বৈদিক যুগ[সম্পাদনা]
মূল নিবন্ধ: বৈদিক যুগ
আরও দেখুন: বেদ ও ইন্দো-আর্য জাতি
বৈদিক সংস্কৃতে মৌখিকভাবে রচিত হিন্দুদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বেদকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আর্য সভ্যতাই ছিল বৈদিক যুগের ভিত্তি। বেদ বিশ্বের প্রাচীনতম প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির অন্যতম। এই গ্রন্থ মেসোপটেমিয়া ও প্রাচীন মিশরের ধর্মগ্রন্থগুলির সমসাময়িক। বৈদিক যুগের সময়কাল ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। এই সময়েই হিন্দুধর্ম ও প্রাচীন ভারতীয় সমাজের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উপাদানের মূল ভিত্তিগুলি স্থাপিত হয়। গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলকে কেন্দ্র করে সমগ্র উত্তর ভারতে বৈদিক সভ্যতাকে ছড়িয়ে দেয় আর্যরা। ভারতীয় উপমহাদেশে ইন্দো-আর্যভাষী উপজাতিগুলির অনুপ্রবেশের ফলে প্রাগৈতিহাসিক পরবর্তী হরপ্পা সভ্যতার পতন ঘটে এবং বিদ্যমান স্থানীয় সভ্যতার উপরেই স্থাপিত হয় বৈদিক সভ্যতা। স্থানীয় বাসিন্দারা আর্যদের কাছে দস্যু নামে পরিচিত হয়।
আদি বৈদিক সমাজ ছিল গ্রামকেন্দ্রিক। ফলত এই যুগে পরবর্তী হরপ্পা সভ্যতার নগরায়ণের ধারণাটি পরিত্যক্ত হয়।[২১] ঋগ্বেদোত্তর যুগে, আর্য সমাজ অধিকতর কৃষিভিত্তিক হয়ে পড়ে এবং এই সময়েই সমাজে বর্ণাশ্রমপ্রথার উদ্ভব ঘটে। মনে করা হয়, হিন্দুদের আদি ধর্মগ্রন্থ বেদ ছাড়াও সংস্কৃত মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারতের আদি সূত্রগুলি এই যুগেই নিহিত ছিল।[২২] বিভিন্ন পুরাতাত্ত্বিক খননের ফলে প্রাপ্ত মৃৎপাত্রগুলিতে আদি ইন্দো-আর্য সভ্যতার কিছু নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া যায়।[২৩] প্রাচীন ভারতের কুরু রাজ্যে [২৪] কৃষ্ণ ও রক্ত ধাতব ও চিত্রিত ধূসর ধাতব সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায়। ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে উত্তর-পশ্চিম ভারতে লৌহ যুগের সুচনা হয়। এই সময়ে রচিত অথর্ববেদে প্রথম লৌহের উল্লেখ মেলে। উক্ত গ্রন্থে লৌহকে "শ্যাম অয়স" বা কালো ধাতু বলে চিহ্নিত করা হয়। চিত্রিত ধূসর ধাতব সভ্যতা উত্তর ভারতে ১১০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।[২৩] বৈদিক যুগেই ভারতে বৈশালীর মতো একাধিক গণরাজ্য স্থাপিত হয়। এগুলি খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী এমনকি কোনো কোনো অঞ্চলে চতুর্থ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্তও স্থায়ী হয়েছিল। এই যুগের পরবর্তী পর্যায়ে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে রাজ্যস্থাপন ও রাজ্যবিস্তারের সংগ্রাম শুরু হয়। এই রাজ্যগুলিই পরিচিত হয় মহাজনপদ নামে।) সূত্র ; উইকিপিডিয়া )
আর্য রহস্যের অনুসন্ধান
আর্য কারা,তাদের আদি বাসস্থান কোথায়,ভারতীয় উপমহাদেশে কবে তাদের আগমন,প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতায় তাদের কি অবদান-এই বিষয়গুলি নিয়ে একের পর এক বিতর্ক হয়েছে কিন্তু কোন নিশ্চিত সমাধানসূত্র আজও অধরা।প্রাথমিক পর্বে মনে করা হত যে শ্বেতগাত্রবর্ণ,টিকালো নাসিকা,প্রশস্ত ললাট ও দীর্ঘদেহী ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য সম্বলিত মানবপ্রজাতির একটি গোষ্ঠী হল আর্য। এই তত্ত্ব বেশ প্রভাবও বিস্তার করেছিল এবং এর ভিত্তিতে অনেকেই বলতে শুরু করেন যে আর্যরা হলেন নরডিক জাতির মানুষ।কিন্তু এই কাল্পনিক তত্ত্বের ফানুস ফুটো হয়ে যায় ইরান থেকে বেহিস্তান শিলালিপি আবিষ্কৃত হওয়ার পর।যীশুর জন্মের প্রায় ৪৮৬ বছর আগে উৎকীর্ণ এই লেখতে পারস্য সম্রাট দারায়ুস নিজকে দাবী করেন-‘’ A Persian, a son of a Persian and an Aryan of Aryan Descent’’ হিসেবে। ব্যাস এরপরই ঐতিহাসিক মহলে তীব্র আলোড়নের সৃষ্টি হল এবং আর্য জাতির সাথে সম্পৃক্ত দেহসৌষ্ঠব সংক্রান্ত তত্ত্ব এক লহমায় বাতিলের খাতায় চলে গেল।
নিঃসন্দেহে আর্য জাতির শ্রেষ্ঠ সাহিত্য কীর্তি হল বেদ।সংস্কৃত ভাষায় বিরচিত বেদ এক বিস্ময়কর গ্রন্থ। ধর্ম ও দৈনন্দিন জীবনের নানা দিকের অপূর্ব সংমিশ্রণ এই গ্রন্থে লক্ষ্য করা যায়।ষোড়শ শতাব্দীর সময়ে ভারতে আগত ইউরোপীয় পর্যটক ও ধর্মপ্রচারকদের মধ্যে ভারতীয় ধর্ম, বিশেষত বেদ নিয়ে তুমুল উৎসাহ দেখা দেয়।এরাই প্রথম সংস্কৃত,ইরানীয় ও ইউরোপীয় বেশ কিছু ভাষার মধ্যে সামঞ্জস্য লক্ষ্য করেন।যেমন গোয়াতে আগত ব্রিটিশ জেসুইট পাদ্রী থমাস স্টিফেন্স ১৫৮৩ সাল নাগাদ তাঁর ভাইয়ের উদ্দেশ্যে প্রেরিত এক চিঠিতে সংস্কৃতের সাথে গ্রীক ও ল্যাটিন ভাষার সাদৃশ্যের কথা উল্লেখ করেছিলেন।অন্যদিকে ইটালির ফ্লোরেন্সীয় বনিক ফিলিপো সসেটি বানিজ্য সংক্রান্ত কাজে গোয়ায় এসেছিলেন।তিনি এসময় এক স্থানীয় গোয়ান পণ্ডিতের কাছে সংস্কৃত ভাষার অধ্যয়ন করেছিলেন।এরপর ১৫৮৫ তে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে তিনি বেশ কিছু সংস্কৃত ও ইটালীয় শব্দের সাদৃশ্য উপস্থাপন করেন,যেমন – Deva(Sans.) / Dio(Ita.), Sapta(Sans.)/ Sette(Ita.), Ostta(Sans.)/ Otto(Ita.) ইত্যাদি।যদিও স্টিফেন্স ও সসেটি কেউই এই সামঞ্জস্যের কারন অনুসন্ধানের প্রয়াস করেননি।কিন্তু তাঁরা নিজেদের অজান্তেই আর্য সংক্রান্ত গবেষণায় এক নয়া সম্ভাবনাময় দিকের উন্মোচন করেছিলেন।এভাবে ভাষাতাত্ত্বিক প্রেক্ষিতে,সম্পূর্ণ এক নতুন আঙ্গিকে আর্যদের ইতিহাস বিশ্লেষণের প্রক্রিয়া শুরু হয় যা প্রায় বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত বজায় ছিল কিন্তু এই পদ্ধতিও শেষ পর্যন্ত সমাধানসূত্র নির্ণয়ে ব্যর্থ হয়।
ফরাসী জেসুইট পাদ্রী গ্যাস্টন লরেন্ট দক্ষিন ভারতে ধর্মপ্রচারকালে তেল্গু ভাষা শিখেছিলেন।তিনি ‘তেলেগু-ফরাসী-সংস্কৃত’ একটি অভিধান রচনা করেন এবং এখানে এই তিন ভাষার মধ্যে ভূরি ভূরি সাদৃশ্য তুলে ধরেন।তাঁর এই অভিধানটি আজও ভাষাতত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে আর্য অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে ‘বাইবেল’ হিসেবে বিবেচিত হয়।তাই ম্যাক্সমুলারের মত যশস্বীও তাঁকে ‘তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বের জনক’ হিসেবে অভিহিত করেন।গ্যাস্টনের পরবর্তীকালে জেমস পারসনস উল্লেখ করেন যে,ইউরোপ ও এশিয়ার অনেকগুলি ভাষার উৎপত্তি নিহিত আছে এক আদিম ভাষার মধ্যে।একই ভাবে ডাচ ভাষাবিদ মার্কুস জুয়েরিয়াস বক্সহর্ন এই ভাষাগত সাযুজ্যের ভিত্তিতে ‘স্কিথিয়ান’ নামে এক আদিম ভাষার অবতারনা করেন এবং এই থেকেই বিভিন্ন ভাষার উৎপত্তি হয়েছে বলে দাবী করেন।এভাবে আর্য সংক্রান্ত যে এক নতুন সংজ্ঞা নির্ধারিত হয় তা হল – আর্য একটি ভাষাগোষ্ঠীর নাম।ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত সংস্কৃত,গ্রীক,ল্যাটিন,জার্মান,পারসিক ও কেলটিক এই সকল ভাষার মধ্যে যে কোন একটি যদি কোন ব্যক্তির মাতৃভাষা হয়,তবে তিনি আর্য।এই ইন্দো-ইউরোপীয় শব্দদ্বয় ব্রিটিশ গবেষক থমাস ইয়ং সর্বপ্রথম তাঁর প্রবন্ধে উল্লেখ করেছিলেন ,বিভিন্ন ভাষার মধ্যে সমজাতীয়তার ভিত্তিতে। বিস্ময়কর ভাবে ‘হিব্রু’ ভাষাকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।যদিও বর্তমানে হিব্রু ও তামিল ভাষার মধ্যে বেশ কিছু মিল দেখা যায়।যেমন তামিলে ময়ূরকে ‘টোকেই’ রূপে উল্লেখ করা হয়,তেমনই হিব্রু ভাষায় ময়ূরের নাম হল ‘টুকি’।
জার্মান ভাষাতাত্ত্বিক আন্দ্রেস জাগার ককেশাস অঞ্চলে একদা বিরাজমান এক প্রাচীন ভাষার ধারনা প্রদান করেন,যা থেকে গ্রীক,স্ল্যাভিক,পারসিক ও কেল্টো-জার্মান বা স্কিথিও-কেলটিক ভাষার উৎপত্তি হয়েছে বলে দাবী করেন।ডাচ পণ্ডিত জোসেফ স্ক্যালিগার আবার চারটি প্রাচীন ভাষাগোষ্ঠীর অবতারনা করেছিলেন এবং সেগুলি হল-সেমাইট (আরবীয় ভাষাসমূহ ও হিব্রু),হ্যামাইট (ইজিপ্সিয় ও কুশাইট ভাষাসমূহ),জ্যাফেটিক এবং গ্রীক-ল্যাটিন-জার্মান-ভারতীয় ভাষাসমূহ সম্বলিত একটি গোষ্ঠী।ডেনমার্কের গবেষক রাসমুস ক্রিস্টিয়ান রাস্ক নরওয়েজী,গথিক,লিথুয়ানিয়ান,গ্রীক,ল্যাটিন ও সংস্কৃত ভাষার মধ্যে সাযুজ্য উপস্থাপন করেন।প্রত্যেক ভাষাবিদই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ভাষাগুলির জন্মদাত্রী রূপে এক প্রাচীন ভাষার উল্লেখ করেছেন এবং এই প্রাচীন ভাষাটিকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়েছে।তবে ভাষাতাত্ত্বিক প্রেক্ষিতে প্রথম যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা প্রদান করেন কলকাতা উচ্চন্যায়ালয়ের পূর্বতন প্রধান বিচারপতি তথা বেঙ্গল এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা উইলিয়াম জোন্স।তিনি সংস্কৃত,গ্রীক ও ল্যাটিন ভাষার ক্রিয়াপদ ও ব্যকরণগত সাযুজ্যের উল্লেখ করে,এই তিন ভাষার উৎসক্ষেত্র রূপে এক আদি ভাষার অবতারনা করেন।ফরাসী পণ্ডিত বার্নফ এবং তাঁর দুই অনুগামী রথ ও ম্যাক্স মুলার বৈদিক সাহিত্যের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেন।তাঁরাই প্রথম ‘ইন্দো-এরিয়ান’ বা ‘ইন্দো-আর্য’ শব্দদ্বয়ের উল্লেখ করেন এবং বিভিন্ন ভারতীয় ভাষাগুলি এই ‘ইন্দো-আর্য’ ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত।ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে আলেকজান্ডার স্লাইকার ‘Genealogical Tree Theory’ বা G.T.T তত্ত্ব উপস্থাপনের মাধ্যমের এক নয়া মাত্রা সংযোজিত করেন।এই তত্ত্ব অনুসারে একটি প্রাচীন ভাষা ভেঙে কতগুলি নতুন ভাষার উৎপত্তি হয় এবং পরবর্তীতে প্রতিটি নতুন ভাষা ভেঙে আরও অনেকগুলি ভাষার সৃষ্টি হয়।যদিও প্যাট্রিক ম্যালোরী ও ডগলাস অ্যাডামস, ভাষা বিভাজনের এই অতি সরলীকরণ প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেন।এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি ছিল ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী থেকে সৃষ্ট ভাষাগুলির প্রকৃতি সব জায়গায় এক নয় এবং এগুলি থেকে উৎপত্তিলাভ করা উপভাষাগুলিও সবক্ষেত্রে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার সাথে সংযুক্ত নয়।জার্মান ভাষাবিদ জোহানেস স্মিথ আবার ‘Wave Theory’ উপস্থাপন করেছিলেন,যার মূল বক্তব্য ছিল- জলে পাথর ফেললে একটি কেন্দ্র বরাবর ঢেউ যেমন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে,তেমনই একটি আদিম ভাষা থেকে নতুন নতুন ভাষার উৎপত্তি হয়।আর্যদের উৎস বিশ্লেষণে ভাষাতাত্ত্বিক পদ্ধতি খুব একটা কার্যকরী হয়নি।এই তত্ত্বের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হল আর্যদের বাসস্থান কোথায় ছিল,তা নির্ণয় করা যায় নি।সংস্কৃতের সাথে অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষার ব্যাপক সাদৃশ্যের প্রেক্ষিত্তে অনেকেই ভারতকে আর্যদের আদি বাসভূমি রূপে অভিহিত করেন।যদিও ট্রটম্যানের মত অনেকেই মনে করেন যে ল্যাটিন,কেলটিক,ইরানীয় ও জার্মানের সাথে সংস্কৃতের সাযুজ্য প্রমান করে যে, আর্যরা অভারতীয়।একদা এই বিশাল ভাষাগোষ্ঠী একটি অঞ্চলে বসবাস করলেও পরবর্তীতে তারা বিভক্ত হয়ে যায় এবং একদল ভারতে প্রবেশ করে বৈদিক সভ্যতার জন্ম দেয়।
ছবি: খ্রিস্টপূর্ব পাঁচশ বছর আগে ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষার বিস্তৃতি
দীর্ঘ দুই শতাব্দী ব্যাপী আর্যদের উৎপত্তি সংক্রান্ত প্রেক্ষিতে ভাষাতত্ত্বের কচকচানি চললেও কোন সমাধানসূত্র তো দূরে থাক বরং সমগ্র বিষয়টিই আরও জটিল হয়ে যায়।একের পর এক কল্পনা ও তত্ত্বের সমাহারে বিতর্ক ঘোরালো হয়ে ওঠে।এমন এক দিশাহীন পরিস্থিতিতে আনাতোলিয়া বা তুরস্কে ও ভারতে কয়েকটি নতুন সভ্যতার আবিস্কার পুনরায় আর্য বিতর্কে নয়া মাত্রা সঞ্চার করে।এশিয়া মাইনরে অবস্থিত ভোগসকাই যা একদা হিত্তিয়দের রাজধানী ছিল,সেখান থেকে প্রাপ্ত একটি লেখতে ইন্দ্র,ব্রুন,মিত্র ও নাসাত্য- এই চারটি নাম পাওয়া যায়,যারা আবার বৈদিক সাহিত্যে দেবতা হিসেবে স্থান পেয়েছেন।এছাড়া এই লেখটি থেকে ঘোড়া বা অশ্বের প্রশিক্ষন সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায় এবং এই সম্পর্কিত একই গ্রন্থের উল্লেখও পাওয়া যায়।এই অশ্বের তথ্য এক নতুন সমস্যার জন্ম দেয়।হিন্দু মৌলবাদী ঐতিহাসিকরা আর্যদের ভারতীয় রূপে অভিহিত করলেও,অশ্বের সুপ্রাচীন নিদর্শন ভারতে পাওয়া যায়নি।আর্যরা এমন এক জাতি অশ্ব ও অশ্ব-চালিত রথে অভ্যস্ত ছিল অথচ ভারতীয় সভ্যতার সুপ্রাচীন নিদর্শন হরপ্পা সভ্যতাতে অশ্বের নিদর্শন নেই।ফলে ভারত আর্যদের আদি বাসস্থান নয় এই তত্ত্বে বিশ্বাসীরা ‘আর্য-অশ্ব’ একদম সমার্থক করে ফেলেছেন।ফলে লাভ কিচ্ছু হয়নি বরং এই দৃষ্টিভঙ্গিগত সীমাবদ্ধতা প্রকৃত ইতিহাসকে বিকৃত করে ফেলেছে। ভোগসকাই লেখর ভিত্তিতে ঋগ্বেদ রচনার যে সময়কাল নির্ণীত হয়েছে তা হল যীশুর জন্মের প্রায় পনেরোশো বছর পূর্বে ও ঋগ্বেদের একদম প্রাথমিক পর্যায় তুরস্কে রচিত হয়েছিল এবং বারশো খৃস্ট পূর্বাব্দে তুরস্ক থেকে আর্যরা ভারতে প্রবেশ করে। মারিয়া গিমবুটাস ‘কুরগান সংস্কৃতি’ র ওপর ভিত্তি করে ককেশাস অঞ্চলে আর্যদের আদি বসতি ছিল বলে মনে করেন।আসলে কুরগান হল সমাধি সংক্রান্ত এক রীতি;এই রীতি অনুসারে সমাহিত ব্যক্তির সাথে অশ্ব সহ অন্যান্য গবাদি পশুকেও সমাধিস্থ করা হত।তবে ককেশাস আর্যদের আদি বসতি কিনা তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না,কারন এই অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত সমাধিগুলিতে যে মনুষ্য দেহাবশেষ পাওয়া গেছে তা আবার নরডিক জাতির মানুষের সাথে সমজাতীয়।
দক্ষিন রাশিয়ার কাজাখস্তান থেকে আবিষ্কৃত ‘আন্দ্রনোভো সংস্কৃতি’র ক্ষেত্রে দেখা যায় যে,এই সভ্যতার অন্তর্গত পশুপালক গোষ্ঠী অশ্বের সাথে সুপরিচিত ছিল এবং এই অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত গবাদিপশুর দেহাবশেষের মধ্যে আশি শতাংশই অশ্বের।এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এলিনা কুজমিনা উল্লেখ করেছেন যে, পন্টিক-কাস্পিক অঞ্চল হল আর্য বা ইন্দো-ইউরোপীয় গোষ্ঠীর আদি বাসভূমি এবং এখান থেকেই একটি শাখা ইউরোপে চলে যায় ও আরকটি শাখা ইরানে চলে যায়।ইরানের শাখাটি থেকে ভেঙে আরেকটি শাখা আবার ভারতে প্রবেশ করে।ইউরোপে যে আর্যদের একটি শাখার অভিপ্রয়ান হয়েছিল তা নিয়ে কোন সন্দেহই নেই এবং পরবর্তীকালে হিটলারের সময়ে ‘জার্মানরা আর্য’ এই জাতীয় ধারনা গড়ে উঠেছিল।সমস্যা হল আর্যদের যে শাখাটি ইরান বা তদানীন্তন পারস্যে প্রবেশ করেছিল তাদেরকে নিয়ে।প্রাচীন পার্সিদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ হল ‘জেন্দ আবেস্তা’ যার সাথে বৈদিক সাহিত্য সম্ভারের প্রচুর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।তবে যেখানে ‘দেব’ শব্দটি বেদে অত্যন্ত পবিত্র সেখানে আবেস্তাতে ‘দেব’ শব্দতি নেতিবাচক অর্থ বহন করে এবং ‘অসুর’ সত্ত্বার প্রতি স্তুতি বর্ষিত হয়েছে।সর্বোপরি বৈদিক দেবতা বরুণের সম্বন্ধে আবেস্তা ঋণাত্বক মনোভাব প্রকাশ করেছে।সম্ভবত ইরানে প্রবেশের পর আর্যদের মধ্যে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল,তাই একটি গোষ্ঠী ভারতে চলে এসে ইরানীয় আর্যদের বিপরীত এক ধর্মীয় ব্যবস্থা পত্তন করে।যদিও এই বিষয়টি এতটা সরল নয়।কারণ বেদে অনার্য মুণ্ডারী ও দ্রাবিড় ভাষার প্রায় তিনশোটি শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়।তাই অনেকেই মনে করেন আর্যরা ভারতীয় এবং ভারত থেকেই তারা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল।জেন্দ আবেস্তা ও ঋগ্বেদের সময়কাল প্রায় একই হওয়ায় এই প্রশ্নের সমাধান বেশ কঠিন।
আর্যরা ভারতীয় না অভারতীয় সেই বিতর্কে ঐতিহাসিক মহলে নানা মুনির নানা মত।তবে সংখ্যাগরিষ্ঠই আর্যরা অভারতীয় এই মতে বিশ্বাসী।জ্যোতির্বিদ রাজেশ কোচাহার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ‘বেদাঙ্গ জ্যোতিষ’ গ্রন্থের বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে,এই গ্রন্থে সর্বদীর্ঘ দিন ও ক্ষুদ্রকালীন রাতের যে তথ্য রয়েছে,তার অনুপাত করলে হয় ৩ঃ২।এই প্রকার বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন অঞ্চলের সম্ভাব্য অবস্থান হতে পারে ৩৫ডিগ্রি উত্তর অক্ষরেখা।একমাত্র হরপ্পা সভ্যতার শোরটুগাই ছাড়া আর অন্য কোন অঞ্চল এত উচ্চ অক্ষরেখায় অবস্থিত নয়,সুতরাং সামগ্রিক ভাবে আর্যরা ভারতীয় হতে পারে না। আবার কলিন রেনফ্রিউ এর মতে,ঋগ্বেদে কোথাও বলা হয়নি যে আর্যরা বহিরাগত সুতরাং এটার সম্ভবনাই প্রবল যে আর্যরা বেদ রচনার বহু পূর্বেই ভারতে এসে বসতি স্থাপন করেছিল।কিন্তু আর্যরা অভারতীয় এই তত্ত্বটা সর্বজনগ্রাহ্য নয়, কারন এর পশ্চাতে বেশ কিছু যুক্তি আছে,যা অস্বীকার করার মত নয়।বেদে বার্চ গাছের উল্লেখ পাওয়া যায় আর এই গাছ আবার ককেশাস ও স্তেপ অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ। অন্যদিকে নব্য প্রস্তর যুগীয় কাশ্মীরের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্রের নাম হল বুর্জাহাম,যেখান থেকে যীশুর জন্মের পূর্ববর্তী প্রায় দু-হাজার পাঁচশো বছরের প্রাচীন বার্চ গাছের অবশেষ পাওয়া গেছে।সর্বোপরি আমুদরিয়া নদীর উচ্চ উপত্যকায় প্রাপ্ত ‘অক্সাস সভ্যতার’ সাথে হরপ্পার বস্তুগত সাযুজ্য লক্ষ্য করা যায়।ঐতিহাসিক অ্যাসকো পারপোলা, ভিক্টর সরিয়ানিধি এরা মনে করেন যে দু-হাজার খৃস্ট পূর্বাব্দে অক্সাসের বাসিন্দারা হল আর্য ও তারা মেহেরগড়ে বসতি স্থাপন করেছিল এবং এই মেহেরগড়-ই হরপ্পা সভ্যতার পটভূমি রচনা করেছিল।বিস্ময়কর ভাবে অক্সাস অঞ্চলে অশ্বের কোন অবশেষ পাওয়া যায় নি,কেবল মাত্র একটি মৃৎপাত্রে অশ্বের চিত্র পাওয়া গেছে।সুতরাং আর্য আর অশ্ব পরস্পরের সাথে কতখানি সম্পৃক্ত তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ঋগ্বেদের ভাষ্যে দেখা যায় যে নদীগুলির নামোল্লেখ রয়েছে সেগুলি পূর্ব থেকে পশ্চিমে অর্থাৎ গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতী।তাই এই থেকে অনুমান করা যায় যে,আর্যরা পূর্ব থেকে পশ্চিমে গমন করে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল।তবে ভারত যদি আর্যদের আদি আদি বাসভূমি হয়,তাহলে ভারতের কোথায় তাদের বাসস্থান ছিল তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।কেউ মনে করেন হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চল ও তিব্বত,আবার কারো মতে গঙ্গা-যমুনা উপত্যকা,আবার অনেকে মুলতান ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলকে আর্যদের বাসভূমি রূপে অভিহিত করেছেন।একই ভাবে আর্যরা যদি বহিরাগত হয়,তাহলে কোথায় তাদের বসতি ছিল তা নিয়েও ভিন্নতার অভাব নেই।কেউ দক্ষিন রাশিয়া ও ইউক্রেন,কেউ পামীর উপত্যকা আবার কেউ পোল্যান্ড ও ইউরেশিয়া অঞ্চলকে আর্যদের আদি বাসভূমি রপে বিবেচনা করেছেন।
আর্য বিতর্ক ইতিহাসের এমন এক অধ্যায় যা’র সঠিক সমাধানসূত্র নির্ণয় অত্যন্ত দুরহ,তবে অসম্ভব নয়।সর্বপ্রথম সীমাবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি অতিক্রম করে এই সমস্যাকে আরও বৃহত্তর প্রেক্ষিতে যুক্তি-সংগতভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে।আর্যরা যে অভারতীয় এই বিষয়টি বেশ স্পষ্ট।সেক্ষেত্রে মধ্য এশিয়ায় এদের উৎস অনুসন্ধান করলে তা সফল হবে।আর্য সমস্যার সমাধানের সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি হল নিরবিছিন্ন অনুভূমিক উৎখনন,বিশেষত তুরস্ক,ইরান,ইরাক এই সকল অঞ্চলে আর্য সভ্যতার প্রচুর উপাদান এখনও লুক্কায়িত রয়েছে।এটা কোন কাল্পনিক অবতারনা নয়,সাম্প্রতিক কালে তুরস্কের গোবেকেলি টেপে অঞ্চলে আবিষ্কৃত প্রায় সাত হাজার বৎসরের প্রাচীন মন্দির ও ইউক্রেনে প্রাপ্ত স্বস্তিকা প্রতীক আর্য ইতিহাসকে এক নতুন আঙ্গিকে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে।সর্বোপরি হরপ্পা সভ্যতায় আর্য প্রভাব খোঁজার প্রয়াস বৃথা।কারন বেদে ইন্দ্রকে ‘পুরন্দর’ রূপে অভিহিত করা হয়েছে,কারন তিনি ‘হরি-গুপয়’ এর যুদ্ধে পুর বা নগর ধ্বংস করেছিলেন;আর এই হরি-গুপয় হল হরপ্পা।হরপ্পার বেশ কিছু সাইটে প্রাপ্ত কঙ্কালগুলির আঘাত পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে অতর্কিত আক্রমণে এদের মৃত্যু হয়েছে।তাছাড়া অনেক জায়গায় কঙ্কালের স্তুপ পাওয়া গেছে,যা থেকে বোঝা যায় যে এগুলির রীতি মেনে সৎকার হয়নি।হরপ্পার পতনের পশ্চাতে যে বৈদেশিক আক্রমণকে দায়ী করা হয়,সেই আক্রমণকারীরা আর অন্য কেউ নয়,তারাই হল আর্য।সুতরাং আর্যরা বিদেশী এবং শুনতে খারাপ লাগলেও মেনে নিতেই হয় যে বৈদিক সভ্যতার জন্মদাতারা ভারতের সুপ্রাচীন নগরসভ্যতার নির্মম ধ্বংসকারী ছিল এবং তারা কোনদিনই নগর সভ্যতার নিরিখে প্রাচীন ভারতীয়দের সাথে পাল্লা দিতে পারেনি।
সৌজন্য '-
সায়ন দেবনাথ, এম ফিল, প্রথম বর্ষ
প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
(
বৈদিক ধর্ম সঙ্গে নিয়ে আর্যদের ভারত আগমন এবং বুদ্ধ ধর্মের মূলকথা
এবং বুদ্ধধর্ম প্রতিষ্ঠার
কাহিনি :
খ্রিস্টের জন্মের
প্রায় সতের শত( ১৭০০ ) বছর পূর্বে বর্তমান
ইরান অঞ্চল থেকে আর্যরা
ভারতের ইন্দাস উপত্যকায়
আক্রমন চালায় এবং স্থানীয়দের পরাভূত
করে ভারতে প্রবেশ
করতে সমর্থ হয় ৷ তারা হিন্দুকোষ অতিক্রম
করে ভারতে ঢুকেছিল
বলে তাদের প্রচারিত
বৈদিক ধর্মকে হিন্দু
ধর্ম বলা হয়ে থাকে ৷ তারা ভারতে প্রবেশ করার পর তাদের নিজস্ব ধর্মীয়
বিশ্বাসের ধারণা ( বৈদিক
ধর্ম ) স্থানীয় ভারতবাসীর
উপর চাপিয়ে দেয় ৷ বেদ নামে পরিচিত
গীতি কবিতার একটি সংকলন গ্রন্থকে
তাদের বৈদিক ধর্মের
মূল ধর্মগ্রন্থ হিসেবে
প্রতিষ্ঠা করে ৷ বেদ-বিধানাত্মক ধর্মই বৈদিক ধর্ম ৷ বৈদিক ধর্মের বর্তমান নামই হিন্দু ধর্ম ৷ বেদ চারিখানা ৷ যথা- ঋক , সাম , যজু , ও অথর্ব ৷ বেদ রচিত হওয়ার বহু পরে ইহার ভাষ্য-অনুভাষ্য , টীকা ইত্যাদি এবং পুরান , উপপুরাণ , গীতা , তন্ত্র ইত্যাদি অজস্য শাস্ত্রগ্রস্থ রচিত হয়েছে এবং এই বৈদিক ধর্মে গৃহীত হয়েছে ৷
বেদের গীতিকবিতা গ্রন্থে বহুসংখ্যক দেব , দেবতার কথা উল্লেখিত ছিল ৷ যা পরবর্তীতে ধর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বৈদিক ধর্মকে আচার অনুষ্ঠান সর্বস্ব উৎসর্গের ধর্মে পরিণত করে ফলে ৷ অর্থাৎ হিন্দু ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ বেদ ৷
তাই আর্য হিন্দুদের বিশ্বাস পরমপিতা ভগবান অগ্নি , বায়ু , আদিত্য ও অঙ্গিরা- নামক চারজন ঋষিকে সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধচিত্ত দেখিয়া এই চারজনের হৃদয়ে অধিষ্ঠিত হন প্রথমে ৷ এবং পরে এই চারজনের হৃদয়ে অধিষ্ঠিত থেকে এদের চারজনের মুখ দিয়ে ঋক , সাম , যজু ও অথর্ব নামক চারটি বেদ প্রকাশ করান ৷ অন্য মতে অনাদি অনন্ত ঈশ্বরের নিঃশ্বাসে সৃষ্টি হয়েছে এইগুলোর ৷ সে যাই হউক , হিন্দু ধর্মের যাবতীয় একান্ত করণীয় বিষয়ই বেদে বর্ণিত হয়েছে ৷ ঋকবেদ মূলত স্তোত্রগ্রন্থ ৷ আর্য ঋষিগণ এই মন্ত্র দ্ধারা ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবগণের আরাধনা করতেন ৷ ঐতিহাসিকদের মতে , বেদ ঐশ্বরিক গ্রন্থ নয় ৷ কারণ ইহা শুধু প্রাচীন মুনি -ঋষিদের এবং আর্য রাজাদের ইতিহাসে পরিপূর্ণ দেখা যায় ৷ আবার কিছু অংশে ভারতবর্ষের বিভিন্ন নদ-নদী ,পাহাড়-পর্বত , জনপদ সহ বিভিন্ন যুদ্ধের বর্ণনা পাওয়া যায় ৷ তাই ঐতিহাসিকরা বেদকে মানুষ রচিত আর্য সভ্যতার ইতিহাস মনে করেন ৷ ঋগ্বেদে ২১৪ জন ঋষির নাম এবং ১২ জন স্ত্রীলোকের নামের উল্লেখ আছে ৷ ঐতিহাসিকদের ধারণা এদের সকলের প্রচেষ্টায় বেদের বিভিন্ন অংশ রচিত হয়েছে ৷ তাই বেদের শ্লোকগুলো তৎকালীন এবং প্রাচীন আর্য ঋষিদের ধ্যান-ধারণায় প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা এবং বাকিটা কাল্পনিক সৃষ্টি ৷
হিন্দু ধর্মের যাবতীয় একান্ত করণীয় বিষয়ই বেদে বর্ণিত আছে । এই ধর্মের বর্তমানবয়স প্রায় ৫০০০বৎসর । মহর্ষি ব্যাস মন্ত্র সংকলন ও বিভাগ করেন, এবং ইঁহার রচিত মহাভারত ‘পঞ্চম বেদ’ নামে কথিত,এবং অষ্টাদশ পুরাণ ইঁহার রচিত বলে প্রসিদ্ব । এই পুরাণাদি গ্রন্থসমূহও হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ বলিয়া পরিগণিত হয় । যদিও হিন্দু ধর্মকে বৈদিক ধর্মবলা হয় , তথাপি বর্তমান হিন্দু ধর্ম হলো বৈদিক ও পৌরাণিক মতের সংমিশ্রণ । যদিও পুরাণের শিক্ষার ফলে বৈদিক ধর্ম ঘোর পৌত্তলিকায় পূর্ণ হয়েছে, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই, বৈদিক বা পৌত্তলিক ধর্মের সঙ্গে পরবর্তি কিছু ধর্মের অনেক সাদৃশ্য দেখা যায় , যাহার ভাষা ও রুপগত পার্থক্য থাকলেও ভাবগত পার্থক্য তেমন নাই ।
চার্বাকীয় মত ; -চার্বাক বৈদিক যুগের একজন দার্শনিক পণ্ডিত, এবং তিনি নাকি বৃহস্পতিরশিষ্য ছিলেন । বৃহস্পতির নিকট থেকে, প্রাপ্ত তাঁহার ঐ মতটিকে বলা হয় চার্বাক দর্শন ।তাঁহার এই মতে--সচেতন দেহ ভিন্ন স্বতন্ত্র আত্মা নাই, পরলোক নাই , সুখই পরম পুরুষার্থ,প্রত্যক্ষমাত্র প্রমান ; মৃত্তিকা, জল ,বায়ু , ও অগ্নি হইতে সমস্ত পদার্থের উদ্ভব হইয়াছে ইত্যাদি ।চার্বাক দর্শনের স্থূল মর্ম ;- ‘ যতদিন জীবন ধারণ করা যায় , ততদিন আপনার সুখের জন্যচেষ্টা করা বিধেয় । কারণ সকলকেই একদিন কালগ্রাসে পতিত হইতে হইবে এবং মৃত্যুর পর এই দেহ ভস্মসাৎ হইয়া গেলে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকিবেনা । পরলোক বলিয়া কিছুই নাই,সুতরাং পারলৌকিক সুখলাভের প্রত্যাশায় ধর্মোপার্জনের উদ্দেশ্যে আত্মাকে ক্লেশ প্রদান করা নিত্যন্ত মূঢ়ের কার্য । যে দেহ একবার ভস্মীভূত হয়, তাহার পুনর্জন্ম অসম্ভব । এই স্থুল দেহই আত্মা, দেহাতিরিক্ত অন্য কোনো আত্মা নাই । ক্ষিতি, জল বহ্নি ও বায়ু --এই চারি ভূতের সম্মিলনে দেহের উৎপত্তি । যেমন পীতবর্ণ হরিদ্রা ও শুভ্রবর্ণ চুনের সম্মিলনে রক্তিমার উদ্ভব হয়, অথবা যেমন মাদকতাশূন্য গূড়-তণ্ডুলাদি হইতে সুরা প্রস্তুত হইলে উহা মাদক গুণযুক্ত হয় ,সেই রূপ দেহের উৎপত্তি হইলেই তাহাতে স্বভাবত চৈতন্যের বিকাশ হয় । প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমান, অনুমানাদি প্রমান বলিয়া গন্য নহে । উপাদেয় খাদ্য ভোজন, বস্ত্র পরিধান, স্ত্রীসম্ভোগ প্রভৃতি হইতে উৎপন্ন সুখই পরম পুরুষার্থ । ..দুঃখ ভোগ থাকবে, তবে দুঃখের ভয়ে সুখপরিত্যাগ করা অনুচিত’ ।
প্রতারক শাস্ত্রকারেরা বলে, যজ্ঞে যে জীবকে বলি প্রদান করা যায় , সেই জীবের স্বর্গলাভ হইয়া থাকে । উত্তম ,কিন্তু তবে তাহারা আপন মাতা-পিতাকে বলি প্রদান করিয়া তাহাদিগকে স্বর্গলাভের অধিকারী করে না কেন ? তাহা না করিয়া আপনাদের রসনাতৃপ্তির জন্য ছাগাদি অসহয় পশুকে বলি দেয় কেন ? এইরূপ মতা-পিতাকে স্বর্গগামী করাইতে পারিলে তজ্জন্য শ্রাদ্ধাদির প্রয়োজন হয় না । শ্রাদ্ধও ধূর্তদিগের কল্পনা । শ্রাদ্ধ করিলে যদি মৃত ব্যক্তির তৃপ্তি হয় ,তবে কোনো ব্যক্তি বিদেশে গমন করিলে তাহাকে পাথেয় না দিয়া,তাহার উদ্দেশে বাটীতে কোনো ব্রাহ্মণকে ভোজন করাইলেই তো তাহার তৃপ্তি হইতে পারে । যখন উহা হয় না, সুতরাং শ্রাদ্ধাদিকার্য কেবল অকর্মণ্য ব্রাহ্মণদিগের জীবনোপায় ব্যতীত আর কিছু নহে । বেদ --ভণ্ড,ধূর্ত রাক্ষস -এই ত্রিবিধ লোকের রচিত ।
বেদের গীতিকবিতা গ্রন্থে বহুসংখ্যক দেব , দেবতার কথা উল্লেখিত ছিল ৷ যা পরবর্তীতে ধর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বৈদিক ধর্মকে আচার অনুষ্ঠান সর্বস্ব উৎসর্গের ধর্মে পরিণত করে ফলে ৷ অর্থাৎ হিন্দু ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ বেদ ৷
তাই আর্য হিন্দুদের বিশ্বাস পরমপিতা ভগবান অগ্নি , বায়ু , আদিত্য ও অঙ্গিরা- নামক চারজন ঋষিকে সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধচিত্ত দেখিয়া এই চারজনের হৃদয়ে অধিষ্ঠিত হন প্রথমে ৷ এবং পরে এই চারজনের হৃদয়ে অধিষ্ঠিত থেকে এদের চারজনের মুখ দিয়ে ঋক , সাম , যজু ও অথর্ব নামক চারটি বেদ প্রকাশ করান ৷ অন্য মতে অনাদি অনন্ত ঈশ্বরের নিঃশ্বাসে সৃষ্টি হয়েছে এইগুলোর ৷ সে যাই হউক , হিন্দু ধর্মের যাবতীয় একান্ত করণীয় বিষয়ই বেদে বর্ণিত হয়েছে ৷ ঋকবেদ মূলত স্তোত্রগ্রন্থ ৷ আর্য ঋষিগণ এই মন্ত্র দ্ধারা ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবগণের আরাধনা করতেন ৷ ঐতিহাসিকদের মতে , বেদ ঐশ্বরিক গ্রন্থ নয় ৷ কারণ ইহা শুধু প্রাচীন মুনি -ঋষিদের এবং আর্য রাজাদের ইতিহাসে পরিপূর্ণ দেখা যায় ৷ আবার কিছু অংশে ভারতবর্ষের বিভিন্ন নদ-নদী ,পাহাড়-পর্বত , জনপদ সহ বিভিন্ন যুদ্ধের বর্ণনা পাওয়া যায় ৷ তাই ঐতিহাসিকরা বেদকে মানুষ রচিত আর্য সভ্যতার ইতিহাস মনে করেন ৷ ঋগ্বেদে ২১৪ জন ঋষির নাম এবং ১২ জন স্ত্রীলোকের নামের উল্লেখ আছে ৷ ঐতিহাসিকদের ধারণা এদের সকলের প্রচেষ্টায় বেদের বিভিন্ন অংশ রচিত হয়েছে ৷ তাই বেদের শ্লোকগুলো তৎকালীন এবং প্রাচীন আর্য ঋষিদের ধ্যান-ধারণায় প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা এবং বাকিটা কাল্পনিক সৃষ্টি ৷
হিন্দু ধর্মের যাবতীয় একান্ত করণীয় বিষয়ই বেদে বর্ণিত আছে । এই ধর্মের বর্তমানবয়স প্রায় ৫০০০বৎসর । মহর্ষি ব্যাস মন্ত্র সংকলন ও বিভাগ করেন, এবং ইঁহার রচিত মহাভারত ‘পঞ্চম বেদ’ নামে কথিত,এবং অষ্টাদশ পুরাণ ইঁহার রচিত বলে প্রসিদ্ব । এই পুরাণাদি গ্রন্থসমূহও হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ বলিয়া পরিগণিত হয় । যদিও হিন্দু ধর্মকে বৈদিক ধর্মবলা হয় , তথাপি বর্তমান হিন্দু ধর্ম হলো বৈদিক ও পৌরাণিক মতের সংমিশ্রণ । যদিও পুরাণের শিক্ষার ফলে বৈদিক ধর্ম ঘোর পৌত্তলিকায় পূর্ণ হয়েছে, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই, বৈদিক বা পৌত্তলিক ধর্মের সঙ্গে পরবর্তি কিছু ধর্মের অনেক সাদৃশ্য দেখা যায় , যাহার ভাষা ও রুপগত পার্থক্য থাকলেও ভাবগত পার্থক্য তেমন নাই ।
চার্বাকীয় মত ; -চার্বাক বৈদিক যুগের একজন দার্শনিক পণ্ডিত, এবং তিনি নাকি বৃহস্পতিরশিষ্য ছিলেন । বৃহস্পতির নিকট থেকে, প্রাপ্ত তাঁহার ঐ মতটিকে বলা হয় চার্বাক দর্শন ।তাঁহার এই মতে--সচেতন দেহ ভিন্ন স্বতন্ত্র আত্মা নাই, পরলোক নাই , সুখই পরম পুরুষার্থ,প্রত্যক্ষমাত্র প্রমান ; মৃত্তিকা, জল ,বায়ু , ও অগ্নি হইতে সমস্ত পদার্থের উদ্ভব হইয়াছে ইত্যাদি ।চার্বাক দর্শনের স্থূল মর্ম ;- ‘ যতদিন জীবন ধারণ করা যায় , ততদিন আপনার সুখের জন্যচেষ্টা করা বিধেয় । কারণ সকলকেই একদিন কালগ্রাসে পতিত হইতে হইবে এবং মৃত্যুর পর এই দেহ ভস্মসাৎ হইয়া গেলে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকিবেনা । পরলোক বলিয়া কিছুই নাই,সুতরাং পারলৌকিক সুখলাভের প্রত্যাশায় ধর্মোপার্জনের উদ্দেশ্যে আত্মাকে ক্লেশ প্রদান করা নিত্যন্ত মূঢ়ের কার্য । যে দেহ একবার ভস্মীভূত হয়, তাহার পুনর্জন্ম অসম্ভব । এই স্থুল দেহই আত্মা, দেহাতিরিক্ত অন্য কোনো আত্মা নাই । ক্ষিতি, জল বহ্নি ও বায়ু --এই চারি ভূতের সম্মিলনে দেহের উৎপত্তি । যেমন পীতবর্ণ হরিদ্রা ও শুভ্রবর্ণ চুনের সম্মিলনে রক্তিমার উদ্ভব হয়, অথবা যেমন মাদকতাশূন্য গূড়-তণ্ডুলাদি হইতে সুরা প্রস্তুত হইলে উহা মাদক গুণযুক্ত হয় ,সেই রূপ দেহের উৎপত্তি হইলেই তাহাতে স্বভাবত চৈতন্যের বিকাশ হয় । প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমান, অনুমানাদি প্রমান বলিয়া গন্য নহে । উপাদেয় খাদ্য ভোজন, বস্ত্র পরিধান, স্ত্রীসম্ভোগ প্রভৃতি হইতে উৎপন্ন সুখই পরম পুরুষার্থ । ..দুঃখ ভোগ থাকবে, তবে দুঃখের ভয়ে সুখপরিত্যাগ করা অনুচিত’ ।
“ প্রতারক ধুর্ত পণ্ডিতগণ আপনাদের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে পরলোক ও স্বর্গ-নরকাদির কল্পনা করিয়া জনসমাজকে বৃথা ভীত ও অন্ধ করিয়া রাখিয়াছে । বেদ অধ্যয়ন, অগ্নিহোত্র, দণ্ডধারণ,ভস্মলেপন প্রভৃতি বুদ্ধি ও পৌরুষশূন্য ব্যক্তিবৃন্দের উপজীবকা মাত্র ।
প্রতারক শাস্ত্রকারেরা বলে, যজ্ঞে যে জীবকে বলি প্রদান করা যায় , সেই জীবের স্বর্গলাভ হইয়া থাকে । উত্তম ,কিন্তু তবে তাহারা আপন মাতা-পিতাকে বলি প্রদান করিয়া তাহাদিগকে স্বর্গলাভের অধিকারী করে না কেন ? তাহা না করিয়া আপনাদের রসনাতৃপ্তির জন্য ছাগাদি অসহয় পশুকে বলি দেয় কেন ? এইরূপ মতা-পিতাকে স্বর্গগামী করাইতে পারিলে তজ্জন্য শ্রাদ্ধাদির প্রয়োজন হয় না । শ্রাদ্ধও ধূর্তদিগের কল্পনা । শ্রাদ্ধ করিলে যদি মৃত ব্যক্তির তৃপ্তি হয় ,তবে কোনো ব্যক্তি বিদেশে গমন করিলে তাহাকে পাথেয় না দিয়া,তাহার উদ্দেশে বাটীতে কোনো ব্রাহ্মণকে ভোজন করাইলেই তো তাহার তৃপ্তি হইতে পারে । যখন উহা হয় না, সুতরাং শ্রাদ্ধাদিকার্য কেবল অকর্মণ্য ব্রাহ্মণদিগের জীবনোপায় ব্যতীত আর কিছু নহে । বেদ --ভণ্ড,ধূর্ত রাক্ষস -এই ত্রিবিধ লোকের রচিত ।
স্বর্গ-নরকাদি ধূর্তের কল্পিত, আর পশুবধ ও মাংসাদি নিবেদনের বিধি রাক্ষসপ্রণীত ।‘অশ্বমেদ যজ্ঞে যজমানপত্নী অশ্বশিশ্ন গ্রহন করিবে’ ইত্যাদি ব্যবস্থা ভণ্ডের রচিত । সুতরাং এই বৃথাকল্পিত শাস্ত্রে কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তিই বিশ্বাস করিতে পারেন না । এই দেহ ভস্মীভূত হইলে তাহার আর পুনরাগমনের সম্ভাবনা নাই । তাই যতদিন বাঁচিয়া থাকা যায় , ততদিন সুখে কালহরণ করাই কর্তব্য । এই শরীর ব্যতীত আর কোনো আত্মা নাই। যদি থাকিত এবং দেহান্তর গ্রহনের ক্ষমতা থাকিত, তবে সে বন্ধু-স্বজনের স্নেহে বাধ্য হইয়া পুনর্বার ঐ দেহেই প্রবেশ করে না কি জন্য ? অতএব দেখা যাইতেছে--বেদ-শাস্ত্র সকলই অপ্রমাণ্য; পরলোক,স্বর্গ, মুক্তি সকলই অবান্তর ; অগ্নিহোত্র, ব্রহ্মচর্য, শ্রাদ্ধাদিকর্ম সমস্তই নিস্ফল । চার্বাক সেই বেদিক যুগেই এইসব অলীক কল্পনার বিরুদ্ধে অভিযান চালাইয়াছিলেন, তবে বিশাল আকার ধারণ করা সম্ভব হয় নাই ,কিন্তু ইহা নির্মূল হইয়া ও যায় নই । বস্তুত চার্বকীয় মতবাদ ছিল অভিজ্ঞতাভিত্তিক, যাহা পরবর্তীকালে আধুনিক বৈজ্ঞানিক মতবাদের ভিত্তিরূপে স্বীকৃত ।বর্তমান বিজ্ঞান জগতের অনেকেই বাহ্যত না হইলেও কার্যত চার্বাকীয় মতবাদের অনুসারী ।
ফলে ভারতের
প্রচলিত পুরাতন ধর্মবিশ্বাসের প্রতীক , ভারতীয় প্রাচীন
অনুশীলন যোগ (
মনোযোগ একীভূত করে বিশেষ চর্চার
মাধ্যমে মনের শক্তিকে নিয়ন্ত্রন
করার পদ্ধতি বিশেষ )
এর প্রতি বিশ্বাসীদের
কাছে বৈদিক ধর্মের
এইসব বাহ্যিক আনুষ্ঠানিকতা
সর্বস্ব ধর্মের উপর অনেক স্থানীয়
ভারতীরা ধীরে ধীরে অসন্ত্তষ্ট হয়ে উঠে ৷ কারণ স্থানীয়দের কাছে বৈদিক ধর্মের ঐসব উৎসর্গ ও শাস্ত্রীয় আচার অনুষ্ঠান ইত্যাদি যথেষ্ট এবং আসল ধর্মীয়
কাজ বলে বিবেচিত হচ্ছিল
না ৷ ফলে কিছু ভারতীয়
আরো বাস্তব এবং সত্যের
অভ্যন্তরীন উপলব্ধির সন্ধান
করা আরম্ভ করে ৷
এরই পক্ষাপটে
অষ্টম শতাব্দীতে হিন্দু ধর্মীয় সাধুগণ আরণ্যক
এবং উপনিষদ নামের কিছু রচনা তাদের বৈদিক ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে অন্তর্ভূক্ত করেন ৷ যা পরে বেদান্ত
নামে পরিচিতি পায় ৷ এবং আর সর্বশেষে
তা হয়ে যায় শুধু বেদ গ্রন্থ ৷ আর খ্রিস্টের
জন্মের প্রায় ৫০০ শত বছর আগে আরো অসংখ্য উপনিষদ
রচিত হয়েছে এবং এর সংখ্যাও এক
সময় ২০০ শত অতিক্রম করে যায় ৷ আর পর্যায়ক্রমে বৈদিকধর্মে
ব্রাম্মণ্যবাদের প্রতিষ্ঠা পায় আর
সমাজে শ্রেণীভেদ প্রথার
সৃষ্টি হয় ৷
(এখানে উল্লেখিত বৈদিক ধর্মের তথ্যাদি ও বিভিন্ন অনুষ্টানাদি বুদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠায় প্রধান উপাদান হিসেবে কাজ করেছিল বলে এবং এই লেখার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক হওয়ায় তা এখানে উল্লেখিত হল ) ৷
(এখানে উল্লেখিত বৈদিক ধর্মের তথ্যাদি ও বিভিন্ন অনুষ্টানাদি বুদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠায় প্রধান উপাদান হিসেবে কাজ করেছিল বলে এবং এই লেখার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক হওয়ায় তা এখানে উল্লেখিত হল ) ৷
কিন্তু এতসবের
পরও কিছু স্থানীয় ভারতীয়দের
কাছে যোগের কৌশলসমূহ
অন্য একজগতের অস্তিত্ব
সম্পর্কে সচেতন করে তুলেছিল ৷ যেই পদ্ধতির
সাহায্যে ( অর্থাৎ
শারীরিক অঙ্গভঙ্গি , শ্বাস প্রশ্বাস , খাদ্য গ্রহণ ও মানুসিক
একাত্মতার সঠিক ব্যবহারে ) মানুষ স্বাধীনভাবে চলার চেষ্টা অব্যহত
রাখতে সক্ষম ৷ এই চেতণার
বিকাশলাভকারী একজন মানুষ অর্থাৎ
যোগী ( yogi ) অনুশীলনকারীর মাঝে ব্যক্তিক
দুর্জ্ঞেয়র আদর্শ বিরাজিত
হয়ে থাকে ৷ ফলে চর্চাকারীরা
আলোকপ্রাপ্তির জন্যে পরিবার
ও সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে সত্তার
ভিন্ন বলয়ে বা গভীরে নিজকে স্থাপন করতে সক্ষম করে তুলতে
পারে বলে তারা বিশ্বাসী হয়ে উঠে
৷ ফলে স্থানীয়দের এই ধারণা এবং বিশ্বাসকে
ধ্বংস এবং বিনাস করতে
আর্যদের আরোপিত বৈদিক ধর্মবিশ্বাস
ব্যর্থ হয়ে যায় সম্পূর্ণভাবে ৷
তাই স্থানীয়দের
এই বিশ্বাসের প্রতি সাড়া
দিতে গিয়ে এবং এই পদ্ধতির
প্রতি আস্থাস্থাপন করে এবং নিজেও এই পন্থায়
বিশ্বাসী হয়ে উঠেন এবং এর চর্চা আরম্ভ করেন যে ব্যক্তি ,
তিনিই হচ্ছেন সেই বিখ্যাত ব্যক্তি
এবং বৌদ্ধুধর্মবিশ্বাসের প্রতিষ্ঠাতা
সিদ্ধার্থ গৌতম ৷ যে এখন বুদ্ধ নামে
পরিচিত ৷
খ্রিস্টের জন্মের ৫৩৮ বছর পূর্বে
সিদ্ধার্থ গোতম নামের এক তরুণ ও তাঁর সুন্দরী
স্ত্রী ও পুত্র ভারতের বানারস
থেকে প্রায় ১০০ মাইল উত্তরে
কপিলা বাস্তুর বিলাসবহুল
বাড়ি ছেড়ে ভিক্ষু
সাধুতে পরিণত হয়ে যান ৷ সমাজে মানুষের
দুর্দশার দৃশ্য দেখে পিড়িত বোধ করতেন তিনি ৷
তাই মানুষের এই দুঃখ
, কষ্ট , দুর্দশা এবং যন্ত্রণা
উপসম করার কাজে নিজকে নিয়োজিত
করার সিন্ধান্ত গ্রহণ করেন ৷ এই কাজ করতে গিয়ে প্রথমে অনেকটা
লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তিনি প্রায় ৬ বছর কাল পর্যন্ত অসংখ্য
হিন্দু গুরুর কাছে বসেছেন , তাদের কথা শুনেছেন
, সেবা করেছেন , প্রার্থনা করেছেন
, আর তা করতে গিয়ে নানা প্রকার
শাস্তি ও প্রায়শ্চিত্ত
ভোগ ও করতে হয়েছে তাকে ৷৷ কিন্তু
তাঁর মূল টার্গেট
মানুষের দুর্দশার কোনও সমধান পান নি তাতে ৷
ফলে এইসব হিন্দু
সন্ন্যাসীদের কার্যকলাপ ও তাদের মতবাদ গৌতমের মনপুতঃ
হয় নি ৷ আর তাঁর কৃচ্ছতা সাধনও তাকে আরো হতাশ করে তুলে ৷
অবশেষে তিনি হিন্দু সন্ন্যাসীদের
এইসব মন্ত্রপাঠ যপমালা
এবং তপস্যা বাদদিয়ে
ভারতীয়দের প্রাচীন যোগ অনুশীলনের পদ্ধতির
দিকে মনোনিবেশ দেয়া শুরু করেন ৷ নিজকে তিনি এক গভীর ধ্যানে
নিমগ্ন করেন ৷ আর এইভাবে
দীর্ঘদিন ধ্যানে নিমগ্ন
থাকার পর তিনি তাঁর প্রত্যাশিত
প্রাপ্তি লাভ করেন ৷ এই পদ্ধতিতেই তাঁর বোধি বা তাঁর প্রত্যাশিত
জ্ঞানের প্রাপ্তি ঘটে ৷ গভীর ধ্যানে মগ্ন থাকা অবস্থায়
এক রাতে আলোকপ্রাপ্ত
হয়ে উঠেন তিনি ৷
তখন তাঁর মনে হয়েছে বিশ্বের
গোটা সৃষ্টি যেন আনন্দে উদ্বেলিত
হয়েছে এবং দুলে উঠেছে পৃথিবী
, যেন অজ্ঞাত
কোনো স্বর্গ থেকে পুস্প বর্ষিত
হচ্ছে আর এক সুবাসিত বাতাস বয়ে চলেছে সারা পৃথিবীময়
৷ এবং এই সব দেখে যেন স্বর্গের
দেবতারাও আনন্দে মেতে উঠেছেন ৷ প্রাচীন ধর্ম সৃষ্টির ইতিহাসের
আবার যেন এক পৃনরাবৃত্তি ঘটলো ৷ অনেকটা
পৌত্তলিকতার দর্শনের মতো দেবতা
, প্রকৃতি এবং মানুষের সহানুভূতিতে
একসুত্রে বাঁধা পড়লো আবার মানব
সমাজে ৷ মানুষের
মুক্তি আর নির্বাণ
লাভের ( শীতল হওয়া বা বিদায় লাভকরা ) যন্ত্রনার অবসানের
আশা দেখা দিল তাঁর এবং তাঁর অনুসারীদের
মাঝে ৷ আর এরই ফলশ্রুতিতে সিদ্ধার্থ
গৌতম নামক এককালের
এক ব্যক্তি রূপান্তরিত
হয়ে গেলেন বুদ্ধে,
অর্থাৎ আলোকপ্রাপ্ত জনে ৷
তখন থেকে পরবর্তী পয়তাল্লিশ
বছর ধরে তিনি তাঁর ধ্যানের
মাধ্যমে প্রাপ্ত জ্ঞানের
বাণী প্রচারের উদ্দেশ্য
গোটা ভারত চষে বেড়িয়েছেন ৷ তার বক্তব্য
যেটা তিনি প্রচার
করতে আরম্ভ করেছিলেন
তা ছিল- তাঁর ধম্ম , বা
সঠিক জীবন যাপনের
মূলকথা , যা মানুষের
দুঃখকষ্ট থেকে তাকে মুক্তি দিতে পারে ৷
তাই বৌদ্ধরা যখন ধ্যানের মাধ্যমে
চরম আনন্দ বা দুর্জ্ঞেয়র অভিজ্ঞতা লাভ করে
, তখন কিন্তু
অন্যান্য প্রায় সব অন্য ধর্মবিশ্বাসীদের মত এই অভিজ্ঞতা
লাভ করাকে কোনো
আধ্যাত্মিক বা অতিপ্রাকৃতিক
( ঈশ্বর ) সত্তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে বলে মনে
করে না ৷ কারণ বুদ্ধরা
মনে করে ঈশ্বরে
বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী
যে কেউ সঠিক যোগ অনুশীলণের
মাধ্যমে এই অভিজ্ঞতা
বা এই একই উপলব্ধি লাভ করতে পারবে ৷ তবে এর জন্যে প্রয়োজন সঠিক পথে জীবন যাপন করা এবং যোগ এবং ধ্যানের
কৌশল আয়ত্ত্বে নিয়ে আসা ৷ অর্থাৎ তাদের কাছে ঈশ্বরের
সাক্ষাত লাভ করা বা এই রকম কোনো উপলব্ধি লাভ করা আসল কাজ নয় ৷ সুতরাং
কোনো দেবতা বা উপদেবতার ওপর ভরসা না করে শুধু নিজেরাই নিজেদেরকে
সব কিছু থেকে রক্ষা পাওয়ার
কৌশল শিখে তা নিজেদের আওত্ত্বে
আনতে হবে ৷ এই মূল্যবান
উপদেশই বুদ্ধ তাঁর অনুসারীদের দিয়ে গেছেন ৷ কারণ ধ্যানে
নিমগ্ন থেকে যা তিনি অর্জন করেছেন সেই অভিজ্ঞতার আলোকে তাঁর অনুসারীদের
উদ্দেশ্য তিনি বলেছেন যে ,
এক অত্যাবশ্যকীয় সত্যের
ওপর ভিত্তি করে যে বিশ্বাস
একদা গড়ে
উঠেছিল মানুষের মধ্যে , এখন তার সকল অস্তত্বই মানুষের
দুঃখ কষ্ট ও যন্ত্রনার জন্যে দায়ী হয়ে গেছে
এবং
যা এখন জীবনকে
খুবই জটিল করে তুলেছে ৷ প্রাকৃতিক উপায়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বস্তু আসে এবং চলেও যায় ৷ তাই এই
জগতে কোনো কিছুরই চিরন্তর
কোনও তাৎপর্য প্রাকৃতিতে বিদ্যমান নেই ৷ বুদ্ধের মতে ,
মানুষের
প্রাচীন বিশ্বাসে নিশ্চয়
কোথাও কিছু একটা ভূল আছে
! আর সেই ভূল বিশ্বাস
বোধ থেকেই মানুষের
ধর্মবিশ্বাসের শুরু হয়েছে ৷ তাই প্রাচীন পৌত্তলিকতার এবং অন্য ধর্ম বিশ্বাসের যুগে এই বোধই মানুষকে স্বর্গীয়
জগৎ এবং আমাদের
চেনা জগতের সমাজকে
এক তথাকথিত আদর্শ
জগতের কিংবদন্তীর দিকে টেনে নিয়ে গেছে
, যা
মানব জাতিকে শক্তি যোগাতে সক্ষম বলে মনে করা হয়েছে তখন ৷
কিন্তু বুদ্ধ তাঁর অনুসারীদের
উপদেশ আকারে বলেছেন
যে , সকল প্রাণীর প্রতি দয়া প্রদর্শন
করে , ভদ্র ও বিনয়ী ব্যবহার
করে ,
দয়াপূর্ণ ও সঠিক আচরেণ করে এবং নায্য ও সত্য কথা বলে এবং
মনকে
আচ্ছন্ন করতে পারে এমন মাদক বা সমজাতীয়
পদার্থ গ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রেখে মানুষ সকল প্রকার
দুঃখ থেকে মুক্তি
লাভ করতে পারবে ৷
তবে
বুদ্ধ নিজেকে তাঁর ঘোষিত
এই পদ্ধতির আবিস্কারক
দাবী করেন নি ৷ যে কেউ নিজ প্রচেষ্টায় এই সত্যটিকে খুঁজে বের করে তা সে নিজে প্রযোগ
করে এর ফলাফল ভোগ করতে পারবে
বলে তাঁর অনুসারীদেকে
উপদেশ দিয়েছেন ৷ তবে বর্তমানে
বুদ্ধধর্মের বিশ্বাসীরা বুদ্ধের
মূল বক্তব্য থেকে অনেক সরে গেছেন বলে বলা হয় ৷ কারণ বুদ্ধধর্মও এখন অনুষ্ঠান সর্বস্ব
ধর্মে পরিণত হয়ে পড়েছে
, যেটার
বিরোধীতা করতে গিয়ে বুদ্ধ ধর্মের
আবির্ভাব হয়েছিল সেটা থেকে তাঁর অনুসারীরা
অনেকটা সরে গেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা
মনে
করেন ৷
বুদ্ধ মনে করতেন কর্ম মানুষকে অসংখ্য
যন্ত্রণাময় জীবনের পুনর্জন্মের
চক্রে আটকে ফেলেছে
৷ মানুষ তার নিজের অহমবোধকে
সংস্কার করতে পারলেই
মানুষ তার নিয়তিকে
বদলাতে পারবে ৷ তিনি পুনর্জন্মের
প্রক্রিয়াকে জ্বলন্ত শিখার সঙ্গে তুলনা করেছেন ৷ বলেছেন কেউ ভূল প্রবণতা
নিয়ে শিকাটি না নিবেয়ে শিখাটির
জলন্ত রেখে মৃত্যুবরণ
করলে স্রেফ আরেকটি
বাতি জ্বালাবে সে শিখা ৷ কিন্তু এর আগে শিখাটি
নির্বাপিত হয়ে গেলে ,
সব যন্ত্রণাচক্রের অবসান ঘটবে
, তার নির্বাণ প্রাপ্ত
ঘটবে অর্থাৎ সে শীতল হয়ে বিদায় নেবে ৷
তবে ইহা
আবার বৌদ্ধদের জীবনে অন্য ভূমিকা
পালন করে যা অন্য ধর্মের
ঈশ্বরের ভূমিকার অনুরূপ
বলে কেউ কেউ মনে করেন ৷
বিখ্যাত লেখক এডওয়ার্ড কনযে তার এক লেখায় বলেছেন , বৌদ্ধরা নির্বাণ
বা পরম সত্তাকে ব্যাখ্যা
করতে আস্তিকদের মতো একই ইমেজারি
ব্যবহার করে থাকে :
কনযে এর
বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে
তার
গ্রন্থে বলেছেন -( এডওয়ার্ড কনযে , বুদ্ধিজম : ইটস এসেন্স
এন্ড ডেভেলপমেন্ট , অক্সফোর্ড , ১৯৫৯
, পৃ; ৪০ , অনুবাদ করেছেন শওকত হোসেন
)
“ আমাদেরকে বলা হয়েছে
যে , নির্বাণ চিরস্থায়ী , স্থিতিশীল , অপচনশীল
, অনড় , জরাহীন , মৃত্যুহীন , অজাত এবং অসৃষ্ট
; এটা শক্তি , আনন্দ
এবং সুখ , নিরাপদ
আশ্রয় , আশ্রম ও আক্রমনের
অতীত এক স্থান
; এটাই প্রকৃত
ও পরম সত্তা
: এটাই মঙ্গল
, চরম লক্ষ্য
এবং আমাদের জীবনের
এক এবং একমাত্র
পরিণতি , চিরন্তন , গুপ্ত ও দুর্বোধ্য
শান্তি ” ৷
তবে বৌদ্ধরা
ঈশ্বরের ধারণা ও পরম সত্তার
ধারণা প্রকাশে আস্তিকদের
মতো এতো আগ্রহী
নয় ৷ কারণ বুদ্ধ নির্বাণের ব্যাপারটিকে
অন্য কোনো মানবীয়
বৈশিষ্টো থেকে আলাদা করে দেখছেন
এবং বলেছেন নির্বাণ
মানবীয় আলোচনার অতীত ব্যাপার , তাই এটা
নিয়ে কোনো আলোচনা
না করার উপর জোর দিয়েছেন
৷ এটি নিয়ে কোনো প্রশ্নের
উত্তরও দিতে চান নি বুদ্ধ ৷
শেষ পর্যন্ত তিনি অবশ্য বলেছেন
যে , কোনও ব্যক্তির ধর্মজ্ঞান
বা বিশ্বাস , সে যেসব আচার অনুষ্ঠান পালন করে সেগুলোর
মতোই গুরুত্বহীন ৷ এগুলো কৌতূহলোদ্দীপক
হতে পারে , কিন্তু
চরম তাৎপর্যমণ্ডিত কোনও বিষয়
নয় ৷ একমাত্র বিবেচ্য
বিষয় হচ্ছে উন্নত বা সুন্দর
জীবন , যদি সে সত্যকে প্রকাশে
ব্যর্থও হয় ৷ আর নির্বাণ
প্রসঙ্গে বলেছেন , তাঁর অনুসারীরা
যখন সুন্দর জীবন যাপনের চর্চা করে সেটাকে
প্রত্যক্ষ করতে নিজকে সক্ষম করে তুলবে তখন তারাই নির্বাণের
অস্তিত্ব জানতে বা বুঝতে পারবে ৷
( নির্বাণ হিন্দী শব্দ এর আক্ষরিক আর্থ হচ্ছে অগ্নিশিখা শীতল হওয়া বা নিভে গিয়ে বিলুপ্ত ঘটা ৷ তবে বৌদ্ধরা পরম বাস্তবতা , এবং এর লক্ষ্য পূরণ করে মানবজীবনের পরিপূর্ণতা ও বেদনার সমাপ্তি বোঝাতে ব্যবহার করে থাকে ৷ একেশ্বরবাদীদের অনুসন্ধানের ঈশ্বরের মতো এটাও যৌক্তিকভাবে যেমন ব্যাখ্যাযোগ্য নয় তেমনি বৌদ্ধদের কাছে তাদের প্রাপ্ত ভিন্ন বলয়ের অনুভূতি যৌক্তিকভাবে ব্যাখ্যাযোগ্য নয় বলে যুক্তিবাদীরা মনে করে থাকেন ৷ )
( নির্বাণ হিন্দী শব্দ এর আক্ষরিক আর্থ হচ্ছে অগ্নিশিখা শীতল হওয়া বা নিভে গিয়ে বিলুপ্ত ঘটা ৷ তবে বৌদ্ধরা পরম বাস্তবতা , এবং এর লক্ষ্য পূরণ করে মানবজীবনের পরিপূর্ণতা ও বেদনার সমাপ্তি বোঝাতে ব্যবহার করে থাকে ৷ একেশ্বরবাদীদের অনুসন্ধানের ঈশ্বরের মতো এটাও যৌক্তিকভাবে যেমন ব্যাখ্যাযোগ্য নয় তেমনি বৌদ্ধদের কাছে তাদের প্রাপ্ত ভিন্ন বলয়ের অনুভূতি যৌক্তিকভাবে ব্যাখ্যাযোগ্য নয় বলে যুক্তিবাদীরা মনে করে থাকেন ৷ )
( সূত্র; A History of God , by Karen Armstrong , translated by Saokot Hossain ) (শওকত হোসেনের অনুবাদ
করা স্রষ্টার ইতিবৃত্ত ….গ্রন্থের প্রথম অধ্যায় উদ্ভব এর একটি অংশের সংক্ষেপ
করে এই লেখাটি
তৈরি করা হয়েছে এবং এই ব্লগের অন্য একটি বৈদিক ধর্মবিষয়ক লেখার কিছু অংশ এই লেখার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক হওয়ায় এখানেও পরে যুক্ত করা হয়েছে লেখাটিকে পাঠকের কাছে আরো স্পষ্ট করতে )
এবং লেখাটির প্রথম অংশের লেখক সায়ন দেবনাথ , যা মুক্তমনা ডট কম থেকে সংযুক্ত করা হয়েছে কিছু পাঠকদের আগ্রহের জন্যে ।
সৌজন্য '-
এবং লেখাটির প্রথম অংশের লেখক সায়ন দেবনাথ , যা মুক্তমনা ডট কম থেকে সংযুক্ত করা হয়েছে কিছু পাঠকদের আগ্রহের জন্যে ।
সৌজন্য '-
সায়ন দেবনাথ, এম ফিল, প্রথম বর্ষ
প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
‘
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন