মানুষের আদি ও প্রাচীন
বিশ্বাসের উৎস নিয়ে বর্তমান লোগোস পন্থি এবং যুক্তিবাদী মুক্ত চিন্তাবিদগণের কিছু চিন্তা-ভাবনা এবং তা বিশ্লেষণের
কিছু সংকলিত তথ্যের ভিত্তিতে একটি আলোচনা মূলক একটি রচনা ৷ (তবে কী —
সকল ধর্মই কিছু কুসংস্কারের সমষ্টি।)
আমরা এই মহাবিশ্বের কতটুকু? অত্যন্ত নগণ্য অংশ, যার গাণিতিক রূপদান প্রায় অসম্ভব। বলা হয়, বিলিয়ন গ্যালক্সি রয়েছে মহাবিশ্বে। এই এক বিলিয়ন গ্যালাক্সিতে নক্ষত্র রয়েছে কয়েক ট্রিলয়ন টি, গ্রহ উপগ্রহ রয়েছে আরো অনেক বেশি। এর খুব সামান্য অংশের সন্ধান এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা করতে পেরেছে। তাছাড়া মহাবিশ্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের গবেষণা স্থির থাকছে না, আজ যা বলা হচ্ছে কাল তা বদলে যাচ্ছে, শুধু মহাবিশ্ব কেন, বিজ্ঞানের অনেক কিছুই সতত পরিবর্তনশীল। প্রকৃতির পরিবর্তন হলে বিজ্ঞান তো পরিবর্তীত হবেই। -
বর্তমান আধুনিক বিশ্বে
, বিশেষকরে পশ্চিমা
বিশ্বে মুক্তচিন্তার অধিকারী
ও যুক্তিবাদী মানুষের
চিন্তা চেতনার পরিধি ও প্রসার
দিনে দিনে যেমন বেড়ে চলেছে
, তেমনি ঐতিহাসিক
, দার্শনিক , এবং বৈজ্ঞানিক
গবেষণায় অনেক নতুন তথ্য ও আবিস্কৃত হচ্ছে এবং তা মানুষের জানার মধ্যে চলে আসছে ৷ এর ফলে মানুষের আদিম এবং প্রাচীন
অনেক বিশ্বাসে ফাটল ধরতে আরম্ভ করছে এখন ৷ যা মানুষের পূর্বের
আদি ও প্রাচীন
বিশ্বাস , এমনকি বিভিন্ন ধর্মীয়
বিশ্বাসের ক্ষেত্রেও প্রভাব
পড়েছে ব্যাপকভাবে ৷ তাই এখন যুক্তিবাদী মানুষেরা
এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা করে তার ফলাফল গ্রন্থাকারে প্রকাশ
করা আরম্ভ করেছেন
৷ এই লেখায় বাঙলা দেশের অন্যতম বহুমাত্রিক
লেখক , মৌলবাদী দের দ্বারা
শারিরীক ভাবে আক্রান্ত
হয়ে পরে মৃত্যুবরন
করেছেন যিনি ( হুমায়ুন আজাদ )
, তার
প্রকাশিত গ্রন্থ -আমার অবিশ্বাস এবং বঙলাদেশের একমাত্র
লৌকিক দার্শনিক হিশেবে
যাকে অবিহিত করা হয় , সেই লেখক আরজ আলী মাতুব্বরের
লিখিত , আরজ আলী মাতুব্বরের
রচনা সামগ্রীর ১ -এবং ২ এর অনুরূপ অনুকরনে
এবং আরো কিছু সংকলিত তথ্যের
ভিত্তিতে এই লেখাটি
তৈরি (রচিত নয় ) করা হয়েছে , শুধু এ সব ব্যাপারে
আগ্রহী পাঠকদের জন্যে , অতি
সংক্ষেপে ৷ তবে এই ব্লগের
কিছু পুরানো লেখার এখানে ও আবার উল্লেখ করা হয়েছে বিষয়টিকে
একটা পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে
, ফলে কিছু লেখার রিপিট হয়েছে কোনো কোনো বিষয়ে , যার জন্যে দুঃখ প্রকাশ করা হলো আগ্রহী
পাঠকদের উদ্দেশ্যে ৷
পৃথিবীকেন্দ্রিক যে-সব মহাবিশ্ব বা মহাজগতের কল্পনা
করেছিলেন এক
সময় দার্শনিক ইউডোক্সাস , আরিস্ততল , টলেমি সহ অন্যান্যরা
, সে গুলো আজকের মহাজগতের
তুলনায় ছিলো খুবই ছোট । আর
এর মূলে রয়েছে তাঁদের দুটি বিশ্বাস ; একটি হচ্ছে যে বর্তমান বিশ্বের ( মহাজগতের ) কেন্দ্র হচ্ছে পৃথিবী , আর অন্যটি ধারনাটি ছিলো পৃথিবী স্থির । আর এর মূলে আছে পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মের বইগুলো ; এগুলোতেই বেশি বিশ্বাস করে অন্ধরা , অর্থাৎ কুসংস্কারে
বিশ্বাসী মানুষেরা । যা প্রাচীনকালের
কিচ্ছা-কাহিনির এবং মিথ বা মিথোসের
উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলো এসব
ধারনা ও বিশ্বাসগুলো
৷
যাকে বর্তমানে আদিম মানুষের অবিকাশিত
চিন্তাধারার বহির্প্রকাশ
ছিলো বলে মনে করা হয়ে থাকে , যা পরবর্তীকালে স্বার্থবাদীদের সুপরিকল্পিত
মিথ্যাচার এবং এক ধরনের
মত্ততার বিচিত্র রূপ , যা
মানুষের জন্যে অত্যান্ত
ক্ষতিকর ও অসত্য ৷
দার্শনিক কোপারনিকাস ও কেপলার আর বৈজ্ঞানীক
গ্যালিলিওর জন্মের পরেও বিশ্ব সাহিত্য অনেকটাই অন্ধ
থেকে গেছে এ সব ভ্রান্ত
ধারনা ও অন্ধ বিশ্বাসের কারণে
। তাই বিশ্ব কবি মিল্টন তাঁর
স্বর্গচ্যুতি মহাকাব্যে পৃথিবীই
মহাজগতের কেন্দ্র উল্লেখ করে
লিখেছেন তাঁর অমর বিখ্যাত
মহাকাব্য ।
দেবদূতরা বা তদের প্রতিনিধিরা
চিরকালই অন্ধতা ও আনুগত্যের পরামর্শ দিয়েছেন মানুষকে
; কিন্তু মানুষ , অন্তত কিছু মানুষ , তাদের ওই পরামর্শ শোনেননি ।
তা হলে বিশ্ব বা মহাজগত কখন সৃষ্টি হয়েছিলো ? ইহুদি , খ্রিস্টান , ও ইসলাম ধর্ম মতে , অতীতের একটা নির্দিষ্ট সময়ে , কম বেশী প্রায় সাত হাজার বছর আগে বিধাতা সৃষ্টি করেছিলেন এইবিশ্বকে । (সূত্র; আদি পুস্তক )
তা হলে বিশ্ব বা মহাজগত কখন সৃষ্টি হয়েছিলো ? ইহুদি , খ্রিস্টান , ও ইসলাম ধর্ম মতে , অতীতের একটা নির্দিষ্ট সময়ে , কম বেশী প্রায় সাত হাজার বছর আগে বিধাতা সৃষ্টি করেছিলেন এইবিশ্বকে । (সূত্র; আদি পুস্তক )
কিন্তু
১৯২৯-সালে বৈজ্ঞানিক এডউইন হাবেল তার মহাকাশ
এর গবেষণায় দেখতে
পান যে দূরবর্তী সব নক্ষত্রপুঞ্জ ক্রমশঃ
দ্রুত স’রে যাচ্ছে আমাদের পৃথিবী থেকে আরো দূরে ; অর্থাৎ মহাজগত ক্রমশঃ সম্প্রসারিত হচ্ছে । এসব ব্যাপারে অনুসন্ধানকারী বিজ্ঞানিরা তাদের গবেষণার প্রাপ্ত ফল অনুসারে
মনে করেন যে
,
আজ থেকে দশ বা বিশ
হাজার মিলিঅন বছর আগে
মহাজগতের সবকিছু ছিলো একীভূত ; তাই মহাজগতের ঘনত্ব ছিলো অসীম । আর ওই অবস্থায়ই ঘটে Big Bang-বা মহাবিস্ফোরণ নামক একটি ঘটনা , আর তখনই সূচনা হয় এই
মহাজগতের ৷ অবশ্য এখন মনে করা হয়ে থাকে যে মহাবিস্ফোরণের
পূর্বে ও ইনফ্লেশন জাতিয় আরো কিছু ঘটনা ঘটেছিলো
যা এখানে
আলোচনা করা হলো না , এই
লেখার পরিধি সীমিত রাখতে
, প্রথমে তা ধরতে পারা যায় নি ৷ যা বৈজ্ঞানিকরা অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার
পর এখন মনে করেন । এ ব্যাপারে এই লেখার পরবর্তী
এক অংশে সংক্ষেপে
কিছু উল্লেখিত হয়েছে ৷
বিশ্ব বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক
হকিংয়ের মতে
সময়ের সূচনা ও হয় বিগ ব্যাং এর সময়
থেকেই । কিন্তু সময় বইতে থাকে , আর মহাজগতের
সম্প্রসারিত হওয়া ও বিকিরণের এর সঙ্গে সঙ্গে , তা শীতল এবং অন্ধকার
ও
হ’তে থাকে । আদি মহাজগত পরিপূর্ণ ছিলো হাইড্রোজেন
ও হেলিয়াম গ্যাসে
এবং ভরপূর ছিলো বিকিরণে । আর এসব কারণেই তখনই সৃষ্টি হয় নক্ষত্রমণ্ডলি । আর ওই মহাবিস্ফোরণ থেকেই দেখা
দেয় নক্ষত্রমণ্ডলি , নক্ষত্র , গ্রহ , তারপর জীবন বা প্রাণের । এখন মহাজগতে রয়েছে অজস্র নক্ষত্রমণ্ডল । আবার ভবিষ্যতে
এক সময় হয়ত পৃথিবীর সমস্ত জলবায়ু নিঃশেষিত হয়ে গিয়ে
মহাবিশ্ব মিশে যাবে আবার মহাশূন্যে , আর তখনই মহাপ্রলয় শুরু হবে পৃথিবী জুড়ে
। সূর্য ও পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে হয়তো
, তবে মানুষ হয়তো ধ্বংস হবে না । কারণ তখন মানুষেরও হয়তো এতো বিবর্তন ঘটে যাবে , আর তখন মানুয় এতো বিকশিত হয়ে যাবে , আর বিকাশিত হবে তাদের বৈজ্ঞানিক প্রতিভা , তাই তাঁরা পৃথিবী ধ্বংসের অনেক আগেই হয়তো
পাড়ি জমাবে অন্য
কোনো গ্রহে
, বা নিজেরাই নিজেদের জন্যে তৈরি ক’রে
নেবে কোনো আর এক মহাজগতিক বাসভূমি ,আর এক নতুন আধুনিক
ধর্ম ও কুসংস্কার
মুক্ত নতুন পৃথিবী
। এটা
বর্তমানে কল্পনা মনে হলেও ভবিষতে
তা বাস্তবে রূপ নিতে পারবে, বলে
অনেকেই এখন আশাবাদী
হয়ে উঠছেন ৷
বিজ্ঞানিরা এখন মনে করেন , মহাজগতের উৎপত্তির
জন্যে দরকার পড়ে নি
কোনো বিধাতার
, তাই এর ধ্বংসের জন্যেও পড়বে না কারো দরকার ; তবে সমাজ ও রাষ্টের ওপর প্রভুত্ব করার জন্যে
দরকার পড়ে বিধাতার
( ছায়া বিধাতা বিশ্বাসের ) । তবে একসময় ভবিষ্যতে হয়তো বিধাতা স’রে যাবেন এসব প্রেক্ষাপট থেকে , আর রাজনীতিবিদেরা আর মৌলবাদীরা
তাঁকে বেশি দিন আর আটকে এবং তাদের আয়ত্তে রাখতে পারবেন না । এখন
শুধু প্রয়োজন কিছু সময়ের , যা কয়েক শতক থেকে কয়েক হাজার শতক ও হতে পারে , বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন ৷ এটাকে সংশ্লিষ্টরা অনেকটা
অনিবার্যই মনে করে থাকেন
৷
এটা
এখন বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত সত্য যে , পৃথিবীর সব প্রাণীই গঠিত হয়েছে জৈব অণুতে , আর যাতে কার্বনপরমাণু পালন করেছে মূল কেন্দ্রীয় ভূমিকা । এমন এক সময় গেছে যখন কোনো প্রাণ
ছিলো না পৃথিবীতে , তখন পৃথিবী ছিলো নিষ্প্রাণ শূন্য ; কিন্তু এখন পৃথিবী প্রাণে ভরপুর । এখন প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে এই নিষ্প্রাণ শূন্য পৃথিবী
ভ’রে উঠলো প্রাণে ? পৃথিবীতে দেখা দিয়েছে যেসব প্রাণ , তাদের মধ্যে রয়েছে গভীর এক সম্পর্ক ।
পৃথিবীতে আমাদের সকলের
মধ্যেই রয়েছে একই
সাধারণ জৈবরাসায়ন ; আমরা বহন করি একই সাধারণ বিবর্তনমূলক উত্তরাধিকার । আমরা , সব প্রাণীরা
উদ্ভূত হয়েছি এক বিবর্তনের ফলে । মানুষ কোনো স্বর্গচ্যুত অভিশপ্ত প্রাণী নয় , মানুষ প্রকৃতিক ভাবে বিকশিত প্রাণী
;
তবে আদি বিশ্বাসী
মানুষেরই একদল রটিয়েছে যে মানুষ স্বর্গচ্যুত পাপী । কিন্তু বিবর্তন
প্রমানিত সত্য বৈজ্ঞানিক ভাবে এখন
৷ তবে , তাহলে পৃথিবীর সূচনা হয়ে ছিলো
কীভাবে ?
মোটামোটি ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে মহাজাগতিক গ্যাস ও ধুলো জমাট বেঁধে উৎপত্তি হয়েছিলো পৃথিবীর । পৃথিবীর উদ্ভবের পর প্রাণের উদ্ভব হ’তে
ও সময় লাগে নি বেশি ; প্রায় চার বিলিঅন বছর আগে আদিম
পৃথিবীর সমুদ্রের জলাশয়ে দেখা দিয়েছিলো প্রথম
প্রাণের । তবে একদিনেই আজকের মতো জটিল প্রাণরাশি দেখা দেয় নি , নানা বিক্রিয়ার ভেতর দিয়ে কোটি কোটি বছরে বিকাশ ঘঠেছে প্রাণের । প্রাণের মূলবীজ হচ্ছে ডিএনএ, বা
ড়িঅক্সিরিবোনিউক্লেয়িক
এসিড । ডিএনএ অণু দেখতে মুছড়ে
কুণ্ডলিপাকানো মইয়ের মতো , যার ধাপগুলোতে রয়েছে চারটি অংশ । এগুলোতেই রয়েছে জৈব সংকেত । একেক প্রাণীর জৈবসংকেত ভিন্ন , অন্যটির থেকে । প্রায় চার বিলিঅন বছর আগে পৃথিবী ভ’রে
উঠেছিলো জীবন-অণুতে , আর শুরু হয়েছিলো প্রাণের বিবর্তনের
; তার পর কোটি কোটি বছরে দেখা দিয়েছে ও বিলীন হয়ে গেছে বহু ধরনের
প্রাণ । এক সময় পৃথিবীতে এমন সব
প্রাণী ও উদ্ভিত দেখা দিয়েছিলো , যা
আজ নেই । এক সময় পৃথিবীতে ঘটে এক মহাবিস্ফোরণ , আর তার পর থেকে প্রাণের
বিকাশ ঘটতে থাকে দ্রুত । দেখা দিতে থাকে মাছ , মেরুদণ্ডী প্রাণী ; ভূমিতে জন্ম নিতে থাকে
গাছপালা ; জন্মে সরীসৃপ , ডাইনোসর , স্তন্যপায়ী
প্রাণী , পাখি , এবং ফুটে ফুল । তবে কোনো কারণে এক সময় লোপ পায় ডাইনোসররা ; দেখা দেয় প্রাইমেট বা উচ্চ
মেরুদণ্ডী প্রাণীরা , যারা বানর আর মানুষের পূর্বপুরুষ । আজ থেকে এক কোটি বছরের মতো
আগে উদ্ভূত হয় মানুষের পূর্ব -পূর্ব - পূর্ব - পূর্বপুরুষের , আর ধীরে ধীরে তাদের মস্তিষ্ক ও হয় বিকশিত ; আর কয়েক মিলিঅন বছর আগে
দেখা দেয়
আদিমানুষেরা । কিন্তু
ধর্মের বইগুলোতে মানুষ সৃষ্টির কাহিনী অত্যন্ত সরল ; তবে অতো সরলভাবে অতো অল্প সময়ে মানুষ সৃষ্টি হয় নি।প্রকৃতি এত অল্প সময়ে মানুষকে
সৃষ্টি করতে পরেনি ৷ প্রাণ থেকে প্রাণী সূষ্টি
করতে দীর্ঘ সময় লেগেছে প্রকৃতির । ধর্ম প্রবর্তকরা তাঁদের
আবিস্কৃত কাঠামো বিধাতার কাঠামো হিশেবে ঢুকিয়ে দিয়েছেন বিধাতার নামে উল্লেখিত ধর্মের
বইগুলোতে ৷ ৷ এখন বৈজ্ঞানিক
ভাবেই প্রমানিত হয়ে গেছে
যে , …সাত আসমান দশ আসমান ব’লে কিছুই নেই , আর ধর্মের বইগুলো বিধাতা লিখলে এমন ভূল করতেন না নিশ্চয় ৷
যারা অন্ধ তারা চোখে সবচেয়ে বেশি দেখতে পাচ্ছে এখন ।
এক বড়ো অশুভ সময় এসেছে
পৃথিবীতে, কারণ যারা অন্ধ তারা চোখে আজকাল সবচেয়ে বেশি দেখতে তো পাচ্ছেই এখন, এর পরে ও তারা অত্যন্ত বেশি বিশ্বাস করছে সব অবৈজ্ঞানিক ধ্যান ও ধারনাকে
যা বৈজ্ঞানিক ভাবে এবং যোক্তিক
ভাবে ও প্রতিষ্ঠিত নয় ৷ এবং পৃথিবী জুড়ে তাই ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে এই
বিশ্বাসের মহামারী । আর বিশ্ব এখন মেতে উঠেছে আবার মধ্যযুগীয় বিশ্বাসে
; শক্তিলোভী
ভ্রষ্ট রাজনীতিকেরা ও মৌলবাদীরা মানুষকে আক্রান্ত ক’রে
তুলেছে বিশ্বাসের রোগে । তবে বিশ্বাস শুধু অতিমানবিক
সত্তায়ই সীমাবদ্ধ নয় ; হাজার
হাজার বছরের শূন্য প্রথা বিশ্বাস ও ক’রে চলেছে তারা , যা খুবই ক্ষতিকর দেশ,
বিশ্ব ও
মানব সমাজের ৷ আজ বাঙলাদেশে সবাই বিশ্বাসী ; তবে প্রথা বিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদের মত
কিছু লোকের অবিশ্বাস আরো গভীরে
, তাঁরা তাদের অর্জিত জ্ঞানের
মাধ্যমে দেখছেন মানুষের
বিশ্বাসের অন্তঃসারশূন্যতা ৷ তারা তা দেখছেন
তাদের বৈজ্ঞানীক দৃষ্টিভঙ্গির
আলোকে , তাই কবির ভাষায় বললে বলতে হয় , বিশ্বাস তাদের কাছে ‘ আরণ্যিক নির্বোদের ভ্রান্ত দুঃস্বপন ’ মাত্র ৷
তাই
তাঁরা যেমন
তাদের ইন্দ্রিয়গুলোকে ভালবাসেন , তেমনি ভালবাসেন তাদের মগজকে ,অর্থাৎ
তাদের জ্ঞান এবং বৈজ্ঞানিক
দৃষ্টিভঙ্গিকে , তাই এ সব বিশ্বাস তাদের কাছে
কিংবদন্তির মতো এখন
। তাদের মতে মানুষ তৈরি করেছে ধর্মের রূপকথা , তৈরি করেছে স্রষ্টা , পাপ , পূর্ণ , স্বর্গ আর নরক । এ যেন তাৎপর্যহীন এক জীবনকে তাৎপর্যপূর্ণ করার স্থুলতম প্রয়াস ছড়া আর কিছু নয়
। ধর্ম একে অর্থাৎ এই সব অন্ধ বিশ্বাসকে আরো তৎপর্যপূর্ণ করতে চেয়েছে সবচেয়ে নিকৃষ্টরূপে । বহু মানুষ বিশ্বাস করে
বিধাতায় , পোষণ করে ধর্মীয় বিশ্বাস ; তবে বিধাতা বা ধর্মীয় বিশ্বাস , যা মানুষের আদিম কল্পনার ফল , যা কেবল জীবনকে ক’রে তোলে মিথ্যায় পূর্ণ । তাই অনেকের
ধারণা , নির্বোধ/
অন্ধ/
লোভী/ কপট/ এবং ভীতুরা তাতে শান্তি পেতে পারে ,
অন্যরা অর্থাৎ যুক্তিবাদীরা
নয় । যা তাদের কাছে হাস্যকর ও নিরর্থক ও বটে । তাঁরা মনে করেন , মানুষের মুক্তির কোনো পূর্বনির্ধারিত পথ নেই মানুষের জন্য ; কোনো গ্রন্থ পথ দেখাতে
পারে না তাকে , কোনো মহাপুরুষ বা প্রবর্তক তার জন্য মুক্তির কোনো পথ প্রস্তুত করতে পারেন নি , করতে পারেন না ; ওই মহাপুরুষেরা তৈরি করেছেন নিজেদের পথ শুধু , অন্যদের জন্য কোনো পথ প্রস্তুত করতে পারেন নাই তাঁরা । তাই মানুষকেই
খুঁজে বের করতে হবে তাদের নিজেদের মুক্তির পথ , তৈরি করতে হবে
নিজেদের রাস্তা , মানুষের জীবনটা
শুধু দুই অন্ধকারের মাঝখানের হঠাৎ আলোর ঝলকানিটুকু মাত্র । পাঁচ হাজার বছর ধ’রে মানুষ জন্ম নিয়েই
দেখেছে তার জন্যে প্রাণপণে প্রস্তুত হয়ে আছে পূর্বনির্ধারিত বিশ্বাসের এক জগত । তাই পৃথিবীর
দীর্ঘস্থায়ী মহামারির নাম বিশ্বাস । তিরিশের আধুনিক কবিরা অবিশ্বাসী ছিলেন অনেকেই
, তবে তাদের অন্যতম ছিলেন যিনি তিনি ছিলেন সুধীন্দ্রনাথ
দত্ত ; এবং ঈশ্বর নামের অলীক ব্যাপারটি ছিলো তাঁর কাছে অতি স্পষ্ট । তিনি বাতিল করেছেন প্যালেস্টাইনি ও আর্যদের
ঈশ্বরকে এবং তাদের ধর্ম বিশ্বাসকে , তিনি বলেছেন ,
‘
শূদ্রের অলক্ষ্যভেদে নিহত আমার ভগবান’ তিনি অবিশ্বাসে আরো বলেছেন যে ; “ ভগবান , ভগবান , রিক্ত নাম তুমি কি কেবলই , তুমি কি সত্যই আরণ্যিক
নির্বোধের ভ্রান্ত দুঃস্বপন ? তপন্ত তপন
সাহারা-গোবর বক্ষে
জ্বলে না কি তোমার আজ্ঞায় , যাযাবর আর্যের বিধাতা ” ইত্যাদি ৷
-বৌদ্ধ ধর্ম ; বৌদ্ধরা
বলেন যে , এই পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা কেহ নাই ; জগত অনন্তকাল বিদ্যমান আছে এবং থাকিবে । চিরকালই বিশ্বের আকৃতি একরূপ আছে এবং থাকিবে। কর্মানুসারে প্রাণীসমুহ সংসারে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে মাত্র ।
খ্রী.পূ. ৫৫৬ সালে ভারতের কপিলাবস্তু নামক নগরে বুদ্ধদেব জন্মগ্রহন করেন । তাঁর প্রবর্তিত ধর্মের নাম বৌদ্ধধর্ম । বৌদ্ধরা পরকাল বা স্বর্গ-নরকের অস্তিত্ব ও স্বীকার করেন না। বৌদ্ধ ধর্ম মতে , জীব কামনাবশে পুনঃ পুনঃ জন্মগ্রহন করে এবং জন্মে জন্মে রোগ , শোক, ও নানাবিধ দুঃখ ভোগ করে থাকে। সংসারের নানান দুঃখভোগের চিরসমাপ্তির উপায় হইল জন্ম না লওয়া । যতদিন মানুষের মনে কোনোরূপ কামনা-বাসনার লেশমাত্র থাকিবে , ততদিন পর্যন্ত মানুষ পুনঃ পুনঃ জন্মলাভ ও সুখ-দুঃখ ভোগ করিতে থাকবে । বিত্ত-সম্পদ ও আত্নীয়-পরিজনাদি যাবতীয় বিষয়ের তাবৎ কামনা হতে মুক্ত হতে পারলে তার আর পনর্জন্ম হয় না । এমতাবস্থাকে বলা হয় মোক্ষ এবং জন্মহিতাবস্থাকে বলা হয় নির্বাণ । ইহাই বুদ্ধ ধর্মের মূল কথা বা মূল সুত্র । অর্থাৎ বুদ্ধ ধর্মের মূল কথা অন্য প্রচলিত প্রায় সব ধর্ম বিশ্বাস থেকে আলাদা দেখা যাচ্ছে ৷
খ্রী.পূ. ৫৫৬ সালে ভারতের কপিলাবস্তু নামক নগরে বুদ্ধদেব জন্মগ্রহন করেন । তাঁর প্রবর্তিত ধর্মের নাম বৌদ্ধধর্ম । বৌদ্ধরা পরকাল বা স্বর্গ-নরকের অস্তিত্ব ও স্বীকার করেন না। বৌদ্ধ ধর্ম মতে , জীব কামনাবশে পুনঃ পুনঃ জন্মগ্রহন করে এবং জন্মে জন্মে রোগ , শোক, ও নানাবিধ দুঃখ ভোগ করে থাকে। সংসারের নানান দুঃখভোগের চিরসমাপ্তির উপায় হইল জন্ম না লওয়া । যতদিন মানুষের মনে কোনোরূপ কামনা-বাসনার লেশমাত্র থাকিবে , ততদিন পর্যন্ত মানুষ পুনঃ পুনঃ জন্মলাভ ও সুখ-দুঃখ ভোগ করিতে থাকবে । বিত্ত-সম্পদ ও আত্নীয়-পরিজনাদি যাবতীয় বিষয়ের তাবৎ কামনা হতে মুক্ত হতে পারলে তার আর পনর্জন্ম হয় না । এমতাবস্থাকে বলা হয় মোক্ষ এবং জন্মহিতাবস্থাকে বলা হয় নির্বাণ । ইহাই বুদ্ধ ধর্মের মূল কথা বা মূল সুত্র । অর্থাৎ বুদ্ধ ধর্মের মূল কথা অন্য প্রচলিত প্রায় সব ধর্ম বিশ্বাস থেকে আলাদা দেখা যাচ্ছে ৷
…. অন্যান্য ধর্ম প্রবর্তকের থেকে তার চিন্তা চেতনার তফাৎ ছিল, বলেই হয়তো নিম্নের কথাগুলো বলতে পেরেছিলেন ,গৌতম বৌদ্ধ ?
।
Do not believe in anything simply because
you have heard it. Do not believe in anything simply because it is spoken and
rumored by many. Do not believe in anything simply because it is found written
in your religious books. Do not believe in anything merely on the authority of
your teachers and elders. Do not believe in traditions because they have been
handed down for many generations. But after observation and analysis, when you
find that anything agrees with reason and is conducive to the good and benefit
of one and all, then accept it and live up to it.
- Siddhartha Goutama Buddha.
- Siddhartha Goutama Buddha.
মানুষ কোন মহাপরিকল্পনার অংশ নয় । কেউ মানুষকে
মহাপরিকল্পনা অনুসারে সৃষ্টি করে নি । একরাশ প্রাকৃতির ক্রিয়ার ফলে মানুষের জন্ম হয়েছে
,আবার অন্য একরাশ প্রাকৃতিক ক্রিয়াকলাপের ফলে আমাদের একের জনের মৃত্যু হবে প্রাকৃতির
স্বাভাবিক নিয়মে অনুসারেই।
।
ধর্মীয় বিশ্বাস বা বিধাতায় বিশ্বাস আদিম
মানুষের অবিকাশিত জ্ঞান ও অবিকাশিত কল্পনার ফল । ঐ বিশ্বাস মানুষকে কোন সাহায্য করতে
পারে না , তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলতে পারেনা জীবনকে ; বরং জীবনকে ক’রে তোলে মিথ্যায় পূর্ণ
। নির্বোধ/ অন্ধ / লোভী / কপট / ভীতরাই শুধু তাতে শান্তি পেতে পারে ; ভাবতে পারে ,নিজদের
জীবন অর্থপূর্ণ বলে । পরলোকে বাস্তবে কোন দুর্দান্ত কামনাঘন বিলাসপূর্ণ জীবন তাদের জন্যে অপেক্ষা করে নেই । মানুষ তার সমস্যার
সমাধান চাইতে গিয়ে জাগিয়ে তোলে নিরর্থকতার । তাই এই নিরর্থকতাকে এড়াতে পারে না মানুষ,
যতোদিন সে জীবিত থাকে । ফলে মানুষ এই নিরর্থকতাকে অতিক্রম করার কোন উপায় দেখে না ,
কেননা বেঁচে থাকাই হচ্ছে নিরর্থকতা; আর দার্শনিক কামু একথা তার পর্যবেক্ষণ থেকে বলেছেন
। তার মতে মানুষের অস্তিত্ব হচ্ছে ‘চূড়ান্ত
আশাহীনতা’ ।
জন্ম নিয়েই মানুষ দেখেছে তার জন্যে প্রস্তুত হয়ে
আছে পৃর্ব নির্ধারিত বিভিন্ন বিশ্বাসের জগত । বিশ্বাসী হওয়া প্রশংসিত ব্যাপার ; প্রথাগতভাবে
ভালো মানুষ , সৎ মানুষ বলতেই বোঝায় বিশ্বাসী মানুষ । তাই বিশ্বাসী মানুষরা ভালো , সৎ , এমনকি মহৎ ।
পৃথিবীর দীর্ঘস্থায়ী মহামারীর নাম বিশ্বাস
,আর এই বিশ্বাস কয়েক হাজার বছর ধ’রে দেখা দিয়েছে মহামারীরূপে । মানুষের বিশ্বাষের শেষ
নেই ,কোটি কোটি বিশ্বাস পোষণ করে মানুষ , তবে সেগুলো চিরকাল ধ’রে চলছে ,তা কিন্তু ঠিক
নয় , এখনকার বিশ্বাসগুলোর বয়স খুব বেশি নয় , এগুলোর আগে লাখ লাখ বিশ্বাসের উদ্ভব ও বিনাশ ঘটেছে ;
দেবতা বা ঈশ্বর বা বিধাতা
বা কোনো বিশেষ স্রষ্টায়
বিশ্বাস মাত্র চার/পাঁচ হাজার বছরের , কিন্তু
মানুষের বয়স তাদের বিভিন্ন ধরনের দেবতার বা বিধাতাদের বয়সের থেকে অনেক বেশি । বিশ্বাসের
সাথে অন্ধকারের সম্পর্ক গভীর ,বিশ্বাস অন্ধকারের আত্মজ ; আলোর সাথে তার সম্পর্ক কম
বা একবারেই নেই । বিশ্ব জগত মানুষের কাছে অন্ধকার
ঘর বা রহস্যময় রাতের মতো । বিশ্বাসের কোনো শেষ নেই । এবং বিশ্বাসগুলো পরস্পরবিরোধী
। আর এই বিশ্বাসের এবং এই মহাবিশ্বের রহস্যীকরণে সরচেয়ে বড়ো ভূমিকা নিয়েছে ধর্ম ; এবং
ধর্ম সব কিছুকে গ্রাস ক’রে মানবপ্রতিভার সব কিছুকে বাধ্য ও উৎসাহিত করেছে বিশ্বের রহস্যীকরণে
অংশ নিতে । বিশ্বাসের সম্পর্ক ইন্দ্রজালের
সাথে ,বিজ্ঞানের সাথে নয় ; এখনও মানুষ বিজ্ঞান দিয়ে আলোকিত নয় । পুরোনো মহাপুরুষেরা
তুচ্ছ যাদুর বেশি কিছু করতে পারেন নি ,প্রকূত বিস্ময়কর কাজ করেছে আধুনিক মানুষ, বিজ্ঞানের জ্ঞান সম্পন্ন
আধুনিক মানুষ । এর কারণ-পবিত্র ব’লে বিখ্যাত গ্রন্থগুলোতে আলো বা জ্ঞান নেই
, আলো আর জ্ঞান আছে সে-বইগুলোতে , বিশ্বাসীদের চোখে যেগুলো আজও অপবিত্র ।
পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ আজো বাসকরে মহাজাগতিক অন্ধকারে । আকাশের দিকে তাকিয়ে
তারা ভাবে স্বর্গ আর নরকের কথা ; তখন তারা কেঁপে ওঠে নরকের ভয়ে , আর সুখীহয় স্বর্গের
আরাম ও বিলাসের কথা ভেবে । আর এর সবটাই ঘটেছে পৃথিবী ও মহাজগত সম্পর্কে ভূল ধারণার
ফলে ।
১৬৩৩ সালে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে-এই
সত্য কথাটি বলার অপরাধে খ্যাতনামা বিজ্ঞানী গ্যালিলিওকে ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত
করা হয়েছিল , বাইবেল তথা ধর্মবিরোধী বক্তব্য
প্রকাশ করার অপরাধে । এই ভাবে আরো অনেক জ্ঞানী
ও বিজ্ঞানিকে এবং দার্শনিককে তাদের সত্য বক্তব্য প্রকাশ করায় , ধর্মদ্রোহিতার
অভিযোগে তাদেরকেও অভিযুক্ত করে মূত্যুদণ্ড
সহ অন্যান্য শাস্তি প্রদান করা হয়েছে । তবু জ্ঞান বিজ্ঞানের আবিষ্কার থেমে থাকেনি ।
ফলে আমরা এই আধুনিক পৃথিবীর সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারছি আজ ।
মহাজগতের সৃষ্টি নিয়ে ধর্মের ব্যাখ্যাসমূহ অস্বীকার
করে মহাবিজ্ঞানীরা তাদের সাম্প্রতিক গবেষণা
থেকে বলেছেন যে , পূর্বের ধারণা বিগব্যাঙ দিয়ে মহাবিশ্বের শুরু নয়, বরং মহাবিশ্বের
শুরু হয়েছে ইনফ্লেশন দিয়ে । অর্থাৎ ইনফ্লেশনের
ফলশ্রুতিতেই কিন্তু বিগব্যাঙ হয়েছে ,তার পর সৃষ্টি হয়েছে আমাদের এই মহাবিশ্ব ।
Andrei Linde তার Self Reproducing
Inflationery Universe গ্রন্থে (1998 ) লিখেছেন-‘ Inflation is not a part of big-
bang theory as we thought 15 years ago . On the contrary , the big-bang is the
part of inflationary model’ আর্থাৎ এতদিন
আমরা ‘ অন্ধের হস্তি দর্শন’ গল্পের মতো মহাজগতকে কল্পনা করেছি বিভিন্ন ভাবে , ধর্ম
গুরুদের বর্নণা অনুসারে।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য অনুসারে
মহাজগত বা মহাবিশ্ব অনন্ত । আর এই অনন্ত মহাজগতের বিশাল এলাকায় আমাদের পৃথিবী একটি
ছোট্র চর বা দ্বীপ মাত্র । যার নাম রেখেছি
আমরা পৃথিবী । এটা তারা নয় , এটি একটি গ্রহ , তবে এটি একটি তারাকে ঘিরে ঘুরছে
, যে তারাটির নাম সূর্য । এই সূর্যকে ঘিরে
যে এলাকাটুকু , সেখানে ঘুরছে কয়েকটি গ্রহ
, আর তার নাম সৌরজগত ।
গত কয়েক শতকের জ্যোর্তিবিজ্ঞানিক আবিষ্কারের
ফলে পূর্বেকার রহস্যময় মহাজগতের রূপ আমূল বদলে গেছে মানুষের চোখে । আজ বিজ্ঞানীরা মহাজগতের
উৎপত্তি ও প্রকৃতি সম্পর্কে গ্রহনযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে সমর্থ্য হয়েছেন । পূর্বে বিভিন্ন দেশের ধর্মের বইগুলোতে মহাজগতের
উৎপত্তির যে গল্প পাওয়া যায় , তা বিশ্ব সৃষ্টি সম্বন্ধে আদিম মানুষের অবিকশিত চিন্তা ও কল্পনার রূপ কথা মাত্র । তাতে
অবাক হওয়ার কিছু নেই । কেননা তাদের কল্পনার ও সীমা ছিল সীমিত, তারা তখনও তাদের কল্পনায়
বৈজ্ঞানিক কল্পনার রীতির বিকাশ ঘটতে পারেনি। তাই
তারা আকাশে বিচিত্র রকমের দেবদেবীর উপস্থিতি কল্পনা করে সেগুলোকেই সত্য বলে
প্রচার করেছেন এবং তা চাপিয়ে দিয়ে গেছেন পৃথিবীর ভবিষ্যৎ মানুষের উপর ।
মহাজগত এতো বিশাল যে আমাদের প্রতিদিনের মানদণ্ডে
, মাইল বা কিলোমিটারে তার আয়তন পরিমাপ করা সম্ভব নয় । মহাজগতকে পরিমাপ করা হয় আলোর
গতির মানদণ্ডে । আলো এক সেকেন্ডে যায় ১৮৬০০০
মাইল বা প্রায় ৩ লাখ কিলোমিটার । সে হিসাবে
সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে লাগে আট মিনিট সময় ; অর্থাৎ সূর্য থেকে পৃথিবীর
দুরত্ব আট আলোক মিনিট । এক বছরে আলো যায় ছয়
ট্রিলিঅন মাইল । ট্রিলিঅন হচ্ছে একলক্ষ কোটি ; তাই আলো বছরে যায় ছয় লক্ষ কোটি মাইল
। অর্থাৎ আলো এক বছরে যে দুরত্ব ভ্রমণ করে , সে একককে বলা হয় আলোকবর্য । আলোকবর্ষের
সাহায্যে মাপা হয় দূরত্ব, সময় নয় ।
মহাজগতে পৃথিবীর মত অনেক স্থান রয়েছে । সে
স্থানগুলো আবার বায়ু শূন্য, মহাজগত এক বিশাল শীতল আর অনন্ত মহাশূন্যতা, যার এক নক্ষত্রপুঞ্জ
থেকে আরেক নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যবর্তী স্থানে
বিরাজ করেছে চিরঅমারাত্রী, ওই শূন্যস্থানে
অন্ধকার শূন্যতা ছাড়া আর কিছু নেই । নক্ষত্রপুঞ্জ গঠিত - গ্যাস , ধুলো , আর নক্ষত্র
বা তারায় । প্রতিটি নক্ষত্রপুঞ্জে রয়েছে কোটি কোটি তারকা । সূর্য একটি তারা বা নক্ষত্র
। নক্ষত্রপুঞ্জের কোটি কোটি তারার প্রত্যেকটির থাকতে পারে গ্রহ ; আর ওই গ্রহের কাছে প্রতিটি তারাই সূর্য । আবার ওই সূর্যকে ঘিরে ঘুরছে কয়েকটি গ্রহ , গড়ে উঠেছে
সৌরলোক ; প্রতিটি নক্ষত্র বা সূর্যকে ঘিরেই গড়ে উঠতে পারে এমন আরো সৌরলোক ।
মহাজগতে নক্ষত্রপুঞ্জের সংখ্যা কয়েকশো বিলিঅন
, আর প্রত্যেক নক্ষত্রপুক্ষে আছে গড়ে ১০০ বিলিঅন নক্ষত্র । প্রত্যেক নক্ষত্রপুঞ্জে
যতোগুলো তারা আছে ,অন্তত ততোগুলো গ্রহ থাকার কথা । মহাজগতে থাকার কথা দশ বিলিঅন ট্রিলিঅন গ্রহ । এমন অসংখ্য সৌরলোকের একটি সৌরলোকের
একটি গ্রহেই শুধু রয়েছে মানষ । অন্য গ্রহে ও থাকতে পারে কোন বুদ্ধিমান প্রাণী যার আবিষ্কার
এখন ও মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনি । তাই পৃথিবী একটি মহাজাগতিক চর বা দ্বীপ । যেখানে
উৎপত্তি হয়েছে এক বুদ্ধিমান প্রাণীর , আর এ প্রাণীর নাম মানুষ । এটা কোনো রহস্য নয়
, এখানে ঘটেছে এমন কিছু মহাজগতিক ঘঠনা ,যার ফলে পৃথিবীতে ই উদ্ভূত হ’তে পেরেছে পশু
, সরীসৃপ আর উদ্ভিত ইত্যাদির ।
নক্ষত্রপুঞ্জগুলো একই রকমের নয় ,আকৃতি অনুসারে
এগুলো তিন রকম ; ১ .কুণ্ডলপাকানো নক্ষত্রপুঞ্জ , ২ . উপবৃত্তকার নক্ষত্রপুঞ্জ , এবং ৩
. এলোমেলো নক্ষত্রপুঞ্জ । আমরা কুণ্ডলপাকানো
নক্ষত্রপুঞ্জের অন্তর্ভূক্ত , যার কুণ্ডল ধীরেধীরে নড়ছে । আর তার নাম মিল্কি
ওয়ে গ্যালাক্সি । আমাদের নিকটবর্তী
নক্ষত্রপুঞ্জগুলো আমাদের নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে আট বিলিঅন আলোকবর্ষ দূরে আছে । আর প্রায়
বিশটি নক্ষত্রপুঞ্জের সমষ্টি এগুলো , আর ছড়িয়ে আছে মিলিঅন আলোকবর্ষব্যাপী । এদের একটির
নাম এম৩১ ।আমাদের নক্ষত্রপুঞ্জে কোটি কোটি তারা আছে , এর মধ্যে কোনো কোনোটি ছোটো, আবার কোনো কোনোটি কয়েক হাজার সূর্যের
সমান । খুব ছোটোগুসো আবার সীসার থেকেও শত ট্রিলিঅন গুণ ঘনীভূত । আমাদের সূর্যের মত
কোনো কোনো নক্ষত্র একলা ,তবে অধিকাংশ নক্ষত্রই যুগলবন্দী-একটি নক্ষত্র ঘুরছে আরেকটিকে
ঘিরে । এর মধ্যে সুপারনোভা নামক তারাগুলো অত্যন্ত উজ্জ্বল ; ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর
নামেরগুলো অন্ধকার । কোনোটি জ্বলে একই উজ্জ্বলতা নিয়ে , কোনোটা ঝিকিমিকি করে ; কোনো
কোনোটি ঘোরে ধীরশান্তভাবে , কোনোটি ঘোরে পাগলের মতো । তারাদের রঙ অনুসারে শ্রেণী ভাগ
করা হয় । যেমন নীল রঙয়ের তারা তরুণ ও গরম ; হলদে তারা মাঝবয়সী ; লাল তারা বুড়ো ও মুমূর্ষু
; আর ছোটো শাদা আর কালো তারাগুলো শিগগিরই মরবে । আমাদের নক্ষত্রপুঞ্জে ঘোরাঘুরি করছে
নানা ধরনের ৪০০ বিলিঅন তারা । তার মধ্যে আমাদের ভালো ক’রে চেনা তারাটির নাম রেখেছি আমরা সূর্য ।
আমাদের
সূর্যের সবচেয়ে দুর কক্ষপথে , সূর্যকে ঘিরে ঘুরছে বরফ ও শিলায় গঠিত বিশাল বিশাল তুষারগোলক । যা ধূমকেতুর অন্তর্ভাগ হিসাবে পরিচিত
। চলারপথে এগুলোর কোনো কোনোটি কোনো কারণে সৌরলোকে
ঢুকে পড়লে সূর্যের তাপে বরফ উবে গিয়ে দেখা
দেয় ধুমকেতু । তুষারগোলক থেকে একটু ভেতরে আছে গ্রহগুলো । গ্রহগুলো সূর্যকে ঘিরে ঘুরছে
অনেকটা বৃত্তাকার পথে । সূর্য থেকে সবচেয়ে দুরে
প্লুটো ,তার থেকে একটু ভেতরে, সূর্যের আরেকটুক কাছে আছে নেপটুন ,ইউরেনাস, স্যাটার্ন
বা শনি ,এবং জুপিটার বা বৃহস্পতি । এগুলো গ্যাসের বিশ্ব , আর এগুলোকে ঘিরে ঘুরছে এদের
তুষারিত চাঁদ বা উপগ্রহগুলো । সূর্যের আরো কাছাকাছি আছে লালগ্রহ মঙ্গল ,যাতে সারাক্ষণ
চলছে অগ্ন্যুৎপাত । এর থেকে সূর্যের আরেকটুকু কাছে আমাদের নীল-শাদা পৃথিবী । বিশাল
অনন্ত মহাবিশ্বে শুধু এখানেই বিকাশ ঘটেছে প্রাণের । পৃথিবীর আগে, সূর্যের কাছাকাছি
,আছে ভেনাস বা শুক্র ,আর মারকিউরি বা বুধ ।
সূর্য একটি নক্ষত্র বা তারা ; এটি পৃথিবীর
সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র । সূর্য হাইড্রোজেন ও হেলিয়াম গ্যাসের এক বিশাল গোলক , এর ভেতরটি
প্রচণ্ডভাবে জ্বলছে ; এর ভেতরের তাপ চার কোটি ডিগ্রি , আর বাইরের তাপ ছ-হাজার ডিগ্রি । মহাজাগতিক গাস ও ধুলোর মহামেঘের বিপর্যয়ের
ফলেই জন্ম নেয় নক্ষত্র ও গ্রহ । মেঘের ভেতরের গ্যাসের অনুরাশির সংঘর্যের ফলে তাপ বাড়ে
,হাইড্রোজেন রূপান্তরিত হয়ে হেলিয়ামে পরিনত হতে থাকে ,এবং কোটি কোটি বছরে একেকটি তারার
জন্ম হয় । দলে দলে তারা জন্ম নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে মহাজগতের দিকে দিকে । একই মেঘ থেকে জন্ম
হয়েছিল সূর্য ও আরো কয়েকটি নক্ষত্রের , মহাজগতের অন্য কোথাও এখন আছে সূর্যের সহোদর
নক্ষত্রগুলো । সূর্যের ভেতরে সারাক্ষণ চলছে বিস্ফোরণ , তার ফলে হাইড্রোজেন রূপান্তরিত
হচ্ছে হেলিয়ামে ; এজন্যেই সূর্য এতো উজ্জ্বল ।
তবে হাইড্রোজেনের এই বিস্ফোরণ চিরকাল
চলবে না , এক সময় তা ফুরিয়ে আসবেই । সূর্য ও অন্যান্য তারা কত কাল বাঁচবে, তা নির্ভর
করে সেগুলোর উদ্ভবের সময়ের ভর বা বস্তুপরিমাপের ওপর । আজ থেকে পাঁচ বা ছয় বিলিঅন বছরের
মধ্যে সূর্যের ভেতরের সব হাইড্রোজেন রূপান্তরিত হয়ে যাবে হেলিয়ামে , থাকবেনা কোনো হাইড্রোজেন ; তখন সূর্যের
মাধ্যাকর্ষণে সূর্যের ভেতর ভাগের হেলিয়ামপূর্ণ এলাকাটি আরো ঘনীভূত হবে , তখন সূর্যের
ভেতরের তাপ বেড়ে যাবে বহুগুণে ,সূর্যে দেখা দেবে তীব্র বিকিরণ । এর ফলে সূর্য আরো কিছুকাল
, কয়েক লক্ষ বছর, ধ’রে জ্বলবে ।
তখন সূর্যের এক বড়ো পরিবর্তন ঘটবে । তার বাইরের দিকটা প্রসারিত হয়ে শীতল হয়ে আসতে থাকবে
। সূর্য তখন এক বিশাল লাল দানব নক্ষত্র হয়ে উঠবে । তার বাইরের এলাকাটি ভেতরের এলাকা
থেকে এতো দূরবর্তী হবে যে বাইরের দিকে মাধ্যাকর্ষণ অত্যন্ত ক’মে যাবে । এর ফলে বাইরের
অংশটি বিভিন্ন দিকে প্লাবনের মতো বয়ে চলবে
। তখন সূর্যের এই প্লাবনের ভেতরে হারিয়ে যাবে
বুধ ও শুক্র গ্রহ ; হয়তো পৃথিবীও। তখন সৌরজগতের শুরুর এলাকাটি ঢুকে যাবে সূর্যের ভেতর
। অর্থাৎ আজ থেকে কয়েক বিলিঅন বছর পর পৃথিবীর শেষ দিনটির দেখা মিলবে এবং সেদিনই হবে
পৃথিবীর শেষ বিশুদ্ধ দিন হয়তোবা ।
সেদিনের পর সৃর্য লাল হবে ধীরেধীরে , ফেঁপে
কাছাকাছি এসে যাবে পৃথিবীর । মেরু অজ্ঞলের বরফ গলে পৃথিবী জুড়ে বয়ে যাবে প্রবল বন্যা
। প্রচণ্ড তাপে ওই জলরাশি পরিনত হবে বাষ্পে ,পৃথিবী ঘিরে দেখা দেবেঘন মেঘমণ্ডল ,যাতে
বাধা পাবে সূর্যের রশ্মি । একটু বিলম্বিত হবে পৃথিবীর ধ্বংসের । তবে তাপে সব জল বাষ্পে
পরিণত হবে এক সময় , পৃথিবীর জলবায়ু নিংশেষিত হয়ে মিশে যাবে মহাশূন্যে ,মহাপ্রলয় শুরু
হবে । সূর্য ও পৃথিবী ধ্বংস হবে । তবে তখনো সূর্যের ভেতরে ও বাইরে ঘ’টে চলবে নানা বদল
;থেমে যাবে তার ভেতরের পারমাণবক বিক্রিয়া,
এবং বাড়বে সূর্যের আয়তন । সূর্য তারপর কয়েক হাজার বছর বেঁচে থাকবে মুমূর্ষ অবস্থায়
; এরপর সূর্য হয়ে উঠবে একটি ছোটো তারা ,চরমরূপে
ঘনীভূত হয়ে হবে প্রথমে হোয়াইট ডোআর্ফ বা শাদা বামন । এরপর শীতল হতে হতে শেষে এক মৃত
কালো বামনে পরিণত হবে ।
।
।
বেদ ; হিন্দুদের মূল ধর্মগ্রন্থ বেদ । এই দেশের আর্ষ হিন্দুদের একান্ত বিশ্বাস যে, পরমপিতা ভগবান অগ্নী, বায়ু, আদিত্য ও অঙ্গিরা--এই চারিজন ঋষিকে সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধচিত্ত দেখিয়া ইঁহাদের হৃদয়ে অধিষ্ঠিত হইয়া , তিনি এই চারিজনের মুখ দিয়া ঋক, সাম, যজু ও অর্থব এই চারি বেদ প্রকাশ করিয়াছেন । আবার কেহ কেহ বলেন যে , বেদ সেই অনাদি অনন্ত ঈশ্বরের নিঃশ্বাসে সৃষ্ট , কোনো মানুষ ইহার রচয়িতা নহেন । বেদ ঐশ্বরিক ।
হিন্দু ধর্মের যাবতীয় একান্ত করণীয় বিষয়ই বেদে বর্ণিত আছে।.. তবে ঐতিহাসিকদের
মতে, বেদ ও ঐশ্বরিক পুঁথি নহে । কেননা ইহা কেবল প্রাচীন মুনি-ঋষিদের ও আর্যদের সভ্যতার ইতিহাস মাত্র । আবার বেদের যাবতীয় কাজ কারবার ভারতবর্ষেই সীমাবদ্ধ । ঋগ্বেদে ২১৪ জন ঋষির নাম পাওয়া যায় , ১২ জন স্ত্রীলোক সহ , এবং বোধ হয় যে উহারাই বেদের কোনোও না কোনোও অংশের রচয়িতা । এবং উহার লিখিত শ্লোকগুলো তৎকালীন আর্য ঋষিদের ধ্যান--ধারণা এবং অভিজ্ঞতা ও কল্পনার সৃষ্টি ।
অধুনাতন পাশ্চাত্য পন্ডিতগণ বেদ কে পৃথিবীর আদিগ্রন্থ বলে অভিহিত করে থাকেন ।
আমদুয়াত, ফটক ও মৃতের গ্রন্থ ;
প্রাচীন মিশরীয়দের ধর্মপুস্তক ছিল আমদুয়াত গ্রন্থ, ফটকের গ্রন্থ ও মৃতের গ্রন্থ নামক তিনটি গ্রন্থ । প্রাচীন মিশরীয়রা এগুলিকে ঐশ্বরিক গ্রন্থ বলেও মনে করত , যদিও এগুলার কোনো প্রত্যক্ষ রচয়িতা নাই বলে জানা যায় । গ্রন্থত্রয়ের আলোচ্য বিষয়াদি কে তারা পারলৌকিক জীবন বিষয়ক আলোচনা বলে মনে করত , ইহা মানবীয় জ্ঞানে লিখা সম্ভব নয় বলে তাদের ধারণা ছিলো । তাদের মতে ইহা ছিলো অতিমানবের রচনা । প্রাকপিরামিড যুগের মিশরবাসীগন তাহাদের সমাধিমন্দিরগুলির গায়ে অথবা প্যাপিরাসে লিখে বা অঙ্কিত করে রাখত মৃতের পরলোক বিষয়ক নানা রকম কল্পিত চিত্র । কালক্রমে ঐগুলির লেখক বা রচিয়তা কে বা কারা , তার কোনো হাদিস পাওয়া যেত না বলে এগুলাকে তখন দৈব বা ঐশ্বরিক বাণী মনে করা হত । ইহা খ্রী.পূ. ৩০০০বছর আগের রচনা বা তারও আগের রচনা হিসাবে ধরা হয়ে থাকে বর্তমানে ।
“ কেবল যে বিভিন্ন ধর্মে বিভিন্ন মত এমন নয়। একই ধর্মের ভিতরেও মতভেদের
অন্ত নেই । হিন্দু ধর্মের বেদ যাহা বলে, উপনিষদ সকল ক্ষেত্রে
তার সঙ্গে একমত নয় । বাইবেলের
পুরাতন নিয়ম ও নুতন নিয়মে অনেক পার্থ্যক্য । আবার প্রোটেষ্ট্যান্ট ও
ক্যাথলিকদের মধ্যে ও অনেক মতানৈক্য রয়েছে। পবিত্র কোরানপন্থীদের মধ্যে মতবৈষম্য কম নয় ? শিয়া
, সুন্নী,
মুতাজিলা, ওহাবী, কাদিয়ানী, খারিজী
ইত্যাদি সম্প্রদায়ের মত ও পথ এক নয় , অবার
একই সুন্নি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হানাফী, মাকেকী শাফীয়িও হানবিলীয়
ইত্যাদি চার মজহাবের
মতামতও এক নয় । আবর হানাফী মজহাবের পীরদেরও রয়েছে বিভিন্ন রেছালা । আবার সকল সম্প্রদায়ের
ধর্মযাজকেরা এই কথাই বলে থাকেন যে , তাঁদের আপন আপন ধর্মই একমাত্র
সত্যধর্ম, অন্য কোন ধর্মই সত্য নয় । তাই তৌরিত, জব্বুর, ইঞ্জিল, কোরআন, বেদ-পুরাণ, জেন্দ-আভেস্তা
ইত্যাদি ঐশ্বরিক পুঁথি কি না, জানি না ,কিন্তু এগুলোকেই সত্য গ্রন্থ
বলা হয়ে থাকে , এবং
যে, এগুলোকে মিথ্যা বলে, তাকে মিথ্যাবাদী ,অবিশ্বাসী, পাপী
ও নরকী বলা হয়ে থাকে ।
ধর্মের
মূল ভিত্তি বিশ্বাস , কিন্তু এর উৎপত্তির কারণ ধর্ম অনুসন্ধান করে না , করতে দেয় না । জ্ঞানের সহিত বিশ্বাসের
ঘনিষ্ঠতম সম্পর্ক আছে । জ্ঞান মাত্রেই বিশ্বাস । তবে যে কোন বিশ্বাস কিন্তু
জ্ঞান নয় । প্রত্যক্ষ ও অনুমান , এই দু-টির উপর বিশ্বাস
বা জ্ঞান প্রতিষ্ঠিত । যে বিশ্বাসের মুলে প্রত্যক্ষতা
বা অনুমান নেই , তা বৈজ্ঞানীক
মতে খাঁটি বিশ্বাস নয়
, তাকে অন্ধ বিশ্বাস হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে । বিজ্ঞান প্রত্যক্ষ
ও অনুমানের উপর প্রতিষ্ঠিত একটি বাস্তব বিশ্বাস
। তাই বৈজ্ঞানিক তত্ত্বে সন্দেহ হয় না কারো কখনো । কিন্তু অধিকাংশ ধর্ম এবং ধর্মের অধিকাংশ তথ্য ও ধারণা অন্ধ বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত
।
রাষ্টের ন্যায়
ধর্মসমুহের আয়ত্তে তোপ-কামান-ডিনামাইট বা এটমবোম নেই, যার
দ্ধারা একে অন্যের ধ্বংস সাধন করতে পারে । ধর্মের হাতে আছে মাত্র দু-টু অস্ত্র--একটি আশীর্বাদ এবং অন্যটি অভিশাপ । এসব
অস্ত্র সমুহ ব্যক্তিবিশেষের
উপর ক্রিয়াশীল কিনা তা জানা যায় না, বা এর কোনো প্রমানও পাওয়া যায় না , কিন্তু কোন সম্প্রদায় বা জাতির উপর তা যে একেবারেই অকেজো তা কিন্তু
বারে বারে প্রমানিত
হয়েছে বৈজ্ঞানীক ভাবেই ” ।
আরজ আলী মতুব্বর
বাংলাদেশের এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব । গ্রামে মানবেতর জীবন যাপন করতেন ।এক ধর্মীয় ও সামাজিক আঘাতের
পর নিজের প্রচেষ্টায় লেখা পড়া শিখে , প্রায় সত্তর বছর জ্ঞান সাধনা
করেছেন । তিনি ধর্মের নামে, কুসংস্কার সত্য , না বিজ্ঞানলব্ধ জ্ঞান
সত্য ? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে , বিপুলভাবে ধর্ম , দর্শন , ও
বিজ্ঞানের গ্রন্থ অধ্যায়ন করেন । এবং আজ থেকে ৬০ বছর আগে , সত্যের
সন্ধান ও সৃষ্টি রহস্য নামে দু-টি বই লেখেন । বর্তমানে ঐ বই দু-টি বাঙলা
দেশে লৌকিক দর্শনের বই হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে । এখানে তার বই ও চিন্তাধারার কিছু ধারণার উদ্ধৃত করা হলো ।
তিনি
মনে করেন, ধর্ম যুগে যুগে মানুষকে সুশৃঙ্খল করে শুভ ও মঙ্গলের পথে নিয়ে যেতে চেয়েছে । পৃথিবীতে এমন কোন ধর্ম নেই যা
মানুষকে অমঙ্গলের পথে নিয়েছে। তাই ধর্মের একটা প্রগতিশীল
ভূমিকা ছিল সবসময়ই । কিন্তু কালে কালে এক শ্রেণীর মানুষ ধর্মকে
কুসংস্কারে আচ্ছন্ন করে ,পরবর্তীতে মানুষ্যত্ব বিবর্জিত করে
ফেলেছে এবং বর্তমান মনুষ্যত্বহীন ও ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তার যোতো অভিযোগ । তিনি বিশ্বাস করেন, একটা
দেশের সমাজ অশিক্ষা ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত হলে , সে দেশের রাজনীতি ও স্বচ্ছ হয়
এবং দেশ ও জাতির উন্নতি
ত্বরান্নিত হয় এবং শিক্ষার ও প্রসার ঘটে ।
তিনি
বলেছেন ; “
জগতে এমন অনেক বিষয় আছে, যে সব বিষয়ে দর্শন, বিজ্ঞান, ও
ধর্ম এক কথা বলে না । আবার ধর্মজগতেও মতানৈক্যের অন্ত নাই। যেখানে একই কালে দুইটি মত সত্য হতে পারে না, সেখানে
শতাধিক ধর্মে প্রচলিত শতাধিক মত সত্য হবে কিরূপে ? যদি বলা হয় যে সত্য হবে একটি ; তখন
প্রশ্ন হবে কোনটি এবং কেন ? অর্থাৎ
সত্যতা বিচারের মাপকাঠি (criterion of truth) কী ? সত্যতা
প্রমাণের উপায় (test of truth) কি এবং সত্যের রূপ(nature of truth) কী ?”
তিনি মনে করেন ; “ সাধারণত আমরা যাকে ‘ধর্ম’ বলি
তা হলো মানুষের কল্পিত ধর্ম । যুগে যুগে মহাজ্ঞানীগন এই
বিশ্বসংসারের স্রষ্টা ঈশ্বরের প্রতি মানুষের কর্তব্য কি তাহা নির্ধারণ করার প্রয়াস
পেয়েছেন । আর স্রষ্টার প্রতি মানুষের কি
কোন কর্তব্য নেই ? নিশ্চয় ই আছে ,-এ রূপ চিন্তা করে তাঁরা
ঈশ্বরের প্রতি মানুষের কর্তব্য কি তাহা নির্ধারণ করে দেন তাঁরা । অধিকন্তু মানুষের সমাজ ও কর্মজীবনের গতিপথও দেখিয়ে দেন সেই সব মহাজ্ঞানীগণ। এই রূপেই হয়
কল্পিত ধর্মের আবির্ভাব । কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন মনীষী বা ধর্মগুরুদের মতবাদ কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন থেকেই গেল , যার জন্যে পরবর্তীকালে অনেক প্রশ্নের সৃষ্টি
করেছে ।
মরমী কবি হাসন রাজা
বলেছেন, তার এক গানে; “ আমা--হতে আল্লাহ্, রসুল, আমা--হতে
নূর”…।
মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ
প্রার্থনা হচ্ছে ‘ অন্তর মম বিকশিত কর অন্তরতর হে’ । কিন্তু এই প্রার্থনাই আমাদের
জন্য হারাম,
নিষিদ্ধ । অন্তরকে বিকশিত না ক’রে চেপে মারার জন্য
আমরা বেশী প্রস্তুত । একটা সম্প্রদায়ের পক্ষে এ অত্যন্ত মারাত্নক ব্যবস্থা । মানব--মঙ্গল ও লোকস্থিতির
দ্যোতনায়ই শাস্ত্রের সৃষ্টি । অন্তরকে প্রাধান্য না দিয়ে শাস্ত্রকে
প্রাধান্য দেওয়ায় শুভবুদ্ধিটুকুও আমাদের অনুভবে আসে না। সঙ্গীত চর্চা ,ছবি
আকাঁ, ইত্যাদির জন্যে ও খোঁজো শাস্ত্রের আদেশ ,দেখ শরীয়ত কি বলে ; বিশ্ব কবি গ্যেটে বলেছেন --‘ All your ideals shall
not prevent me from being genuine and good and bad like nature- ‘ আকুতোভয় মানুষের এই চরম আদর্শ হওয়া উচিত নয় কী ?
শাস্ত্রের
প্রধান্য হৃদয়ের অন্ধকারে দুরীভূত করে না , ঘনীভূতই করে । এ ব্যাপারে কবি রবীন্দ্রনাথ
বলেছেন ; ‘
আমরা বাইরের শাস্ত্র থেকে যে ধর্ম পাই সে কখনো আমার ধর্ম
হয়ে উঠে না ।তার সঙ্গে কেবল মাত্র একটা অভ্যাসের যোগ জন্মে ; ধর্মকে নিজের মধ্যে
উদ্ভুত ক’রে তোলাই মানুষের চিরজীবনের সাধনা ? চরম বেদনায় তাকে জন্মদান করতে
হয় ।…..যা মুখে ব’লছি, যা লোকের মুখে শুনে প্রত্যহ আবৃত্তি ক’রছি তা যে আমার পক্ষে কতই
মিথ্যা তা আমরা বুঝতে পারি নে । ……অন্যান্য বিষয়ের মত ধর্ম ব্যাপারেও মৌলিক হ’তে না পারলে বিশেষ
মূল্য থাকে না । সত্যকার ধার্মিকের ধর্ম বাইরে থেকে পাওয়া নয় , সে
তার নিজের এক সৃষ্টি--তাঁর কল্পনা , তপস্যা মহৎ ও সুন্দর হ’বার
বাসনা, কাজ করেছে পেছনে । সে এক সজীব জিনিষ ।“
তাই বোধ হয় কবি
লিখেছেন --“
সীমার মাঝে, অসীম,তুমি
বাজাও আপন সুর ।
আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ
তাই এত মধুর ।….
“ সতেরো শতক বিজ্ঞানের সুবর্ণযুগ । এই সময়ই মহাবিজ্ঞানী নিউটনের আবির্ভাব হয়েছিল । নিউটনই হচ্ছেন এ- যুগ
পরিবর্তের নায়ক । তাঁর আবিষ্কারে, সারা দুনিয়া প্রাকৃতিক নিয়মে চলছে, এ
কথা স্বীকৃতি লাভ করল । ফলে, ধর্মের নামে যে সমস্ত অলৌকিক ঘটনা অস্বাভাবিকভাবে সংঘটিত হয় বলে সাধারন মানুষ
এতদিন বিশ্বাস করত, সে ধারণা পাল্টে গেল । কিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাস অটুটই
রইল । নিউটন
বোঝালেন, প্রকৃতির নিয়মগুলো ঈশ্বরের ইচ্ছারই প্রকাশ ।
কিন্তু
দু’-শ’ বছর যেতে না যেতেই বিজ্ঞানের ক্রমিক বিবর্তনের ফলে এই বিজ্ঞানসম্মত
বিশ্বাসবাদের ভিত্তি আস্তে আস্তে ভেঙ্গে শিথিল হ’ল । চার্লস ডারউইন ১৮৫৯ খৃষ্টাব্দে
যখন তার “অরিজিন অব স্পিসিজ” ও
১৮৭১ খৃস্টাব্দে “ ডিসেণ্ট অব ম্যান” - এ নানা গবেষণার পর
মানুষকে বানরেরই অধস্তন পুরুষ বলে ঘোষণা করলেন, তখন সে বৈজ্ঞানিক
বিশ্বাসের নুতন ইমারৎ ধ্বসে পড়ল ও ধর্ম ঘাজক সম্প্রদায়ে বিশেষ চাঞ্চল্য জাগল । ১৫৪৩ খৃষ্টাব্দে কোপারনিকাস , চার্চের
প্রচলিত মতের বিরুদ্ধে , লিখেছিলেন- সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে না --
পৃথিবীই সূর্যের চারদিকে ঘোরে, সেদিন এর অর্ধেক চাঞ্চল্যও জাগেনি । ইহুদী --পুরাণে আছে, ঈশ্বর
ছয় দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করে সপ্তম দিনে সৃষ্টির আনন্দমুখর ক্লান্তি বিশ্বরামের
দ্বারা দুর করেছিলেন । তাঁর ইচ্ছায় জগতের বিভিন্ন প্রাণীজাতি সৃষ্টি হয়েছিল--এক জাতির অন্য জাতিতে
রূপান্তর হয় নি । আর সে সৃষ্টির
মধ্যে সেরা । ডারউইনের বিবর্তনবাদ
ইহুদী পুরাণের সৃষ্টি--কাহিনীকে উড়িয়ে দিয়েছিল।
ইহুদী
পুরাণের সৃষ্টি--কাহিনী প্রচলিত খৃষ্টধর্মেরও ভিত্তি । ডারউইনের ক্রমবিকাশবাদ
প্রণীজগতে সীমাবদ্ধ ছিল--এক প্রাণীজাতির অন্য প্রাণীজাতিতে--রূপান্তর , তাঁর
মূল বক্তব্য । ডারউইনের প্রায় সমসাময়িক হার্বার্ট স্পেনসার সমগ্র বিশ্বের ওপর বিবর্তনবাদ
প্রযোগ করলেন । …….দেখাতে চেষ্টা করলেন, সারা বিশ্বই ক্রমবিকাশের পরিণতি। এই ভাবে উনিশ শতকে স্রষ্টা
সৃষ্টি--কাহিনী থেকে বাদ পড়ে গেলেন “ । আর এযুগেই হেগেলীয় আধ্যাত্নবাদের আওতা থেকে বেরিয়ে
এসে কার্লমার্কস্ গতিবাদী দ্ধন্দূমূলক জড়বাদ ও বিপ্লবের সাহায্যে শ্রেণীবিহীন সমাজ
প্রতিষ্ঠার কথা প্রচার করলেন।
“ ধর্মের বই গুলো সত্যের
ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়, এগুলো আদিম মানুষের কল্পনাও পরবর্তীদের সুপরিকল্পিত
মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত । পুরাণ ও ধর্মের এ- সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে বুঝা যায় , মানুষই
ভূল কল্পনার পর ভূল কল্পনা ক’রে সৃষ্টি করেছে এগুলো । ধর্মের বই গুলো ঋণী মানুষের
আদিম পুরাণগুলোর কাছে । মানুষ কতটা মিথ্যা বলতে ও বিশ্বাস করতে পারে, তার
অসামান্য উদাহরণ জেসাস বা খ্রিস্ট । জেসাস মানুষের শ্রেষ্ঠ কল্পচরিত্র ; গত
দু- শো বছরের বাইবেলবিজ্ঞানীরা , যাদের অনেকেই ধার্মিক পুরোহিত, প্রমাণ
করেছেন যে জেসাস নামে কেউ ছিলো না । জেসাসকে সৃষ্টি করা, তাকে ঘিরে পুরাণ, ও
একটি নুতন ধর্ম বানানোর সমস্ত কৃতিত্ব খ্রিস্টান সুসামাচারপ্রণেতাদের । ক্রাইস্ট এক কিংবদন্তি বা
পুরাণ ।
ডেভিড
স্ট্রাউস- লাইফ অফ জেসাস ক্রিটিক্যেলি এক্জ্রামিন্ড- (১৮৩৫) এ বলেছেন গসপেল বা
সুসামাচারগুলো জেসাসের ঐতিহাসিক জীবনী নয় ; তাঁরা চেয়েছিলেন ধর্মীয় পুরান
লিখে তাঁদের প্রবর্তিত ধর্মে মানুষদের দীক্ষিত করতে। স্ট্রাউসের
মূল কথা মিসাইআ বা ত্রাতার আগমন সম্পর্কে ইহুদিরা দীর্ঘকাল ধ’রে
যে প্রত্যাশা ক’রে আসছিলো, গল্পগুলো তারই গল্পায়ন । সুসামাচারগুলো উপন্যাসের থেকে
সত্য নয় , জেসাসও সত্য নন উপন্যাসের নায়কের থেকে” ।
পেইন- এইজ অফ রিজন বা যুক্তির
যুগ গ্রন্থে বলেছেন ; “ প্রত্যেক
জাতীয় গির্জা বা ধর্ম এটার ভান করে নিজকে প্রতিষ্ঠিত করেছে যে সেটি পেয়েছ ঈশ্বরের
বিশেষ বাণী,
যা জ্ঞাপন করা হয়েছে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির কাছে । ইহুদির আছে মোজেস ; খ্রিস্টানদের
আছে জেসাস ক্রাইস্ট, তার শিষ্য ও সন্তরা ; এবং তুর্কিদের আছে
তাদের মাহোমেট,
যেনো ঈশ্বরের পথ সব মানুষের জন্য খোলা নয় । ……. ইহুদিরা বলে ঈশ্বর মুসার কাছে
, মুখোমুখি দাঁড়িয়ে , দিয়েছেন তাদের ঈশ্বরের বাণী ; খ্রিস্টানরা
বলে তাদের ঈশ্বরের বাণী এসেছে ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণার মধ্য দিয়ে ; এবং
তুর্কিরা বলে তাদের ঈশ্বরের বাণী স্বর্গ থেকে নিয়ে এসেছে একজন দেবদুত । ওই গর্জাগুলো একটি অন্যটিকে
অবিশ্বাসী ব’
লে অভিযুক্ত করে , এবং আমি নিজে এগুলোর
প্রত্যেকটিকে অবিশ্বাস করি” ।
বিজ্ঞানি আইনষ্টাইন ১৯৫৪ সালে এক চিঠিতে লিখেছেলেন ;
“ ঈশ্বর (GOD) শব্দটি আমার কাছে মানুষের দুর্বলতার বহির্প্রকাশ ও দুর্বলতা থেকে উৎপাদিত বস্ত্তর চেয়ে বেশি কিছু মনে হয় না । বাইবেল গ্রন্থটি খুবই ন্যায়পরায়ন, তবে আদিম কিংবদন্তির বেশি কেছু নয় । তার চেয়ে বড় কথা , খুবই শিশুসুলভ এগোলো ।
বার্ট্র্যান্ড রাসেল, আমি কেনো খ্রষ্টান নই বইটি’তে বলেছেন; “ সব ধর্মই ক্ষতিকর” । কোনো অলৌকিক জগত থেকে কেউ ধর্ম পাঠায় নি, যদিও এটা বিশ্বাস করার নির্দেশ দিয়ে ভয় দেখানো হয় । কোনো অলৌকিক জগত নেই, মানুষ নিয়ে কোনো অলৌকিক সত্তার কোনো উদ্বেগ নেই । মহাবিশ্বে মানুষ খুব ক্ষুদ্র………. ধর্ম লৌকিক- মানুষ প্রণীত ।
তিনি আরো বলেছেন ; “ আমার মনে হয় ক্রাইস্টের নৈতিক চরিত্রে রয়েছে একটি বড়ো ত্রুটি ; আর তা হচ্ছে যে তিনি বিশ্বাস করতেন নরকে । আমি মনে করি না যে গভীরভাবে মানবিক কোনো ব্যক্তি চিরশাস্তিতে বিশ্বাস করতে পারেন । সুসমাচারে ক্রাইস্টকে যেভাবে চিত্রিত করা হয়েছে তাতে এটা স্পষ্ট যে তিনি চিরশাস্তিতে বিশ্বাস করতেন । তাঁর কথায় যারা বিশ্বাস করে না তাদের বিরুদ্ধে একটা প্রতিহিংসামূলক ক্রোধ ধর্ম প্রচারকদের মধ্যে সব সময়ই দেখা যায়”।
রাসেল আরো বলেছেন ; “ ধর্ম , আমার মনে হয়, প্রথমত ও প্রধানত দাঁড়িয়ে আছে ভয়ের ওপর ভিত্তি ক’রে । এর অংশবিশেষ অজানার সন্ত্রাস, এবং অংশ বিশেষ হচ্ছে এমন বোধ যে আমার রয়েছে এক জ্যেষ্ঠভ্রতা, যে বিপদে আপদে আমার পাশে এসে দাঁড়াবে । সম্পূর্ণ ব্যাপারটির ভিত্তি হচ্ছে ভয়-অলৌকিকের ভয়, পরাজয়ের ভয়, মৃত্যুর ভয় । ভয় নিষ্ঠুরতার জনক, এবং এতে বিস্ময়ের কছু নেই যে নিষ্ঠুরতা ও ধর্ম এগিয়েছে হাতে-হাত ধ’ রে”। প্রার্থনার বিষয়ে তিনি বলেছেন ; “ প্রার্থনা বা বিনয়ের সাহায্যে আপনি নিজের ইচ্ছেমতো কিন্তু কিছুই বদল করতে পারেন না, কিন্তু পারেন প্রাকৃতিক নিয়ম সম্মন্ধে জ্ঞানলাভ ক’রে,……প্রার্থনার রয়েছে বিশেষ সীমা ,কিন্তু বিজ্ঞানের শক্তির কোনো,
সীমা নেই এবং সবাই বিজ্ঞানের কথা ও শক্তি বিশ্বাস ক’রে”।
হিন্দু ধর্মের যাবতীয় একান্ত করণীয় বিষয়ই বেদে
বর্ণিত আছে । এই ধর্মের বর্তমান বয়স প্রায় ৫০০০বৎসর । মহর্ষি ব্যাস
মন্ত্র সংকলন ও বিভাগ করেন, এবং ইঁহার রচিত মহাভারত ‘পঞ্চম বেদ’ নামে কথিত,এবং অষ্টাদশ পুরাণ ইঁহার রচিত বলে প্রসিদ্ব । এই পুরাণাদি
গ্রন্থসমূহও হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ বলিয়া পরিগণিত হয় । যদিও হিন্দু
ধর্মকে বৈদিক ধর্মবলা হয় , তথাপি বর্তমান হিন্দু ধর্ম হলো বৈদিক ও
পৌরাণিক মতের সংমিশ্রণ । যদিও পুরাণের শিক্ষার ফলে বৈদিক ধর্ম ঘোর
পৌত্তলিকায় পূর্ণ হয়েছে, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই, বৈদিক বা পৌত্তলিক ধর্মের সঙ্গে পরবর্তি কিছু ধর্মের অনেক সাদৃশ্য দেখা যায় , যাহার ভাষা ও রুপগত পার্থক্য থাকলেও ভাবগত
পার্থক্য তেমন নাই ।
মানব সভ্যতার ঊষা লগ্নেও , বর্তমান সময়ের মত কমবেশি যুক্তিবাদীও
মুক্তচিন্তার মানুষের আবির্ভাব হয়েছিলো । যাঁরা মানব
সমাজের বিভিন্ন কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ইত্যাদি দুর করে ,মানুষ ও
সমাজকে সঠিক পথ দেখাতে চেষ্টা ক’রে গেছেন, এবং মানুষের মঙ্গলের জন্য ও সমাজের উন্নতির
জন্যে অনেক প্রতিকুল অবস্থায় থেকেও কাজ ক’রে গেছেন । এরকম একজন
দার্শনিক ও পণ্ডিত ব্যক্তির নাম ‘চার্বাক’ । আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে,বৈদিক যুগে তাঁর আগমন হয়েছিলো ।এখানে তাঁর কিছু সংস্কারমূলক চিন্তা ও মতবাদের উল্লেখ করা হলো আগ্রহীদের জন্যে,
চার্বাকীয় মত ; -চার্বাক বৈদিক যুগের একজন দার্শনিক পণ্ডিত, এবং তিনি নাকি বৃহস্পতিরশিষ্য ছিলেন । বৃহস্পতির
নিকট থেকে, প্রাপ্ত তাঁহার ঐ মতটিকে বলা হয় চার্বাক দর্শন ।তাঁহার এই মতে--সচেতন দেহ ভিন্ন স্বতন্ত্র আত্মা নাই, পরলোক নাই , সুখই পরম পুরুষার্থ,প্রত্যক্ষমাত্র প্রমান ; মৃত্তিকা, জল ,বায়ু , ও অগ্নি হইতে সমস্ত পদার্থের উদ্ভব হইয়াছে
ইত্যাদি ।চার্বাক দর্শনের স্থূল মর্ম ;- ‘ যতদিন জীবন ধারণ করা যায় , ততদিন আপনার সুখের জন্যচেষ্টা করা বিধেয় । কারণ সকলকেই
একদিন কালগ্রাসে পতিত হইতে হইবে এবং মৃত্যুর পর এই দেহ ভস্মসাৎ হইয়া গেলে আর
কিছুই অবশিষ্ট থাকিবেনা । পরলোক বলিয়া কিছুই নাই,সুতরাং পারলৌকিক সুখলাভের প্রত্যাশায়
ধর্মোপার্জনের উদ্দেশ্যে আত্মাকে ক্লেশ প্রদান করা নিত্যন্ত
মূঢ়ের কার্য । যে দেহ একবার ভস্মীভূত হয়, তাহার পুনর্জন্ম অসম্ভব । এই স্থুল দেহই
আত্মা, দেহাতিরিক্ত অন্য কোনো আত্মা নাই । ক্ষিতি, জল বহ্নি ও বায়ু --এই চারি ভূতের সম্মিলনে দেহের উৎপত্তি । যেমন পীতবর্ণ হরিদ্রা ও শুভ্রবর্ণ চুনের
সম্মিলনে রক্তিমার উদ্ভব হয়, অথবা যেমন মাদকতাশূন্য গূড়-তণ্ডুলাদি হইতে
সুরা প্রস্তুত হইলে উহা মাদক গুণযুক্ত হয় ,সেই রূপ দেহের
উৎপত্তি হইলেই তাহাতে স্বভাবত চৈতন্যের বিকাশ হয় । প্রত্যক্ষই
একমাত্র প্রমান, অনুমানাদি প্রমান বলিয়া গন্য নহে । উপাদেয় খাদ্য ভোজন, বস্ত্র পরিধান, স্ত্রীসম্ভোগ প্রভৃতি হইতে উৎপন্ন সুখই পরম পুরুষার্থ । ..দুঃখ ভোগ থাকবে, তবে দুঃখের ভয়ে সুখপরিত্যাগ করা অনুচিত’ ।
“ প্রতারক ধুর্ত পণ্ডিতগণ আপনাদের
স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে পরলোক ও স্বর্গ-নরকাদির কল্পনা করিয়া জনসমাজকে বৃথা
ভীত ও অন্ধ করিয়া রাখিয়াছে । বেদ অধ্যয়ন, অগ্নিহোত্র, দণ্ডধারণ,ভস্মলেপন
প্রভৃতি বুদ্ধি ও পৌরুষশূন্য ব্যক্তিবৃন্দের উপজীবকা মাত্র ।
প্রতারক শাস্ত্রকারেরা বলে, যজ্ঞে যে জীবকে বলি প্রদান করা যায় , সেই জীবের স্বর্গলাভ হইয়া থাকে । উত্তম ,কিন্তু তবে
তাহারা আপন মাতা-পিতাকে বলি প্রদান করিয়া তাহাদিগকে স্বর্গলাভের অধিকারী
করে না কেন ? তাহা না করিয়া আপনাদের রসনাতৃপ্তির জন্য ছাগাদি অসহয় পশুকে বলি দেয় কেন ? এইরূপ মতা-পিতাকে স্বর্গগামী করাইতে পারিলে তজ্জন্য শ্রাদ্ধাদির প্রয়োজন হয় না । শ্রাদ্ধও ধূর্তদিগের কল্পনা । শ্রাদ্ধ করিলে
যদি মৃত ব্যক্তির তৃপ্তি হয় ,তবে কোনো ব্যক্তি বিদেশে গমন করিলে তাহাকে
পাথেয় না দিয়া,তাহার উদ্দেশে বাটীতে কোনো ব্রাহ্মণকে ভোজন করাইলেই তো তাহার তৃপ্তি হইতে পারে । যখন উহা হয় না, সুতরাং শ্রাদ্ধাদিকার্য কেবল অকর্মণ্য
ব্রাহ্মণদিগের জীবনোপায় ব্যতীত আর কিছু নহে । বেদ --ভণ্ড,ধূর্ত রাক্ষস -এই ত্রিবিধ লোকের রচিত ।
স্বর্গ-নরকাদি ধূর্তের কল্পিত, আর পশুবধ ও মাংসাদি নিবেদনের বিধি
রাক্ষসপ্রণীত ।‘অশ্বমেদ যজ্ঞে যজমানপত্নী অশ্বশিশ্ন গ্রহন
করিবে’ ইত্যাদি ব্যবস্থা ভণ্ডের রচিত । সুতরাং এই বৃথাকল্পিত শাস্ত্রে কোনো
বুদ্ধিমান ব্যক্তিই বিশ্বাস করিতে পারেন না । এই দেহ
ভস্মীভূত হইলে তাহার আর পুনরাগমনের সম্ভাবনা নাই । তাই যতদিন বাঁচিয়া থাকা যায় , ততদিন সুখে কালহরণ করাই কর্তব্য । এই শরীর ব্যতীত আর কোনো আত্মা নাই। যদি থাকিত এবং দেহান্তর গ্রহনের ক্ষমতা থাকিত, তবে সে বন্ধু-স্বজনের স্নেহে বাধ্য হইয়া পুনর্বার ঐ দেহেই প্রবেশ করে না কি জন্য ? অতএব দেখা যাইতেছে--বেদ-শাস্ত্র সকলই অপ্রমাণ্য; পরলোক,স্বর্গ, মুক্তি সকলই অবান্তর ; অগ্নিহোত্র, ব্রহ্মচর্য, শ্রাদ্ধাদিকর্ম সমস্তই নিস্ফল । চার্বাক সেই বেদিক যুগেই এইসব অলীক কল্পনার
বিরুদ্ধে অভিযান চালাইয়াছিলেন, তবে বিশাল আকার ধারণ করা সম্ভব হয় নাই ,কিন্তু ইহা নির্মূল হইয়া ও যায় নই । বস্তুত চার্বকীয় মতবাদ ছিল অভিজ্ঞতাভিত্তিক, যাহা পরবর্তীকালে আধুনিক বৈজ্ঞানিক মতবাদের ভিত্তিরূপে স্বীকৃত ।বর্তমান বিজ্ঞান জগতের অনেকেই বাহ্যত না হইলেও কার্যত চার্বাকীয় মতবাদের অনুসারী ।
সংস্কার ও কুসংস্কার এবং ‘ধর্ম’ নামের সূচনা প্রসঙ্গে -
কুসংসকার কি ?
অল্প কথায় উত্তর হলো, যুক্তিহীন বিশ্বাস বা অসার যুক্তির উপর প্রতিষ্টিত মতবাদে বিশ্বাস; এক কথায় --অন্ধবিশ্বাস । যেখানে কোনো বিষয় বা ঘটনা সত্য কি মিথ্যা,তাহা যাচাই করবার মতো জ্ঞানের অভাব, সেখানেই কুসংস্কারের বাসা। অসভ্য অর্ধসভ্য,অশিক্ষিত ও শিশু মনেই কুসংস্কারের প্রভাব বেশি । শিশু মনে কুসংস্কারের বীজ ছড়ায় তাদের পিতা মাতা ও গুরুজন, নানারূপ দেও , পরী ও ভূতের গল্প বলে, বাস্তব জগতে যার কোনো অস্তিত্ব নেই । এমন এক যুগ ছিলো, যখন মানুষ ছিলো তার জাতিগত জীবনে শিশু । সেই মানব সভ্যতার শিশুকালে তৎকালিন মোড়ল বা সমাজপতিরা যাহা বলতেন, জনসাধারণ তাহা অভ্রান্ত বলে বিশ্বাস ও মান্য করত ; সত্য - মিথ্যা বিচার না করে, এবং গুরুবাক্য শিরোধার্য মনে করে, সংস্কার না কুসংস্কার যাচাই না করেই তা সব মেনে চলতো ।
অল্প কথায় উত্তর হলো, যুক্তিহীন বিশ্বাস বা অসার যুক্তির উপর প্রতিষ্টিত মতবাদে বিশ্বাস; এক কথায় --অন্ধবিশ্বাস । যেখানে কোনো বিষয় বা ঘটনা সত্য কি মিথ্যা,তাহা যাচাই করবার মতো জ্ঞানের অভাব, সেখানেই কুসংস্কারের বাসা। অসভ্য অর্ধসভ্য,অশিক্ষিত ও শিশু মনেই কুসংস্কারের প্রভাব বেশি । শিশু মনে কুসংস্কারের বীজ ছড়ায় তাদের পিতা মাতা ও গুরুজন, নানারূপ দেও , পরী ও ভূতের গল্প বলে, বাস্তব জগতে যার কোনো অস্তিত্ব নেই । এমন এক যুগ ছিলো, যখন মানুষ ছিলো তার জাতিগত জীবনে শিশু । সেই মানব সভ্যতার শিশুকালে তৎকালিন মোড়ল বা সমাজপতিরা যাহা বলতেন, জনসাধারণ তাহা অভ্রান্ত বলে বিশ্বাস ও মান্য করত ; সত্য - মিথ্যা বিচার না করে, এবং গুরুবাক্য শিরোধার্য মনে করে, সংস্কার না কুসংস্কার যাচাই না করেই তা সব মেনে চলতো ।
বিজ্ঞানীগণ বলেন, আমরা বাস করছি বিরাট এক বায়ুচাপের মধ্যে, যাহা আমরা টের পাই না । কেননা আমাদের শরীরের বাহিরে যেমন বায়ু আছে, ভিতরে তেমন বায়ু আছে, ফলে ঐ চাপ কাটাকাটি হয়ে যায় । বিশেষত জন্মবধি বায়ুচাপে বাস করে ঐ চাপ হয়ে
গেছে আমাদের অভ্যাসাগত । তাই আমরা
অনুভব করতে পারিনা যে, বায়ুর চাপ আছে।
বায়ুচাপের মতোই মানুষের অভ্যাসাগত কুসংস্কার । দূর অতীতের ধর্মবেত্তারা ছিলেননানাবিধ
কুসংস্কারপূর্ণ সমাজের বাশিন্দা । তাঁদের ভিতর ও বাহিরে ছিলো কুসংস্কার এবং জন্মাবধি কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে বাস করে কিছুবা হয়েছিলো গা-সহা অভ্যাস । তাই অনেক ধর্মবেত্তাই কুসংস্কার কি ও কোনটি, তাহা অনুধাবন করতেই পারেন নাই । কাজেই কুসংস্কার বর্জনের ইচ্ছা থাকা সত্তেও
কতক ধর্মবেত্তা বহুক্ষেত্রে ঝোপ কেটে, জঙ্গল রোপণ করে গছেন ।এখন কোনো কুসংস্কারই কুসংস্কার বলে স্বীকৃত হয় না অনেক ক্ষেত্রে।
তবে ধর্মবেত্তারা সকলেই যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন
কুসংস্কার বর্জনের । তাই যে ধর্ম অপেক্ষাকৃত আধুনিক ও পরের, সেইধর্ম কুসংস্কারমুক্ত এবং যে ধর্ম পুরাতন, সেই ধর্ম কুসংস্কারে ভরপুর ।
প্রত্নতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের সহায়তায় যে মানব ইতিহাস প্রাপ্ত হওয়া গেছে, তাতে জানা যায়,জাতিগত জীবনের শৈশবে মানুষ ও ইতর জীবের আহার-বিহার ও মনোবৃত্তির বিশেষ
কোনো পার্থক্য ছিলো না । সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে পার্থক্যটি ও
প্রকট হয়েছে ।তখনকার দিনে
যেমন চলেছিলো পশুবৃত্তি দূরীকরণ অভিযান, অর্থাৎ মানুষের সমাজ সংস্কার ,আবার তেমনই ইহার সহগামী হয়ে চলছিলো শত শত
কুসংস্কার । যা হাজার হাজার বছর পরেও অনেক মনুষ ঐগুলোকেই
ধ্রুব সত্য বলে বিশ্বাস ক’রে আসছে, আর
তখন থেকেই তৈরী হলো নিত্য-নৈমিত্তিক কর্মতালিকা বনাম ‘ধর্ম’ নামের সূচনা । হুমায়ুন
আজাদের ভাষায়; আদিম মানুষের অন্ধ আদিম কল্পনা , আর পরবর্তি অনেকের সুপরিকল্পিত মিথ্যাচার, কখনো কখনো মত্ততা, নানাভাবে বিধি বদ্ধ হয়ে নিয়েছে যে-বিচিত্র রূপ, তাই পরিচিত ধর্ম নামে, বার্ট্র্যান্ড রাসেলের ভাষায় , ‘ সব ধর্মই ক্ষতিকর ও অসত্য ‘ । তীর্থযাত্রা,পশুবলি
ও উপবাস প্রায় সব ধর্মেই রয়েছে ; আরব কবি আল-মারি (৯৭৩--১০৫৭) লিখেছেন, ‘ দশ দিক থেকে মানুষ আসে পাথর ছুঁড়তে আর চুমো
খেতে। কী অদ্ভুত কথা তারা বলে, মানুষ কি অন্ধ হয়ে যাচ্ছে, দেখতে পাচ্ছে না সত্য’ । আর জালালউদ্দিন রুমি লিখেছেন, ‘ আমি পথ খুঁজি , তবে কাবা বা উপাসনালয়ের পথ নয় ,প্রথমটিতে
দেখি একদল পৌত্তলিককে আর দ্বিতীয়টিতে একদল আত্নপূজারীকে’।
কিভাবে কুসংস্কার সত্যে পরিণত হয়, তার একটি দৃষ্টান্ত প্রাচীন হিব্রু জাতির
রূপ কথার গ্রন্থ ‘ তালমুদিক’ শিক্ষা ।
প্রাচীন হিব্রু জাতির মধ্যে কতগুলি
রূপকথা-উপকথা বা কাহিনী প্রচলিত ছিলো । সেই সব কাহিনীর ব্যক্তি বা স্বর্গদূতগণের নাম হয়তো বাইবেলে আছে, কিন্তু সেই নামের সূত্র ধ’রে (উপন্যাসের
আকারে) কতগুলি পার্থিব ও অপার্থিব প্রাণীদের কল্পিত
কাহিনী আর দীর্ঘকাল ধ’রে হিব্রুদের মুখে মুখে চলে আসছিলো । কালক্রমে
ইহুদি পুরোহিত বা রাব্বিগণ ঐকাহিনীগুলোকে সংকলন ক’রে বিরাট দুইখানা পুস্তক লেখেন । ঐ
গ্রন্থদ্বয়ের নাম তালমুদ ও মিদ্রাস । যাহা
রূপকথা-উপকথার অফুরন্ত ভাণ্ডার এবং কুসংস্কারের পাহাড় । বর্তমান জগতে যত রকম কুসংস্কার প্রচলিত আছে , বোধহয়, ঐ গ্রন্থ দুইখানাই তার কেন্দ্র । আর তালমুদে বর্ণিত কাহিনীগুলোর মূল সূত্র
অর্থাৎ ব্যক্তি বা স্বর্গদূতগণের নাম বাইবেলে লিখিত
থাকায় কেহ কেহ ঐসব কল্পিত কাহিনী গ্রহন ক’রেছে ধর্মীয়
কাহিনী হিসাবে ,অর্থাৎ সত্য বলিয়া ,পরবর্তিতে ,পরের ধর্মগুলোতে ইহা স্থান পেয়েছে সত্য ও
ঐশ্বরিক ঘঠনা হিসাবে । আরএইভাবেই, কুসংস্কার, ধর্মীয় বিশ্বাসে পরবর্তিতে রূপান্তরিত হয়ে
বর্তমান রূপ গ্রহন করেছে বলে অনেকেরই বিশ্বাস ।
সূত্র;-সত্যের সন্ধান, আরজআলী
মাতুব্বর ও ইসলাম ,সংক্ষিপ্ত
ইতিহাস
ক্যারেন আর্মস্ট্রং, অনুবাদ-শওকত
হোসেন এবং হুমায়ুন আজাদের
আমার অবিশ্বাস গ্রন্থের
প্রায় অনুরূপ অনুকরণে
এই লেখাটি রচনা করা হয়েছে ৷
(বি : দ্র : এই লেখাটি ঐতিহাসিক
তথ্যের আলোকে তৈরিকরা
একটি রচনা , কারো
কোনো বিশ্বাসে আঘাত করতে ইহা লেখা হয়নি, কোনো
গণমাধ্যমে লেখাটি প্রকাশ
করা যাবে না , লেখকের
অনুমতি ছাড়া , ধন্যবাদ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন