বাংলাদেশী মৌলবাদ , “ ফাও খাওয়া শ্রেণী ” এবং
“ মিথসের ” সঙ্গে “ লোগোস ” এর মহা সম্মিলন
প্রসঙ্গ ;
( মিথোস;- মুখ বা চোখ বন্ধ করা যা নীরবতা ও স্বজ্ঞামূলক অন্তর্দৃষ্টিতে প্রোথিত
জ্ঞানের এক ধরন যা জীবনের
অর্থ ঘোগায় কিন্তু
যৌক্তিক পরিভাষায় যার ব্যাখা পাওয়া যায় না ৷ প্রাক আধুনিক বিশ্বে
পৌরাণিক জ্ঞানকে লোগোসের
সম্পূরক হিসেবে দেখা হত
৷
লোগোস হচ্ছে যৌক্তিক বা যুক্তিপূর্ণ বৈজ্ঞানিক
ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ
৷ )
১৯৭১ সালের ৭০ মিলিয়ন
মুক্তিযুদ্ধার দেশে ( ৫
মিলিয়ন কলাবরেটার বাদে )
বর্তমানে যে বৈষম্যের সৃষ্টি
হয়েছে ধনী ও দারিদ্রের মাঝে আর যা মাত্র দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪০ বছরের মধ্যেই হয়েছে ৷
তার জন্যে দায়ী করা হয় বাংলাদেশে রাজনৈতিক
দুর্বৃত্তায়নে গড়ে উঠা
“ ফাও খাওয়া শ্রেণীকে ”৷
আধ্যাপক ড. আবুল
বারকাত কিছুদিন আগে এক সেমিনারে
তার এক লোক বক্তৃতায় এ তথ্য প্রকাশ
করেছেন ৷ তার মতে দেশে গত ৪০ বছরে সরকারী
ভাবে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার বৈদেশিক
ঋণ ও অনুদান
এসেছে ৷ আর তার
প্রায় ৭৫ ভাগই লুণ্ঠন
করেছে অর্থনীতি ও রাজনীতির দুর্বৃত্ত
গোষ্ঠী যাদেরকে তিনি " ফাও খাওয়া শ্রেণী হিসেবে অবিহিত করেছেন ৷ দেশে ক্ষমতাশীনরা অধিকতর
ক্ষমতাবান হয়েছেন আর ক্ষমতাহীন দারিদ্র
শ্রেণীর অক্ষমতা বৃদ্ধি
পেয়েছে ৷ দুর্বৃত্ত
লুটেরাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মুক্ত বাজার
অর্থনীতির সরকার ৷ আর উভয়ের সম-স্বার্থের
সম্মিলনেই এই অবস্থার
সৃষ্টি হয়েছে
৷
দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর
তুলনায় সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী
রাজনৈতিক দলগুলো এখন আর কোনো দুর্বল
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয় দেশের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিতে
৷ কারণ তারা ইসলামের ইতিহাসের
আব্বাসীয় আমলের মত ইসলামের মূলমন্ত্রকে
সযত্নে পরিত্যাগ করে অর্থনৈতিক ক্ষমতাভিত্তিক
রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক
কৌশল হিসেবে প্রতিষ্ঠা
করেছে এবং ব্যবহার করছে সফল ভাবে এখন ৷ তারা রাজনীতিতে ধর্মকে
বর্ম হিসেবে ব্যবহার
করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের এ কৌশলে ধর্মের পৌরাণিক
“ মিথসের ” সঙ্গে বাস্তবের
বা “ লোগোস” এর সম্মিলনের এক আধুনিক পদ্ধতি
আবিষ্কার করেছে আর তারা এর সফল ব্যবহারও
আরম্ভ করতে সক্ষম হয়ে গেছে ৷
এর ফলশ্রুতিতে তাদের এই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক
মতাদর্শ , একটি ধর্মীয়ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত পূর্ণ হয়ে গেছে এরমধ্যেই ৷ অর্থাৎ রাজনীতির মূলধারার সঙ্গে ফাও খাওয়া শ্রেণী ও মিশে গিয়েছে এবং ধর্ম-ব্যবহার ভিত্তিক
রাজনীতির দলগুলো এর সঙ্গে এরা মিলে গিয়ে শেষ
পর্যন্ত বাংলাদশকে একটি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে রূপান্তর করা সম্ভব করে তুলতে সক্ষম হয়ে গেছে ৷ কারণ এই ফাও খাওয়া শ্রেণী
ও মৌলবাদী অর্থনীতি
এবং তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উগ্র সাম্প্রদায়িক
রাজনীতি সবই একটি মধ্যযুগীয়
পশ্চাৎপদ সমাজ গঠনে আগ্রহী তাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে ৷
অন্যদিকে আওয়ামী
লীগের শ্রেণী চরিত্রও
ইতিমধ্যে সময়ের বিবর্তনে
আর দলের অতি লোভী
কিছু সদস্যের
কারনে পরিবর্তিত হয়ে গেছে ৷ লুটেরা
নব্য ধনী শ্রেণীর
একটা অংশ এবং ফাও
খাওয়া শ্রেণীর অনেক সহ ধনী শ্রেণীর বড় একটি অংশ দলটির মধ্যে কর্তৃত্বের
প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে ৷ অন্যদিকে
সিভিল ও মিলিটারি
বুরোক্রেসির একটা অংশও দলে এসে প্রভাব
বিস্তার করতে পেরেছে ৷ দলের মধ্যে আবার মোলবাদীদর
সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের
মাধ্যমে সৃষ্ট আপোসকামী
একটি অংশও যুক্ত হয়েছে
এদানিং
৷ তাই দলীয় প্রধান ছাড়া দলের মধ্যে অসাম্প্রদায়িকতা ও সেক্যুলারিজমের পক্ষে কথা বলার তেমন কেউ আছে বলে আজকাল দেখা যায় না ৷
তাই অর্থনীতি
এবং রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের সুযোগে
গুটিকয়েক সম-স্বার্থের ফাও খাওয়া শ্রেণী
বা Rent Seekers অঢেল
বিত্ত ও সম্পদের
মালিক হয়েছে ৷ আর এ প্রক্রিয়ায় সহায়তা
করেছে বাজার অর্থনীতি ,
সরকার এবং রাষ্ট্র ৷ কিন্তু ফাও খাওয়া শ্রেণীরা
বিত্ত এবং সম্পদ সৃষ্টি করে না , তাঁরা বিত্তশালী হয় অন্যের
বা
রাষ্টের সম্পদ গ্রহণ , অধিগ্রহণ , হরণ , দখল , বেদখল এবং আত্মসাৎকরণের মধ্যমে
৷ ফলে তারা সমাজের মোট সম্পদ শুধু হ্রাসই করেন না , ধ্বংশ ও করে ৷ বর্তমানে মাত্র ১ শতাংশ ফাও খাওয়া দুর্বৃত্তের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনীতি ও সরকারের অশুভ সম-স্বার্থের
একটি আতাত ৷ যার ফলে দেশে দারিদ্র
ও বৈষম্য এবং অসমতা বেড়েছে
৷
সব সময়ে সব ক্ষমতাশীল
সরকার ও দেশের রাজনীতি এই ফাও খাওয়া শ্রেণীর অধিনস্তসত্তা
মাত্র ৷ এই প্রক্রিয়ায় পুঁজিবাদী
অর্থনীতির মুক্তবাজার দর্শনের
আওতায় দারিদ্র-বৈষম্য-অসমতা বৃদ্ধি
হওয়াটাই স্বাভাবিক ৷ এ থেকে মুক্তি পেতে হলে এ পদ্ধতি এবং প্রচলিত উন্নয়নের
দর্শনই পাল্টে ফেলতে হবে ৷ নতুন
যে পদ্ধতি ও দর্শন গ্রহণ করতে তার মূল কথা হবে উন্নয়নের
মানবিকরণ ৷
আর এর জন্যে প্রয়োজন
হবে মানুষ ও মানবতার প্রতি আস্থাশীল ও শ্রদ্ধাশীল শিক্ষিত
এবং সুদুর অন্তর্দৃষ্টি
সম্পূর্ণ এমন এক রাজনৈতিক নেতৃত্ব
আর যে প্রক্রিয়ার
প্রতি থাকবে জনগণের
স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং সমর্থন ৷
আর. তখনই সম্ভব হবে এই ফাও খাওয়া শ্রেণী ও তাদের সহযোগী
গোষ্ঠীদের রাজনীতি ও সরকার থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন
করে ফেলা ৷ এটা করা এখনই সম্ভব না হলে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে
স্বাধীনতা অর্জনকারী এই বাংলাদেশ অচিরেই
একটা অর্থনৈতিকভাবে
বৈষম্যমান , মৌলবাদী
এবং ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে
পরিণত হবে ৷
( সূত্র ;- “ বাংলাদেশে দারিদ্র-
বৈষম্য-অসমতা ; এক্কীভূত রাজনৈতিক অর্থনৈতিক
তত্তের সন্ধানে শীর্ষক
সেমিনারে দেয়া ড. আবুল
বারাকাতের এক বক্তৃতার
আলোকে এই লেখাটি
তৈরি করা হয়েছে ৷
)
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন