অলৌকিক নয় , লৌকিক
নয় , এটা শুধু প্রতারণা , স্রেফ জুয়াচুরি
!!
আদিম মানুষেরা যাদুবাদ বা ইন্দ্রিয়জালবাদে বিশ্বাস
করত ৷ পরবর্তিতে
একটা পর্যায়ে এসে এর কিছু অংশ অতীন্দ্রিয়বাদ এবং অতীন্দ্রিয় শক্তিতে
রূপান্তরিত হয়ে যায় ৷ কিছু ধর্মবিশ্বাসিরা অতীন্দ্রিবাদকে ধর্মবিশ্বাসের
সঙ্গে জুড়ে দেয় ৷ কিন্তু যারা অতীন্দ্রিয় শক্তি অর্জনে সক্ষম হয় নাই তারা প্রাকৃতিক
কিছু নিয়ম ও স্বভাব এবং
মানুষের
বিশ্বাস ও অনুভূতিকে
কাজে লাগেয়ে প্রতারণা ও জুয়াচুরির মাধ্যমে
তাদের ব্যক্তি স্বার্থ
উদ্দারে ঝাঁপিয়ে পড়ে সমাজের বিভিন্ন
স্তরে ৷ আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের
দিকে তাকালেই এই সব অশ্লীল
ও অনৈতিক ঘটনা চোখে পড়ে ৷
দার্শনিক বার্ট্র্যান্ড
রাসেল বলেছেন , “ মানবজাতির
বর্তমান শোচনীয় দুর্দশার
উৎস হচ্ছে মানুষের
ভয় থেকে উৎপন্ন
মানুষিক রোগ , তাই মানুষ আত্মবিশ্বাসী না হয়ে প্রতারকদের
খপ্পরে পড়ে ” ৷ বাংলায় প্রতারক
ও তাদের কর্মধারাকে
বিভিন্ন নামে অভিহিত
করা হয়েছে ৷ যেমন
- ইন্দ্রিয়জাল , যাদু , ভোলবাজ , ভেলকি , ভানুমতির খেল , তুকতাক , বাণমারা , গুণকরা , মন্ত্রকরা
এবং বশীকরণ ইত্যাদি
নামে ৷ এসবের মূল উদ্দেশ্য
হচ্ছে সাধারণ মানুষকে
অলৌকিক শক্তি দেখিয়ে কিছু
চতুর লোক বিনা পরিশ্রমে নিজেদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা , দেশ ও দশের সম্পদ দখল কেরে ভোগ করা সহ সমাজে নিজেদের ক্ষমতা
ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি
করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত
হওয়া ৷ প্রথমে মানুষের কাছে বিশ্বাস ছিল একটি তাত্ত্বিক
ব্যাপার ৷ পরে কিছু স্বর্থানেষী
লোক তাত্ত্বিক ব্যাপারটিকে
ধর্মবিশ্বাসের অন্তর্ভূক্ত করে নিয়েছে ৷
এ প্রসঙ্গে
এ অঞ্চলের কিছু দৃষ্টান্ত এ লেখা
র সঙ্গে
প্রাসঙ্গিক হওয়ায় নিম্নে
উল্লেখ করা হল ৷
বাংলাদেশের
গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাটে অসংখ্য
মাজার বা মৃত মানুষের কবর দেখা যায় ৷ সে মাজারগুলো মানুষের
ইন্তেকালের পরে তাকে যে স্থানে
কবর দেয়া হয়ে ছিল
, সে
স্থান কি না তার কোনো প্রমাণ ছাড়াই এসব স্থানে
মাজারের সৃষ্টি করা হয়েছে ৷ মৃত ব্যক্তির ইন্তেকালের
শত শত বছর পর এসব স্থানে ঐ ব্যক্তির কবর আবিষ্কার হয় এবং পরে ঐ কবরের স্থানটিকে মাজারে
রূপান্তরিত করা হয় ৷ মাজারের স্থানের জমি
দখলকরা ছাড়াও দান বাক্স স্থাপন
করে সাধারণ মানুষ থেকে বিভিন্ন
কৌশলে অর্থ আদায় করা হয়, বাৎসরিক
জন্মউৎসব পালনের নাম করে মেলার আয়োজন করে বিভিন্ন অনুষ্টানের
নামে মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয় ৷ যেসব স্থানে
এবং রাস্তায় লোকসমাগম
বেশি হয় সে সব স্থানে
মাজারের সৃষ্টি করা হয় ৷ কবর আবিষ্কারের
পূর্বে এ এলাকার কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি
স্বপ্নযোগে জানতে পারেন যে ঐ নির্দিষ্ট স্থানে
কোনো এক ধার্মিক
ও কামেল পীর বা আউলিয়াকে
কবর দেয়া হয়েছিল
৷ এখন ঐ স্থানে রাস্তাঘাট
গড়ে উঠায় তার কবরের স্থানকে
পদদলিত করা হচ্ছে ৷
এতে তিনি
অপমানিত বোধ করছেন ৷ তাই স্থানীয় ঐ ব্যক্তিকে স্বপ্নে
দেখাদিয়ে তার কবরের স্থানটিকে রক্ষা করতে নির্দেশ
প্রদান করেছেন ৷ মাজারের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সাহায্যের আশায় এখন তিনি দানবাক্স খুলে মানুষের কাছে হাত পাততে বাধ্য হচ্ছেন
এখন ৷
মুসলিম সম্প্রদায়ের
লোকদের কাছে হৃদয় বড়
৷ তাই
তারা মানুষের আবেগকে
বেশি গুরুত্ব দেন এবং
বিশ্বাস করেন এবং নিজেরাও
আবেগের বসে চলেন ৷ তাই ধর্মের ব্যাপারে
যে কোনো ঘটনাকে
মুসলমানরা সহজেই বিশ্বাস করে ফেলেন ৷ আর এ সুযোগ গ্রহণ করে কিছু চতুর মানুষ ৷ তাই কোনো মাজার আবিষ্কার কোথাও ব্যর্থ হয় না ৷ এখন আবার শহর বন্দর এলাকাতে নতুন এক ধরণের ধর্মীয় উপাসনালয়ের
সৃষ্টি করা হচ্ছে খানকাশরীফ নামে ৷ সাধারণত
সরকারী বা ব্যক্তিগত মালিকানার পরিতক্ত
জমি দখল করে এ সব খানকাশরীফের প্রতিষ্ঠা
করা হয়
৷ যেমন ঢাকা শহরের সায়দাবাদ এলাকায়
এক প্রতারক সরকারী
জমি দখল করে খানকাশরীফ নামে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্টানের
প্রতিষ্ঠিতা করতে পেরেছে
রাষ্ট্রক্ষমতাকে কৌশলে ব্যবহার
করে ৷ ইসলাম ধর্মে এই নামে কোনো ধর্মীয়
প্রতিষ্ঠানের নাম আগে শুনা যায় নি ৷ ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়কে উইল করে দেয়া জমিকে দখল করে হাক্কানি খানকাশরীফ
নাম দিয়ে একটি খানকাশরীফ
প্রতিষ্ঠার সংবাদ পাওয়া গেছে ৷ উপরের দু’টু ঘটনা জুয়াচুরি
ছাড়া অন্যকিছুই নয় ৷ আর সাধারণ মানুষের
ধর্মবিশ্বাস ও আবেগকে
এ ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়ে চালাক ও
চতুর কিছু মানুষ পরিশ্রম ছাড়া অর্থ আয়ের পথ করে থাকেন এই
ভাবেই ৷ অনেক সময় তারা রাজনীতিকদের
ছত্রছায়ায় থেকে তাদের স্বার্থ আদায় করে নেন ৷ বাংলাদেশের রাজনীতিকেরা
ভোটের বা নিজেদের
ব্যক্তিস্বার্থে যে কোনো অনৈতিক বা অন্যায় কাজের সংশ্লিষ্টদের সহায়তা
দিয়ে থাকেন ৷ প্রেসিডেন্ট
এরশাদ নাকি সরকারী মালিকানাদিন জমি সায়দাবাদের খানকাশরীফের
জন্য বিনা মূল্যে
দান করে দিয়ে গেছেন ৷
হিন্দু সম্প্রদায়ের
লোকদের কাছে হৃদয় ও আবেগ থেকে বুদ্ধির
প্রযোগের গুরুত্ব বেশি ৷ তাই তারা হাতে কলমে প্রমাণ
ছাড়া কোনো কিছু সাধারণত বিশ্বাস করতে চান না ৷
সে ব্যবস্থাও ভেঙ্গে দিয়ে চতুর লোকেরা
নতুন পন্থা আবিষ্কার
করে সাধারণ লোককে ফাঁকি দিতে সক্ষম হচ্ছে আজকাল ৷ কোনো
স্থানকে দখল করতে হলে
সে স্থানে প্রথম ধর্মীয় উপাসনালয়
বা মন্দির সৃষ্টির
ব্যবস্থা করা হয় প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ৷ প্রথমে টার্গেট
করা স্থানের জমির মাটির
নিচ থেকে শিব লিঙ্গ বা মুর্তি বের করে আনা হয়
পূজা আর্চণার মাধ্যমে
৷ এবং দেবতার দৈব
নির্দেশ পেয়ে দেবতার
মনোনিত কোনো সন্যাসী বা
পৌরহিত সে কাজটি সম্পূর্ণ করেন ৷ আসল ঘটনা হচ্ছে ,
প্রথমে
চিহ্নিত ও টার্গেট করা স্থানের
মাটিকে গোপনে খুঁড়ে একটি গর্ত করা হয় ৷ গর্তের
চারপাশ এবং গর্তের
নিচকে পিটিয়ে মাটি শক্ত করা হয় ৷ তবে গর্তের সামনের
অংশ অর্থাৎ গর্তের মূখের
মাটিকে নরম এবং আলগাকরে রাখা হয় ৷ এর পর গর্তের মাটি সরিয়ে আগেরদিন
রাত্রে শুকনা ছোলাকে
পানি দিয়ে ভিজিয়ে
খালি গর্তে ঢুকানো
হয় ৷ ছোলার পরিমান নির্ধারণ
করা হয় যে শিবলিঙ্গ বা মুর্তি মাটির নিচ থেকে বের করা হবে মন্ত্রের
জোরে সেটার ওজনের আড়াইগুণ পরিমান
,অর্থাৎ লিঙ্গের বা মুর্তির ওজনের চেয়ে আড়াইগুণ পরিমাণ বেশি ওজনের ছোলাকে
ব্যবহার করা হয় ৷ এটা
গবেষণার মাধ্যমে পূর্বে
নির্ধারণ করা হয়েছে ৷
আর ছোলা গর্তে
ভরার পর ভিজা ছোলার উপরে ঐ লিঙ্গ বা মুর্তি রেখে আগলা মাটি দিয়ে গর্তের
মূখ ভরে দেয়া
হয় ৷ পরেরদিন সকাল থেকে ঐ স্থানের আশেপাশে
দলবেঁধে পুজা অর্চণা
আরম্ভ করা হয় পরিকল্পিতভাবে ৷ এবং সাত/ আট
ঘণ্টা এ অনুষ্টান
চালানো হয় এবং কিছু সময় অন্তর অন্তর গর্তের মূখে পানি ঢালা হয় ৷ পানিতে ছোলা ভিজে ফুঁলে ফেঁপে আয়তনে বড় হতে থাকে ৷ এক পর্যায়ে আয়তনে বড় হওয়া ছোলা গর্তের
শক্তকরা অংশের দিকে বাড়তে ব্যর্থ
হয়ে গর্তের মূখের দিকে শক্তি প্রযোগ করে বাড়তে চেষ্টা
করতে থাকে ৷ বারবার জলপ্রযোগে ছোলার আয়তন বড় হয়ে গর্তের
মূখদিয়ে বেরিয়ে পড়তে চাইলে ছোলার উপরে স্থাপন
করা শিবলিঙ্গ বা মুর্তির কিছু অংশ মাটির বাইরে চলে আসে ৷ মুর্তি বা লিঙ্গ বাইরে দৃশ্যমান হওয়া মাত্রই
প্রচারকরা হয় , .. অমূখ দেবতা পূজা আর্চণায়
মুগ্ধ হয়ে এই লোকালয়ে দেখা দিয়েছেন
৷ তাই
মন্দির এবং উপাসনালয়
স্থাপনের ইহাই উপযুক্ত স্থান
৷ এই স্থানেই
মন্দির প্রতিষ্ঠা এখন করতেই হবে ৷এ
কথা ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে আগ থেকে ব্যবস্থা করে রাখা লোকজন এসে
প্রতিকী মন্দির তৈরির কাজ আরম্ভ করে দেয় এবং দেখতে দেখতে মন্দির
প্রতিষ্ঠার কাজ সম্পূর্ণ
করা হয় এবং জমিটি তাদের দখলে চলে যায় ৷ উপস্থিত দর্শকরা ব্যাপারটি
অলৌকিক মনে করে বিশ্বাস করতে বাধ্য হয় এবং তাদের কার্যকলাপকে সহজেই মেনে নিয়ে প্রতারকদের পক্ষ অবলম্বন করে ফেলে ৷ তাই আজকাল প্রত্যক্ষ্য
প্রমাণ দিয়েও প্রতারণার করা সম্ভব হচ্ছে ৷ ইহা একটি বাস্তব
এবং সত্য ঘটনা ৷ এ অঞ্চলে এরকম অনেক ঘটনার প্রমাণ আছে ৷
বর্তমানে প্রতারণার
ক্ষেত্র আরো প্রসারিত
হয়েছে এবং বিভিন্ন
ভাবে সাধারণ মানুষকে
প্রতারণা করা হচ্ছে ৷
ব্যাংক , বীমা সহ বিভিন্ন সরকারী
ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহও এখন প্রতারকদের
আওতার মধ্যে এসে গেছে
দেশের নষ্ট রাজনীতির
কারণে ৷ তাই সামাজিকভাবে
এখনই সতর্ক ব্যবস্থা
গ্রহণ করতে ব্যর্থ হলে সমস্ত দেশই এক সময় ঠগবাজ ও প্রতারক চক্রের
অধিনে চলে যাবে ৷
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন