেই কেইছের
ডকুমেন্ট বরিশাল কোর্ট থেকে সংগ্রহ
করে ট্রাইবনেলে দাখিল করেছেন
এবং দেখিয়েছেন ঐ ইব্রাহীমদের হত্যা মামলায় সাঈদীকে
আসামী করা হয় নি, অন্য রাজাকারদের আসামী করা হয়েছিল
, সাঈদী অপরাধী হলে তাকে নিশ্চয়
আসামী করা হত ৷ এই দাখিলকৃত
ডকুমেন্ট আসল না নকল তা প্রমাণ করার জন্যে এটর্নী
জেনারেল ব্যক্তিগত ভাবে মামলা চলাকালিন
সময়ে দুইবার বরিশাল
এবং ফিরোজপুর গিয়েছিলেন বলে
তার সাক্ষাতকারে বলেছেন ৷ কিন্তু দাখিলকৃত
ডকুমেন্টের বিপরিতে অন্য কোনো ডকুমেন্ট
সংগ্রহ করে কোর্টে
জমা দিতে পারেন নি ৷ তবু বিচারকগণ
পরপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে
ইব্রাহিমদের হত্যার অভিযোগে
সাঈদীকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছিলেন
, আপিল বিভাগ এই মৃত্যুদন্ড কমিয়ে ১২ বছরের সংশ্রম কারাদন্ডের
আদেশ দিয়েছেন ৷
আর গৌরাঙ্গ
সাহার তিন বোনকে ধরে
এবং জোর করে সাঈদী পাকিস্তান
বাহিনীর পিরোজপুর ক্যাম্পে
নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে
সাঈদীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ ট্রাইব্যুনাল করা হয়েছিল সে অভিযোগে সাঈদীকে
কোনো শাস্তি দেয়া হয়নি ট্রাইব্যুনাল থেকে ৷ কিন্তু আপীল বিভাগ সে অভিযোগ বিবেচনায়
নিয়েছেন এবং এই অভিযোগে সাঈদীকে
আমৃত্যু কারাদন্ড দিয়েছেন
৷
আর একটি অভিযোগ ছিল সাঈদী ১০০/ ১৫০
জন হিন্দু ধর্মের
লোককে জোর করে ধর্মান্তরিত করেছিলেন,
ট্রাব্যুনাল এই অভিযোগে
ও সাঈদীকে শাস্তি
নাকি দিতে পারেন নাই তাদের বিবেচনায় ৷ কিন্তু আপীলবিভাগ
এই অভিযোগেও নতুন করে সাঈদীকে
আমৃত্যু করাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন ৷ এই দুইটি
নতুন শাস্তি সাঈদীকে
আপীল বিভাগ প্রদান করেছেন
বলে এটর্নী জেনারেল
জানিয়েছেন ৷ হয়ত বিস্তারিত আরো তথ্যাদি পূর্ণ রায় প্রকাশিত
হলে জানা যাবে ৷ তবে উপরের তথ্যগুলো এখনও মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে
আসে নি ৷ তাই এই লেখাটি প্রকাশ
করা হল আগ্রহীদের জন্যে ৷ তবে সরকার ছাড়াও ট্রাইব্যুনালের আইনজীবিরা
ও সাঈদীর আনীত অভিযোগ ইচ্ছা করে বা যোগ্যতার অভাবে প্রমাণ
করতে ব্যর্থ হয়েছেন
তা আপীল বিভাগের
উপরে উল্লেখিত রায় থেকে আর একবার স্পষ্ট
হয়ে উঠেছে ৷
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন