বাংলাদেশে মানুষের মস্তিষ্কের স্বাধীনতা অর্জন কি এখনো দূর অন্ত ?


   
               বাংলাদেশের  মানুষের  মস্তিষ্কের  স্বাধীনতা  অর্জন  কি  এখনো  দূর  অন্ত  ?

                    বর্তমানে  দেশে  বা  বিদেশে  যুক্তিবাদী  ও  মুক্ত  চিন্তার  কোনো  রচনা  , বই , বা  লেখা  খুঁজতে  হলে  আজ  থেকে  ১০০ থেকে  ২০০  বছর  পেছনে  চলে  যেতে    হয়  ৷  তবে  রোকেয়ার  পর  বাংলাদেশে  ষাটের  দশকে  ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয়  কেন্দ্রিক  কিছু  মুক্তমনা ও  মুক্ত  চিন্তাশীল  ব্যক্তির  বিকাশ  ঘটেছিল ৷  তবে  প্রতিক্রিয়াশীল  মৌলবাদী  গোষ্ঠি  ও  তাদের  ৭১  সালের  আগের   দোসর  পাকিস্তানিদের  আক্রমনে  নিহত  হতে  হয়েছে তাদের  ৷  

               যে  দ’এক  জন  বেঁচে  যান  ৭১  সালের  পর  তাদেরকে  ও  মুরতাদ , নাস্তিক ইত্যাদি  ঘোষণা  করে  তাদের  লেখনি  বন্ধ  করে  দেয়া  হয়েছে  ৷  রাষ্ট্র  এ  ক্ষেতে  তাদের  সহায়ক  ভূমিকা  পালন  করেছে  ৷ যে  দু-এক  জন পরে কিছু  সাহসী  ভূমিকা  পালনে  আগ্রহী হয়ে উঠে  ছিলেন  তারাও  শেষ  পর্যন্ত  হুমায়ুন  আজাদের  পরিণতি  দেখে  নিশ্চুপ  হয়ে  গেছেন  ৷ 
        
               পরবর্তীতে  যে  কয়েকজন  ব্লগার  একটু  এগোতে  চেয়েছিলেন  তাদেরকে  প্রথমে  ধর্মীয়  মৌলবাদী  গোষ্ঠি এবং   পরে  প্রধান  বিরোধী  দল ( B N P ) এবং এর পরে  এদের  চাপে  পড়ে  সরকার ও দমন  নীতি  গ্রহণ  করেন  এবং  এই  ধারার     উথ্থান   ও  বিকাশ সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ  করে  দেন  
               কিন্তু  এই  ধারা  সমাজে  বেশিদিন  অব্যাহত  থাকলে  অচিরেই  বাংলাদেশ  একটি  কঠোর  মোলৌবাদী  দেশে  পরিণত  হয়ে  যাবে  ৷  তাই  মুক্ত  চিন্তা  ও  যুক্তিবাদী  মানুষদের  এখনই  এর  প্রতিরোধে  এগিয়ে  আসতে  হবে  ৷  না  হয়  অচিরেই  এই  দেশ পাকিস্তান  বা  আফগানিস্তান  নয় ,  একবারে খেলাফত  ঘোষণাকারী  দেশ  সিরিয়া  বা  ইরাকে  রূপান্তরিত  হতে  বেশি  সময়ের  প্রয়োজন  হবে  না  ৷  আমাদের  পরবর্তী  প্রজন্মের  খাতিরেই  সংশ্লিষ্ট  সবাইকে  এগিয়ে  আসতে  হবে     এখন ই ৷

          তবে  যুক্তিবাদী  ও  মুক্তচিন্তার   কিছু  মানুষ  এখনও  বিদেশে  খুঁজলে  পাওয়া  যায়  ৷  এই  রকম  একজন  মানুষ  হচ্ছেন  Darrel W . Ray , তিনি  ২০০৯  সালে  The  God Virus : How  Religion  infects  our lives  and Culture  ( IPS , PRESS Ist edition , dec/ 2009 )  নামে  একটি  বই  লিখেছেন  ৷

            এই  বইয়ের  শেষ  পৃষ্টায়  ডেরেল  যে  কয়টি  লাইন  লিখেছেন  এ  লেখার  সঙ্গে  প্রাসঙ্গিক  হওয়ায়  তা  এখানে  উল্লেখ  করা  হল  ৷ ডেরেল  লিখেছেন -

              “  ভাইরাস  মুক্ত  জীবনের  আস্বাদন  কোনো  সুনির্দিষ্ট  গন্তব্য  নয় , বরং  একটি  চলমান  যাত্রাপথের  নাম  ৷  আমরা  সবাই  এই  ভাইরাস  নিয়ে  কোন  না  ভাবে  আক্রান্ত , এবং  আমরা  নিজেদের  অজান্তেই  বয়ে  নিয়ে  যাই  অসুস্থ  বিশ্বাস ,  মতামত  কিংবা  ধারণা  ৷  আমাদের  অনেকের  মাথাই  আক্রান্ত  করে  ফেলা  হয়েছে ,  আমাদের  শিশু  বয়সেই  আমাদের  বিশ্বাসের  পানপাত্র  হাতে  তুলে  দিয়ে  ৷  আক্রান্ত  মননকে  প্রতিষেধক  দিয়ে  ধীরে  ধীরে  সুস্থ  করে  ফেলাই  হবে  আমাদের  যাত্রাপথের  লক্ষ্য  ৷  আমরা  যদি  বিশ্বাসের  ভাইরাসের  কুফলগুলো  সম্বন্ধে  সর্বদা  সচেতন  থাকতে  পারি , তবে  আমরা  ভাইরাস  মুক্ত  সমাজ  প্রত্যাশা  করতে  পারি  ’’ ৷

          যদি  আমরা  ডেরেলের  মত  আশাবাদী  হয়ে  সামনের  দিকে  অগ্রসর  হতে  পারি  তবে  নিশ্চয়  একদিন  আমরা  জয়  করতে  পারব  আমাদের  সামনের  সকল  অন্ধকারকে  ৷  এই  আশাবাদ  ব্যাক্ত  করা  ছাড়া  বোধহয়  আমাদের  সামনে  আর  কোনো  পথ খোলা  নেই  !

( সুত্র ডেরেলের  লেখার  অনুবাদটি  নেয়া  হয়েছে 
   অভিজিৎ  রায়ের  বই ,  বিশ্বাসের  ভাইরাসের  ২২৫
    পৃষ্টা  থেকে  )


মন্তব্যসমূহ