ইতিহাসের আলোকে নবীজী (সঃ)এর বিবাহ , দাম্পত্য কলহ এবং শিয়া ও সুন্নি বিকাশের ধাারার সূত্রপাত এর কাহিনী প্রসঙ্গে :


  ,

            ইসলামের  ইতিহাসের  আলোকে  নবীজী ( সঃ) এর  দাম্পত্য জীবনের কাহিনী
                   এবং  ইসলামে  শিয়া  ও  সুন্নি  ধারার বিকাশের  প্রাথমিক  সূত্রপাতের  কাহিনী :
                                          ( প্রথম  পর্ব  )
                    এবংএ:               

          আরবের  জাহিলিয়াহ্  বলে  কথিত  যুগে  নারীদের  কোনো  মার্যাদা  ছিল  না ৷  তাই  ইসলাম  ধর্ম  গ্রহণ  করার  পরেও  অনেক  বিখ্যাত  মুসলিমদের  কেউ  কেউ  তাদের  স্ত্রী  ও  কন্যাদের  সঙ্গে  রূঢ  আচরণ  করতে  দেখা  গেছে  ৷  কিন্তু নবীজী  মুহাম্মদ (সঃ)  এর  ব্যতিক্রম  ছিলেন  ৷ তিনি  নবী  হওয়ার  পূর্বেও  নারীদের  প্রতি  শৈথিল্য  ও  সৌজন্য  প্রকাশ  করতেন  বলে  জানা  যায়  ৷  অনেক  ঐতিহাসিকের  মতে  নবীজী  ( সঃ ) নারীদের  প্রিয়  বন্ধু  এবং  অনেকটা  বর্তমান  যুগের  প্রেমিকা  রূপে  দেখেছেন  ৷ তাই  তিনি  নারী ও  পুরুষের সঙ্গে ব্যবহারে  কোনো  তফাৎ  করতেন  না  ৷

            ৫৯৫  সালে  তাঁর  এক  দূর  সম্পর্কের ব্যবসায়ী  আত্মীয়া  খাদিজা  বিনতে  খুওযালিদ  তাঁর ব্যবসায়ের  পণ্যসামগ্রী সিরিয়ায়  পৌছে  দেয়ার  দায়িত্ব  দেন  মুহাম্মদ (সঃ) কে  ৷  এ  কাজে  তিনি  ব্যবসায়ী   খাদিজার  বিশ্বাস  অর্জন  করেন  ৷  ইতিহাস  থেকে  জানা  যায়  খাদিজা তখন  বিধবা  ছিলেন ৷  তাঁর  পূর্বের  দুজন  স্বামীই  ইন্তেকাল  করায়  বাধ্য  হয়েই  তিনি  ব্যবসায়  নামেন  ৷  মোহাম্মদ ( সঃ)  খাদিজার  ব্যবসা  পরিচালনা  করতে  থাকেন  সুষ্টভাবে  ৷  তাই  তিনি  খাদিজার  কাছে  অত্যান্ত  বিশ্বস্থ  হয়ে  যান  ৷  এরই  পরিপেক্ষিতে  প্রায়  ৪০  বছর  বয়সী  খাদিজা  ২৫  বছর  বয়সী  মোহাম্মদের (সঃ) কাছে  তাঁর  বিয়ের  প্রস্তাব  প্রেরণ  করেন  ৷ মোহাম্মদ (সঃ)   তখন  আর্থিকভাবে  সচ্ছল একজন  বিশ্বস্থ্য  বন্ধুর  প্রয়োজনীতা  অনুভব  করছিলেন ৷  তাই  খাদিজার  এ  প্রস্তাবে  সম্মতি  প্রদান  করেন তিনি  ৷  নবীজী ( সঃ )  ও  খাদিজার  দাম্পত্য  জীবন  অত্যান্ত  মধুর  ছিল  ৷  এ  সময়ে  তাদের  ছয়টি  সন্তানের  জন্ম  হয়েছে  ৷    তাঁদের  দুই  পুত্র  আল- কাসিম  এবং  আব্দাল্লাহ্  শিশু  বয়সেই  মৃত্যু  বরণ  করেন  ৷  আর  বাকি  চার  কন্যা  - যায়নাব ,  রুকাইয়া , উম্মে  কুলসুম  এবং  ফাতেমা  দীর্ঘদিন  বেঁচেছেন  এবং  ঘর-সংসার  করেছেন  ৷  নবীজী ( সঃ ) তাঁর  সন্তানদের  খূবই  স্নেহ  করতেন  ৷  কিন্তু  হঠাৎ  করে  বিবি  খাদিজা  ইন্তেকাল  করেন  এবং  নবীজী  আবার  একলা  হয়ে  পড়েন  ৷ এই  বিয়ে  ছিল  নবীজীর  প্রথম  বিয়ে  ৷

            ৬২০  সালের  দিকে  নবীজী (সঃ) একজন  সঙ্গিনী  এবং  স্ত্রীর  প্রয়োজনীয়তা  অনুভব  করেন  ৷  তাই  তাঁর  চাচাতো  বোন  এবং  তখনকার  প্রভাবশালী  আমির  গোত্রের  প্রধান  সুহায়েলের  শ্যালিকা  ৩০  বছর  বয়সী  সওদাহ্ র  কাছে  বিয়ের  প্রস্তাব  পাঠান  এবং  পরে  উভয়ের  সম্মতিক্রমে  এই  বিয়ে  অনুষ্ঠিত  হয়  ৷  এটা  ছিল  নবীজীর (সঃ) ২য়  বিয়ে  ৷ প্রাপ্ত  তথ্যমতে  নবীজীর  ইন্তেকালের  বছর  ১১  হিজরি  থেকে    ৪২  বছর  বিধবা  জীবন  কাটিয়ে  সওদা  ৫৩  হিজরিতে  মৃত্যু  বরণ  করেন  ৷
               অন্যদিকে  আবুরকরের  ৬  বছর   বয়সী  মেয়ে  আয়েশার  বিয়ে  ঠিক  হয়ে  ছিল  নবীজীর (সঃ) এক  সময়ের  আশ্রয়দাতা  মু’তিমের  ছেলের  সঙ্গে  ৷  কিন্তু  এই  বিয়ে  হলে  মু’তিমের  ছেলে  মুসলিম  হয়ে  যেতে  পারে  এই  সন্দেহে    আয়েশার  সঙ্গে  তার  ছেলের  বিয়ে  ভেঙ্গে  দেন  তার  পিতা ম’তিম ৷  এই  সময়ে  আবুবকর  আয়েশার  বিয়ে    নবীজীর ( সঃ)   দুই  সহযোগির  সঙ্গে  দিতে  ব্যর্থ  হয়ে রাগকরে  এক  পর্যায়ে  নবীজীকে  প্রস্তাব  করে  বসেন  ৷  তখন  নবীজী (সঃ) সব  বিষয়  বিবেচনা  করে  এ  প্রস্তাবে  রাজী  হয়ে  যান  এবং  সঙ্গে  সঙ্গে  আয়েশার  অনুপস্থিতিতে  এই  বিয়ে  অনুষ্ঠিত  হয়ে  যায়  কাগজে  কলমে  ৷  কিনতু  প্রকৃত আনুষ্ঠানিক  বিয়ে  হয়  আরো  ৩  বছর  পর  আয়েশার  বয়স  ৯ বছর  হলে  ৷ এটা  ছিল  তাঁর  ৩য়   বিয়ে  আর এটি অনুষ্ঠিত  হয়েছিল মদিনায়  হিযরত  গমনের  মাসখানেক পরে ৷  প্রাপ্ত  তথ্যমতে  ১১  হিজরিতে  আয়েশার  বয়স  ছিল প্রায়  ১৮  বছর  আর  ৬৩  বছর  বয়সে  ৫৮  হিজরিতে  প্রায়  ৪৭  বছর  সঙ্গিহীন  এবং  বৈধব্য  জীবন  কাটিয়ে তিনি  মৃত্যু  বরণ  করেন  ৷

            ৬২৫  সালে  বদরের  যুদ্ধের  পর  উমরের  বোন  ১৮  বছর  বয়সী  হাফসাহ্ র স্বামী  কুহনায়েস  ইবনে  হুদাফাহ্  হঠাৎ  মারা  যান  ৷  উমর  প্রথমে  আবুবকর  এবং  পরে  উসমান  কে  তার  বিধবা  বোন  হাফসাহ্ কে  বিয়ের  প্রস্তাব  দেন  ৷  কিন্তু  দু’জনের  কেউই  এ  প্রস্তাবে  রাজী  হন  নাই  ৷  উসমান  হাফসারহ্ র  প্রতি  নবীজীর  আগ্রহ  আছে  বুঝতে  পেরেছিলেন  ৷  তাই  তার  ইচ্ছা  থাকলেও  তিনি  রাজী  হন    নি বলে  ঐতিহাসিকরা  জানিয়েছেন  ৷ এই  ব্যাপারটি নিয়ে  উমর  নবীজী ( সঃ ) কাছে  অভিযোগ  জানাতে  যান  ৷  তখন  অভিযোগের  সময়  বুঝতে  পারেন যে  হাফসাহ্ র ব্যাপারে  নবীজীর  নিজেরই   আগ্রহ  আছে  ৷  তাই  হাফসাহ্ কে  বিয়ে  করতে  তঁকেই  প্রস্তাব  করেন  তিনি   ৷   পরে  নবীজী  ও  হাফসাহ্  উভয়ের  সম্মতিতে    ৬২৫  সালের  গোড়ার  দিকে  এ  বিয়ে  অনুষ্ঠিত  হয়  ৷  ইহা  ছিল  নবীজীর (সঃ) ৪র্থ  বিয়ে  এবং  এই  তিনটি  বিয়েই  ছিল নবীজীর  রাজনৈতিকভাবে  লাভবান  হওয়ার  জন্যের  এবং  অন্য  গোত্রের  সঙ্গে  মৈত্রী  সম্পর্ক  স্থাপনের     বিয়ে  ৷  প্রাপ্ত  তথ্যমতে  নবীজীর  ইন্তেকালের  বছর  ১১  হিজরিতে  হাফসার  বয়স  ছিল  ২৭  বছর  আর  ৪৩  বছর  বিধবা  জীবন  কাটিয়ে  ৬১  বছর  বয়সে  ৪৫  হিজরিতে  মারা  যান  তিনি   ৷

            উহুদের  যুদ্ধের  পর নবীজী  দুস্থ  মহিলাদের প্রতি  মুসলিমদের  দায়িত্ব  গ্রহণের  আহ্বান জানান    এবং  নবীজীও  তখন  ৫ম  স্ত্রী  গ্রহণ  করেন   ৷  বদরের  যুদ্ধে  শহীদ  উবায়দাহ্ ইবনে  আল-হারিসের  বিধবা  পত্নী  যায়নাব  বিনতে  কুসাঈমাহকে  একটি  নিরাপত্তামূলক  থাকার  ব্যবস্থা ( বিয়ে করে ) করে দিয়ে  বেদুঈন  গোত্র  আমির  গোত্রের  সঙ্গে  মৈত্রী  সম্পর্ক  গড়ে  তুলেন  এই  বিয়ের  মাধ্যমে   ৷  তবে  এই  বিয়ের  প্রায়  আটমাস  পরেই  যায়নাব  মৃত্যুবরণ  করেন  ৷      
           
            ৬২৬ সালের  জানুয়ারি  মাসে  নতুন  এবং  ৫ম  স্ত্রী  যায়নাবয়ের  মৃত্যুর কয়েক  মাস পর  নবীজী (সঃ)  তাঁর  চাচাত  ভাই  সালামাহ্ র  বিধবা  পত্নী  হিন্দ  বিনতে  আল-মুঘিরার  কাছে  বিয়ের   প্রস্তাব  পাঠান  ৷  তাকে  সবাই  উম্মে  সালামাহ্  নামে  চিনত  আর  তিনি  মক্কার  শক্তিশালী  মাখযুম  গোত্রের  একজন  নেতৃস্থানীয়  ব্যক্তিরও  বোন  ছিলেন  ৷  উম্মে  সালামাহ্র  বয়স  ছিল  তখন  উনত্রিশ  বছর  ৷  তিনি    রূপবতী  ও প্রাজ্ঞাশীল  মহিলা  ছিলেন  ৷  তাই  নবীজীর (সঃ) সঙ্গে  বিয়ের  পর  তাকে  নিয়ে  বড়  বড়  অভিযানে  যেতে  দেখা  গেছে  নবীজী (সঃ )  কে  ৷  এই  বিয়েটি ছিল নবীজীর ( সঃ) এর   ৬ নং  বিয়ে  ৷ তবে  বিয়েতে  উম্মে  সালামাহ্  প্রথমে  অনিচ্ছুক  ছিলেন  বলে  জানা  যায়  ৷  তার  মধ্যে  একটা  ঈর্ষাবোধ কাজ  করছিল ৷    তাই  হারেমের  জীবনের  প্রতিদ্বন্দ্বীতায়  ঠিকে  থাকতে  পারবেন  কি  না  সে  ভয়ও  সন্দেহ  তাঁর  মধ্যে  কাজকরছিল  ৷ আর  তার  এই  সন্দেহ  পরে  যথার্থ  ছিল  বলে  প্রমাণিত  হয়েছে  ৷ তথ্যমতে  ১১  হিজরিতে  তাঁর  বয়স  ছিল  ৩৫  বছর  আর  মৃত্যু  হয়  ৬১  হিজরিতে  ৮৫  বছর  বয়সে  ৷  হাফসার  বিধবা  জীবন  ছিল  ৫০  বছর  ৷

            মুহাম্মদ (সঃ) এর  সঙ্গে  তার  বিয়ের  ফলে  অন্যান্য  স্ত্রীদের  মধ্যের  সম্পর্কের  ক্ষেত্রে কিছু  ফাটলের  সৃষ্টি  হয়ে  যায়  ৷  কারণ  তখন  থেকেই  মুসলিম  উম্মার  মাঝে  রাজনৈতিক  ক্ষমতা  লাভে  প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী  বিভিন্ন  দলের  অস্তিত্বের  প্রমাণ  পাওয়া  গেছে  ৷  মাখযুমাইট  হিসেবে  উম্মে  সালামাহ্  অভিবাসীদের  অভিজাত  গ্রুপের  প্রতিনিধিত্ব  করতেন  ৷  অন্যদিকে  আয়েশা  ও  হাফসাহ্  নিচু  সারির  প্রতিনিধি  ছিলেন  ৷  তাই  নতুন  স্ত্রীগণ  হারেমে  প্রবেশর  পর  এ  দুটো  প্রতিদ্বন্দ্বী  দলে  যোগ  দিতে    আগ্রহ  দেখাতেন  ৷ তবে  উম্মে  সালামাহ্  নবীজীর (সঃ) নিজ  পরিবারের  সদস্য  এবং  লাজুক  ও  ভীতু  ফাতিমাহ্ কে  তাদের  নেত্রী  মেনে  চলতেন   অন্যান্য  সংখ্যালঘু  দলের  মত  ৷

             এই  পর্যায়ে  প্রাসঙ্গিক  একটি  কথা  উল্লেখ  করা  হল  এখানে  যা  হয়ত  নবীজীর  (সঃ) এর  দাম্পত্য   জীবনের  সঙ্গে  সরাসরি  জড়িত  ছিল  না  ৷  তবে  এর  ঐতিহাসিক  প্রেক্ষাপট  থাকায়  তার  কিছু  এখানে  উল্লেখিত  হয়েছে ৷
           মুহাম্মদ (সঃ) এর  হেরেমের  স্ত্রীদের  এই  বিভক্তি  তখনকার  মুসলিম  উম্মার  মাঝে  জটিল  বিভক্তি  সৃষ্টি  করেছিল  যা  পরবর্তীকালে , নবীজীর (সঃ) ইন্তেকালের  পর , গুরতর  আকার  ধারণ  করেছিল ,  এবং  আজও  একটি  পর্যায়ে  মুসলিমদের  বিভক্তি  করে  রেখেছে  ৷  আহল  আল-বায়েত  বা  নবীজী ( সঃ )  এর পরিবার  এবং বংশধর  অর্থাৎ   বাড়ির  এবং   তাঁর  নিজ  পরিবারের  সদস্যরা  পয়গম্বরের  ইন্তেকালের  পর  চেয়েছিলেন  ফাতিমাহ্  এবং  আলী  ও  তাঁদের পরিবারের লোকজনের বংশধররা  মুসলিম  বিশ্বের  নেতৃত্ব  দেবেন  ৷  কিন্তু  গোত্র  , অভিজাত্য  ও  রাজনৈতিক  কারণে  নবীজীর (সঃ) এর  তখনকার  মুসলিম  উমমাহ্  তাদের  প্রতি যথাযথ  সম্মান প্রদর্শণ  না  করে এবং নবীজীর  প্রতিষ্ঠিত  ধর্মের  আদর্শকেও  পাশ  কাটিয়ে  আবুবকরকে  খলিফাহ্ নিযুক্ত  করা  হয়  ৷ এরই  প্রেক্ষাপটে   তখনই  মুসলিম  উম্মায়  যে  বিভক্তি  সৃষ্টি  হয়েছিল ,   তারই  কারণে পরবর্তীতে   ইসলাম  ধর্মেও স্থায়ী বিভক্তি  সৃষ্টি  হয়ে  বর্তমান  শিয়া  ও  সুন্নি  ধারার  উথ্থান  ঘটেছে  ৷ যা  আজও  একটা  পর্যায়ে  মুসলিমদের  বিভক্ত  করে  রেখেছে  ৷   
                        সুন্নি  ইসলাম :  ইসলামের  সংখ্যাগরিষ্ঠরা  যারা   পয়গম্বর   মুহাম্মদের ( সঃ ) স্বভাব  ও  ধর্মীয়  অনুশীলনের  রীতি  বা  সুন্নাহ্   মেনে  চলে  তারাই  সুন্নি  মুসলিম  বা  সুন্নি  নামে  পরিচিত  ৷  সুন্নিরা  শিয়াদরকেও  মুসলিম  হিসেবে  মানে  কিন্তু  মুসলিম  শাসকদের  পয়গম্বর  মুহাম্মদ ( সঃ) ও  তাঁর  মেয়ের  জামাই  আলী  ইবনে  আবি  তালিবের  বংশধরদের  থেকেই  যে  মুসলিম  সম্প্রদায়ের  শাসক  নিযুক্ত  হতে  হবে  সুন্নিরা  সেটা   বিশ্বাস  করে  না  ৷ যেমন  শিয়ারা  বিশ্বাস  করে  ৷

                          শিয়া  ইসলাম :   ইসলামের  সংখ্যালঘু  গোষ্ঠি  যারা  সুন্নি  থেকে  ধর্মতত্তীয়  ভাবে  ভিন্ন ,  কিন্তু  আন্তরিক  ভাবে  বিশ্বাস  করে  যে  পয়গম্বর  মুহাম্মদের ( সঃ ) একমাত্র  বংশধরদেরই  মুসলিম  সম্প্রদায়ের  নেতূত্ব  দেয়া  উচিত  ৷  এই  চিন্তাধারার  অনুসারীদেরকে  শিয়া   বা   শিয়ামুসলিম  নামে  অভিহিত  করা  হয়  ৷  শিয়ারা  বিশ্বাস  করে  যে  খলিফাদের  নির্বাচনে  পয়গম্বরের  নিকট  পুরুষ  আত্মীয়  আলীকে  নির্বাচন  করা  উচিত  ছিল  ৷  শিয়ারা  বেশ  কয়েকজন ( ৬জন   বা  ১২  জন  ) ঈমামকে  মানে ,  যারা  আলী  বা  ফাতেমার  প্রত্যক্ষ  পুরুষ  বংশধর  বা  তাদের  মনোনিত  কোনো  ইমাম  ৷  তবে  সুন্নি  ও  শিয়াদের  মত  পার্থক্য  সম্পূর্ণ   রাজনৈতিক  , ধর্মীয়  বিশ্বাসে   কোনো  পার্থক্য  নাই  ৷


              

            উম্মে  সালামাহ্ র  সঙ্গে  তাঁর বিয়ের  কিছুদিন  পরে  পয়গম্বরের  চাচাত  বোন  যায়নাব  বিনতে  জাহশকে  তার  স্বামী  যায়েদ  তালাক  দেন  ৷  এই  তালাক  কি  কারণে  যায়েদ  দিয়েছিলেন  তার  স্পষ্ট কোনো কারণ  প্রমাণিত  ভাবে  কোনো  ঐতিহাসিক  দেন  নাই  ৷  তাই  নবীজীর ( সঃ) কারণে  এ  তালাক  হয়েছে  বলে  কেউ  কেউ  মনে  করলেও  তা  প্রমাণিত  সত্য  নয়  ৷  তবে  এই  তালাকের  কিছুদিন  পরে  যায়নাব  বিনতে  জাহশের  সঙ্গে  নবীজীর ( সঃ ) বিয়ে  হয়  ৷  এটা  ছিল  তাঁর  ৭ নং  বিয়ে  ৷  নতুন  স্ত্রী  হিসেবে  হারেমে    আগমন  করেই  অভিজাত  দলের  সঙ্গে  নিজকে  স্থাপন  করে ফেলেন  তিনি ৷   যায়নাবের  বয়স  তখন  ৪০  বছরের  কাছাকাছি  ছিল এবং এর   পরও   তিনি   রূপসী ছিলেন   বলে  প্রচার  ছিল  ৷ তবে  জাহশ তাঁর  চাচাত  বোন  হলেও এর  পূর্বে  তাঁর  পোষ্যপুত্র  যায়েদের  সঙ্গে  তার  বিয়ে  দিয়েছিলেন  নবীজী  নিজেই  ৷  এই  বিয়েতে  নাকি    জাহশের  মতও  ছিল  না    ৷  ঘটনার  বিবরণ  থাকে  জানা  যায়  , একদিন  অপরাহ্নে  মুহাম্মদ (সঃ ) যায়েদকে  দেখতে  তার  ঘরে  গিয়েছিলেন  ৷  তখন  যায়েদ  বাড়ি  ছিলেন  না  ৷  তাই  যায়েদ  ফিরে  এসেছেন  মনে  করে  তার  স্ত্রী  জাহশ  পরনের  সংক্ষিপ্ত  পোশাক  পরিবর্তন  না  করেই  ঐ  সংক্ষিপ্ত  পোশাকে  পরা  অবস্থায়ই   দরজা  খোলেন ৷  তাকে এ  অবস্থায়  দেখেই  নবীজী (সঃ) দ্রুত  তার  সামন  থেকে  সরে  পড়েন  ৷  কিন্তু  মুখ  দিয়ে  বিড়বিড়  করে  বলেন  যে , ‘ সকল  প্রশংসা  আল্লাহ্ র  যিনি  মানুষের  হৃদয়ে  পরিবর্তন  ঘটান ’ ৷  যায়নাব  কিন্তু  যায়েদরকে  বিয়ে  করতে  রাজী  ছিলেন     না  আগেই  উল্লেখ  করা  হয়েছে   ৷ কিন্তু  নবীজীর  ইচ্ছাতেই  এই  বিয়ে  হয়েছিল  ৷   তাই  এবার জাহশের  প্রতি  মুহাম্মদের ( সঃ)  এই মুগ্ধতাকে  যায়েদের  থেকে  উদ্ধার  পাওয়ার  একটি  রাস্তা   হিসেবে  বেঁচে  নেন  এবং  যায়েদকে  তালাক  দিতে  বাধ্য  করেন  ৷  তবে  তালাকের  আগে  যায়েদ  নবীজীর  কাছে  যান  এবং  তাঁর  অনুমতি  প্রার্থনা  করেন  ৷  কিন্তু  নবীজী  তাকে  আল্লাহ্ কে  ভয়  করতে  বলেন  এবং  যায়নাবকে তালাক  না  দিয়ে   স্ত্রী  হিসেবে  তার  নিজের  কাছে  রাখতে    বলেন  ৷ কিন্তু  যায়নাবের  জ্বালাতনে  যায়েদ  এতটাই  অতীষ্ঠ  হয়ে  পড়েন  যে , এক  পর্যায়ে     যায়েদ  যায়নাবকে  তালাক  দিতে  বাধ্য  হয়ে  তালাক  দিয়ে   দেন  ৷  তখন  যায়নাবের  নিরাপত্তা  নিয়ে  নবীজী  চিন্তিত  হয়ে    পড়েন  ৷  শেষ  পর্যন্ত  তালাকপ্রাপ্ত  পালক  পুত্র  যায়েদের   স্ত্রী  এবং  তাঁর চাচাত  বোন  যায়নাবকে  নবীজী  নিজেই   বিয়ে  করেন  ৷ তথ্যমতে  ১১  হিজরিতে  তাঁর  বয়স  ছিল  ৪০  বছর  আর  ৫০ বছর  বয়সে  ১০  বছর  বিধবা  জীবন  পাড়ি  দিয়ে  মৃত্যুবরণ  করেন  ৷

            এই  পর্যায়ে  কোরআনের  ৩৩ নং  সুরা  আহজাব এর  ৪  নং  এবং  ৩৬  থেকে  ৪০ নং  আয়াত  নাযিল  হয়  ৷ 
             আয়াত নং  ৪  এ  বলা  হয়েছে -
                “ আল্লাহ্  কোনো  মানুষের  দুটু  হৃদয়  সৃষ্টি  করেন  নি  ৷  তোমাদের  স্ত্রীরা  যাদের  সাথে  তোমরা  জিহার  করেছ ( মা  বলে  ডেকেছ ) , তাদেরকে  তিনি  তোমাদের  মা  করেন  নি  ; আর  পোষ্যপুত্র  যাদেরকে  তোমরা  পুত্র  বল , আল্লাহ্  তাদেরকে  তোমাদের  পুত্র  করেন  নি  ৷  এগুলো  কেবল  তোমাদের  মুখের  কথা  ৷  সত্য  কথা  আল্লাহ্ ই  বলেন , আর  তিনিই  সরল  পথ  নির্দেশ  করেন” ৷
          আয়াত  ৩৬  এ  বলা  হয়েছে -   ‘ আল্লাহ্  ও  তাঁর  রসুল  কোনো  বিষয়ে  নির্দেশ  দিলে  কোনো  বিশ্বাসী  পুরুষ  বা  নারীর  সে-বিষয়ে  ভিন্ন  সিদ্ধান্তের  অধিকার  থাকবে  না  ৷  কেউ  আল্লাহ্  ও  তাঁর  রসুলকে  অমান্য  করলে  সে  স্পষ্টই  পথভ্রষ্ট  হবে ’   ৷
        আয়াত  ৩৭  এ  বলা  হয়েছে - “ স্মরণ  করো , আল্লাহ্  যাকে  অনুগ্রহ  করেছেন  ও  তুমিও  যাকে  অনুগ্রহ  করেছ  তুমি  তাকে  বলেছিলে , ‘ তুমি  তোমার  স্ত্রীকে  তোমার  কাছে  রাখো ,  আল্লাহ্ কে  ভয়  করো ’  ৷  তুমি  তোমার  অন্তরে  যা  গোপন  করেছিলে  আল্লাহ্  তা  প্রকাশ  ক’রে  দিচ্ছেন  ৷  তুমি  লোকভয়  করছিলে , অথচ  আল্লাহ্ কেই  ভয়  করা  তোমার  পক্ষে  অধিকতর  সংগত  ছিল  ৷  তারপর  জায়েদ  যখন (জয়নাবের  সাথে ) বিবাহ-সম্পর্ক  ছিন্ন  করল  তখন  আমি  তাকে  তোমার  সাথে  পরিণয়সূত্রে  আবদ্ধ  করলাম  যাতে  বিশ্বাসীদের  পোষ্যপুত্ররা  নিজ  স্ত্রীর  সাথে  বিবাহসূত্র  ছিন্ন  করলে  সেসব  রমণীকে  বিয়ে  করতে  বিশ্বাসীদের  কোনো  বাধা  না  হয়  ৷  আল্লাহ্ র  আদেশ  কার্যকর  হয়েই  থাকে” ৷
            আয়াত ৩৮-এ  বলা  হয়েছে - “ আল্লাহ্  নবীর   জন্যে  যা  বিধিসম্মত  করেছেন  তা  করতে  তার  জন্যে  কোনো  বাধা  নেই  ৷  পূর্বে  যেসব  নবী  অতীত  হয়ে  গিয়েছে  তাদের  ক্ষেত্রেও  এ-ই  ছিল আল্লাহ্ র  বিধান ৷  আল্লাহ্ র  বিধান  সুনির্ধারিত” ৷
             আয়াত  ৩৯ -    “ ওরা  আল্লাহ্ র  বাণী  প্রচার  করত , ওরা  আল্লাহ্  ছাড়া  আর  কাউকে  ভয়  করত  না  ৷  হিসাবগ্রহণে  আল্লাহ্ ই  যথেষ্ট  ” ৷
            আয়াত  ৪০- “ মোহাম্মদ  তোমাদের  মধ্যে  কোনো  পুরুষের  পিতা  নয় , বরং  সে  আল্লাহ্ র  রসুল  ও  শেষ  নবী  ৷  আল্লাহ্  সর্ববিষয়ে  সর্বজ্ঞ ” ৷

            ৬২৭  সালে  খুযা’আহ  গোত্রের  এক  উপশাখা  বনি  আল-মুসতালিক  এর  বিরুদ্ধে  একটি  অভিযানে  যেতে  হয়   কারণ  তারা  মদিনা  আক্রমনের  প্রস্তুতি    নিচ্ছিল ৷  নবীজী  এই  অভিযানের  নেতৃত্ব  দেন  ৷  এই  অভিযানে  বিবি  আয়েশা  ও  নবীজীর  সঙ্গে  গিয়েছিলেন  ৷  নবীজী  লোহিত  সাগর  উপকূলে  মুরাঈসি  কূপের  কাছে  তাদের  আচমকা  বাধা  দিয়ে  তাদের  পালাতে  বাধ্য  করেন ৷  এই  অভিযানে  নবীজীর  দল  ২০০০  টি  উট  , ৫০০০ টি  ভেড়াও ছাগল  এবং  আক্রমণকারী  গোত্রপ্রধানের  মেয়ে  জুয়াইরিয়াহ  বিনতে  আল-হারিস  সহ  ২০০  জন  মহিলার  অধিকার  পেয়ে  যান  নবীজীর  দল  ৷  জুয়াইরিয়াহ্  তখন  মুক্তিপণ  বিষয়ে  দরকষাকষির  জন্যে  নবীজীর  সঙ্গে  দেখা  করেন  ৷  মহিলা  যথেষ্ট  সুন্দরী  থাকলেও  নবীজী  তাকে  দেখা  মাত্রই  অপছন্দ  করেন  ৷  কিন্তু  পরে  তাদের  উভয়ের  মধ্যে  খোলাখুলি  আলাপ  আলোচনার  একপর্যায়ে  জুয়াইরিয়াহ্  ইসলাম  ধর্ম  গ্রহণ  করেন  ৷ তখন  নবীজীর  পক্ষ  থেকে  তাকে  বিয়ের  প্রস্তাব  প্রেরণ  করা  হয়  এবং  উভয়ের মতামত  অনুসারে  এই  বিয়ে  অনুষ্ঠিত  হয়  এবং এই  সঙ্গে    বনি  আল-মুসতালিক  গোত্র  ও  নবীজীর  মিত্রে  পরিণত  হয়  ৷  এই  বিয়েটি  ছিল  নবীজীর  ৮ নং  বিয়ে  ৷ প্রাপ্ত  তথ্য  অনুসারে  ১১ হিজরিতে  তাঁর  বয়স  ছিল  ২৫  বছর  ৷  মৃত্যু  হয়  ৫০  হিজরিতে  ৬৫  বছর  বয়সে  ৷  জুয়াইরিয়াহ্  ৩৯  বছর  সঙ্গিহীন ও বিধবা  জীবন  অতিবাহিত  করেছেন 

          আগেই  উল্লেখ  করা  হয়েছে  এই  অভিযানে  আয়েশা  তাদের  সঙ্গে  ছিলেন  ৷  ফিরত  যাত্রায়  আয়েশা  প্রকৃতির  ডাকে  সাড়া  দিতে  আড়ালে  গিয়েছিলেন  ৷  তাঁবুতে  ফিরে  দেখেন  তাঁর  গলার  ফেলে  এসেছেন  ৷  তাই  আবার  তাঁবুর  বাইরে  হার  খুঁজতে  যান  ৷  কিন্তু  যে  লোক  আয়েশার  উটে  সাজ  পরাচ্ছিল  সে  হিজাবে  আয়েশা  অবৃত  আছেন  মনে  করে  সব  কিছু  উটের  পিঠে  তুলে  উট  ছেড়ে  দেয়  ৷ আয়েশা  ফিরে  এসে  ঐ  স্থানটি  খালি  পড়ে  আছে  দেখে  তিনি সেখানে  শুয়ে অপেক্ষায়  ছিলেন  তাকে  নিতে  নিশ্চয়  কাউকে  পাঠানো  হবে  এই  মনে  করে  ,  যখন  সেখানে  তাকে  পাওয়া  যাবে  না   ৷   এদিকে  সাফওয়ান  ইবনে  আল-ম’আত্তাল নামক  একজন  পিছন  থেকে  ফিরছিলেন  ৷  তিনি  আয়েশাকে  চিনতে  পারেন  এবং  তাঁর  সঙ্গে  কথা  বলতে  চাইলে   আয়েশা  পর্দা  দিয়ে  নিজেকে  আড়াল  করেন  ৷  এরপরও  তারা  অনেক  পিছনে  পড়ে   গেছেন  আর  সামনে  থেকেও  কেউ আয়েশাকে নিয়ে যেতে  আসছে  না  দেখে  সাফওয়ান  আয়েশাকে অনক  বলে কয়ে  রাজি  করে  নিজের  উটের  পিঠে  তুলে  নিয়ে  কাফেলার  দিকে  রওয়ানা  দেন   ৷ এদিকে তখনও  কাফেলাতে  যে  আয়েশা  নেই  তা  কেউ  জানতে  পারে  নি ৷  তাই হঠাৎ  তাঁকে  সাফওয়ানের  সঙ্গে  উপস্থিত  হতে  দেখে  নানা  গুঞ্জন  কেউ  কেউ  শুরু  করে  দেয়  ৷

                  এই  বিষয়টি  অনেকদূর  পর্যন্ত  গড়িয়েছিল  ৷  মদিনায়  ফিরে  আয়েশা  অসুস্থ  হয়ে  পড়েন  ৷  কারণ  গুজন  সম্পর্কে  ততদিনে  আয়েশাও  সচেতন  হয়েছেন  ৷  নবীজীও  তাঁর  সঙ্গে  শীতল  ব্যবহার  আরম্ভ  করেছিলেন  ৷  এই  সময়ে  নবীজী  ও  কিংকর্তব্যবিমূড়  ও  অন্যমনষ্ক  হয়ে  পড়েন  ৷  তাই  বোধ  হয়  এই  কারণে  সে  সময়  ওহী  নাযিল  ও   বন্ধ  ছিল  ৷  এই  ঘটনা  নিয়ে অনেকে  সুযোগ  বুঝে  ঝামেলা  সৃষ্টির  প্রয়াস  চালায়  বিভিন্ন  গোত্রের  মধ্যে  ৷  নবীজী  তাঁর  নিজের  তদন্তে  ইহা  সর্বময়  মিথ্যা  বলে  জানতে  পারেন  ৷  কিন্তু  আলী  ছিলেন  আয়েশার  প্রতি  শক্রুভাবাপন্ন  ও  সন্দেহবাদী  ৷  তাই  এই  ঘটনার  সুযোগ  নিয়ে  আলী  নবীজীকে  বলেছিলেন যে ,  তিনি  যেন  আয়েশার  পরিবর্তে  আরেকজনকে  স্ত্রী হিসেবে   বেছে নিতে  ৷  আলীর  এই  কথা  জানতে  পারেন  আয়েশা ৷  তাই  আলীকে  আয়েশা  কোনো  সময়েই আর  ক্ষমা  করতে  পারেন  নি  ৷  পরবর্তীকালে  ইসলামের শিয়া  ও  সুন্নি  বিভক্তির  জন্যে এই  ঘটনাও  অন্যতম  একটি  কারণ  হিসেবে    বিবেচিত  হয়েছে  ৷ এই  ঘটনায়  দুটো  গোত্র  মুখোমুখি  অবস্থানে  দাঁড়িয়ে  যায়  তাই  উম্মার  স্বার্থে  একটি  গ্রহণযোগ্য  সমাধান  অপরিহার্য  হয়ে  পড়ে  ৷ সামান্য  কারণে  নবীজী  জীবিত  অবস্থায়ই  এই  পরিস্থিতির  সৃষ্টি  হয়েছে  ৷  তাই  তাঁর  ইন্তেকালের  পরে  কী  ঘটবে ?   তা  তো  সহজেই  অনুমান  করা  গেছে  তখন  ৷  তাই  আলীকে  প্রথম  খলিফাহ্  নিযুক্ত  করা  হলেও   ইসলামের এই  বিভক্তি  আরো  আগেই  দেখা  দিত  বলে  বিশ্লেষকরা  মনে  করেন  ৷
            এর  মধ্যে  আয়েশা  সুস্থ  হয়ে  উঠেন  ৷  তাই  মুহাম্মদ (সঃ)  স্বয়ং  আয়েশার  মোকাবিলায়  অগ্রসর  হন ৷  এর  আগে  আয়েশার  মা  উম্মে  রুমান  আয়েশাকে  বলে  দেন  যে ,    সুন্দরী  মেয়েদের    এরকম  সমস্যার  মোকাবিলার  জন্যে  প্রস্তুত  থাকতে  হয়  ৷  আর  বাবা  আবুবকর  আয়েশাকে  মসজিদের  কাছে  আবুবকরের  কুটিরে  ফিরার  পরামর্শ  দেন এবং  আয়েশা  তখন  তাঁর  মা ও  বাবার  কাছে  চলে  যান   ৷ 
            মুহাম্মদ ( সঃ) যখন সেখানে  পৌছালেন ,  আয়েশা  তখন  মা ও  বাবার  সঙ্গেই  বসে  ছিলেন  ৷ নবীজকে  সেখানে উপস্থিত  হয়েছেন  দেখে    একসঙ্গে  তিনজনেই  প্রবলবেগে  কেঁদে  উঠেন  ৷ এক  পর্যায়ে  আয়েশার  চোখের  জল  শুকিয়ে  যায়  যখন  মুহাম্মদ (স) সরাসরি  আয়েশাকে  বলেন যে ,   যদি  আয়েশা  কোনো  দোষ  করেন  , তবে  তা  স্বীকার  করে  নিতে   !  অর্থাৎ  আয়েশা  যদি  কোনো  দোষ  করে  থাকেন  তবে  তা  স্বীকার  করে  নিলে  আল্লাহ্  তাঁকে  ক্ষমা  করে  দেবেন  ৷

           কিন্তু  অসাধারণ  আত্মসম্মানের  সঙ্গে  চৌদ্দ  বছরের  বালিকা  স্থিরদৃষ্টিতে  স্বামী  ও  বাবা-মার  দিকে  তাকিয়ে  জবাব  দেন যে  এ  ক্ষেত্রে  তাঁর  কিছু  বলার  অর্থ  হয়  না  ৷  যে  অপরাদ  তিনি  করেননি ,  বা  কখনও  করতে  পারেন  না  , সেটা  কি  ভাবে  স্বীকার  করবেন !  আবার  নিজের  নির্দোষিতার  ওপর  জোর  দিলে  যে কেউ  নবীজীর  মত  তা  বিশ্বাস  করতে  চাইবে  না  ৷  তাই  তিনি  কোরআনের  ১২ নং সুরা  ইউসুফের  পিতা  ইয়াকুবের মত  ধৈর্য  ধারণ  করা  এবং  আল্লাহ্ র  সাহায্য  কামনা  করে  আল্লাহ্ র  ফয়ছালার জন্যে অপেক্ষা  করা  ছাড়া  তিনি  আর  কোনো  উপায়  দেখছেন  না  বলে  তাকে  জবাব  দেন  ৷   এবং  এই  কথা  শেষ  করে  তাদের  সম্মূখ  থেকে  নীরবে  সরে  গিয়ে  বিছানায়  শুয়ে  পড়েন  ৷

           আয়েশার রককম  জবাব  শুনে  নবীজী নিঃসন্দেহে  সন্তুষ্ট  হন  ৷  কারণ  এর  পর  ই  নবীজী  ঘোরের  ভেতর  চলে  যান , যেমন  ওহী  নাযিলের  আগে  তাঁর  যে  অবস্থা  হয়  সে  অবস্থায় চলে  গিয়ে  অবসন্ন  হয়ে  পড়েন ৷ তখন  সেখানে   ঠাণ্ডা  থাকা  সত্ত্বেও  দরদর  করে  ঘামতে  শুরু  করেন তিনি  ৷  তখন   আবুবকর  তাঁর  মাথার  নিচে  চামড়ার  গদি  দিয়ে শরীর  একটা  ম্যান্টাল  বিয়ে  আবৃত  করে  দেন  ৷    উম্মে  রুমানাকে  নিয়ে আবুবকর  তখন   আল্লাহ্  বাণীর  অপেক্ষা  আরম্ভ  করেন  ৷  কারণ  নবীজীর  শারীরিক    অবস্থা  এরকম  হলেই  নতুন  অহী  নাযিল  হয় ৷ তবে  আয়েশা  বরফের  মত  শীতল  হয়ে  বিছানায়  শুয়ে  চিন্তা  করছিলেন  নিশ্চয়  আল্লাহ্  অন্যায়  আচরণ  করবেন  না  তাঁর  প্রতি  ৷
             অবশেষে  সচেতন  হয়ে  ওঠেন  নবীজী ( সঃ)   এবং  বলে  ওঠেন  “ সুসংবাদ  আয়েশা ” !  আল্লাহ্ র  নিকট  হতে  আপনার ( আয়েশার ) নিষ্কলুষতার  বার্তা   এসেছে  ৷  স্বস্তি  ফিরে  আসে  আয়েশার  বাবা-মা ও  স্বয়ং  মুহাম্মদেরও (সঃ) ৷ 
            কিন্তু  আয়েশার  জাবাব  ছিল ,  “ আমি  নবীজীর  কাছে  যাব  না , তাকে  ধন্যবাদও  দেব  না  , আর  মা ও  বাবাকে  বলেন  ,  “ আমি  আপনাদের  দুজনকেও  ধন্যবাদ  দিব  না . কারণ  আপনারা  মিথ্যা  অপবাদ  শুনেও  প্রতিবাদ  করেন  নি  , করেননি  অস্বীকারও  ৷  তবে  কেবল  আমি  আল-ল্লাহ্ কে  ধন্যবাদ  দেবার  জন্যে  শুয়া  থেকে  উঠব  ৷ নবীজী  তখন  আয়েশার  এই  ভৎসনা  মেনে  নেন  এবং  ঘরের  বাইরের   সমাবেশের  মোকাবিলা  করতে  বেরিয়ে  যান  ৷  প্রসঙ্গ  ক্রমে  উল্লেখ  যোগ্য  যে  আয়শার  এবং  উল্লেখিত  ঘটনার  পরিপেক্ষিতে  কোরআনের  ২৪  নং  সুরা  নুর  এর  ১১ নং  আয়াত  নাযিল  হয়  এবং  এর  সাপোর্টে  এই  সুরার  ২১ থেকে ২৩ নং  আয়াত  নাযিল    হয়েছে  ৷   আর  আয়েশা  ও  হাফসাহ্ র  ব্যাপারে  কোরআনের  ৬৬ নং  সুরা  তাহরিম  এর  আয়াত  নং  ১  থেকে  ৫  পর্যন্ত  নাযিল  হয়  ৷  প্রাসঙ্গিক  না  হওয়ায়  এখানে  তা  উল্লেখ  করা  হল  না  ৷ তবে  প্রয়োজনে  পরে  উল্লেখ  করা     হবে  ৷

          ইসলাম  ধর্মে  নারীকে  মার্যাদা  দেয়ার  কথা  জোর  দিয়ে  বলা  হয়েছে  ৷  কিন্তু  বাস্তবে  তা  কী  পরিমাণ মার্যাদা  দেয়া  হয়েছে  তা  আয়েশার একটা  মিথ্যা  ঘটনা থেকেই  উপলব্দি  করা   যায়  ৷  তাও  আবার  নবীজীর  জীবিত  অবস্থায়  ৷  আর  তাঁর  ইন্তেকালের  পর  ন্যায্য  দাবী  আদায়ে  আয়েশাকে উটের যুদ্ধে  খলিফাহ্  আলীর  বিরুদ্ধে  সরাসরি  যুদ্ধে  অবতীর্ন  হয়ে  পরাজিত  হতে  দেখা  গেছে  ৷ যতদিন  ঘাযু  অভিযান  এবং  সামরিক  অভিযান  থেকে  সম্পদ  বা  গণিমতের  মালামাল  প্রাপ্তির  সুযোগ  ছিল  তত  দিন  গোত্রে  গোত্রে  কনফেডারেশন  ঠিকে  ছিল  ৷  এই  কনফেডারেশন  গড়ে  উঠেছিল  শান্তির  ধর্ম  ইসলামের  চেয়ে  গোত্রের   স্বার্থের  কথা  ভেবে  বিভিন্ন  গোত্রের  মধ্যে  , যা  পরে  সময়ের  প্রেক্ষাপটে  একসময়  চিহ্ন- বিচ্ছিন্ন  হয়ে  ইসলামের  মধ্যেই  বিভিন্ন  বিভক্তির  সৃষ্টি  হয়েছে  এবং  যা  বর্তমানে  মুসলিম  বিশ্বে  অব্যাহত  আছে  ৷  আর  বর্তমানে  ইসলাম  ধর্ম  থেকে  রাজনৈতিক  ইসলাম  বেশি  গুরুত্বপূর্ণ  হয়ে  উঠেছে  ৷

           তবে  এই  ঘটনা  ঘটায়  হারেমে  আয়েশা  একজন  নির্ভিক  এবং  সাহসী  নারী  হিসেবে  প্রতিষ্ঠা  পেয়ে  যান  ৷  আবার  আয়েশার  প্রতি  নবীজীর  আগ্রহ  পূর্বের  থেকে  বেড়ে  যায়  ৷  তাই  অন্যন্য  হারেমবাসী  নারীরা  মুহাম্মদ ( সঃ) এর   আয়েশার  প্রতি  পক্ষপাতিত্বের  অভিযোগ  আনেন  ৷ নবীজী  কিন্তু  নিরপেক্ষতা  বজায়  রাখতে  পালাক্রমে  প্রত্যেক  স্ত্রীর  সঙ্গে  রাত্রি  যাপন  করছেন তখন  ৷  আর  সবাইকে  বলেছেন  আয়েশাকে  হিংসা  না  করতে  ৷  আয়েশা  নিশ্চয়  আল্লাহ্ র  কাছেও  প্রিয়  ৷  তাই  একমাত্র  জীবিত  স্ত্রীদের  মধ্যে  শুধু  আয়েশার  উপস্থিতিতেই  তিনি  প্রাত্যাদেশ  বা  ওহী  পেতেন  ৷  এর  পরেও  এই  বিবাদের  অবসান  হয়  নাই  ৷  উম্মে  সালামায়  ও  যায়নাব  নবীজীর  ছোট  মেয়ে  এবং  আলীর  স্ত্রী  ফাতেমাকে  তাদের  দলের  অন্তর্ভূক্ত  করেন  এবং  ফাতেমার  মাধ্যমে  আয়েশার  ব্যাপারে  নবীজিকে  নালিশ  জানান  ৷  নবীজী  এই  নালিশে  কর্ণপাত  না  করে  উল্টে  ফাতিমাকে  প্রশ্ন  করে  জিজ্ঞাসা  করেছেন  ,  আমি  যাকে  ভালবাসি  বলে  তুমি  মনে  কর ,  তাকে  তুমি  ভালবাসবেনা  ? তখন  ফাতেমা  নিশ্চুপ  হয়ে  ফিরে  যান  ৷

            তবে  নবীজী  আয়েশার  সাথে  একবার  খারাপ  ব্যবহার  করেছেন  যখন  আয়েশা  নবীজীর  প্রথম  স্ত্রী  খাদিজার  ব্যাপারে  একবার  বাজে  মন্তব্য  ( দাঁতবিহীন  বুড়ি  বলেছিলেন )   করেছিলেন  ৷   কারণ যখন  সারা  মক্কাবাসীরা  নবীজীকে  প্রত্যাখ্যান  করতেছিল  তখন  একমাত্র  খাদিজাই  নবীজীকে  সমর্থন  দিয়ে  গেছেন  এবং  তাঁর  সাধ্যমত  সাহায্য  সহায়তা  প্রদান  করেছেন  ৷  এর  পরও  আয়েশার  ব্যাপারে  নবীজীর  যথেষ্ট  বিশ্বাস  ছিল  ৷  কারণ  আয়েশা  শুধু  কম  বয়সী  ও  সুন্দরী  ছাড়াও  অত্যান্ত  বুদ্ধিমতী    ছিলেন  ৷
                তাই  নবীজী  যখন  মদিনায়  অনুপস্থিত  থাকতেন  তখন  কোনো  ধর্মীয়  সমস্যা  হলে  আয়েশার  সঙ্গে  পরামর্শ  করাতে  মুসলিমদের  বলে  যেতেন  ৷  তাই  পয়গম্বরের  পরলোক  গমনের  পর  আয়েশা  তাঁর  জীবন  ও  ধর্মীয়  অনুশীলনের  ক্ষেত্রে  গুরুত্বপূর্ণ  ব্যক্তিত্বে  পরিণত  হয়েছিলেন  ৷  তাই  হাদিস  আয়েশা  নামক  এক  বিবরণে  প্রকাশ  করা  হয়েছিল  আয়েশার  বরাত  দিয়ে  প্রায়  ২২১০টি  হাদিসের  ৷  তবে  এর  প্রায়  ১৫০  থেকে  ১৮০  বছর  পর যখন   হাদিসের  সংকলন  করা  হয়  তখন  কিছু  ধর্মীয়  এবং  অনেকটা  রাজনৈতিক  কারণে  আয়েশার  মাধ্যমে  সংগৃহিত  অনেক হাদিস  বাদ  দিয়ে  দেয়া  হয়  ৷৷  আর  শুধু আয়েশাকে  পয়গম্বর  কর্তৃক  সরাসরি  প্র্রদত্ত  ১৭৪  টি  হাদিস  রেখে  বাকিগুলা  বাতিল  করে  দেয়া  হয় ৷  তবে  ইহা  অসত্যের  অজুহাতে  করা  হয়েছে  প্রচারিত  হলেও  বাস্তবে  ইহা  ধর্মীয়  ও  রাজনৈতিক  বিভাজনের  কারণে  হয়েছে  বলে  অনেকে  মনে  করেন  ৷

           এর  পর  অনেক  ঘটনা  ঘটেছে  ,  যা  এই  লেখার  সঙ্গে প্রাসঙ্গিক  না  থাকায় এখানে  উল্লেখ   করা  হয়  নাই  ৷  শুধু  নবীজীর  বিয়ে  সংক্রান্ত  ব্যাপারে    যতটুকু  প্রয়োজন  তারই  উল্লেখ  করা  হয়েছে  পরের  লেখাতে  ৷ 

          এর  পর  ৩১  মার্চ  ৬২৭  সালের  পর  পরিখার  যুদ্ধে  মক্কাবাসীরা  ব্যর্থ  হয়ে  ফিরে  যায় ৷  এর  পর  অনেক ভাবে অনেক  চেষ্টা করেও  মক্কাবাসীরা   মদিনা  দখল  করতে  পারে  নাই  ৷  তবে  বিভিন্ন  গোত্রের  মধ্যের  অনেক  মারামারি  ও  হানাহনির  জন্যে  অনেক  রক্তপাত  হয়  ৷  মুসলিম  উম্মায়কে  অনেক  হুমকির  সম্মুখীন  হতে  হয়েছে  সে  সময়ে  ৷  তবে  কুরাইশদের  বিরুদ্ধে  মুহাম্মদ (সঃ) এর  বিজয়  সবকিছুকে  ছাপিয়ে  যায়  ৷  ৬২৭-২৮  সালের  দিকে  নবীজী  তাঁর  প্রতি  অনুগত  গোত্রের  সমন্নয়ে  নিজস্ব  কনফেডারেশন  গঠন  শুরু  করেন  ৷  এরই  এক  পর্যায়ে  ইহুদি  সম্প্রদায়ের  সঙ্গেও  সম্পর্কের  উন্নতি  ঘটাতে  আরম্ভ  করেন  ৷  এই  রকম  একটি  পদক্ষেপের  কারণে  খায়বরের  ইহুদিদের  নিরাপত্তার  দায়িত্ব  নেয়া  হয়  তাদের  উৎপাদিত  অর্ধেক  খেজুর  প্রদানের  শর্তে  ৷ এই  সংবাদ  শুনে  খায়বারের  উত্তর-পূর্বের  এক  সমৃদ্ধশালী  ইহুদি  গোত্র  অনুরূপ  শর্তাধীনে  নবীজীর  কাছে  আত্মসমর্পণ  করে  এবং  চুক্তি  চুড়ান্ত  করতে  নবীজীর  সঙ্গে  তাদের  গোত্রের  ১৭  বছর  বয়ষ্কা  সুন্দরী  সাফিয়াকে  নবীজীর  সঙ্গে  বিয়ে  দিয়ে  সম্পর্ককে  আরো  দৃঢ়  করে  ! তবে  এর  পূর্বে  বিবাহিত  সাফিয়া  তাঁর  স্বামীকে  হারিয়ে  বিধবা  হয়ে  যান  ৷  অন্যদিকে  সাফিয়া  ছিলেন  নবীজীর  পুরানো  শক্রু  হুযাইহুয়ের  মেয়ে  ৷  তাই  নবীজীর  এই  ৮ নং  বিয়ে  বিবাদমান  দুই  গোত্রের  মধ্যে  সম্পৃতি  বৃদ্ধি  করে  ৷  তবে  বিয়ের  পূর্বেই  সাফিয়া  ইসলাম  ধর্ম  গ্রহণ  করেন  ৷ এবং  এর  পর  আনুষ্ঠানিকভাবে  বিয়ে  সংঘটিত  হয়  ৷ 
সূত্রমতে  ১১  হিজরিতে  সাফিয়ার  বয়স  ছিল  ২১  বছর  ৷  তিনি  ৩৯  বছর  বিধবা  জীবন  অতিবাহিত  করে  ৫০  হিজরিতে  ৬০  বছর  বয়সে  মারা  যান  ৷
            এরপর  অনেক  ঘটনা  ঘটেছে  ৷  অভিযানে  অংশ নিতে গিয়ে  অনেক  বিশ্বাসী  শহীদ  হয়েছেন , কেউ বা  মারা  গেছেন  ৷  এই  রকম  এক  ঘটনা  ঘটেছে  তাঁর  চাচাত  ভাই   এবং  প্রভাবশালী  উবায়দাল্লাহ্  ইবনে  জাহশ  এর  বেলায়  ৷  তিনি  আবসিনিয়ায়  মারা    যান  ৷  জাহশ  বিশেষ  কোনো  কারণে  আবসিনিয়ায়  অবস্থানকালে  ইসলাম  ধর্মের উপর  বিশ্বাস  হারিয়ে  ফেলেন  এবং  পরে  ইসলাম  ধর্ম  ত্যাগ  করে  ক্রিশান  হয়ে  সে  ধর্ম  গ্রহণ  করেন  ৷  তিনি  মারা  যাওয়ার  পরে  তার  ৩৯  বছর  বয়সের  বিধবা  স্ত্রী  রামলাহ্ কে  নবীজী  বিয়ে  করেন  ৷ রামলায়  তখন  সকলের  কাছে  কুনিয়া  উম্মে  হাবিবা  নামে  পরিচিত  ছিলেন  ৷  ঐতিহাসিকদের  মতে  এই  বিয়ে  একটি  কৌশলী  ও  রাজনৈতিক  বিয়ে  ছিল  ৷  কোনোভাবেই  এটা  ভাললাগার  বিয়ে  ছিল  না  ৷  কারণ  ইসলাম  ও  নবীজীর  চীর শক্রু  আবুসুফিয়ানের  বিধবা  মেয়ে  ছিলেন  উম্মে  হাবিবা  ৷  হাবিবাকে  প্রথম  হারামে  স্থানসংকোলান  না  হওয়ায়  মসজিদের  পার্শ্ববর্তী  একটা  বাড়িতে  রাখতে  হয়  ৷  এই  বিয়েটি  নবীজীর  ৯ নং  বিয়ে  ছিল  ৷ প্রাপ্ত  সূত্রমতে  ১১  হিজরিতে  হাবিবার  বয়স  ৩৯  বছর  ছিল  ৷  মৃত্যু  হয়েছে  ৪৪  হিজরিতে  ৭২  বছর  বয়সে  ৩৩  বছর  বিধবা  জীবনে  থাকার  পরে  ৷   
            এই   ইহুদি  এবং  সুন্দরী  নতুন  স্ত্রীর  সংবাদ  শুনে  আয়েশা  বিমূড়  হয়ে  পড়েন ৷ তবে  আয়েশা  অসংযত  হয়ে  যান  সাফিয়ার  সঙ্গে  নবীজীর  বিয়ের  পর  থেকেই  ৷ তবে  এক  সময়ে  তিন  তরুণী  স্ত্রী  আয়েশা , হাফসা , এবং  সাফিয়ার  মধ্যে  বন্ধুত্ব  গড়ে  ঊঠে  এবং  তাঁরা  তিনজন  মিলে  আলাদা  এক  দল  গঠন    করেন  ৷

          এই  পর্যায়ে  কিছু  গৎবাধা  হামলার  পর  ৬২৯  সালের  মার্চ  মাসে  হুদাইবিয়ার  চুক্তির  শর্তানুযায়ী  কা’বায়  উমরাহজ্জের  উদ্দেশ্যে  নবীজী  ২৬০০০  হাজার  তীর্থযাত্রী  নিয়ে  মক্কায়  রওয়ানা  হন  ৷  নবীজীর  কাফেলা  মক্কার  নিরপেক্ষ  এলাকা  বা  স্যাঙ্কচ্যুয়ারির  কাছে  পৌঁছার  পর  চুক্তির  প্রতিশ্রুতি  অনুযায়ী  কুরাইশরা  শহর  খালি  করে  দেয়  ৷  এই  সময়  মক্কার  গোত্র  প্রাধানরা  একসঙ্গে  আবু  কুবায়েস  পাহাড়ের  চূড়ায়  দাঁড়িয়ে  এই  অসাধারণ  দৃশ্য  অবলোকন  করেন  ৷  নবীজীর  বিখ্যাত  উট  কাসওয়ার  পিঠে  বসে  তীর্থ  যাত্রীদের  নেতৃত্ব  দিয়ে নবীজী শাদা  পোষাক  পরিহিত  বিশাল  এক  মিছিল  নিয়ে  যখন  নগরীতে  প্রবেশ  করেন  তখন  মিছিলের  লোকদের  চিৎকারে  গোটা  নগরী  গমগম  করতে  থাকে আর  তাঁরা  তখন  আওয়াজ  করে  বলতে  ছিলেন -“ হে  আল্লাহ্  তোমার  সেবায়  আমি  উপস্থিত  হয়েছি” ৷  এর  পর  নবীজী  উটের  পিঠ  থেকে  নেমে  সেখানে  অবস্থিত  কৃষ্ণ  পাথরকে  জড়িয়ে  ধরে  চুম্বন  করেন  এবং  তারপর  শুরু  করেন  প্রদক্ষিণ , তখন  তাঁর  সঙ্গের  গোটা  মিছিল  তাঁকে  অনুসরণ  করে  ৷  উমরা  হজ্জ  করতে  মূল  হজ্জের  মত  আরাফাত  পর্বত  ও  মিনা  উপত্যাকায়  গমনের  প্রয়োজন  পড়ে  না  উমরা  হজ্জ  পালনকারীদের  ৷  তবে  তীর্থযাত্রীরা  সাতবার  সাফা  ও  মারওয়াহ্  পর্বতের  মাঝে  দৌড়াদৌড়ির  পর্ব  সমাপ্ত  করেন  ৷  এই  সব  দৃশ্য  এবং  এত  লোক  সমাবেশ  দেখে  মক্কাবাসী  অনেকের  মনে  ভয়  ঢুকে  যায়  ৷  বিশেষকরে  পূর্বে  নবীজীর  সঙ্গে  খারাপ  ব্যবহার  করেছেন  ৷  তাই  নিজেদের  রক্ষা  করতে  কেউ  কেউ  বিভিন্ন  পথ  খুঁজতে  আরম্ভ  করেন  ৷  এই  রকম  এক  পথ  খুঁজতে  গিয়ে  নবীজীর  বিরোধিতাকারী  চাচা  আব্বাস  একটি  পদক্ষেপ  নেন  ৷  তখন  তিনি  ভাতুষ্পুত্রকে  দেখতে  নগরীতে  প্রবেশ  করেন  এবং  সদ্য  বিধবা  হওয়া  তার  মেয়ে  মায়মুনাহ্ কে  নবীজীর  সঙ্গে  বিয়ে  দেয়ার  প্রস্তাব  করেন  ৷  নবীজী  তখন  অনেক  চিন্তাভাবনা  করেন  ৷  শেষ  পর্যন্ত  চাচা  আব্বাসকে  নিজের  পক্ষে  এবং  ইসলাম  ধর্মে  আনতে  এই  বিয়েতে  রাজি  হয়ে  চাচার  প্রস্তাব  গ্রহণ  করেন  ৷  এই  বিয়ের  অনুষ্ঠানে  কুরাইশদেরও  আমন্ত্রণ  করা  হয়  ৷  এরফলে  মক্কাবাসীদের  মধ্যে  বিভক্তির  সৃষ্টি  হয়ে  যায়  ৷ এই  বিয়ে  ছিল  নবীজীর  ১০  নং  বিয়ে  ৷ এরই   এক  পর্যায়ে বিভক্ত  মক্কাবাসীর  এক  গোত্রের  নেতা  সুহায়েল  আবু-কুবায়েস  পর্বত  থেকে  আসেন  এবং  মুহাম্মদ (সঃ) কে  স্মরণ  করে  দেন  যে  তাদের  চুক্তির  ৩ দিন  অতিবাহিত  হয়েছে  ৷  তাই  তাদের  এই  স্থান  ত্যাগ  করতে  হবে  ৷ তখন  অন্য  গোত্রের  নেতা  সা’দ  ইবনে  উবায়দাহ্  এর  প্রতিবাদ  করেন  এবং  বলেন যে  তাদের  সঙ্গে  তিনি  যেন  খারাপ  ব্যবহার  না  করেন  ৷  তবে  এইদিন  রাত্রেই  অত্যান্ত  শৃঙ্কলার  সঙ্গে  তাঁরা  নগর  ত্যাগ  করেন  ৷  এই  ঘটনাকে  মক্কাবাসীরা  নবীজীর  নৈতিক  বিজয়  হয়েছে  বলে  ধরে  নেয়  ৷  এর  পর  থেকে  মক্কার  তরুণদের  অনেকেই  মক্কায়  তাদের  ভবিষ্যৎ  অন্ধকার  দেখে  মদিনায়  গমন  করে  নবীজীর  দলে  যোগদিতে  আরম্ভ  করে  ৷  এখানে  ধর্মবিশ্বাস  থেকে  ব্যক্তিস্বার্থকে  বড়  করে  দেখার  প্রবণতা  লক্ষ্য  করা  যায়  ৷  এদের  মধ্যে  আমর  ইবনে  আল-আস  এবং  খালেদ  ইবনে  আল-ওয়ালিদ  অন্যতম  ছিলেন  ৷  যদিও  এই  দুইজন  নবীজীর  বিরুদ্ধে  বদরের  যুদ্ধে  অংশ  নিয়ে  মক্কায়  আলোচিত  ব্যক্তিতে  পরিণত  হয়েছিলেন  ৷
            তবে  তখন  সিরিয়ার  সীমান্তের  কাছে  এক  অভিযানে  নবীজীর  পরিবারের  দু’জন  সদস্যকে  হারাতে  হয়  ফলে  অভিযান  অসমাপ্ত  রেখে  বাহিনীকে  ফিরত  নিয়ে  আসতে  হয়  সহ-সেনাপতি  খালিদকে  ৷  কারণ  এই  অভিযানের  প্রথমেই  নবী  পরিবারের  জা’ফর  ও  যায়েদ  মারা  যান  ৷
             এই  বছরে  নবীজীর  জন্যে  এক  নতুন  ব্যক্তিগত  আনন্দের  সংবাদও  বয়ে  এনেছিল  ৷  মিশরের ক্ষমতাশীন  মুকাওকিস   নবীজীর  জন্যে  কোঁকড়া  চুলের  এক  অপূর্ব  সুন্দরী  মিশরিয়  মারিয়াম  নামের  একজন  দাসীকে  উপহার  হিসেবে  পাঠিয়ে  দেন  মিশরের  রাজনৈতিক   স্বার্থ  রক্ষার্থে  ৷  ইসরাইলীরা  যাযাবর  জীবন  থেকে  স্থায়ী  বসতি  গড়ে  তোলার  সময়  থেকেই  তাওরাত  কিতাবের বিধান অনুসারে  উপ-পত্নী  গ্রহণের  বিধান  মেনে  চলত ৷  আরবে  তখন  অনেকেই  দাসীদের  উপ-পত্নী  হিসেবে  গ্রহণ  করত  ৷  তাই  নবীজীও  এই  সামজিক  রীতি  অনুসারে  মারিয়ামকে  উপ-পত্নী  হিসেবে  গ্রহণ  করেন , যেমন  ইব্রাহিম (আঃ)  হাজেরাকে  উপ-পত্নী  হিসেবে  গ্রহণ  করেছিলেন  ৷ ইহা  ছিল  নবীজীর  ১১  নং  বিয়ে  ৷  তখন  প্রত্যেক  দিন  রাত্রে  নবীজী  মারিয়ামর  ঘরে  যাওয়া  আরম্ভ  করেন  ৷  তার    কিছুদিনের  মধ্যেই  মারিয়াম  অন্তঃসত্তা  হয়ে  পড়েন  এবং  পরে  একটি  ছেলের  জন্ম  হয়  ৷  খাদিজার  পরে  এই  প্রথম  নবীজীর  কোনো  স্ত্রীর  গর্ভে  সন্তান  জন্ম  হয়  ৷  তবে  আয়েশা  সহ  আরো  অনেক  স্ত্রীর  বয়স  কম  ছিল  আবার  অনেক  বিধবা  স্ত্রীদের  পূর্বের  স্বামীর  সংসারের  সন্তানাদিও  ছিল  ৷  কিন্তু  নবীজীর  সংসারে  আগমনের  পর  কোনো  সন্তানাদি  হয়  নাই  ৷  তবে  মারিয়াম  নবীজীর  সংসারে  কতদিন  অতিবাহিত  করার  পর  এই  সন্তানের  জন্ম  হয়েছিল  তা  জানা  যায়  নি  !!  তবে  পুত্রসন্তানের  জন্ম  হওয়ায়  নবীজী  খুবই  খুশী  হন  এবং  ঐ  সন্তানের  নাম  ইব্রাহিম  রাখেন  ৷ তবে  কিছুদিনের  পর  ইব্রাহিমের  মৃত্যু  হয়  ৷  প্রসঙ্গক্রমে  উল্লেখযোগ্য  যে  নবীজী  মক্কায়  অবস্থান  কালে  এবং  খাদিজার  গর্ভে    পুত্রসন্তানের  জন্ম  হলে  ও তারা  দু’জনই  পরে  মারা  যায়   ৷  তখন  অবিশ্বাসীরা  বলা  আরম্ভ  করে  যে  , আল্লাহ্ র  রসুল  কী  নির্বংশ  থাকবে !   তখন  কোরআনের  ১০৮  নং  সুরা  কাউসার (  সুরা নাযিলের  ক্রমঅনুসারে  এই  সুরাটি  হচ্ছে  ১৫  নং )  নাযিল  হয়  ৷
             এই  সুরাতে  বলা  হয়  আয়াত ১ নং  , - “ আমি  তো  তোমাকে  কাউসার ( ইহকাল  ও  পরকালের কল্যাণ ) দান   করেছি
              ( আয়াত  ২ নং ) সুতরাং  তুমি  তোমার  প্রতিপালকের  উদ্দেশে  নামাজ  পড়ো  ও  কোরবানি  দাও ৷
               ( ৩ নং  আয়াত  ) যে  তোমার দুশমন  সে-ই তো  নির্বংশ ” ৷

            নবীজীর   এই  প্রত্যেক  দিনই  মারিয়ামের  সঙ্গে  রাত্রিযাপন  করাকে  কেন্দ্র  করে  আরেক  ঘটনার  সূত্রপাত  হয়  ৷ কারণ এতে  তাঁর  অন্যান্য  স্ত্রীরা  মারিয়ামের  প্রতি  চরমভাবে  ঈর্ষান্বিত  হয়ে  পড়েন  ৷  তবে  প্রথমে  আয়েশা  ও  হাফসা  মিলে  হারেমে  এর  বিরুদ্ধে  প্রতিবাদ  ও  বিদ্রোহ  সংঘটিত  করেন এই  পরিচয়হীনা  দাসী ও  পরে  নবীজীর  ১১ নং  স্ত্রী  ও  উপ-পত্নীর  ব্যাপারে  ৷  ( এ  ব্যাপারে  পূর্বে উল্লেখিত  ৬৬  নং  সুরা  তাহরিনের  ১  থেকে  ৫  নং  আয়াত  নাযিল  হয় ৷ )  আয়েশা   সন্তানহীন  ছিলেন  ৷  তাই  তাঁর  কষ্টও  ছিল    অধিক  ৷  তবে  নবীজী  তাঁর  নারীদের  বেলায়  কোমল  ও  শিথিল  ছিলেন  ৷  কিন্তু  তাঁর  অন্যতম  সহযোগী  উমর  ছিলেন  এর  বিপরিত  ৷  একবার  নবীজীর  স্ত্রীদের  মধ্যে  সম্পতি  কিছু  লুণ্ঠিত  মালামালের  পরিমান  নিয়ে  ঝগড়া   বাদে  ৷  তাঁরা  অন্যদের  থেকে  বেশি  অংশ  দাবী  করতেছিলেন  ৷  ঠিক  এসময়ে  এইস্থানে  উমর  এসে  পড়লে  সবাই  নীরব  হয়ে  পড়েন এবং  পর্দার  আড়ালে  আশ্রয়  নিতে  আরম্ভ  করেন  ৷  এ  দৃশ্য  দেখে  উমর  মন্তব্য  করেন  যে , পয়গম্বরের  স্ত্রীদের  স্বামীর  প্রতি  একই  রকম  শ্রদ্ধা  থাকলে  ভাল  হত ! তিনি  তাদেরকে  উদ্দেশ্য  করে  আরো  বলেন  যে ,    ‘ আপনারাই আপনাদের  শত্রু   , আমাকে  ভয়  পান  অথচ  আল্লাহ্ র  রসুলকে  ভয়  পান  না ’  ৷  তখন  স্ত্রীদের  মধ্য  থেকে  একজন  উমরের  কথার  জবাব  দিতে গেয়ে  নাকি  বলেছেন  যে  ‘ আপনি  আল্লাহ্ র  রসুল  থেকে  অনেক  রুক্ষ  এবং  কঠোর’ ৷  

              নবীজীর  পরিবারে  অর্থাৎ  হারেমবাসীদের  মধ্যে এই  সময়ে   যখন    ঝগড়া  ও  মনোমালিন্য  চলছিল  তখন  নবীজী  একপর্যায়ে  বিরক্ত  বোধ  করেন   এবং  আর  মারিয়ামের  কাছে  রাত্রে  না  যাওয়ার  সিন্ধান্ত  নেন  ৷  তাতেও  যখন  পরিস্থিতির  উন্নতি  হয়  নাই , তা  দেখে   তখন  নবীজী  একমাস  নিজেকে অসহায়ের  মত  সব  স্ত্রীদের  কাছ  থেকে  সরিয়ে  নেয়ার  সিন্ধান্ত  গ্রহণ  করেন   ৷ এই  সংবাদ  প্রচার  হয়ে  পড়ে  সর্বত্র  ৷  অনেকে  তখন  বলাবলী  আরম্ভ  করে  যে , নবীজী  হারেমের  নারীদের  ত্যাগ  করেছেন  !  কেউ  কেউ  বলতে  থাকে  যে , নবীজী  তাঁর  সব  স্ত্রীদের  ত্যাগ  করেছেন  !  এই  খবরে  গোটা  মুসলিম  সমাজ  ভীত  হয়ে  পড়ে  ৷

              কিন্তু  এটি  শুধু  হারেমের  বা  পারিবারিক  অভ্যন্তরীণ  সঙ্কট  ছিল  না  ৷ কারণ  আবুবকর  ও  উমরের  মেয়েদের  ত্যাগ  করলে  ওদের  মধ্যের  সম্পর্কের  অবনতি  হবে  ৷  ফলে  মুসলিম  উম্মায়  ভাঙ্গনের  সৃষ্টির  আসঙ্কা  তখন  কেউ  কেউ  করছিলেন  ৷  কয়েকজন  নারীর  ঝগড়া  বিবাদের  ফলে  যেন  এতদিনের  বিশ্বাস  ও  আদর্শ  সহ  নতুন  ধর্মের  সবকিছু  এক  অনিশ্চয়তার  মুখোমুখি  হয়ে  পড়ে যায়  ৷

                 অন্যদিকে  মদিনার  অভ্যন্তরীণ  বিরোধ  ও  নবীজীর  স্ত্রীদের  প্রভাবিত  করছিল  ৷ তাই  অনেকে  আবার  নবীজীকে  তাঁর  সব  স্ত্রীদের  ত্যাগ  করারও  পরামর্শ  দেন  ৷ তবে  শেষ  পর্যন্ত  উমরের  একান্ত  প্রচেষ্টায়  এর  একটি  সুন্দর  ও  গ্রহণযোগ্য  সমাধান  বের  হয়  ৷  তখন  এসবের  সাময়িক  অবসান  হয়  ৷  ( কারণ  পারিবারিক  এই বিভক্তির  কারণেই  পরবর্তিতে  ইসলামে  শিয়া  ও  সুন্নির  সৃষ্টি  হয়েছে  বলে  সংশ্লিষ্টরা  মনে  করেন ৷ )  তখন  নবীজী  উমরকে  জানান  যে  তিনি  আর  তাঁর  স্ত্রীদের  ত্যাগ  করবেন  না  ৷  এই  সংবাদ  প্রচারের  সঙ্গে  সঙ্গে  মুসলিম  উম্মাহ্ য়  শান্তি  ফিরে  আসে  এবং  সবার  মুখে  হাসি  ফুটে  উঠে  ৷

            পয়গম্বর  স্বাভাবিক  হয়ে  গেলে  কথা  প্রসঙ্গে  উমর  তাঁর  কাছে  জানতে  চান  যে  , আল্লাহ্   কেন  তাঁর  রসুলকে  বাইযানটিয়াম  ও  পারসিয়ার  সম্রাটগণের  মত পারিবারিক  জীবনে  বাড়তি  সুযোগ  গ্রহণের  অনুমতি  দেন  নি ?  প্রথমে  উমরকে  ভাৎসনা  করেন  নবীজী  এবং  পরে  বলেন  যে , ওরা  পৃথিবীতে  সকল  আনন্দ  ভোগ  করে  ফেলতেছে  ৷  আখেরাতে  তারা  কিছুই  পাবে  না  ৷
            এরপরে  কোরআনে  তাঁর  স্ত্রীদের  ব্যাপারে  ৩৩  নং  সুরা আজহাব এর   ২৮  নং , ২৯ নং , ৩০ নং  ৩১  নং  ৩২ নং  ৩৩ নং  ৩৪  নং  ৩৫ নং  এবং  ৩৬  নং  আয়াত  নাযিল  হয়েছে  ৷  তবে  এই  সুরার  ৫৩ নং , ৫৪ নং , ৫৫ নং , ৫৬ নং ৫৭  নং  ৫৮  নং  এবং  ৫৯ নং  আয়াতে  নবীজর  স্ত্রীদের  জন্যে  অনেক  আদেশ  ও  নির্দশের  উল্লেখ  রয়েছে   ৷
      আর  নবীজীর  ব্যাপারেও  তাঁর  কি  করনীয়  তা  নির্ধারণ  করে  যেসব  আয়াত  নাযিল  হয়েছে  তার  মধ্যে  উল্লেখযোগ্য  গুলো   হচ্ছে  ৩৩ নং  সুরা আজহাব এর  ৩৭  নং  আয়াত , ৩৮  নং  আয়াত  , ৪০  নং  আয়াত , ৫০  নং  আয়াত  , ৫১  নং  আয়াত ,  ৫২  নং  আয়াত  ( যে  আয়াতে  ১১নং  বিয়ের  পর  আর  বিয়ে  না  করার  বিধান  দেয়া  হয়েছে ৷  তবে  দাসীদের  ব্যাপারে  এ-বিধান  প্রযোজ্য  ছিল  না  ৷ )
        অন্যদিকে  ইসলামে বিধবা বিবাহ বৈধ থাকলেও নবী মোহাম্মদ ( সঃ) এর মৃত্যুর পর তার স্ত্রীদের আর বিবাহ  করা  নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে   কোরআনে  একটি  আয়াত  নাযিল  হওয়ার  পর   । ( ৩৩  নং  সুরা  আজহাবের ৫৩ নং  আয়াতে  এই  নির্দেশ  দেয়া  হয়েছে আগ্রহীদর 
         
          এর  পরে যখন  সুরা  আজহাবের  ৫২  নং  আয়াত  নাযিল  হয়ে  নবীজীর  আর  কোনো  বিয়ে করা বা  স্ত্রীগ্রহণ   নিষিদ্ধ  হয়ে  যায়  তখন  হারেমের  স্ত্রীদের  মধ্যে   বাজ্যিকভাবে কিছুটা  শান্তি  ফিরে  আসে  ৷  তবে  অভ্যন্তরীণ  বিবাদ  থেকেই  যায়  ৷      তাই  নবীজীর  ইন্তেকালের  পর  নবীজীর  পরিবারের ও  রক্তধারার  লোকজন  একদিকে  এবং  বাকিরা  সব  অন্যদিকে  থেকেই  যান  ৷  যার  ফলশ্রুতিতে  ৪র্থ  খলিফা  আলীর আততায়ির  হাতে  শহীদ  হয়ে ইন্তেকালের  পর  মুসলিম  উম্মাহ্ র  বিভক্তি  প্রকট  হয়ে  উঠে ৷  আর  তখন  থেকেই  মূল  ও  প্রাথমিক  যুগের  ইসলামে  শিয়া  ও  সুন্নি  এই  দুই  ধারার  সৃষ্টি  হয়েছে  , যার  রেশ  এখনও  চলছে  ৷  আর  অবস্থাদৃষ্টে  মনে  হয়  তা  অনন্ত  কাল  ধরে    চলবে  ৷  যদিও  এই  বিভক্তি  প্রথমে  ধর্ম  থেকে  রাজনীতির  প্রাধান্য বেশি  ছিল ৷  অর্থাৎ  নবীজীর  হারেমের  বিভক্তি  পরবর্তিকালে  ইসলাম  ধর্মের  দুই  ধারায়  বিভক্তি  লাভ  করেছে  এবং  এই  দুই  ধারা  এখনও  অব্যাহত  আছে  , ভবিষ্যতেও  থাকবে !  ( চলবে )
 
(সুত্র; ক্যারেন  আর্মস্ট্রং  এর মুহাম্মদ , মহানবীর  (সঃ) জীবনী , অনুবাদ : শওকত  হোসেন , থেকে  তথ্যাদি  সংগ্রহ  করে  এই  লেখায়  গ্রহণ  করা  হয়েছে  ৷  তাই  মূল  সূত্র  উল্লেখিত  বইতে পাওয়া  যাবে  ৷ কোরআনের  আয়াতগুলোর  অনুবাদ  নেয়া  হয়েছে মুহাম্মদ  হাবিবুর  রহমানের  কোরানশরিফ  , সরল  বঙ্গানুবাদ  থাকে  ) 


   ইনতেকাম

— সুব্রত শুভ

এই লেখাটি আমার লেখার সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায় এই লেখাটি আমার লেখার এই  পর্বে আগ্রহী পাঠকদের জন্যে যুক্ত করা হলো ৷ (সৌজন্যে এই লেখাটির লেখক সুব্রত শুভ ) 


ইনতেকামশব্দের অর্থ প্রতিশোধ। ইনতেকাম নিতে গিয়েই ইসলামের প্রথম উগ্রবাদী দল ও কোরানের প্রথম রাজনৈতিক ব্যবহার শুরু হয়। ইসলামের প্রথম উগ্রবাদী দলের জন্ম কোন প্রেক্ষিতে হয়েছে এবং কোরান কীভাবে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহৃত হয়, শিয়া-সুন্নির দ্বন্দ্ব কীভাবে শুরু হয় সবকিছুর পেছনে রয়েছে এই ইনতেকাম!
নবী মুহাম্মদের মৃত্যুর পর আরবের রাষ্ট্র প্রধান অর্থাৎ খলিফা কে হবে তা নিয়ে খলিফা পদের দাবীদাররা দ্বন্দ্ব জড়িয়ে পড়েন। খলিফা প্রতিযোগিতার সবাই ছিলেন নবীজির আত্মীয়: শ্বশুর, মেয়ে জামাইরা, চাচাত ভাই। ফলে নবীজির লাশ ফেলে রেখে চলে খলিফা নির্বাচনের লড়াই। এখানে স্মরণ রাখা উচিত আত্মীয়তার চাদরে মূলত আরবের গোত্র গত দ্বন্দ্বই আবার মাথা চাঙা দিয়ে উঠে।
নবী মুহাম্মদ ও সুন্নি মত অনুসারে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর কোরাইশ বংশের দুই গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের দুই জনের পূর্ব পুরুষ ছিলেন আবদে মনাফ। আবদে মনাফের দুই পুত্র ছিল: আবদে শামস ও আবদে হাশিম। পরবর্তীতে ক্ষমতার লড়াই চলে এই গোত্রের মধ্যে। আবদে শামসের মৃত্যুর পর পুত্র উমাইয়া নেতৃত্বের দাবী করলে এই নিয়ে আবদে হাশিমের সাথে দ্বন্দ্বের সূচনা হয়। এর ফলে কোরাইশরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়: হাশিমী গোত্র ও উমাইয়া গোত্র। মক্কার কাবা গৃহের দায়িত্ব চলে যায় হাশিমী গোত্রের হাতে অন্যদিকে প্রতিরক্ষার দায়িত্ব যায় উমাইয়া গোত্রের হাতে। কাবা শরীফ হাত ছাড়া হওয়ায় উমাইয়া গোত্র অর্থের দিক থেকে হাশিমী গোত্র থেকে পিছিয়ে পড়েও প্রশাসনিক দক্ষতা, কূটনৈতিক বিষয়ে তারা বেশ দক্ষতা অর্জন করে। ফলে দিনকে দিন হাশিমী ও উমাইয়া গোত্রের মধ্যে বিরোধ বাড়তেই থাকে। এমনকি এক দলের হাতে অন্যদলের রক্তারক্তি ছিল তৎকালীন স্বাভাবিক ঘটনা। কালের পরিক্রমায় হাশিমী গোত্রে জন্ম নেয় নবী মুহাম্মদ ও হযরত আলি। হযরত আলি ছিলেন নবীর সবচেয়ে কাছের মানুষ। সম্পর্কে তাঁর চাচাত ভাই ও মেয়ের ( হযরত ফাতেমা) জামাই ও প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী। যিনি কখনো মূর্তি পূজাও করেন নি।
আলির বীরত্বের জন্যে আলিকে বলা হতো Lion Of God. নবী মুহাম্মদ ও খাদিজার সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিলেন হযরত আলি। ইসলাম ধর্ম যখন শিশু ঘরে সেই সময় থেকেই আলি নবী মুহাম্মদের ইসলাম জন্যে নিজেকে উৎসর্গ করেন। এমনকি কোরাইশরা যখন নবী মুহাম্মদকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আলি নবীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। নবীজির সাথে আলির সম্পর্ক কীরূপ ছিল তা বোঝা যায় নবীজির এই উক্তিতেই-যে লোক আমার আলিকে দুঃখ দেবে, মনে করো সে আমাকেই দুঃখ দিল, যে লোক আমার আলির বিরুদ্ধাচরণ করবে, মনে করো সে আমারই বিরুদ্ধাচরণ করলো।এছাড়াও নবীজী যখন স্ত্রীগণের উপর বিরক্ত হয়ে তাদের ত্যাগ করেছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন-প্রফেটের তরফ থেকে আলি চাইলে যে কোন নবী-পত্নীকে ডিভোর্স দিতে পারবেন।
খলিফা ইস্যুতে কথা উঠলে সকল ঐতিহাসিকগণ একটি কথা বলে থাকেন যে, নবী মুহাম্মদ খলিফা নির্বাচন করে যেতে পারেন নাই। সুতরাং কথাটি স্পষ্ট যে তিনি চেয়েছিলেন খলিফা নির্বাচন করতে কিন্তু খলিফা নির্বাচন করে যেতে পারেন নাই। মৃত্যু শয্যায় তিনি কাগজ কলম আনতে বলেছিলেন তখন ওমরের বাঁধার কারণে নবীজি আসলে কাকে খলিফা করে যেতেন কিংবা নির্দেশ দিতে চেয়েছিলেন তা আর জানার কোন সুযোগ নেই। ফলে নবী মুহাম্মদের মৃত্যুর সাথে সাথে খলিফা পদের ভাগীদাররা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। আলি যখন তাঁর প্রিয় নবীকে গোসল করাচ্ছিলেন সেই ফাঁকে বৃদ্ধ আবু বকরকে খলিফা নির্বাচিত করা হয়। এখানে স্মরণ রাখা উচিত ওসমানের মৃত্যুর পর জনগণের তরফ থেকে আলিকে খলিফা নির্বাচিত করা হোক এমন দাবী ওঠা ছাড়া কোন খলিফাই গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় দখল করে নি। বৃদ্ধ আবু বকরকে প্রথম খলিফা করা হয় উমাইয়া গোত্রের কাছে যেন ক্ষমতায় আসে সেই লক্ষ্যে। কারণ বৃদ্ধ আবু বকরকে খলিফা করা হলে স্বাভাবিকভাবে পরবর্তী ক্ষমতা চলে আসবে উমাইয়া গোত্রের ওমর, ওসমানের হাতে। অন্যদিকে হাশিমী গোত্রের একমাত্র প্রতিনিধি ছিলেন আলি।
শিয়ারা নবী মুহাম্মদের কন্যা, আলির স্ত্রী হযরত ফাতেমাকে হলি মা হিসেবে গণ্য করেন। যেভাবে খ্রিস্টানরা মাতা মরিয়মকে হলি মা হিসেবে দেখেন। ফাতেমা বিবি খাদিজা ও নবীর কন্যা ছিলেন, ছিলেন আলির স্ত্রী এবং ইমাম হাসান-হোসেনের মা। সে জন্যে তিনি শিয়াদের কাছে পবিত্র মাতা হিসেবে বিবেচিত। নবী মুহাম্মদ মারা যেতে না যেতেই খলিফার পদ দখলকে কেন্দ্র করে মা ফাতেমার ঘরে আগুন দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল ওমর। অথচ ইসলামের প্রথম যুগে বিশ্বাস ও আইন ছিল যে- যে ব্যক্তি মুসলিম হয়ে অন্য মুসলিমকে হত্যা করবে সে জাহান্নামে যাবে। এটি ছিল ইসলামের মূল বিশ্বাসের একটি। এবং কোন ব্যক্তি এই কাজ করলে তার কঠিন সাজার হুকুম ছিল। কিন্তু হযরত ওসমানের সময় হযরত ওমরের পুত্রের হত্যাকাণ্ডের পর মুক্তির মধ্য দিয়ে সাম্যবাদ ইসলামের আরেক দফা ভাঙনের সূত্রপাত হয়। হযরত ওমরের পুত্র ওবায়দুল্লাহ একসাথে তিনটি খুন করে। এর নিহত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ছিলেন মুসলিম। সুতরাং স্বাভাবিক নিয়মে সবাই আশা করেছিল ওবায়দুল্লাহ ফাঁসির হুকুম হবে কিন্তু হযরত ওসমান ওবায়দুল্লাহকে বেকসুর খালাস দেন। অনেকেই ইতিহাস না জেনে কিংবা এক ধরনের কল্পনা প্রসূত ধারণা থেকে বলে থাকেন যে, ইসলামের সত্যযুগ ছিল চার খলিফার আমল। অথচ ইতিহাস পাঠ করলে দেখা যায় নবী মুহাম্মদের মৃত্যুর পর ক্ষমতার লোভে আরবের গোত্র দ্বন্দ্ব মাথা চাঙ্গা দিয়ে উঠে। সেই দ্বন্দ্বে আহত হয়ে গর্ভাবস্থায় মারা যান নবী মুহাম্মদের কন্যা হযরত ফাতেমা। ওমর ফাতেমার ঘরে ঢোকার জন্যে দরজায় জোরে লাথি মারেন। দুর্ভাগ্যবশত এই লাথিতে আহত হোন ফাতেমা। পরবর্তীতে তিনি তাঁর স্বামীকে বলে যান-তিনি মারা গেলে তাঁর দাফন যেন অতি গোপনে করা হয় তাতে ওমরের মতন লোক তাঁর জানাজায় অংশ নিতে না পারে। পরবর্তীতে তার নির্দেশ অনুসারেই রাতের আঁধারেই তাঁকে দাফন করা হয়। বনু হাশেমের গোত্রের মানুষ ছাড়া খুব কম সংখ্যক সাহাবী জানাজায় শরীক হোন। এখানে পয়েন্ট করর বিষয় হল; অন্য খলিফাদের দাফন নবীর কবরের পাশে হলেও ফাতেমার কবর হয় অন্যত্র। (রাতের আঁধারে কবর দেওয়ার প্রসঙ্গে ভিন্ন মত আছে অনেকেই বলেন যে; তিনি লজ্জাবতী ছিলেন তাই ওনার কবরে যাতে বেশি মানুষ না আসে তার জন্যে রাতের আঁধারে করব দেওয়া হয়।) এছাড়াও আবু বকরকে খলিফা করায় আলি, ফাতেমা অসন্তুষ্ট হোন। পরবর্তীতে পিতার সম্পত্তির ভাগ চাইলে আবু বকর ফাতেমাকে বলে দেন যে, এই সম্পত্তি রাষ্ট্রীয় ভাবে দান করা হয়েছে। সুতরাং এই সম্পত্তির ভাগ তিনি ফাতেমাকে দিতে পারেন না।
হযরত আয়েশা ছিলেন নবীজির পুরাতন সাহাবি আবু বকর-এর কন্যা। আয়েশা ছিলেন সুন্দরী অহংকারী মহিলা। কিন্তু সেই অহংকারেও চূর্ণ হয় একটি ঘটনার মধ্য দিয়ে। গলার প্রিয় হার খুঁজতে গিয়ে তিনি তিনি দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তাঁকে ফেরে রেখেই সবাই চলে যায়। সেই সময় সাফওয়ান নামক এক সাহাবির সাথে দেখা হয়। কারণ সাফওয়ান ছিলেন কাফেলার পেছনে আসা শেষ মানুষ। সাফওয়ান নবীর স্ত্রীকে চিনতে পারেন এবং নিজের উঠের পিঠে করে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। ২০ মাইল দূরে মধ্যরাতে আয়েশা নিজের দলে এসে পৌছাতে সক্ষম হোন। আয়েশা যে মিসিং ছিলেন তা কেউ খেয়ালই করে নি। কিন্তু দেরি করে ফিরে আসা নিয়ে অনেকে তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করতে থাকেন। সবাই এক বাক্যে স্বীকার করবে যে হযরত আয়েশা ছিলেন পবিত্র ও নির্দোষ। কিন্তু আরবের লোকেরা নবী পত্নী হওয়ার পরও আয়েশার নামে কুৎসা রটানো বন্ধ করে নাই। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আলি ও ফাতিমা আয়েশাকে ডিভোর্স দিওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু নবীজি তা দেন নি। এরপর প্রায় এক মাস পর নবীজি ঘোষণা করলেন যে, আল্লাহ বলেছেন- যে ব্যক্তি নবী পত্নীর বিরুদ্ধে অহেতুক কুৎসা রটনা করবে তাকে শাস্তি পেতে হবে। এবং কোন অভিযোগ করতে করলে কম করে চারজন ব্যক্তি সাক্ষী হিসেবে থাকতে হবে। বর্তমান শরিয়া আইনে যে চারজন পুরুষ সাক্ষীর কথা বলা হয় তা এই ঘটনা থেকে ধার করা কিংবা এই ঘটনা থেকে শরিয়া আইনটি করা হয়। যদিও আয়াতটি ছিল এক অসহায় নির্দোষ নারীকে অপবাদ করা থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে। কারণ চারজন মানুষের সামনে বা সাক্ষী রেখে কেউ অপরাধ করবে না সুতরাং বর্তমানে যারা শরিয়া আইনের পক্ষে কথা বলে তারা আসলে অপরাধীর পক্ষেই কথা বলছে। যাই হোক আমরা আমাদের আলোচনায় ফিরে আসি।
পূর্বের সূত্র ধরেই মনমালিন্যের কারণে হযরত আয়েশা কখনো চান নি হযরত আলি খলিফা হোক। পরবর্তীতে আবু বকর মারা যাওয়ার পর আবু বকরের একজন বিধবা স্ত্রীকে বিয়ে করেন এবং সে ঘরের পুত্র সন্তান যার নামও ছিল মুহাম্মদ তাকে পুত্র হিসেবে আলি গ্রহণ করেন। সম্পর্কের হিসাবে আলি ও আয়েশা মেয়ের জামাই-শাশুড়ি আবার অন্যদিকে কন্যা-পিতার সম্পর্কেও জড়িয়ে যায়। তবে তৎকালীন আরব সমাজে এটি স্বাভাবিক একটি প্রথা হিসেবে বিবেচিত ছিল। তবে শিয়ারা হরত আয়েশাকে পবিত্র নারী হিসেবে জ্ঞান করে না। তারা কারণ হিসেবে উল্লেখ করে যে, আয়েশা যদি শুদ্ধতম নারী হতেন তাহলে আল্লাহ তাঁকে শাসন করার জন্যে সুরা নাজিল করতেন না। তার নামে কুৎসা রটানোর সাহসও কেউ পেত না। তাই নবীর পরিবার বলতে শিয়ারা ফাতেমার পরিবারকে বুঝিয়ে থাকেন। এই বিষয়ে রেফারেন্স হিসেবে নবীজির বিভিন্ন উক্তি, ঘটনার বর্ণনা ও হাদিস রেফারেনস হিসেবে তারা ব্যবহার করে থাকে।
ওমর মারা যাওয়ার আগে নিজের স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্র বজায় রাখার জন্যে ওমর খলিফা নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়ে গেলেন আব্দুর রহমান বিন আউফ ও তার ওমরের পুত্র আব্দুল্লাহ হাতে। তারা যখন ষড়যন্ত্র করে নবী মুহাম্মদের দুই কন্যার স্বামী সত্তর বয়স্ক ওসমানের নাম ঘোষণা করেন তখন হযরত আলি চিৎকার করে বললেন-নাহ আমি মানি না, এটা প্রহসন, ধর্মের নামে মিথ্যাচার, অন্যায়, এটা প্রতারণা। ওসমানের শাসন আমলে আরবে বিদ্রোহ মাথা চাঙ্গা দিয়ে উঠতে থাকে। স্বজনপ্রীতি, দুঃশাসনের কারণে সাধারণ জনতা ওসমানের বাড়িও ঘেরাও করে। এতো কিছু পরও ওসমান ক্ষমতা হস্তান্তর কিংবা ক্ষমতা ছাড়ার জন্য রাজি হয় নাই। ফলে আততায়ীর হাতেই নিজ ঘরে খুন হোন ওসমান। ওসমান খুন হওয়ার পর গুজব কিংবা লোক কানাকানি ছড়িয়ে পড়ে যে এই হত্যায় আলির হাত রয়েছে। আলি-পন্থীরা যে সিংহাসন দখলের জন্যে ২৫ বছর সংগ্রাম করল নির্যাতন সহ্য করল তাদের সেই ক্ষমতা দখলের সময় খুব সুখকর ছিল না। কারণ একদিনে জনগণের মধ্যে বিদ্রোহ অন্যদিকে ওসমানের বিচারের দাবী। আবার ওসমানকে যারা হত্যা করেছে তাদের একটা বড় অংশ আলির সাথে যোগ দিয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে আলি ক্ষমতা আরোহণ খুব সুখকর ছিল না।
এখানে স্মরণ রাখা উচিত যে, ইতোমধ্যে আরবের আশে পাশের সব জায়গা, এছাড়া রাজ্য পরিচালনার বড় বড় পদ সবগুলো মক্কার উমাইয়া গোত্র দখল করে নেয়। ফলে মদিনার মানুষের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয় এছাড়া হাশিমী গোত্রের একমাত্র প্রতিনিধি ছিলেন আলি। সিরিয়ার শাসন মুয়াবিয়া ছিলেন যেমন চতুর তেমনি ক্ষমতাধর মানুষ। তার পরামর্শেই মূলত ওসমান শাসন কাজ পরিচালন করতেন। মুয়াবিয়া ছিলেন আবু সুফিয়ানের সন্তান। মুহাম্মদের মক্কা বিজয়ের পর এক প্রকার বাধ্য হয়ে আবু সুফিয়ান ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।এছাড়া নবী মুহাম্মদের দলের হাতেই খুন হোন সুফিয়ানদের অন্য সদস্যরা। মুহাম্মদের দলের হাতে আবু সুফিয়ান গোত্রের পরাজয়ের গ্লানি তারা কখনো ভোলে নি। এই কারণেই নবী বংশ ধ্বংস না করা পর্যন্ত মুয়াবিয়া বংশ শান্ত হয় নাই। মুয়াবিয়া সুদর্শন, চতুর, বুদ্ধিমান ছিলেন ফলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে তিনি ক্ষমতাধর হয়ে উঠেন। মুয়াবিয়া ঠিকই জানতেন পৃথিবীর সবাই মুয়াবিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিলেও আলি কখনো মেনে নেবে না। অন্য দিকে আলিও জানতেন মুয়াবিয়া তাকে ছেড়ে দেবে না। বনু হাশিম ও উমাইয়াদের মধ্যে কীরূপ দ্বন্দ্ব ছিল তা জানার জানা প্রয়োজন-আবু সুফিয়ানের জোয়ান ছেলে নবী মুহাম্মদের বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ায় সেই খুনের প্রতিশোধ নিয়েছিলেন পুত্রহারা মা হিন্দা। উহুদ যুদ্ধে নবী মোহাম্মদের চাচা আমীর হামজার লাশ কেটে কলিজা বের করে চিবিয়ে খেয়েছিল আবু সুফিয়ানের স্ত্রী ও মুয়াবিয়ার মা হিন্দা। তাই আলি জানত ষড়যন্ত্র করে হোক কিংবা যুদ্ধ করে হোক সে আলিতে পরাজিত করতে চাইবে। অনেকে প্রশ্ন করে যে; ওসমান খুনের বদলা নেওয়াকে কেন্দ্র করে হযরত আয়েশা ও হযরত আলীর মধ্যে যে যুদ্ধ হল তখন মুয়াবিয়া নীরব ভূমিকা পালন করল কেন? এর উত্তর খুন সহজ। কারণ যুদ্ধটা হচ্ছে নবীর পরিবারের মধ্যে তাই মুয়াবিয়া তাদের হানাহানিতে না জড়িয়ে রক্তপাত দেখেছিলেন মাত্র। আলি ও আয়েশার যুদ্ধ ইতিহাসে উঠের যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। সেই যুদ্ধে আয়েশা পরাজিত হোন এবং নিজের কর্মের জন্যে আলির কাছে ক্ষমা চান। সেই যুদ্ধে সাহাবিরা অংশগ্রহণ করেন এবং নিহত হোন। তবে জামাল যুদ্ধের দায় নিতে হয় শেষ পর্যন্ত আলিকেই। ইসলামের ইতিহাসে জামাল যুদ্ধ প্রথম ও শেষ যুদ্ধ যেখানে একজন নারীর নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছিল আরব পুরুষরা।
৬৫৭ সালের জুলাই মাসে সিরিয়ার সিফফিনের ময়দানে আলির বিপরীতে যুদ্ধে নামে মুয়াবিয়া। সেই যুদ্ধে আলি থেকে কুট কৌশল ও সামরিক সৈন্যে আলি থেকে মুয়াবিয়ার শক্তি বেশি হলেও সেই যুদ্ধে আলি জয়ের পথেই ছিলেন। আলি মুয়াবিয়া থেকে বড় যোদ্ধা হলেও কূটকৌশলে তিনি দক্ষ ছিলেন না। তিনি বড় যোদ্ধা ছিলেন কিন্তু বড় রাজনৈতিক নেতা নন। ফলে পরাজয়ের সম্ভাবনা দেখে মুয়াবিয়া তার শেষ অস্ত্র ধর্মের আশ্রয় নিলেন। মুয়াবিয়ার সৈন্যরা বর্শার মাথায় কুরানের পাতা লাগিয়ে যুদ্ধ করতে নামলো। এতে আলীর বাহিনীর মধ্যে দ্বিধা তৈরি হয়। মুয়াবিয়ার সেনাবাহিনী কুরান সামনে রেখে যুদ্ধ করতে নামায় আলীর বাহিনীর অনেকেই যুদ্ধ করতে ইচ্ছুক ছিলেন না। তারা মুয়াবিয়ার কথা ফাঁদে পড়ে মুয়াবিয়ার সুরে যুদ্ধ বন্ধ করে কোরানের মাধ্যমে সমাধানের পথে এগুতে বলেন। মুয়াবিয়াও তখন নিজের কিছু লোক আলির শিবিরে পাঠিয়ে ওসমান হত্যাকারীদের বিচারেরও দাবী তোলেন। কারণ মুয়াবিয়া জানতেন এই খুনে আলির হাত না থাকলেও বর্তমানে আলির শিবিরের অনেকেই ওসমান হত্যায় জড়িত। একদিনে ওসমান হত্যার দাবী অন্যদিকে কোরানের মাধ্যমে সমাধানের দাবী সব কিছু মিলিয়ে আলি বুঝে গেছেন তিনি ফাঁদে পড়ে যাচ্ছেন। তিনি তার লোকদের যতোই বোঝেতে চেষ্টা করছেন যে আর কিছুক্ষণ যুদ্ধ করলে আমরা জিতে যাব। মুয়াবিয়া একটা শয়তান। সে ছলনা করে যুদ্ধ বন্ধ করতে চাইছে কিন্তু সে সময় কেউ আলির কথা শুনল না। আলি মুয়াবিয়ার অতীত ইতিহাস সবাইকে স্মরণ করতে অনুরোধ জানান। তারপরও তার সৈন্যরা যুদ্ধ করতে আর রাজা হল না। ফলে মুয়াবিয়ার সাথে সন্ধি করতে বাধ্য হলেন আলি। এবং এই কারণে পরবর্তীতে আলীর রাজনৈতিক ও ক্ষমতার পরাজয় ঘটে। সিফফিনের ময়দানে মুয়াবিয়ার হাতেই হয় প্রথম কোরানের রাজনৈতিক ব্যবহার। মুয়াবিয়ার সাথে সন্ধির কারণে আলির পক্ষ অনেকেই ত্যাগ করেন তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবন ওয়াহাব অন্যতম।
ইসলামের প্রথম উগ্রবাদী দল খারিজি:
ওসমান কে পছন্দ না করলেও ওসমান হত্যায় আলির সমর্থন ছিল না, এমনকি ওসমানকে রক্ষা করার জন্যে একসময় আলি নিজের ছেলেদের ওসমানের কাছে পাঠান। কিন্তু ওসমান হত্যা পরবর্তীতে ওসমানের হত্যাকারীদের অধিকাংশ আলিকে সমর্থন করে থাকায় ওসমান হত্যায় আলি জড়িত এমনই একটা ধারনা মানুষের মধ্যে জন্ম নেয়। যদিও আলি ক্ষমতায় বসার ইচ্ছুক ছিলেন না কারণ তিনি জানতেন তিনি ক্ষমতায় বসলে ওসমান হত্যায় তাঁকে পরোক্ষভাবে জড়িত করা হবে তাই তিনি প্রথমে রাজি না হলেও পরবর্তীতে সবার চাপে পড়ে ক্ষমতা গ্রহণে সম্মত হোন। মুয়াবিয়া নিজের স্বার্থে আলির বিরুদ্ধে নিজের পক্ষে মানুষের সমর্থন আদায়ের জন্যে নিহত ওসমানের রক্তাক্ত পাঞ্জাবী ও তার স্ত্রীর কাটা আঙ্গুলের অংশ জনসম্মুখে ঝুলিয়ে রাখেন। মুয়াবিয়ার কৌশলের কাছে আলি পরাজিত হোন এবং নিজের দলের লোকদের চাপে পড়ে তিনি সন্ধি করতে সম্মত হোন। সেই সময় আলি পক্ষের একটি অংশ আলি ভুল করেছেন বলে আলির দল থেকে বেরিয়ে যান। তারাই খারিজি (Those who go out) নামে পরিচিত। হযরত আলি ভুল করেছেন এটাই ছিল তাদের যুক্তি। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে এমন ধারণা জন্মায় যে; পাপী ব্যক্তি শাসক হওয়ার অযোগ্য। আলি যেহেতু মুয়াবিয়ার সাথে সন্ধি করেছেন সেহেতু আলি নিজেও অযোগ্য হয়ে গেছেন। তারা এতোটাই চরমপন্থী অবস্থায় চলে গেছে যে তারা অন্য মুসলিমদের কাফের হিসেবেও আখ্যায়িত করা শুরু করে। তারা মনে করতো যে পাপ হল কুফর অর্থাৎ আল্লাহকে অবিশ্বাস করা। সুতরাং কেউ পাপ করলে পাপের ফলে সে অবিশ্বাসী হয়ে যায়। এই ধরণের ব্যক্তির সাথে যুদ্ধ করা যাবে এদের হত্যা করা যাবে। এমনকি এরা যদি নবীজির সাহাবিও হোন তারপরও এদের হত্যা করা যাবে। এরা এতোটাই উগ্র ছিল যে এদের সাথে কেউ যদি একমত না হতো তাহলে তাদের কাফের এবং তাদের হত্যার করতে এদের একটুও বাঁধত না। বলা হয়ে থাকে এসব খারিজিরা বেশির ভাগ ছিল বেদুইন ও অশিক্ষিত। এরা কোরান হাদিস সম্পর্কে খুব একটা বুঝত না। কিন্তু এরা সংখ্যায় কম হলেও চেতনায় এতোটাই উন্মাদ ছিল যে এদের অগ্রাহ্য করা কোন শাসকের পক্ষে সম্ভব ছিল না। ফলে আলি এদেরকে নিজের দলে আনার চেষ্টা করেন। নিজে ব্যক্তিগতভাবে চিঠিও লেখেন। খারিজিরা উল্টো আলিকে জবাব দেয়; আলি আপনি নিজেই কোরান বোঝেন না।
খারিজিদের হারুবিয়াহ নামেও উল্লেখ করা হয়। কারণ আলির বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহের আওয়াজ তোলা হয় হারুবা নামক স্থানে তাই তাদেরকে অনেকে হারুবিয়া নামেও অভিহিত করা হয়। আলির দল ত্যাগ করে খারিজিরা আব্দুল্লাহ ইবন ওয়াহাবকে তাদের দলপতি নির্বাচিত করে। এবং পরবর্তীতে তার নেতৃত্বে নাহরাওয়ান নামক স্থানে তারা শিবির স্থাপন করে। তারা সেখান থেকে আলির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে থাকে। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে খারিজিদের সাথে আলিকে যুদ্ধ করতে হয়। সেই যুদ্ধে খারিজিদের দলপতি সহ অনেক খারিজি নিহত হয়। প্রাণে বাঁচে মাত্র ৪'শ জন। বতর্মানে জঙ্গিরা যেভাবে বেহেস্তে যাওয়ার উদ্দেশ্যে শরীরে বোমা নিয়ে হামলা করে খারিজিরা ঠিক একই ভাবে যুদ্ধের ময়দানে উচ্চারণ করেছিল- Hasten to Paradise! to Paradise! পরবর্তীতে খারিজিরা সিরিয়ার শাসক মুয়াবিয়া, ও তার উপদেষ্টা মিশরের শাসনকর্তা আমর ইবন আস কে হত্যার চেষ্টা চালায়। সৌভাগ্যক্রমে তারা দুইজন নিহত না হলেও হযরত আলী মসজিদ থেকে আসার পথে খারিজি আব্দুর রহমান ইবন মুলযিমের হাতে নিহত হোন। খারিজিরা এতোটাই ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল যে, পরবর্তীতে উমাইয়া, আব্বাসিয় শাসকরা এদের যন্ত্রণায় অস্থির ছিলেন। তারা মেসোপটেমিয়া পূর্ব আরব ও উত্তর আফ্রিকার উপকূলে অশান্তির সৃষ্টি করে। অবশেষে মিসরের ফাতেমি শাসনগণ খারিজিদের শক্তি সমূলে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হয়। ফলে রাজনৈতিক প্রচারণা বর্জন করে তারা শুধু একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ে পরিণত হয়।
মুয়াবিয়ার, খারিজির ইতিহাস অনেক পুরাতন হলেও তাদের অনুসারীরা এখনো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যেমন-সিরিয়াস ISIS সালাফি সুন্নি দল হলেও তারা খারিজিদের মতন বাংলাদেশের আরেক জামাত-ই-ইসলামকে ইসলামের শত্রু কাফের হিসেবে তারা তাদের ম্যাগাজিন-এ উল্লেখ করেছে। যেমনটি করেছিল খারিজিরা। এছাড়াও বাংলাদেশের মতন পৃথিবীর অনেক দেশেই বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠী তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম ও স্বার্থ হাসিল করার জন্যে কোরানকে সামনে নিয়ে আসে। ঠিক যেমনটি করেছিল মুয়াবিয়া সিফফিনের ময়দানে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলো খারিজিদের মতন একই ধরণের ফতোয়া দিয়ে থাকে। তাদের মতের মতন না হলে সে কাফের কিংবা প্রকৃত মুসলমান নয় এমন তত্ত্ব তারা দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের জামাত শিবির, ওহাবীপন্থী, আহলে হাদিস দলগুলোকে অনেকে খারিজিদের বংশধর মনে করে থাকে। বাংলাদেশে শিয়া-সুন্নির বিরোধ নেই।কিন্তু আরব অঞ্চলে শিয়া সুন্নির মধ্যে যে বিরোধ এবং অন্যকে অস্বীকার করার যে প্রবণতা তা বুঝতে গেলে ইতিহাসের দিকে তাকাতে হবে। তাকাতে হবে শত বছরের পুরনো ইনতেকামের দিকে।

সহায়ক গ্রস্থ-

After The Phophet-The Epic Story of the Shia-Sunni Split in Islam by Lesley Hazleto
ইসলামের জন্ম বিকাশ ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্র।

সহায়ক হিসেবে- উইকিপিডিয়া।


       
    

মন্তব্যসমূহ