বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতির ধারা প্রসঙ্গে ; ( politics of present Bangladesh )

               
                               সমকালিন  ভাবনা 
                                 
         আজকাল  ইসলাম  ধর্মকে  এখনও  অনেকে শান্তির  ধর্ম  বলেন  ৷  আবার  কেউ  কেউ  বলেন  ইসলাম  ধীরে  ধীরে  শান্তির   ধর্মতে  রূপান্তরিত  হচ্ছিল  ৷  কিন্তু  সতের  শতকে  পৌঁছার  পর  ইসলামকে  পিছনের  দিকে  তার  প্রতিষ্ঠা  লঘ্নে  ফিরিয়ে  নেয়া  চেষ্টার  পর  থেকে  ইসলাম  ক্রমাগত  অশান্তির  ধর্মে  রূপান্তরিত  হতে  চলছে  ৷  আর  এই  সুযোগে  মৌলবাদ  ও  জঙ্গীবাদের প্রতিষ্ঠার  ক্ষেত্র  তৈরি  হয়েছে ৷

     বাংলাদেশের  রাজনীতির  ক্ষেত্রে  বলা  হয়  আওয়ামী  লীগ  এক  সময়ে  মুক্তিযুদ্ধের  পক্ষের  একটি  প্রগতিশীল  রাজনৈতিক  দল  ছিল  ৷  বর্তমানে  আওয়ামী  লীগ   পেছনের  যাত্রায়  ১৯৪৮  সনের  মুসলীম  লীগে  পরিণত  হতে  চলেছে ৷ বর্তমান ক্ষমতশীন  আওয়ামী  লীগের  কার্যক্রম  পর্যালোচনার  পর  আজকাল  অনেকে  এই  মন্তব্য  করতে  শুনা  যায়  ৷  তবে  মন্তব্যকারীরা  সবাই  বয়সে  প্রবীন ৷  কারণ  আওয়ামী  লীগের নেতা  বা  কর্মীর  কাছে   বর্তমানে  প্রগতিশীল  এবং  মুক্তিযুদ্ধের  পক্ষে  কোনো  কাজ  কর্মে  অংশ  নিতে  দেখা  যায়  না  যদি  তাদের  দলের  স্বার্থের  অনুকুলে  সে  কাজ  না  হয় ৷  তাই  ৮০র দশকের  বি এন পি  আর  বর্তমান  আওয়ামী  লীগের  কার্যকলাপে  কোনো  পার্থক্য  চোখে  পড়ে  না  ৷ 

     বি এন পি  নামক  রাজনৈতিক  দল এক সময়  অনেক  দল  ও  মতের  সমন্বয়ে  গঠিত  একটি  বহু মতের ও  বহু আদর্শের লোকের   রাজনৈতিক  দল  ছিল  ৷  বর্তমান   পেছনের  যাত্রায় বি এন পি  ও  ১৯৪৭ সালের  পূর্বের  মুসলীম   লীগ  ও  তখনকার  ধর্মীয়  রাজনৈতিক দল  জামায়াত  ও  নেজামী  ইসলামী  দলের  আদর্শে  রূপান্তরিত  হতে  চলেছে  ৷ একথাটি  ও  এক সময়ের  বি এন পি  রাজনীতিতে সক্রিয় এবং রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের  মূখ  থেকে  উচ্ছারিত  হতে  দেখা  যায়  ৷  বি এন পি  রাজনীতি  সব  সময়ই  ব্যক্তি  স্বার্থের  অগ্রাধিকারের  রাজনীতি  ছিল  ৷ মুক্তিযুদ্ধের  চেতনা  তো  দূরের  কথা ,  বাংলাদেশের  স্বার্থের  বিপরিত  ধারার  রাজনীতিতে  বি এন পি  অবস্থান  বিভিন্ন  সময়ে  লক্ষিত  হয়েছে  ৷  বর্তমানে  বি এন পি এর  কোনো  নির্দিষ্ট  রাজনীতি  নেই  ৷  আছে  কাটপিছ   পেষ্ট  করা  রাজনীতি  ৷  তাই  জামায়াত  ছাড়া  হেফাজতের ও  রাজনীতির অংশীদার  হতে  তাদের  বিবেকে  বাধে  নাই  ৷  এছাড়া  আস্থাহীনতা  বি এন পি  রাজনীতিতে  এখন  প্রবল  হয়ে  উঠেছে  ৷ পাকস্তানী সামরিক  বাহিনীর  আই  এস  আই আর এর কানেকশন  থেকে  মুক্ত  হতে  পারছেনা  এ  দলটি  এখনও  ৷

     আর  জামায়াত  সহ  ইসলামি  দলগুলো  সামনের  দিকে  আগ্রসর  হয়ে  ৯০  শতকের  আফগানিস্তানের   তালেবানী  ধারায়  রূপান্তরিত  হয়ে  গেছে  এরিমধ্যেই ৷  এটা  তাদের  বর্তমান  কার্যকলাপ  থেকে  দিন  দিন  প্রমাণিত  হচ্ছে  ৷  জামায়াতিরা  মৌলবাদী  ধ্যান  ধারণা  সমাজে  প্রতিষ্ঠা  করে  রাষ্ট্রক্ষমতা  দখলে  আগ্রহী  তা  এখন  জনগণের  কাছে  স্পষ্ট  হয়ে  পড়েছে ৷ শধু  রাষ্ট্র  ক্ষমতা  দখল  করতে  পারলে  দেশ  শাসন  করা  যায়  না  ৷  জনগণের  আশা  আকাঙ্খা  ও  যুগের  চাহিদা  মাথায়  রেখে  সামনে  এগোতে  হয়  ৷  ইসলামের  প্রাথমিক  যুগে  শুধু  ধর্ম  বিশ্বাসের  ব্যবহার  করে  কেউ  দীর্ঘদিন  রাষ্ট্র  ক্ষমতায়  ঠিকে  থাকতে  পারেনি  ৷  এদানিং  মিশরে  তা  আবার  নতুন  ভাবে  প্রমাণিত  হয়েছে  ৷ মধ্যপ্রাচ্যের  আরো  কয়েকটি  দেশের  বেলায়  ও  একই  অবস্থার  সৃষ্টি  হয়েছে  ৷  তাই  বাস্তবতার  আলোকে  জামায়াতের  বর্তমান  রাজনৈতিক  কৌশল  পরিবর্তনের  সময়  এসেছে  ৷  ১০  ভাগের  কম  জনসমর্থনের  ওপর  ভিত্তি  করে  রাজনীতি  করলে  সব  সময়ে  জোটের  রাজনীতি  করতে  হবে  ৷ নতুবা  একটি  প্রগতিশীল  রাজনীতির  ধারায়  তাদের  রাজনীতি  রূপান্তরিত  না  করতে  পারলে  তাদের  রাষ্ট্র  ক্ষমতায়  শুধু  জোটের  অংশীদার  হয়েই  যেতে  হবে  ৷ যদি   সে  জোট  রাষ্ট্র  ক্ষমতায়  যায় ৷

      তাই  পেছনে  ফেরা  যেমন  ধর্ম  বা  রাজনৈতিক  দলের  ক্ষেত্রে  যেমন  উত্তম  নয়  তেমনি   মানব সমাজের  জন্যে  ও  মঙ্গলজনক  নয়  ৷ তেমনি  অবৈজ্ঞানিক ও  যুক্তিহীন  ভাবে  সামনের  দিকে  অতিরিক্ত  এবং  আগ  পাছ   না  ভেবে  অগ্রসর  হওয়া কোনো  রাজনৈতিক দলের পক্ষে  উচিত  নয়  ৷ কারণে তা অনেক  সময়  দেশ  , জাতি  এবং  সমাজের  জন্যে  মঙ্গলজনক  হয়   না  ৷ দেশ  ও  জাতি  এবং  সমাজকে  রক্ষা  করতে  হলে  নিশ্চয়  রাজনৈতিকদের এই  ধারা  থেকে  বের  হয়ে  আসতে  হবে  ৷  শুধু  রাষ্ট্রক্ষমতা  ধরে  রাখতে  বা  রাষ্ট্রক্ষমতা  দখল  করতে  যে  কোনো  পদক্ষেপ  গ্রহণের  পূর্বে  দেশ  ও  জাতি  এবং নতুন  প্রজন্মের  ভবিষ্যত  চিন্তা  করে  যাহা  মঙ্গলজনক  হবে  তাহাই  গ্রহণ  করে  সে  দিকে  অগ্রসর  হওয়া  উচিত  ৷

          ইতিহাস  থেকে  শিক্ষা  গ্রহণ  করে  যুক্তিবাদী  ও  নিরপেক্ষ  দৃষ্টিভঙ্গির  আলোকে  আমাদের  পথ  চলা  শিখতে  হবে  ৷  না  হয়  একসময়  দেশ  ও  জাতি  অগ্রযাত্রা   বন্ধ  হয়ে  দেশে  সামাজিক  অশান্তির    সষ্টি   হবে  এবং  কোনো  মহাশক্তিশালী  রাষ্ট্র  এই  সুযোগে  তাদের  চারণ  ভূমিতে  পরিণত  করতে  চাইবে এই  দেশটিকে  ৷  যাহা  মধ্যপ্রাচ্যের  ক্ষেত্রে  দেখা     গেছে  ৷  বাংলাদেশ  ও  ভারতের  কিছু  অংশে  রাজনৈতিক  ও  ধর্মীয়  সাম্প্রদায়িক  এবং  জাতিগত  বিবেধ  সৃষ্ট  করে  এঅঞ্চলকে  উত্তাপ্ত  করে  তুলতে  একটি  দীর্ঘমেয়াদি  প্রচেষ্ঠা  আরম্ভের  লক্ষণ
এর  মধ্যেই  প্রতিয়মান  হচ্ছে  সংশ্লিষ্টদের  কাছে  ৷

       তাই  যেনতেন  ভাবে রাষ্ট্র  ক্ষমতায়  ঠিকে  থাকা  কিংবা  তেমন  ভাবে  যেনতেন বা  অগণতান্ত্রিক  উপায়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল  করে  ক্ষমতায়  যাওয়া   থেকে   দেশ  জাতির    সার্বোভৌমত্ব  রক্ষা  করা  সংশ্লিষ্ট  রাজনৈতিকদের  অবশ্যই  কর্তব্যের  পর্যায়ে  পড়ে  ৷ যা  করতে  হবে  তা  নিশ্চয়  গণতন্তের  পথেই  করতে  হবে  যাতে  স্বার্থবাদী  কোনো  মহল  সুযোগ  নিতে  না  পারে  ৷ ভবিষ্যত  প্রজন্মের ভবিষ্যতের জন্যেই  তা  করা  উচিত  ৷ ধর্মকে  ব্যবহার  করে  যে  সব  দেশে  রাষ্ট্রক্ষমতা  দখল  করা  হয়েছে  পরবর্তীতে  তাদের  অবস্থার  উন্নতি  হতে  দেখা  যায়  নি ৷  তাই  আমাদের  ইতিহাস  থেকে  শিক্ষা  গ্রহণ  করে  সামনে  বা  প্রয়োজনে  পিছনে  তাকাতে  হবে  ৷  এ  ব্যাপারে একজন  বুদ্ধিজীবির জনকণ্ঠে  প্রকাশিত  একটি  লেখার  কিছু  অংশ  জোড়ে দেয়া  হলো ৷ 
      
       "  ইংল্যান্ড, ফ্রান্স তথা ইউরোপীয় দেশসমূহ, আমেরিকা মহাদেশ, লাতিন আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড, দূরপ্রাচ্যসহ এশিয়ার বেশকিছু দেশের কোন কোনটি এক্ষেত্রে বেশ সাফল্য অর্জন করেছে, কোন কোনটি পিছিয়ে আছে। তবে বিশ্ব সভ্যতা এখন আধুনিক সভ্যতামুখী। গণতন্ত্র এই সভ্যতায় উত্তরণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসেবে স্বীকৃত হচ্ছে। গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য শুধু রাজনৈতিক দল বা অধিকারের বুলিই যথেষ্ট নয়, শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা, প্রসার এবং মান অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিক্ষা বলতে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞাননির্ভর শিক্ষার কথাই বলা হচ্ছে। যে শিক্ষা সৃজনশীল নয়, যুক্তিবাদে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলে না, আত্মনির্ভরশীল মানুষরূপে নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে পারে না- সেই শিক্ষা ব্যবস্থার প্রোডাক্ট দিয়ে আর যাই হোক আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠন করা সম্ভব নয়। 

              কেননা, আধুনিক শিক্ষার মূল শক্তিই হচ্ছে মানুষকে অন্ধ বিশ্বাস, কুসংস্কার, অজ্ঞানতা থেকে মুক্ত করে আনা, আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান করে তোলা, নতুন বিশ্ববীক্ষা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রকৃতি, সমাজ ও চিন্তনকে জানা, বোঝা ও জয় করা। তবে মানুষের এমন শিক্ষা অর্জনের সবটাই আধুনিক যুগের কৃতিত্ব তা কিন্তু নয়। বরং প্রাচীন যুগে যখন লেখাপড়া ও শিক্ষার বিষয়টি সর্বসাধারণের ধারেকাছে ছিল না তখন থেকে অগ্রসর কতিপয় চিন্তাশীল মনীষীর রেখে যাওয়া জ্ঞান দর্শনকে সম্বল করে যে বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা-পরবর্তী সময়ে সর্বজনের জন্য আবশ্যকীয় হয়ে উঠেছে তাকেই আমরা আধুনিক শিক্ষা বলে বুঝে নেব। আধুনিক এই শিক্ষা যুক্তি ও জ্ঞাননির্ভর, বিশ্লেষণাত্মক, সৃজনশীল, উদ্ভাবনী সমৃদ্ধ। এ শিক্ষা মানুষকে পূর্ববর্তী পশ্চাদপদ সমাজ ব্যবস্থা নিগূঢ় থেকে মুক্ত করেছে, আধুনিক চিন্তা ও সংস্কৃতিতে গড়ে তোলার সাফল্য দেখিয়েছে।

                সেই শিক্ষা ব্যতীত আধুনিক সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি ও অর্থনীতি এবং সংস্কৃতি বিনির্মাণ অসম্ভব ব্যাপার। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো যখনই আধুনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল তখনই তারা আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ার সিদ্ধান্ত সমান্তরালভাবে নিয়েছে। ফলে শিক্ষার প্রসার ও মান তাদের উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ার ধারায় টেনে নিয়ে গেছে। আধুনিক শিক্ষার শক্তি এতটাই গভীর ও বিস্তৃত। কেননা, এটি মানুষকে প্রাচীন ও পুরনো ব্যবস্থার মানুষ থেকে বিশ্ববীক্ষায় পরিবর্তিত করে তোলে, যে মানুষ অতীতের অপসংস্কৃতিকে অতিক্রম করতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। এ মানুষ অধিকতর আইন-কানুন  যুক্তি  ও  সংস্কৃতিনির্ভর ,"।  একথাটি  মনে  রেখেই  আমাদের  আগ্রসর  হতে  হবে ,   পরবর্তি  পদক্ষেপ  গ্রহণ  করতে  হবে  ৷  না  হয়  মুক্তিযুদ্ধের  মাধ্যমে  অর্জত  এবং  মুক্তিযুদ্ধের  চেতণাধারণকারী     স্বাধীন  ও  সার্বভৌম  বাংলাদেশকে  ভবিষ্যতে  রক্ষা  করা  সম্ভব  হবে  না  ৷

  ( মমতাজউদ্দিন  পাটোয়ারীর  একটি  লেখার  কিছু  অংশ  এই  লেখার  সঙ্গে  প্রাসঙ্গিক  হওয়ায়  যুক্ত  করা  হয়েছে ৷ )


মন্তব্যসমূহ